ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (২০)

0
2608

ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (২০)
রোকসানা_রাহমান

রাতের ড্রেসিংটেবিলটার সামনে দাড়িয়ে আছে সন্ধ্যা। আগের বউ সাজ গোসলের সাথে ধুয়ে ফেলেছে। নতুন করে সেজেছে,তিয়ামতীর হাতেই। শ্বাশুড়ি ছেলের বউকে সাজিয়ে দিবে এমন সুযোগ সে কেন মিস করবে?? সন্ধ্যা আয়নার সামনে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আগেরবারের মতো ভারী মেকাপ নেই,কিন্তু এই সাজটাতেই বেশি স্নিগ্ধ লাগছে। পুরো সাজ ঠিকঠাক মতো দেখে নিয়ে হাতে চুড়ি পড়ে নিলো। ঠোঁটের লিপস্টিকটা আরেকটু গাঢ় করতে যাবে তখনি রাতের কন্ঠ। বাবার সাথে কথা বলছে মনে হয়। সন্ধ্যা চটপটে লিপস্টিকটা ঠোঁটে লেপে নিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। মাঝ বরাবর বসে মাথার ঘোমটাটা টেনে দিলো!

চোখের পলকের সাথে সাথে সে রাতের জন্য অপেক্ষা করছে। কান তার কার্যক্রমে দুর্বল! রাত আর সিকান্দার সাহেবের মাঝে কি কথোপকথন হচ্ছে তা পুর্ণরূপে বুঝতে পারছেনা। তবে,অনেক চেষ্টায় আছে শোনার,ফ্যানটাও অফ! তারপরও কোনো কথায় সঠিকভাবে বুঝতে পারলোনা। শব্দটা আসতে আসতে যেন আরো বেশি মিশে যাচ্ছে নাকি সন্ধ্যার সেদিক থেকে মনোযোগটা কমে এসেছে?? এদিকে ঘোমটার নিচে সাজুগুজু মুখটাতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে যাচ্ছে। হাতের তালুটাও কেমন একটা স্যাতস্যাতে ভাব চলে এসেছে,ফ্যানটা ছেড়ে আসা উচিত ছিলো,এখন কি উঠে গিয়ে ছাড়বে?? কিন্তু ছাড়তে গিয়ে যদি রাত চলে আসে?? তাহলে তার ঘোমটা টা কে খুলবে?? সন্ধ্যা দোটানায় ভুগছে,তবে তা আর বেশিক্ষণ রইলোনা। মুহুর্তেই মনের ভেতর চলছে হাজারও কল্পনার ফুলঝুরি। কল্পনার মাঝে রাতকে নিয়ে চলছে নানা রোমাঞ্চকর ভাবনা। প্রত্যেকটা ভাবনাতেই সন্ধ্যার মনে শিহরনের অদৃশ্য কামড় দিয়ে যাচ্ছে!

বেশ কিছুক্ষণ সময় পার হওয়ার পরও যখন রাত এলোনা তখন সন্ধ্যার রোমাঞ্চকর ভাবনাতে বিরক্ত বাসা বাধলো। দরজার দিকে উৎসুক চাহনি দিতেই মনের ভেতর গানের সুর বেজে উঠতে চাইছে। কিন্তু কোন গানটা গায়বে সে?? গানের ভান্ডার থেকে একটি গান সংগ্রহ করলো সন্ধ্যার গানমন। ঘোমটাটা নিজেই সরিয়ে নিলো। হাতভর্তি চুড়ির রিনঝিন শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে সন্ধ্যা গান ধরেছে,,,

তুমি দিও না গো বাসর ঘরের বাতি নিভাইয়া,,,
আমি অন্ধকারে, বন্ধ ঘরে যাবো মরিয়া….

ছি!ছি!!ছি!!! এটা আমি কি গান গাইছি?? আমার স্বামী তো এখনো আসেইনি তাহলে বাতি কেন নিভাবে?? না এটা সময়ক্ষণের সাথে মিলেনি অন্য গান গাইতে হবে,কি গান গাইবো??

