ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
কাব্য ভাইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।আমাকে এভাবে রেগে বেরোতে দেখে মামিমা,সাদাফ ভাইয়া পিছন থেকে অনেক ডাকল।আমি কারো কথা না শুনেই রেগে হেঁটে চলেছি।কাব্য পেয়েছেটা কী?শালার হাতির নাতিকে ভাই বলতেও লজ্জা লাগছে।যখন তখন হাত ধরে টানাটানি,গায়ে হাত তোলা,প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কিডন্যাপ করা,ব্লা ব্লা।এতকিছু আর শয্য হইতাছে না,ইচ্ছে করতাছে খুন করে ফেলতে।এসব ভেবে রেগে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছি,কিন্তু হঠাৎ করেই কেউ পিছন থেকে আমার হাত ধরে আটকে ফেলে।পিছনে তাকিয়ে দেখি সাদাফ ভাই,এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে তার উপর আবার উনিও এসে সেই টানাটানি শুরু করছে।তাই এবার আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না।
“এই কী পেয়েছেন টা কী আপনি?যখন তখন এমন হাত ধরে টানাটানি করেন কেন?আপনাকে বলছি না এমন হাত ধরে টানাটানি করা আমার পছন্দ নয়।তারপরও একই কাজ কেন করছেন বারবার?মানছি আপনার সাথে আমার ছোট বেলা বিয়ে হয়েছে তাই বলে কী যা খুশি তাই করবেন?নিজের লিমিটে থাকুন,নয়ত ভালো হবে না।হাত ছাড়ুন আমার,আর একদম পিছন পিছন আসবেন না আমার।”
কথাটা বলেই রেগে হনহনিয়ে চলে এলাম,পিছন দিকে একবার ফিরেও তাকাই নি।পিছন ফিরলে হয়ত সাদাফ ভাইয়ের চোখের জলটা দেখতে পারতাম।
এইদিকে সাবিহার কথা শুনে সাদাফের চোখে জল চলে আসে।সে ত এসেছিল জানতে যে কাব্য কিছু করেছে কী না যার কারনে ওভাবে রেগে বেরিয়ে এসেছে।কিন্তু সাবিহা যে এতকিছু বলে ফেলবে সাদাফ ভাবতে পারে নি।সাবিহার কথায় সাদাফ খুব কষ্ট পেয়েছে,সাদাফ তার চোখের জল মুছে চলে আসে।
____________________________________
কাব্য ফ্লোরে বসে বেডে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছে,আর নিজের করা সমস্ত খারাপ কাজগুলো মনে করছে।কাব্যর চোখ দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি ঝড়ছে।
“ভালবাসায় অন্ধ হয়ে আমার আপন মানুষদেরকে কতই না কষ্ট দিয়েছি।হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কত কষ্টই না দিলাম,বিশেষ করে সাবিহাকে।মেয়েটার সাথে কী কী না করেছি আমি,কিন্তু তারপরও মেয়েটা কেমন শক্ত রয়েছে।যাকে কষ্ট দিয়ে এতদিন পৈশাচিক আনন্দ পেতাম আজ তার কথা ভেবেই কষ্ট পাচ্ছি।কাউকে কষ্ট দিয়ে হয়ত সাময়িক সুখ পাওয়া যায়,কিন্তু সেটা ক্ষনস্থায়ী নয়।কাউকে কষ্ট দিলে তার থেকে শতগুণ কষ্ট পেতে হয় নিজেকে, কথাগুলো যে কতখানি সত্যি সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি।।তাই কাউকে কষ্ট না দেয়াই ভালো,তাতে আল্লাহ তায়ালা নারাজ হবেন না,আর আমার মত অবস্থাও কারো হবে না।
সাবিহা মেয়েটা খুব ভালো,নয়ত দুইজন ভালবাসার মানুষকে এক করার জন্য ওভাবে কিডন্যাপ করে বিয়ে দেয় নাকি?যেখানে আমার জন্য ভাইয়ের বিয়েটা ভাঙ্গল,আর আমি কিছুই করতে পারলাম না সেখানে সাবিহা ঠিকই তাদের বিয়েটা করিয়ে দিলো।সাবিহার সাহস আছে বলতে হবে,আগে ভীতু ছিল কিন্তু এখন অনেক সাহসী হয়েছে।কিন্তু এই সাহসের জন্য ত আমি মাফ চাওয়ার সুযোগটাই পাচ্ছি না,সামনে গেলেই ত ঠাস আর ঠুস করে মেরে দেয়।কিন্তু যেভাবেই হোক সাবিহার কাছে আমার ক্ষমা চাইতেই হবে।”
কথাগুলো ভেবে কাব্য হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে নিশানকে ফোন লাগায়।নিশানের সাথে কাব্য সবটা মিটমাট করে নিয়েছে,কারন কাব্য নিশানকে কথা দিয়েছে সাবিহাকে আর কষ্ট দিবে না।
একবার রিং হতেই নিশান ফোন ধরে।
“দোস্ত কেমন আছিস?”
