ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (২৭)
রোকসানা রাহমান
রাত দরজার পাশের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়ালো। ঠোঁটে দুষ্টু হাঁসি।
“” এখন বললেও খুলবোনা।””
“” কেন?””
“” তুই খুলবি বলে।””
“” আমি তো খোলেই দাড়িয়ে আছি।””
“” উহু,দরজা নয়,অন্য কিছু।””
“” কি?””
“” বড় কাপড় খোলে ফেল।””
সন্ধ্যার কন্ঠ নিভু হয়ে এলো।
“” বড় কাপড় মানে?””
“” তোর ভাষায় বললাম তাও বুঝিসনি? মুভিতে দেখিসনি বড় কাপড় ছেড়ে ছোট কাপড় পরে সুইমিংপুল থেকে উঠে আসে। তুই নাহয় ওয়াশরুম থেকে বের হবি।””
“” ছি! তুমি কি লুচো রাত ভাইয়া। পৃথিবীতে যত লুচো মানুষ আছে তুমি সবার থেকে নিকৃষ্ট। তোমাকে বিয়ে করাই ভুল হয়েছে।””
“” তাহলে তালাক দিয়ে দে,তারপর ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখবি,,,পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট লুচো বর হওয়ায় আমি ওয়াশরুমে অর্ধেক গোসল করা অবস্থায়,স্বামীকে তিন তালাক দিলাম,,, পোস্ট আপলোড হওয়ার সাথে সাথে দেখবি,তোর তথাকথিত আবির,সায়ন,রবিন,সাজ্জাদ সকলে হাহা রিয়েক্ট নিয়ে তোর সামনে হাজির!””
রাত দেয়াল ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এগুলো। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীর ভিজে চিপচিপে। আজকাল গরমটা কি খুব বেশি পড়েছে? নাকি হঠাৎ মুক্ত জীবন ছেড়ে বাধা জীবনে চলে গিয়েছে বলে শরীরটা একটু বেশিই নড়ে উঠছে। ফ্রেশ হওয়া দরকার। রাত শার্টের বোতামে হাত রেখে বললো,,
“” কিরে,সারারাত কি ওয়াসরুমেই কাটাবি ঠিক করেছিস?””
“” হুম!””
সন্ধ্যার এমন বন্ধ ঠোঁটের উত্তরে রাত ওয়াশরুমের দরজার ধারে এলো। ভ্রূ সংকুচিত করে বললো,,
“” হুম মানে?””
“” তুমি তো বের হতে দিচ্ছোনা। তাহলে কি করবো? তুমি কি আসলেই আমার রাত ভাইয়া নাকি অফিস থেকে অন্য লোকের সাথে বদল হয়ে গিয়েছে?””
রাতের ক্লান্ত শরীর হঠাৎ করেই নড়ে উঠলো। শরীর ঝাকিয়ে হেঁসে উঠেছে। হাঁসির শব্দের সাথে তাল রেখে বললো,,
“” মুভি নিয়ে তোর এতো গবেষনা। সব তো আমার উপর দিয়েই যায়। আজ আমি একটু করতে চাইলাম বলে আমাকে বদল করে দিলি?””
“” হুম।””
শার্টের শেষ বোতামটা খুলতে খুলতে বললো,,
“” জলদি বের হ।””
রাত বাহিরের সিটকিনি খুলে দিয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু সন্ধ্যার বের হওয়ার নাম নেই। রাত আরো কিছু সময় অপেক্ষা করলো। ভেতর থেকে পানির তো কোনো শব্দ পাচ্ছেনা৷ নিশ্চয় গোসল শেষ। তাহলে বের হচ্ছেনা কেন? রাতের সন্দেহদৃষ্টি ভিড়িয়ে দেওয়া দরজায়। নিজে খোলে ঢুকবে কি ঢুকবেনা দোটানায় পড়ে গেছে। ঢোকার আগে আরেকবার ডেকে উঠলো। এবার ভেতর থেকে সাড়া পাচ্ছে তবে সন্ধ্যার কন্ঠের নয়। দরজা খোলে যাচ্ছে। সন্ধ্যা মাথা নিচু করে বের হয়ে আসতেই রাত ওর বোতাম খোলা শার্টের দুই অংশ দিয়ে সন্ধ্যাকে ঢেকে নিলো। নিজের মধ্যে লুকিয়ে নেওয়ার প্রবল ইচ্ছেতে ব্যস্ত। দ্রুতকন্ঠে বললো,,
“” আমি মজা করেছিলাম। তুই সত্যি ভেবে নিলি? পুরো রুমে লাইট জ্বলছে, দরজাটাও খোলা। এখন যদি কেউ চলে আসে? কি হবে ভাবতে পারছিস?””
