ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (২৬)
রোকসানা রাহমান
সন্ধ্যা মুখ বাকিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। রাত ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছু সময় পার করলো। কাধে হাত রেখে ওকে সোজা করে শোয়ালো। সন্ধ্যা কপাল কুঁচকে বিরক্ত প্রকাশ করতেই রাত ধপ করে ওর উপর শুয়ে পড়লো। সন্ধ্যা সুক্ষ আর্তনাদে বললো,,
“” ও মা গো,তোমার মেয়েকে মেরে ফেললো গো। তোমার কি জায়গার অভাব পড়েছে,রাত ভাইয়া?””
সন্ধ্যা বেশ বল প্রয়োগ করেও রাতকে সরাতে পারছেনা। রাতের দিক থেকেও কোনো নড়নচড়ন নেই। শিথীলভাবে শুয়ে আছে। সন্ধ্যা আচমকা সন্দেহ নিয়ে চিৎকার করে উঠলো,,
“” রাত ভাইয়া,তুমি কি অজ্ঞান হয়ে গেলে? হলে তো হলে,আমার উপরে এসেই অজ্ঞান হতে হলো? এখন তো তোমার ভারে আমি নিজেও অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি।””
সন্ধ্যার চিৎকারেও রাতের দিক থেকে কোনো সাড়া নেই। নিশ্বাস আছে তো মানুষটার?? সন্ধ্যার মনে জড়ো হচ্ছে ভয়েরা। সত্যি সত্যি অজ্ঞান হলো নাকি? কিন্তু কেন? অজ্ঞান হওয়ার মতো তো তেমন কিছুই ঘটেনি। তাহলে অতি সুখে অজ্ঞান?? হতেও পারে। অতি শোকে যদি পাথর হয় তাহলে অতি সুখে অজ্ঞান হবেনা কেন?? গুরুজনদের প্রবাদবাক্যে এই প্রবাদটাও রাখা উচিত ছিলো। সন্ধ্যা ছোট্ট আফসোসের নিশ্বাস ছাড়লো।
কিছুক্ষণের জন্য ভাবনায় হারিয়ে গেলেও পরক্ষণেই সে বাস্তবে ফিরে এলো। রাতের দুবাহু চেপে ধরে চিৎকার করে ডাকলো,,
“” ও রাত ভাইয়া। উঠোনা৷ তোমার জ্ঞান ফিরাতে হলেও তো তোমাকে সরতে হবে। তুমি না সরলে আমি পানিটা আনবো কিভাবে??””
সন্ধ্যা নিজেদের রুমের বন্ধ দরজাটার দিকে চেয়ে আছে। ইশ! কেন যে সে দরজাটা লাগিয়ে নিয়েছিলো। এখন তো কাউকে ডাকলেও শুনবেনা। যদি শুনেও ভেতরে আসবে কিভাবে? দরজাটা তো তাকেই খুলতে হবে। সন্ধ্যা মুখটা আধার করে আরেকদফা চেচিয়ে উঠলো। রাতের কানের দ্বারে। এবারও রাত শীথিল তবে ডান হাতটা নড়লো। উড়ে গিয়ে পড়লো সন্ধ্যার মুখে। মুখ বন্ধ করে বিরক্তসুরে বললো,,
“” দেখছিস তো ঘুমাচ্ছি,তাও কেন ডিস্টার্ভ করছিস? একটু চুপ করে থাকতে পারিসনা? আমার কান ঝালাপালা করে ফেলেছিস। আমাকে কি তোর বয়রা মনে হয়? আর একটা চিৎকারও যেন না হয়। আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাবো। তুইও ঘুমা।””
রাত নিজের বিরক্ত,ঝাড়ি,আদেশ,অনুরোধ সব একসাথে ঢেলে দিলো সন্ধ্যার উপর। পুনরায় আগের ন্যায় নিরব। হাতটা তখনো সন্ধ্যার মুখেই পড়ে আছে। সন্ধ্যা অবাক। এমনভাবে চেয়ে আছে যেন রাত আরোকিছু বলবে আর ও আরেকটু অবাকের মধ্যে বিচরন করবে। কিন্তু রাত তা করেনি। সে আর একটা বুলিও মুখে ফুটাইনি। গভীর নিশ্বাসে চোখ বন্ধ তার।
রাতের কার্যক্রম সন্ধ্যা হজম করতে পারলোনা। ঝটকা দিয়ে রাতের হাত সরিয়ে নিলো। মুক্তমুখে গরম ফুলকি নিয়ে বললো,,
“” আমাকে ভর্তা বানিয়ে তোমার ঘুমানো হচ্ছে? জেগে থেকে এমন অভিনয়? শরীরের উপর অর্ধেক পাহাড়ের বোঝা দিয়ে বলছো ঘুমাতে? আমার সাথে মজা করা? এখনি সরবে নাহলে কিন্তু নিচে ফেলে দিবো তেমায়!””