সন্ধ্যা ছোট্ট ভাবনাতে ডুব দিলো। ডানহাতের শাহাদাৎ আঙুলটা গালে তাল মিলিয়ে সে ভাবছে,গভীর ভাবনাতে গান আসছে আর যাচ্ছে,সাথে সাথে মাথা হ্যা’তে,না’তে দুলছে,চোখের মনিটা চঞ্চলতায় ঘুরছে। এতোশতো ভাবনাতেও সে তার সময় উপযোগী কোনো গান না পেয়ে হতাশ হলো। হাতটা গাল থেকে হাটুতে পড়ে চুড়ির শব্দ। মুখে বিরস সুর এনে নিচু গলায় গান ধরলো,,,

বাসর ঘরে বউ অপেক্ষায়,,,,
স্বামী আসার নাম নাই নাই নাইইইইই….

সাথে সাথে রুম অন্ধকার হয়ে গেলো। সন্ধ্যা থমকে গিয়ে ঘোমটা টেনে নিলো। রুমের মধ্যে পা চলনের শব্দ। তাহলে কি রাত ভেতরে এসেছে?? কিন্তু ঘোমটা না খুলে লাইট বন্ধ করলো কেন?? বউ সাজ দেখবে না?? সন্ধ্যার ইচ্ছে হলো বলতে,

আলোকসজ্জায় দেখবে মুখ,,
লজ্জাতে লাল হবে চিকুব!!

সন্ধ্যার ইচ্ছে ঘোমটার তলেই আটকে রইলো। তার আর কিছু বলা হয়নি,অন্ধকার ঘরে আলোও জ্বালা হয়নি। সময় গড়াচ্ছে,পায়ের চলনের শব্দটাও একসময় মিলিয়ে যাচ্ছে। আর সন্ধ্যার উৎকন্ঠা উত্তেজনাতে অভিমান ভর করছে। কিন্তু সে এখন অভিমানকে পাত্তা দিবেনা৷ অভিমানটা একদিকে বহমান হওয়াই শ্রেয়। দুদিকে হলে দুরত্ব বেড়ে যাবে। সন্ধ্যা নিজেই নিজের ঘোমটা তুললো। অন্ধকার রুমে কোথাও রাতকে খুজে পেলোনা। খাট ছেড়ে মেঝেতে নেমে লাইটের সুইচে হাত দিয়েছে। পুরো রুম ফাঁকা। একটু আগেও তো ছিলো তাহলে গেলো কই??

পায়ে সোনালী রঙের মোটা নুপুরের রুমঝুম শব্দে সুর তুলে হাঁটছে সন্ধ্যা। এটা তার শ্বাশুড়ি দিয়েছে। দেখতে যেমন সুন্দর,আওয়াজটাও শ্রীতিকর। সন্ধ্যা বারান্দাতে ছুটে যেতেই রাতকে দেখতে পেলো। মেঝেতে আধশোয়া,সবুজ গ্রিলে পিঠ ঠেকানো,চোখদুটো বন্ধ।

“” তুমি এখানে কি করছো? না আমার কোনো পুরোনো প্রেমিক আছে,না তোমার কোনো প্রেমিকা আছে,ফ্যামিলির চাপেও বিয়ে হয়নি,দুজনের সম্মতিতে হয়েছে,তারপরও এমন দেবদাশ রুপ কেন? বাসর ঘরে বউ অপেক্ষারত,স্বামী বারান্দায় দেবদাস সাজে মত্ত!””

সন্ধ্যার কন্ঠধ্বনিতে রাত চুল পরিমানও নড়ে উঠেনি। যেন সে জড়পদার্থ,প্রাণীর স্পর্শ ছাড়া সে নড়তে পারেনা। তার কোনো অনুভূতি নেই!

