#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে,০৬,০৭
#পর্ব_ষষ্ঠ
#লেখিকা_দিয়া
রিয়া নামের মেয়েটার বলা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আনমনে হাঁটছিলাম। হঠাৎই আমি কিসে যেন পা পিছলে পরে যেতে নেই।আর তখনি শুভ্র সামনে থেকে দৌড়ে এগিয়ে এসে আমাকে ধরে ফেলে।তারপর আমি ঠিক ভাবে দাঁড়িয়ে শুভ্রের থেকে নিজেকে সরিয়ে নেই।শুভ্র বলে উঠে,
খেয়াল কোথায় থাকে তোমার ঝিলিক ? এখন পড়ে গেলে কি হতো তুমি ভাবতে পারছো ? – শুভ্র
আমি নিচে তাকিয়ে দেখলাম সেখানে তেল পরে আছে।আমি শুভ্রকে বলে উঠলাম,
এখানে তেল কিভাবে আসলো ? – আমি
শুভ্র নিচে তাকিয়ে নিজে ও অবাক হয়ে বলতে লাগলো,
তাই তো এখানে তেল কে ফেলে রেখেছে ? আম্মু ও আম্মু – শুভ্র
কি হয়েছে শুভ্র? – রুমে থেকে বেরোতে বেরোতে বললো আম্মা
এখানে তেল কিভাবে আসলো ? – শুভ্র
আম্মু নিজেও অবাক কন্ঠে বে উঠে,
এখানে তেল আসার তো কথাই নয়। রান্না ঘরে শুধু আমি আর ঝিলিকই ঢুকি।আমি আর ঝিলিক তো ফেলিনি তাহলে – আম্মু
শুভ্র কিছুসময় নিরব হয়ে কিছু একটা ভাবলো।তারপর আমি লক্ষ্য করলাম হঠাৎই শুভ্রের মুখভঙ্গি বদলে যেতে লাগলো।শুভ্র রাগী স্বরে ইশিতাকে ডাকতে লাগলো।কিছুসময় পর ইশিতা নিচে আসলো। তারপর বললো,
কি হয়েছে শুভ্র ? – ইশিতা
এখানে তেল৷ কিভাবে আসলো ? – শুভ্র
আমি কিভাবে বলবো এখানে কি ভাবে তেল আসলো ? – ইশিতা
ইশিতা আমাকে এতটা ও বোকা মনে করিসনা।তুই কি জানিস এই বাসার সব জায়গায় আমি ক্যামেরা সেট করে রেখেছি। সেখানে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমি এই কাজ তুই করেছিস। তাহলে তুই কোন মুখে অস্বীকার করছিস ? – শুভ্র
মানে কি এই বাসায় ক্যামেরা – তোতলানো স্বরে বলে উঠে ইশিতা
এখন তুই সব সত্যি বলবি নাকি আমি পুলিশকে কল করবো ? – শুভ্র
হ্যা হ্যা হ্যা আমিই ফেলেছি এই তেল।ফেলেছি তো বেশ করেছি। তাও তো তুমি বাঁচিয়ে নিলে এই অশান্তিকে। পড়ে গেলেই তো ভাল হতো ও না মরতো ওর বাচ্চা তো মরতো – ইশিতা
হঠাৎই আমার শাশুড়ী এগিয়ে এসে ইশিতার গালে পরপর দুটো থাপ্পড় মেরে দিলো। ইশিতা তাও থামলো না বরং চিৎকার করে বলতে লাগলো,
মারো মারো আরো মারো।আমি কোনো মতে মেনে নিতে পারছি না ওই ঝিলিককে শুভ্রের পাশে।আমার শরীর জ্বলছে ওদের একসাথে দেখে।ওদের আমি কখনো সুখি থাকতে দিবনা – ইশিতা
ইশিতার কথা শুনে আমার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো।আমি ওকে বলে উঠলাম,
সবার কপালে এমনেও সুখ থাকেনা।আমিও তাদের মধ্যেই একজন।তুমি আর কি সুখি থাকতে দেবেনা আমার আল্লাহই চায় না আমার সুখ।- ইশিতাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে আমি রুমে চলে আসলাম।
