ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (১০)
রোকসানা_রাহমান
শরীরের পাতলা সাদা টি-শার্টটা তুলে নিয়ে দু-হাতের দশ আঙুলের আচর বসিয়ে দিচ্ছে রাতের বুকে। প্রচন্ড জ্বলনিতে রাতের ঘুম ভেঙে যায়। রুমের সবুজ আলোতে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে আহতকন্ঠে বললো,,
“” সন্ধ্যা কি করছিস,লাগছে আমার!””
রাতের কথা কানে না নিয়েই আচরের গতি প্রখর করে বললো,
“” তুই ঐ মেয়েকে চুমু খেলি কেন??””
অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে সন্ধ্যার হাত দুটো আটকে নিয়ে আছে রাত! জবাবদিহিতাই বললো,,
“” আমি আবার কখন,কাকে চুমু খেলাম?? তুই আমাকে তুই তুই করে বলছিস??””
সন্ধ্যা নিজের হাত ছুটানোর চেষ্টায় কটাক্ষভাবে বললো,,
“” ১০০ বার বলবো হাজারবার বলবো,তোর কি? নাম ধরেও বলবো!””
“” এসব কি বলছিস? আমি তোর থেকে ছ’বছরের….আহ!””
রাতকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ওর বুকের বা’পাশটাতে নিজের চকচকে,ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলো বসিয়ে দিলো সন্ধ্যা!
রাত ব্যথার যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত চেপে আছে। এমন ঝিনঝিনে ব্যথার সাথে আগেও পরিচিত হয়েছে,কিন্তু আজকেরটা খুব বেশি লাগছে, সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে রাত। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলোনা। সন্ধ্যার দু বাহু শক্ত করে চেপে ধরে ছাড়িয়ে সোজা করে বসালো,নিজেও বসে আছে। এখন সন্ধ্যা রাতের পেট ছেড়ে কোলে বসে আছে,চোখে কটরমটর রাগ,মনে হচ্ছে এখনি রাতকে খেয়ে নিবে!
রাতের চোখে পানি জমে গেছে,তবে তা বাধ ভেঙে বের হতে পারছেনা। মেয়ে হলে এতক্ষণে ঠিক দুনিয়া ভুলে কান্নায় ভেঙে পড়তো! রাত ব্যথাতুর কন্ঠে বললো,,
“” এটা কি ছিলো,সন্ধ্যা? পিকনিক থেকে কি তুই রাক্ষস হয়ে ফিরেছিস?””
রাতের প্রশ্নের উত্তরে সন্ধ্যা পরপর দুটো নিশ্বাস ছাড়লো,রাগ মিশ্রিত নিশ্বাস!
“” চুপ করে আছিস কেন? কি হয়েছে? আমার বুকটা তো জ্বলে যাচ্ছে।””
“” যাক,শুধু বুক কেন,তোর সবকিছু জ্বলে যাক।””
“” এটা কেমন ব্যবহার? তুই তুই করে কথা বলছিস কেন?””
সন্ধ্যা রাতের কোল থেকে উঠে পড়লো। ওর দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,,
“” আমার যা খুশি তাই করবো,বলবো। দরকার হলে তুই,তুমি,আপনি বাদে যদি আরো কিছু থাকে সেটাও বলবো।””
সন্ধ্যার কর্মে অবাক হবে,নাকি বচনে সেটাও বুঝে উঠতে পারছেনা রাত। তবে সে চমকিত,এমন কি আশ্চর্যজনিত্ব! এটা কি আসলেই তার স্বপ্নে দেখা সেই বধুটি??
“” তুমি চুমু খেলে কেন? কেন খেলে? তাও ঠোঁট কামড়ানো!””
রাতের চোখ বড় হয়ে আসছে,সেটা ও বুঝতে পারুক আর নাই পারুক,তবে এইটুকু বুঝতে পারছে,এবার পলক না পড়লে তার মনিদুটো ব্যঙের মতো লাফ দিয়ে বেড়িয়ে পড়বে।
“” কাকে চুমু খেলাম? এসব কি বলছিস?””