সন্ধ্যার কথায় রাত মুচকি হাসলো। নিজের হাতজোড়া দিয়ে ওর কোমড় পেচিয়ে ধরলো। বুকের খাদে গভীরভাবে নাক ঠেকিয়ে হামি টানলো। আধোবুলিতে বললো,,
“” পারলে সরা!””
সন্ধ্যা নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়েও রাতকে সরাতে পারছেনা। এতো চেষ্টা,এতো চিৎকার,এতো বকবক যেন রাতের গা’য়ে পড়ছেনা। সে গভীরঘুমে আচ্ছন্ন। ভারী নিশ্বাসের শব্দেই বুঝা যাচ্ছে ঘুমের দেশের কতটা গভীরে পৌছে গিয়েছে। কোনো এক রঙিন স্বপ্নে ডুব দিয়েছে। সাধারণত,গভীর ঘুমে মানুষের শরীর অসার হয়ে থাকে। হাত-পাসহ পুরো শরীর অবশ এবং দুর্বলতায় ভুগে। ফলে চাইলে একজন ঘুমের মানুষকে নাড়ানো যায়। কিন্তু রাতের মধ্যে এর একটাও ঘটলো না। সে যত ঘুমের দেশে তলিয়ে যাচ্ছে তত সন্ধ্যাকে শক্তভাবে জড়িয়ে নিচ্ছে। সন্ধ্যার মনে হলো কোনো সাপের পেটের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে৷ গরমে ঘেমে নেয়ে যাওয়া উপক্রম। এভাবে কি ঘুমানো যায়?? সন্ধ্যার কান্না পেয়ে গেলো। এইটুকু মেয়ে হয়ে সে এতবড় একটা বুড়োকে বিয়ে করলো। কোথায় আদর-সোহাগ করবে তা না,শুধু কষ্ট দিচ্ছে। সন্ধ্যা ঝরঝরে পড়া চোখের পানি নিয়ে বিড়বিড় করলো,বিয়ে মানে কষ্ট,কষ্ট আকাশ সমান কষ্ট!
~~
সারারাত নির্ঘুমে রাত কাটালো সন্ধ্যা। মেজাজ পুরোই খিটখিটে। একেতো তার ঘুম হয়নি তার উপর পুরো শরীরে ব্যথারা বিনবিন করছে। মনে হচ্ছে হাত-পা নাড়ানোই যাচ্ছেনা। যেখানে শরীরের কোনো অংশ কিছু সময়ের জন্য একভাবে রাখা হলে ঝিনঝিন ধরে,সেখানে সে সারাটারাত একভাবে কাটিয়েছে তার উপর একটা আটার বস্তা,না একটা বললে ভুল হবে একশ টনের আটার বস্তা বয়েছে
“” কিরে,খাচ্ছিস না কেন?””
