ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (১১)

0
3067

ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (১১)

রোকসানা_রাহমান

ওর কোলের উপর একটা শাড়ি রেখে বললো,,

“” রাত ভাইয়া,শাড়ীটা পড়িয়ে দাওতো!””

রাত টি-শার্টের গলাটা ওভাবে ধরে রাখা অবস্থাতেই আছে,শুধু চোখটা বড় হয়ে মুখটা হা হয়ে গেলো।

**ওহে নারী,ওহে শাড়ী
দাপিয়ে দাবানলের আগুন,,
যেখানে-সেখানে,যখন-তখন
যে কাউকে করতে পারো খুন!**

সন্ধ্যা রাতের ঠিক কাছটাতে দাড়িয়ে বললো,,

“” অমন গাছছাড়া বানরের মতো হা করে ঝুলছো কেন? কি বিড়বিড় করছো বলোতো?? মানুষ তো ঠোঁট নাড়িয়ে বিড়বিড় করে,কিন্তু তুমি কি নাড়িয়ে বিড়বিড় করছো??””

রাত নিজের ঠোঁটদুটো বন্ধ করে নিলো। নিজের কোলের শাড়ীটা নিয়ে দ্রুতগামীতে সন্ধ্যাকে ঢেকে দিয়ে বললো,,

“” এভাবে ব্লাউজ ছায়া পড়ে দাড়িয়ে আছিস কেন?””
“” তাহলে কি বসে পড়বো?””
“” আবার বসবি কেন?””
“” তাহলে কি করবো? শুয়ে পড়বো?””
“” না,কিছু করবিনা। আমার রুম থেকে যা।””
“” কেন?””

রাত সন্ধ্যার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে বললো,,

“” জানিনা!””

সন্ধ্যা রাতের সামনের দিকে এসে ওর হাতে শাড়ী ধরিয়ে বললো,,

“” শাড়ী না পরে চলে যাবো? তুমি জানো বাহিরে কত ছেলেপুলে? ওদের সামনে আমি ব্লাউজ-ছায়া পড়ে থাকবো?? ওরা তো তোমার থেকেও বড় হা করে ঝুলবে। তখন তো আমার জন্মদিনের পার্টি,বানরের পার্টি হয়ে যাবে!
“” তাহলে পড়ে নে। কে বলেছে অর্ধঢাকা হয়ে থাকতে??
“” আমিও তো সেটাই বলছি পড়িয়ে দাও।””

রাত সন্ধ্যার দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটা আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছে নাকি?? স্বপ্নে তো আমাকে ভালোবাসতে এসেছিলো,আর এখন? এখন মারতে?? সারাক্ষন মাথায় বুদ্ধী আঁটতে থাকে,আমাকে কিভাবে,কতটা হয়রানী করে মারবে।

সন্ধ্যা রাতের দিকে কোমড়টা বাকিয়ে ধরে বললো,,

“” কি হলো পড়িয়ে দাও!””
“” আমি শাড়ী পড়াতে পারিনা। যা,ফুপিকে বল নাহলে আম্মু..””
“” তুমি আবার মিথ্যে বলছো!””
“” আমি মিথ্যে বলছি? আমি কি মেয়ে যে শাড়ী পড়তে জানবো?””
“” শাড়ী পড়া শিখতে হলে মেয়ে হতে হয় নাকি?? সব ছেলেরাই পারে। আমি টিভিতে দেখেছি,আজকাল তো ফেসবুকেও..””
“” বলছি তো আমি পারিনা!””

সন্ধ্যা চোখদুটো বড়বড় করে শাসিয়ে বললো,,

“” তুমি পড়িয়ে দিবে নাতো?””
“” না।””
“” দিবেনা?””
“” না?””
“” ওকে,তাহলে আমি অমিতের কাছে পড়বো।””

রাতের চোখটাও বড় হয়ে এসেছে,চট করে প্রশ্ন করে উঠলো,,

“” আবার এই অমিতটা কে?””
“” আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড! আমার জন্মদিনে আসছে। এই বুঝি এসে পৌছুলো। আমি বরং আমার রুমে গিয়ে ওয়েট করি। ওকেও ফোন করে বলে দেই,সরাসরি যেন আমার রুমে আসে। জানো তো ও খুব ভালো শাড়ী….””

এই মুহুর্তে সন্ধ্যার কথা শুনে মাথা নষ্ট করতে চায়না রাত। তাই ওর কথা বাধা দিয়ে বললো,,

“” ঠিক করে দাড়া!””

