ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (২১)
রোকসানা রাহমান
সন্ধ্যার কথা গলাতে আটকে রেখেই রাত ওর কন্ঠনালী চেপে ধরলো। রক্তরাঙা চোখদুটো কাঁপছে,ঠোঁটদুটোও কেঁপে উঠছে,কপালপার্শ্বে বেগুনি শিরা ভেসে উঠেছে! চোখের মনিদুটো যেন ঠিকরে বের হয়ে আসতে চাইছে। রাতের ভয়ংকর লাভায় জর্জরিত চক্ষুদ্বয়ে সন্ধ্যার করুন চাহনি মিশে যাচ্ছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার কিন্তু তাতেও কিছু যায় আসছেনা। এই অগ্নিচোখেই তার হারিয়ে যাওয়া দৃষ্টি।
সন্ধ্যার স্থিরদৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে,গালদুটো কেমন লাল হয়ে ফেপে উঠছে। গলা শুকিয়ে কাশি আসছে। সে কি মৃত্যুদুয়ারে চলে যাচ্ছে?? রাত তাৎক্ষনিক সন্ধ্যাকে ছেড়ে দিলো। গলা ধাক্কা দিয়েই নিজের থেকে দুরে সরিয়ে উল্টো ঘুরে আছে।
সন্ধ্যা হাপাচ্ছে,হাতদুটো গলাতে বসা। হা করে নিশ্বাস নিতে গিয়েও বুকে বাধা পাচ্ছে,শুকনো কাশিতে গলা জ্বলে উঠছে তার। যন্ত্রণা চোখে লেগে পানি পড়ছে টপটপ।
রাত নিজেকে স্বাভাবিকে আনার পুরোদমে চেষ্টা চালাচ্ছে। হাত মুঠো,চোখ বন্ধ,নিচু নিশ্বাস। মাথা ডানেবায়ে নড়ে নিজেকে শান্তনা দিচ্ছে।
“” আরেকটু হলেই তো মরে যাচ্ছিলাম,রাত ভাইয়া! তুমি তো আমার ফুল শয্যাকে মৃত্যুশয্যা বানিয়ে দিচ্ছিলে।””
সন্ধ্যার ভাঙাকন্ঠে রাত কিছু বললোনা। রাগে তার শরীর এখনো কাঁপছে। ঘন নিশ্বাসটা কিছুতেই পাতলা করতে পারছেনা। হঠাৎ এতো রাগ কেন উঠে গেলো কিছুতেই বুঝতে পারছেনা। এমন কথাতো আজ নতুন নয়। সবসময় তো ও অন্যকাউকে নিয়েই কথা বাড়ায়,তখন তো এতো রাগ হয়নি তাহলে আজ কেন হচ্ছে?? তবে কি একেই বলে অধিকার?? কলমের কালোকালির সম্পর্কে জড়িয়ে সে সম্পর্কের অধিকারি খাতাতেও দাগ ফেলতে চাইছে??
সন্ধ্যা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়ালো। গলাটা নাড়িয়ে ভালো করে পরখ করছে। হাতের তালু দিয়ে মালিশ করতে করতে বললো,,
“” বিয়ে হতে না হতেই বউয়ের শরীরে আঘাতের দাগ?? আমার এতো সুন্দর গলা! তুমি জানো আমার এই সুন্দর গলার প্রেমে পড়ে তানভীর আমাকে কতগুলো লাভ লেটার দিয়েছিলো??””
সন্ধ্যার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে চারপায়াটা ড্রেসিং টেবিলে বারি খেলো। এক ইঞ্চি পুরু কাঁচটা ভেঙে গুড়োগুড়ো। সন্ধ্যাও কি সেই আয়নার মতো টুকরো টুকরোতে ভেঙে গিয়েছে?? মেঝেতে তার শত শত প্রতিচ্ছবি ভাসছে। সেই ভাঙা আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবিতে সন্ধ্যার থমকে যাওয়া দৃষ্টি। পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে আছে,বরফের মতো এমন জমে গেলো কেন?? তাকে কি ফ্রিজের নিম্ন তাপমাত্রাতে রাখা হয়েছে??