“” কাকে আবার দিয়াকে। তুমি দিয়াকে চুমু খেয়েছো,কেন খেয়েছো? ঐ ঢংগিটাকে কেন খেলে? বলো কেন খেলে?””
সন্ধ্যার প্রশ্নবোধক কথা ছুড়ে দেওয়ার সাথে সাথে রাতের দিকে ঝুকে এসেছে,রাত কিছুটা পিছনে ঝুকে পড়লো। বাম হাতটা দিয়ে বিছানাতে ভর রেখে বাকা হয়ে আছে। সন্ধ্যা ঝাড়ি দেওয়ার তোড়ে চোখগুলোও বড়বড় করে রেখেছে,ঠোঁটদুটো কিছুটা বুঝানো,ভ্র দুটোসহ কপালটা উপরে উঠে গেছে।
“” দিয়াটা কে? আমি কি ওকে চিনি? কোথায় দেখা হয়েছে? কখন চুমু খেয়েছি,দিনে নাকি রাতে?””
“” আমার স্বপ্নে!””
রাতের এবার হাঁসি পেলো। ভয়ংকর হাঁসি, যে হাঁসিতে ঘরকে মুখরিত করে তুলতে পারে,সাথে সন্ধ্যাকে আরেকটু রাগিয়ে দিতে পারে,যেটাকে বলে,গরম তেলে ঘি ঢেলে দেওয়া। কিন্তু রাত সেগুলোর কিছু করলোনা। সন্ধ্যার ভাসা ভাসা চোখের মোহনায় হারিয়ে যেতে যেতে বললো,,
“” দিয়াকে খেলাম বলে,আমার বুকটা ছিড়ে ফেললি,তোকে খেলে কি করতি,বলতো? একটা খাবো কি?””
রাতের কথাতে সন্ধ্যা নড়েচড়ে উঠলো,সোজা হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,,
“” আমাকে কেন খাবে? তুমি গিয়ে দিয়াকেই খাও।””
রাত ও ঠিক হয়ে বসলো,সন্ধ্যাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিলো। কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
“” হ্যা বললি নাকি না?””
সন্ধ্যা টুক করে উঠে দাড়ালো। রাতের দিকে না ফিরেই বললো,,
“” তোমার জন্য দিয়াই ঠিক আছে,রাত ভাইয়া। আমাকে চুমু খাওয়ার মানুষের অভাব নাই। আজ হ্যা বললে কালই চুমু পাবো। শুধু ঠোঁটে কেন,আরো অনেক জায়গাতেই। আমাকে তো আজকেও রাশেদ একটা লাভ লেটার দিয়েছে,ইশ! কি সব দুষ্টু দুষ্টু কথা।””
সন্ধ্যা লজ্জা লজ্জা মুখ করে রাতের রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। পেছন থেকে কারো হৃদদহনের গন্ধটা কি ওর নাকে বাড়ি খায়নি??
~~
দুপুরের ফ্রেশ সাওয়ার নিয়ে ড্রেসিং টেবিলটার সামনে দাড়িয়ে আছে রাত। শার্টের বোতামটা লাগাতে গিয়েও থমকে গেলো। লোমহীন ফর্সাবুকের বা’দিকটাতে লাল ছোপগুলো স্পষ্ট। ওখানটাই হাত বুলাতেই ঝিনঝিন ব্যথাটা নড়ে উঠেছে। অনুরাগটা তুই করতে দিচ্ছিস না,আর রাগটা আমি করতে চাচ্ছিনা। এ কেমন অনুভূতিতে ডুবিয়ে রেখেছিস বলতো। আমি কি করতে চাচ্ছি তা তো আমি বুঝছিই না আর তুই করতে চাচ্ছিস সেটাও মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। যখনি মনে হচ্ছে তুই আমার মনের গহীনে ঢুকতে চাচ্ছিস ঠিক তখনি তুই আমাকে ঠেলে দুরে সরিয়ে দিচ্ছিস। কেন এমন করছিস,স্বপ্নবধু? হয় তুই আমাকে বুঝে নে,নাহয় আমায় তোকে বুঝতে দে! এভাবে আর কত?
