#ভালোবাসারা_ভালো_নেই,পর্ব___২৯
#অজান্তা_অহি
আমারো কী এমন হবে? আপার মতো কপাল পুড়বে? ডুকরে কেঁদে উঠলাম। জীবনের হিসাব-নিকাশ বড্ড জটিল। এতোশত জটিলতা আমায় বয়সের তুলনায় অত্যধিক বাস্তবিক করে তুলেছে। আমি জানি এই থাপ্পড় খাওয়ার পরও সোহরাবের সাথে সংসার করতে হবে। তার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে হবে। দিন কাটাতে হবে। যুগ যুগ ধরে মা চাচীরা সেটাই করে আসছে। দুদিন গেলে সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে। তবুও আমার ক্ষুদ্র মনে প্রশ্ন জাগলো এই ব্যথা কী কোনোদিন ভুলতে পারবো? এই আঘাত কি চিরতরে মুছে যাবে? আমিও তো আশাকে ভালোবাসি। তার খেয়াল রাখি। প্রায়ই ভাগের মাছটা কাঁটা বেছে ওকে খাইয়ে দেই। তবুও সোহরাব এই কাজ কি করে করলো?
চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হলাম। ঘরে আর গেলাম না। গায়ের ওড়না দিয়ে মুখ মুছে ফেললাম। সোহরাবের খাওয়া হয়েছে কি না কে জানে। আমি তার জন্য ভাত টেবিলে সাজিয়ে ফেললাম।
সোহরাব ঘরে রয়েছে। এতক্ষণ আশার কান্নার আওয়াজ শোনা গেলেও এখন থেমে গেছে। আমি থমথমে মুখে এগিয়ে গেলাম। দরজা ধরে দাঁড়িয়ে বললাম,
‘ভাত বেড়ে দিয়েছি। এসে খেয়ে যান।’
সোহরাব কিঞ্চিৎ চমকে গেল। অপরাধী মুখে তাকালো। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। আশা বিছানায় বসে রয়েছে। হাতে পুতুল। আমি এগিয়ে যেতে সোহরাব তাকে রেখে রুম ত্যাগ করলো। আমি আর খাবারের ওখানে গেলাম না। আশার পাশে বসে পড়লাম। কাছে টেনে দেখি ঠোঁট আরো বেশি ফুলে গেছে। চোখ ছলছল করে উঠলো। আমি ব্যথাতুর কণ্ঠে শুধালাম,
‘খুব বেশি ব্যথা করছে আশা?’
আশা ডানে বায়ে মাথা নাড়লো। আমি মনে শান্তি পেলাম না। পিচ্চিটাকে ভীষণ ভালোবাসি। এতখানি ব্যথা পেয়েছে আমার নিজের গাফিলতির জন্য। ভীষণ কষ্ট হলো। যদি কোলে থেকে না নামাতাম তাহলেই হতো।
সোহরাব টেবিলে খেতে বসেছে। দরজা দিয়ে সামান্য উঁকি দিলাম। গোগ্রাসে খাচ্ছে। সারাদিন খায়নি হয়তো। অন্যের ফরমায়েশ খাটা সুখকর নয়। অনেক কিছু নিজের ইচ্ছানুযায়ী করা যায় না। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সোহরাবের থেকে দূরে দূরে রইলাম। এ বেলা সে আর বের হয়নি। ঘরে শুয়ে আছে। আমি আশাকে নিয়ে বসার ঘরে রইলাম। নাহার আপা এলো আসরের পর পর। আমি প্রচন্ড ভয়ে ভয়ে ছিলাম। তার ভাই আশার ঠোঁট কেটে যাওয়ার জন্য থাপ্পড় মারলো। সে আবার কি না কি করে! কিন্তু আপা কিছু বললো না। আশার কাঁটা ঠোঁটে মলম লাগিয়ে দিল। শুধু জিজ্ঞেস করলো,
‘কোথায় পড়ে গেছিল? বিছানা থেকে নাকি?’
