ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (৯)
রোকসানা রাহমান
ঘড়ির কাটা তিনটেতে পৌছুতেই আননোন নাম্বার থেকে কল। ঘুম আসবেনা দেখে দুটো ঘুমের ঔষধ খেয়ে সবেই শুয়েছিলো রাত। ফোনের উচ্চশব্দের সাথে তীব্র ভো ভো কাপুনিতে রাতের চোখের বন্ধ পাতা নরম হয়ে এসেছে। ঘুমের ঘোরেই কলটা রিসিভ করে কানে ধরে আছে,,অপর পাশ থেকে কিছুক্ষণ ফুপানির শব্দ। রাত কিছু বুঝে উঠার আগেই শব্দ করে কান্না করে দিলো সন্ধ্যা।
“” রাত ভাইয়া,তুমি কোথায়? আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে,তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে,তোমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে!””
~~
রাতের আচ্ছন্নে ঢাকা কালো ছায়া এখনো মিলে যায়নি। পাশের মসজিদ থেকে মধুরের কোমল সুরে আযানের ধ্বনি বাজছে সন্ধ্যার কানে। দিয়া সন্ধ্যার গায়ে পাতলা চাদরটা জড়িয়ে দিয়ে নিজেও চাদরটার ভেতরে ঢুকে পড়লো। চোখটা বন্ধ করেছে ঠিক তখনি দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দিয়া চট করে চোখ মেলে ফেললো। এতো ভোরে কে এসেছে?? ভুত-টুত নয় তো?? ওরা বাদে বাকি সবার এক রুমে চারজন করে থাকছে। একমাত্র ওদের দুজনকেই এই রুমটা স্পেশালভাবে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই ভীতু টাইপের মেয়ে দিয়া। কিন্তু সন্ধ্যার জন্য তাকে এখানে থেকে যেতে হলো। নাহলে সেও তো চারজনের মাঝখানে থাকার পরিকল্পনায় ছিলো। দিয়া দরজার দিকে কড়া নজর দিতেই পরপর দুবার নকের শব্দ। নাহ! তিনবার যেহেতু পড়েছে তারমানে ভুত নয়। ছোটবেলা নানির কাছে শুনেছে,দরজায় তিনবার নক নাহলে দরজা খুলতে না হয়। দিয়া চাদর ছেড়ে উঠতে উঠতে,তিনবারের জায়গায় মনে হয় তিনশ বার নক পড়ার শব্দ হচ্ছে। দিয়ার মনে হলো তাদের দরজাটাকে কেউ ঢোল ভেবে তাল বাজিয়ে যাচ্ছে। দৌড়ে দরজা খুলে হা করে তাকিয়ে রইলো সামনের মানুষটির দিকে। মুখ দিয়ে রা শব্দটাও নেই।
“” রাত ভাইয়া,তুমি?””
সন্ধ্যার কন্ঠে দিয়া এবার ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা,কার দিকে কতটা বেশি করে হা করে তাকালে তার অবাকটা গুছিয়ে উঠতে পারবে।
সন্ধ্যা রাতের কাছে,একটু বেশি কাছে এসে দাড়িয়েই বললো,,
“” তোমাকে এমন পাগল পাগল দেখাচ্ছে কেন? ওমাগো চোখগুলো তো লালে লিলা খেলা!””
রাত সন্ধ্যার দিকে পলকহীনভাবে চেয়ে আছে। উফ! এবার শান্তি লাগছে। সন্ধ্যার গালছুয়ে বললো,,
“” এভাবে কেউ কাঁদে? তোর আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে বললে আমি এমনিই চলে আসতাম। তারজন্য কান্না করার কি আছে?””
“” আমি আবার কখন কাঁদলাম?””
“” ফোনে! মাঝরাতেই তো কল দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কিসব বলছিলি।””
সন্ধ্যা দিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,,
“” আমি কল দিয়েছিলাম?””