রাত টুপ করে মেঝেতে বসে পড়েছে। চোখে,মুখে বিরক্তের ছাপ। বিড়বিড় করতে করতে সন্ধ্যার কোমড়ে শাড়ীর কোনটা গুজে দিতেই সন্ধ্যা বলে উঠলো,,

“” আমাকে কি তোমার গরু মনে হচ্ছে? যেভাবে পেটিকোটের ফিতে টেনে শাড়ী গুজছো মনে তো হচ্ছে,আমাকে টেনে ধরে গোয়ালঘরে বেধে দিচ্ছো! সুন্দর করে পড়াও। ব্যথা পাচ্ছিতো,রাত ভাইয়া!””

সন্ধ্যার কথা কানে নিলোনা রাত। চোখ,মুখ বন্ধ করে,নিশ্বাসটা আটকে নিয়ে শাড়ী পড়ানো শেষ করেছে। সন্ধ্যা আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। তারপর রাতের দিকে চেয়ে আছে। রাতের চোখ তখন মেঝেতে স্থির।

সন্ধ্যা ওর দিকে তাকিয়ে থেকেই নিজের শাড়ীটা খুলতে শুরু করে দিয়েছে। শাড়ীর শেষাংশটা টেনে খুলে রাতের সামনে ঢিল মেরে বললো,,

“” হয়নি,আবার পড়াও!””

রাত ওর কান্ডে হতবাক। যাহা ঢাকিতে সে ব্যাকুল হয়ে অতি দ্রুত শাড়ি পেচিয়ে দিলো তাহাই আবার তার সামনে ঢাকনাখোলা ।

রাত এবার কিছুটা কঠিন সুরেই বললো,,

“” আমি বলেছিলাম তো আমি পারিনা। তবুও জোর করলি। তুই থাক আমি ফুপিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।””

রাত দ্রুত কথা পেড়ে বের হতে চাইলে সন্ধ্যা ওর হাত টেনে ধরলো,,

“” আমি হয় তোমার কাছে পড়বো নাহয় অমিতের কাছে।””
“” সবকিছুতেই তোর জেদ দেখাতে হবে?””
“” হুম। আমার জেদ আমি দেখাবোনাতো তুমি দেখাবে?””
“” শুধু জেদ দেখাতে এসেছিস নাকি অন্যকিছু?””
“” মানে?””

সন্ধ্যার কথার উত্তর না দিয়ে ফ্লোরে পড়ে থাকা শাড়ীটা আবার হাতে নিলো রাত। ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শাড়ী গুজতে গেলে সন্ধ্যা মুচকি হেঁসে বললো,,

“” আমি সাবান দিয়ে গোসল করেছি।””

রাত শাড়ী হাতে কুচির শেইপ নিতে নিতে বললো,,

“” তো আমি কি করবো?””
“” তুমি যেভাবে আমাকে না ছুয়েই শাড়ী পড়াচ্ছো আমার মনে হলো তুমি হয়তো ভাবছো আমি গোসল করিনি,পচা গন্ধ করছে কি?””

রাত কুঁচিটা ঠিক করতে গিয়ে থমকে গেলো। সন্ধ্যার মুখের পানে চেয়ে ভাবছে,কেন স্পর্শ করছিনা সেটা কি তুই আসলেই বুঝতে পারছিসনা?? আঠারো তে পা দিয়েও কি তুই এখনো অবুঝ রয়ে গিয়েছিস?? এমনটাও কি সম্ভব? নাকি ইচ্ছে করেই আমাকে বিষাক্ত দংশন করতে চাচ্ছিস?? যে দংশনের বিষটা আমার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়বে আর আমাকে তিলে তিলে খুন করবে। কিন্তু দংশনের কারনটা কি??

“” কি হলো থেমে গেলে কেন?? আমার এখনো কত কি বাকি,আমি সাজবো কখন? গয়না পড়বো কখন??””

রাত দ্বিতীয়বারের মতো শাড়ী পড়ানো শেষ করে সোজা হয়ে দাড়ালো। তৃপ্তি হাঁসি দিয়ে বললো,,

“” এবার ঠিকঠাক পড়িয়েছি!””

