ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ১১

0
2301

#ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ১১
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম

হসপিটালের বেডে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে সাদাফ ভাইয়া,উনার পাশেই বসে আছি আমি আর একজন ডাক্তার আমার গলায় ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।অজ্ঞান অবস্থাতেও সাদাফ ভাইয়া আমার হাত খুব শক্ত করে আকড়ে ধরে আছে।যেন ছেড়ে দিলেই আমি তাকে ছেড়ে চলে যাবে।আমি একদৃষ্টিতে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি,এভাবে কত শান্ত দেখাচ্ছে তাকে।কিন্তু কে বলবে এই ছেলেই কিছুক্ষণ আগে তুলকালাম বাঁধিয়েছিল যার পরিনাম এখন সে অজ্ঞান।কথাটা ভেবেই আমি মুচকি হাসলাম,আর ভাবতে লাগলাম কিছুক্ষণ আগের ঘটনা?

★ফ্লাসব্যাক★

আমি কাব্য ভাইয়ের ফোন নিয়ে বাবাকে ফোন দিচ্ছিলাম তখন দরজায় শব্দ হওয়ায় আমি ফোনটা রেখে দরজার দিকে তাকাই।আমি গলায় হাত দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর ভাবছি কাব্য ভাই কী এখানে একা ছিল নাকি তার সাথে আরো কেউ ছিল যারা এখন দরজা ধাক্কাচ্ছে?
যে বা যারাই হোক না কেন আমি নিজের আত্মরক্ষা করবই করব।আমি এসব ভাবতে ভাবতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি,কিন্তু হঠাৎ করে দরজাটা ভেঙ্গে যায় আর দুজন লোক ভিতরে প্রবেশ করে।আমি তাদের মুখের দিকে না তাকিয়েই একজনের পেটে লাথি দিয়ে আরেকজনের নাকে ঘুসি দেই।দুজনেই ফ্লোরে ছিটকে পড়ে তখন আমি একজনকে ফ্লোর থেকে উঠাতে গেলে আমার চোখ আটকে যায়।কারন আমার সামনে সাদাফ ভাইয়া,আর সাদাফ ভাইয়ার নাকে ঘুসি দেয়াতে নাক দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছে।আমি অবাক হয়ে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর সাদাফ সাবিহাকে দেখে যেন দেহে প্রান ফিরে পায়।সাদাফের নাক দিয়ে যে রক্ত পড়ছে তাতে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।সাদাফ সাবিহাকে তার সামনে পেয়ে আর কিছু না ভেবেই সাবিহাকে টেনে বুকে আগলে নেয়।এতক্ষন সাবিহাকে হারানোর ভয়ে সাদাফ খুবই অস্থির হয়ে ছিল তাই সাবিহাকে দেখে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি।জড়িয়ে ধরে আর পাগলের মত কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে,,,

“সসসাবিহা আহমার সাবিহাকে খুঁজে পেয়েছি আমি,আমার সাবিহা সুস্থ আছে।আমার সাবিহাকে আমি খুঁজে পপপেয়েছি,আমি তোমাকে আর কোথাও যেতে দিব না।তুমি এএএবার থেকে আমার সাথেই থাকবে,আমি তততোমাকে আর একা কোথাও যেতে দিবনা।তুমি আমার সাথে থাকবে,আমার কাছে থাকবে।”

সাদাফ ভাইয়া কথাগুলো বলছে আর আমাকে শক্ত করে আকড়ে ধরেছে।আমি খুব অবাক হচ্ছি সাদাফ ভাইয়ার কথা শুনে,তার পাশাপাশি গলায়ও খুব ব্যাথা পাচ্ছি।আমি যে উনাকে বলব ছাড়তে সেটা বলতেও যেন কথা গলায় আটকে যাচ্ছে,এভাবে চেপে ধরায়।তারপরও আমি অনেক কষ্টে বলে উঠি,,,

“সসসাদাফ ভাই ছাড়্ড়ুন আমাকে,আআমার ব্যাথা ললাগছে।”

সাবিহার এমন দুর্বল গলা শুনতে পেয়ে সাদাফ হুসে আসে,সাদাফ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় সাবিহাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখায়।তাই সাদাফ হুসে আসার সাথে সাথেই সাবিহাকে ছেড়ে দেয়।