“” হুম,তুই তো কল দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে আসতে বললি। এজন্যইতো এলাম।””
সন্ধ্যা রাতের কাছ থেকে সরে এলো। বিছানায় বসে চাদরটা মেলে নিতে নিতে বললো,,
“” আমি তোমাকে কোনো কল দেইনি,আর কান্নাও করিনি। আমি কেন কান্না করবো? আমি তো পিকনিকে এসেছি। আর শাকিল,সিয়াম,দিহাম,ফরহাদ সবাই তো আমাকে একেরপর এক সারপ্রাইজ দিয়ে যাচ্ছে,এখানে ওখানে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে,এটা ওটা কিনে দিচ্ছে। আমি তো পানিতে নামতে ভয় পাচ্ছিলাম,শাকিল আমাকে হাত ধরে নামালো।””
রাত এতক্ষণ রুমের বাহিরে থাকলেও এবার ভেতরে ঢুকে পড়লো। সন্ধ্যার কথাতে ওর কান পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে সেই পুড়ে যাওয়ার ধোয়াটা দেখা যাবে কি? নাকি নতুন করে ধোয়াবিক্ষণ যন্ত্রটা আবিষ্কার করতে হবে?
“” তুই আমাকে কল দিস নি?””
সন্ধ্যা ভাবনাহীন উত্তর দিলো,,
“” না।””
“” কান্না করিসনি?””
“” না।””
“” আমাকে আসতে বলিসনি?””
“” বললাম তো না।””
“” তাহলে কে কল দিলো?””
সন্ধ্যা প্রায় শুয়েই পড়েছিলো। এবার উঠে বসলো। রাতের চোখের পাতাটা হাত দিয়ে টেনে টুনে চেক করে বললো,,
“” তোমার চোখের সমস্যা হয়েছে,আমার মনে হয় তোমার চেখের ডাক্তার দেখানো উচিত,সাথে কানের ডাক্তারও! কি সব আবিজাবি দেখছো আর শুনছো।””
“” তুই বলতে চাচ্ছিস,আমি স্বপ্ন দেখেছি?””
“” তা নয় তো কি? আমি তোমাকে কল কেন দিবো? আমি তো এখানে নিজ থেকে এসেছি,আর অনেক মজাতে আছি,তাইনা রে দিয়া?””
সন্ধ্যার প্রশ্নে দিয়া কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলোনা। সন্ধ্যা কড়া চোখে তাকাতেই ও ছোট্ট করে বললো,,
“” হু!””
সন্ধ্যা বিছানা ছেড়ে পাশের ছোট্ট চারকুনো টেবিলটা থেকে একটা ঝিনুকের মালা নিয়ে বললো,,
“” রাত ভাইয়া,দেখ এটা কত সুন্দর,জানো এটা কে দিয়েছে? শাকিল! ও তো আমাকে এটা পড়িয়েও দিয়েছিলো। আমি তো ভেবেছি এখন থেকে এটা আমি সবসময় পড়বো।””
সন্ধ্যা মালাটা নিয়ে রাতের সামনে ধরলো। মালার ভেতর থেকে রাতের মুখটা দেখার চেষ্টা করছে। রাত চোখটা বন্ধ করে বললো,,
“” আমাকে একটু ঘুমানোর জায়গা দিবি প্লিজ!””
সন্ধ্যা আর কিছু বলার সুযোগ পেলোনা। রাত বসা থেকে ধপ করে শুয়ে পড়লো। ইচ্ছে করে নাকি অনিচ্ছাতে??
~~
সন্ধ্যার ভারকান্নার শব্দে রাতের ঘুম হালকা হয়ে এসেছে। চোখটা আধখোলে ওর দিকে তাকালো। ওর ঠিক পাশেই দুপা তুলে বসে আছে বিছানায়। হাটুতে থুতনি রাখা,দুহাতে মুখ ঢেকে চিকনসুরে কান্না করে যাচ্ছে। রাত ধরফরিয়ে উঠলো। সন্ধ্যার হাত মুখ থেকে সরিয়ে বললো,,
“” কি হয়েছে,এভাবে কাঁদছিস কেন?””
সন্ধ্যা কান্নার গতি বাড়িয়ে দিলো। রাত ওকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,,
“” এভাবে কাদিসনা,আমি মরে যাবো।””
“” তুমি এখানে কেন এসেছো? আমার সব আনন্দ মাটি করে দিতে তাইনা?””