মায়ের ঝাড়িতে সন্ধ্যার মেজাজ আরো খিটখিটে হয়ে গেলো। মুখে কিছু না বলে খাবার ছেড়ে উঠে পড়লো। পা চালিয়ে চলে গিয়েও আবার উল্টো পথে ফিরে এলো। রাতের প্লেটে পানি ঢেলে দিলো। সন্ধ্যার আকস্মিক কান্ডে সকলে চমকে গেলেও রাতের কিছু হলোনা। সে মুখভর্তি হাসি নিয়ে বললো,,
“” আম্মু,ভেজা পরোটা খেতে হেব্বি টেস্টি। কেমন একটা রসালো রসালো স্বাদ। তোমরাও ট্রাই করতে পারো।””
রাত নিজের রসালো বাক্য শেষ করে এক টুকরো পরোটা মুখে পুড়লো।
~~
রাত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। শার্টের বোতাম লাগিয়ে গলায় টাই বাধলো,হাতের আঙুলের সাহায্যে চুলটা ঠিক করলো। গায়ে সুগন্ধী মেখে নিলো।
সন্ধ্যা রাগ আর চোখে গাঢ় ঘুম নিয়ে ঝিমুচ্ছিলো ফাঁকে ফাঁকে রাতের সাজ দেখছে। রাত পকেটে মানিব্যাগটা ঢুকিয়ে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বেরোবে তখনি সন্ধ্যা রাস্তা আটকালো।
“” কিছু বলবি?””
সন্ধ্যা চুপ। রাতের মুখের দিকে গভীর দৃষ্টি। এমনভাব যেন রাত ওর চোখের ভাষা পড়ে নেক। আজ চোখের ভাষায় মনের কথা প্রকাশ পাক। সবসময় কেন কন্ঠের সুরে প্রকাশ পাবে?? মাঝে মাঝে কি চোখ কথা বলতে পারেনা??
“” কিছু না বললে সামনে দাড়ালি কেন? আমার লেট হচ্ছে সন্ধ্যা। কিছু লাগবে? লাগলে বল আসার সময় নিয়ে আসবো।””
রাতের এমন কথায় সন্ধ্যার গাঢ় দৃষ্টি হালকা হয়ে এলো। কি চাইছে সে আর কি পাচ্ছে। না দুরে সরিয়ে দিচ্ছে না কাছে টেনে নিচ্ছে। যেকোনো একটা হওয়া উচিত। এখন কি আমাকে মুখ ফুটে বলতে হবে,মুভির মতো তুমিও আমায় একটা চুমু খেয়ে যাও।
রাতের ঘড়ি পড়া শেষ। বের হওয়ার পুর্ন প্রস্তুতি নিয়ে সন্ধ্যার ডানগালে হাত রাখলো। ঠোঁটে স্মিত হাসি নিয়ে বললো,,
“” মনে পড়ছেনা? ভুলে গিয়েছিস? এতে মন খারাপের কি আছে? যখন মনে পড়বে তখন কল করে নিস।””
সন্ধ্যার আগের রাগটা এবার ঝাঝ থেকে তেতোতে রুপ নিলো। মুখভার করে সরে দাড়ালো। রাত পা ফেলে চলে যাচ্ছে। সন্ধ্যা উল্টো ঘুরে থেকেই বললো,,
“” তোমার অফিসের উপর ঠাডা করুক!””
রাত কি শুনলো সন্ধ্যার বিড়বিড়ানি? অবশ্যই শুনেছে নাহলে ঠোঁট টিপে হাসছে কেন?