আমি ছাড়া পেয়ে গলায় হাত দিয়ে বড় করে কয়েকটা শ্বাস ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়াই।গলায় চাপ লাগার কারনে ব্যাথাটা খুব বেশিই করছে গলায় আর রক্তও পড়ছে অনেক।আমি চোখমুখ কুঁচকে ফেলি ব্যাথায়,দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা শয্য করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।অন্যদিকে সাদাফও সোজা হয়ে দাঁড়ায় আর সাদাফের চোখ যায় সাবিহার দিকে,সাবিহা কেমন যেন করছে।
সাদাফ এবার সাবিহার দিকে ভালো করে তাকায় আর চোখ আঁটকে যায় সাবিহার গলায় থাকা হাতের দিকে,যে হাত দিয়ে গলা চেপে ধরেছে সেখানে স্পষ্ট রক্ত দেখা যাচ্ছে।সাদাফ রক্ত দেখে ঘাবড়ে যায়।এক ঝটকায় সাবিহাকে নিজের কাছে এনে সাবিহার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে যেই হাতটা গলায় ছিল সাবিহার।আরেক হাত সাবিহার গালে দিয়ে পাগলের মত বলে উঠে,,,

“ররক্ত,এত রক্ত কেন?তোমার কী হয়েছে সাবিহা,এত রক্ত কেন?সাবিহা কথা ববলো,ককী হয়েছে ববলো না!ননিলয়,এএএই নিলয় দদেখ না সাবিহা আহমার সাথে কথা ববলছে না।সসাবিহা কেমন যেন ককরছে!”অঅঅনেক রক্ত পড়ছে,নননিল,,,

আর কিছু বলার আগেই সাদাফ ডলে পড়ে সাবিহার উপর,অতিরিক্ত চিন্তার ফলে সাদাফ জ্ঞান হারায়।সাবিহা কোন মতে নিজেকে সামলে নেয়,নিলয় এতক্ষণ নিরব দর্শকের মত তার বন্ধুর পাগলামি গুলো দেখছিল।তখন যে সাবিহার লাথি খেয়ে নিচে পড়েছিল এখনও সেখানেই বসে আছে আর সবটা দেখছিল।কিন্তু এখন আর চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না,তাই নিলয় গিয়ে সাবিহার থেকে ছাড়াতে নিলে সাবিহা সাদাফের উপরে পড়ে যায়।সাদাফ সাবিহার হাতটা এখনও খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে যার কারনে সাবিহাও সাদাফের উপরে পড়ে যায়।সাবিহা হাত ছাড়াতে চায় কিন্তু পারে না,নিলয় সেটা দেখে এমন একটা মুহুর্তেও মুচকি হাসে আর সাবিহাকে বলে,,,

” তুমি একটু সাথে সাথে এসো।”

সাবিহা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় আর নিলয় সাদাফকে পাঁজা কোলে করে নেয়।আর সাবিহাও আরেক হাত গলায় দিয়ে অনেক কষ্টে সাথে সাথে যায়।তারা বাড়িটা থেকে বেরিয়ে নিলয়ের গাড়িতে উঠে।সাদাফ আর সাবিহাকে নিলয় গাড়িতে বসিয়ে তার ড্রাইভারকে বলে তাদের হসপিটালের পৌঁছে দিতে,সে কাব্যকে নিয়ে আসছে।

(সাদাফের ফ্রেন্ড নিলয় আর শীলা যার কারনে সাবিহা নিলয়কে চিনে।আর নিলয়ও কাব্যকে চিনে শীলার মাধ্যমেই তাই চিনতে কারো কোন অসুবিধা হয় নি)

★বর্তমান★

সাদাফ ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে,ডাক্তার বলেছে অতিরিক্ত চিন্তার কারনে জ্ঞান হারিয়েছে।চিন্তার কোন কারন নেই,সাদাফ ভাইয়া এখন ঘুমাবে।আর আমাকে ডাক্তাররা কেবিনে শিফট করতে চেয়েছিল কিন্তু সাদাফ ভাইয়ার জন্য পেরে উঠা হয় নি।তাই তারা বাধ্য হয়েই আমাকে বসিয়ে রেখে গলায় ব্যান্ডেজ করে দেয়,এই কেবিনে ডাবল বেডও নেই যে একটু রেস্ট নিব।খুব ক্লান্ত লাগছে একটু ঘুমালে ভালো লাগত কিন্তু সেটা এখন সম্ভব নয়।ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে ডাক্তার চলে যায় আর কিছুক্ষণ পর ভিতরে প্রবেশ করে নিলয় ভাইয়া।নিলয় ভাইয়া আমার জন্য স্যুপও নিয়ে আসে,আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,