সন্ধ্যা রাতের বুক থেকে সরে গেলো। অন্যদিকে মুখ করে আবার অভিযোগ,,
“” তোমার জন্য আমি ঘুরতে পারলামনা। সবাই আমাকে রেখে চলে গিয়েছে, দিহামও। আজ ও আমাকে স্পেশাল সারপ্রাইজ দিবে বলেছিলো। তোমার জন্য সব শেষ হয়ে গেলো।””
রাত কি এমন করেছে বুঝে উঠতে পারছেনা।
“” আমি কি ঘুরতে মানা করেছি? তোর কথা রাখতেই তো তোকে এতদুর পাঠালাম।””
সন্ধ্যা রাতের দিকে তেড়ে এসে বললো,,
“” কি করে ঘুরবো আমি? তুমি তো আমাকে পাহারাদার বানিয়ে দিলে। আমাকে পাহারাদার বানিয়ে নিজে আরাম করে ঘুমালে।””
“” তুই আমাকে পাহারা দিচ্ছিলি?””
“” তো কি করবো?? তোমাকে অমন ঘুমে রেখে চলে গেলে তো পরে কথা শুনিয়ে বলতে,তোকে আমি এত কষ্ট করে পিকনিকে যাওয়ার অনুমতি এনে দিলাম। আর তুই আমার সামান্য ঘুমের পাহারা দিতে পারলিনা? আমাকে এভাবে বেঘুমে রেখে চলে যেতে পারলি?””
“” আমি এগুলো বলতাম?””
“” হুম।””
“” তুই কি করে বুঝলি?””
“” আমি সব বুঝি।””
“” ছাই বুঝিস!””
“” কি আমি ছাই বুঝি?””
সন্ধ্যাকে এমন রেগে যেতে দেখে রাতের বেশ মজা লাগছে। ইচ্ছে করছে আরেকটু রাগিয়ে দিতে। রাতের ভাবতেই মনটায় উষ্ণ শিহরণের ঢেউ বয়ে গেলো,এই রাগী মেয়েটা তার রাগীবউ হবে। হ্যা,আমার রাগীবউ। যে কথায় কথায় রেগে যাবে,আর আমিও কথায় কথায় চুমু খাবো। রাত মুচকি হেঁসে উঠতেই সন্ধ্যা চেচিয়ে উঠলো,,
“” আমার সবকিছু মাটি করে দিয়ে তুমি হাঁসছো?? তুমি এতো পচা রাত ভাইয়া?””
“”আসলেই কি সবাই তোকে রেখে চলে গিয়েছে?””
“” তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি?””
“” কিন্তু আমার ঘুমের সাথে তাদের চলে যাওয়ার কারণটা কিভাবে ঘটলো?””
সন্ধ্যা হাতঘড়িটা রাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,
“” তুমি ২৩ ঘন্টা,৪২ মিনিট ধরে ঘুমিয়েছো,আর আমি তোমাকে এতক্ষণ যাবত পাহারা দিয়ে কোমড় ব্যথা করে ফেলেছি। এখন তোমার কি মনে হয়,আমার জন্য ওরাও তোমাকে পাহারা দিবে? ওরা পিকনিকে এসেছে তোমাকে পাহারা দেওয়ার জন্য?””
রাতের চোখ বড় হয়ে এলো। নিজের ফোনটার দিকে তাকিয়ে রইলো,মায়ের নাম্বার থেকে ১০৫ টা মিস কল উঠে রয়েছে। রাত অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,,
“” ও মাই গড! আমি এক ঘুমে একদিন একরাত পার করে ফেলেছি??””