~~
ডিনার শেষ হয়েছে প্রায় ঘন্টাখানিক আগে। রিদান আধশোয়া আছে। হাতে কবিতার বই। কোনোকালেই সাহিত্যের প্রতি তার আকর্ষন ছিলোনা। তবে তার একাকিত্বের সময়ের অনেকটা সময় কাটিয়েছে এই বইয়ের মাধ্যমে। ভালো লাগা থেকে নয়,ভালো লাগাতে তার স্যার তার হাতে বেশ কয়েকটি বই তুলে দিয়েছিলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া করতে করতে একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অভ্যাসটা এতোটাই ঝুকে বসেছে যে রাতে ঘুমানোর আগে বইয়ে চোখ না বুলালে তার ঘুম আসেনা। সেই অভ্যাস থেকেই সে এখন বই নিয়েছিলো। কিন্তু চোখটা যে তার বইয়ের কালো রঙের অক্ষরগুলোতে আটকাচ্ছেনা। বারবার অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। তার সহধর্মিণী দিকে! অযত্নে পড়ে থাকা চুলগুলোকে যত্নে আনায় ব্যস্ত সে। কালো চুলের মাঝে হঠাৎ হঠাৎ সাদা চুলের লুকোচুড়িটা বেশ অপভোগ করছে রিদ। রিদান বইয়ের পাতা বন্ধ করে মনোকন্ঠে বললো,তোকে আর দরকার নেই আমার ভালোলাগার সঙ্গিটি এখন আমার সামনে। চাইলেই যখন তখন নেশায় ডুব দিতে পারি। এখন থেকে তোর ছুটি।
রিদান হালকা শব্দে বইটি পাশে রেখে নিজের অর্ধাঙ্গিনীর কাছে এগুলো। নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,,
“” তোর অযত্নে পড়ে থাকা জিনিসগুলো আমার আয়ত্বে থাক। যত্ন করার দায়িত্ব আমার।””
তিয়ামতীর হাত থেকে চিরুনীটা নিয়ে ওর চুলে আঁকছে। চুলে বেনি পাকিয়ে বললো,,
“” আমার সেই ছোট্ট তিল তুই। চুলে পাক ধরে,চামড়ায় ভাজ পড়লেও তুই আমার সেই ছোট্ট তিলই থাকবি। মানুষের বয়স বাড়লেও ভালোবাসার বাড়েনা। আমার ভালোবাসা এখনো সেই কচি রঙেই আছে। আর তার ভালোবাসার মানুষটাও!””
তিয়ামতী লজ্জায় লাল। তার রিদ ভাইয়া যে এমন মধুবাক্যও বলতে পারে তাতো তার কখনো জানা হয়নি।
রিদান তিয়ামতীকে আরো কিছু বলবে কিন্তু তখনি নজর পড়লো আয়নাতে। তিয়ামতীর কাছ থেকে সরে এসে দরজায় দাড়ালো। দরজা মেলে বললো,,
“” তুই আগে যেমন নির্দ্বিধায় মায়ের রুমে ঢুকতিস এখনো সেভাবেই ঢুকবি। মনে রাখিস,তোর দায়িত্ব তোর আমার দায়িত্ব আমার। আমি এসেছি বলে তুই তোর দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকবি তা হবেনা। যা, মাকে ঔষধ খায়িয়ে আয়।””
~~~
সন্ধ্যার মন অশান্ত সাথে হাত-পা,মেজাজ সব অশান্ত। একবার খাটে গিয়ে বসছে তো আরেকবার ধপধপ পা ফেলে হাঁটা চলা করছে। কয়েকবার বারান্দায় গিয়ে খোলা আকাঁশের সাদা চাঁদের রুপোলি আলোতে নিজেকে মাখিয়েও নিয়েছে তাতেও তার অশান্ত মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছেনা। কোনোভাবেই নিজেকে শান্ত করতে না পেরে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। মুখ ধুলো,পা ধলো,হাত ধুলো। হাত ভিজিয়ে গলা,পেট,পিঠ,ঘাড় সব মুছে নিলো। চুলটাও ভিজিয়ে আবার রুমে ঢুকলো। খাটের অপরপাশের মানুষটাকে দেখে সন্ধ্যার এবার গা জ্বলছে। ইচ্ছে করছে পানির টাংকিতে ডুবে থাকতে।