তারপর ড্রইংরুমে কি হয়েছে না হয়েছে আমার তা জানা নেই। আর জানতে ও চাই না।আমি রুমে এসে আম্মুকে কল করলাম।একটু পরে আম্মু রিসিভ করে কল,
হ্যালো আম্মু – আমি
হ্যা মা বল।কেমন আছিস তুই ? – আম্মু
আম্মু আমি ভাল নেই বিশ্বাস কর আমি একটু ও ভালো নেই।আম্মু আমাকে কেউ একটু ভালো থাকতে দিতে চায়না আম্মু।সবাই শুধু আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলে আম্মু।আমি আর পারছি না এভাবে বেঁচে থাকতে। – কান্না করতে করতে বললাম আমি।
কি হয়েছে আমাকে খুলে বল তুই ? – আম্মু
আমি সব ঘটনা আম্মুকে সংক্ষেপে খুলে বললাম।সব শুনে আম্মু আমাকে বললো,
মা আমি যা বলবো তুই তাই করবি এখন। আর দরকার নেই তোর এমন স্বামি আর শশুড় বাড়ির।কালকে সকাল সকাল তুই যা যা অনেক দরকার সেসব নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাবি বাকিটা পরে ভেবে বলবো আমি – আম্মু
আচ্ছা – আমি
হুম এখন একটু রেস্ট নে।কালকে শুভ্র হসপিটালের জন্য বেরিয়ে গেলেই তুই ও বেরিয়ে আসবি।আর ও যেন কিছু জানতে না পারে – আম্মু
আচ্ছা – আমি
~~~~~~~
পরদিন সকাল,
ঘুম থেকে উঠতেই দেখি শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমাকে উঠতে দেখে ও বলে উঠলো,
শুনো বউজান – শুভ্র
হুম – আমি
আজকে তোমাকে আমি অনেক কিছু জানাবো। বিকেলে তৈরি থেকো আমরা একটু বেরোবো – শুভ্র
আচ্ছা – আমি
তারপর শুভ্র হসপিটালের উদ্দেশ্য চলে গেল।শুভ্র যাওয়ার পরই আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। তারপর রুমে এসে যেসব জিনিস একবারে না নিলেই নয় সেই কয়টা জিনিস একটা ব্যাগে গুছিয়ে নিলাম।তারপর মাকে বলে বের হলাম যে রিনি মিনির কাছে যাব।বাসা থেকে বেরিয়েই আমি আম্মুকে কল করলাম।তারপর আম্মু আমাকে কিছু কাজ করতে বললো। আমি চললাম সেই কাজগুলো করতে।
বিকেল বেলা,
ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্য যাওয়া বাসে রয়েছি আমি রিনি মিনি আর আম্মু।চলে যাচ্ছি এসব কিছু ছেড়ে।যত পিছুটান আছে সব ঝেড়ে ফেলে চলে যাচ্ছি নতুন এক অজানার উদ্দেশ্য। জানিনা ভাগ্যে কি আছে আর কিই বা হবে ভবিষ্যতে। পেটের উপরে হাত বুলিয়ে মনে মনে বলতে লাগলাম,
নাহ আজকে থেকে আমি শক্ত হবো।আর কারোর জন্য না হলেও আমার বাচ্চার জন্য আমাকে টিকে থাকতে হবে। লড়াই করতে হবে কঠিন এই বাস্তবতার সঙ্গে। তবেই না আমার বাচ্চাটা ভালো থাকবে।আপনমনে এইসব ভাবনা ভাবতে ভাবতেই আম্মুর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম।
~~~~