সন্ধ্যা মুখটাকে কাচুমুচু করে আবার শাড়ীটা খুলে ফেললো।

“” এবার কি সমস্যা হয়েছে? ঠিক করেই তো পড়ালাম।””
“” না,ঠিক হয়নি,আবার পড়াও।””

রাত একবার সন্ধ্যার দিকে তাকাচ্ছেতো আরেকবার শাড়ীর দিকে। এই দুটো জিনিস তার কাছে চাইছেটা কি??

রাত তৃতীয়বারের মতো হাটু ঘেরে বসে সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বললো,,

“” কিভাবে পড়াবো,বলে দে! আমি নাহয় সেভাবেই পড়াবো। তাও এভাবে শাড়ী খুলিশনা। আমার হৃদকম্পন থেমে যায়!””
“” ওকে।””

সন্ধ্যাকে শাড়ী পড়াতে গিয়ে রাতের নাজেহাল অবস্থা। যে গরম থেকে বাঁচার জন্য ঠান্ডা হাওয়া খেতে এসেছিলো তার থেকেও হাজারগুন বেশি গরমের সমুদ্র তার সামনে এসে হাজির। যে সমুদ্রের ঢেউ খানিকবাদে বাদে ভেঙে পড়ছে রাতের শরীরে। আর ভিজিয়ে দিচ্ছে গরমের উত্তাপে।

১৬ বারের মতো শাড়ী পড়িয়ে দিয়ে রাত আকুতিভরে বললো,,

“” আর খুলিশনা। আমি এবার ক্লান্ত! আমাকে একটু একা ছেড়ে দে!!””

ততক্ষণে সন্ধ্যার হাত শাড়ীর আঁচলে চলে গিয়েছিলো। রাতের অনুরোধে হাতটা সরিয়ে নিলো। চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে পড়তেই রাত ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়েছে।

~~
হাফ সিল্কের লাল শাড়ীর আঁচলটা বুকে জড়িয়ে নিলো তিয়ামতী। আয়নাতে তাকিয়ে নিজেকে দেখছে আর রিমার কথা ভাবছে। খালি কানটাতে কানের দুলটা পড়ে গলায় সোনার চেইনটা ঠিকঠাক করে নিয়েছে। চুলটা খোপা করে বেড়িয়ে যাবে ভাবতেই আবার আয়নার সামনে দাড়ালো। পেটের দিকটা থেকে শাড়ীটা সরিয়ে ঢেকে থাকা নাভীটা বের করে নিচ্ছে। নাভীর একটু ডানের দিকটায় এখনো কালসেটে নরম দাগ! এমনি এক বর্ণাঢ্য আয়োজনে আপনার পা পড়েছিলো এ বাড়িতে। আর এই পেট বের করে শাড়ী পড়ার শাস্তি দিতেই তো আপনার প্রথম ছোয়া পেয়েছিলাম রিদ ভাইয়া। আজ আমি আবার এভাবেই শাড়ী পড়েছি দেখুন,আপনি আসবেন তো আমাকে শাস্তি দিতে?? সে শাস্তি যত ভয়ংকরই হোকনা কেন আমি তা ভালোবাসা ভেবেই গ্রহণ করবো, আসবেনতো??

তিয়ামতীর ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে নেওয়া শাড়ীটাতে টান পড়তে শাড়ীর কুচিটা আলগা হয়ে এসেছে। দু/একটা কুচি সরে গিয়ে নষ্টও হয়ে গিয়েছে। আবার ঠিক করার জন্য উপুত হতেই কুচিতে রাতের হাত পড়লো। মেঝেতে দুপা ভাজ করে আরামআসনে বসে, মায়ের কুচির নিচের দিকটা ঠিক করছে মনোযোগিতে।

তিয়ামতী নিজের ছেলের দিকে মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে আছে। স্নেহের হাতটা মাথায় রেখে আদরে মেখে দিলো। রাত কুচিগুলো ঠিকঠাক করে তিয়ামতীর হাতে ধরিয়ে বললো,,

“” আম্মু,তোমার শাড়ী পড়াটা সুন্দর হয়নি,আমি ফুপিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি,ঠিক করে পড়িয়ে দিবে।””

রাত উঠে চলে যাচ্ছে। তার চলে যাওয়ার পানে তিয়ামতীর লজ্জামাখা দৃষ্টি। কোমড়ের শাড়ীটা উপরে তুলতে তুলতে জিভ কেটে নিয়ে নিজেকেই নিজে বকা দিচ্ছে, ছি! ছি!! ছি!!! আমি এটা ভুলে গেলাম কিভাবে এ বাড়িতে সে না থাকলেও তার দেওয়া তার সুপুত্র আছে,যে কিনা কোনোভাবেই চায়বেনা তার মায়ের অসম্মান হোক! নিজের ভুলের জন্য আজ ছেলের কাছে এমন লজ্জা পেতে হলো।

