ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ১৮(ধামাকা স্পেশাল পর্ব)

0
2043

ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ১৮(ধামাকা স্পেশাল পর্ব)
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম

সাদাফ ভাই কোমড়ে হাত দিয়ে আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে,আর আমি নিচে পড়ে গিয়ে ভালোই ব্যাথা পেয়েছি কোমড়ে।তবে ততটাও ব্যাথা পাই নি যে কাঁদব কিন্তু সাদাফ ভাইয়ের নাকে কামড় দিয়ে এখন নিজেরই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।তাই এই বিষয়টা ঘুরানোর জন্য কেঁদে বলে উঠি,,,

“আল্লা গো আমার কোমড়টা গেলো গো।ও বাবা গো,তোমার মেয়ের কোমড়টা আজ ভেঙ্গেই গেলো গো।এখন আমাকে কে বিয়ে করবে গো?।”

কথাটা বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করে দেই,আর আড়ে আড়ে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই।দেখি উনি এখন কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে,নাটকটা কী কাজে লাগল না নাকি!কথাটা ভেবেই আরো জোড়ে জোড়ে কেঁদে ফেললাম।আর উনি একবার আশেপাশে তাকিয়ে আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছু না বলেই নিচু হয়ে আমাকে আবারও কোলে তুলে নেয়।আমি কান্না ভুলে চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই,কিন্তু উনি আমার দিকে তাকাচ্ছেই না।আমি উনাকে কিছু বলব কিন্তু কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা ভেবে চুপ করে যাই।এবার আর ছোটার জন্য কোন কায়দা করি নি,কে জানে আগের মত এবারও পড়ে গিয়ে না সত্যি সত্যি কোমড়টা ভাঙ্গি।এসব ভেবে সাদাফ ভাইয়ের গলাটা চেপে ধরি,উনি সেটা দেখে মুচকি হাসে।কিন্তু সে হাসিটা আমার দৃষ্টিগোচর হলো না।
কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে নিয়ে বাইরে চলে আসে লুকিয়ে,আর মামুদের বাগানে একটা বেঞ্চে আমাকে বসিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আমার সামনে।তারপর উনি শান্ত গলায় বলতে শুরু করে,,,

“খুব ব্যাথা পেয়েছো?”

উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠে,আমিও উনার চোখের দিকে তাকাই।কত মায়া লুকিয়ে আছে ঐ চোখে।উনার চোখের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটা অনুভব হচ্ছে,ইচ্ছে করছে না মিথ্যা বলতে।তাই আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝাই যে ব্যাথা পাই নি।উনি সেটা দেখে আমার গালে হাত দিয়ে আবারও বলে উঠে,,,

“সত্যি!”

আমি আবারও মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বুঝাই,উনি এবার দাঁড়িয়ে ধমকে বলে উঠে আমাকে,,,

“ত তখন ওভাবে কাঁদছিলে কেন?তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম!কিন্তু তখন কেউ জেগে যাওয়ার ভয়ে কিছু বলতে পারি নি।”

উনার ধমকটা আমার ঠিক হজম হল না,তাই আমিও রেগে বলে উঠি,,,

“আপনাকে ত কেউ বলে নি আমার জন্য এত চিন্তা করতে,তবে এত চিন্তা কেন করছেন?”

“কারো জন্য চিন্তা করতে হলেও কী কারো পারমিশন নিতে হবে!আর আমরা যাকে ভালবাসি তার প্রতি চিন্তাটা এমনি এমনি এসে যায়।কারো বলার অপেক্ষায় থাকে না যে সে বলবে তারপর চিন্তা করব।”

” ভাইয়া ভালবাসি কথাটা আমার কাছে বলবেন না দয়াকরে,ভালবাসা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।আর ভালবাসা শব্দটার প্রতিও ঘৃনা জন্মে গেছে।আপনি আমাকে অনেক ভালবাসেন কিন্তু আমি আপনার ভালবাসার সঠিক দাম দিতে পারব না।সুতরাং আপনি আমাকে ভুলে নতুন কাউকে খুঁজে নিন আর তাকে ভালবেসে সুখে সংসার করুন।”