শুভ্র বিকেলে খুশি মনে বাসায় ফিরে আসে।কলিং বেল বাজাতেই তার আম্মু গিয়ে দরজা খুলে দেয়।আম্মুকে দরজা খুলতে দেখে শুভ্র একটু অবাক হয়।কারণ শুভ্র অফিস থেকে ফেরার পর দরজা সবসময় ঝিলিক খুলে।তাও নিজের ভিতরের অবাক ভাবকে দূরে ঠেলে দিয়ে শুভ্র বাসার ভিতরে চলে আসে।তারপর নিজের রুমে চলে যায়।রুমে গিয়ে ঝিলিককে অনেক খুঁজার পরেও শুভ্র খুঁজে পায়না তাই সে তার আম্মুর কাছে যায় ঝিলিকের খোঁজ জানতে।আম্মার কাছে গিয়ে শুভ্র বলে উঠে,
আম্মা ঝিলিক কোথায় ? – শুভ্র
ও রিনি মিনির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে। আসতে নাকি দেরি হবে – আম্মা
ও আচ্ছা তাহলে আমিও যাই সেখানে – শুভ্র
আচ্ছা যা – আম্মু
তারপর শুভ্র রিনি মিনিদের হোস্টেলের সামনে চলে আসে গাড়ি নিয়ে। কিন্তু ভিতরে গিয়ে শুভ্র জানতে পারে ওরা নাকি আজকেই এই হোস্টেল ছেড়ে দিয়েছে। বিষয়টা শুভ্রকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলে।তাই সে জলদি বাসায় ফিরে আসে।শুভ্রকে একা বাসায় আসতে দেখে ওর মা প্রশ্ন করে ,,
কিরে তুই একা কেন? বউমা কোথায় ? – আম্মা
সেটাই তো খুঁজছি আম্মা।আমার মনে হচ্ছে অনেক খারাপ কিছু একটা ঘটতে চলেছে – বলে শুভ্র তারাতাড়ি রুমে চলে আসে।
তারপর এক টানা ঝিলিককে কল করতে থাকে। কিন্তু লাভ হয়নি কল যাচ্ছে না।হঠাৎই শুভ্রের নজর আটকে যায় টেবিলে রাখা একটা চিরকুটের উপরে।এগিয়ে গিয়ে চিরকুটটা খুলে সে পড়তে শুরু করে,
প্রিয় শুভ্র
ভালো থেকো ভালোবাসা।আমি নাহয় সারাজীবন দূরে থেকেই ভালোবেসে যাব।তুমি সুখি হও তোমার নতুন ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে।
তোমার বউজান
চলবে?
#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে
#পর্ব_সপ্তম
#লেখিকা_দিয়া
বাড়ির ড্রইংরুমে থমথমে ভঙ্গিতে বসে আছে শুভ্রের আম্মু আব্বু।হঠাৎই শুভ্রের আম্মু বলে উঠলো,
ওগো তুমি বরং এক বার কল করো ওকে রাত ১ টা বেজে গেছে আমার ছেলেটা এখনো আসলো না।আমার যে আর ভাল লাগছে না এসব।ছেলেটা আমার কেমন জেনো হয়ে গিয়েছে। নিজের কোনো যত্ন নেয় না।সারাক্ষণ শুধু হসপিটালে নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখে।বাসায় ও আসতে চায়না।আর আসলেও রাত দুই তিনটার দিকে এসে আবার সকাল ৮ টায় চলে যায়।- শুভ্রের আম্মা
শূণ্যতা শব্দ টা বড্ড কষ্টের।আর সেই শূণ্যতা যদি মানুষের হয় তাহলে তো কথাই নেই। আজ ৫ টা বছর হতে চললো ঝিলিক চলে গেছে।শুভ্র কিভাবে ঠিক থাকবে বলো।এতদিনে ওদের বাচ্চা টা ও কত বড় হয়ে গেছে ভাবো। এসব ভাবার পর শুভ্র নিজেকে সামলাতে পারবে না এটাই তো স্বাভাবিক – শুভ্রের আব্বু