“সাবিহা তুমি স্যুপটা খেয়ে নাও।”

আমি কিছু বলতে গেলে গলার কাটা জায়গায় কেমন ব্যাথা অনুভব করি,যেন গলার রগ ছিড়ে যাবে। আর নিলয় ভাইয়া সেটা বুঝতে পেরে বলে উঠে,,,

“কথা বলো না তুমি,গলায় বেশ ভালোই জখম হয়েছে।কথা বললে সমস্যা হবে,আর ডাক্তারও বলেছে কথা না বলে চুপ থাকতে যতদিন গলার কাটা গা না শুকায়।কথা বললে সমস্যা আরো বাড়তে পারে তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।”

আমি নিলয় ভাইয়ার কথা শুনে চুপ করে যাই আর ইশারায় বুঝাই যে আমি স্যুপ খাই না।নিলয় ভাইয়ার সেটা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হল,কিন্তু বুঝার পর বলে উঠে উনি,,,

“এখন এটাই খেতে হবে ডাক্তার বলেছে এখন ভারী খাবার একদম খাওয়া যাবে না।তাই একটু কষ্ট করে খেয়ে নাও।”

আমি মেনে নেই নিলয় ভাইয়ার কথা,আর চুপচাপ খাওয়া শেষ করি।খাওয়ার পর আমি আবারও ভাইয়াকে ইশারায় কিছু একটা বলতে চাইছি কিন্তু উনি কিছুই বুঝতে পারছে না।তাই নিলয় ভাইয়া তার ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বলে উঠে টাইপ করতে যা বলতে চাইছি,আমিও টাইপ করে ভাইয়ার দিকে ফোনটা এগিয়ে দেয়।নিলয় দেখে সাবিহা তাকে বলেছে,,,

“বাবাকে জানিয়ে দিন ভাইয়া আমি ঠিক আছি,নয়ত চিন্তায় মরেই যাবে।”

“শীলাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু ধরে নি আর তোমার বাসার কারো ফোন নাম্বার ত আমার কাছে নেই।তাই আমি সাদাফের বাবা মানে আঙ্কেল কে জানিয়ে দিয়েছি তোমরা হসপিটালে আছো।আর উনি যাতে তোমার বাসার সবাইকে নিয়ে হসপিটালে চলে আসে।”

আমি উনার কথার পরিবর্তে ইশারায় ধন্যবাদ জানাই।কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে কাব্য ভাইয়ের কথা আর ফোনটা নিয়ে টাইপ করে ভাইয়ার দিকে বাড়িয়ে দেই যাতে লেখা,,,

“কাব্য ভাই কোথায়?উনার কী অবস্থা এখন?”

নিলয় ভাইয়া সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“কাব্য এই হসপিটালেই ভর্তি আছে,একটু আগে জ্ঞান ফিরেছে।কিন্তু তোমাদের দুজনের এই অবস্থা কীভাবে হল?”

নিলয়ের কথা শুনে আমি মাথাটা নিচু করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবারো টাইপ করি,,,

“অনেক কাহিনী কিন্তু সেটা ফোনে টাইপ করে বলা সম্ভব নয়।তাই যতদিন না আমি সুস্থ হচ্ছি,ঠিক করে কথা বলতে পারছি ততদিন কাব্য ভাইকে একটু নজরে রাখুন।”

আমার কথা শুনে নিলয় ভাইয়া খুব অবাক হয় কিন্তু উনি বেশি কিছু না ভেবে চলে যায় কাব্যর ব্যাবস্থা করতে।সাবিহা যখন বলছে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে,তাই তাকে এখন কাব্যর উপর নজর রাখতে হবে।

_____________________________________

দুই ঘন্টা পর সাদাফের জ্ঞান ফিরে,আর জ্ঞান ফেরার পর সাদাফ নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে।আর তার পাশে সাবিহাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পায়,তার হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।সাদাফ সেটা দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,কিন্তু পরক্ষণেই সাদাফের মনে পড়ে যায় তখন সাবিহার গলায় রক্ত দেখেছিল।তাই সাদাফ শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসে।