সন্ধ্যা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নাক দিয়ে থমকা নিশ্বাস ছাড়লো। মেঝেতে মেলে থাকা পায়ের উপর থেকে ডান হাতটা টেনে বললো,,

“” আসোনা,আমরা বাসর করবো।””

সন্ধ্যার টানাটানিতে রাত চোখ মেলেছে। নরম চোখে চেয়ে আছে ওর মুখ পানে। এমন বউসাজে সে তার স্বপনবধুটিকে সেই ছোট্টবেলা থেকে দেখে এসেছে,তবে স্বপ্নে। আজ সে সামনাসামনি দেখছে,এক নতুন সূচনা তাকে ডাকছে। যে সূচনা সবটা বাধা পেরিয়ে এসেছে। চাইলে দুজন দুজনকে কাছে টেনে নিতে পারে। কোনো বাধা নেই। আগেও ছিলোনা, শুধু সন্ধ্যার কথা ভেবেই তো এতোটা চুপ ছিলো সে। আজ সেই সন্ধ্যাই তো তাকে ডাকছে। কিন্তু কেন ইচ্ছে করছেনা এই ডাকের সাড়া নিতে?? কেমন অভিমান ভরে আছে তার মনের গভীরে?? যে অভিমানের নেই কোনো স্থিরীকৃত কারণ।

সন্ধ্যার শক্তটানে রাত উঠে দাড়ালো।

“” বাব্বাহ গো,তোমাকে বসা থেকে তুলতেই আমার সব এনার্জি শেষ!””

সন্ধ্যা সাহস যোগাতে বড় নিশ্বাস টানতেই রাত ওর হাতটা চেপে ধরলো,কনুই বরাবর শক্ত হাতের চাপ। সন্ধ্যা প্রশ্নচক্ষুতে তাকালো রাতের দিকে। তার প্রশ্ন ইশারার কোনো উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলোনা রাত। সোজা ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দরজার দিকে। টানের সাথে পায়ের তাল বেশামাল হয়ে শাড়ীর কুচিতে আটকে গেলো সন্ধ্যার পা। হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই রাত ওর কোমড় চেপে ধরেছে।

“” এখনি তো আমার কপালটা ফেঁটে যেত। বাসর রাতে শাড়ী পেচিয়ে বউ চিৎপটাং,কেমন শোনাতো বলো তো। এমন টানাটানি করছো কেন? কি লাগবে বলা যায় না? কথা বললে কি তোমার কন্ঠনালী পচে যাবে? আমি কি পচার বিষ যে তোমাকে ছুয়ে দিবো?””

সন্ধ্যাকে ঠিকভাবে দাড় করালো রাত। যার সাথে একটা সেকেন্ডও কথা না বলে সে থাকতে পারবেনা আজ সে তার সাথেই কথা বলছেনা। ব্যথায় তো তার কন্ঠ ফুলে ফেপে আছে। তবে সেটা কারো চোখস্পর্শ করতে পারবেনা। শুধু অনুভব করতে পারবে। অন্যকেউ নয়,যার কন্ঠ সে।

সন্ধ্যা আদুরী হাতে রাতের গাল ছুয়ে বললো,,

“” কি হয়েছে তোমার? আমার সাথে কেন কথা বলছোনা? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।””

সন্ধ্যার চোখে চোখ রাখতে পারছেনা রাত। চোখটা কেমন চিকচিক করছে। চিকচিকের উৎসের সন্ধানে সে নামতে চায়না। রাত আর একদন্ডও দেরি করলোনা। সন্ধ্যাকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিলো। সজোরে দরজায় খিল টানের শব্দে সন্ধ্যা হালকা কেঁপে উঠেছে।

~~

“”এভাবে ঝনঝন শব্দে বাড়ি মাথায় করে রেখেছিস কেন? বিয়ে কি তোর একাই হয়েছে? সারা পৃথিবীকে তোর বউ সাজ দেখাতে হবে?””

সন্ধ্যা মায়ের কথার পাত্তা না দিয়ে মুখটা হা’করে দীর্ঘ হামি টেনে ঘুম তাড়াচ্ছে।

সন্ধ্যার মা রিমা টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছেন। সন্ধ্যা চেয়ার টেনে বসতে নিলেই উনি হাঁকিয়ে উঠলেন,,,

“”গোসল করেছিস?””
“” না।””
“” যা এখুনি গোসল করে আয়। তারপর খাবি।””
“” আমি কেন গোসল করবো?””