রাতের এবার মাথা খুলছে। মাথার ব্রেইনেও কাজ করা শুরু করেছে। আশেপাশে চোখ বুলাতেই কাল কি হয়েছিলো সব মনে পড়ে গেলো। সাথে এটাও মনে পড়লো যে সে দুটো ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলো। এমন হাইপাওয়ারের ঔষধ খেয়েও সে না ঘুমিয়ে সারারাত গাড়ী চালিয়েছে। চার ঘন্টার রাস্তা আড়াইঘন্টায় পার করে এসেছে। ঘুমে চোখ জ্বালা করে,মাথাটাও যন্ত্রণায় ফেটে যাওয়া অবস্থা ছিলো,কিন্তু যার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মনটা অতৃপ্ততায় অপুর্ণ হয়ে ছটফট রোগে ভুগছিলো তার ডাকে কি সে সারা না দিয়ে পারে? তাও এমন আদুরীমাখা আহ্বানে??
সন্ধ্যা তাচ্ছিল্যসুরে বললো,,
“”না,এখনো কিছু মিনিট বাকি আছে,সুর্যটাও তো এখনো উঠেনি,আরেকটু ঘুমোও,আমি নাহয় আরেকটু পাহারা দিবো। আমিতো পাহারাদারদের সর্দারনী!””
“” এমন করে বলছিস কেন? তুই ঘুরবি তো? কোথায় ঘুরবি বল,আমি তোকে ঘুরাবো।””
“” আমি তোমার সাথে কেন ঘুরবো? আমি কি তোমার সাথে ঘুরার জন্য এখানে এসেছিলাম?? তুমি ইচ্ছে করেই এমন করেছো না?””
“” সন্ধ্যা শোননা,আমি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিলাম তো তাই,হুশ ছিলোনা। সরি!””
“” তোমার জন্য আমার সারপ্রাইজটা পাওয়া হলোনা। তোমার সাথে আমার কোনো কথা নাই-নাই-কখনোই নাই!””
সন্ধ্যা আবার মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। রাত ওর দিকে চেয়ে আছে। তোর সারপ্রাইজ চাইতো? আমি দিবো,সব থেকে বিশেষ সারপ্রাইজটা দিবো। আমার ভেতরে জমে পড়ে থাকা কথাটা আজ বলবো। আমি আর অপেক্ষা করতে পারবোনা। অপেক্ষার প্রহরগুলো আমাকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলছে। আমি আর শেষ হতে চাইনা। এখন আমার গড়ার পালা। এতে তোর মত থাকুক বা না থাকুক। আমি গড়বোই,আমার ভালোবাসা দিয়ে গড়বো। ভালোবাসার সমুদ্র বানাবো। যেখানে তোকে নিয়ে আমি অনুভূতির পানিতে সাতার কেটে বেড়াবো।
“” তুই একটু বোস! আমি এখনি আসছি!””
“” কোথায় যাচ্ছো?””
সন্ধ্যার প্রশ্নে রাত রহস্যময়ী মিস্টি হাঁসি উপহার দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। আজ সে সন্ধ্যাকে এমন সারপ্রাইজ দিবে,যা ওকে ক্ষনিকের জন্য হলেও পৃথিবীর থেকে হারিয়ে যেতে হবে। মুগ্ধতায় চোখের মনিগুলো চিকচিক করতে হবে। আনন্দে হাত-পা কেঁপেকেঁপে উঠবে,কন্ঠে বাজবে খুশির ঝিনঝিন শব্দ!
~~
প্রায় দেড়ঘন্টাবাদে ক্লান্তমিশ্রিত খুশি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো রাত। চোখে,ঠোঁটে,মুখে ক্লান্তিরছাপ,কিন্তু তাকেও হার মানিয়েছে,কিছু পাওয়ার,কিছু না বলা কথা প্রকাশ আর কাউকে নিজের করে নেওয়ার অধিকারের পদক্ষেপ!