রাত আগুন ফাঁটা চিৎকারে বললো,,
“” বেরিয়ে যা তুই, আমার রুম থেকে।””
রাতের চিৎকারে পুরো রুম কেঁপে উঠলেও সন্ধ্যার শরীর কেঁপে উঠেনি,হালকা ছিটকেও উঠেনি। ভাঙা কাঁচেই তার অটল দৃষ্টি!
রাতের আম্মু তিয়ামতী হন্তদন্ত হয়ে রাতের রুমের সামনে হাজির। অস্থির কন্ঠে বললো,,
“” কি হয়েছে? রাত তুই চিৎকার…””
নিজের বাক্যটা শেষ করার আগেই চোখ ঠেকেছে রাতের হাতে ভগ্ন হওয়া সাজানো রুমটি। সত্বরবেগে চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিলো। সন্ধ্যার দিকে চোখ পড়তেই তার পিল চমকে উঠেছে। খানিকটা দৌড়ভঙ্গিমাতেই সন্ধ্যার ধারে এসে দাড়িয়েছে। রাতের দিকে দুপলক তাকিয়ে সন্ধ্যার কাধে হাত রাখলো। নরমসুরে বললো,,
“”সন্ধ্যা?””
সন্ধ্যা নড়লো,চোখের পাতাও নড়লো। মামির দিকে শান্তদৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
তিয়ামতী সন্ধ্যাকে আরেকটু কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু তার আগেই সন্ধ্যা চোখ বুঝে ফেলেছে। শরীরের সবটা শক্তি গায়েব। শূন্যশক্তিতে ভর করে মামির দিকে ঢলে পড়লো। তিয়ামতীর আৎকা চিৎকার,,,
“” সন্ধ্যা!””
~~
এক রঙের ফুল হাতার শার্ট পড়েছে রাত,সাথে গলাবন্ধনী,ইস্ত্রী করা প্যান্ট। মাথার চুলে নতুন গুড বয় কাট! ডান হাতটা উচু করে বা হাতে সুগ্ন্ধী মাখায় ব্যস্ত।
“” এখনি এসবের কি প্রয়োজন,রাত?? মাস্টার্সটা শেষ হওয়ার পর জবে ঢুকলে হতো না??””
ফুপার কন্ঠে রাতের ঠোঁটদুটো প্রসারিত হলো। নিজেকে আরেকবার আয়নায় দেখে নিয়ে বললো,,
“”আমি তো পড়াশুনা ছেড়ে দিচ্ছিনা,ফুপা। একটা সুযোগ এসেছে তাই কাজে লাগাচ্ছি।””
“” আমি থাকতে তোমার কোনো সুযোগের প্রয়োজন নেই। পড়াটা শেষ করো। তারপর নাহয়!””
রাত আশ্বাসের সুরে বললো,,
“” তুমি আছো বলেই তো আমরা আছি। একদিন তো আমাকেই তোমার জায়গায় অবস্থান করতে হবে। হঠাৎ করে বসিয়ে দিলে যদি সামলাতে না পারি?? তাই আগে থেকে নিজেকে গুছিয়ে রাখি।””
রাতের কথাতে সিকান্দার সাহেব গম্ভীর হয়ে রইলেন। রাতের কথা ফেলার মতো ও না। বয়স তো হচ্ছে,কখন কি হয়ে যায় তার ঠিক নেই। এই পরিবারের হাল তো রাতকেই ধরতে হবে। তবুও এতো অল্প বয়সে চাকরীতে ঢুকবে এটা পছন্দ হচ্ছেনা সিকান্দার সাহেবের। তাও এমন ছোটখাটো চাকরী! বেশ কয়েকটি নামডাক বেসরকারী ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন তিনি চাইলেই যেকোনো ব্যাংকে,যেকোনো পদে বসিয়ে দিতে পারেন রাতকে। কিন্তু রাত যে তার সুপারিশে তা গ্রহণ করবেনা সেটা ওর হাবভাবেই বুঝে গিয়েছেন। তাছাড়া একজন উপদেষ্টা হিসেবে উচ্চমানের লেখাপড়াটাও যে জরুরী সেটাও তিনি জানেন।
“” ফুপা? লুক এট মি,হাউ ডু আই লুক?””