রাত অস্থিরচিত্তে খোলা দরজায় তাকালো। কেউ আসুক বা না আসুক তবুও মন বলছে এই বুঝি কেউ চলে এলো!
সন্ধ্যা দু’হাতে রাতের গলা জড়িয়ে ধরেছে। চোখের পানির স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে ফুপিয়ে উঠলো। সন্ধ্যার চোখের নরম পানি রাতের কাধে ঠেকতেই ওর বুক কেঁপে উঠলো। আমি কি মজার ছলে কোনো অন্যায় করে ফেললাম??
এক চাপা অপরাদবোধে রাতের মন সিক্ত। হ্যা অন্যায় করে ফেলেছে। নাহলে সন্ধ্যা কাঁদছে কেন? তার বউটা তো তাকে জড়িয়ে কাঁদতে পারেনা। কিছুতেই না। রাত সন্ধ্যাকে গাঢ়ভাবে জড়িয়ে ধরলো। চোখের কোনটা তারও যে চিকচিক করছে।
“” সরিরে! আমি সত্যিই মজা করে বলেছিলাম। তুই যে আমার কথা মেনে নিবি আমি ভাবতে পারিনি। কাঁদিসনা প্লিজ। তোর চোখের পানির টুকরোগুলো আমার বুকে বিধছে,ধারালো হয়ে বিধছে।””
রাতের কন্ঠ পেয়ে সন্ধ্যার কান্নার গতি কমার বদলে বেড়ে যাচ্ছে। ওর ঘামের শরীরটাকে আজ সে চোখের পানিতে ধুয়ে দিবে। পবিত্র পানির পবিত্র গোসল!
সন্ধ্যার ফুপানিতে রাতের ভেতরটা বিধ্বস্ত। ওর চোখের পানি কাঁধ বেয়ে খোলা বক্ষঃস্থলে নেমে এসেছে। রাত নিজের গাঢ় ছোয়া হালকা করে বললো,,
“” তুই তো ভারি লোভি মেয়ে রে সন্ধ্যা। আমি একটু ভালোবাসা দিচ্ছি বলে তুই আরো ভালোবাসা চাচ্ছিস। সামান্য অন্যায়ের জন্য অসামান্য শাস্তি? শুধু বড় কাপড়টাই তো খুলতে বলেছি আর তো কিছু নয়। এমনও তো নয় যে আমি কোনো পরপুরুষ! তাও এতো? আমার তো এখন মনে হচ্ছে তোকে বিয়ে করাই ভুল হয়েছে। এমন লোভি বউ থাকার চেয়ে তালাক নেওয়াই ভালো। দেখি তালাক টা এবার দিয়ে দে!””
সন্ধ্যা রাতের গলা থেকে হাত সরালো। ভেজা চোখের গরম চাহনি ঢেলে দিয়ে বললো,,
“” তুমি একটা পচা,বেশি পচা,অনেক পচা,মরা চিকার মতো পচা। তুমি আমায় একটু ও ভালোবাসোনা। তোমার সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। আই হেট ইউ,হেট ইউ,বেশি বেশি হেট ইউ!””
“” এখনো তো লাভ ইউ টু বললাম না আবার হেট ইউ? দুটো একসাথে বলবো? নাকি একটা একটা করে? আচ্ছা কোনটা আগে বলবো বল তো!””