ভেতরে ঢুকে রাত নীরব। ছোট্ট রুমটার কোথাও সন্ধ্যা নেই। গেলোটা কোথায়? রাত কয়েকবার ওর নাম ধরে ডাকলো। কোথাও সাড়া না পেয়ে ওয়াশরুমটাও চেক করেছে, সেখানটাও শুন্য। শুন্যতাটা হঠাৎ করেই রাতের বুকের মধ্যেও বাষ্পহীন বিশাল বৃত্তের সৃষ্টি করছে। আর সেটাকেই পরিপুর্ন করতেই ছোট্ট টেবিলটাতে একটা কাগজ দেখতে পেলো। সন্ধ্যার সেই ঝিনুকের মালা ওটার উপরে বিছিয়ে আছে। রাত মালাটা সরিয়ে কাগজটা মেলে ধরলো,,
**উফ! কই গেলে বলোতো? তুমি যাওয়ার পাঁচ মিনিট বাদেই দিহাম এসে হাজির। ও আর আমি তোমার জন্য অনেক্ষণ অপেক্ষা করলাম। আর করতে পারছিনা। আমার ওর সারপ্রাইজটা দেখার জন্য মনটা আকুপুকু করছে। ওর ও হয়তো সারপ্রাইজটা দিতে ওর মনটাও উশখুশ করছে। বেচারা আর অপেক্ষা করতে পারছেনা,আমাকে বারবার তাড়া করছে। তাই আমি চললাম! তুমি যদি আমার সারপ্রাইজটা ঘেটে দেওয়ার জন্য মিথ্যে স্বপ্নের বাহানা দাও,তাহলে আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবোনা।
সন্ধ্যা
রাতের ফোনটা বেজে উঠেছে। পকেটের ভারী কাপড়টা ভেদ করেও লাইটটা কেমন জ্বলজ্বল করছে। শব্দটা কি রাতের কানে পৌছুচ্ছেনা??
রাতের হাতে থাকা কালো গোলাপটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানে ধরলো,,
“” স্যার,আপনি যেমনটা বলেছিলেন তেমনভাবেই সব করা হয়েছে। আপনারা কখন…””
ফোনের অপরপাশের গলাটা রাত আর সহ্য করতে পারছেনা। ছুড়ে মারলো নিজের ফোনটা।
~~
ভোরের দীপ্ত আলো ফুটেছে,সাথে হিমেল হাওয়া। জানালার পাশে বসে থাকা আনমনে হারিয়ে যাওয়া সন্ধ্যার মুখে বাতাসের স্পর্শ। অনেকটা শীতশীত জাগরন। বেশ লাগছে সন্ধ্যার। চোখটা বন্ধ করে নিবে ঠিক তখনি পিয়াস স্যারের আদেশি গলা। সন্ধ্যা কিছুটা চমকে গিয়ে সোজা হয়ে বসলো। পাশ ফিরে দিয়ার দিকে তাকাতেই সন্ধ্যা সন্দিহান কন্ঠে বললো,,
“” তোর সমস্যা কি বলতো? কাল থেকে দেখছি,তুই শুধু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছিস!””
“” বুঝার চেষ্টা করছি,তুই আসলে কে?””
“” কে মানে?””
“” তুই কি আসলেই আমার বান্ধুবী সন্ধ্যা নাকি মিথ্যের ঝুড়ি খুলে বসা কোনো মিথ্যেবুড়ি।””
“” ওহ!””
দিয়া সন্ধ্যার দিকে ঘুরে বসলো। ওর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,,
“” তুই যে এতো মিথ্যে কথা বলতে পারিস,এটাতো আমার জানা ছিলোনা। ও মাই গড,কাল থেকে তুই যে হারে মিথ্যে বলে যাচ্ছিস,আমার তো ইচ্ছে করছে নিজেই একটা অ্যাওয়ার্ড হয়ে তোর হাতে বসে পড়ি।””
সন্ধ্যার দিক থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে দিয়া আবার বলতে শুরু করলো,,
“” কিন্তু এতো মিথ্যের কারন কি? তুই তো গাড়ীতে উঠার পর থেকে কেঁদে হিচকি তুলে ফেলেছিলি,সারারাত আমাকে ঘুমোতে দিলিনা,তোকে সামলাতে গিয়ে আমি নাস্তানাবুদ! তারপর তো নিজের ফোন রেখে আমার ফোন দিয়ে কল দিয়ে কেঁদেকেটে একসের!””
“” একসের? তুই কি আমার কান্নার পরিমাপও করে ফেলেছিস?””
“” করবো নাতো কি করবো? কিন্তু তুই এমন মিথ্যে বলে যাচ্ছিস কেন সেটা এখনো পরিমাপ করতে পারিনি। কেন করছিস বলতো?””
