ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ২২
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
অনেকদিন পর আজ স্কুলে যাব,তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে একদম রেডি হয়েই নিচে নামলাম।বাবা আর আপু ডাইনিং টেবিলে বসে আছে,মা খাবার বেড়ে দিচ্ছে।আমি হাসিমুখে বাবার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ি,বাবা আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে বসে রয়েছে।বাবা গতকাল আপুদের বিয়েটা মেনে নিলেও আমার উপর অভিমান করে আছে।তাই বাবা কাল থেকে একটা কথাও বলে নি আমার সাথে।আমি এবার মুখটা ছোট করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াই।তখন আপু বলে উঠে,,,
“এই কই যাস তুই না খেয়ে?খেয়ে যা।”
“আপু আমি খাব না,স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম।”
“হেনা তোমার মেয়েকে বলে দাও না খেয়ে স্কুলে যাওয়া যাবে না।”
বাবার কথাশুনে আমার খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু আপাতত হাসি কন্ট্রোল করে বাবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মাকে বললাম।
“মা বলে দাও,তোমার মেয়েকে কেউ খাইয়ে দিলে খাবে,নয়ত না খেয়ে চলে যাবে।”
“আল্লাহ তায়া’লা আমাদের দুটো হাত দিয়েছে কাজে লাগানোর জন্য,তাই হাতদুটো কাজে লাগাতে শেখাও তোমার মেয়েকে।”
“হাতদুটো আপাতত পকেটে আছে তাই কাজে লাগাতে পারছি না,ত মা বলে দাও খাইয়ে দিতে নয়ত খাব না।”
এবার মা আমার কান টেনে ধরে বলে উঠে,,,
“দুই বাপ,বেটি মিলে কী শুরু করেছিস হুম!দুজন সামনা সামনি রয়েছিস তারপরও আমার মাধ্যমে কথা চালান করছিস কেন?”
“মা লাগছে ছাড়ো ত,আর আমার কী দোষ বলো ত সব ত আমার হিটলার বাবার,,,
বাকিটা না বলে জিভ কামড়ে ধরি,আর ভয়ে ভয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি সেটা দেখে বোকার মত হাসার চেষ্টা করি।আর মার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দেই এক দৌড়,আর এক দৌড়ে একদম গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম।বাপরে আজ জোড় বাঁচা বেঁচে গেছি,কার সামনে কী বলে ফেললাম উফফ!সাবিহা তুই দিনদিন বাচাঁল হয়ে যাচ্ছিস নিজেকে সামলা সাবিহা।নয়ত কবে যেন এত কথা বলার জন্য মাইর খাস।নিজের মনে এসব বকবক করে চললাম স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্য।
____________________________________
হঠাৎ করেই গাড়িটা থেমে যায় মাঝ রাস্তায়,আমি সেটা দেখে ড্রাইভার চাচাকে জিজ্ঞেস করি।
“গাড়ি থামালেন কেন চাচা?”
“সামনে ত সাদাফ স্যার দাঁড়ায়ে আছে গাড়ি লইয়া,এমন ভাবে রাখছে কোনদিকেই যাইতে পারমু না।”
আমি চাচার কথাশুনে উঁকি দিয়ে দেখি সাদাফ ভাই ফোন হাতে নিয়ে ড্রাইভিং সিটে দরজা খুলে বসে আছে।এক পা নিচে আরেক পা গাড়িতে দিয়ে,
ভাবখানা এমন যেন কোন সিনেমার হিরো।উনার পাশেই নিলয় ভাইয়া বসে আছে,সাদাফ ভাইয়ের দৃষ্টি আমার গাড়িতেই আবদ্ধ।উনি এবার গাড়ি থেকে নেমে আমার দিকে এগিয়ে আসে।কিন্তু উনার সাথে এখন কথা বলতে চাইছি না আমি।এখন কথা বললেই ঝামেলা হবে,গতকালকের ঘটনা এখনও ভুলি নি আমি।রাগটা আগের মতই আছে,এখন আসছে হয়ত রাগ ভাঙ্গাতে কিন্তু সেটা ত হতে দেয়া যায় না।কয়দিন শাস্তি পাক কালকের ঘটনার জন্য।তাই ড্রাইভার চাচাকে বললাম গাড়ি পিছনে নিয়ে অন্য রাস্তায় যেতে।আমার কথামত চাচা গাড়ি স্টার্ট দেয় আর পিছনে ঘুরাতে নিলেই সামনে এসে দাঁড়ায় সাদাফ ভাই।আমার সেটা দেখে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে,কিন্তু তারপরও রাগটা কন্ট্রোল করে গাড়ি থেকে নেমে উনার সামনে দাঁড়ালাম।আর হাত গুজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,,,
“কী চাই?গাড়ি থামানোর কী মানে?”