হাতে টান অনুভব হওয়ার ঘুমটা ভেঙ্গে যায় আমার।খুব বেশিই খারাপ লাগছিল আর কখন যে চোখ লেগে যায় বুঝতেই পারি নি।আমি ঘুম থেকে উঠে ছোট ছোট চোখ করে সামনে তাকিয়ে দেখি সাদাফ ভাইয়ের জ্ঞান ফিরেছে।আমি সেটা দেখে মুচকি হেঁসে কিছু বলব কিন্তু গলায় আবারও সেই ব্যাথা অনুভব হয়।তাই চুপ করে যাই আর সাদাফ ভাইয়া আবারও উত্তেজিত হয়ে আমার গলায় ব্যান্ডেজ করা জায়গায় হাত দিয়ে বলে উঠে,,,

“তুমি ঠিক আছো?গলায় কী হয়েছে তোমার?রক্ত কেন ছিল এখানে?এখন ব্যান্ডেজ করা কেন এখানে?”

আমি কী বলব এখন,কিছুই ত বলতে পারছি না।উফফ খুব বিরক্ত লাগছে এখন,কথা বলতে না পারলে কার ভালো লাগে!আমি চুপ করে আছি বলে সাদাফ ভাই আবারও বলে উঠে,,,

“এই সাবিহা তুমি আমার সাথে কথা কেন বলছো না?তোমার কী হয়েছে বলো আমাকে?”

সাদাফ ভাইয়া কথাটা কিছুটা জোড়েই বলে উঠে,যার ফলে বাইরে থেকে সাবিহার বাবা,মা,বোন,আর সাদাফের বাবা মা আর নিলয় ভিতরে প্রবেশ করে।সাবিহার পরিবার আর সাদাফের পরিবার অনেক আগেই এসেছে হসপিটালে কিন্তু তারা ঘুমাচ্ছিল বলে নিলয় তাদের জাগাতে বারন করে।তাই তারা বাইরে অপেক্ষা করছিল তাদের ঘুম ভাঙ্গার জন্য।কিন্তু এখন সাদাফের কথা শুনে সবাই ভিতরে আসে,সাদাফ তার বাবাকে দেখে বাচ্চাদের মত অস্থির হয়ে বলে উঠে,,,

“বাবা দেখো না সাবিহা আমার সাথে কথা বলছে না!বলছে না আমাকে সাবিহার কী হয়েছে?ও বাবা তুমি সাবিহাকে বলো না আমার সাথে কথা বলতে।বলো না বলতে অর কী হয়েছে!আমার যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে বাবা,একটু কথা বলতে বলো না আমার সাথে।”

সাদাফ ভাইয়ার কথাগুলো বলার সময় চোখের কোনে পানি জমা হয়।উনাকে এমন করতে দেখে আমি অবাকের উপর অবাক হচ্ছি।আজ নতুন করে সাদাফ ভাইয়াকে দেখছি।

“এমন পাগলামি কেন করছে উনি?উনি আমার জন্য এতটা চিন্তিত সেটা ত উনাকে আগে দেখে মনে হয় নি।আচ্ছা উনার মনে কী আমার জন্য কোন ফিলিংস আছে।ইস্ কী ভাবছি আমি এসব,দেৎ এমন কিছুই হবে না।”

মনে মনে এসব ভাবছি আর সাদাফ ভাইকে দেখছি,সাদাফ ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে আঙ্কেল মানে সাদাফ ভাইয়ের বাবা বলে উঠে,,,

“তুই একটু শান্ত হ সাদাফ,সাবিহা ঠিক আছে এখন।”

“সাবিহা ঠিক থাকলে অর গলায় ব্যান্ডেজ কেন আর আমার সাথে কথা কেন বলছে না,সাবিহা ঠিক নেই!

