ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
আর মাত্র তিনদিন পর আপুর বিয়ে,আর সাদাফ ভাইও পাগলামি করছে আপুর বিয়ের দিন বিয়ে করার জন্য।কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছে না,এখনই বিয়ে করতে চাইছি না আমি।উনি প্রতিনিয়ত আমাকে বিয়ের জন্য পেশার দিচ্ছে।উনি এত কথা বলে চলেছে কিন্তু আসল কথাই বলছে না।আমার লাইফ রিস্ক আছে মানে কী?কে আমার ক্ষতি করতে চায়?গরিলা মার্কা মহিলা নাকি কাব্য ভাই?মাথায় কিছু ধরছে না আমার।আমি যখন এসব ভাবনায় মগ্ন তখন কেউ আমার রুমে প্রবেশ করে।আমি তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাই,উনাকে দেখেই রাগটা মাথা চারা দিয়ে উঠে।
“আপনার সাহস কী করে হল আমার রুমে আসার?বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে,নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
“সাবিহা আমি তোর কোন ক্ষতি করব না,তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।ত দয়াকরে আমার কথাটা ঠান্ডা মাথায় শোন।আমি কথাটা বলেই চলে যাব, প্লিজ আমার কথাটা শোন।”
“আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না,চলে যান এখান থেকে।”
“দুই মিনিট শুধু দুই মিনিট সময় দে আমাকে।আমি আমার কথা শেষ করেই চলে যাব।প্লিজ দয়াকরে আমার কথাটা শোন।”
আমি কিছুক্ষণ ভেবে,বলে উঠলাম।
“বলুন কী বলতে চান?”
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া খুশি হয়ে যায়।আর হাসিমুখেই বলে উঠে।
“থ্যাংকস ইয়ার,অবশেষে তোর সাথে কথা বলার সুযোগ পেলাম।এ কয়টা দিন খুব চেষ্টা করেছি তোর সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু প্রতিবারই তুই কিছু না কিছু করে আমাকে বলার সুযোগই দিস নি।”
“এসব বলার জন্য এখানে এসেছেন আপনি?”
“আরে না,আমি ত,,,,
” বেশি কথা না বলে কাজের কথা বলুন।”
“আসলে,আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।এতদিন তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি তার জন্য আমি অনুতপ্ত।তোকে এতটাই কষ্ট দিয়েছি যে এখন আমি প্রতিনিয়ত শাস্তি পাচ্ছি।আমার পরিবার থেকেও নেই,যাকে ভালবেসেছিলাম সেও ধোঁকা দিলো আমাকে।আমাকে তুই ক্ষমা করে দে,নয়ত আমি মরেও শান্তি পাব না।”
কাব্য ভাইয়ের কথাশুনে আমি হু হা করে হেঁসে উঠলাম।কথাগুলো বলার সময় উনার চোখে পানি টলমল করছিল।আমার হাসির আওয়াজে চোখে জল নিয়েই তাকায় আমার দিকে।
“তুই হাসছিস?”
“ত কী করব?নাচব নাকি কাঁদব?আপনার এসব ফালতু নাটক দেখার সময় নেই আমার।আপনি আসতে পারেন।”
“আমি কোন নাটক করছি না সাবিহা।বিশ্বাস কর আমাকে আমি সত্যি অনুতপ্ত।দয়াকরে ক্ষমা করে দে আমাকে।”
“আমি এত দয়ালু নই যে আপনার মত অমানুষ, পাষানকে ক্ষমা করে দিয়ে সবকিছু ভুলে যাব!আপনি কী ভাবছেন আপনার করা এত অন্যায় শুধু ক্ষমা চাওয়াতেই সেটা ভুলে গিয়ে ক্ষমা করে দিব?এমনটা ভাবলে ভুল ভাবছেন আপনি।আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করব না, আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না আপনার মুখে।বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে।”
আমার কথাশুনে কাব্য ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসে আর আমার হাত তার মুঠোয় নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে।
“ক্ষমা করতে না পারিস,অন্তত আমাকে একটা সুযোগ দে ভালো হওয়ার।আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিস না,আমি জীবনটা গুছিয়ে নিতে চাই।”
উনি হাতটা বেশ ভালো করেই ধরেছে যার জন্য ছাড়াতে পারছি না।তারপরও হাত ছাড়াবার চেষ্টা চালাচ্ছি।
“হাত ছাড়ুন আমার,হাত ছেড়ে কথা বলুন।”(রেগে)
” না আমি ছাড়ব না,আগে তুই বল আমাকে একটা শেষ সুযোগ দিবি?”