“তোমাকে চাই।”
“রাস্তাঘাটে রোমিওগিরি কম কইরেন,নয়ত পাবলিক দিয়ে মাইর খাওয়াতে আমার বেশি সময় লাগবে না।”
“মাইর খেতেও রাজি আছি,কিন্তু তোমার এইরকম অবহেলা মানতে পারছি না।কাল থেকে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছি কলই ধরছো না।তোমার বাড়িতে গেলাম দেখাও করলা না,দরজা বন্ধ করে বসে ছিলা।এসবে খুব পুড়ছি আমি,কালকের পুরো ঘটনাটা ত আমাকে বলতে দাও।আমার কথা না শুনেই এভাবে শাস্তি দিচ্ছো আমাকে।”
“এক্সকিউজ মি!আপনাকে আমি কী অবিশ্বাস করেছি?”
“না সেটা করো নি,কিন্তু,,,
” যতটুকু জিজ্ঞেস করছি ততটুকু বলবেন এর বেশি কথা বলবেন না।আমি আপনাকে অবিশ্বাস করি নি আমি জাস্ট আপনার ভুলটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি।আপনাকে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে ছিল আপনি তাকে সাথে সাথে সরিয়ে না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন।আমাকে দেখার পর সরিয়েছেন,এই কাজটা কী আপনার আগে করা উচিত ছিল না?আবার আপনারই সামনে একটা মেয়ে আমার মৃত্যু কামনা করছিল আর আপনি তাকে কিছুই বললেন না।তার জন্য কী আমার রাগ করা জায়েজ নয়?”
“সাবিহা আমি,,,
” চুপ একদম চুপ,কোন কথা নয়।পথ ছাড়ুন আমার লেট হচ্ছে।”
“না আগে তুমি আমার কথা শুনবে তারপর যাবে।”
“আপনার কথাতে চলবে নাকি?”
“দরকার পড়লে আমার কথাতেই চলবে,কারন সে অধিকার আমার আছে।”
“আপনার সাথে কথা বলে লাভ নেই,আপনি কথা শোনার মানুষ নন।”
কথাটা বলেই গাড়িতে উঠে বসলাম,আর চাচাকে ড্রাইভ করতে বললে উনিও তাই করে কিন্তু গাড়ি চলছে না।সেটা দেখে সাদাফ ভাই হাসতে হাসতে বলে উঠে,,,
“গাড়ি কী চাকা ছাড়া চলবে নাকি!আর চাকা কী হাওয়া ছাড়া চলে নাকি!”
কথাটা বলেই উনি আবারও হাসিতে মেতে উঠে।আমি আবারও গাড়ি থেকে নেমে চাকা চেক করে দেখি উনার কথাই সত্যি।আর কাজটা যে উনিই করেছে সেটা বুঝতেও বাকি নেই আমার।অসম্ভব রকম রাগ লাগছে,তাই রেগে উনার কলার টেনে ধরে বলে উঠলাম।
“এটা কী করলেন?এসব করে কী প্রমান করতে চাইছেন আপনি?”
“তোমার সাথে কথা বলতে চাইছি,সেদিনের ঘটা সবটা তোমাকে বলতে চাইছি।”
“আমি শুনতে চাই না,তাই ভালোয় ভালোয় পথ ছাড়ুন।”
উনি একটু সাইড হয়ে বলে উঠে,,,
“তোমাকে ত শুনতে হবেই আর তুমি কই যাবে যাও কে আটকে রেখেছে!আমি ত আটকাই নি।”
উনার কথাশুনে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।তাই উনাকে আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে ব্যাগটা নিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছি।আর সাদাফ ভাইয়ের গুষ্টি উদ্ধার করছি বকে।কিন্তু বেশিক্ষণ বকতে পারলাম না পাশ থেকে কেউ বলে উঠে।
“আমার বউটা রূপে রূপবতী,আর রাগে লঙ্কাবতি।কিন্তু যেমনই হোক আমারই ত বউ তাই না।আমার লক্ষী বউটা,রাগটা একটু কমাও না।”
আমি সামনের থেকে চোখ সরিয়ে উনার দিকে একপলক তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠি,,,
“চোখটা একটু বন্ধ করুন।”
উনি অবাক হয়ে বলে উঠে,,,
“কেনো?কেনো?কেনো?”