রাতের তাচ্ছিল্য ধ্বনিতে সন্ধ্যার রাগ তিক্ততে রুপান্তর হলো। নিজেকে ওর বাধন থেকে মুক্ত করলো। দুপায়ের বৃদ্ধাংগুলে ভর নিয়ে উচু হলো। চোখদুটো বড়বড় করলো। ঠোঁট উল্টিয়ে আহ্লাদী সুর,,,
“” তুমি আমায় ঠোঁট কামড়ানো চুমু দাওনি। ছয় কাপড় খুলতে দাওনি। কথা দিয়ে কথা রাখোনি,আমার মন ভেঙে দিয়েছো। তোমার সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নাই৷ আমি তোমার নামে কেস করবো। কঠিন কেস। গলায় দড়ি লাগিয়ে টানতে টানতে হাজতে পুরবে। বাসি,পচা তেলাপোকা মাখানো ভাত খাওয়াবে,চুল মেশানো শক্ত রুটি খাওয়াবে। খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াবে। পেট ফুটো করে খাওয়াবে হুম!””
রাতও পায়ের বৃদ্ধাংগুলে ভর দিয়ে দাড়ালো। দুজনের মধ্যে উচুনিচু ভাবটা আবার আগের ন্যায় সমান্তরাল করলো। দুই ভ্রূ নাচিয়ে বললো,,
“” আমি গেলে কিন্তু তোকেও যেতে হবে। আমি যা খাবো তোকেও তা খেতে হবে। অর্ধাঙ্গিনী তুই আমার। যা হবে সমান ভাগ পাবি।””
সন্ধ্যা ড্রেসিং টেবিলের সামনে পড়ে থাকা গোলাকার মুখদ্বয়ের টুলটা রাতের সামনে এনে রাখলো। ওটাতে উঠে দাড়ালো। এবার রাতের থেকে লম্বায় ও বড়। রাতের চোখে চোখ রাখতে পারছেনা বিধায় একটু উবু হলো।
কিন্তু তালাকটা উচ্চারন করার সুযোগ পেলোনা। রাত ওর মুখ চেপে ধরে বললো,,
“” চুমুর জোয়ারে,লজ্জার আদরে,ভাসতে যদি না চাস এখনি শুদ্ধরুপীতে নিজেকে ঢাক।””
সন্ধ্যা ভ্রূ কুঁচকাতেই রাত আবার বললো,,
“” তোর বিচ্ছিরি সাজে আমার মনে বিচ্ছিরি ইচ্ছে জেগে উঠছে। কিন্তু তোর তো এখনো শাস্তি শেষ হয়নি। তাই বড় জামাটা পড়ে নে। আমি ফ্রেশ হবো। ক্ষুধা লেগেছে।””
সন্ধ্যার ভ্রূযুগলের সাথে নাক,মুখ কুচকে উঠতেই রাত ফ্রেশ হতে চলে গেলো। সন্ধ্যা মুখ বাকালো,মনে মনে গালাগাল করলো,কল্পনায় রাগের আগুনে রাতকে পুড়িয়ে নিজের জামার খোজ শুরু করেছে।
~~
নিশীথরাত্রির শেষ প্রহর। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তিয়ামতী। ইদানিং সে গলা শুকিয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠেনা। ভয়ে ঘুম ভেঙে যায়না। কাউকে না পাওয়ার ব্যর্থরা বুক ফাটিয়ে চিৎকার করেনা। তার বেশ ভালো ঘুম হয়। রিদের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলেই ঘুম চলে আসে। আবার চোখ খুললেই দেখে নীল আকাশে সোনালী রোদের হাঁসি। প্রাপ্তির হাঁসি,তৃপ্তির হাঁসি।
আজও সে এক রঙিন হাঁসি দেখার ইচ্ছে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো। কিন্তু তা আর হলো কই? ঘুমের ঘোরে সে কিছু একটা টের পাচ্ছে। চোখের পাতা কাঁপছে। ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করছে। পায়ে শক্তবাধনের ব্যথা চড়ে উঠতেই তিয়ামতী ধরফরিয়ে উঠলো। পাশে রিদের জায়গাটা শূন্য। তবে কি সে এতোদিন স্বপ্ন দেখছিলো?? পুরোনো সেই হারানোর কষ্ট বুকে ধরাম করে বেজে উঠতেই রিদের কন্ঠ,,
“” খারাপ স্বপ্ন দেখছিলি নাকি?””
