ভালোবাসার_উষ্ণতা,06,07

0
928

#ভালোবাসার_উষ্ণতা,06,07
মুশফিকা রহমান মৈথি
#৬ষ্ঠ_পর্ব

– আর ছোট ম্যাডামের ব্যাপারে কিছু বলার ছিলো, ছোট ম্যাডামের আইডিটা আবার এক্টিভেট করা হয়েছে। এবং আগের মতোই ছেলেদের সাথে ফ্লার্ট করা হচ্ছে।
– তুমি কিভাবে জানলে?
– স্যার বিগত এক সপ্তাহে আমার সাথে প্রায় দিনে ৫-৬ ঘন্টা চ্যাট হয়েছে।
– আচ্ছা, আমি রাখছি।

রিয়াদের ফোন রাখার পর থেকেই বিষয়টা অয়নকে প্রচন্ড ভাবাতে থাকে। এই এক সপ্তাহ প্রাপ্তির উপর তার কড়া নজর ছিলো। এমনকি প্রাপ্তির নিজস্ব কোনো হ্যান্ডসেট বা ল্যাপটপ ও নেই। তাহলে আইডি অন হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কিছু একটা ভেবে আবার ফোনটা হাতে নেয় অয়ন। ফেসবুকে সার্চ করে “প্রাপ্তি শেখ” আইডিটি পেয়েও যায়। রিয়াদ মিথ্যে বলে নি। আইডিটি সব কিছু লক করা। সুতরাং ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সসেপ্ট না করলে কিছুই বোঝা যাবে না। কিছু একটা ভেবে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠালো অয়ন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। হাতে নাতে প্রমাণ পেলে জ্যান্ত কবর দিতেও পিছ পা হবে না অয়ন, কিন্তু কেনো জানে মন বলছে প্রাপ্তি হয়তো নির্দোষ। আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না যে প্রাপ্তির আইডি অন্য কেউ চালায়, হতেই পারে। কিন্তু সেটা হয়ে থাকলে, কে সে যে প্রাপ্তির আইডি দিয়ে ছেলেদের প্রেমের জালে জড়িয়ে হৃদয় ভাঙার মতো অপরাধ করে! আর এতোদিন প্রাপ্তিকে বিনা অপরাধের শাস্তি কি তবে অয়ন দিচ্ছিলো!! না আর ভাবতে পারছি না। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে!!

সন্ধ্যা ৭ টা,
প্রাপ্তির ভর্তির সকল কাজ করে মাত্র হাত পা ঝাড়া দিলো অয়ন। আজ একই সাথে অনেক কাজ হয়েছে, একটু চা খেতে পারলে মন্দ হতো না। লোকমান কাকাকে খিবর দিতেই যাচ্ছিলো, অমনি দৌড়াতে দৌড়াতে লোকমান কাকা স্টাডিতে প্রবেশ করলো।
– কি হয়েছে? তুমি হাফাচ্ছো কেনো?
– ব..ড় বাবা, ব-বড় বাবা
– কি হয়েছে ভাইয়ের?

লোকমান কাকার মুখে আবরারের কথা শুনে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় অয়ন। লোকমান কাকা খানিকক্ষণ দম নিয়ে বলতে লাগে,
– বড় বাবা কথা বলছে
– কিহ!! সত্যি??
– হ্যা, অয়ন বাবা। আমি নিজের কানে শুনেছি।
– আপনি ডাক্তার কল করুন, আমি দেখছি।

বলেই আবরারের ঘরে ছুট লাগায় অয়ন। অয়নের যেনো বিঃশ্বাস ই হচ্ছে না! সত্যি আবরার কথা বলছে। আবরারের ঘরে প্রবেশ করতেই অয়ন খেয়াল করলো আবরার বিছানায় শুয়ে হাত ইশারা করছে। ধীর পায়ে কাছে যেতেই মৃদু স্বরে বলে উঠে,
– অ..য়..ন

আজ ছয় মাস পর আবরারের মুখে নিজের নাম শুনে অয়ন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে নি। এই একটাই তো ভাই তার সে একই সাথে তার বাবা এবং মা। নিজেকে সামলিয়ে আবরারের পাশে বসলো সে। আবরার শুধু মুচকি হেসে অয়নের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অয়নের চোখ ছলছল করছে। এখনই যেন অশ্রুধারা চোখ গুলোকে মুক্ত করে ঝরে পড়বে। নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠলো,
– আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। আমার থেকে সুখী বোধহয় কেউ নেই, এখন ফাইনালি আমি রিলিভ পাবো ভাই।