~~
সন্ধ্যার রুমে প্রবেশ করতেই ওকে মেঝেতে উপুত হয়ে শুয়ে থাকতে দেখলো রাত। খাটের নিচে কিছু একটা খুজছে হয়তো। হাতে ঝাড়ুও আছে,ও কি এখন ঝাড়ুওলি সেজেছে নাকি?? এ বাসায় ঝাড়ু দেওয়ার লোকের কি অভাব পড়েছে??
“” তুই রুম ঝাড়ু দিচ্ছিস যে,রিনা কোথায়? ও আজ কাজে আসেনি?””
সন্ধ্যা খাটের নিচে এতটাই মনোযোগি ছিলো যে রাতের আচমকা কন্ঠে ও নড়ে উঠেছে। যার ফলে মাথাটা গিয়ে খাটের তলায় বাড়ি খেলো।
রাত দৌড়ে ওর কাছে এসে বললো,,
“” লাগলো নাকি?””
সন্ধ্যা কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। রাত ওর কপালে হাত দিতে গেলেই সন্ধ্যা চট করে উঠে দাড়ালো।
“” তুমি আমার কাজে বাধা দিলে কেন? আমি কত মনোযেগি ছিলাম।””
“”এতো মনোযোগ দিয়ে কি করছিলি?””
সন্ধ্যা মলিন মুখ করে বললো,,
“” মালা খুজছিলাম,আমার ঝিনুকমালা,ওটা আমার কত পছন্দের ছিলো। তোমাকে দেখিয়েছিলাম তো।””
মালার কথা উঠতেই রাতের ডানহাতটা নিজের পকেটে গিয়ে চাপ পড়লো। সেদিন ঐ হোটেলের ছোট্ট রুমটা তছনছ হওয়ার ফলে তাকে জরিমানা করতে হয়েছিলো। কিন্তু এতোকিছুর মাঝেও মালাটা সে পকেটে ঢুকিয়েছিলো। সঙ্গে করে নিয়েও এসেছে,কেন এনেছিলো জানেনা,কিন্তু ওটা ছুলেই কেমনজানি এক শিহরণ বয়ে যায় পুরো শরীরে!
রাত কিছুটা সন্দিহান চোখে তাকালো সন্ধ্যার দিকে।
“” ওহ! ঐ মালাটা? ওটাতো আমি হোটেলেই ছেড়ে এসেছি,তুই তো চিঠির উপর রেখে এলি। আমি ভাবলাম হয়তো ওটা তোর পছন্দ না তাই সাথে করে নিসনি! কে জানি দিয়েছিলো?””
রাতের প্রশ্নে সন্ধ্যা ইতস্ততবোধ করছে। সেদিন কার নামটা নিয়েছিলো কিছুতেই মনে পড়ছেনা।
“” কি হলো,ভুলে গেলি নাকি?””
সন্ধ্যা মুখ বাকিয়ে বললো,,
“” ভুলবো কেন? আমার স্পেশাল কেউ দিয়েছিলো। স্পেশালটা তোমাকে এখন বলা যাবেনা। ঐদিন তো আবেগে বলে ফেলেছিলাম।””
রাত কপাল উচিয়ে ওর দিকে তাকাতেই ও কেটে পড়ার ধান্দায় বললো,,
“” বেলা অনেক হয়েছে,শরীরে ময়লাও লেগেছে। যাই গোসল করে আসি। উফ! চুলকুনি শুরু হয়ে গেছে।””
সন্ধ্যা পা বাকালো,উচুও করলো কিন্তু মাটিতে পড়ার আগেই রাতের প্রতিত্তোর,,,
“” আসলেই কি তাই? নাকি তোর নিত্যদিনের নতুন নামগুলোর মতো তারাও নতুন,আসলেই কি তোর সাথে তাদের আলাপচারিতা হয়েছে?””