সামনের মানুষটিকে দেখে তিয়ামতীর চোখ ভিজে উঠেছে। সুখের পানি। চকচক পানিতে শুকনো আত্মাটাও শান্তি পেলো। কিন্তু যাকে সে মাথায় বসিয়ে রাখতেও দ্বিধা করেনা সে পায়ের কাছে কি করছে??
তিয়ামতী চোখের পানি মুছে নিয়ে ঝাপসা দৃষ্টি পরিষ্কার করলো। রিদের দিকে আবেদনী সুর তুলবে কিন্তু তুলা হলোনা। নিজের পায়ের ব্যথাটা আরেকবার কড়কে উঠতেই ওর হুশ এলো।
“” আপনি আমাল পা বাধছেন কেন?””
তিয়ামতীর প্রশ্নে রিদ বাঁকা হাসলো। এক ইঞ্চি পুরো সাদা দড়িটা ওর দুপায়ে আরেকবার ঘুরালো। বল প্রয়োগে শক্ত গিট্টু দিয়ে বললো,,
“” তোর হাতদুটো দেখি।””
তিয়ামতী সন্দেহ দৃষ্টি নিয়ে হাতদুটো এগিয়ে ধরলো। রিদ হাতদুটো টেনে পায়ের সাথে মেলালো। এবার চার হাত-পায়ে একসাথে দড়িটা পেচাতে পেচাতে বললো,,
“” আমার জন্য তুই কেঁদে কেটে মরিয়া। অথচ আমি তোর পাশে শুয়ে থাকতেও তুই দু ঘন্টার জন্য লাপাত্তা। কেন? কোথায় যাস?””
রিদের প্রশ্নে তিয়ামতী একটুও ঘাবড়ালোনা। দরাজ গলায় গুছানো উত্তর,,
“” আপনি তো জানেন আমি কোথায় যাই।””
রিদ বাধনটা টেনে দেখে নিলো ঠিক আছে নাকি। দড়ির দুধার কয়েকবার নাড়িয়ে চাড়িয়ে মনকে শান্ত করলো। তিয়ামতীর পাশে এসে বললো,,
“” তোর লজ্জা করেনা, স্বামী থাকতে পরপুরুষের গেন্জি পাল্টাস?””
“” এভাবে কেন বলছেন? ওটা তো আমাল কাজ। আপনিতো আমাকে আপনাল সেবা কলাল সুযোগটুকু দিলেননা। পাশে বসে থাকতেও দিলেননা। একটু যে দেখবো সেটাও বন্ধ কলে দিলেন। এতে আমাল মন ক্ষুধার্ত হয়ে পলেছিলো। মনটা চাইছিলো অসুস্থতায় লুগ্ন মানুষেল সেবায় নিজেকে নিয়োজিত লাখতে। এতে নিজেল মনটা একটু শান্তি পেতো। সে কালনেই তো আমাল ঐ ছোট্ট সংস্থা। যেখানে অসহায়,দুলস্থ মানুষদেল পাশে দালাতে পালি,একটু ভালো চিকিৎসা,ঔষধ,ভালো সেবিকা দিতে পালি। আমাকে তো কিছু কলতে হয়না। ঐ তো মাঝে সাজে…””
রিদ তিয়ামতীর চুল টেনে ধরলো। চোখে আগুনের বিস্ফোরক,,
“” তোর জীবনের একটা সেকেন্ডও অন্য কারো জন্য না। শুধু আমার জন্য!””
আচমকা রিদের আক্রমনে তিয়ামতীর শরীরে টান পড়েছে। যার ফলে চার হাত-পা এক গিট্টুতে বাধা থাকা সত্ত্বেও নড়ে উঠলো। এতে দড়ির বাধনগুলো যেন চামড়া ছিড়ে ফেলছে। হাতে-পায়ের ব্যথা সাথে চুলের গোড়ার আলগা হওয়ার ব্যথায় তিয়ামতীর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। তিয়ামতীর এখন গলা ফাটিয়ে কান্না করার কথা। কিন্তু সে তা না করে খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠলো। যার জন্য রিদ মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। তিয়ামতীর এমন আচরনে রিদ নির্বাক!