“হাতটা ছাড়ুন আমার।”
“তুই ত আমাকে ভালবাসিস,ত ভালবাসার মানুষটাকে একটা শেষ সুযোগ কী দেয়া যায় না?তুই আমাকে এই শেষ সুযোগটা দিয়ে দেখ আমি আমার করা সব অন্যায় শুধরে নিব।জীবনটা নতুন করে সাঁজাব তোর সাথে।ভালবাসব তকে,ভালবেসে রাখব কাছে।প্লিজ একটা সুযোগ দে আমাকে।”
আমি কাব্য ভাইয়ের কথার পরিবর্তে কিছু বলব তার আগেই সাদাফ ভাই হাত তালি দিতে দিতে ঘরে প্রবেশ করে।আমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাই উনার দিকে,আর কাব্য ভাই আমার হাতটা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
“বাহ!বাহ!বাহ!ভালোই ত চলছে রোমান্টিক সিন।তা বন্ধ করলে কেন চালিয়ে যাও।”
“বাজে কথা কম বলুন।”
“তোমরা এখানে হাত ধরাধরি করে রোমান্টিক কথা বলছো,ভালবাসার কথা বলছো আর আমি কিছু বললেই বাজে কথা হয়ে গেলো!”
“পুরো কথা শুনে তারপর কথা বলুন,না জেনে কথা বলবেন না।”
“একদম চুপ,একটা কথাও বলবা না তুমি।এখন আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি তুমি কেন আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো না।আমারই বুঝার উচিত ছিল যে মেয়ে কাব্য বলতে পাগল সে মেয়ে হঠাৎ আমাকে ভালবাসতে চাইবে কেন?তার পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে নয়ত সে এত তাড়াতাড়ি একজনকে ভুলে গিয়ে আরেকজনকে ভালবাসতে চাইবে কেন?আমার অনুভূতি নিয়ে খেলছো তুমি।আমাকে ঝুলিয়ে রেখে আরেকজনের সাথে প্রেমালাপ করছো।আমি তোমাকে সেফ রাখার জন্য এতকিছু করছি আর তুমি কী না এসব করছো?নেহাত তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না নয়ত তোমার মুখও দেখতে চাইতাম না আমি।কিন্তু সেটা ত পারব না তাই তোমাকে সারাজীবনের মত নিজের করে নিব আজ।যাতে আমি ছাড়া আর কারো হতে না পারো তুমি।”
কথাটা বলেই সাদাফ ভাই আমার হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছে,কাব্য ভাই আটকাতে চাইছে কিন্তু উনি ছাড়ছে না।
“সাদাফ সাবিহাকে নিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো?ছাড়ো সাবিহাকে।ফুপি,ফুপা দেখে যাও সাবিহাকে নিয়ে সাদাফ কোথায় যেন যাচ্ছে!”
