#ভালোবাসারা_ভালো_নেই,পর্ব_২০
#অজান্তা_অহি
আপুর হাতে ফোন ধরিয়ে দেওয়ার সময় স্ক্রিনে চোখ পড়লো। সেখানে ‘ব্যারিস্টার আকাশ মাহমুদ’ নামটা জ্বলজ্বল করছে। কার ফোন বুঝতে আর বাকি রইলো না। আপু ফোনটা হাতে নিল ঠিকই। কিন্তু রিসিভ করলো না। নাম দেখে টেবিলের একপাশে রেখে দিল। আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ফোন ধরবেন না আপনি?’
‘উঁহু! মন চাইছে না। মনের উপর অনেক জোর খাটিয়েছি। এখন ইচ্ছে হচ্ছে না। কল ধরলে ছেলেটা শুধু বকবক করবে। সারাদিন কী কী করেছে, কোথায় কোথায় গিয়েছে এসব ইতিহাস বলবে। তার বকবকানি শুনতে শুনতে ক্লান্ত আমি। এতো কথা বলে!’
‘এখন ক্লান্ত লাগলেও একসময় ভালো লাগবে আপু।’
‘কে জানে!’
সামান্তা আপু ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। হতাশ সুরে বলল,
‘তুই জানিস। কিছু মানুষ অন্যদের আকৃষ্ট করার অদ্ভুত গুণ নিয়ে জন্মায়। এরা কিছু করুক বা না করুক চারপাশের মানুষ এদের জন্য পাগল থাকবে। এরা পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও আকৃষ্টতার গন্ধ ছড়িয়ে যায়। এই গন্ধে ডুব না দিয়ে পারা যায় না।ফাইজান ভাইও তেমন। সে কিছু করবে না, কিছু বলবে না। তবুও সবাই তার প্রতি আকৃষ্ট হবে। কত মেয়ে তার জন্য পাগল! যে মেয়েটাকে বিয়ে করেছে সে-ও নিশ্চয়ই তার জন্য পাগল ছিল।’
আপু ঠিক বলেছে। এটা আমি খুব করে বুঝেছি। আপু হঠাৎ আহত স্বরে বলল,
‘একটা সময় কত স্বপ্ন ছিল। পড়াশুনা করবো। প্রতিষ্ঠিত হবো। প্রিয় মানুষটার হাত ধরে পুরো পৃথিবী ঘুরবো। এখন কোনো স্বপ্ন নেই। বেঁচে থাকা কি যে যন্ত্রণার মনে হয়।’
উত্তর দিতে পারলাম না। আপু পড়াশুনা নিয়ে ভীষণ দায়িত্বশীল ছিল। ফাইজান ভাই বহু গুণে গুণান্বিত। তার সমকক্ষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে আপু কত কিছু করতো। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে দেখা যায় না। হই হুল্লোড় করতে দেখা যায় না। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দেখা যায় না। তার সবকিছু থমকে গেছে। হঠাৎ কাতর গলায় বলল,
‘তুই বল তো জুঁই। বিয়ে না হয় করে নিলাম। সংসার কিভাবে করবো? আমার প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। যাকে বিয়ে করবো তার জীবনটা নষ্ট হবে না তো?’
‘একসাথে থাকতে থাকতে ভালো লাগার সৃষ্টি হয়ে যাবে। মানুষ অনুভুতির বেলায় বড্ড বাচ্চা স্বভাবের। একটু-আধটু যত্ন পেলে, ভালোবাসা পেলে, সামান্য ভালো ব্যবহার দেখলে বা দুটো ভালো কথা শুনলে তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে। আপনিও দূর্বল হয়ে পড়বেন আপু। দেখবেন, আপনাদের সংসার সুখের হবে। একদম ভয় পাবেন না।’
আপুর চোখজোড়া চিক চিক করছে। এপাশ ওপাশ তাকালো সে। নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
‘ফাইজান ভাই ঢাকায় ফ্ল্যাট নিয়েছে। শুনেছিস?’
