#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃসূচনা_পর্ব
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
স্বামীর পাশে অর্ধ ঘুমে শুয়ে আছে অধরা। চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। কিছু মুহূর্তের জন্য থমকে যায় অধরার পুরো পৃথিবীটা। যখন অধরা অর্ধ ঘুমের ঘোরে শুনতে পায় তার স্বামী রাত জেগে অন্য কারোর সাথে ফোনে বেশ রোমান্টিক গল্প করছে। অধরা একটু কান তুলে শুনতে লাগলো তার স্বামীর ফোন আলাপ। বুঝতে আর বাকি নেই যে বিপরীত প্রান্তে থাকা মানুষটি কোনো একজন নারী। অয়নের বলা প্রতিটি কথা অধরার বুকে এসে তীরের মত এসে বিঁধছে। তীব্র ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তার কোমল হৃদয়ে। নিজের স্বামীর পাশে সামান্য কোলবালিশকে সহ্য করতে না পারা মানুষটি আজ দিব্বি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যর সাথে শেয়ার করে চলেছে অবিরত। কি এমন অপূর্ণতা আছে অধরার মধ্যে? যার জন্য তার স্বামী বিকল্প পথ বেছে নিলো! অধরার চোখের জল আর বুকের ক্ষত অয়নের অজানা। “অন্য নারীতে আসক্ত পুরুষ কখনোই কারো হৃদয়ের অনুভুতি, কষ্ট, কিছুই বুঝতে পারে না”।
— উফফফ অর্পা প্লিজ স্টপ ইট। এই সব কি বলছো তুমি? এতো রাতে তোমার সাথে কি করে দেখা করবো? তাছাড়া অধরা আমার পাশে শুয়ে আছে। কিছু বুঝতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
— কতকিছু আমি বুঝি না। আমার এখনি তোমাকে চাই মানে চাই। আর কত লুকাবে সব কিছু? ডিভোর্স দিয়ে চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দাও। আমাকে আপন করে নাও। প্লিজ আর পারছি না আমি।
— হুম। আসছি আমি। তুমি একটু অপেক্ষা করো।
* ফিসফিসিয়ে কথাটা বলল অয়ন। ফোনটা কেটে দিয়ে অয়ন নিজের বেড থেকে উঠে বসলো। অধরার দিকে একটু ঘৃণ্য দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করলো সে। অধরাকে বিপরীত দিকে মুখ করে শুয়ে থাকতে দেখে অয়ন আর কিছু ভাবলো না। পা টিপে টিপে বেরিয়ে অয়ন রুম থেকে। অয়ন রুম থেকে বেরিয়ে চলে যেতেই অধরা চোখ মেলে তাকালো। পাশে স্বামী নেই। শুন্য বিছানায় অধরা উঠে বসলো। চোখ জোড়া অশ্রুসিক্ত। অধরা চোখের জল ফেলছে আর ভাবছে কি এমন অপরাধ করেছে সে? যার জন্য তার স্বামী তার থেকেও আজ তার নেই? অধরা রুমের লাইট অফ করে বসে ভাবতে লাগলো তার স্বামীর কথা। আজ নিজের স্বামীর ইচ্ছে পূরণ করতে পারেনি বলে কি তাকে ফেলে তার স্বামী অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে পরেছে? কথাটা খুব ভাবাচ্ছে তাকে।
— উফফফ এতোক্ষণ সময় লাগে তোমার? জানো কতটা সময় ধরে আমি অপেক্ষা করছি এখানে।
অর্পা অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অয়নের বুকে মুখ লুকিয়ে বলছে কথা গুলো। অয়ন পরম আবেশে নিশ্চুপ হয়ে অর্পাকে আদর দিচ্ছে। অর্পার শরীর থেকে আফিমের নেশার মতো খুব মিষ্টি এক সুগন্ধ ভেসে আসছে অয়নের নাকে। অয়ন পরম তৃপ্তিতে অর্পার শরীরের সেই মধুর গন্ধ নাকে দিয়ে সেবন করছে। মনে মনে অয়ন বলছে “সারা দিন অফিস করে বাড়ি ফেরার পর অধরাকে জড়িয়ে ধরলেই শুরু হয়ে যেতো কত নাটক। উফফফ অসহ্য কর ঘামের গন্ধ আসতো তার থেকে। এই দিকে অর্পার শরীরের মিষ্টি সুমধুর গন্ধ আমাকে ব্যাকূল করে দেয়”। কথাটা ভাবার পরক্ষনেই অয়ন বুঝতে পারে তার থেকে সামান্য খাটো মেয়েটি তাকে তার দিকে প্রবল উত্তেজনায় ডাকছে। অয়ন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। অর্পার ঠোঁট জোড়ার দিকে দৃষ্টি রাখতেই অয়ন দেখতে পায় এই ঠোঁট জোড়া অয়নের ঠোঁটের পরশ পেতে উদগ্রীব হয়ে আছে। অয়ন অর্পার কোমর আলতো করে স্পর্শ পরে অর্পাকে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে। অর্পা অয়নের ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের সাথে এক করার জন্য এগিয়ে আসতে লাগলো। অয়ন অর্পার কোমর চেপে ধরে আছে। অর্পা অয়নের পিঠে নখের দাগে ভালোবাসার কালিমা এঁকে দিতেই অয়ন বেশ চমকে উঠে। অয়ন অর্পারে অবাক করে দিয়ে নিজের থেকে অর্পাকে দূরে সরিয়ে দেয়। অর্পা অয়নের এমন ব্যবহারে বরাবর কষ্ট পায়। অর্পা চায় অয়ন তাকে উজাড় করে ভালোবাসুক। কিন্তু সব ঠিক থাকার পরেও কেনো জানি অয়ন তাকে নিজের আদরে ভরিয়ে দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। তবে আজ যাই হোক না কেন অয়নকে নিজের করেই ছাড়বে অর্পা। অর্পা আবারও অয়নের দিকে এগিয়ে যায়।
* আমার স্বামীর সাথে আমার সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিলো। হ্যাঁ এখন সেই সম্পর্কটখ অতীতের পাতায় বিচরণ করে। কারন এখন আমার মাঝে আর অয়নের মাঝে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। ভালোবাসা যে এখন আমার প্রতি তার নেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দিনের পর দিন আমাকে অবহেলা করে গেছে বারংবার। বুঝতে পারিনি আমি কবে তার কাছে এতোটা অপ্রিয় হয়ে গেলাম। বাবা আদরে বড় হয়েছি আমি। জন্মের সময় মাকে হারিয়েছি। বাবা ২য় বিয়ে করে। সৎ মা এর সংসারে সহ্য করেছি মরন যন্ত্রণা। কলেজে যাবার পথে রোজ অয়নকে দেখতাম। ওকে দেখার পরে মনের মধ্যে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করতো। ভালো লাগতো তাকে। তবে প্রকাশ করার মতো সামর্থ্য আমার ছিলো না। একদিন হঠাৎ করে অয়ন পিছন থেকে আমার নাম ধরে ডাকলো। প্রথমবারের মতো প্রিয়জনের মুখ থেকে নিজের নাম শুনতে পেয়ে কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাই পিছন ফিরে তাকাই নি। ভেবেছি হয়তো ভূল শুনেছি। কিন্তু পরক্ষণে যখন অয়ন আমাকে উদ্দেশ্য করে আবার ডাকলো তখন আমার টনক নড়লো। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পাই অয়ন বেশ রাখি একটা লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই অয়ন রাগি কন্ঠে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— এই মেয়ে কথা কানে যায় না? আমাকে ইগনোর করা হচ্ছে! ফাজিল মেয়ে।
— সরি আমি শুনতে পাইনি। কি বলবেন বলুন।
— রিফাত কে হয় তোমার?
— কেউ না। আর এই নামে কাউকে চিনি বলে আমার মনে হয় না।
— সত্যি তো?
— হ্যাঁ, কিন্তু কি হয়েছে বলুন আমায়!
— ঐ রিফাত আমাকে অর্নিং করে এখানে দাঁড়িয়ে তোমার উপর দৃষ্টিপাত না করতে। ওর তো খবর করবো আমি। কিন্তু তার আগে তোমার ব্যবস্থা করতে হবে।
তারপর সেখান থেকেই রোজ রোজ ঝগড়া হতো। ঝগড়া থেকে সেখান থেকেই ভালোবাসা। দৈর্ঘ্য পথ পারি দিয়েছি এক সাথে। লোকটাকে এতো বছর ধরে যতটুকু চেনার চেষ্টা করেছি আজ মনে হচ্ছে তাকে চিনতে পারিনি আমি।
* কথাটা শেষ করতেই একটা দীর্ঘশ্বাস চলে আসে। হঠাৎ করে উপলব্ধি করতে পারলাম কেউ দ্রুত রুমের দিকে এগিয়ে আসছে। অধরা নিশ্চুপ হয়ে সবটা আড়াল করে বিছানায় শুয়ে পরলো। অয়ন নিজের রুমে এসে অধরার পাশে গিয়ে বসলো। অধরা ঘুমিয়ে আছে কি না তা নিশ্চিত হতে অয়ন অধরার চোখের উপর হাত নেড়ে নিশ্চিত হয়ে নিলো। অধরা ঘুমাচ্ছে। অয়ন অধরার পাশ থেকে উঠে ব্যল্কনির দিকে চলে যায়। ব্যল্কনিতে গিয়ে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে টানতে লাগলো অয়ন। সিগারেট শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পরলো সে।
* সকাল হতেই অয়নের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অধরা অয়নের পাশে শুয়ে আছে। অয়ন বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরাকে শুয়ে থাকতে দেখে খুব একটা খুশি অয়ন হয়নি। অয়ন অধরার দিকে রাগি একটা লুক নিয়ে এগিয়ে যায়। ঘুমন্ত অধরাকে ভিশন অবাক করে দিয়ে অয়ন অধরার…………………
#চলবে…..