“আগে করুন না তারপর দেখতেই পাবেন।”
“ঠিক আছে করছি কিন্তু কোন দুষ্টুমি করা যাবে না।”
কথাটা বলেই উনি চোখ বন্ধ করে ফেলেন,আর আমি সেই সুযোগে দেই এক দৌড়।আর একটা চলন্ত বাসে উঠে পড়ি,বাসে উঠেই হাসিতে মেতে উঠি আমি।কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হলো আমি হাওয়ায় ভাসছি,পড়ে যাব এখনি।তাই চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেলি,তখন কেউ বলে উঠে।
“মিসেস সাদাফ কী ভেবেছেন আমাকে বোকা বানিয়ে এভাবে পালিয়ে যাবেন হুম?কিন্তু সেটা ত হবার নয়,যতদিন আমি আছি ততদিন আমার থেকে পালাতে পারবে না।তাই পালানোর চেষ্টা করেও লাভ নেই।”
সাদাফ ভাইয়ের গলা শুনে আমি চোখ খুলে দেখি উনি আমাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর বাসের সবাই আমাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু উনাকে দেখো কেমন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।যেনো আশেপাশের লোকজনের তাকানোতে উনার কিছুই যায় আসে না।আমি এবার আস্তে করে বলে উঠি,,,
“নামান আমাকে,সবাই দেখছে।”
“উুহু নামাবো না,যে দেখার দেখুক তাতে আমার কী?আমি ত অন্য কোন মেয়েকে কোলে নেই নি,আমার একমাত্র বউকে কোলে নিয়েছি।”
“প্লিজ এমন করবেন না,নামান আমাকে।আমার লজ্জা করছে।”
“ইসসস্ লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেছে গো,ইচ্ছে করছে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দিতে।”
আমি উনার কথা শুনে চমকে তাকাই উনার দিকে,আর উনি চোখ টিপ মারে।উনার লক্ষ্মণ আমার ভালো লাগছে না।
“প্লিজ এমন করবেন না,এটা পাবলিক প্লেস।ছোট বড় অনেকে আছে এভাবে থাকাটা মোটেও শোভনীয় লাগছে না,নামান আমাকে।”
উনি একটু ভেবে ফট করে বলে উঠে,,,
“ওকে ছাড়ব কিন্তু আমি ত কোন কাজ এমনি এমনি,,,
” এমনি এমনি করেন না আর আপনার একটা শর্ত আছে তাই ত!মেনে নিলাম যা বলবেন সেটাই করব কিন্তু এখন নামান আমাকে।”
“ভেবে বলছো ত?”
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠি,,,
“হ রে ভাই ভেবেই বলছি,এবার নামা আমারে।”
উনি আমার কথা শুনে বাঁকা হেঁসে কোল থেকে নামায়,আমি আর কোন দিকে না তাকিয়ে বাস থামাতে বলে তাড়াতাড়ি নেমে যাই।আমার পিছন পিছন উনিও নেমে যায়,আর আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে লজ্জা পাওয়ার মত ভাব নিয়ে বলে উঠে,,,
“বউ ও বউ,,,আমার না প্রেম প্রেম পাচ্ছে।”
উনার কথাশুনে আমি ধামধুম কয়টা কিল বসিয়ে দেই উনার পিঠে।আর উনি খিলখিলিয়ে হেঁসে চলেছে।শালা বজ্জাত কাজটা করল কী আজ!এতগুলো মানুষের সামনে,ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
______________________________________
দেয়ালের সাথে দুই হাত চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে কাব্য ভাই আমাকে।উনি আমাকে বারবার বলে চলেছে আমার সাথে কথা বলতে চায় উনি।কিন্তু আমি সে কথা না নিয়ে প্রতিনিয়ত ছোটার চেষ্টা করে চলেছি উনার থেকে কিন্তু উনি ছাড়ছে না।
#চলবে…
(আগামীকাল গল্প দিব না,পরসু থেকে রেগুলার গল্প দিব ইনশাআল্লাহ।)