ভালোবাসায় পাগলামি
part:8+9
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)
খুব সুন্দর একটা নীল শাড়ি পড়ে দু হাত ভর্তি করে নীল চুড়ি পড়ে নীল সাবিহা। কেন আজ অনেক সাজতে ইচ্ছে করছে সাবিহার। চুলগুলো খোপা করে নিল। হঠাৎ ঘাড়ে কোমরে কারো স্পর্শ অনুভব করল সাবিহা। আফরান পিছনে থেকে জরিয়ে ধরে সাবিহার ঘাড়ে কিস করল। সাবিহা শিউরে উঠল।
-কি কি….করছেন?
-আদর করছি। দেখছো না?
-রেডি হতে দেন নাহলে তো বের হতে দেরি হয়ে যাবে।
-তুমি তো রেডি। একটু সোজা হয়ে দাঁড়াও ।
-কেন?
-?
– আচ্ছা দাঁড়াচ্ছি।
আফরান সাবিহার খোপায় একটা বেলী ফুলের মালা গেঁথে দিল।সাবিহা খোপায় হাত দিয়ে বলল বেলী ফুলের মালা কোথায় পেলেন?
-অফিস থেকে আসার সময় নিয়ে আসলাম।
আফরান তার মুখ টা সাবিহার কানের কাছে এনে বলল তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে বউ। তাড়াতাড়ি করে নিচে এসো।
।
।
।
আপনাকে ও খুব সুন্দর লাগছে একদম প্রিন্স এর মতো। সত্যিই খুব অসাধারণ লাগছে আপনাকে নীল পানজাবি তে। আচ্ছা আমি আপনার প্রেমে পরে গেলাম না তো? (মনে মনে বলল সাবিহা)
সাবিহা আর আফরান একটা লেকের ধারে বসে আছে।
আচ্ছা সাবিহা একটা কথা বলব?
-বলেন?
-তুমি আমার কাঁধে একটু মাথা রাখবা?
-হুম,,,,,
সাবিহা আফরান এর কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকল।
-সাবিহা,,,,,,
-হুম,,,,,
-আমি তোমাকে আজকে আমার জীবনের একটা কথা বলতে চাই।
-কি কথা? (অবাক হয়ে )
-শুনো তাহলে,,,,,,
।
।
।
আমি একটা মেয়ে কে খুব খুব বেশি ভালোবাসতাম। মেয়েটার নাম আয়েশা । ও আমাকে খুব ভালোবাসত। আমাদের দুই বছরের সম্পর্ক ছিল।
– তারপর কি হলো?
-একদিন আমি আর আয়েশা দুইজন মিলে খুব দুষ্টমি করছিলাম। হঠাৎ আয়েশা বলে ওঠল আচ্ছা আফরান আমি যদি কখনও হারিয়ে যাই তুমি কি করবে?
তখন আমি ওকে সাথে সাথে একটা কষিয়ে থাপ্পড় দিলাম। ও কান্না করে আমাকে জরিয়ে ধরল। তারপর আমিও ওকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললাম কখনও আর হারিয়ে যাওয়ার কথা বলবে না যদি বলো তাহলে কিন্তু আমি তোমার আগে হারিয়ে যাবো। আয়েশা তখন আমাকে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল আর কখনও এমন বলবো না।
।
।
।
কিন্তু ও হারিয়ে গেল আমাকে রেখে,,,,,,
চলবে,,,,,
#ভালোবাসায় পাগলামি
#part:9
#writer: Maliha Islam Tafsi (jeba)
কিন্তু ও হারিয়ে গেল,,,কথাটা বলেই কেঁদে দিল আফরান ।
– প্লিজ কাদবেন না।( আফরান এর মাথায় হাত বুলিয়ে কথাটা বলল সাবিহা )
– হুম,,,,,
-আচ্ছা আয়েশার কি হয়েছিল ও এখন কোথায়?
-ও এখন আর এই পৃথিবী তে নেই আমাদের ছেড়ে খুব দূরে চলে গেছে।
-সরি,,,,কথাটা জিজ্ঞেস করে আমি হয়তো আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
-না। আমি নিজেই তো তোমাকে আজকে বলতে চাই সবকিছু ।
– কি হয়েছিল আয়েশার?