‘না। শোনা হয়নি। ভাইয়ের চাকরি হয়েছে সেটা জানি শুধু।’
‘হ্যাঁ। চাকরি পাওয়ার পরের মাসে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। নতুন বউকে সঙ্গে নিয়ে থাকে। এ বাড়ি বউ নিয়ে আসবে না।’
চমকালাম আমি। ফাইজান ভাই বউ নিয়ে ঢাকা রয়েছে? কেমন যেন মন খারাপ হয়ে গেল। আপু সহ্য করছে কিভাবে? রাফি ভাই এখনো অবিবাহিত। কোনো মেয়েকে বউ বলে ডাকে না, কোনো মেয়ে তার গা ঘেঁষতে পারে না জানার পরও কষ্ট লাগে। আপু সইছে কিভাবে!
পুনরায় ফোন বেজে উঠলো। ফোনের ওপাশের ব্যক্তি হয়তো অস্থির হয়ে উঠেছে। আমাদের নীরবতার মাঝে কল কেটে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফের বেজে উঠতে আমি উঠে দাঁড়ালাম।
‘আপু ফোন ধরুন। জরুরি হয়তো।’
‘জরুরী না। শুধু শুধু ফোন দিয়েছে। তুই দেখবি? বসে থাক! আমি রিসিভ করি। দেখি কি বলে।’
আপু রিসিভ করে হ্যালো বললো। ওপাশ থেকে কি উত্তর এলো শুনলাম না। আমি হাত নেড়ে হেঁটে চলে এলাম। দরজা বাহির থেকে ভিড়িয়ে দিয়ে মনে মনে দোয়া করলাম। খুব করে চাইলাম এরা যেন সুখী হয়। দুই মেরুর দুজন যেন একে অপরের মাঝে নিজেদের শান্তি খুঁজে পায়।
_________
অনেকদিন পর আজ কলেজে আসলাম। এতো এতো চাপের মধ্যে থাকি যে পড়াশুনাটা হয়ে উঠছে না। গ্রামে বাইশ দিনের মতো কাটিয়ে এসেছি। আজ ক্লাসে এসে জানতে পারলাম তিনদিন পর পরীক্ষা। হাফ ইয়ার্লি! রুটিন ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে। কিছুই জানি না। ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। কয়েকজন অতি আগ্রহ নিয়ে আমায় ভর্তি করেছে। পরীক্ষা ভালো না দিলে তো পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে।
আমার এই কলেজে ভর্তি হওয়ার পথ সুগম ছিল না। কত ধরনের তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা, মত বিরোধ হয়ে শেষমেশ ভর্তি হতে পেরেছি। এখন যদি পাস করতে না পারি? লজ্জায় মুখ দেখাবো কি করে!
লায়লা নামের মেয়েটার থেকে কিছু কিছু লেকচার খাতায় তুলে নিলাম। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ বুঝে নিলাম। সব চিন্তা ছাপিয়ে পরীক্ষার দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লাম। সেদিন কলেজ থেকে ফিরে মনমরা হয়ে রইলাম। দুপুর বেলা এঁটো থালাবাসন ধুতে গিয়ে মনে হলো, এইভাবে পড়াশুনা হয় না। প্রাইভেট পড়া নেই, নিয়মিত ক্লাস করা নেই। নোটস কেনা নেই। সবগুলো বইও কেনা হয়নি। অথচ পরীক্ষা এসে গেল।
‘কি হইছে রে? এমন কইরা অন্যমনস্ক হইয়া আছোস?’
সালেহা খালা কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি। আমার মন খারাপ হলে খালা বুঝতে পারে। তার কাছে লুকালাম না। হাতের প্লেট রেখে বললাম,
‘খালা। আমি পড়াশুনা করবো না!’
‘অ্যা? কি কস? পড়াশুনা করবি না ক্যান? পাগল হইয়া গেছোস?’
‘খালা এইভাবে পড়াশুনা হয়? কিচ্ছু পড়া হয়নি। অথচ পরীক্ষা এসে গেছে। যদি পাস করতে না পারি?’
‘পাস করবি না মানে? যে কয়দিন আছে ভালো কইরা পড়।’
‘বাড়িতে এতো এতো কাজ। কে করবে? প্রতিদিন ঘর গোছানো, ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া, আরো ছোট ছোট কত কাজ। শুধু রান্নার জন্যই তো তিনজন লাগে। সারাদিন একের পর এক রান্না করতে দিন চলে যায়।’
‘ওমনি কষ্ট করতে থাক। আমি কি মরছি নাকি? আছি তো। সামান্তার বিয়াটা ভালো মতন মিটা গেলে কাজ কমবো।’
‘হুঁ!’
