ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ২

0
2634

ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ২
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম

হসপিটালে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসছে একটা ছেলে,রিসেপশনিস্টের থেকে কিছু একটা জানতে চেয়ে আবারও দৌড় লাগাল।ছেলেটা দৌড়ে এসে একটা কেবিনের ভিতরে ডুকল।

সকাল বেলা বেডে আধশোয়া হয়ে বসে ফোন টিপছিলাম তখন কোথা থেকে একজন এসে আমার সামনে দাড়াল।আমি চোখ তুলে সামনে তাকালে দেখতে পাই শীলা আপুর ফ্রেন্ড সাদাফ ভাইয়া।উনাকে দেখে খুব অবাক হই আমি,কারন উনি একটা কাজে সিলেট গিয়েছিল।কিন্তু পরক্ষনেই আমি নিজেকে সামলে উনাকে প্রশ্ন করলাম,,,

“ভাইয়া আপনি এখানে!”

“তোমাকে দেখতে এলাম।শীলাকে কল দিয়েছিলাম তারপর এসব জানতে পারলাম।এখন কেমন আছো তুমি?”

“এইত আল্লা রহমতে ভালোই আছি,কিন্তু আপনি না সিলেট গিয়েছিলেন পরশু।তার জন্যই ত আপুর এনগেজমেন্ট পার্টিতে থাকতে পারলেন না।”

“হ্যা মানে কাল রাতেই ফিরেছি।”

“আপনার না এক সপ্তাহ পর ফিরার কথা ছিল!”(সন্দেহ করে)

“কাজ শেষ হয়ে গেছে তাই কাল রাতেই ফিরে এলাম কিন্তু এসব কীভাবে হল সাবিহা?এমন অমানুষের মত মারল তোমার ভাই আর তোমরা এখনও চুপ করে আছো কেন?”

“ভাইয়া এসব বাদ দিয়ে আমরা অন্য কথা বলি!”

“কেন বাদ দিব সাবিহা,যে তোমাকে এত নির্মম ভাবে অত্যাচার করল ছোট একটা বিষয়ে তাকে তুমি এমনি এমনি ছেড়ে দিবে?আর তুমি আংকেল কে বারন করেছো কেন কাব্যকে কিছু বলতে?”(উত্তেজিত হয়ে)

“আপনাকে এসব কে বলল?আমি বাবাকে বারন করেছি এটা আপনাকে কে বলল?”

“তোমাকে এত কথা বলতে বলি নি সাবিহা,যেটা বলেছি সেটার উওর দেও!”(রেগে)

সাদাফের ধমকে সাবিহা কেঁপে উঠে,সাবিহা চুপ করে আছে।সেটা দেখে সাদাফ আবারও ধমকে বলে উঠে,,,

” সাবিহা আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি উওর দিচ্ছো না কেন?”

“ভাইয়া আপনি ঠিক করে কথা বলুন,আমার সাথে এভাবে রাগ দেখাতে পারেন না আপনি।”

“আমি রাগ দেখিয়ে কথা বললে তোমার সেটা শয্য হয় না আর তোমার ভাই যে তোমাকে এত নির্মম ভাবে আঘাত করল সেটা তোমার শয্য হয়ে গেলো তাই না!”

“ভাইয়া প্লিজ আপনি এখন আসুন,আমি এটা নিয়ে আর একটা কথাও বলতে চাই না।”

সাবিহার কথা শুনে সাদাফ আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না।গড়গড়িয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে।
আমি বড় করে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে ভাবতে থাকি কালকে সন্ধ্যার কথা,,,

★ফ্লাসব্যাক★

সন্ধ্যা বেলা সাবিহাকে হসপিটালে ভর্তি করার কতক্ষণ পরেই সাবিহার জ্ঞান ফিরে।তখন সাবিহাকে একে একে সবাই দেখে বের হয়ে যায় কেবিন থেকে কিন্তু থেকে যায় সাবিহার বাবা মনির সাহেব।মনির সাহেব সাবিহার কাছে গিয়ে সাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“আমার ছোট্ট প্রিন্সেস এখন কেমন আছে?”

সাবিহা দুর্বল গলায় বলে উঠে,,,

“আমি ভালো আছি বাবা,কিন্তু তোমার চোখ এমন ফুলা লাগছে কেন?নিশ্চয়ই কেঁদেছ তুমি তাই না!”

মনির সাহেবের চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল সেটা দেখে সাবিহা অস্থির হয়ে বলে উঠল,,,

“বাবা তুমি কেঁদো না,তুমি কাঁদলে ত আমার খুব কষ্ট হয়।”

“আমি আমার প্রিন্সেসকে রক্ষা করতে পারি নি,একটা ছেলে আমার প্রিন্সেসকে এভাবে অমানুষের মত মারল কিন্তু আমি কিছুই করতে পারলাম না।ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি,ঘৃণা হচ্ছে যে আমি একজন বাবা হয়ে একটা অমানুষের হাত থেকে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না।”

“বাবা তুমি প্লিজ শান্ত হও,তোমারই বা কী করার ছিল তখন।তোমরা যাতে কিছু করতে না পারো তার জন্যই ত উনি ওভাবে দরজা বন্ধ করে মেরেছে আমায়।তুমি এসব ভেবে কষ্ট পেও না বাবা,আমি এখন ঠিক আছি দেখো।”

“আমিও ঠিক আছি মামনি,তখন কিছু করতে পারি নি ত কী হয়েছে কিন্তু এবার আর কাব্যকে আমি ছেড়ে দিব না।কাব্যকে তার কর্মের ফল দিয়েই ছাড়ব আমি।”

“বাবা তুমি কিছু করবে না কাব্য ভাইকে।”

“মানেহ?”