সন্ধ্যা থমথমভাবে এক পা উচু করেই দাড়িয়ে রইলো। মুখ দিয়ে কোনো কথা আসছেনা,মাথায়ও কোনো ভাবনা আসছেনা। কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। ওর শব্দ করে লাগানো দরজাটার দিয়ে চেয়ে আছে রাত। আর সাথে সাথেই দরজা খুলে গেলো। মাথাটা কিছুটা বের করে বললো,,
“” আমি জানতাম,তোমরা আমার খুশি দেখতে পারোনা। তোমাদের কি মনে হয়,আমি কিছু বুঝিনা? অমন বন্দী পাখিকে আকাশে উড়তে দিবে আর সাথে পাকবাহিনি লাগাবেনা? আমি সব জানি,আমি এখন আর ছোটটি নই বুঝলে? সেজন্যই তো বুদ্ধী করে আসল নামটা লুকালাম। নাহলে তুমি তো আব্বুকে সব বলে দিতে!””
সন্ধ্যার কথাতে রাত গুপ্ত আশংকার ছোয়া পেলেও তা ভুলে গেলো। বেশ উৎসাহী হয়ে বললো,,
“” তুই বড় হয়ে গিয়েছিস,সন্ধ্যা?””
সন্ধ্যা ফ্যালফ্যাল নয়নে রাতের দিকে তাকালো। ঠোঁটের ভেতরে জিহ্বাটা দাঁতে কামড়েও নিয়েছে।
“” জানিনা!””
সন্ধ্যা এবার আগের তুলনায় অধিক শব্দে দরজা লাগালো।
~~
এইচএসএসি শুরু হয়ে গিয়েছে সন্ধ্যার। কলেজ থেকে সকলের যাত্রাসুবিধার জন্য নিজস্ব গাড়ী দেওয়া হলেও সন্ধ্যাকে সেখান থেকে আলাদা করে নিয়েছে রাত। নিজ দায়িত্বে টাইম টু টাইম নিয়ে আসা-যাওয়ার দায়িত্বটাও সেই বহন করবে। তবে সন্ধ্যা দ্বিমত পোষণ করলেও বাবার জোরাজুরিকে অমান্য করতে পারলোনা। আসলেই কি তাই? নাকি সবটায় সন্ধ্যার অভিনয় ছিলো,ভেতরটা কি চায়ছিলো না রাতের সান্নিধ্যটাকে খুব করে উপভোগ করতে???
প্রথম পরীক্ষাটা শেষ করেই রাতের পাশে বসে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে সন্ধ্যা। আকাশের অবস্থা ভালোনা,তারমধ্যে এতো বেশি ভিড়ে গাড়ীটাকে নিয়ে বড়রোডটাতে উঠতেই হিমশিম খাচ্ছে রাত। সন্ধ্যাও তিরিক্ষে মেজাজ নিয়ে বললো,,
“” তুমি তো এখনো গাড়ী চালাতেই শিখলেনা। ২ মিনিটের রাস্তা পার করতে দুঘন্টা লাগিয়ে দিচ্ছো। আর সাজ্জাদ ভাইয়া প্লেন চালানো শিখে গিয়েছে। আমাকে নিয়ে উড়বে বলেছে।””
রাত হর্নটা চেপে ধরে বললো,,
“” স্কুলে বসে প্লেন চালানো?””
সন্ধ্যা হাতদিয়ে কানদুটো চেপে ধরে চিৎকার করে বললো,,
“” উনি,স্কুলে পড়বেন কেন? উনি তো প্লেন চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। শেষ হলেই আমার সাথে দেখা করতে আসবেন। “”
রাত বড় রোডটাতে উঠে গিয়ে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে রইলো। সন্ধ্যা আবার চিৎকার করে বললো,,
“” আমাকে মেরে ফেলার ফন্দি এঁটেছো তাইনা? সামনে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? আমার বুঝি আর প্লেনে চড়া হলোনা।””
রাত গাড়ীর স্পিড বাড়িয়ে দিলো। তাকাবেনা সে এই মেয়েটার দিকে। মুখে কথা ফুটলেই পরপুরুষের নাম ঝরে পড়ে। আল্লাহ কি এই পৃথিবীর সব ছেলেগুলোকে ওর পেটেই ভরে রেখেছে??