সব হচ্ছে আমার পাপের ফল।কেনো যে সেদিন তোমার কথা মতো ঝিলিককে মেনে নিলাম না।আমি ছেলের সংসারটা আমি নিজ হাতে শেষ করে দিলাম।ইশিতাকে যদি ওদের থেকে দূরে রাখতাম।ইশিতা এডিট করা ওইসব ছবি দেখে এমনিই শুভ্র মেয়েটার উপরে অনেক অত্যাচার করেছে।ওদের মধ্যে অনেক দূরত্ব ও এসে গিয়েছে আমি তো দেখেছি। তার মধ্যে আবার রিয়ার ঘটনাটা। ঝিলিকের এখানে কোনো দোষ নেই গো।কোন স্ত্রীই বা মানতে পারবে স্বামীর পাশে অন্য মেয়েকে – শুভ্রের আম্মু
দোষটা শুভ্রেরই। ও যদি ঝিলিকের সাথে খোলামেলা ভাবে সব কিছু আলোচনা করতো তাহলে এমন কিছুই হতো না।ও প্রথম ভুল করেছে ঝিলিককে অবিশ্বাস করে।দ্বিতীয় ভুল করেছে রিয়ার ঘটনাটা ঝিলিকের থেকে লুকিয়ে। ঝিলিক বড্ড বুদ্ধিমান মেয়ে ওকে বুঝিয়ে বললে ও ঠিকই সব বুঝতো – শুভ্রের আব্বু
ওনাদের কথার মাঝেই বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো।শুভ্রের আম্মু উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।শুভ্র ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বললো,
আমি যখন বলেছিলাম আমি আসবো।তাহলে আমি আসবোই।এতবার কল না দিলেও হতো।আর তোমাকে না ডাক্তার রাত জাগতে নিষেধ করেছে আব্বু – শুভ্র
কি করবো ছেলের চিন্তায় যে শেষ হয়ে যাচ্ছি – শুভ্রের আব্বু
বাবা আমরা আর কয়দিন আছি বল।মরার আগে তোর জীবনটা ঠিকঠাক করে দিয়ে যেতে চাই। আমরা নতুন একটা মেয়ে দেখেছি তোর জন্য। তুই যদি অনুমতি দিতি আমরা বিয়ের কথা পাকা করে ফেলতাম – শুভ্রের আম্মু
আমি তোমাকে আর কতবার বলবো আম্মু যে আমি বিবাহিত আমার একটা সন্তান আছে আমি কেনো আরেকটা বিয়ে করতে যাব। পারলে আমার ঝিলিককে আর আমার বাচ্চাকে আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসো।নাহলে নেই।এসব যদি আরেক বার বলো তাহলে কিন্তু আমি আর বাসায়ই আসবো না বলে দিলাম – শুভ্র
আজকে ৫ বছর হতে চললো শুভ্র ঝিলিক চলে যাওয়ার।ও কোথায় আছে ? কেমন আছে ? অদৌ ও কি বেঁচে আছে নাকি একটা কিছু জানতে পেরেছিস তুই বল আমাকে – শুভ্রের আম্মু
পারিনি তো কি করবো।খুব জলদি ওকে তোমাদের সামনে দেখতে পারবা। বাদ দাও। আমি কালকে রাতে সিলেট যাচ্ছি সাপ্তাহ খানেকের জন্যে। চিন্তা করো না কাজেই যাচ্ছি। কাজ শেষ হলে আবার ফিরে আসবো – বলে শুভ্র নিজের ঘরে চলে গেল।
ঘরে গিয়ে ঝিলিকের এক ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আপন মনে বলতে লাগলো,