,
,
,
আয়েশার আর আমি কাজী অফিসে ঐদিন বিয়ে করে নিলাম। কারণ আমারা দুইজন কে হারাতে চাই না। আয়েশার পরিবার নেই ও অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে। আর মা ও আয়েশা কে খুব পছন্দ করত। যেইদিন আয়েশা কে বিয়ে করব সেইদিন মা কে ফোন দিয়ে বললাম মা আমি আয়েশা কে আজকেই তোমার বাড়ির বউ করে নিয়ে আসতে চাই। কথাটা শুনে মা বলল আমি অপেক্ষায় আছি বাবা তোদের বরণ করার জন্য । সেইদিন মায়ের সম্মতিতে আয়েশা আর আমি বিয়ে করে বাসায় আসলাম । মা খুব সুন্দর ভাবে আয়েশা কে বরণ করে নিল। আয়েশা আমার মা কে একদম নিজের মা বানিয়ে নিয়েছিল আর মা ও নিজের মেয়ের মতো খুব ভালোবাসত আয়েশা কে। আমার আর আয়েশার খুনসুটি ভালোবাসায় আমাদের বিয়ের পাঁচ মাস কেটে গেল। একদিন অফিস থেকে এসে দেখি আয়েশার শরীর খুব খারাপ। আমি আয়েশা কে বললাম ডক্টর এর কাছে যাওয়ার জন্য কিন্তু ও বার বার কথাটা এড়িয়ে যেত । কয়েকদিন পরে দেখলাম আয়েশা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ল। ওর চোখের নিচ গুলো একদম কালো হয়ে গেল। আমি ওকে জোর করে আমাদের পারিবারিক একজন ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলাম ওকে। ওনি আয়েশা কে দেখে বলল- আয়েশা মামণি ওষুধ গুলো খাচ্ছ তো ঠিক মতো?
আয়েশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি আংকেল কে জিজ্ঞেস করলাম-
ওষুধ গুলো খাচ্ছে মানে আংকেল আয়েশা কি আপনার কাছে আগে এসেছিল?
আংকেল আয়েশার দিকে তাকিয়ে বলল তুমি কিছু বলো নাই আফরান কে?
আয়েশার তখন ফ্লোরে বসে কাঁদতে শুরু করল শুধু । আমি আয়েশা জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে বলতে। কিন্তু ও আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।
ডাক্তার আংকেল আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন আয়েশা আমাদের মাঝে বেশিদিন নেই। আমি ওনার কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম বেশিদিন নেই মানে?
ওনি বললেন আয়েশার ক্যানসার ধরা পড়েছে একমাস আগে। আয়েশা আর বড়জোর দুই মাস বাঁচবে ।
ডাক্তার আংকেল এর কথা শুনে আমার ভিতর টা কেঁপে ওঠল। আমি আয়েশা কে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম। তখন বুঝতে পারলাম ও কেন আমার সাথে ডাক্তার এর কাছে আসতে চাই নি।
সেদিন সারা রাস্তা গাড়িতে আয়েশা কে জরিয়ে ধরে রাখলাম। আয়েশা একদম চুপ হয়ে আছে কিছু বলছে না। আমি বাসায় এসে মা কে সবকিছু খুলে বললাম। মা শুনে খুব কান্না করতে লাগল আর আয়েশা জরিয়ে ধরে বলতে লাগল আল্লাহ কেন আমার মেয়ে টার সাথে এমন করল,,,,
সেইদিন থেকে মা সারাক্ষণ নামায পড়ে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলেন। আমি আয়েশার খুব খেয়াল রাখলাম কিন্তু মেয়ে টা একদম চুপ হয়ে গেল। ইদানীং আয়েশার মাথার চুল ও ঝরে পড়তে লাগল। আমার খুব প্রিয় জিনিস ছিল আয়েশার চুল গুলো। ও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর চেহারা আর চুল গুলো ধরে কান্না করতে লাগল। আমি আয়েশা কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম তারপর ওকে সামনে ফিরিয়ে ওর কপালে একটা চুমু এঁকে দিলাম। ও তখন আমাকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগল,,,,,
আমি বাঁচতে চাই আফরান । আমি মা আর তোমার সাথে সুখে থাকতে চাই।
ওর সামনে আমার কষ্ট গুলো আমি দেখাতাম না। আমি যে ভিতরে ভিতরে মরে যাচ্ছিলাম ।। ওর কিছু হলে যে আমার শ্বাস থেমে যাবে। আমি তখন ওকে জরিয়ে ধরে বললাম তোমার কিছু হবে না । তুমি আমার আর মার সাথেই থাকবে অনেক সুখে।।।।।
চলবে,,,,