রাতের ডাকে সিকান্দার সাহেব ওর দিকে তাকালো। বেশ লাগছে,অনেকটা চমৎকার টাইপের। উনার মনে হলো উনি যদি ইন্টার্ভিউ বোর্ডে থাকতেন,তাহলে রাতকে কোনো প্রশ্ন না করেই হাতে জয়েনিং লেটারটা ধরিয়ে দিতেন।
রাত হাতে নীল ফাইলটা নিয়ে বেরিয়ে যেতে গিয়ে পেছনে ঘুরলো,,
“” ডু ইউ হেভ এনি এডভাইস ফর মি,স্যার?””
~~
রাত মায়ের রুমে উকি দিচ্ছে। যদিও সে জানে এখন তার মা তার রুমে নেই। কিন্তু অন্য একজন আছে,তার বউ! রাত বিড়বিড় করে বললো,আমার বউ! আমার বিয়ে করা বউ!!
রাতের কাল রাতের ভয়ানক কান্ডটার জন্য সে দুঃখিত। সন্ধ্যাকে তাই বলতে এসেছে। এক ঝড়ে সে তার রাগ,অভিমান ঝেড়ে ফেলেছে। এখন সে আর কিছু ভাববেনা,এখন তার বউ চাই। মায়ের রুমে নয়,নিজের রুমে থাকবে তার বউ। রাত ভেড়ানো দরজাটা মেলে নিলো। দৃঢ় পায়ে মায়ের রুমে প্রবেশ করছে। সন্ধ্যা গভীর ঘুমে। সন্ধ্যার মুখটা পূর্বদিকের জানালার দিকে ঘুরানো,সকালের লাল রোদ মুখে পড়ছে। রোদ আড়াল করে রাত হাটু গেড়ে বসলো। সন্ধ্যার ঘুমন্ত চেহারার দিকে চেয়ে আছে। মুখটা এখন ক্লান্তশূভ্রতায় ছেয়ে আছে। বেনারশী পাল্টেছে। কে পাল্টালো?? আম্মু?? নাকি ও নিজেই? রাতে গোসল করেছিলো নাকি??
রাত মুখে মিস্টি হাঁসি নিয়ে মৃদু সুরে ডাকলো,,
“” বউ!””
সন্ধ্যা হালকা নড়লো। চোখের পাতা নড়ছে। পিটপিট করে মেলে রাতের দিকে তাকালো। রাত আরেকবার বউ বলে ডাকবে তার আগেই সন্ধ্যার চিৎকার,,,
“” মামি!””
সন্ধ্যার আকস্মিক চিৎকারে রাত হতবাক। কিছু বুঝে উঠার আগেই তিয়ামতী হাজির। মামিকে দেখে প্রাণ ফিরে পেলো এমন ভঙ্গিমায় তিয়ামতীকে জড়িয়ে ধরেছে সন্ধ্যা। হাতের বাধনসহ পুরো শরীর কাঁপছে সন্ধ্যার!
সন্ধ্যারকান্ডে রাত হতচকিত। কি বলবে বা কি করবে বুঝতে পারছেনা। প্রচন্ড দ্বিধাদন্ডে ভুগছে। রাত সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে এলো,আদুরী গলায় বললো,,
“” সন্ধ্যা,খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস?? দেখ আমি তোর রাত ভাইয়া,আমাকে কেন ভয় পাচ্ছিস??””
রাত কথার ফাঁকে নিজের একটা হাত সন্ধ্যার পিঠে রাখতে গেলে সন্ধ্যা সরে গেলো। তিয়ামতীর পেছনে নিজেকে লুকাচ্ছে। রাত ব্যথিত কন্ঠে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,,
“” মা,ওর কি হয়েছে? এমন করছে কেন?””