“ভালো আছি,তুই কেমন আছিস?”
“আর ভালো থাকা!” (মন খারাপ করে)
“কেন আবার কী করেছিস তুই?সাবিহাকে কিছু বলিস নি ত?”
“আরে না সেসব কিছুই না,আসলে আজ সাবিহা আমাদের বাড়িতে এসেছিল।”
“ত কী হয়েছে?”
“ত আমি অর সাথে কথা বলার জন্য টেনে আমার রুমে নিয়ে আসি ক্ষমা চাওয়ার জন্য।কিন্তু সাবিহা আমার কোন কথাই শুনছিল না,তাই একটা থাপ্পড় মারি।ভেবেছিলাম ঠান্ডা হয়ে যাবে থাপ্পড় খেয়ে তারপর মাফ চাইব।কিন্তু উল্টা সাবিহা রেগে আমার গালে থাপ্পড় মেরে চলে যায়।”
“একদম ঠিক করছে।তুই কী মানুষ হবি না কাব্য?কথায় কথায় এত গায়ে হাত কেন তুলিস?আর ওভাবে টেনে এনে মাফ চাওয়ারই বা কী মানে?ভালো করে বলে সাবিহার সাথে কথা বলতে পারতি,মাফ চাইতে পারতি।কিন্তু তুই ত তুই ই,সবসময় তুই এমন গায়ে হাত তুলিস।আর সবার আগে নিজের রাগটাকে প্রাধান্য দিস বেশি,আর তোর মুখের আগে হাতটা বেশি চলে।তাই হাতটাও সামলা নয়ত এমন করলে সাবিহা তকে এই জন্মে মাফ করবে না উল্টা তরে বিনা নোটিসে অন্য গ্রহে পাঠাইয়া দিব,যেখানে কোন মানুষ থাকবে না থাকবে শুধু তোর মত এলিয়েন।”
“এখন কী করব?”
“কী করবি আবার!রাগ কমা,হাত পা কন্ট্রোল কর আর একটু মাথা খাটিয়ে কাজ করতে শিখ।”
“কিন্তু সাবিহা ত আমার সাথে কথা বলতেই চাইছে না।”
“তুই যে আচরন করিস তাতে কথা না বলাই স্বাভাবিক।দেখি আমি কোন ব্যাবস্থা করতে পারি কী না!”