ছাদে পড়ার কথা বললাম। আপা মাথা নাড়ল। আমি কিছুটা স্বস্তি নিয়ে রান্নাবান্না শুরু করলাম।
সারা সন্ধ্যে আড়ালে আড়ালে থাকলেও রাতের বেলা রুমে ঢুকতে হলো। ড্রয়িং রুম, রান্নাঘরের বাল্ব বন্ধ করে রুমে আসলাম। সোহরাব অনেক আগে খেয়ে শুয়ে পড়েছে। আমি আড়চোখে এক পলক তাকিয়ে দেখলাম তার চোখ বন্ধ। হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। ঘুমিয়ে গেলেই ভালো। তার সাথে কথা বলার রুচি নেই। মাত্র একমাসের পরিচয় থেকে একটা ছেলে আমাকে চ’ড় মেরে বসলো। অথচ আমি সোহরাবকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মনে করেছিলাম। একটু আলাদা মনে করেছিলাম।
দরজা বন্ধ করে বাতি নিভিয়ে দিলাম। বিছানার পায়ের কাছে জানালা। সেই জানালা দিয়ে কিছুক্ষণ বাহিরে তাকিয়ে রইলাম। রাজ ভাইয়ার কথা মনে পড়লো। কেমন আছে সে? সামান্তা আপু, ফাইজান ভাই তারা কেমন আছে? রাফি ভাই? সে হয়তো এতদিনে বিদেশ চলে গেছে। সেখানে নতুন জীবন শুরু করেছে। আমার ভালোবাসা তাকে ছুঁতে পারলো না। টুকরো মেঘের মতো তার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে সে অভিমানী ভালোবাসা ফের আমার দরজায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে সে ভালোবাসা বন্দি করে দরজায় খিল দিয়েছি।
দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসতে উঠে পড়লাম। সাবধানে সোহরাবকে ডিঙিয়ে ওপাশে শুয়ে পড়লাম। আচ্ছা আমার জায়গা অন্য কোনো মেয়ে থাকলে কী করতো? বরের পাশে ঘুমাতো নাকি অন্তত আজকের রাতটা অভিমান করে দূরে থাকতো? আমার দূরে থাকার উপায় নেই। মূলত আমার দূরে না কাছে! কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
সোহরাবের থেকে দূরত্ব রেখে শুয়েছিলাম। একেবারে দেয়াল সেটে। চোখের পাতা বন্ধ করার পরও দুচোখে ঘুম আসছিলো না। চারপাশ রাতের অন্ধকারের মতো ভারী হয়ে উঠতে গায়ে হাত পড়লো। সোহরাব এগিয়ে এসে কাছে টানলো আমায়। মুহূর্তে জিদ চেপে গেল। তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দেয়াল ঘেঁষে গেলাম। সোহরাব ছাড়লো না। জোরালো হাতে চেপে ধরলো। আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
‘দূরে যান।’
সোহরাব দূরে গেল না। বলল,
‘সরি! আগে থেকে মাথা গরম ছিল অনেক। বাসায় ফিরে দেখি পুরো ফ্ল্যাট খালি। কেউ নেই। যদি কিছু চুরি হয়ে যেতো? এরমধ্যে আবার আশার অবস্থা দেখে…..সরি!’
কিছুক্ষণ নিজের অনুভূতির সাথে যুদ্ধ করে গেলাম। অবশেষে পরাজয় স্বীকার করে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। এতক্ষণ আটকে রাখা সব কান্না বেরিয়ে এলো। সোহরাব বুকে টেনে নিল আমায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তবুও শান্তি পেলাম না। বুকের গহীনের দহনটা ক্রমশ বেড়ে চললো।
_________
নাহার আপার ঘর থেকে চাপা শব্দ ভেসে আসছে। ঝগড়ার শব্দ। দুজন দুজনকে গালিগালাজ করছে। দুলাইভাইয়ের কণ্ঠ বেশি রাগান্বিত মনে হচ্ছে। পাশের ঘর থেকে ভীষণ লজ্জায় পড়লাম। এ বাড়িতে থাকা আমার পছন্দ না। আপা তার নিজের মতো অনেক কিছু করতে পারে না। ক্ষণে ক্ষণে লজ্জায় পড়তে হয়। এমন ফ্ল্যাটে না থেকে যদি ভাঙাচোরা কোনো টিনের ঘরে থাকতাম তবুও ভালো লাগতো। শুধু আমি আর সোহরাব। তবুও ঢের ভালো ছিল। সোহরাবকে একবার বলবো বলে ভেবে রেখেছি। কিন্তু কী মনে করে ভেবে বলা হয় না। যদি রেগে যায়? বলে যে মাস ঘুরতে না ঘুরতেই তোমার আলাদা বাসা চাই? এতো লোভী মেয়ে কেন তুমি?