আমার কথা শুনে উনার চেহারার রং পাল্টে যায়, চোখের কোনে পানি জমা হয়।কিন্তু উনি নিজেকে সামলে ধরা গলায় বলে উঠে,,,

“আমি কী বখাটে ছেলে?আর ভালবাসা কী কোন পন্য যে একজন নিলো না আরেকজনকে দিয়ে দিব!আরে তুমি ভালবাসতে নাই পারো কিন্তু আমার ভালবাসা নিয়ে কথা কেন বলো?অন্তত আমার ভালবাসাকে সম্মান করো,আমাকে আমার মত ভালবাসতে দেও না তোমাকে।তুমি ত আমাকে ভালবাসো না তবে কেন এভাবে কষ্ট দেও?বিশ্বাস করো খুব কষ্ট হয় আমার।

কথাগুলো বলার পর উনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে,উনি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে এবার রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

” আর তুমি ত সারা দুনিয়ার কাছে বুঝদার মেয়ে আর আমার কাছে এসেই তোমার যত বাচ্চামি।তুমি আমার ফিলিংসটা বুঝেও বুঝতে চাইছো না।যে তোমাকে ভালবাসে তাকে দাম দেও না আর যাকে তুমি ভালবাসো সে তোমাকে দাম দেয় না।আর তুমি তারই পিছনে পড়ে থাকো যে তোমাকে কখনও ভালবাসবে না,কষ্ট ছাড়া কিছুই দিবে না।আর আমাকে দেখো তোমাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছি,কিন্তু পাত্তাই পাচ্ছি না।আমার ভালবাসার কোন দামই দিচ্ছো না,আরে একবার শুধু বলো তুমি আমার হবে দেখো সারাজীবন বুকে আগলে রাখব।ভালবাসার উপর থেকে ঘৃনার পর্দা সরিয়ে নতুন করে ভালবাসতে শিখাবো তোমায়।সারা পৃথিবীর সুখ এনে দিব তোমাকে।”

উনি একটু থেমে আবারও বলে উঠে,,,

“অবশ্য তুমি বলো আর নাই বলো,মানো আর না মানো তুমি অতীতেও আমার ছিলে,এখনও আছো,ভবিষ্যতেও থাকবে।তুমি আমার,শুধু আমার,আমার অর্ধাঙ্গিনী তুমি।”

শেষের কথাটা একটু জোড়েই বলে উনি।আর আমি এবার উনার কথাশুনে থমকে যাই,কী বলছে উনি এসব পাগলের মত!অর্ধাঙ্গিনী মানে?

“ভাইয়া আপনি পাগলের মত এসব কী বলছেন?”(অবাক হয়ে)

আমার কথাশুনে উনি খুব রেগে যায়,তেড়ে আসে আমার কাছে।আর গাল চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে বলে উঠে,,,