সাদাফ ভাই কোন দিকে পাত্তা না দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আমি ছাড়াতে চাইলে উনি আমাকে কোলে তুলে নেয়।
“ভুল করছেন আপনি,ছাড়ুন আমাকে।”
উনি কোন কথা না বলে হেঁটেই চলেছে।উনি আমাকে গাড়িতে বসিয়ে আমার গলার উর্না দিয়ে হাত বেঁধে দেয়,আর উনার রুমাল দিয়ে মুখ বেঁধে দেয়।পিছন থেকে আপু আর কাব্য ভাই ছুটে আসছে আটকাতে।আর বাবা বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে থেকে সবটা দেখছে,পাশেই মা দাঁড়িয়ে আছে।তাদের ভাব এমন যেন কিছুই হচ্ছে না।
অনেকক্ষণ পর সাদাফ ভাইয়া একটা কাজি অফিসের সামনে গাড়ি থামায়।সেটা দেখে আমার চোখ বড়বড় হয়ে যায়,আমি উনার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝাচ্ছি এমনটা না করতে।কিন্তু উনি কোন কথা কানে না নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আমার হাতের বাঁধন খুলে উর্নাটা গায়ে দিয়ে আবারও কোলে তুলে নেয়।আমি উনাকে কিল,ঘুসি দিয়েই চলেছি ছাড়ানোর জন্য কিন্তু উনি ছাড়ছেই না।সাদাফ ভাই আমাকে ভিতরে নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসিয়ে দু’পাশে হাত দিয়ে বলে উঠে।
“একদম ছটফট করবে না,চুপচাপ বিয়েটা করে নিবা।”
উনার কথাশুনে এবার ঠাস করে উনার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই।
“একবার বাল্যবিবাহ করে কী তোর শখ মিটে নি,আবার বাল্যবিবাহ করতে তুলে নিয়ে এসেছিস।”
কথাটা বলেই উনাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম বাইরে আসার জন্য।কিন্তু উনি এবার আমার হাত ধরে আটকে দেয়,আর টান দিয়ে উনার বুকের উপর ফেলে,জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।আমি ছোটার জন্য ছটফট করলে উনি আমার গাড়ে কিছু একটা করে।আমি গাড়ে হাত দিয়ে উনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ডলে পড়ি উনার বুকে।উনি সেটা দেখে আমাকে বুকে আগলে নিয়ে কপালে একটা চুমু একে দেয়।আর আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,,,
“জানতাম তুমি এখন বিয়ে করতে কখনও রাজি হবে না।তাই আজ বাড়ি থেকে প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়েছি। তুমি আজ বিয়েতে রাজি না হলে তুলে নিয়ে বিয়ে করব এমনটা ভেবেই এসেছিলাম।কিন্তু এসেই কাব্যর সাথে তোমাকে ওভাবে দেখি,আর তাতে করে মেজাজ আরো বিগড়ে যায়।আর কাব্যর বলা কথাগুলো শুনে তোমাকে হারানোর ভয়টা আবারও ঝেকে বসে মাথায়।তাই আজ যেভাবেই হোক তোমাকে নিজের করেই নিব।তুমি আমার আর আমার কাছেই থাকবে।হোক সেটা ভুল রাস্তার,কিন্তু আমি তোমার জীবন নিয়ে আর কোন রিস্ক নিতে পারব না।আর না পারব তোমাকে হারাতে।আর তখন রাগ দেখিয়ে অনেক কথা বলে ফেলেছি,তার জন্য হয়ত তুমি আমার উপর খুব রাগ করে আছো।কিন্তু আপাতত আমার কিছু করার নেই,এখন আমার একটাই কাজ তোমাকে নিজের করে নেয়া।”
কথাগুলো বলে সাদাফ সাবিহার কানের লতিতে আরেকটা চুমু দিয়ে কোলে তুলে নেয়।আর একটা চেয়ারে বসে সাবিহাকে নিজের বুকে আগলে নেয়।ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে ফোন লাগায় আর সাবিহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,
“তিন ঘন্টার জন্য নিশ্চিন্ত তার মধ্যে সব রেডি চাই।”
কথাটা বলেই সাদাফ ফোনটা পকেটে রেখে দেয়।আর সাবিহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।
#চলবে,,,
(সাদাফ আর সাবিহার বিয়ের দাওয়াত রইল?।গিফট নিয়ে এসো সবাই নয়ত কালকে বিবাহ বিভ্রাট পর্ব দিব?।)