রাত খাটের শেষ সীমানায় গা এলিয়ে ফোন টিপছে। গভীর মনোযোগী। ক্ষণে ক্ষণে হেঁসে উঠছে। কিন্তু হাঁসির কারণটা ফোনের জন্য না। সন্ধ্যার কান্ডে। তবে তা সন্ধ্যাকে বুঝতে দিলে তো। সে যে আড়চোখে সন্ধ্যার চালিয়ে যাওয়া খুটিনাটি সব দেখছে তা সন্ধ্যা আন্দাজও করতে পারছেনা। করবে কিভাবে? মেজাজ এমন তিরিক্ষে থাকলে পরিষ্কার জিনিসও ধোয়াশা হয়ে যায়।
সন্ধ্যা রাগ কমাতে গোসলও করে ফেলেছে। এতেও সে রাতের দৃষ্টি ফোন থেকে সরাতে ব্যর্থ। রাগে অভিমানে নিজে ওর পাশে গিয়ে বসলো। তার হাতেও ফোন। ফোনে একটু মনোযোগ দিতেই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধী চাপলো। রাতের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,,
“” রাত ভাইয়া, দেখ আবির আমাকে নিয়ে কি স্ট্যাটাস দিয়েছে। আমায় কত্ত ভালো…””
“” টানটান হয়ে শুয়ে পড়তো।””
সন্ধ্যা নিজের বাক্যের শেষাংশ গিলে নিয়ে বললো,,
“” মানে?””
রাত আর কোনো কথা খরচ করলোনা। সন্ধ্যার দু’পা নিচের দিকে টান দিতেই ও আধশোয়া থেকে পুরো শোয়া হয়ে গেলো। সন্ধ্যাকে কি হচ্ছে তা বুঝার সময়টুকু না দিয়ে ওর উপর নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিলো। আগের রাতের মতো দ্বিতীয়বারে নয়,প্রথমবারেই ওর কোমড় জড়িয়ে নিয়েছে। রাত ভারকন্ঠে বললো,,
“” গুড নাইট!””
রাতের এমন অদ্ভুত আর বিরক্ত কান্ডে সন্ধ্যার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। প্রচন্ড ঝাঝ ছেড়ে খেকিয়ে উঠলো,,
“” সমস্যা কি তোমার? নিজের যা ইচ্ছে হচ্ছে তাই করে যাচ্ছো। সরো বলছি। আদর সোহাগের নাম নাই,আবার কোনো নিস্তারও নাই। তোমার ঘুম পেলে ঘুৃমাও। আমাকে জ্বালাচ্ছো কেন?””
রাত মাথা উচু করে সন্ধ্যার রাগী মুখটার দিকে চেয়ে রইলো।
সন্ধ্যা কপাল কুঁচকে বললো,,
“” তুমি তো রীতিমতো আমার উপর অত্যাচার করছো। অন্যের স্বামীরা বউকে পিটায় তাই তার শরীর ব্যথা করে আর তুমি না পিটিয়েও আমার শরীরে ব্যাথা বানিয়ে দিচ্ছো! আমার ঘুম কেড়ে নিচ্ছো।””
“” তুই যে আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছিলি তার কি হবে? মাত্র একরাত ঘুমাতে না পেরে আমার উপর রাগ ঝাড়ছিস। আর আমি ১৭টা রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছি।””
সন্ধ্যার বিস্ময়মিশ্রিত প্রশ্ন,,
“” আমি কখন তোমার ঘুম কেড়ে নিলাম?””
“” যে রাতে সায়নকে বিয়ে করবি বলে নেচে বেড়াচ্ছিলি সে রাত থেকে আমার প্রতিটি রাত নির্ঘুৃমে কেটেছে। আমি তো না জেনে তোর সাথে অমন করেছিলাম কিন্তু তুই জেনেবুঝে করেছিস। কিভাবে পারলি এতোগুলো রাত আমাকে ছাড়া কাটাতে? আমি তো পারিনি!””