সাদাফ ভাই এবার আমার কাঁধে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে বলে উঠে,,,

“এই সাবিহা আমার সাথে কথা বলো তুমি।বলো আমাকে তোমার কী হয়েছে?একটু বলো না আমায় এমন চুপ করে থেকো না প্লিজ।তোমার চুপ থাকাটা আমার ভিতরটা ধুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে,প্লিজ কথা বলো আমার সাথে।”

ঝাঁকুনির ফলে আবারও গলায় ব্যাথা পাচ্ছি,তাই চোখটা বন্ধ করে ফেলি আমি।সেটা দেখে নিলয় ভাইয়া বলে উঠে,,,

“সাদাফ তুই শান্ত হ,আমি তকে সবটা বলছি সাবিহার কী হয়েছে?আর শীলা তুই সাবিহাকে নিয়ে পাশের কেবিনে যা,সাবিহার বিশ্রাম নেয়া দরকার।এতক্ষণ সাদাফের জন্য সেটা সম্ভব হয় নি এখন তুই সাবিহাকে নিয়ে যা।”

নিলয় ভাইয়ার কথা শুনে সাদাফ ভাইয়া এবার হাতের স্যালাইনের ক্যানেলটা একটানে খুলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,,,

“না সাবিহা কোথাও যাবে না,সাবিহা আমার কাছে থাকবে।তোমরা যাও এখান থেকে,সাবিহা আমার কাছেই থাকবে।আমি সাবিহাকে আর একা ছাড়ব না,আমার কাছে রাখব আমার সাবিহাকে।ছেড়ে দিলেই আবার হারিয়ে ফেলব,আমি যেতে দিব না সাবিহাকে।”

সাদাফ ভাইয়ের পরপর এমন অস্বাভাবিক আচরনে আমি খুবই অবাক হচ্ছি উনি এমন পাগলামি কেন করছে?আমার মাথা এসব ভাবনায় পুরো পাগল পাগল অবস্থা।

“সাদাফ সাবিহা তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে না,পাশের কেবিনেই আছে।সাবিহার শরীর ভালো নয় একটু রেস্ট নিতে দাও।”(মনির সাহেব)

” না সাবিহা কোথাও যাবে না,আমার সাথে থাকবে।আর সাবিহাকে পাশের কেবিনেও যেতে দিব না,আমার কাছেই থাকবে।”

কথাটা বলেই সাদাফ ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নেয় আর বেডে শুইয়ে দেয়।সেটা দেখে আমার চোখ বড়বড় হয়ে যায়,উপস্থিত সবাই অবাক চোখে সাদাফের দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাফ যে সাবিহার জন্য এতটা ডেস্পারেট হতে পারে সেটা সবার কল্পনার বাহিরে ছিল।সাদাফ ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,,,

“তুমি আমার কাছেই থাকবে,কোথাও যেতে দিব না।এবার একটু কথা বলো না আমার সাথে,তোমার গলার স্বরটা শুনতে খুব ইচ্ছে করছে।একটু কথা বলো না আমার সাথে,বলো না তোমার গলায় কী হয়েছে?”

সাদাফ ভাইয়ের কথা শুনে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,কিছুই বলছি না।আর সাদাফ ভাইয়া টলমল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কথাগুলো বলেছে।আমার এবার সাদাফ ভাইয়ের জন্য খুবই খারাপ লাগছে।আমার কথা শোনার জন্য উনি কতটা অস্থির হয়ে আছে অথচ আমি কথাই বলতে পারছি না।

“সাদাফ সাবিহা কথা বলবে না।”(শীলা)

“মানেহ?”

তারপর শীলা সবটা খুলে বলে যতটা নিলয় জানে।সবটা শুনে সাদাফ বলে উঠে,,,

“এসবের পিছনে ঐ কাব্য আছে।ঐ কাব্য সাবিহাকে আঘাত করেছে আমি জানি।কাব্যকে আমি ছাড়ব না জানে মেরে দিব একদম।আমার কলিজায় হাত দেয়া,ঐ হাত কেটে ফেলব আমি।”

কথাগুলো বলে সাদাফ বের হয়ে যায় কেবিন থেকে আর তার পিছন পিছন সাদাফের বাবা আর নিলয়ও যায়।

#চলবে…

(১৯০০+ শব্দের পার্ট দিলাম,এত বড় পার্ট আমি আগে লিখি নাই।চার ঘন্টা ধরে খুব কষ্ট করে লিখেছি?,এবার সবাই কিছু ভালো ভালো কমেন্ট করো।তাতে করে আমার পরিশ্রম করাটা স্বার্থক হবে?।
আর সবাই জানিও সাদাফের এমন রূপ কার কেমন লেগেছে?!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here