“ঠিক আছে।”
কথাটা বলে নিশান ফোনটা রেখে দেয় আর কাব্য ভাবতে থাকে কীভাবে সাবিহার সাথে দেখা করে মাফ চাইবে।
____________________________________
বিকাল ৩টা বেজে ৫৬ মিনিট,রুমে পায়চারি করছি আর ভাবছি তখন সাদাফ ভাইয়ার সাথে রাগ দেখানোটা বারাবাড়ি করে ফেলছি।সাদাফ ভাইয়া নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছে,আমিও না রেগে গেলে কিছু মনে থাকে না।যে আচরন করেছি তার জন্য ক্ষমা চাইতেই হবে।নয়ত আমিও শান্তি পাব না আর ঐদিকে সাদাফ ভাইও কষ্ট পাবে।উনাকে বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলি আমি,নাহ উনাকে আর কষ্ট দিব না।কথাগুলো নিজ মনে বিড়বিড় করেই সাদাফ ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম।ফোনও দিতে পারতাম কিন্তু ফোনে কথা বলাই একরকম আর সরাসরি কথা বলাই আরেক রকম।বাড়িতে যাওয়াই ভালো আমার মনে হয় তাই বাড়িতেই যাব।
সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে এসে আন্টির সাথে একটু কথা বলে সাদাফ ভাইয়ের রুমে চলে এলাম।উনি ত ঘরে নেই,তাই সারাবাড়ি খুঁজতে খুঁজতে ছাঁদে চলে এলাম।এসে দেখি উনি একটা দোলনায় বসে আছে,আমিও ধীরে ধীরে উনার পাশে গিয়ে বসি।উনি আমার উপস্থিতি টের পেয়েছে কিন্তু কথা বলছে না।খুব কষ্ট পেয়েছে আর খুব রাগ করে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে,তাই আমি এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠলাম।
“সাদাফ ভাইয়া তখন রাগ দেখানোর জন্য সরি,আসলে তখন মেজাজ খুব খারাপ ছিল।আর আপনি ত জানেনই আমার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না।তাই প্লিজ রাগ ক্ষমা করে দিন আমাকে।”
উনি কিছু না বলে দোলনা থেকে উঠে ছাদের কিনার ঘেসে দাঁড়ায়।আমিও উনার সামনে দাঁড়িয়ে কানে হাত দিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে উঠি।
“সরি বলছি ত,প্লিজ ক্ষমা করে দিন।”
উনি এখনও কিছু বললেন না ঘুরে অন্যদিকে চলে গেলেন,সেটা দেখে আমার খুব রাগ লাগল।তাই আমি ছাদের উপরে একটা আম গাছে চড়লাম,আর কিছুটা চেঁচিয়ে বললাম।
“এই ফুলাইন্না,কথা বলবেন নাকি এখান থেকে ঝাপ দিয়ে শহীদ হয়ে যাব!”
উনি এবার পিছন ফিরে আমাকে গাছে দেখে ঘাবড়ে গেলেন,আর ছুটে গাছের নিচে দাঁড়ালেন আর রেগে বললেন।
“কী করছো এসব?নামো ওখান থেকে,পড়ে গেলে দাঁত আর দাঁতের জায়গায় থাকবে না।”
আমি গাছের ডালে হাত পা ছড়িয়ে ভালো করে বসি।আর একটা আম পেরে সেটাতে কামড় দিয়ে চিল মুডে উনার দিকে তাকিয়ে বলি।
“যাক বাবা মুখের কস্টেপ ত খুলল,,,উফফ এতক্ষণ ভালো করে বলছিলাম কিন্তু আপনি কথাই বলছিলেন না।আর এখন কী সুন্দর করে কথা বলছেন,এবার বলেন মাফ করে দিছি।”
“বেশি কথা বলবে না একদম,তাড়াতাড়ি নিচে নামো।”
“নামব না আগে বলুন,মাফ করে দিছি।”
“থাপ্পড় খেতে না চাইলে নিচে নামে এক্ষুনি।”
“আজিব ত!আমি বলি কী আর উনি বলে কী?”
“সাবিহহহহহহা,নামবে তুমি নাকি আমি উপরে আসব?আমি আসলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
“এত রাগ করার কী আছে নামছি ত!”
কথাটা বলেই গাছ থেকে দুইটা আম পেড়ে নিচে নেমে পড়লাম,আর উনার সামনে দাঁড়িয়ে জামা আর হাত থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে উঠলাম।
“এবার বলুন মাফ করে দিছেন,আপনি আমার উপর রেগে নেই।আর মাফ করে দিলে আপনাকে এত্তগুলা কিউট কিউট আম দিব।”
“এই মেয়েটা না পুরাই শয়তানের ডিব্বা,গাছে উঠে থ্রেট করে আমার গাছের আম দিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গাতে চাইছে।কই একটু রোমান্টিক ভাবে রাগ ভাঙ্গাবে।তা না করে এভাবে থ্রেট করল,আল্লাহ আর কতকিছু দেখতে হবে আমাকে।”(মনে মনে)
“আমার গাছের আম দিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গানো তাই না!”
“হি হি হি,,,গাছে কী নাম লেখা ছিল এটা আপনার গাছ?”
“তবে রে দুষ্টু দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”
কথাটা বলেই সাদাফ হেঁসে সাবিহাকে তাড়া করে আর সাবিহাও হেঁসে দৌড় লাগায়।
#চলবে,,,