রিদের এমন পরিবর্তনী রুপে তিয়ামতীর হাঁসির শব্দ ঝনঝনিয়ে বাজছে। বাজনার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,,
“” আমি জানতাম আপনি আপনাল প্লমিস লাখতে পালবেননা। সেজ্যই তো সেদিন আপনাকে মাঝপথে আটকে নিলাম।””
তিয়ামতীর কথায় রিদ বাকরুদ্ধ,হতভম্ব এবং লজ্জিত। মনের ভেতর ছোট্ট ইতস্ততরা জড়ো হচ্ছে। সত্যিই তো,সে রাতে তো আমি আমার বউটাকে এমন প্রমিসটাই করেছিলাম। কষ্ট না দেওয়ার প্রমিস,ভালোবাসার প্রমিস। মেয়েটা আমাকে আদরের ফাঁদে ফেলে মাঝপথে আটকে দিয়েছিলো। ব্যাপারটা তখন মাথায় আসেনি। আমি তো ভেবেছিলাম কাছে টানার আহ্বান দিয়েছিলো। রিদ তিলের দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছে। সবসময়ের উচু মাথাটাকে তো লজ্জায় নিচু হতে দেওয়া যায়না। রিদ কোনো উপায়কুল না পেয়ে তিলের টানটানা দু’পা আর হাতের জালে নিজের মাথা ঢুকিয়ে দিলো। বাধনের বেড়াজালের মধ্যেই তিলের কোলে মাথা রেখেছে। কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব নিয়ে বললো,,
“” কোথায় প্রমিস ভাংলাম? এইতো ভালোবাসছি। ভালোবাসা থেকেই তো ক্রোধ আসে তাইনা? তোর বর যেমন সবার থেকে আলাদা তেমনি তার ভালোবাসাও। সবার যেমন মধুর প্রেম হয় আমাদেরও। কিন্তু আমার ভালোবাসার শব্দের আগে হিংস্রটা বেধে নিস তাহলেই হবে। বুঝলি?””
রিদ তিলের উত্তর শোনার প্রয়োজন মনে করলোনা। ওর পেটে নাক ছুয়িয়ে গভীর নিশ্বাস টেনে বললো,,
“” সেই প্রথম দিনের মিস্টি ঘ্রাণ পাচ্ছি। মিস্টিটা খুব বেশিই তীব্র। মনে হয় খুব শিঘ্রই সুখবরটা পাবো!””
~~
চোখের পাতা,ভ্রূযুগল,ঠোঁটের উপরের মোটা মোচ,গালের নিম্নাংশের এপাশ থেকে ওপাশের জোড়া লাগানো দাড়ি সহ মাথাভর্তি সাদা চুলের এক লোক বসে আছে রাতের সামনে। সামনে বললে ভুল হবে পাঁচফুট দুরত্বের উচুস্থানের নকশা করা চেয়ারে বসে আছে। কঠিন মুখের অবয়বে রাত চুপ। তার ডান পাশের একটু পেছনে সারি সারি বেঞ্চ। যেখানে শত শত লোক উৎসুক নয়নে চেয়ে আছে সাদা চুলের কঠিন মুখের লোকটার দিকে। সবার মাঝে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। এমন ভাব এই বুঝি টুপ করে কিছু পড়বে আর সকলে হা করে গিলে খাবে। রাতের অসহায় নয়ন সামনের বেঞ্চের সুন্দরী কন্যার দিকে। সম্পর্কে তার বউ হয়। নাম তার সন্ধ্যা! রাতের করুন দৃষ্টিতে সন্ধ্যা মুখ বাকাতেই জজের কন্ঠ। রাত চমকে উঠলো। লোকটির মুখ আরো শক্ত হয়ে এলো। উচ্চবাক্য পাঠ শুরু,,,
“” উপযুক্ত প্রমানের ভিত্তিতে আদালতের সিদ্ধান্ত হলো,এই ভরা জনসম্মুখে আসামীর (রাত) শরীর থেকে ছয় কাপড় খোলা হবে। আর তা এখনি!””