ছেলের প্রশ্নের উত্তরে তিয়ামতী কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছেননা। সন্ধ্যার এমন অদ্ভুত আচরনে সে নিজেই বিমোহিত। মায়ের দিক থেকে উত্তর না পেয়ে রাত সন্ধ্যার কাছে যেতে চাইলে সন্ধ্যা দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
~~
ড্রয়িংরুমের ত্রিধারে বিন্যাসিত সোফার ঠিক মাঝখানে বসেছে সিজাত। মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে। বাতাসে মাথার চুল এলোমেলো হলেও সিজাতের মনে হচ্ছে এই ফ্যানের বাতাস নেই। থাকলে সে কেন ঘেমে উঠেছে?? রিমা চা-বিস্কুট সাজানো ট্রেটা সেন্ট্রাল টেবিলে রাখলেন। মুখে ভদ্রতাসূচক হাঁসি নিয়ে বললেন,,
“” এবারও কি খালি পেটে ফিরে যাবে?””
রিমার প্রশ্নে সিজাত মিষ্টি হাঁসি উপহার দিলেন,মুখে কিছু বললেননা। সামনের ধোয়া উঠা চায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
“”দেখা যাক!””
রিমা আর কথা বাড়ালোনা। ফ্যানটা অফ করে দিয়ে এসিটা চালু করে দিলো।
প্রায় দশবছরবাদে এ বাড়িতে পা রেখেছে সিজাত। বাড়িটা এখনো সেই আগের মতোই আছে,শুধু দু একটা আসবাবপত্র আনাচে-কানাচে জায়গা করে নিয়েছে। এ বাড়িতে সে যতবারই এসেছে তা তিয়ামতীর জন্য। এবারও তাই। তবে আগেরবারের আর্জির সাথে এবারের আর্জির কোনো মিল নেই। তবুও কি তিয়ামতী তার সাথে দেখা করবেনা?? মানুষের জীবনে এমন কিছু স্মৃতি থাকে যা সবসময় স্মৃতিচারণ হয়না,কিন্তু যখন হয় তখন ভুল করে সুই ফুটে রক্ত ঝরার মতো ব্যথা হয়। তিয়ামতীও তার জীবনের এমনি একটি স্মৃতি। রিদের জায়গাটা সে দখলের অনেক চেষ্টা করেছে,কিন্তু তিয়ামতীর সামনে তা তুলে ধরতেও পারেনি। প্রত্যেকবারই সে খালি হাতে ফিরে গিয়েছে। চোখের দেখাটাও সে পায়নি। এবারও কি পাবেনা?? এখন তো আর সেই পুরোনো ইচ্ছে নিয়ে আসেনি,আসবেইবা কিভাবে? এখন তার জীবনটা অন্যকারো জীবনের সাথে বেধে ফেলেছে। ৮ বছরের ফুটফুটে মেয়েও আছে। বড় আদরের!
~~
খাবার টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে সিজাতের কাছে এলো রিমা। তিয়ামতীকে এতোবার করে ডেকে এলো কোনো সাড়া শব্দটাও দেয়নি। এমন একরোখে মেয়েটা যে তার বান্ধুবী কি করে হলো তাই ভেবে পাচ্ছেনা রিমা। মানুষটা প্রত্যেকবারই এসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে ফেরত যায়। একটাবার দেখা করলে কি এমন হয়?? ভদ্রতা বলতেও তো কিছু আছে। রিমা মনে মনে খানিকটা বেরসিক কথা আউড়িয়ে সিজাতের উদ্দেশ্যে বললেন,,
“” ভাইয়া,এবার কি খালি পেটটা ভরা পেট করা যায় না?? আপনাকে খাওয়াতে পারলে মনটা বেশ শান্ত লাগতো। আপনি তো রিদ ভাইয়ার খুব কাছের লোক ছিলেন!””
“” তিয়ামতী এবারও দোর খোলেনি?””