মাথা নেড়ে কাজে মন দিলাম। কোনো কিছুতে শান্তি পাচ্ছি না। জীবন থেকে পালিয়ে যেতে মন চাইছে। দূরে, বহুদূরে!যেখানে পরিচিত কেউ নেই। যেখানে নেই কোনো দুঃখ, দুর্দশা, কষ্ট, বেদনা। সর্বোপরি যেখানে কোনো অনুভূতি নেই। এমন জায়গা কি কোথাও আছে?
বিকেলে কলিং বেল বাজছিল। আমি একটু বই নিয়ে বসেছিলাম। খালা ঘর থেকে বের হলো। দরজা খোলার জন্য। বইয়ের পাতায় চোখ রাখলেও কান খাড়া করে রইলাম। এই সময়ে তো কারো আসার কথা না। এ বাড়ির লোকজন নিয়মমাফিক চলাফেরা করে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে বের হয়। আবার একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফেরে। দরজা না খুলেই বলে দেওয়া যায় কে এসেছে। কিন্তু এই সময়ে কারো ফেরার কথা না। পরক্ষণে মনে হলো, রাজ ভাইয়া নয় তো? একমাত্র সে কোনো নিয়ম মানে না। দুদিনের কথা বলে আজ দিয়ে তিনদিন হয়ে গেল। এখনো বাড়ি ফেরেনি।
বসার ঘর থেকে হঠাৎ খালার উৎফুল্ল কণ্ঠ শুনতে পেলাম। চেঁচিয়ে সবাইকে ডাকছে। অত্যন্ত আদর করে কাকে যেন বসতে দিল। আমি আর কৌতূহল ধরে রাখতে পারলাম না। দরজা সামান্য সরিয়ে উঁকি দিলাম। সুবিধা করতে পারলাম না। এখন থেকে ডাইনিং এর অংশ দেখা যাচ্ছে। তবে এতটুকু বুঝলাম বসার ঘরে কোনো অতিথি এসেছে। আমি কৌতূহল দমিয়ে পড়ায় মন দিলাম। কিয়ৎক্ষণ পর বড় মায়ের মুখে আকাশ নামটি শুনতে পেলাম। আকাশ ভাইয়া এসেছে? সামান্তা আপুর হবু বর। তাকে দেখার জন্য ভেতরে ভেতরে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়লাম। আপুর সাথে সুন্দর মানাবে তো?
বই রেখে বের হলাম। আড়াল থেকে এক নজর দেখবো। তার আগে জুলি আন্টি এলো। বলল,
‘ফলমূল কেটে রেডি কর তো। সুন্দর করে ট্রে সাজা। সাথে চায়ের জন্য পানি বসা।’
‘আচ্ছা!’
রান্নাঘরে ঢুকে গেলাম। চায়ের জন্য পানি বসিয়ে ফলমূল কাটা শুরু করলাম। খালা এলো। মিষ্টি বের করে ছোট ছোট পিরিচে সাজালো। কাঁটা চামচ খুঁজতে খুঁজতে বলল,
‘আকাশ বাবাজী আইছে। এতো ভদ্র ছেলেডা।’
খালার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। আমি বললাম,
‘এমন হুট করে না জানিয়ে কেন এসেছে খালা? নাকি আজ আসার কথা ছিল?’
