#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে
#পর্ব_প্রথম
#লেখিকা_দিয়া
শুভ্রর গতকালের অফিসের শার্ট গোছাতে গিয়ে দেখতে পেলাম শার্টে রয়েছে কোনো রমনীর লিপস্টিকের ছাপ।স্বামীর শার্টে অন্য কোনো রমনীর লিপস্টিকের ছাপ কতটা যন্ত্রণাদায়ক এটা শুধু সেই ভুক্তভোগী স্ত্রীই বলতে পারবে যার সাথে ঘটনাটা ঘটেছে ।বুকের বা পাশে হঠাৎই চিনচিন ব্যাথা অনুভব করতে পারলাম।তবুও আমি কিছু না বলে বা করে ওয়াশরুমে গিয়ে শুভ্রের শার্টটা ভালো করে ধুয়ে ছাদে গিয়ে রোদে শুকোতে দিয়ে আসলাম।ছাদে রোদের তীব্র তাপে থেকে এসে যখন ধীরে ধীরে নিচে আসছিলাম তখনি শুনতে পেলাম শাশুড়ী মায়ের ডাক।দৌড়ে নিচে চলে আসলাম কারণ পৌঁছাতে একটু দেরি হলে তিনি কথা শুনানো থামাবেন না। ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে সোজা রান্না ঘরে চলে আসলাম।আমাকে দেখেই শাশুড়ী আম্মা বলতে শুরু করলেন,
তা মহারাণী কোথায় ছিলেন আপনি ? এতক্ষণ ধরে যে ডাকছি আপনি কি শুনতে পাননি? – শাশুড়ী মা তাহমিনা বেগম
আসলে আম্মা ছাদে ছিলাম তো তাই আসতে একটু দেরি হয়েছে – ধীর কন্ঠে বলে উঠলাম আমি
এই অসময়ে ছাদে কি হ্যা? কোন নাগরের সাথে দেখা করতে এই সময় ছাদে গিয়েছিলা তুমি? আজকে শুভ্র বাসায় আসুক ওকে বলতে হবে ওর বউয়ের হাবভাব মোটেও সুবিধার ঠেকছে না আমার কাছে। কোনদিন যে আমাদের মানসম্মান ডুবিয়ে কোন নাগরের সাথে ভেঙে যায় তার নেই ঠিক?।- তাহমিনা বেগম
এসব আপনি কি বলছেন আম্মা? আমি তো শুধুমাত্র শুভ্রের শার্টটা রোদে দিতে ছাদে গিয়েছিলাম। – আমি
বুঝেছি বুঝেছি তোমাদের মতো ফকিন্নি ঘরের মেয়েদের কাজকারবার আমার বেশ ভালো করেই জানা আছে। আজকে কি দুপুরের জন্য কোনো রান্নাবান্না করবা না নাকি আমাদের না খেয়েই মরতে হবে – তাহমিনা বেগম
কি রান্না করতে হবে বলেন আম্মা আমি এখনি করে দিচ্ছি – আমি
আজকে তিথি আর জামাই আসবে।কতদিন পর আমার মেয়ে আর মেয়ে জামাই আসবে আজকে বিশেষ আয়োজন করতে হবে। তুমি ইলিশ মাছ ভাজা,গরুর কালা ভুনা, মুরগির রোস্ট, বিরিয়ানি রান্না কর – তাহমিনা বেগম
আচ্ছা আম্মা – আমি
আর হ্যা শুনো জামাই বিরিয়ানি পছন্দ করেনা তার জন্য সাদা পোলাও রান্না করো।আর সাথে সবার জন্য সেমাই বানিয়ে ফেলো – বলে তাহমিনা বেগম রান্নাঘরে থেকে চলে গেলেন।
শাশুড়ী আম্মা যেতেই আমার ভেতরে থেকে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে এলো।এত এত কথা শুনানোর পরেও উনাকে একটা পাল্টা জবাব দেওয়ার অধিকার আমার নেই।এমনি আজকে শুভ্র আসলে উনি যে উল্টোপাল্টা অনেক কিছু বলবেন তা আমার বোঝা হয়ে গেছে। তার মধ্যে আর অশান্তি বাড়িয়ে লাভ নেই।আমি ঝটপট রান্নার কাজে লেগে পরলাম কারণ তিথি আপুরা আসার সাথে সাথেই আম্মা দুপুরের খাবার খাওয়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগবেন।তখন যদি বলি রান্না শেষ হয়নি তাহলে আজকে আর আমার রক্ষে নেই।