“” তুমি প্রতিশোধ নিচ্ছো?””
“” না। তোকে বুঝাচ্ছি।””
“” আমি তো তোমাকে জেগে থাকতে বলিনি। তুমি জেগে ছিলে সেটা তোমার দোষ। তোমার দোষের শাস্তি আমি কেন পাবো?””
রাত সন্ধ্যার বুকে মুখ গুজে বললো,,
“” আমিও তো তোকে জেগে থাকতে বলিনি। তাহলে জেগে আছিস কেন?””
“” তুমি তো ঘুমাতেও দিচ্ছোনা।””
“” দিবোও না।””
সন্ধ্যা কাদোকাদো গলায় বললো,,
“” আমার খুব ঘুমাতে ইচ্ছে করছে।””
“” আরো ১৫ টা রাত নির্ঘুমে কাটা তারপর ২৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটাস।””
“” এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা। আমাকে অবলা পেয়ে অত্যাচার করছো। আমি তোমার নামে কেস করবো।””
“” কর।””
“” তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবো।””
“” আচ্ছা।””
“” তোমাকে মোটা মোটা ডান্ডার বারি খাওয়াবো।””
“” ওকে।””
সন্ধ্যাস ঝাড়ি তুলে বললো,,
“” রাত ভাইয়া!””
“”শুনছি।””
“” আমি ঘুমাবো।””
“” ঘুমা।””
“” এভাবে কি ঘুমানো যায়? আমি কাত হয়ে শুবো,গায়ে চাদর টানবো তারপর ঘুমাবো।””
রাত আবার মুখ উচু করলো। বা’চোখটা টিপে বললো,,
“” আজ থেকে তুই আমার বিছানা আমি তোর চাদর। নে এবার ঘুমা!””
সন্ধ্যা রাগে দুঃখে রাতের চুল টেনে ছিড়ে ফেললো,পিঠে নখের দাগ বসিয়ে দিলো,চিৎকার করে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিলো। তবুও রাতের হাতের বাধন থেকে ছুটতে পারলোনা।
~~
এই নিয়ে ন’বার মায়ের রুমে ঢুকলো রাত। তিয়ামতী আর রিদান সন্দেহ চোখে তাকালো। রিমা এবার প্রশ্ন করেই ফেললো,,
“” তোর কি পেটে অসুখ করেছে রাত? তখন থেকে রুমে ঢুকছিস আর বেরোচ্ছিস। মুখে কোনো কথা নাই। পেটে অসুখ হলে তো বাথরুমে ঢুকবি আর বেরোবি। কিন্তু তা না করে এখানে ঢুকছিস আর বেরোচ্ছিস। দেখছিস না আমরা লুডু খেলছি?””
ফুপির কথায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো সে। তার কি দোষ? তার বিছানা তো রুমে না থেকে মামির কোলে ঘাপটি মেরে বসে আছে। খেলায় তো সে নেই তবুও কেন তার এখানে পড়ে থাকতে হচ্ছে?? সে কি বুঝছেনা তার চাদর তার জন্যই মনে অসুখ নিয়ে ঢুকছে আর বেরোচ্ছে??