~~

বাড়িভর্তি অতিথীদের আনাগোনা। বাচ্চাকাচ্চার শোরগোল,গানবাজনা ও চারপাশের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে পরিবেশ বেশ চাঙ্গা করে ফেলেছে। জন্মদিনের অনুষ্ঠানটা অনেকটা বিয়েবাড়ি মনে হচ্ছে। সন্ধ্যের অন্ধকার কাটাতে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাত ৯ টায় কেক কাটা হবে বলে ঠিক করা হয়েছে।

রাত নিজের টুকটাক কাজ শেষ করে ঘামে ভেজা শরীরটা ধুয়ে নিয়েছে ঠান্ডা পানিতে। সন্ধ্যার পছন্দের কালো শার্ট পড়েছে সে। মেয়েটার তো একমাত্র সে বাদে পৃথিবীর সব ছেলের উপরি নজর। আজকে কি তার এই ভালোবাসায় অনাহারী মানুষটার দিকে একটু তাকাবে? মুগ্ধদৃষ্টিতে মন হারাবে??

রাত গন্ধবাসী পারফিউম মেখে অনেকটা সতেজ মন নিয়ে রুম থেকে বের হয়েছে। সেই যে শাড়ী পড়ার বায়না নিয়ে এসেছিলো তারপর আর একবারও চোখে পড়ে নি মেয়েটা। গেলোটা কই?? রাত এদিন ওদিক,সেদিক,নানাদিক খুজে খুজেও সন্ধ্যাকে পাচ্ছেনা। পুরো বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে দাদীর রুমে হাজির।

“” এই বুড়ি,তুমি আবার ঐ ছবি দেখে কাঁদছো?? ছেলের জন্য এতো ভালোবাসা দেখেই তো আমার নরম মনের দাদাটা ওপারে পাড়ি দিয়েছে। তুমি জানোনা তার হিংসে হয়?””
“” হলে হবে,তাতে কি?? আমার সারাজীবনটা তো তার সেবায় কাটালাম,ছেলেটাকে ভালোবাসার সময় কই পেলাম??””

রাত নিজের দাদীর হাত থেকে ছবির ফ্রেমটা কেড়ে নিলো। এক পলকে নিজের বাবার হাঁসিমাখা মুখটা দেখে সাথে সাথে বিছানায় ফেলে দিলো।

“” তুমি রেডি হওনি যে? তোমার সতীনের জন্মদিনের কেক খাবেনা?””
“” ওসব আমার ভালো লাগেনা। আমার এই অন্ধকার ছোটকুটিরটাই বেশ আছি। তোরা আনন্দ কর। এখনি তো এসবের বয়েস!””
“” আমার আর বয়স!””
“” আবার কি হয়েছে?””

রাত দাদীর কাছে বসে গলা জড়িয়ে বললো,,

“”তোমার নানতিটা খুব দুষ্টু গো। আমাকে খাটিয়ে খাটিয়ে মারছে। নাকে দড়ি দিয়ে আখখেত,ধানখেত,আলুখেত,মুলোখেত সহ সব খেত চষিয়ে বেড়াচ্ছে!””
“” সন্ধ্যার কথা বলছিস? কোথায় ও? আজ তো দেখাই পেলামনা।””

রাত গলা ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললো,,

“” পাবে কি করে?? নিশ্চয় পেটের ভেতর ছেলেমানুষ ঢুকাচ্ছে। আমার সামনে আসলেই তো গড়গড় করে বের করতে হবে।””
“” এসব কি বলছিস? ছেলেমানুষ পেটে?””
“” হুম! তোমার নাতনি হলো ছেলেখোর। যেখান সেখান থেকে,ছেলে পেলেই গিলে ফেলে! ওর ছেলেমানুষি বলে আমি সব সহ্য করে যাচ্ছি বুঝলে? কিন্তু যদি এমন হয় ও ইচ্ছে করে এসব করছে তাহলে কিন্তু আমি তান্ডব বাধিয়ে দিবো। তবে সেটা শুধু তোমার নাতনির শরীর দিয়ে যাবে!””

