ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
“আরে এভাবে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,ছাড়ুন আমাকে।”
সাদাফ ভাই আমার হাত ধরে টেনে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আমি আমার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছি কিন্তু উনি ছাড়ছেও না কিছু বলছেও না।কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে।রেস্টুরেন্টে এসে দেখি নিলয় ভাইয়া বসে আছে,আমি ভ্রু কুঁচকে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই।সেটা দেখে সাদাফ ভাই ইশারায় বলে বসো,আমিও বসে পড়ি।আমি এবার ভদ্রতার খাতিরে নিলয় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করি।
“কেমন আছেন ভাইয়া?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো সাবিহা?”
“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।”
“নিলয় তুই গিয়ে ওর্ডার দিয়ে আয়।”
“কেন?ওয়েটার ত এখানেই আসবে ওর্ডার নিতে।উনি শুধু শুধু ওখানে কেন যাবে কষ্ট করে?”
“তুমি বড্ড বেশি কথা বলছো,চুপ করে বসো।”
নিলয় ভাইয়ার সামনে আমাকে এভাবে ধমক দিয়ে কথা বলাতে আমি গাল ফুলিয়ে চুপ করে বসে রই।সেটা দেখে নিলয় ভাইয়া আমাকে হাসানোর জন্য মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,
“সাবিহা একটা প্রশ্ন করি?”
আমি একবার সাদাফ ভাইয়ের দিকে তাকাই উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি এবার নিলয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠি,,,
“জি ভাইয়া বলুন না কী বলতে চান?”
“ওয়েটার নাম কেন রাখা হয়েছে জানো?”
এটা আবার কেমন প্রশ্ন!আমি ভাবনায় পড়ে যাই,সেটা দেখে সাদাফ ভাইয়া আর নিলয় ভাইয়া মুচকি মুচকি হাসছে।আমি এবার গাল ফুলিয়ে বলে উঠি,,,
“জানি না ত।”
নিলয় ভাইয়া হাসল সাথে বজ্জাত সাদাফ ভাইটাও হাসল।আমার রাগ লাগল,উওর জানা নাই থাকতে পারে তার জন্য এমন হাসা লাগে নাকি!”
“ওয়েটার ওয়েট করায় বলেই ওয়েটার বলা হয়।”(আমার এক বড় ভাইয়ের বলা সংজ্ঞা?)
আমি কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠলাম,,,
“মানেহ?”
“মানে হল আমরা রেস্টুরেন্টে এসে কিছু ওর্ডার করলে ওয়েটার কিন্তু সেটা আমাদের ওয়েট করিয়েই দেয়।”
আমি নিলয় ভাইয়ার এমন কথায় হু হা করে হেঁসে উঠি,কী যুক্তি বাপরে বাপ।ওয়েটার ওয়েট করায় বলে নাকি নাম রাখা হয়েছে ওয়েটার।কথাটা ভেবেই আরেকদফা হাসিতে মেতে উঠলাম।তখন নিলয় ভাইয়া সাদাফ ভাইয়ার কানে বলে উঠল,,,
“নে ভাবির মুড ঠিক করে দিলাম,এবার তুই সামলা।আর সবসময় ধমক দিয়ে কিংবা রাগ দেখিয়ে কথা বলা বন্ধ কর।নয়ত তোর কপালে দুঃখ আছে,কারন সাবিহা অবলা নারী নয়।এখন আমি আছি বলে তকে কিছু বলল না নয়ত তোর মাথায় চুল থাকত কী না সন্দেহ আছে আমার।তাই সময় থাকতে থাকতে সাবধান হয়ে যা নয়ত কপালে দুঃখ আছে।”
নিলয় ভাইয়া কথাটা বলেই চলে যায়,আর সাদাফ ভাইয়া নিলয় ভাইয়ার কথাশুনে হাসল।কিন্তু কিছু বলল না,নিলয় ভাইয়া যাওয়ার পর সাদাফ ভাই আমার হাতটা উনার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে।
“সরি সাবিহা,গতকালকের ঘটনার জন্য।”
আমি হাতটা সরাতে চাইলাম কিন্তু উনি ছাড়লেন না।
“হাত ছাড়ুন আমার,এমন হুটহাট হাত ধরাধরি আমার একদম পছন্দ নয়।”
“সাবিহা আমি জানি তুমি রাগ করেছো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সে সময়টাই পাই নি লিজাকে সরানোর জন্য।তার আগেই তুমি চলে আসো।”
“কেন সরাতে কী চব্বিশ ঘণ্টা লাগত নাকি!”