রাত ১০টা,
অয়ন আবরারের রুম থেকে বের হয়েছে। ডাক্তার বলেছে, আবরারের ঔষধ কাজ করছে। কিন্তু একটা ছোট অপারেশন করতে হবে, তাহলে আগের মতো কথা বলতে পারবে। আবরার শুধু অয়নের নাম উচ্চারণ করার পর আর কোনো কথাই বলে নি। তবে, এখন সে তার হাত, পা হালকা নড়াতে পারছে। অয়ন চাচ্ছে আবরারকে এখনই ইউ.এস.এ পাঠিয়ে দিতে। তাহলে হয়তো, আরো ইম্প্রুভ করবে আবরার। ফোনে নোটিফিকেশনের আওয়াজ কানে আসতেই ফোনটা হাতে নিলো অয়ন। নোটিফিকেশনটা দেখে মুচকি হেসে প্রাপ্তির রুমের দিকে রওনা দিলো অয়ন। রুমে নক করার প্রায় দশ মিনিট পর প্রাপ্তি দরজা খুললো। এতো রাতে অয়নকে নিজের সামনে দেখে খানিকটা ঘাবড়ে যায় প্রাপ্তি। কালরাতে যা হয়েছে তার পরে অয়নের সাথে জরুরি কোনো ব্যাপার বাদে কথা হয় নি। আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– এতো রাতে?
– ভেতরে আসতে পারি?
– কেনো?
– কিছু কথা ছিলো, ভয় নেই কিছু করবো না
– আচ্ছা, আসুন।
– কিছু ফর্ম এনেছি, নাম পূরণ করা লাগবে। কালকে ভর্তি। আর একটা কথা, তুমি নাকি আঁকা উকি ভালো করো তাই ফাইন আর্টস এর ফর্ম তুলেছি। তোমার ভালো না লাগলে অন্য কিছু চুজ করতে পারো।

প্রাপ্তির ছোটবেলা থেকেই আর্ট খুব ভালো লাগে, শুধু তাই নয় রুমে সারাদিন বসে বসে কিছু না কিছু আঁকা উকি ই করতে থাকে। অয়ন এই তিন মাসে বেশ কয়েকবার তা লক্ষ্য করেছে। প্রাপ্তি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। এই লোকের তার পছন্দ অপছন্দ জানার কথা না, তাহলে কিভাবে জেনেছে?
– আপনি কিভাবে জানলেন? আমি আঁকাউকি ভালোবাসি!
– ইচ্ছে থাকলে সব জানা যায়। আচ্ছা, তোমার মোবাইল নেই তাই না?
– আমার তো কারোর সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন হয় না তাই আমি মোবাইল রাখি না কাছে। একটা ছিলো হারিয়ে গেছে।
– আচ্ছা আমি কাল তোমাকে মোবাইল কিনে দিবো।
– লাগবে না, আমার জন্য অহেতুক।
– এখন তো আর বাসায় থাকা হবে না, তাই বলছিলাম। এতে আমারও টেনশন কম হবে।
– আচ্ছা আবরার কেমন আছেন?
– ভাইকে আমি কিছুদিনের জন্য ইউ.এস.এ।পাঠিয়ে দিবো।
– ওমা, কেনো?
– ভাইয়ের কিছু অপারেশন করা লাগবে।
– ওখানে একা?
– সেটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি। সামি আমার বন্ধু ও যাচ্ছে। আচ্ছা একটা কথা ছিলো।
– জ্বী বলেন।
– কোনো সময় যদি জানতে পারো, তোমার সাথে কেউ খুব বড় অন্যায় করেছে, ধোকাবাজি করেছে, তুমি তাকে ক্ষমা করবে তো?
– জ্বী?? হঠাৎ এই কথা!
– এমনি জানতে ইচ্ছে হলো, করবে ক্ষমা?
– আমি ক্ষমা করার কেউ না, আর সত্যি বলতে এখন আর কিছু যায় আসে না। জীবনে কম ছলনার স্বীকার তো হই নি। আমি এ ফর্ম পূরণ করে রাখবো। আপনি আসতে পারেন