রাত তার দাদীর কাছে হাজারটা নালিশ দিয়ে মনটা হালকা করলো। তারপর আবার ছুটলো তার স্বপ্নবধুর খোঁজে।

~~

সন্ধ্যা ভারীকাজের সবুজ লেহেঙ্গা পড়ে হেলেদুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন ভারী কাজের লেহেঙ্গা পড়ে হাঁটছে বেগতিকে। দুহাতে নিচের পার্টের দু কিনার কিছুটা উচু করে হাঁটছিলো। গন্তব্য নিজের রুম। চুলের সেটটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে,ঠিক করতে হবে তাই। নিজের রুমের কাছে আসতেই আচমকা টান খেলো হাতে।

ভয়ে শিউরে উঠলেও সামনে রাতকে দেখে যেন ভয়টা উধাও। বুকে থুতু ছিটিয়ে বললো,,

“” আল্লাহ! এমন কেউ করে? আমি তো এখনি হার্টঅ্যাটাকে অক্কা পেতাম। দেখো দেখো আমার হার্টবিট কত জোরে জোরে বাজছে!””

সন্ধ্যা রাতের হাতটা নিজের বুকে কাছে নিতে যাবে কিন্তু পারছেনা। মনে হচ্ছে রাতের হাতটা হাত নয়,কোনো শক্ত পাথরের পিলা। যেটা নড়ানো তার দ্বারা অসম্ভব!

“” এটা তুই কি পড়েছিস?””

সন্ধ্যা নিরাশ হওয়ার মতো মুখটা বাকিয়ে বললো,,

“” তুমি এখনো জামাকাপড় চিনলেনা?? এটাকে লেহেঙ্গা বলে। তুমি স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার মুভিটা দেখোনি?? ওখানে যে রাধা গানটা ছিলো? ওটাতে তো আলেয়া ভাট এই রকম লেহেঙ্গা পড়েছিলো। কিন্তু ওরটা পিংক আর আমারটা গ্রিন। তবে ওর মতো আমারটা ওতো ছোটনা। দেখনা,আমার পেটের দিকে তো অনলি ২ ইঞ্চি বেড়িয়েছে আর ওরটা তো ফুল…””
“” আমি না তোকে শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছিলাম? ওটার কি হলো? খুলেছিস কেন?””
“” খুলবোনা তো কি করবো? ওটা শাড়ী পড়ানো হলো? একটুও শুড়শুড়ি লাগেনি। আমি তো শুড়শুড়ি শাড়ী পড়তে চেয়েছিলাম।””
“” শুড়শুড়ি শাড়ী?””
“” হুম। তুমি দেখোনা,মুভিতে নায়িকাকে যখন নায়ক শাড়ী পড়িয়ে দেয়,তখন নায়িকা শুড়শুড়িতে কেমন কেঁপে কেঁপে উঠে,চোখদুটো বন্ধ করে নায়কের হাত চেপে ধরে। টেনে টেনে নিশ্বাস নেয়,অনেকটা শ্বাসকষ্ট রোগিদের মতো। আর আমি? আমি কাঁপা তো দুর একটু শুড়শুড়িও খেলাম না,তাই খুলে ফেলেছি। আমারি ভুল হয়েছে, তুমি যে শুড়শুড়ি দিতে পারোনা ওটা আমার আগে জানা উচিত ছিলো। আমি বরং রনির কাছেই পড়বো৷ ও বলেছে ও নাকি শুড়শুড়ি শাড়ী পড়াতে পারে।””

সন্ধ্যা কথার ফাঁকে ফাঁকে নানা অঙ্গিভঙ্গি করছে। হাতটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে বিধায় মাঝে মাঝে পেটের দু ইঞ্চি খালি জায়গাটা তিন ইঞ্চিতে রুপান্তর হচ্ছে। রাতের মাথা গরম হয়ে সব টালমাটাল অবস্থা। রাগে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। ইচ্ছে হচ্ছে সন্ধ্যার গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিতে নাহয়,পেটে গরম ছ্যাকা লাগিয়ে দিতে। রাত আর পারছেনা সহ্য করতে এবার কি তবে ওর ভেতরের রাগটা বেড়িয়ে আসতে চাইছে?? সব বাধ ভেঙে গিয়ে রাতের ভয়ংকর রুপটা সন্ধ্যা দেখতে চলেছে??

রাতের চোখে অগ্নিনালা বয়ছে। হাতদুটো মুঠো করে নিজের রাগকে দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে কই? বরংচ রাগটা আরো বেশি তীব্র হয়ে আসছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here