“” না।””
সিজাত সোফা ছেড়ে বেশ স্বাভাবিকতার বিদায় জানিয়ে সদর দরজার দিকে পা বাড়িয়েছে। তিয়ামতীর সাথে তার এমন কোনো খারাপ ঘটনা নেই যে যার জন্য সে মুখদর্শন করতে পারবেনা। একজন বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়া অন্যায়?? হয়তো! কিন্তু আমিতো কোনো মায়া-দয়া থেকে বিয়ে করতে চায়নি,ভালোবাসা থেকে করতে চেয়েছিলাম। সেটা আর কেউ বুঝোক বা না বুঝোক তিয়ামতীর তো বুঝা উচিত ছিলো! সিজাত দরজা ছেড়ে বাইরে এক পা রেখে আবার পিছু ঘুরলো,,,
“” ক্ষুধাটা বোধ হয় বেশিই লেগেছে,বোন প্লেট সাজা আজ তোর হাতের নাস্তাটা খেয়েই যাবো।””
~~
রাত হন্তদন্ত হয়ে মায়ের রুমে ঢুকলো। সন্ধ্যা আর তিয়ামতী বিছানায় বসে গল্পে মেতে আছে। রাত বিরক্ত নিয়ে উচু স্বরে আম্মু বলে ডাক দিলো। সাথে সাথে সন্ধ্যা তিয়ামতীর পেছনে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে রইলো।
“” দেখছিস মেয়েটা তোকে দেখে ভয় পাচ্ছে,তাও তোর গলার স্বর নিচু হচ্ছেনা?””
রাত মায়ের প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন তুললো,,
“” তুমি সিজাত আংকেলের সাথে দেখা করলেনা কেন?? উনি আমার এক অনুরোধে এখানে এসে হাজির হয়েছিলেন।””
“” তুই এখান থেকে যাতো। আমার এখন তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।””
“”তুমি আমার কথা শুনবেনা?””
“” আমার এখন তোর কথা শুনে চলতে হবে?””
“” যদি বলি হ্যা!””
“” তুই আবার আমার সাথে তর্ক করছিস?””
রাত চোখ বন্ধ করে গরম মেজাজ ঠান্ডা করে বললো,,
“” তোমার জন্য না আমার জন্য,রাজী হওনা আম্মু,প্লিজ! তোমার দিকে আমি তাকাতে পারছিনা। তোমার শুকনো মুখটা দেখলে আমার বুকটা শূন্যতায় হু হু করে উঠে।””
ছেলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে তিয়ামতী কঠিন সুরে বললো,,
“” আমি কোথাও যাবোনা।””
~~
অন্ধকার রুমে ডুবে আছে রাত। বিদু্্যৎ নেই তা নয়। সে ইচ্ছে করেই রুমের আলো নিভিয়ে রেখেছে। আজ সে এক অনিচ্ছা কাজ করবে তাই। অন্ধকারে হাতরিয়ে টেবিলের চেয়ারটা টেনে নিলো। চেয়ারে বসে মোম জ্বালিয়ে সংক্ষিপ্ত আলো তৈরী করেছে। পাশেই পড়ে থাকা সাদা কাগজ আর কলমটা নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। মনের ভেতর চলতে থাকা হাজারও কথা থেকে গুটিকয়েক কথা সাজিয়ে চোখ মেললো। পাঁচ আঙুলে সাদা কাগজের উপর কলমটা চেপে ধরে লিখতে শুরু করেছে,,
**আমার আম্মুর স্বামী,কেমন আছেন? নিশ্চয় খুব ভালো আছেন? থাকবেননা কেন আপনার সব দায়িত্বতো আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আপনার বউ মানে আমার মা সে তো আমার কথা শুনছেনা। তাহলে আমি কি করে আমার দায়িত্ব পালন করবো বলুন তো?? আমি আর আপনার বউকে সামলাতে পারছিনা। আপনার যদি আমার উপর একটুও মায়া হয় তাহলে আমাকে এই দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিন।
ইতি
আপনার বউয়ের নিরুপায় ছেলে
চলবে