“মানে হল তুমি কাব্য ভাইকে কিছু করবে না,উনাকে কিছু বলবেও না তুমি।”

“তুই এসব কী বলছিস?যে তকে এভাবে মারল তাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব নাকি?অসম্ভব আমি এটা কিছুতেই হতে দিতে পারি না।”(রেগে)

“বাবা আমি তোমাকে কাব্য ভাইয়াকে ছেড়ে দিতে বলি নি।শুধু বলেছি তুমি উনাকে কিছু করবে না আর বলবেও না।যা করার আমিই করব,আমার সাথে যে অন্যায়,যে খারাপ আচরন এতদিন করে এসেছে তার প্রতিটা কনা পাথর দিয়ে ফিরিয়ে দিব।এতদিন ভালবাসার দাবী নিয়ে পাগলামি করেছি কাব্য ভাইয়ের সাথে।কিন্তু উনি প্রতিবারই আমার ছোট্ট হৃদয়ে প্রতিনিয়ত আঘাত করেছে।সেসব মনে ধরি নি কিন্তু আজ যা করেছে উনি আমার সাথে তা আমি কড়ায় গন্ডায় ফিরিয়ে দিব।”

“সাবিহা তুই এখনও অনেক ছোট,তুই কী করবি?তকে কিছু করতে হবে না যা করার আমিই করব।”

“বাবা আমি তোমাকে আমার কছম দিলাম তুমি কাব্য ভাইকে কিছু বলবে না আর করবেও না।আর আমি তায়কোয়ন্দো(মার্শাল আর্ট) শিখতে চাই।যেটা মাধ্যমে আমি নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রশিক্ষিত করে নিজের আত্মরক্ষা নিজেই করতে পারব।যাতে আর কোন কাব্য আমার উপর কোন নির্যাতন করতে না পারে।”

“আমার মামনিটা কবে এত বড় হয়ে গেলো বুঝতে পারি নি।মামনি তুই যা বলছিস তাই হবে কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”

“কী শর্ত বাবা?”

“তোর মামার বাড়ির সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।আমি ঠিক করেছি শীলার সাথে মেঘের বিয়েটা ভেঙ্গে দিব কারন যে পরিবারে কাব্যর মত একটা পশু আছে সে পরিবারে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিব না।”

“বাবা তুমি এসব কী বলছো?মেঘ ভাইয়া আর শীলা আপু একে অপরকে খুব ভালবাসে।আর মেঘ ভাইয়া কাব্য ভাইয়ের মত নয়,আর মামার বাড়ির সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলে আমি আমার প্রতিশোধ নিব কীভাবে?”

“কিন্তু আমি,,,

” বাবা কোন কিন্তু নয় এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই সবটা চলতে দাও।তুমি কাব্য ভাই+সবার সাথে ভালো আচরন করো।আমি সুস্থ হলে তায়কোয়ন্দো শিখব তারপর দেখাব ঐ কাব্য আহমেদকে।”

“ঠিক আছে তুই যখন বলছিস তবে তাই হবে।”

★বর্তমান★

সাবিহা আজ বাসায় ফিরবে সাবিহার বাবা আর শীলা এসেছে সাবিহাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে।সাবিহা তৈরি হয়ে কেবিন থেকে বের হতে গেলে সামনে এসে দাঁড়ায় সাদাফ।

#চলবে…

(গত পর্বের কয়েকজনের কমেন্ট পড়ে আমি শিহরিত,প্রথম পর্ব লেখার পর এত ভালো ভালো কমেন্ট আশা করি নি আমি।আর গল্পে স্পষ্ট লেখা আছে দরজা বন্ধ করে কাব্য সাবিহাকে মেরেছে সেখানে কেউ উপস্থিত ছিল না।বাইরে থেকে সবাই কাব্য কে থামানোর জন্য চেষ্টা করেছে।সেটা আমি ক্লিয়ার করেছি।
এখন দয়াকরে কেউ বলবেন না যে দরজা ভেঙ্গে কেন বাঁচাল না সাবিহাকে?তবে তার জন্য আমার আগে থেকেই তৈরি করে রাখা উওর হলঃ সে গিয়ে দরজা ভেঙ্গে সাবিহাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসুক?।
আর কাব্য সাইকো টাইপের রাগটা বেশি আর সাবিহাকে শয্যও করতে পারে না তাই ওভাবে মেরেছে।আর তার শাস্তি কাব্যকে সাবিহাই দিবে।

আর সাবিহার বাবা কেন কাব্য কে কিছু বলে নি সেটা আশা করি আজকের পর্ব পড়ে সবাই বুঝতে পেরেছেন!আশা করি সবার প্রশ্নের উওর পেয়ে গেছেন।
আর কোন বাবার সামনে তার মেয়েকে কেউ কিছু বললে সে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে না।আর সেটা আপনাদের বুঝা উচিত ছিল।আর আমিও একটা মেয়ে আর মেয়ে হয়ে আমার গল্পে আর যাই হোক মেয়েদের ছোট করব না।আর আমার লেখা #সোনার সংসার গল্পটা পড়ার পরও আপনাদের বুঝা উচিত ছিল যে আমি আর যাই করি আমার গল্পে কোন মেয়েকে ছোট করব না।সে ভরসাটা করতে পারতেন,কিন্তু আপনারা ভরসা কী ধৈর্যই ধরতে পারেন নি।তাই আপনাদের কাছে রিকুয়েষ্ট বাজে কথা না বলে ধৈর্য নিয়ে গল্পটা পড়ুন।

আর ভেবেছিলাম রাতে আরেক পার্ট দিব কিন্তু আপনাদের কমেন্ট পড়ে সেটা করতে ইচ্ছে করছে না।আমার কথায় কারো খারাপ লাগলে Sorry)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here