অয়ন কথা বাড়ালো না, আজ নিজের ভূলের কারণে নিজেকেই পশ্চাতে হচ্ছে। নিজের রুমে এসে গা এলিয়ে দিলো সে। ফোনটা অন করে ফেসবুকে লগ ইন করতেই ম্যাসেজ গুলো চোখে পড়লো। এর মধ্যে প্রাপ্তি শেখের ম্যাসেজ ও চোখে পড়লো। ম্যাসেজটা চোখে পড়তেই চোখ কুচকে ফেললো অয়ন। সারারাত বেশ চ্যাট করে ফজরের দিকে ঘুমাতে যায় অয়ন।

এক সপ্তাহ পর,
আজ প্রাপ্তির প্রথম ক্লাস, এতোদিন পর পড়াশুনা করতে যাচ্ছে খুশি যেন ধরছে না। এই সপ্তাহ অয়নের অন্যরকম রুপ চোখে পড়েছে। শান্ত, ভদ্র এমন অয়ন কল্পনার বাহিরে। সকালে নাস্তার টেবিলে বসে এ কথাই ভাবছিলো। অয়নের তুড়িতে বাস্তবে ফিরে প্রাপ্তি। সামনে তাকাতেই দেখে সাদা শার্ট, নীল জিন্স পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে। চুলগুলো কপালে পড়ে রয়েছে। ফর্সা মুখে খোচাখোচা দাড়ি যেন আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে তাকে।
– কি ভাবছো?
– আপনি কোথাও বের হবেন?
– তোমাকে পৌঁছে দিবো। খাচ্ছো না কেন?
– ও তাহলে গেটেই নামিয়ে দিয়েন, নয়তো
– নয়তো কি? গেটে নামাবোই বা কেন? তোমাকে ক্লাসে দিয়ে আসবো
– কি দরকার বলুন?
– তুমি খাও এসব নিয়ে তোমার ভাবা লাগবে না।

প্রাপ্তি আর কথা বাড়ালো না, এই লোকের সামনে কথা বলা আর উলো বনে মুক্তো ছড়ানো এক। খাওয়া দাওয়া শেষে কলেজের দিকে রওনা দিলো তারা।

দুপুর ২ টা,
ক্যাফের একটি চেয়ারে বসে আসে অয়ন। অপেক্ষা প্রাপ্তির শেখের আগমনের, ফেসবুকের প্রাপ্তি শেখ। এক ঘন্টা যাবৎ বসে আছে, কিন্তু এখনো আসে নি। অয়নের ধৈর্যের বাধ যেন ভাঙ্গতে লাগলো। ব্যাক্তিটি আসবে না বোঝা যাচ্ছে। এখন আইপি এড্রেস ট্রাক করা ছাড়া উপায় নেই। অয়নের বুঝতে বাকি নেই যে, আবরারের সাথে ধাপ্পাবাজি করা মানুষটি আর যে হোক প্রাপ্তি নয়। প্রাপ্তির ঘরে সি.সি টিভি ক্যামেরা লাগিয়ে ২৪ ঘন্টা অভসারভ করেছে অয়ন। যখন প্রাপ্তি শেখ আইডিটির সাথে চ্যাট করতো তখন প্রাপ্তি ঘরে হয় ঘুমাতো নয় কোনো কাজ করতো। অয়নের সব বিষয়ে খোঁজ নিতেও ভুল হয়েছে। তা না হলে হয়তো আজ প্রাপ্তির চোখে নিজের জন্য ঘৃণা দেখতে পেতো না। চেয়ার থেকে উঠতেই যাবে তখন এক জন রমনী তার সামনে এসে দাঁড়ালো। রমনীটিকে দেখে যেন মাটি থেকে জমি খসে গেছে, রমনীটি আর কেউ নয়….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