আকাশ তার নীলশাড়ী ছেড়ে ধুসর রঙে সেজে উঠেছে,গয়না হিসেবে রুপোর আলোর ঝলকানিকে ব্যবহার করছে,একটু পরেই হয়তো ভয়ংকর হাঁসি দিয়ে ঝড় তুলে দিবে আর নাহয় মুক্তো হাঁসি দিয়ে বৃষ্টি। বিকেলের কড়কড়া রোদটা মিশে গিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসার উপক্রম। চারপাশটায় কালোয়কালোয় সন্ধ্যা,সাথে বাতাসের তীব্র বাড়ি। এমন অবস্থায় গাড়ী চালিয়ে যাওয়াকে বেশ বিপদ্দজনক মনে করলো রাত। সে চায়না ছোট্ট একটা ভুল কর্মের জন্য সন্ধ্যাহীন তার জীবন অথবা রাতহীন সন্ধ্যার জীবন বয়ে চলুক। প্রত্যেকটা দিন যেমন সন্ধ্যা রাতের মাঝে হারিয়ে শেষ হয়,ভোরের তৃপ্ততায়! তেমনি তাদের জীবনটাও হবে সন্ধ্যা আর রাতের একত্রময়!
রাত রাস্তার পাশেই খোলা জায়গাতে গাড়ীটা সাইড করে রেখেছে। ততক্ষণে ঝড়ের সাথে বৃষ্টির টুকরো গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। নিজের পাশের কাঁচটা লাগিয়ে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকালো। এতো ঘুম! এইজন্যইতো বলি,সবকিছু এতো নিশ্চুপ কেন? সন্ধ্যার মাথাটা খোলা কাঁচের জানালায় হেলানো। হাতের উপর ভর দেওয়া। বৃষ্টিতে মুখটা ভিজে গিয়ে চুলগুলোও আংশিক ভিজে গিয়েছে। রাত ওর কাছে এসে মাথাটা আলতো করে সিটে রাখলো। জানালার কাঁচটা উঠিয়ে দিয়েছে।
সন্ধ্যার মুখের বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির পানি গড়িয়ে গলায় গিয়ে পড়ছে। রাত মুগ্ধনয়নে চেয়ে আছে,মনের ভেতরের সাথে সাথে শরীরের ভেতরের শিরাউপশিরাগুলো জেগে উঠছে,রক্তরা কি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ওর পানে চেয়ে আছে কিছু পাওয়ার আশায়??
আজ অনেকদিনবাদে সন্ধ্যার ঠোঁটের কোণের তিলটাতে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে রাত। সন্ধ্যা আর ওর দুরত্বটা খুব একটা বেশি নাহলেও আগের মতো ওদের মধ্যে সেরকম খুনশুটি হয়না। তেমনভাবে কি দেখা সাক্ষাতটাও হয়??
রাত না চাইলেও তার অতৃপ্ত মনটা চাচ্ছে কিছু একটা হোক! সন্ধ্যার গালটা ছুয়ে নিজের হাত দিয়ে,চোখটা বন্ধ করে ভারী নিশ্বাসে রাত বিড়বিড় করছে, তোর অজান্তে আমি তোকে কখনোও খারাপ নজরে তো দুর নিজের ভালোবাসার অধিকারেও তোকে ছুইনি। সুযোগ ছিলোনা বললে ভুল হবে,ছিলো অসংখ্যবার! তবুও নিজেকে সবসময় দমিয়ে রেখেছি,মনটাকে সবসময় বুঝিয়ে এসেছি,যখন তোকে একদম সম্পুর্নভাবে নিজের করে পাবো,সেদিনই ভালোবাসার স্পর্শে তোকে রাঙাবো। কিন্তু আজ! আজ আমি নিজের অবুঝ মনটাকে কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারছিনা। তোর ঘুমের সুযোগ নিয়ে তোকে একটু ছুয়ে দিলে কি তুই আমার উপর রাগ করবি? খুব গভীর করে ছুবোনা,প্রমিস!