ঘন্টাখানেক হবে তিয়ামতীর রুমে লুডু খেলার আসর জমেছে। স্বামী VS বউ। লুডুর কোর্ট যেহেতু চারজনের জন্য বরাদ্দ সেহেতু সন্ধ্যা আর রাত বাদ পড়েছে। তবে বাদ পড়ার আরেকটা কারন ছিলো,রাত নিজ মুখে খেলতে অস্বীকার করেছিলো।
রাতের দিক থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে রিমা আবার বললো,,
“” তুই না বললি কাল সকাল সকাল বের হতে হবে? তাহলে এখনো এখানে কি করছিস? যা ঘুমোতে যা।””
ফুপির কড়া গলা আর আদেশে রাত অনিচ্ছার পা চালিয়ে বেরিয়ে এলো। তবে বিছানার ধারে এসে আদেশ পালনে ব্যর্থ। গুটিগুটি পা ফেলে সে আবার মায়ের রুমে হাজির। ফুপিকে প্রশ্ন করতে সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলে উঠলো,,
“” আম্মু,আমি কিন্তু কাল অনেক সকালে অফিসে যাবো।””
তিয়ামতী ছেলের দিকে তাকালো। তাকে দমিয়ে রেখে রিমার পাল্টা প্রশ্ন,,
“” এক কথা কতবার বলবি? তোর কি মনে হয় বাংলাদেশে শুধু তুই একাই সকালে উঠিস যে সবাইকে বলে বলে বেড়াচ্ছিস। খেলার মজাটাই নষ্ট করে দিচ্ছিস।””
রাত মায়ের দিকে করুন দৃষ্টি ফেললো। ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে সন্ধ্যাকে বললো,,
“” অনেক রাত হয়েছে সন্ধ্যা। যা ঘুমিয়ে পড়।””
“”আমার এখন ঘুম পায়নি। পরে ঘুমাবো।””
তিয়ামতী সন্ধ্যাকে নিজের থেকে সরালো। কন্ঠস্বর শক্ত করে বললো,,
“” এখনি ঘুমাবি। আর তুই তো খেলছিস ও না তাহলে এখানে তোর কাজ কি?””
“” আমি খেলা দেখবো।””
“” সন্ধ্যা,আমি কিন্তু যেতে বলেছি।””
সন্ধ্যা এবার জোরালোভাবে বললো,,
“” ঘুমাবোনা আমি। তোমার ছেলের সাথে তো কখনোই না। তোমার ছেলে কি আমাকে ঘুমাতে দেয়? সারারাত জাগিয়ে রাখে। আমার উপর অত্যাচার করে। রাতে তোমার ছেলের জন্য ঘুৃমাতে পারিনা। দিনের বেলা ব্যথার জন্য ঘুৃমাতে পারিনা। আমি থানায় যাবো। আগে তোমার ছেলের নামে কেস করবো তারপর শান্তিতে ঘুমাবো।””
সন্ধ্যা একদমে সবটা বলে যখন থামলো তখন পুরো পরিবেশ থমকিত। সকলের চক্ষু তার দিকে। সিকান্দার সাহেবের হাতে গুটি। ঘর গুনছিলেন। মেয়ের দুঃখের কথা শুনে মাঝপথেই আটকে আছেন।
রিমা বসা থেকে উঠে দাড়ালো। মেয়ের শরীর হাতরিয়ে বললো,,
“” কোথায় মেরেছে? দেখা আমাকে। দরকার হলে আমিও তোর সাথে থানায় যাবো।””
সন্ধ্যা মায়ের হাত সরিয়ে হতাশ গলায় বললো,,
“” মারলে তো দাগ পাবে আম্মু। তোমার ভাতিজা তো সারারাত আমার উপর….””
রাত সন্ধ্যার মুখ চেপে ধরেছে। কানে ফিসফিস করে বললো,,
“” মাথার বুদ্ধ কি সব পানির সাথে খেয়ে ফেলেছিস? আম্মু-আব্বু,শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সামনে এসব কি বলছিস?””
সন্ধ্যা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য রাতের হাত খামচে ধরলো। ঠিক তখনি রুম অন্ধকার। রিদান লাইটের সুইচে হাত রেখেই বললো,,
“” রুমে আলো আসার পূর্বেই তুই তোর বউকে নিয়ে বিদেয় হ!””
রাত অন্ধকারেই বাবার দিকে কৃতজ্ঞের হাঁসি দিলো। সন্ধ্যাকে কোলে তুলে নিলো।
“” রাত ভাইয়া,ছাড়ো বলছি। আমি আর একটা রাতও জেগে কাটাতে পারবোনা। তুমি আমার উপর এমন জোর করতে পারোনা!””