“” আমি যা চাই উনি আমাকে তা দেয়না তাই।””
“” কি চাস?””
সন্ধ্যা জানালার দিকে মুখ করে বাইরে একটা হাত মেলে দিয়ে বললো,,
“” সেটা তোর জেনে কাজ কি? যার কাছে চাই সে জানলেই হলো!””
দিয়া মুখ ঘোমড়া করে সিটে হেলান দিয়ে রইলো। আবার হুট করেই সোজা হয়ে গড়গড় করে বলতে শুরু করেছে,,
“” কিন্তু তোর রাত ভাইয়াটা তো দেখতে হেব্বি! আমি তো প্রথম পলকেই ক্রাশ খেলাম। এ্যাশ কালারের শার্টের সাথে অগোছালো মুখটা,উফ কি যে লাগছিলোনা। আমার তো শুধু দেখে যেতেই ইচ্ছে হলো। কি সুন্দর ভারী কপাল,ঘন ভ্রু,আর চোখটা,উফ! দুষ্টু দুষ্টু ভাব,নাকটাতেও দুষ্টুমি আর ঠোঁটটট,আহ! কি করছিস,আমার আঙুলটা খেয়ে ফেলবি নাকি? ছাড়! ছাড় না সন্ধ্যা!””
একটু আগেও দিয়ার চোখে মুগ্ধতার নব্য উত্তেজনা কাজ করছিলো তা নিমিষেই পানিতে ভরপুর হয়ে গেলো। সন্ধ্যা দিয়ার হাতটা দাঁতের পাটি থেকে সরাতেই ওর চোখ বেয়ে টপটপ পানি পড়ছে। সন্ধ্যার দিকে করুণ চোখে তাকাতেই ও বলে উঠলো,,
“” তুই জানিস না,লাল রঙ আমার অপছন্দ তাও এই রঙের জামা পড়েছিস কেন?? বিশ্রি মেয়ে একটা যা আমার কাছ থেকে সর নাহলে তোর পুরো শরীরে আমার দাঁতের দাগ বসে যাবে!””
~~
কিছুক্ষণ আগেই ফুপি আর সন্ধ্যার কন্ঠ ভেসে এসেছে রাতের কানে। চলছে দুজনের ভালোমন্দের কথোপকথন! তাতে কি? রাত যাবেনা ওকে দেখতে,কথা বলতেও যাবেনা। কেমন ছিলো তার দিহামের সারপ্রাইজ তাও জানতে যাবেনা। সে এখন অসুখে ভুগছে,গভীর অনুরাগের অসুখ!
~~
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো সন্ধ্যার। নিজের বিছানা ছেড়ে ছুটে গেলো রাতের রুমে। গভীর নিদ্রায় রাত। সন্ধ্যা ধপ করে রাতের পেটের উপর চেপে বসেছে। শরীরের পাতলা সাদা টি-শার্টটা তুলে নিয়ে দু-হাতের দশ আঙুলের আচর বসিয়ে দিচ্ছে রাতের বুকে। প্রচন্ড জ্বলনিতে রাতের ঘুম ভেঙে যায়। রুমের সবুজ আলোতে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে আহতকন্ঠে বললো,,
“” সন্ধ্যা কি করছিস,লাগছে আমার!””
রাতের কথা কানে না নিয়েই আচরের গতি প্রখর করে বললো,
“” তুই ঐ মেয়েকে চুমু খেলি কেন??””
অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে সন্ধ্যার হাত দুটো আটকে নিয়ে আছে রাত! জবাবদিহিতাই বললো,,
“” আমি আবার কখন,কাকে চুমু খেলাম?? তুই আমাকে তুই তুই করে বলছিস??””
সন্ধ্যা নিজের হাত ছুটানোর চেষ্টায় কটাক্ষভাবে বললো,,
“” ১০০ বার বলবো হাজারবার বলবো,তোর কি? নাম ধরেও বলবো!””
“” এসব কি বলছিস? আমি তোর থেকে ছ’বছরের….আহ!””
রাতকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ওর বুকের বা’পাশটাতে নিজের চকচকে,ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলো বসিয়ে দিলো সন্ধ্যা!
চলবে