রাত চোখ বন্ধ করেই সেই ছোট্টকালে হারিয়ে যাচ্ছে। তখন সে সবে কিশোর বয়সে পা দিয়েছিলো। বন্ধুদের কাছে নানা নিষিদ্ধ কথা শুনে শুনে শরীরটা যখন মচমচে হয়ে উঠেছিলো,তখন সন্ধ্যা সাত বছরের দুষ্টুমিষ্টি একটা বাচ্চা। যে কথায় কথায় রাতকে চুমু খায়। তেমনি এক সময় রাতের কোলে বসে অংক করছিলো,আর একটু পরপর রাতকে চুমু খাচ্ছিলো। এতে সন্ধ্যা হেঁসে কুটুকুটি হলেও রাতের ভেতরে চলছিলো নিষিদ্ধ কিছু করার প্রবল ইচ্ছে।
বাচ্চা সন্ধ্যাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর দুগাল শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,
“” যদি কখনো জানতে পারিস,তোর অজান্তে আমি তোকে ভুল করে ছুয়ে ফেলেছি তখন তুই কি করবি? আমাকে ক্ষমা করবি? নাকি আমার থেকে আড়ালে চলে যাবি?””
সন্ধ্যা রাতের দিকে জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো। তারপর বললো,,
“” ভুল ছোয়াটা কি,রাত ভাইয়া?””
“” ভুল কাজ।””
সন্ধ্যার জ্ঞানীভাবটা কেটে গিয়ে গাম্ভীর্যের রুপ নিলো। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে রাতের গলা জড়িয়ে ধরলো। খই ফোটার মতো ঝরঝর কন্ঠে বললো,,
“” আমার রাত ভাইয়া ভুল কাজ করতেই পারেনা। আমি করতে দিবোনা!””
রাত ভাবনায় হারিয়ে যেতে যেতে সন্ধ্যার মুখের কাছে অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। সন্ধ্যার ঠোঁট ছুইছুই হতেই বজ্রপাতের শব্দ। সন্ধ্যা লাফ দিয়ে উঠলো,আর সাথে সাথে রাতের মাথার সাথে টাক খেলো।
দুজনেই দুজনের কপালে হাত দিয়ে মালিশ করছে। রাত সন্ধ্যার পানে চেয়ে বেশ বড়সড় হাঁসিতে ফেটে পড়লো। সন্ধ্যা কপাল কুঁচকে বললো,,
“” আমি ব্যথা পেলেই তোমার হাঁসতে হয়?””
সন্ধ্যার কথার উত্তরে রাত দার্ঘহাঁসি হেঁসে মনে মনে বললো,তুই সত্যিই আমাকে ভুল কাজ থেকে বাচিয়ে নিলি!””
~~
সন্ধ্যার আঠারো বছর পুর্ন হলো আজ। সে উপলক্ষে বাড়িতে বিরাট আয়োজন। সন্ধ্যার বাবা সিকান্দার সাহেব যখন তখন যার তার উপর হাঁকিয়ে উঠছেন। আতিথ্যেয়তায় কমতি রাখতে চাননা কোনো কিছুতেই। অনেক বছর বাদে এ বাড়িতে এতো বড় আয়োজন হচ্ছে।
“” আজকের দিনেও এমন শুকনো রঙের কাপড় পড়ে আছিস তিল? তুই এমন কেন বলতো? অন্যের ঝাড়ি না খেলে তোর পেটের ভাত হজম হয়না?””
সন্ধ্যার মা রিমার কথায় মুচকি হেঁসে উঠলো তিয়ামতী।
তিয়ামতীকে ড্রেসিং টেবিলটার সামনে দাড় করিয়ে ওর পাশে এসে নিজেও দাড়িয়েছে।
“” দেখতো,তোকে আর আমাকে দেখলে কেউ বলবে,তুই আর আমি একসময় এক ক্লাসে পড়তাম?””