সন্ধ্যার বাক্যের পিঠে রাত জোরালো হাঁসি হেঁসে বললো,,
“” জোর করার অধিকারটা তো তুই আমাকে দিয়েছিস। ভুলে যাস না, বিয়ে তুই করতে চেয়েছিলি আমি না।””
~~~
সন্ধ্যার আরো কয়েকটি নির্ঘুম কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে সে জেগে জেগে নানা প্ল্যানও করে ফেলেছে। প্রতিরাতেই সে নতুন নতুন প্ল্যান সাজায় কিভাবে রাতের হাত থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু তার কোনো পরিকল্পনায় সফল হয়না। শুরু হওয়ার আগেই রাত ধরে ফেলে। সন্ধ্যার একের পর এক পরিকল্পনার বিফলের ফলে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাতকে খুন করবে। কিভাবে করবে তাও ঠিক করে ফেলেছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই মনে পড়লো যদি তার হুট করে রাত ভাইয়ার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে,ছুতে ইচ্ছে করে তখন রাত ভাইয়াকে কোথায় পাবে?? এই প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ায় সন্ধ্যার আবার সব পরিকল্পনা ঘেটে গেলো।
অফিস শেষে রুমে প্রবেশ করে সন্ধ্যাকে রুমে পেলোনা রাত। চিৎকার করে ডাকতেই ওয়াশরুম থেকে উত্তর পেলো।
“” তুই এ বেলা গোসল করছিস?””
“” না,তোমাকে মারার প্ল্যান করছি।””
“” বাহ! কি দিয়ে মারবি ঠিক করলি? আর আমার লাশটা কোথায় রাখবি?””
“” তোমাকে কেন বলবো?””
“” বলবি নাতো?””
“” না।””
সাথে সাথে বাইরে থেকে সিটকিনি লাগানোর শব্দ। সন্ধ্যা পানিটা বন্ধ করে দরজা খোলার চেষ্টা করলো।
“” তুমি বাইরে থেকে লাগালে কেন?””
“” বলবোনা।””
রাত এবার লাইটটাও অফ করে দিলো। সাথে সাথে সন্ধ্যার চিৎকার,,
“” বলবো।””
রাত দরজার পাশের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়ালো। ঠোঁটে দুষ্টু হাঁসি।
“” এখন বললেও খুলবোনা।””
“” কেন?””
“” তুই খুলবি বলে।””
“” আমি তো খোলেই দাড়িয়ে আছি।””
“” উহু,দরজা নয়,অন্য কিছু।””
“” কি?””
“” বড় কাপড় খোলে ফেল।””
সন্ধ্যার কন্ঠ নিভু হয়ে এলো।
“” বড় কাপড় মানে?””
“” তোর ভাষায় বললাম তাও বুঝিসনি? মুভিতে দেখিসনি বড় কাপড় ছেড়ে ছোট কাপড় পরে সুইমিংপুল থেকে উঠে আসে। তুই নাহয় ওয়াশরুম থেকে বের হবি।””
“” ছি! তুমি কি লুচো রাত ভাইয়া। পৃথিবীতে যত লুচো মানুষ আছে তুমি সবার থেকে নিকৃষ্ট। তোমাকে বিয়ে করাই ভুল হয়েছে।””
“” তাহলে তালাক দিয়ে দে,তারপর ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখবি,,,পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট লুচো বর হওয়ায় আমি ওয়াশরুমে অর্ধেক গোসল করা অবস্থায়,স্বামীকে তিন তালাক দিলাম,,, পোস্ট আপলোড হওয়ার সাথে সাথে দেখবি,তোর তথাকথিত আবির,সায়ন,রবিন,সাজ্জাদ সকলে হাহা রিয়েক্ট নিয়ে তোর সামনে হাজির!””
চলবে