রাতের ঘুম ভেঙে গেলো। ভয়ে আর লজ্জাতে তার চওড়া বুক,সরু হয়ে এসেছে। চোখের পাতা মেলে মুখটা উচু করলো। সামনেই তার স্নিগ্ধ,কোমলঘুমে স্বপ্নবধুটি। দুষ্টুটা কি স্বপ্ন দেখছে? নিশ্চয় আমার নামে পুলিশের কাছে নালিশ করেছে। নাহলে এমন স্বপ্ন আমি কেন দেখলাম??
রাত সন্ধ্যার দিকে গাঢ়দৃষ্টি দিলো। একরাশ মুগ্ধতায় হারিয়ে যাচ্ছে সে। এমন মুগ্ধরুপী মেয়েটাকে কাছে পাওয়ার কত জল্পনা কল্পনাতে কতবার নেয়েছে তার কি হিসেব আছে?? রাত দুষ্টু হেঁসে বা’হাতের দু আঙুল দিয়ে সন্ধ্যার নাক চেপে ধরলো। কিছু সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজের ঠোঁট দিয়ে ওর ঠোঁটজোড়া চেপে ধরতেই সন্ধ্যার মিলে থাকা চোখের পাতা খুলে গেলো। ঘুমের ছোয়ায় নিথর হয়ে পড়ে থাকা হাতদুটো চঞ্চল হয়ে উঠেছে সন্ধ্যার। রাতের দুগাল খামচে ধরেছে। রাত ওর ঠোঁট ছেড়ে দিলো। নাক থেকেও হাত সরিয়ে নিয়েছে। সন্ধ্যা রাতকে নিজের উপর থেকে ফেলে দিয়ে উঠে বসলো। হা’করে অক্সিজেন খেতে খেতে বললো,,
“” তুমি এটা কি করছিলে?””
রাত পেটের হাঁসি পেটে চেপে রেখেই বললো,,
“” দম আটকানো চুমু খাচ্ছিলাম।””
সন্ধ্যা পেট ফুলিয়ে অক্সিজেন ভরে রাতের দিকে তেড়ে এলো।
“” আমি যদি এখন মরে যেতাম?””
রাত ও সন্ধ্যার কাছে এগিয়ে এলো। চোখে চোখ রেখে বললো,,
“” আমিও মরে যেতাম।””
রাতের উত্তরে সন্ধ্যার রাগ পানি। চোখে ভর করলো গভীর অভিমান। অভিমানে চোখ ছলছল। সন্ধ্যা কিছুটা সরে এলো। শান্তসুরে বললো,,
“” তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনা,রাত ভাইয়া। সবসময় দুষ্টুমী। তুমি ইচ্ছে করে এমন করছো। ইচ্ছে করে আমাকে রাগাচ্ছো। শেষে রেগে গিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসলেও আমার দোষ দিবা। আমি ভালো মেয়ে হতে থাকতে চাইলেও তুমি দিচ্ছোনা।””
সন্ধ্যা বিছানা থেকে নেমে এলো। বারান্দায় পা বাড়িয়েছে।
যামিনী কালো অন্ধকার পৃথিবীকে গিলে খেতে চাইছে। কিন্তু পারছে কই? চাঁদ ঠিক তার অস্তিত্বের কথা বুঝিয়ে দিচ্ছে। সে থাকতে অন্ধকার কখনোই জিততে পারবেনা। তার অঙ্গের সবটা আলো দিয়ে হলেও পৃথিবীকে বাঁচাবে। সন্ধ্যা আঁকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,আজ কি পূর্ণিমা?
চাঁদের জোসনা শরীরে মেখে যাচ্ছে সন্ধ্যার। মন খারাপটা প্রায় কেটেই যাচ্ছে। জোসনা রাত তার ভীষন পছন্দ। কিন্তু তার এই পছন্দের কথা কাউকে জানানো হয়েছে কি? হয়নি। কি করে হবে? ভালোবাসার মানুষটার সাথে পাল্লা দিয়ে খুনসুটি করেই তো দিনরাত শেষ। ভালোবাসার কথপকথনটা হলো কখন? এবার কি ছেলেমানুষিগুলো ভুলে প্রেমালাপে মত্ত হওয়া যায় না?