“সাবিহা প্লিজ বাঁকা বাঁকা কথা বলো না,রাগটা কমিয়ে বুঝার চেষ্টা করো একটু।তখন লিজা আমার রুমে এসেই হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তুমি চলে আসো।”
“আচ্ছা মানলাম উনি আপনাকে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরেছে,আপনি সরানোর সময় পান নি।কিন্তু আপনার সামনে যে আমাকে এতগুলো কথা বলল তার জন্য ত আপনার কিছু বলার উচিত ছিল।তখন ত কিছু বলেননি,তখন ত মুখে গোল আলু ডুকিয়ে রাখছিলেন।”
“সাবিহা আমি মানছি আমি ভুল করেছি,কিন্তু এবারের মত মাফ করে দাও প্লিজ।সামনে থেকে এমন কিছুই হবে না,প্লিজ রাগ করে থেকো না।তুমি যে রাগ করে আমার সাথে কথা বলছো না এটা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।প্লিজ এবারের মত মাফ করে দাও আমাকে,আর কখনও এমনটা হবে না।”
“করব তবে একটা শর্ত আছে।”
“তোমারও শর্ত আছে!”
“হ্যাঁ আছে,আপনার থেকেই এই শর্ত দেয়া নেয়া শেখা।এবার আপনার ট্রিকস আপনার উপরই ট্রায় করব।রাজি থাকলে বলুন নয়ত আমি আসি।”
“না না বলো কী শর্ত আছে?”
“আমার শর্ত হল গরিলা মার্কা মহিলার আশেপাশে যাতে আর না দেখি আপনাকে।যদি উনার ছায়া ও আপনার পাশে দেখি তবে উস্টা মাইরা উগান্ডা নিয়ে ফেলব আপনাকে।”
“পাগলি একটা(গাল টেনে),রাজি আমি।”
আমি একগাল হেঁসে উনারও গাল টেনে বলে উঠি,,,
“গুড বয়।”
“আমার গুলুমুলু বউটা,পুরাই কিউটের ডিব্বা,দয়ার সাগর বেগম রোকেয়া,ডাকাত বউ আম,,,
কথাটা বলেই উনি জিব কামড়ে ধরে।
” কী??”
“হে হে,কই কিছু না ত।”
“আমি ডাকাত?”
“হে হে(বোকার মত হেসেঁ)তুমি ডাকাত হতে যাবে কেন?ডাকাত ত আমি,আমি ডাকাত হয়ে তোমাকে কেন ডাকাত বলব!আমি একদমই তোমাকে ডাকাত বলি নি,আমি ত বলেছি আমার বউটা খুব ভালো,খুব,,,
” হয়েছে হয়েছে আর মূলাপাম মারতে হবে না,আপনি যে কী কী বলতে পারেন সেটা আমার অজানা নয়।নেহাত এটা রেস্টুরেন্ট নয়ত আপনার খবর আছিল।”
“খবরা খবর পরে নিবে এখন নাও খেয়ে নাও সবাই।”
টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে নিলয় ভাইয়া কথাটা বলে উঠল।আমি সাদাফ ভাইয়ের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করলাম,তিনজনেই খেয়ে নিলাম।খাওয়ার পর নিলয় ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করে,,,
“সাবিহা এখন ত সবই ঠিক আছে,তোমার গলাও ত ঠিক হয়ে গেছে।এবার বলো ত সেদিন তোমার সাথে কী হয়েছিল?”
“আপুর বিয়েটা হোক তারপর এসব নিয়ে কথা বলব।এখন এসব নিয়ে কথা বললে ঝামেলা হবে আর আপুর বিয়ের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে তাই এখন এসব বাদ দিন।আপুর বিয়ের পর সব বলব আমি,ততদিন আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।
আর আমি এখন উঠি,আমাকে যেতে হবে।আপুর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মামুর বাড়িতে আছে সেগুলো আনতে যেতে হবে।”
মামুর বাড়িতে যেতে হবে কথাটা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে সাদাফ ভাই।
“তোমাকে যেতে হবে না,কাব্য সেখানে আছে।ত যাওয়ার দরকার নাই।”
“কাব্য যেখানে থাকবে তার ভয়ে কী আমি সেখানে যাব না নাকি!কাব্যর ভয়ে কী আমি ঘর বন্দি হয়ে বসে থাকব?”