‘হুট কইরা আসছে। সামান্তা রে নিয়া বের হইবো মনে হয়। খাবার তৈরি কর তাড়াতাড়ি।’
খালা কাজে হাত দিল। তাকে চা বানাতে দিয়ে আমি দু রকমের ফলের জুস বানিয়ে ফেললাম। খাবার সাজানো শেষ হতে খালা নিয়ে বসার ঘরে গেল। তার পিছু পিছু জুসের আলাদা ট্রে নিয়ে আমি। বড় মা, জুলি আন্টি, দাদী সবাই সবার ঘরে। জাকারিয়া আকাশ ভাইয়ার কোলের কাছে বসে। সবাই গল্প গুজবে মশগুল। আমি কোথাও সামান্তা আপুকে দেখতে পেলাম না। সামনের টেবিলে খাবার রেখে সরে এলাম। আকাশ ভাইয়া দেখতে সুন্দর। ফাইজান ভাইয়ের থেকে কোনো অংশে কম নয়। প্রাণবন্ত হাসি। আপুর সাথে দারুণ মানাবে। মন পুলকে ভরে উঠলো। আপু হঠাৎ উপর থেকে ডাক দিল। বলল,
‘জুঁই কোথায়? রুমে আয় তো।’
ছুটে গেলাম আমি। ঘরে ঢুকতে দেখি আপু হাঁসফাঁস করছে। আমাকে দেখে দৌঁড়ে কাছে এলো। দু কাঁধে ঝাঁকিয়ে বলল,
‘ও এসেছে। বড় মা রেডি হতে বলে গেল। আমাকে নিয়ে নাকি ঘুরতে বের হবে। কিন্তু আমি যেতে চাই না। কি বলে বিদায় করবো বল তো। বুদ্ধি দে!’
‘বের হবেন না কেন? ঘুরে আসুন। ভালো লাগবে!’
‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। বের হবো না মানে হবো না! ওই গর্দভ ব্যারিস্টার আমাকে জানিয়ে এসেছে? আসেনি তো। তাহলে আমি যাবো কেন? যাবো না!’
আপু যুত করে বিছানায় বসে পড়লো। ভয় পেয়ে গেলাম আমি। এতো কষ্ট করে মানুষটা এসেছে। ঘুরতে গেলে কি হয়! তাছাড়া এখন একটু দুজনের সময় কাটানো উচিত। তা না হলে একে অপরকে চিনবে কি করে। বুঝবে কি করে! আমি কাছে গিয়ে বললাম,
‘আপু বলছিলাম যে ঘুরে আসুন। ভাইয়ার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বলতে গেলে অর্ধেক বিয়ে হয়ে গেছে। এখন দুজন দুজনকে সময় দেওয়া উচিত নয়?’
আপু খানিক সময় ভাবলো। তারপর বলল,
‘দেখ তো গর্দভ টা কী করছে?’
নিচ থেকে শোরগোল ভেসে আসছে। আমি সিঁড়ির কাছে এসে উঁকি দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে দেহে শীতল এক রক্তস্রোত বয়ে গেলো। ফাইজান ভাই! আকাশ ভাইয়ার বিপরীত পাশের সোফায় বসে আছে। দূর থেকে দেখেই বুঝলাম আগের থেকে বেশ শুকিয়ে গেছে। চোখ মুখ কেমন যেন লাগছে। আমি দৌঁড়ে রুমে এলাম। হড়বড় করে বললাম,
‘আপু, ফাইজান ভাই এসেছে!’
আপু ভয়ানক চমকে উঠলো। বিস্ফারিত নেত্রে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিল। কি যেন ভাবলো! তারপর উঠে আলমারির দিকে এগোলো। পাল্লা সরিয়ে বলল,
‘এদিকে আয় তো জুঁই। দেখ কোন জামা পরবো।’
‘আপনি সত্যি যাবেন?’
‘এখন তো যেতে হবে। একজন নির্দিষ্ট মানুষকে বুঝাতে হবে তাকে ছাড়া আমি ভালো আছি। বেশ ভালো আছি!’
আপুর থমথমে সুর। মনে হচ্ছে এক্ষুণি কেঁদে ফেলবে। আমি এগিয়ে গেলাম। বেছে বেছে হালকা সবুজ রঙের জামাটা বের করে হাতে দিলাম। আপু সেটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
ফাইজান ভাইয়ের দৃষ্টি নত ছিল। আমরা নিচে নামতে নড়েচড়ে বসলো। আপু গিয়ে বড় মায়ের পাশে বসে পড়লো। মুখে তার নিষ্প্রাণ হাসি। আকাশ ভাইয়ার দিকে চোখ তুলে তাকালো না। ফাইজান ভাইয়ের দিকেও নয়! নিজের মতো ফোন বের করে নাড়াচাড়া শুরু করলো। বড় মা তাড়া দিয়ে বললেন,
‘যা ঘুরে আয় তাহলে। আর দেরি করিস না।’
ফাইজান ভাই হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
‘কোথায় যাবে?’
