ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি #পর্বঃ০৬,০৭

0
1275

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০৬,০৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

* অধরা স্টিগারে চাপ দিতেই পিস্তল থেকে দুম করে একটা ফুল বেরিয়ে আসে। অধরা চোখ বন্ধ করে আছে। অয়ন নিজের দুই হাত দিয়ে গাল ধরে চোখ জোড়া বড়বড় করে আছে। অধরা বুঝতে পারছে গুলি চলেছে তবে এটা বুঝতে পারছে‌ না ত রং কিছু হচ্ছে না কেনো? সে তো এখনও শ্বাস নিচ্ছে। অধরার বন্ধ চোখ ধিরে ধিরে খুলতে লাগলো। চোখ মেলতেই অধরা দেখতে পেলো গানের সামনে একটা গোলাপ ফুল। ফুলটা দেখে অধরার চোখে মুখে রাগের ছাপ ফুটে ওঠে। অধরা রাগে গজগজ করতে করতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— এসব কি অয়ন? এই গানে গুলি নেই কেনো?

— এইসব কি মানে? গুলি নেই কেনো তা আমি কি করে বলবো?

— আমার সাথে নাটক একদম না। গানে গুলি নেই কেনো? আমি জানতে চাই।

— আরে ভাই যার তার হতে গান থাকতে সেখান থেকে গুলি বের হয়‌ না। আর আমিই গুলি লোড করি নাই। যদি আমার দিকে গুলি চালাও এই ভয়ে গুলির বদলে ফুল সেট করেছি। বুঝেছো?

*অধরা অয়নের এই মিষ্টি হাসিতে ভূললো না। পিস্তলটা অয়নের দিকে ছুড়ে মারলো সে। “প্রচন্ড ঘৃণা লাগছে অয়নকে। এই ছেলে চায় কি? নিজে‌ থেকে আমার জীবনে এসে আমায় অবহেলা করে জীবন্ত মরা করে এসব কি করছে? কি চায় ও? আমাকে ওখান থেকে আনতে গিয়ে এই গেম খেললো তবে কি আমাকে ও ভালোবাসে? হাহাহাহা! সত্যি অধরা তুই একটা গাঁধী। তা না হলে যেই ছেলে আমি থাকার পরেও অন্য একটা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেয়। অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা বলে। আমার পাশে শুয়ে যে অন্য নারীর ভাবনায় মগ্ন থাকে। সেই লোকটা নাকি আমায় ভালোবাসবে! এটা হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া অন্যকিছু নয়। অয়নের এই ভালো মানুষিকতার আড়ালে নিশ্চই কোনো নোংরা খেলা আছে। যা আমি বুঝতে পারছি না। আমাকে খোঁজ নিতে হবে আর জানতেই হবে অয়ন আসলে চায় কি”? আপনমনে কথা গুলো ভাবতে লাগলো অধরা। অধরার ভাবনার অবসান ঘটে অয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করে। অয়ন অধরার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অধরা অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হয়ে‌ যায়। অয়নের চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করলো অধরা‌। এই চোখের মায়ায় যে কেউ ডুবে যেতে চাইবে। এতোটা মায়া অয়নের চোখে! এই চোখ জোড়ার দিকে তাকালে মনে হয় সব ভুলে ভালোবেসে কাছে টেনে নেই। কেউ একবারও বুঝতে পারবে না এই মায়াবী চোখের আড়ালে রয়েছে এক নোংরা চেতনার মুখ। সমাজের সামনে ভালোর মুখোশ পরে থাকা মিস্টায় অয়ন চৌধুরী আসলে কি তা আমার বোঝা হয়ে গেছে। অয়নের মায়াবী চোখ আর ঠোঁটের কোণে আঁকা মিষ্টি হাসি দেখে কেনো যেনো তার প্রতি ভিশন ঘৃণা হতে লাগলো অধরার। অধরা রাগি একটা লুক নিয়ে মুখ ঝামটা মেরে গাড়ির দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
জোরে জোরে ধাক্কার পরেও দরজা খুলছে না। অধরার দিকে বাঁকা হাঁসি হেঁসে অয়ন বলতে লাগলো

— কোনো লাভ হবে না। দরজা লক করা। আমাকে কি পাগল ভেবেছো? আমি খুব ভালোই জানি তুমি আমার সাথে যেতে চাইছো না। এই জন্য দরজাটা ভালো করে লক করে রেখেছি। যাতে করে রাস্তার মাঝে তুমি কোনো রকম পাঁয়তারা না করতে পারো। আহা বলছি তো লাভ হবে না। শক্তি নষ্ট করো না। এই শক্তিটা রাতে নষ্ট করলে ভালো হবে।