তিয়ামতী না বুঝার ভান করতেই রিমা আবার বললো,,
“” দেখ,আমার পেটটা ফুলে মিস্টিকুমড়া হয়ে গিয়েছে,আর গালের চামড়াটাও কেমন নিচে ঝুলে পড়েছে। হাতটা দেখ,কেমন চামড়ায় ভাজ পড়ে গিয়েছে,আর তোর? তোকে এখনো পুর্ণ যুবতী মেয়ে লাগে।””
রিমার কথাতে তাচ্ছিল্য,ভালোবাসা,অভিযোগ নাকি আফসোস ফুটে উঠেছে, বুঝতে পারলোনা তিয়ামতী। আগের মতোই চুপ করে রইলো।
“” মুটিয়ে যাওয়াটাকে আমরা বিয়ের দোষ বা বাচ্চার দোষ দিলেও কিন্তু এর পেছনে আরেকটা দোষ সুপ্ত থাকে। সেটা কি বলতো?””
“” কি?””
“” স্বামীর ভালোবাসা!””
রিমার উত্তরে তিয়ামতীর মুখটা মলিন হয়ে এলো। মাটিতে চোখের দৃষ্টি স্থির করতেই রিমা আবার বললো,,
“” সব সুন্দর মুহুর্তগুলো এভাবে কেন দুরে ঠেলে দিলি? আমাদের সবার কথার বিপক্ষে না গেলেই কি হতোনা?? একা একটা মেয়ে স্বামীর ছোয়া ছাড়া কিভাবে থাকতে পারে?? দাঁত কিড়মিড়িয়ে দিনগুলো নাহয় কাটিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু রাতটা? আচ্ছা শরীরের চাহিদাটা ছেড়ে দিলাম,কিন্তু সারাদিনের ব্যস্ত সময় শেষে কি একবারের জন্যও ইচ্ছে হয়না,একা নিরালায় নির্জনে একটা মানুষের পাশে,নিশ্বাসের ছোয়ায়,দু/একটা সুখদুঃখেরর গল্প করতে? ইচ্ছে হয়না,সবার চোখের আড়ালে চোখের পানিতে কারো বুক ভিজিয়ে নিতে?””
তিয়ামতী রিমার কাছ থেকে সরে এসে বললো,,
“” করে,তবে সেটা শুধু রিদ ভাইয়ার জন্য। আমি কখনোই চাইনি অন্য কারো ছোয়াতে,আমার রিদ ভাইয়ার ছোয়াটা ঢাকা পড়ুক!””
“” কিন্তু তিল…””
“” তুই কি এগুলো বলতে এখানে এসেছিস?””
তিয়ামতীর কথার উত্তরে রিমা কিছু বললোনা। একটা ঝলমলে হাফ সিল্কের লালশাড়ী এগিয়ে দিয়ে বললো,,
“” আজ এটা পড়ে তুই আমার মেয়েকে দোয়া করবি।””
“” এমন গাঢ় রঙ পড়বো? চল্লিশের কৌঠাতে?””
রিমা মুখে কিছু না বলে তিয়ামতীর শরীরের কাপড়ে হাত দিতেই তিয়ামতী চিৎকার করে উঠলো,,
“”আচ্ছা পড়বো!””
~~
জন্মদিনের অনুষ্ঠানের অন্যান্য কাজের সাথে রান্নার কাজটাও পড়েছে রাতের। যদিও সে নিজেই এক হাতে সবটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে,তবুও শরীরটা ঘেমে নেয়ে বাজে অবস্থা। বাবুর্চির পাশে থাকতে থাকতে অতিরিক্ত গরমে মাথাটা ধরে এসেছে। কিছু সময়ের জন্য ঠান্ডা বাতাসে না গেলে মাথা ঘুরে পড়েও যেতে পারে। রাত সকলের চোখের আড়ালে নিজের রুমে আসলো। ফ্যানটা ফুল স্পিডে ছেড়ে দিয়েছে। বিছানাতে বসে গায়ের হলুদ টি-শার্টের গলাটা টেনে ধরে হাওয়া ঢুকাচ্ছে। ঠিক তখনি সন্ধ্যার আগমন। ওর কোলের উপর একটা শাড়ি রেখে বললো,,
“” রাত ভাইয়া,শাড়ীটা পড়িয়ে দাওতো!””
রাত টি-শার্টের গলাটা ওভাবে ধরে রাখা অবস্থাতেই আছে,শুধু চোখটা বড় হয়ে মুখটা হা হয়ে গেলো।
চলবে