আচমকা ও ঘর থেকে ধাক্কাধাক্কির আওয়াজ এলো। সাথে জিনিসপত্র ভাঙ্গার শব্দ। আশা চিৎকার করে উঠতে আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। লজ্জার মাথা খেয়ে ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি দুলাভাই আপাকে মারছে। আপাও থেমে নেই। সে-ও প্রতিরোধের ভঙ্গিতে কিল, ঘুষি দিচ্ছে। ভয়ার্ত গলায় তাদের থামতে বললাম। কেউ থামাথামির মধ্যে গেল না। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর আপাকে ছাড়াতে সক্ষম হলাম। তাকে টেনে সরিয়ে নিয়ে আসলাম। দুলাভাই রাগে ফুঁসতে লাগলো। আপাকে আমার ঘরে টেনে নিয়ে আসলাম। কান্না করছে সে। আমি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কী হয়েছে আপা? হঠাৎ করে দুলাভাই এতো রেগে গেল কেন?’
আপা উত্তর দিল না। আমি আর ঘাটালাম না। স্বামী-স্ত্রীর কত ধরনের সমস্যা হয়।মান অভিমান হয়। সময় গেলে ঠিক হয়ে যাবে। দুলাভাই ও ঘর থেকে এখনো চেঁচাচ্ছে। আপা ফুঁসে উঠতে তাকে টেনে ধরে রাখলাম।
সোহরাবের বাবা নেই। মা আছে। তার মা যে বেঁচে আছে সেটা অনেক পরে জানতে পেরেছি। সোহরাবের স্কুল শিক্ষক ফুপির থেকে। কিছুদিন আগে ফুপি ঘুরতে এসেছিল। তিনি জানালেন সোহরাবের মা বেঁচে আছে। তার বাবার মৃত্যুর কয়েক বছর পর অন্য জায়গা বিয়ে করেছে। তারপর থেকে ছেলেমেয়ের সাথে যোগাযোগ নেই। বছর খানেক ধরে নাকি শুধু নাহার আপার সাথে টুকটাক কথা হয়। আশাকে দেখার অজুহাতে একটু আধটু সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
‘আপা কাঁদবেন না। ঠিক হয়ে যাবে সব।’
আমরা কত সহজে আরেকজনকে সান্তনা দেই। বলি ঠিক হয়ে যাবে সব। অথচ কিছুই ঠিক হয় না। হাজারো বেঠিক বুকে চেপে রেখে দিন কাটাতে হয়। আশা দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ ছলছল করছে। মায়ের কাছে আসতে ভয় পাচ্ছে। আমি আপাকে বললাম,
‘আপা আর কাঁদবেন না। আপনার কান্না দেখে আশা কিন্তু যখন তখন কেঁদে দিবে।’
অবশেষে আপা থামলো। চোখ মুছে দুলাভাইকে গালি দিল। তারপর বলল,
‘সোহরাব কই?’