#ভালোবাসার_উষ্ণতা
#৭ম_পর্ব

চেয়ার থেকে উঠতেই যাবে তখন এক জন রমনী তার সামনে এসে দাঁড়ালো। রমনীটিকে দেখে যেন মাটি থেকে জমি খসে গেছে, রমনীটি আর কেউ নয় আবরারের ছোট বেলার বান্ধবী রাইসা। কালো শাড়ি পরিহিতা রাইসাকে দেখে মূহুর্তের জন্য খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে। প্রথমে ভেবেছিলো রাইসাই সে নাকি যে প্রাপ্তি সেজে সবার সাথে ছলনা করে যাচ্ছে। পরে নিজেকে শান্ত করে বোঝালো, এটা অসম্ভব। যতদূর জানে রাইসার বিয়ে হয়ে গেছে, বিয়ের পর কানাডা চলে গিয়েছিলো। আবরার ও রাইসার বিয়ে নিয়ে খুব একটা খুশি ছিলো না। কিন্তু রাইসাকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব খুশিতেই আছে, মা হতে চলেছে সে। অনেকটা উত্তেজিত ভাবেই জিজ্ঞেস করে অয়ন,
– তুমি? এখানে? কবে এলে রাইসা আপু কানাডা থেকে?
– তাহলে আমায় এখনো মনে রেখেছিস তোরা! খুব কেক খেতে ইচ্ছে করছিলো তাই এখানে আসা। বসতে পারি?
– হ্যা হ্যা বসো না, দুলাভাই কোথায়? তুমি একা যে?
– জানি না, আমি একাই এলাম। শুনলাম, আবরার নাকি বিয়ে করেছে? খুব সুখে আছে নারে?
– আপু তুমিও কি নিউজগুলোই দেখো আর বিশ্বাস করো?
– না বিশ্বাস করার কি আছে?
– না নেই, ভাই ইউ.এস.এ তে। কিছু কাজে গেছে।
– ও, বউ কে নিয়ে গেছে বুঝি?
– না, ও দেশে। তোমার কথা বলো, আসলে কবে? আর এতো বড় গুড নিউজ আমরা কেনো জানি না?
– আমি কখনো যাই ই নি। আর খোঁজ করিস নি বলে জানতে পারিস নি। এটা এমন কিছুই না। আর গুড নিউজ আসতে বেশি দেরি নেই, সাড়ে সাত মাস চলে৷
– কিন্তু তুমি তো
– বিয়েটা আমি করি নি অয়ন। একটা মানুষকে ভালোবেসে অন্য কাউকে বিয়ে করাটা বোধ হয় ঠিক হতো না। আর বিয়ের আগেই আমি এই জানের অস্তিত্ব টের পেয়েছি। ভালোবাসার স্মৃতিটাকে কিভাবে মুছে ফেলি বল। কিন্তু কি বল তো, মানুষটা আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখে নি। সেটায় আমার কষ্ট নেই, আমি আমার বাচ্চাকে ঠিক নিজের মতো করে গড়ে নিবো দেখিস।
– তোমার বাড়ির লোকজন জানে?
– হুম, বাবা আমার মুখ দেখেন না ছয় মাস হবে।
– তুমি আমাদের বলো নি কেন?
– বলে কি হবে?
– আমরা এতোটা পর বুঝি?
– যা আপন ছিলো সেই কথা রাখে নি, পরের কাছে কি চাইবো?
– তুমি এখন কোথায় আছো?
– এক বান্ধবীর বাসায়। একটা জব ম্যানেজ হয়ে গেছে, এভাবেই কাটছি। তোর সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো। আচ্ছা, আমি আসি। আবরার এলে একবার ওর সাথে দেখা হওয়াটা দরকার। আমাকে একটু জানাস কেমন?
– তুমি তোমার নাম্বারটা আমায় দাও। আর যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে জানাতে ভুলোনা কিন্তু।
– হুম, সেভ করে নে।

নম্বর সেভ করার জন্য মোবাইলের লক খুলতেই “প্রাপ্তি শেখ” এর ম্যাসেজ। তাতে লেখা,
” আপনি আমাকে কথা দিয়ে অন্য নারীর সাথে বসে রইবেন, এটা আমি আশা করি নি”

ম্যাসেজটা পেয়েই আশেপাশে নজর ঘুরালো অয়ন। অয়নকে খুব উত্তেজিত লাগছিলো, মথায় ঘাম জমে গেছে। রাইসা অয়নের অস্বাভাবিকতা দেখে জিজ্ঞেস করে,
– কি হলো? তুই এতোটা উত্তেজিত কেনো হচ্ছিস? কোনো সমস্যা
– না, কিছু না। তুমি নম্বর দাও।