দূপুর ১ টা সময় সব রান্না করা শেষে বেরিয়ে আসলাম রান্না ঘর থেকে।আপুরা কিছুক্ষণ আগেই এসেছে। রান্নার মাঝে আবার তাদের জন্য নুডলস আর শরবত বানিয়ে নাস্তার জন্য দিয়ে আসা লাগছে।মাত্রই গোসল করতে ঢুকলাম সাথে সাথেই শাশুড়ী আম্মা এসে ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে গেলেন জলদি বের হয়ে খাবার পরিবেশন করতে সবার নাকি প্রচুর খিদে লেগেছে। অথচ একটু আগেই মাত্র সবাই নাস্তা করলো।নিজের মতো কথাটা বলে আম্মা চলে গেলেন।আমি কোনো কিছু না বলে কোনোরকমে গোসল করে বের হলাম।তারপর চলে গেলাম নিচে খাবার টেবিলে।আমি আসতে আসতে সবাই খাবার টেবিলে বসে গল্পে মেতে উঠেছে।আসুন আপনাদের পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই,
আমি ঝিলিক ইসলাম এখন অবশ্য ঝিলিক রহমান হয়েছি।আমার স্বামি আহসান রহমান শুভ্র। তার সাথে আমার বিয়ের ৪ বছর পেরিয়েছে গতমাসে।আমার শশুড় আব্বু একজন প্রবাসী তার নাম আরাফ রহমান অন্য দিকে আমার শাশুড়ী আম্মা তাহমিনা বেগম।শুভ্ররা দুই ভাই এক বোন।সবার আগে হচ্ছে শুভ্র তারপর তিথি আপু আর সবার পরে হচ্ছে শান।তিথি আপুর বিয়ে হয়েছে ২ বছর আগে তার স্বামি হচ্ছে রাজ খন্দকার। আর শান পড়াশোনা করছে অনার্স শেষ বর্ষে।এই মানুষ গুলো নিয়েই আমার শশুড় বাড়ি।
খাবার পরিবেশন শেষ করে আমি একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম আর সবাই খেতে শুরু করলো।মাঝেমধ্যে একেকজনকে আমি তরকারি পানির গ্লাস পোলাও এগিয়ে দিচ্ছিলাম।হঠাৎই তিথি আপু বলে উঠলো,
ভাবি তুমি ও বসে পরো আমাদের সাথে সবাই একসাথে খেয়ে উঠে – তিথি আপু
আমি কিছু বলবো তার আগেই শাশুড়ী আম্মা বলে উঠলেন,
কোনো প্রয়োজন নেই ও পরে খেয়ে নিবে।ও এখন খেতে বসলে আমাদের এটা সেটা এগিয়ে দিবে কে ? – তাহমিনা বেগম
এটা তুমি কেমন কথা বলছো আম্মু।ভাবি ও তো আমাদের পরিবারের সদস্য। আর এখানে সবাই পারে নিজেরটা নিজে নিয়ে খেতে। ভাবি তুমি বসো তো – তিথি আপু
সকালে নাস্তা করার পর যেহেতু কিছু খাওয়া হয়নি। তাই আমারো বেশ ক্ষুদার্ত অনুভব হচ্ছিল তাই কিছু না ভেবে আমিও বসে পরি খেতে।কিন্তু যদি আমি জানতাম এই খেতে বসার জন্য এতকিছু হবে তাহলে কখনোই খেতে বসতাম না।
রাতের বেলা,
শরীরটা খারাপ লাগছিল বলে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম।হঠাৎই শুভ্র রুমে এসে আমাকে টেনে তুলে গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো।থাপ্পড়টা এত জোরে দিয়েছিল আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে খাটের একপাশে গিয়ে পড়ি এবং খুব জোরে কপালে আঘাত পাই।কপালে আঘাতের জায়গাটায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম কপাল ফেটে রক্ত পরছে।আবারো শুভ্র আমাকে টেনে তুলে শরীর ঝাকিয়ে বলতে লাগলো,