কেনো ঝিলিক আমাকে বোঝার চেষ্টা করলা না ? একটু চেষ্টা করতা। আমাকে নাহয় সত্যি টা জিজ্ঞেস করতা।কেনো আমার সাথে এমন করলে তুমি? আমাকে বাবা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত করলে এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।দেখা হচ্ছে খুব জলদি বউজান।- শুভ্র
~~~~~~~~
শুভ বাবা দেখো দুষ্টমি করে না বাবা। জলদি নাস্তা টা শেষ করো।নাহলে কিন্তু আমাদের যেতে লেট হয়ে যাবে। – ঝিলিক
না না আমি আর খাব না।আমার পেট ভরে গেছে।আমার পেট টা এইটুকু।এত খাবার আমি কিভাবে খাবো ? – শুভ
বাবা তুমি না আমার ভালো ছেলে।আর ভালো ছেলেরা কিন্তু মাম্মার সব কথা শুনে। শুভ তো ভালো ছেলে শুভ কি পচা ছেলে হতে চায় ? – ঝিলিক
খাচ্ছি খাচ্ছি । – বলে শুভ আধো খাওয়া নাস্তা টা আবার খেতে শুরু করলো।
রিনি মিনি তোরা কি আজকে বের হবি নাকি শপিং করতে ? – ঝিলিক
হ্যা আজকে রনি আর শিহাব দুজনেই আসবে শপিং করতে – মিনি
তাহলে তো হলোই।বিয়ের কিন্তু বেশি সময় বাকি নেই।যত জলদি পারিস কেনাকাটা শেষ কর।আর তোরা যেই জুয়েলারির কথা বলছিলি শোরুমে গিয়ে নিশাকে ডিজাইন দিয়ে আসিস। তোরা সাবধানে চলে যাস। শুভ তুই কি ওদের সাথে যাবি নাকি বাসায় থাকবি ? – আমি
হ্যা আমিও যাব – শুভ
আচ্ছা বাবা ।তাহলে রিনি তুই ভার্সিটি থেকে আসার সময় শুভকে স্কুল থেকে নিয়ে আসিস।আমার আসতে আজকে লেট হবে একটু – আমি
ওকে আপু।- রিনি
তারপর রিনি মিনিকে বিদায় দিয়ে আমি শুভকে নিয়ে বের হয়ে আসলাম।এতক্ষণে আপনারা অবশ্যই বুঝে গিয়েছেন শুভ হচ্ছে আমার ছেলে।কেজি ক্লাসে পড়ছে এ বছর।কিন্তু দুষ্টুমিতে যে কাউকে হারিয়ে দিবে।এই পাঁচ বছরে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। আমার আম্মুও চলে গিয়েছে আমাদের তিন বোনকে একা করে দিয়ে।এই তো চলছে তাও সবকিছু নিজ গতিতে। এরই মধ্যে পৌঁছে গেলাম শুভর স্কুলে।ওকে স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি বের হয়ে গাড়ি বসে পরে চলতে লাগলাম অফিসের উদ্দেশ্য। শো-রুম যেতে যেতে পেজের ইনবক্সের মেসেজগুলো চেক করতে লাগলাম সাথে করতে লাগলাম জুয়েলারি অর্ডারগুলো কনফার্ম। কালকে রাতের লাইভের পর ইতোমধ্যে ১৫০+ অর্ডার এসেছে জুয়েলারির।৪ বছর ধরে আমি এই বিজনেস টা করছি।শুরুটা খুব বেশি সহজ ছিল না।কিন্তু অনলাইনে পেজ খোলার পর বিক্রি অনেকটা বেড়েছে। সেই সাথে ভালো পণ্যের জন্য আমার কোম্পানি ও বেশ সুনাম অর্জন করেছে।এখন এই সিলেট শহরে আমার দুটো শো-রুম আছে জুয়েলারির। কেনাবেচা ও আল্লাহর দোয়ায় বেশ ভালোই হচ্ছে। ২ বছর হলো এখানে জায়গা কিনে নিজের বাড়ি করেছি।নিজের গাড়িও আছে।বলতে গেলে আম্মা আর শুভ্রের অত্যাচারের থেকে শতগুণ বেশি ভালো আছি আমি।