সন্ধ্যার মনে হাজারও প্রশ্নের আকিবুকি চলছে। নতুন নতুন উদ্দীপনা জাগছে। নতুন স্বপ্নে নিজেকে রাঙাতে ইচ্ছে করছে। সন্ধ্যা দু হাত দুদিকে প্রসারিত করে শীতল নিশ্বাস টেনে নিতেই পেটে নরম স্পর্শ। চোখতো আগেই বন্ধ ছিলো,আবারও কি বন্ধ করবে? তাহলে বন্ধ চোখ খুলতে হবে। সন্ধ্যার ভাবান্তর মনে রাতের ফিসফিস কন্ঠ,,
“” ভালোবাসি! ঠিক ততোটাই যতটা তুই অনুভবও করতে পারবিনা!!
সন্ধ্যার মনে হলো রাতের ভালোবাসা তার কান ছেড়ে হৃদয়ে ফুটেছে। সন্ধ্যার কাধের এলোমেলো চুল সরিয়ে আলতো চুমু খেলো রাত। সন্ধ্যা হালকা নড়ে উঠলো। এতে রাতের নরম স্পর্শ গভীর হয়ে এসেছে।
সন্ধ্যার কাধে রাতের ঠোঁটের স্পর্শ ক্রমশ ঘন হয়ে আসছে। রাতের স্পর্শকে সন্ধ্যা ভালো লাগা বা মন্দলাগা কোনোটাতেই ফেলতে পারছেনা। তাই আচমকায় রাতের আদরের বেড়াজাল থেকে ছুটে এলো। তবে বেশিদুর যাওয়ার আগেই রাতের হাতের আঙুলে বাধা পড়েছে।
“” কি হলো?””
রাতের প্রশ্নে সন্ধ্যা থতমত। কি হয়েছে তা তো সে নিজেও জানেনা। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো। রাত ওর কাছে এগুবে অমনি চটপটকন্ঠস্বর,,
“” আমার তোমার চুমু চাইনা। আমার কেমন কেমন জানি লাগে।””
রাতের আগ্রহীসুর,,
“” কেমন লাগে?””
“” সুড়সুড়ি লাগে কিন্তু হাঁসি পায়না,আবার কান্নাও পায়না। এটা কেমন সুড়সুড়ি? শীত লাগছেনা তাও কেমন শীত শীত অনুভূতি এই দেখ আমার হাতের সব লোমগুলো কেমন দাড়িয়ে গেছে।””
“” দেখলাম।””
রাতের ছোট্ট উত্তরে সন্ধ্যা দমে যায়নি। আরো উত্তেজিত হয়ে নিজের গলায় হাত রেখে বললো,,
“” আমার তো জ্বর হয়নি তাও মনে হচ্ছে জ্বরজ্বর ভাব। দেখ এখন আমি হাত-পা নাড়াতে পারছি তখন তো পারলাম না। এখন কথা বলতে পারছি তখন তো পারলামনা। মনে হচ্ছিলো পুষ্টিহীনতায় ভুগছি। বুকের ভেতর কেমন ধরফর ধরফর লাগছিলো,অস্থির লাগছে। মনে হচ্ছিলো ছয়দিন গোসল করিনি।””
সন্ধ্যার শরীরে চলতে থাকা সব অনুভূতির কথা রাতকে জানিয়ে লম্বা দম নিয়ে বললো,,
“” ইশ! এখন কি সুন্দর নিশ্বাস নিলাম। আমি এখনি ঠিক আছি। তখন অসুস্থ ছিলাম। আমার অমন অসুখওয়ালা আদর চায়না। আমি ঘুমাবো।””
সন্ধ্যা নিজের সবটুকু কথা শেষ করে হন্তদন্ত হয়ে রুমে ছুটলো।
চলবে