ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ১৯ পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
সাদাফ ভাই এবার আমাকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে উঠে,,,
“কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না ত!”
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই যে যাব না।সাদাফ ভাইয়া মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,
“আমাকে ছেড়ে যেতে চাইলেও যেতে দিব না তোমাকে,তুমি সারাজীবন আমার সাথে থাকবে,আমার পাশে থাকবে।কখনও ছেড়ে যাওয়ার কথা ভুল করেও ভেবো না তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”
আমি উনার কথা শুনে এবার একটু মজা করে বলে উঠি,,,
“সম্মতি দিতে না দিতেই ঠান্ডা গলায় থ্রেট মারছেন?”
উনার সোজাসাপ্টা কথা।
“হু মারছি ত!”
“ত মানে কী!এমন করলে খেলব না আমি থুক্কু থাকব না আমি।”
“তোমাকে খেলতে কে বলেছে!আর তুমি চাইলে না থাকতেই পারো কিন্তু আমি ত রাখব।”
কথাটা বলে উনি এবার আমার কানের কাছে এসে আস্তে করে বলে উঠে,,,
“ভালবেসে রাখব কাছে।”
সারা শরীরে আলাদা এক শিহরন বয়ে গেলো আর উনার কথাটা কেমন নেশা ধরিয়ে দিয়েছে।আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলি,উনি এবার আমার কানে হালকা একটা কামড় বসিয়ে দেয়।আমার মুখ দিয়ে তখন বেরিয়ে আসে,,,
“আহহ্ সাদাফ ভাই লাগছে ত।”
উনি কথাটা শুনে আবারও একই কাজ করে,এবার একটু জোড়েই কামড় বসিয়ে দেয়।আমি এবার উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠি।
“বলছি ব্যাথা লাগছে তারপরও একি কাজ করে যাচ্ছেন আপনি?”
“বলছি ভাই ভাই না করতে তারপরও ভাই ভাই করে যাচ্ছো তুমি।”
মাটিতে বসে দুই হাত গালে দিয়ে গাল ফুলিয়ে সাদাফ ভাই কথাটা বলে উঠল।উনার কথাশুনে আমার বুঝতে বাকি রইল না যে উনি কেন এমন করেছে!আমি উনাকে আরেকটু রাগানোর জন্য বলে উঠি।
“বাহ্ রে এতবছর ভাই ভাই করে গলা শুকিয়ে ফেললাম আর আপনি এখন হঠাৎ করে এসে বলছেন ভাই না বলতে।সেটা ত হবে না,আমি ভাই বলেই ডাকব।”
সাদাফ ভাই এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়।
“এতদিন ত জানতে না আমি তোমার স্বামী হই কিন্তু এখন ত জানো ত এখন এত ভাই ভাই করবে না।তুমি ভাই বলে ডাকলে নিজের বাচ্চাদের মুখে মামা ডাক শুনতে হবে।নাউজুবিল্লাহ এমনটা আমি চাই না,তাই ভাই বলা বারন।নয়ত লাভ টর্চার চলবে তোমার উপর,সো সাবধান প্রেয়সী।”
উনি আমার গালে উনার নাক ঘসে কথাগুলো বলেছে।উনার এমন ছোয়ায় আমি একদম ফ্রিজড হয়ে রয়েছি।কিন্তু তারপর নিজেকে সামলে উনার থেকে ছোটার চেষ্টা করতে করতে উনাকে প্রশ্ন করি।
“সব কথা সবদিকে কিন্তু আমাকে এটা বলেন ত এত ছোট বয়সে আমাদের বিয়ে হল কেন?তখন ত দুজনেই খুব ছোট ছিলাম,আর আপু ত আমার বড়।ত সে অনুযায়ী আপুর আগে বিয়ে হত কিন্তু আপুর আগে বিয়ে না হয়ে আমার সাথে আপনার বিয়ে কেন হল?”
সাদাফ ভাইয়ের এবার আমার কথাটা শোনার পর উনার মুখের রং পাল্টে যায়।উনি আমাকে ছেড়ে পিছন ঘুরে দাঁড়ায়,আমি বুঝার চেষ্টা করছি কী চলছে উানর মনে।হঠাৎ এমন মুড চেন্জ হল কেন বুঝতে পারছি না।আমি উনার কাঁধে হাত রাখতেই উনি পিছন ফিরে বলে উঠে,,,
“এখন বলা যাবে না,এটা সিক্রেট তাই এই সিক্রেটটা স্পেশাল দিনে স্পেশাল ভাবেই বলব।”
“সেই স্পেশাল দিনটা কবে?”
“খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে,এবার তুমি শান্ত হয়ে বসো ত।ছোট মাথায় এত চাপ দিও না,সময়মত সব জানতে পারবে।”
আমি উনার কথাশুনে চুপ করে ভাবতে থাকি কী এমন কারন আছে যেটা উনি এখন বলতে চাইছে না।উনি এবার আমাকে বসিয়ে আমার পাশে বসে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে আমার হাত উনার মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে,,,
“তা মিসেস সাদাফ বড় বোনকে কিডন্যাপ করিয়ে বিয়ে দিলেন আর আমাকে জানালেন না কেন?”
আমি উনার কথাশুনে অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাই,উনি জানল কীভাবে?
“আপনি জানলেন কী করে?আমি যে আপু আর মেঘ ভাইয়াকে বিয়ে দিয়েছি।”
“আমি সব জানি মেডাম,কিন্তু তুমি আমাকে দাওয়াত না দিয়ে বিয়ে দিয়েছো এটা একদম ঠিক করো নি।পাঠকগনও অভিযোগ করেছে তুমি তাদের বিরিয়ানির ট্রিট দেও নি।”
“কথা না ঘুরিয়ে বলুন আপনি কীভাবে জানলেন?”