রাইসাকে উবারে তুলে দিয়ে, ফোনটা আবার হাতে নেয় অয়ন। ম্যাসেজ অপশনে যেয়ে অই আইডিতে টাইপ করে,
– আপনি যদি ক্যাফেতে এসেই থাকেন তবে দেখা কেনো করলেন না। এক ঘন্টা আপনার অপেক্ষায় কাটিয়েছি। আর ওই নারীটি আমার বোন ছিলো।
– আমার সাথে দেখা করতে বেশ উতলা হচ্ছেন, বেশ কাল আমার চাচাতো বোন রোশনি শেখ আপনার সাথে দেখা করবে। তাকে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আমাকেও লাগবে।
– আচ্ছা, যা আপনার ভালো লাগে।

ম্যাসেজটা পাঠিয়েই রিয়াদকে ফোন দেয় অয়ন। শুধু একটা কথাই বলে,
– আইপি এড্রেস হ্যাক করো। কোন কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে ম্যাসেজ আসছে আমি জানতে চাই। তোমাকে তিন দিন সময় দিচ্ছি। আমি জানি না তুমি কিভাবে কি করবে।

ফোনটা রেখে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় অয়ন। আজ নিজে প্রাপ্তিকে বাড়ি নিয়ে যাবে সে। উদ্দেশ্য একটাই প্রাপ্তির মনে নিজের জন্য ভালোবাসা তৈরি করা। অনেক ভেবে ঠিক করেছে, একটা চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই। তারপর প্রাপ্তি যদি তাকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে প্রাপ্তিকে মনের মহারানী করে সারাজীবন নিজের মনের রাজত্বে রেখে দিবে। আর যদি তা না হয়, তবে আবরার আর প্রাপ্তির জীবনে বাধা হয়ে কোনোদিনও আসবে না।

বিকেল ৫টা,
স্থানঃ- নবজাগরণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
গেটের সামনে অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। প্রাপ্তি এখনো আসে নি, এমনকি মেয়েটার কাছে মোবাইলও নেই। এতো ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে, যদি একটু কথা শুনতো। আজকেই মোবাইল কিনে দিতে হবে। প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। আজ আসুক ওকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। রাস্তায় পড়ে থাকা ক্যানে লাথি বসাতেই যাবে তখন নজরে পড়লো প্রাপ্তি একটি ছেলের সাথে গেটের দিকে আসছে, তারা যথেষ্ট হাসাহাসি করছিলো যা কারোর কাছে দৃষ্টিকটু না হলেও অয়নের মুহূর্তের মধ্যে মেজাজ বিগড়ে দিতে যথেষ্ট। প্রাপ্তি সামনেই আসছিলো, খেয়াল করে দেখলো গেটের ঠিক অপসিটে গাড়িতে হেলান দিয়ে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অয়নকে দেখে মোটামুটি ভয়ে জমে গেছে প্রাপ্তি। এমনেই পান থেকে চুন খসলেই এই বান্দা চৌদ্দ গুষ্টির ষষ্ঠী করে দেয়। আর এখন তো একটা ছেলের সাথে সে ঘুরছে না জানি তার ভাগ্যে কি আছে।

অয়নের সামনে গিয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলতে গেলে, অয়ন থামিয়ে দেয়। গাড়ির দরজা খুলে নিজে বসায় প্রাপ্তিকে। তারপর রেষ্টুরেন্ট এ খায়াতে নিয়ে যায়। প্রাপ্তির কাছে এ যেনো অন্য অয়ন। এতো দামি রেষ্টুরেন্টে এই প্রথম গিয়েছে প্রাপ্তি। প্রাপ্তির প্রথমে অস্বস্তি লাগলেও অয়ন পাশে থাকায় তার অস্বস্তিকর পরিস্থিতি স্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। খাওয়া দাওয়া শেষে নদীর পাড়ে ঘুরতে নিয়ে যায় অয়ন তাকে। আজ তিন মাস পর বাহিরে এসেছে প্রাপ্তি। নদীর তীরের ঠান্ডা হাওয়া ভেতরে থাকা মানুষটাকে নাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। আজ প্রাপ্তির খুব হালকা লাগছে, পাশে থাকা মানুষটাকেও আজ যেন খুব ভালো লাগছে। বেশ কিছুক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে থেকে পাশে তাকাতেই প্রাপ্তির শরীর জমে গেলো। অয়ন তখন …..

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here