“এই এত কীসের ভাই ভাই করিস হে!আমি তোর কোন জন্মের ভাই লাগি?তোর এই কথায় কথায় ভাই বলাটা আমার মনে রক্তক্ষরণ করে প্রতিনিয়ত কিন্তু এতদিন শয্য করেছি।শুধুমাত্র এটা ভেবে যে তুই একদিন বুঝবি আমাকে,আমার ফিলিংস বুঝবি একদিন।কিন্তু তুই ত বুঝেও বুঝিস না,আমার ফিলিংসের কোন দামই দিস না।
আমি তোর কোন ভাই টাই লাগি না,স্বামী হই তোর।কান খুলে শুনে রাখ আমি তোর স্বামী হই।তুই যখন ক্লাস ফোরে পড়িস আর আমি ক্লাস নাইনে তখন তকে বিয়ে করেছি আমি।সেটা শুধু তোর বাবা,মা আর আমার পরিবারের লোক জানে আর কেউ জানে না।এতদিন তোর বড় হওয়ার অপেক্ষায় তকেও কিছু জানাই নি কিন্তু আর নয়।এবার তকে বউ সাজিয়ে ঘরে তুলব আমার,ভালবেসে রাখব কাছে খুব যত্ন করে।তোর এত অবহেলা আমার আর শয্য হচ্ছে না,বুকের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে রে।বুকের ভিতরে প্রতিনিয়ত তোকে হারানোর ভয় তাড়া করে।তখন ইচ্ছে করে তকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে,ভালবেসে রাখব কাছে দূরে যেতে দিব না তকে।কিন্তু পারি নি,আমি সেই সুখটা পাই নি রে।প্রতিনিয়ত তোকে হারানোর ভয়ে মনের আগুনে পুড়েছি আমি।যে আগুন নিভাতে তোর প্রয়োজন ছিল কিন্তু তুই কাছে থাকার পরও কাছে পাই নি।প্রতিনিয়ত তোর অবহেলার পাত্র হয়েছি,কিন্তু আর পারছি না আমি।পারছি না তোর অবহেলা শয্য করতে।এবার আমার ভালবাসা চাই তোর ভালবাসা চাই,তকে চাই নিজের করে।তোর ভালবাসা দিয়ে দূরে করে দে না আমার সমস্ত কষ্ট।আমি যে তোর ভালবাসার কাঙাল,একটু ভালবাস না আমায়।”

কথাগুলো বলেই উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।আমি এক পলকে উনার দিকে তাকিয়ে রয়েছি,আমার চোখেও পানি।উনি আমার স্বামী,আর উনি আমাকে এতটা ভালবাসে।কেউ কাউকে এতটা ভালো কীভাবে বাসতে পারে,মনের ভিতর কেমন যেন একটা সুখের হাওয়া বইছে।আমাকে কেউ এতটা ভালবাসে, আমাকে পাওয়ার জন্য এতটা মরীয়া হয়ে আছে!আমি ত ভাগ্যবতী উনার মত একজনের ভালবাসা পেয়ে।উনার ভালবাসার কাছে ত কাব্য ভাইয়ের প্রতি আমার ভালবাসা তুচ্ছ।উনি আমার এত অবহেলার পরও আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।আমি এমন একজনকে রেখে এতদিন মরীচিকার পিছনে ছুটে এসেছি।জীবনকে কী ২য় সুযোগ দেয়া যায় না! উনার ভালবাসায় কী আমি নিজেকে রাঙাতে পারি না!পারি না সবটা ভুলে উনার ভালবাসায় সারা দিতে?পারি না নতুন করে ভালবাসতে?

কথাগুলো ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম,উনাকে ফিরিয়ে দিব না।উনার ভালবাসায় সারা দিব আমি।কথাটা ভেবেই আমি উনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসি আর উনার গালে হাত দেই আর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠি,,,

“পারবেন আমাকে নতুন করে ভালবাসা শিখাতে?”

উনি আমার দিকে অবাক চোখে তাকায়,আমি সেটা দেখে আবারও বলে উঠি,,,

“ভালবাসতে চাই আপনাকে।”

আমার কথাশুনে সাদাফ ভাইয়ার মুখে এক চিলতে হাসির আবাস দেখা যায়।আর সাথে সাথে ঝড়ের গতিতে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।এই কান্না সুখের কান্না।আমিও চোখ বন্ধ করে উনাকে বাহুডোরে আগলে নেই।আমি আমার উওর পেয়ে গেছি।

#চলবে…

(জোড় ক্যা ঝটকা হায় জোড়ো সে লাগা না?তা পাঠকগন ক্যাসা লাগা ধামাকা?।
না জানালে সাবিহা আর সাদাফের ২য় বিয়েতে কাউকে দাওয়াত দিব না?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here