রিমা বিরক্তভর্তি মুখ বানিয়ে সন্ধ্যাকে টেনে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলেন।

“” আমি এখন গোসল করবোনা,আম্মু!””
“” কেন করবি না?””
“” কেন করবো?””

সন্ধ্যার পাল্টা প্রশ্নে মাকে কিছু বলতে না দিয়েই আবার ডাইনিংয়ে ছুটলো সে

খাবার মুখে পুরছে আর রাতের রুমের দিকে চেয়ে আছে। খাবার গলায় ঠেকে হিঁচকি উঠে গিয়েছে কিন্তু সে পানি খাচ্ছেনা৷ এমন নয় যে পানি তার সামনে নেই! পানি আছে সাদা চকচকে কাঁচের গ্লাসটাতে পানি টয়টুম্বুর। কিন্তু সে খাবেনা।

তিয়ামতী সন্ধ্যার হিঁচকির শব্দ পেয়ে বললেন,,

“” পানি খাচ্ছিস না কেন?””

তিয়ামতীর কন্ঠধ্বনি যেন সন্ধ্যার কানে পড়লোইনা। সে তখনো ঘাড় বাকিয়ে রাতের রুমের দিকেই চেয়ে আছে। একমনে খাবার মুখে পুরছে,আর একটু পরপর শব্দ তুলে কেঁপে উঠছে।

হঠাৎ মাথায় পানি পড়তেই সন্ধ্যা উপরে তাকালো। এবার পানি মাথায় না পড়ে মুখে পড়ছে। সন্ধ্যা চেয়ার ছেড়ে দ্রুততর সাথে বললো,,

“” এটা কি করলে,রাত ভাইয়া? আমার শাড়ীতো ভিজিয়ে দিলে,এখন এই ভেজা শাড়ী পরে থাকবো?””

রাত ভ্রূ উচিয়ে তাকাতেই সন্ধ্যা আবার বললো,,

“” ইচ্ছে করে ভেজালে তো? খুলবোনা আমি এই শাড়ী। আগে আমার বাসর হবে তারপর শাড়ী খুলা হবে। হুহ!””

রাত সন্ধ্যার দিকে তিক্ষ্ণ চাহনি নিয়ে ফুপির উদ্দেশ্যে বললো,,

“” ফুপি,আমার খাবারটা ঘরে পাঠিয়ে দিও।””

রাত হনহন করে নিজের রুমের দিকে চলে যাচ্ছে। সন্ধ্যা সেদিকে তাকিয়েই চিন্তার রাজ্যে ডুব দিলো, আমি এতো সুক্ষভাবে রুমের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার এই তাকানোকে লুকিয়ে কি করে আমার পেছনে আসলো? তাহলে কি সে রুমে ছিলোনা? রুমে না থাকলে ছিলোটা কোথায়??

~~
তিয়ামতী বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছেন। রাতের ঘড়ির কাঁটায় ১১ টা বেজে ৩০। এতোবেলা করে সে ঘুমায়না। দশটা বাজতেই ঘুম নেমে আসে তার চোখে। কিন্তু আজ সে ইচ্ছে করেই জেগে আছে। তার দরজার সামনে রাত দাড়িয়ে আছে। অনেক্ষণ ধরেই দাড়িয়ে আছে,যেটা তিয়ামতী আন্দাজ করতে পেরেছে। ছেলের ভেতরে আসার অপেক্ষাতেই জেগে থাকা। কিন্তু ঘন্টা পেরিয়ে যেতেও যখন রাতের দেখা পেলোনা তখন বুঝতে সক্ষম হলো তার এখন অভিনয় করতে হবে। ঘুমের অভিনয়। সে অভিনয় নিয়েই চোখ বন্ধ করা। মিনিট পনেরো পার হতেই রাত ভেতরে এসেছে। তিয়ামতীর শরীরে কম্বলটা মুড়িয়ে দিয়ে পাশে বসলো। কিছুক্ষণ মায়ের মুখের দিকে চেয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বুকে আটকে থাকা এই দীর্ঘশ্বাসটা ছাড়তেই কি এখানে আসা? নিজের প্রশ্নের উত্তর না খুজে রাত উঠে পড়েছে। পা চালাতেই তিয়ামতী বললেন,,