‘তার যা কাজ সেই কাজে গেছে।’
‘বাসায় আসলে এ ব্যাপারে কিছু বলিও না। অশান্তি বাড়বে আরো।’
‘আচ্ছা।’
রাতের বেলা সোহরাব এলো। তার সাথে আমার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবুও কোথায় যেন সুর কেটে গেছে। কোথায় যেন সূক্ষ্ম কাঁটার মতো কিছু একটা আটকে আছে। এখন সে বাড়ি না থাকলে আগের মতন মনে পড়ে না। দেরি করে বাড়ি ফিরলে আগের মতো চিন্তা হয় না। আরো অনেক কিছু আগের মতো নেই। প্রতিনিয়ত সোহরাবের পরিবর্তন হচ্ছে। আমারো পরিবর্তন হচ্ছে। দুজনই খুব করে টের পাচ্ছি। কিন্তু কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই।
নিয়মমাফিক তার গোসলের জিনিসপত্র এগিয়ে দিলাম। কাপড়চোপড় হাতে ধরিয়ে দিলাম। খাবার বেড়ে দিলাম। আরো অনেক কিছু করলাম। এরমধ্যে মনে একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের আলাদা সংসারের কথা বলতে গিয়ে পিছিয়ে এলাম বারংবার।
ঘুমাতে গিয়ে শেষমেশ বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। সোহরাব আধো ঘুমে ছিল। ক্ষীণ আওয়াজ তুলে ডাকলাম তাকে।
‘শুনছেন?’
‘হুঁ। বলো।’
‘আমাদের আলাদা বাসা নিলে হয় না?’
সোহরাব এমন ভাবে চমকে উঠলো যে অন্ধকারেও টের পেলাম। সে কিছু বলার আগে ঝটপট বললাম,
‘একদম অল্প ভাড়ার বাসা। ছোটখাটো
টিনের ঘর। অপরিচ্ছন্ন হলেও হবে।’
‘হঠাৎ আলাদা বাসায় থাকার কথা উঠছে কেন? এখানে শহরের মধ্যে এতবড় ফ্ল্যাট। এতো সুযোগ সুবিধা।’
‘কিন্তু আমার কেমন যেন লাগে।’
সোহরাব আমার কথা শুনতে পেল না হয়তো। সে জোর দিয়ে বলল,
‘আমরা আলাদা বাসা নিলে আশাকে দেখবে কে? বড় আপার চাকরি আছে না? তাছাড়া বাসার দেখ-ভাল করা, রান্নাবান্না করা, সবদিকে খেয়াল রাখা। এসব তো তুমি করছো। আমরা চলে গেলে এতসব দিক সামলাবে কে? কোনো আলাদা বাসা হবে না। ঘুমিয়ে পড়ো।’
সোহরাবের কণ্ঠে বিরক্তির আভাস। সে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। তার বিপরীত পাশে আমি অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বড় বড় চোখ দিয়ে অন্ধকার গিলতে লাগলাম। তবুও যদি জীবনের অন্ধকার একটু কমে।
সোহরাব কতকিছু বলে দিল। কত হিসাব করে রেখেছে সে। নিখুঁত হিসাব। শুধু আমার জীবন নিয়ে সচেতন নয় সে। কোনো হিসাব নেই। কোনো চিন্তা নেই। একবার কলেজ যাওয়ার ব্যাপারে বলেছিলাম। সে এমন আশ্চর্য হয়ে তাকিয়েছে যেন এর চেয়ে অবাক কিছু জীবনে শোনেনি। ও বাড়ি থেকে রেজাল্ট দেখে এসেছে। তিনটা বিষয়ে ফেল এসেছে। সোহরাব উল্টো সেটার খোটা দিল।
বেশ বুঝতে পারছি আমার জীবনে আর কোনো পরিবর্তন আসবে না। রোজ যা করি তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। দিনরাত এই বাড়ির মধ্যে কেটে যাবে। কাটতে থাকুক! তবুও বেঁচে আছি আমার জন্য এই বুঝি ঢের।