কথাটা হালকা রেগেই বলে উঠি,উনি সেটা দেখে আমাকে উনার আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে আমার হাতে একটা চুমু দিয়ে বলে উঠে।
“বলছি না বলেই কত রাগ আর বললে যে কী করবা সেটাই ভাবছি আমি।”
“কথাটা বলে দিলেই আমাকে রাগ দেখাতে হয় না।”
“আচ্ছা বলব,কিন্তু প্রমিস করো কথাটা বললে তুমি আবার তোমার তায়কোয়ন্দোর স্পেশাল আইটেম গুলো এপ্লাই করবে না আমার উপর।”
“তায়কোয়ন্দো এপ্লাই করার মত কাজ করলে অবশ্যই এপ্লাই করব,তাই তাড়াতাড়ি বলুন।”
“না বাবা তবে বলা যাবে না,মাইর খাওয়ার শখ জাগে নি এখন আমার।”
“বলুন বলছি,নয়ত নাকে ঘুসি দিয়ে নাক বোঁচা করে ফেলব।”
উনি হাসল আমার কথায়।আমি উনার হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে উনার বুকে হালকা করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম।
“বলুন বলছি।”
উনি আমার হাতটা উনার বুকে চেপে ধরে আকাশের দিকে স্থীর দৃষ্টিতে তাকায়,আমি ছাড়াতে চাইলে শক্ত করে চেপে ধরো।
“ছোটার চেষ্টা করে লাভ নেই,আমি না চাইলে,না ছাড়লে ছুটতে পারবে না।”
“এত কথা বলতে পারছেন আর যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটা বলতে পারছেন না!আমার রাগ হচ্ছে এবার,তাড়াতাড়ি বলুন নয়ত আমি রেগে গেলে ভালো হবে না একদম।”
“তোমার উপর ২৪ ঘন্টা একজন আড়ালে থেকে নজর রাখে।”
“মানেহ?কিন্তু কেন?”(অবাক হয়ে)
” আমি বলেছি তাই।”
“সেটাই কেন বলেছেন?”
“এমনি।”
আমার দিকে তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে কথাটা বলে উঠে।উনার এমন ভাব দেখে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।
“ঐ মিয়া ছাড়ুন ত আমাকে,আপনার এত হেয়ালি ভালো লাগছে না এখন।ভালো করে বলুন ত,এত রহস্য ভালো লাগছে না।”
“তবে শোন,তোমার লাইফ রিক্স আছে।আর তোমার সেফটির জন্যই এসব করা।তুমি হয়ত নিজেকে রক্ষা করতে পারবে কিন্তু তারপরও আমি চিন্তায় থাকি তোমাকে নিয়ে।তাই আমি যাতে তোমার সব খবর পেতে পারি তার জন্য লোক লাগিয়েছি।”
“লাইফ রিক্স!আমার?”
“হে তোমার,এখন দয়াকরে আর কোন প্রশ্ন করো না আমাকে।সময় হলে আমিই তোমাকে সবটা জানিয়ে দিব।তবে একটা কথা মনে রেখো আমি যা করব তোমার ভালোর জন্যই করব।আর আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না,তোমাকে কেউ আঘাত করতে চাইলে আগে আমাকে ফেস করতে হবে।”
উনার কথাশুনে চিন্তা হচ্ছে,কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।আমার লাইফ রিস্ক!কিন্তু কার থেকে?আর কেন!এমন অনেক প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরে চলেছে।সাদাফ ভাই আমাকে চিন্তা করতে দেখে কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠে,,,
“কাল বাড়িতে কীভাবে মেনেজ করবে?”
উনার কথাশুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসি,আর মাথায় নতুন করে অনেক চিন্তারা ভর করে।সত্যিই ত কাল বাবাকে কীভাবে মেনেজ করব?বাবা যে রাগী জানলে ত দু বোনকেই কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসাইয়া দিব।কিন্তু ঐদিক দিয়ে ত আপুকেও বড় মুখ করে বলেছি বাবাকে মেনেজ করে আপুর সাথে কথা বলিয়ে সব ঠিক করে ফেলব।কিন্তু এখন কী হবে?কী করব?কীভাবে বাবাকে মেনেজ করব?
সাদাফ ভাইয়া এবার আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে,,
“কোথায় হারালে?”
আমি আনমনেই বলে উঠি,,,
“না ভাবছি বাড়িতে কীভাবে মেনেজ করব?”
“মানেহ!তুমি ভাবো নি কীভাবে বাড়িতে মেনেজ করবে!”(অবাক হয়ে)
আমি মাথা নেড়ে না জানালে উনি এবার বসা থেকে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,,,
“না ভেবে এত বড় একটা কাজ কীভাবে করলে তুমি?আঙ্কেল জানতে পারলে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিবে।”
আমি চিন্তায় হাতের নখ কামড়াচ্ছি,সত্যি এত বড় একটা কাজ করার আগে আমার ভেবে নেয়া উচিত ছিল।এখন ত চিন্তার জন্য কিছু ভাবতেও পারছি না।কেউ একজন ঠিকই বলেছিল “ভাবিয়া করিও কাজ করিও না ভাবিও না”।কথাটা যে কতটা ঠিক তা এখন হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি।
#চলবে…
(রাতে ১১-১১.৩০ এর মধ্যে আরেকটা পার্ট দিব ইনশাআল্লাহ)