“” রাগ নেই তবুও রাগ দেখাচ্ছিস কেন? শুধু শুধু নিজে কষ্ট পাচ্ছিস। আমার ছেলে তুই,তোর থেকে তোকে আমি বেশি চিনি। এভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে যে দহনে ভুগছিস সেটার জ্বলনটা কিন্তু আমি অনুভব করতে পারছি।””

তিয়ামতীর কথায় রাত থমকে দাড়ালো। মায়ের দিকে করুনভাবে তাকিয়ে আছে।

“” আমার সাথে কথা না বলার কারনটা আমি জানি। কিন্তু সন্ধ্যার সাথে কি হয়েছে? ঐ পাগলিটাকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন?””
“” ও দিতে পারলে আমি দিতে পারবোনা?””

রাতের প্রশ্নে তিয়ামতী হালকা হেঁসে বললেন,,

“” আসলেই কি তাই?””

রাত গুটিগুটি পায়ে মায়ের পাশে বসলো। মাথা নিচু করে বললো,,

“”তোমাদের দুজনকে আকড়ে, আমি বাঁচতে চাই,আর তোমরা দুজনেই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছো। কেন আম্মু? আমি কি একটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারিনা??””

ছেলের কথায় তিয়ামতীর চোখ ভরে এলো। মমতার হাত গালে বাড়িয়েই দিতে রাত গভীরভাবে চেপে ধরে বললো,,

“” আম্মু,আমি তোমাদের সবাইকে নিয়ে আমার পৃথিবী সাজাতে চাই! তোমরা কি তা বুঝতে পারছোনা??””
“” সন্ধ্যার উপরে এমন নিবিড় অভিমান কেন? তুই যা চেয়েছিলি ও তো তাই করেছে। তাহলে?””
“” সেটাতো পরে,কিন্তু তার আগে ও কি করেছিলো সেটা দেখনি? ও আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলো।””

তিয়ামতী রাতের কথার বিপরীতে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ও বাধা দিয়ে বললো,,

“” না আম্মু,ওটা ওর ছেলেমানুষি ছিলোনা। কোনো অভিনয়ও ছিলোনা।””
“” যদি সেরকমই হয় তাহলে তোকে কেন বিয়ে করবে? তুই ভুল বুঝছিস রাত!””
“” আমি ভুল বুঝছিনা,আম্মু! ও এখন আমাকে ভুল বুঝাতে চাচ্ছে।””
“”আচ্ছা আমি তোর কথা মেনে নিলাম। এখন এইটা ধরে তো তুই তোদের নতুন জীবনে কাঁটা গেথে দিতে পারিসনা। এইভাবে দুরে না থেকে ওর সাথে কথা বল।””
“” আমি পারবনা। আমি আজ অবধি ওর কাছে ওর কোনো কাজের জন্য জবাবদিহি করিনি,তাহলে আজ কেন করবো?””
“” তাহলে আমি ওর সাথে কথা বলি!””
“” না,আম্মু,তুমি ওকে কিছু বলবেনা।””
“” তুইও বলবিনা,আমাকেও বলতে দিবিনা,তাহলে কি করে হবে? তুই কি চাচ্ছিস? পরিষ্কার করে বলবি?””
“” আমি চাই ও নিজ থেকে বলুক।””
“” তুই কি চাস সেটা ও কি করে বুঝবে?””

রাত মায়ের কাছ থেকে সরে এসে বললো,,

“” ও কে বুঝতে হবে। আর যতদিননা বুঝছে ততদিন ওর সাথে আমি কোনো কথা বলবোনা।””

রাত নিজের কথার রেশ কাটিয়ে মায়ের রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো। কেন বুঝবেনা ও? আমি যদি ওকে বুঝতে পারি ও কেন পারবেনা? ও যদি আমাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে ওকে বুঝতে হবে। একটা সহজ সরল ভালোবাসার গল্পটাকে ও কঠিন করে দিয়েছে। আর এই কঠিন রুপ থেকে সহজে আনতে হলে ওকেই দায়ভার নিতে হবে। আমি পারবোনা। আমি আর কোনো দায়ভার নিতে পারবোনা!