‘আকাশ বাবাজীর সাথে ঘুরতে। ইউনিভার্সিটি বন্ধ। সারাদিন ঘরে বসে থাকে। বাহির থেকে একটু ঘুরে আসুক। ভালো লাগবে।’
‘ওহ্!’
ফাইজান ভাই চুপ হয়ে গেল। আকাশ ভাইয়া আরো কিছুক্ষণ বসে উঠে পড়লো।
তার মুখে প্রাপ্তির হাসি। হাসি থামছেই না! কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বুঝতে পারলাম ভাইয়া অনেক বেশি মিশুক। অনেক কথা বলে। এমন মানুষের মন ভালো হয়। মনে ভরসা পেলাম। আপু ভালো থাকবে!
তারা দুজন বের হয়ে গেল। ফাইজান ভাইয়ের হঠাৎ আগমনের কারণ উদঘাটন করতে পারলাম না। আগে বাড়ি আসলে অনেক হইচই পড়ে যেতো। ছুটোছুটি লেগে যেতো। এবার সেটাও লক্ষ্য করছি না। আমার চোখে চোখ পড়লো একবার। কিছু বললো না! আমি গিয়ে তার জন্য খাবার তৈরি করা শুরু করলাম।
ফাইজান ভাই দেরি করেনি। খালা এসে জানালো সে চলে গেছে। তার এতো অল্প সময়ের আগমনের হেতু খুঁজে পেলাম না। খালাকে জিজ্ঞেস করতে বললো কিছু জামা কাপড় ফেলে গিয়েছিল। সেগুলো নেওয়ার জন্য এসেছিল। আমার বিশ্বাস হলো না!
__________
পরের দুই সপ্তাহ ভয়াবহ চাপের মধ্যে গেল। সপ্তাহ জুড়ে একের পর এক পরীক্ষা। আর বাড়িতে বিয়ের আয়োজন। নিত্যদিন লোক আসছে। খাচ্ছে, গল্পগুজব করে চলে যাচ্ছে। বাড়ির কাজ শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়। তখন আর পড়ার মতো শক্তি থাকে না। হাত পা ভেঙ্গে আসে। দুচোখ ঘুমে টেনে খুলতে পারি না। পড়া তো দূরের ব্যাপার।
তবুও কোনরকমে পরীক্ষা গুলোয় উপস্থিত রইলাম। কি লিখেছি না লিখেছি জানি না। আজ শেষ পরীক্ষা ছিল। ভালো হয়নি। তবুও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এতদিন পরীক্ষার চিন্তায় পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম।
আজ একটু দেরিতে ক্লাস থেকে বের হলাম। গেটের কাছে প্রচুর ভিড়। অনেক ছাত্রীর মা নিতে এসেছে। আমি ভিড় ঠেলে এগোতে কেউ নাম ধরে ডাক দিল। ভিড়ের মাঝে এদিক সেদিক তাকালাম।
‘এইযে এদিকে আমি।’
কন্ঠ ঠাওর করে বামপাশে তাকিয়ে দেখি ফাইজান ভাই। ঘর্মাক্ত শরীরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বিস্মিত হয়ে এগিয়ে গেলাম। আমাকে সাথে নিয়ে একটু দূরে সরে গেল। মনে মনে বিস্ময়ের প্রমাদ গুনছি। হাঁটতে হাঁটতে সে জিজ্ঞেস করলো,
‘আজ শেষ পরীক্ষা ছিল না তোর?’
‘হ্যাঁ।’
‘পরীক্ষা কেমন দিয়েছিস?’
কপালের ঘাম মুছলাম। ক্ষীণ সুরে বললাম,
‘মোটামুটি। আপনি এখানে কেন ভাই?’
‘তোকে নিতে এসেছি। আমার সাথে যাবি চল।’
‘কোথায়?’
‘মিরপুরে বাসা নিয়েছি তো। কিছুদিন আমাদের সাথে থেকে আসবি। তোর ভাবি খুলনা গিয়েছিল। গতকাল এসেছে।’
(চলবে)