তুই আমার আম্মুর কথার অবাধ্য কোন সাহসে হয়েছিস বল আমাকে? – শুভ্র
শুভ্রের এমন ব্যবহারে আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি সে আবারো বলতে লাগলো,
তুই থাকতে রান্নাবান্না ঘরের কাজ কেনো আমার আম্মুকে করতে হবে? তোকে কি ঘরে বসিয়ে খাওয়ার জন্য নিয়ে আসছি আমি? বল তুই জলদি জবাব দে – শুভ্র
কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন? কি ভুল করেছি আমি সেটা তো বলবা ? – আমি
তুই জানিস না তুই কি করেছিস তুই আমার আম্মুর কথার অবাধ্য হয়েছিস।আবার কোন পরপুরুষের সাথে দেখা করতে ছাদেও গিয়েছিলি।তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি – শুভ্র
আমি শুভ্রের বলা কথাগুলো শুনে হতভম্ব দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।তাকে বলার কোনো কিছু আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কি বলবো আমি ওকে।আমার শাশুড়ী আম্মু যে সারাদিনের সেই সব ঘটনা এভাবে ওর কাছে বলবে সেটা আমার বুঝে সাবধানে থাকা উচিত ছিল।আমি এখনো নীরব হয়ে রয়েছি।শুভ্র আর কিছু না বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে পাশের ড্রয়ারে থেকে এক প্যাকেট সিগারেট বের করে বেলকনিতে চলে গেল।
হঠাৎই বিরাট শব্দে আমার ফোনটা বেজে উঠলো।স্কিনে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠলো আম্মু নামটি।আমি ঠোঁটে একটা মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে কলটা রিসিভ করলাম।রিসিভ করার সাথে সাথে ওই পাশে থেকে আম্মু বলে উঠলে,
ঝিলিক মা কেমন আছিস ? – আম্মু
এই তো আম্মু ভালো আছি।তুমি কেমন আছো ? – আমি
আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।মা তোকে একটা কথা বলার ছিলো? – আম্মু
হ্যা আম্মু বলো – আমি
তোর আব্বুর শরীরটা আজকে সকাল থেকে ভালো যাচ্ছে না।লোকটা বার বার তোকে দেখতে চাইছে।তুই জামাইকে বলে কালকে যেমনে পারিস একটু এসে তোর আব্বুকে দেখে যাস – আম্মু
আচ্ছা আম্মু আমি আসবো কালকে।ভালো থেকো তুমি। আল্লাহ হাফেজ – আমি
আল্লাহ হাফেজ – আম্মা
আম্মার সাথে কথা বলে আমি বেলকনিতে চলে আসলাম শুভ্রর সাথে কথা বলতে।কিন্তু এখানে এসে শুভ্রর কথা শুনো আমার দুনিয়া হয়তো ঘুরতে শুরু করলো।ফোনের অপর পাশে থাকা রমনীকে শুভ্র বলছে,
তুমি চিন্তা করো না জান আমি যেভাবে পারি কিছু দিনের ভিতরে ঝিলিককে ডিভোর্স দিয়ে দিব।তারপরই আমরা বিয়ে করে নিব – শুভ্র
ব্যস এইটুকু কথা।কিন্তু আমার বুকে লাগা আঘাতের পরিমাণ কেউ হয়তো কল্পনা ও করতে পারবে না।বুঝতে আর বাকি রইলে না এই সংসারে আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে।
চলবে?