__________
আজ নি’র্বাচনের দিন। সোহরাব দুদিন হলো বাসায় ফেরে না। ঢাকাতে থাকে। আজ এই উপলক্ষে নাহার আপাও ঢাকা গেছে। একেবারে ভোরবেলা। ভো’টের সময় নাকি মানুষ লাগে। আপার রা’জনীতিতে ঝোঁক অনেক। নিজে সরাসরি যুক্ত নেই। কিন্তু ভাইয়ের কাজকে সমর্থন করে। আমি ইতোমধ্যে টের পেয়েছি তাদের প্রচুর ক্ষমতার লো’ভ। কতদ্রুত বড় হবে, নামডাক করবে এই প্রবণতা। আমার চিন্তাভাবনার সম্পূর্ণ বিপরীত।
আশাকে আমার কাছে রেখে গেছে। ওকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখছি। নড়াচড়া তেমন করে না। তবুও বাচ্চা মানুষ। কখন কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে! সর্বদা তটস্থ থাকি।
সারাটা দিন চিন্তায় চিন্তায় কেটে গেল। ভো’টের ফলাফল কী জানি না। কাছে ফোন না থাকায় কল করে জেনে নেওয়ার উপায় নেই। অবশেষে বেলা গড়ানোর সময় নাহার আপা ফিরলো। বিদ্ধস্ত চেহারা নিয়ে। আমি আর প্রশ্ন করলাম না। আপা গোসল করে খেতে বসলো। খাওয়ার ফাঁকে বলল,
‘আজাদ ভাই জিতেনি। তার প্রতি’দ্বন্দ্বী প্রার্থী জিতেছে।’
আমার সোহরাবের কথা মনে পড়লো। মানুষটা নিশ্চয়ই বড় ধরনের আঘাত পেয়েছে। এই নি’র্বাচন নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল তার। আমি চিন্তিত হয়ে বললাম,
‘আশার মামা কোথায়?’
‘ওকে ফেরার সময় দেখিনি। আছে কোথাও। পরে আসবে হয়তো।’
‘আজাদ আঙ্কেলের শরীর কেমন এখন?’
‘আগের মতই। ভোটের জন্য এতদিন দেশে রেখেছিল। এখন ফলাফল বের হয়ে গেছে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাবে হয়তো।’
আমি নিশ্চুপ রইলাম। আপা সন্দেহ নিয়ে বলল,
‘কেন্দ্রে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। তা না হলে এমন হওয়ার কথা না। সবাই জানতো আজাদ ভাই জিতবে। কিন্তু ঘটনা ঘটলো বিপরীত।’
আমি সরে এলাম। এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমার। আমার চিন্তা অন্য জায়গায়। সোহরাব ঠিক আছে তো?
সোহরাব ফিরলো গভীর রাতে। রাত বিরেতে আসা যাওয়া করে বলে নিচের গেটের একটা অতিরিক্ত চাবি বানিয়ে নিয়েছে। ফ্ল্যাটের দরজা আমি খুলে দিলাম। সে ভেতরে ঢুকে সোজা বাথরুমে গেল। আমি কাপড়-চোপড় রেডি রেখে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করলাম। নিঃশব্দে সেগুলো গরম করলাম। সোহরাব গোসল শেষ করে টেবিলে খেতে বসলো।
সোহরাব ধীর গতিতে খাচ্ছে। মুখে খাবার নিয়ে দীর্ঘক্ষণ চিবুচ্ছে। নিশ্চয়ই প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে। তার দুঃখে মন খারাপ হয়ে গেল আমার। প্লেটে একটা মাছ তুলে দিলাম। সে অবশেষে মুখ খুললো। খেতে খেতে বলল,
‘তুমি খেয়েছ জুঁই?’
সোহরাবের এতটুকু প্রশ্নে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। মানুষটার দুঃখ আমায় আরো গভীর ভাবে স্পর্শ করলো। খুব কষ্ট হলো তার জন্য। উচিত অনুচিতের বাছ-বিচার আসলো না। মন বলল, আজাদ আঙ্কেল ভো’টে জিতে গেলে কী খুব ক্ষতি হতো? ইশ! জিতলেই পারতো। আমি নিচু গলায় বললাম,
‘হ্যাঁ খেয়েছি। আপনি খাওয়া শেষ করেন। তরকারি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’
বলে পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।
(চলবে)