“আমি সেটা বলি নি কিন্তু এখন সেখানে না যাওয়াই ভালো।কখন কী করে বসে ঠিক নেই তাই যেও না।”
“আমার যাওয়াটা প্রয়োজন,চাইলে আপনিও সাথে আসতে পারেন সমস্যা নাই।কিন্তু তারপরও আমার যেতে হবে।”
কথাটা বলেই আমি বেরিয়ে আসি রেস্টুরেন্ট থেকে।আমার পিছন পিছন সাদাফ ভাই আর নিলয় ভাইয়াও আসে।তারপর তিনজনে মিলেই চললাম মামুর বাড়িতে।
_____________________________________
মামুর বাড়িতে ঢুকেই মামিমাকে দেখতে পাই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে,আমি মামিমাকে দেখে দৌড়ে জড়িয়ে ধরি।
“কেমন আছো মামিমা?”
“আমার মা টা এসে গেছে না আমি একদম ভালো হয়ে গেছি।”
“কেমন আছেন আন্টি?” (সাদাফ ভাইয়া)
“আরে সাদাফ বাবা যে,আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”
“আমিও ভালো আছি।”
“তোমার সাথে কে?চিনলাম না ত,সেদিনও হসপিটালে দেখেছিলাম।”
“আমার ফ্রেন্ড নিলয়।”
“ওহহ,তুমি কেমন আছো বাবা?”
“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।”
“আচ্ছা মামিমা তোমরা কথা বলো আমি উপর থেকে আপুর লাগেজটা নিয়ে আসি।আর হিয়া স্কুল থেকে আসে নি?”
“না আসে নি ত,এখনই এসে পড়বে।তুই যা লাগেজটা নিয়ে আয়।”
“আচ্ছা মামিমা।”
তারপর আমি উপরে চলে আসি,আর মামিমা সাদাফ ভাইয়াদের সাথে কথা বলছে।আমি ধীরে সুস্থে হেঁটে যাচ্ছি মেঘ ভাইয়ার রুমে।কিন্তু হঠাৎ করে কেউ আমাকে টেনে আনে একটা রুমে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সামনে থাকা মানুষটা আমার হাতটা দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।
“চিৎকার করিস না সাবিহা,তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
কাব্য ভাইয়ার কথাশুনে আমি চোখ খুলি,আর উনাকে দেখে রেগে যাই খুব।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি উনি ছাড়ছেই না।
“প্লিজ তুই শান্ত হ আমি তোর কোন ক্ষতি করব না।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।কথা শেষ হলেই ছেড়ে দিব,প্লিজ আমার কথাটা শোন।”
আমি তারপরও উনার কোন কথা কানে না নিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি।উনি এবার আমার হাত ছেড়ে আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।আমি রেগে উনার দিকে তাকাই,উনি সেটা দেখে বলে উঠে।
“ভালো করে বলছিলাম শুনছিলি না,তাই গায়ে হাত তুলতে হল।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে,আমার কথাটা শোন প্লিজ।অনেক কিছু বলার আছে তকে,প্লিজ শান্ত হ।”
আমি উনাকে কিছু না বলে উনার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে রেগে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।আর কাব্য গালে হাত দিয়ে চোখের পানি ফেলছে।
#চলবে,,,
(কেমন আছে গো আমার গল্পের পাঠক/পাঠিকাগন? দুইদিন খুব ব্যাস্ত ছিলাম তাই গল্প দিতে পারি নি।তার জন্য খুবই দুঃখিত আমি,গল্প দিতে পারি নি তার জন্য আমারও খুব খারাপ লাগছিল।কিন্তু ব্যাস্ত থাকার কারনে গল্প দেয়া হয়ে উঠে নি।কিন্তু আজ থেকে আবার রেগুলার গল্প দিব ইনশাআল্লাহ।
আমার গল্পের পাঠক/পাঠিকাগন কাব্যকে কেমন শাস্তি দিতে চায়?সবাই বলে যাও কাব্যকে কেমন শাস্তি দেয়া যায়?।যার শাস্তি দেয়ার টেকনিকটা আমার কাছে ভালো লাগবে সেটাই কাব্যর জন্য ঠিক করব?।সবাই সবার মতামতটা জানিয়ে যাও পিলিজ?।)