নিজেকে এখন স্বাধীন মনে হয় আমার। নিজের যেভাবে খুশি চলতে পারি।কোনো কিছুর জন্যই কারো উপর নির্ভর হতে হয়না।কিন্তু সত্যি বলতে দিনশেষে শুভ্রের শূন্যতা আমাকে বড্ড পীড়া দেয়।সারাদিন সবার সামনে শক্ত থাকলেও রাতের বেলা আর নিজেকে সামলাতে পারিনা।তখন একা একাই নিজের সঙ্গে দুঃখ বিলাস করি।এসব ভাবতে ভাবতেই শোরুমে চলে এলাম।আমি ভিতরে ঢুকতেই এখানকার মেনেজার এগিয়ে আসলো।এসে বলতে লাগলো,
গুড মনিং মেম। কেমন আছেন ? – নিশা
এইতো। তোমার কি খবর ? – আমি
ভালো। মেম কালকে রাতে একটা এওয়ার্ড ফাংশন আছে – নিশা
বেশ ভালো।তো এওয়ার্ড ফাংশন দিয়ে আমাদের কি কাজ ? – আমি
মেম সেখানে আপনি ২০২২ সালের সিলেটের সেরা নারী উদ্যোক্তার এওয়ার্ড টি পাচ্ছেন।ওনারা অনেক রিকোয়েস্ট করেছে আপনাকে সেখানে থাকার জন্য। আমি বলেছি আপনি এসব পছন্দ করেন না। তবুও তারা অনেক বলেছে। এখন তাদের আমি কি বলবো ? আপনি কি যাবেন ? – নিশা
কখন কালকে ? – আমি
সন্ধ্যা ৭ টায় মেম – নিশা
আচ্ছা তাদের হ্যা বলে দাও আমি যাব – আমি
ওকে মেম। মেম আমাদের কেনাবেচা ভালোই চলছে।আমি একটা কথা ভেবেছি মেম – নিশা
কি কথা? – আমি
আমাদের ৬০% কাস্টমারই ঢাকার।অনেকে অনলাইনে বিশ্বাস করতে পারছেনা। ঢাকার ভিতরে আমাদের শোরুম কোথায় জানতে চাচ্ছে। শোরুম সিলেটে বলার পর অনেক কাস্টমাররাই আসতে পারছে না বিধায় আর জুয়েলারি ও কিনছে না।আমার মনে হয় ঢাকার একটা শোরুম খুললে আমার প্রোফিট আরো অনেক বেড়ে যাবে – নিশা
কথা টা খারাপ বলোনাই নিশা। কিন্তু ঢাকায় শোরুম ওপেন করলে সেখানে সকল দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে।কারণ আমি ঢাকায় যেতে পারবোনা কখনোই।তুমি দেখো কিভাবে কি করলে ভালো হবে।সেই অনুযায়ী সকল ডকুমেন্ট বানিয়ে আমাকে ইমেল করে দিও। আমি দেখবো।আর হ্যা অনলাইনে করা অর্ডারগুলো ৪ দিনের ভিতরে ডেলিভারির ব্যবস্থা কর।- আমি
আচ্ছা মেম আমি ওই সেকশনের সবার সাথে আলোচনা করবো – নিশা
তাহলে আজকে আমি চললাম নিশা তুমি সবটা দেখে সামলে নিও।আর কালকে রেডি হয়ে তুমি ছয়টার দিকে আমার বাসায় চলে এসো। সেখানে থেকেই আমরা এওয়ার্ড ফাংশনে যাব – আমি
ওকে মেম – নিশা
~~~~~
পরদিন,
সময় মতো এওয়ার্ড ফাংশনে চলে আসি।এই প্রথম হয়তো আমি কোনো ফাংশনে উপস্থিত হয়েছি।এতদিন এসব থেকে নিজেকে যথেষ্ট আড়াল করে রাখলেও আজকে কি মনে করে যেন আসলাম।যখনি আমার নাম স্টেজে বলা হলো তখন আমি উঠে দাঁড়িয়ে স্টেজে চলে আসলাম। এওয়ার্ড টা নেওয়ার সময় যে আমাকে এওয়ার্ড টা দিচ্ছে তার চেহারা দেখে আমি চমকে উঠলাম,
একি শুভ্র এখানে,
চলবে?