রাত আপনমনে দায়অন্যায়ের কথোপকথনের সহিত নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। রুমে প্রবেশ করতেই সন্ধ্যা বিছানা ছেড়ে দাড়িয়ে গেলো। কাচুমুচু হয়ে রাতের দিকে এগিয়ে এসে বললো,,

“” আমি আজকে এখানেই ঘুমাবো। আমি তোমার বউ হই। তোমার রুমে ঘুমাবোনা তো কোথায় ঘুমাবো?””

সন্ধ্যা রাতের দিকে দৃষ্টি স্থির রাখতে পারছেনা। একবার ওর দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার নিচের দিকে। কিন্তু রাত ঠিকই স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এখনো বেনারশী জড়ানো। মুখটা কেমন কালোবর্ণে ছেয়ে আছে। এতো শুকনো লাগছে কেন??

রাত পা বাকিয়ে চলে যেতে নিলে সন্ধ্যা কাঁপাকন্ঠে বললো,,

“” আমি তোমার থেকে দুরে চলে যেতে চেয়েছিলাম,তাই সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করতে চেয়েছি।””

রাত সন্ধ্যার দিকে অবিশ্বাস্য চাহনিতে চেয়ে আছে। সন্ধ্যা অপরাধীর মতো মুখ করে বললো,,

“” আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,রাত ভাইয়া। আমি ছোটবেলা থেকে মামিকে দেখে এসেছি। কিন্তু কখনো উনার ভেতরের কষ্টটা পড়তে পারিনি। তবে সেদিন তোমার আর মামির ঝগড়াতে আমি সব পড়তে পেরেছি। মামির মতো আমিও তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আমি উনার মতো এতোটা ধৈর্যশীল নয়,সহনশীলও নই। আমি এখনি তোমাকে ছাড়া নিজেকে চিন্তা করতে পারিনা তাহলে একটা গভীর সম্পর্কে গিয়ে তোমাকে ছাড়া থাকার কথা আমি কিভাবে ভাববো? আমি তো মরেই যাবো। আমার তখন মনে হয়েছিলো এতোবড় কষ্ট সহ্য করার থেকে এখনি একটু সহ্য করে নেই। তাই বিয়ের কথা বলেছিলাম। আমি জানি আমার তখন তোমাকে বলা উচিত হয়নি,আমার তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসা উচিত ছিলো,আমি তো ভালোবাসতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার যে কি হলো আমি তোমাকে সায়ন ভাইয়ের কথা বলে ফেললাম! তারপর…””

রাত সন্ধ্যাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলো। নরম সুরে বললো,,

“” সন্ধ্যা,তুই এখন এখান থেকে যা।””

সন্ধ্যা রাতের দিকে দুকদম এগিয়ে এসে অধিকারি সুরে বললো,,

“” আমি কোথাও যাবোনা। এখানেই থাকবো। আমি বাসর করবো। তুমি তো কথা দিয়েছিলে,আমাকে বিয়ে করার পর আমাকে ছয় কাপড় খুলতে দিবে..””
“” সন্ধ্যা,প্লিজ! এখান থেকে যা।””
“” কেন যাবো?? বলছিনা যাবো?? বিয়ে করবে আর বাসর করবেনা?? তাহলে বিয়ে করলে কেন? তোমার থেকে তো সায়ন ভাইয়াই ভালো ছিলো। উনার সাথে বিয়ে হলে এতক্ষণে বাসর হয়ে আমার পেটে বাববব…””

সন্ধ্যার কথা গলাতে আটকে রেখেই রাত ওর কন্ঠনালী চেপে ধরলো। রক্তরাঙা চোখদুটো কাঁপছে,ঠোঁটদুটোও কেঁপে উঠছে,কপালপার্শ্বে বেগুনি শিরা ভেসে উঠেছে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here