* অয়নের কথা শেষ হতেই অধরা দরজার দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে অয়নের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অয়ন অধরার অগ্নি দৃষ্টি দেখে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো আর অধরা অয়নের বিপরীত দিকে মুখ করে গাড়ির বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলো। অধরা আপন মনে ভাবছে ” একজন নারী হয়ে কি সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই? হ্যাঁ আমার পরিবারের মধ্যে শুধু মাত্র বাবা আমার। আর কেউ আমার নয়। তাই বলে অয়নের কাছে পরে থেকে অবহেলিত, অপমানিত হবো! অয়ন কি পারতো না নিজের সব টা দিয়ে আমায় ভালোবাসতে? আমি তো নিজের সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করি ওকে ভালো রাখতে। আমার ভালোবাসায় তো বিন্দুমাত্র অবহেলা ছিলো না। তবে কেনো আমি ভালোবাসা পেলাম না? যত যাই বলি না কেনো একটা কথা সত্যি যে একজন পুরুষ কে আমি নিজের প্রতি আসক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছি। একজন নারীর ব্যর্থতা হলো নিজের স্বামীকে নিজের প্রতি আসক্ত না করতে পারাটা।

অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অতিতের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে বাড়ির সামনে গাড়ি চলে এসেছে অধরার খেয়াল নেই। বাড়ির সামনে আসতেই অয়ন গাড়ি ব্রেক করে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— বাড়ি চলে এসেছে। এখন গাড়ি থেকে নামতে পারো। আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।

অধরা অয়নের কথার কোনো বিপরীতে উত্তর দিলো না। গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভিতরে চলে যায় সে। অয়ন বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ি নিয়ে পার্কিং করতে চলে যায়। অধরা বাড়িতে আসতেই কোথাও তার শাশুড়ি মা কে দেখতে পেলো না। অধরা রান্না ঘর থেকে শুরু করে সব দিকটা খুঁজে নিলো। কিন্তু কোথাও উনি নেই। অধরা অয়নের মা এর রুমে যেতেই দেখতে পেলো অয়নের মা বিছানায় শুয়ে আছেন। অধরাকে দেখতে পেয়ে উনি বেশ হাস্যজ্বল মুখে বলে উঠলো

— অধরা তুমি এসেছো মা!

অধরা রুমের ভিতর চলে এসে ওনার পাশে বসলো। অধরা ওনাকে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। ওনাকে দেখে বেশ অসুস্থ লাগছে। অধরা অয়নের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— মা তোমার কি হয়েছে? এভাবে শুয়ে আছো যে? শরীর ঠিক আছে তো তোমার?

— হুম মা। তুই চলে যাবার পরে একটু অসুস্থ হয়ে পরি। তোর বাবা কেমন আছে? তুই কেমন আছিস? তোকে ছাড়া আমার বাড়িটা একদম শুন্য লাগেরে মা।

— হুম মা। বাবা ঠিক আছে। তুমি মেডিসিন নিয়েছো?

— হ্যাঁ, তোর বাবা মেডিসিন এনে দিয়েছে কিন্তু খাওয়া হয়নি।

— তুমিও না মা। নিজের যত্ন নাও না একদমই।

অধরা তার শাশুড়ি মা কে ঔষধ খাইয়ে দিলো নিজ হাতে। অতঃপর কিছু কথা বলে নিজের রুমে ফিরে আসে অধরা। ফ্রেশ হতে হবে। অধরা নিজের রুমে আসতেই দেখতে পেলো অয়ন সোফায় বসে বসে ড্রিংক করছে। অধরা অয়নের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। আসলে অয়নের এই ড্রিংক করা বিষয়টা অধরার ভালো লাগে না একদমই। কিন্তু অয়ন তাও করে। অধরা ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখতে পেলো অয়ন রুমে নেই। অধরা কিছু না ভেবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল শুকিয়ে নিচ্ছে। আচমকা অধরাকে অবাক করে দিয়ে অয়ন পিছন থেকে এসে অধরাকে জড়িয়ে ধরে। অধরা একটু অপ্রস্তুত থাকায় অয়নের স্পর্শে ভয় পেয়ে যায়। অধরা কেঁপে উঠে অয়নের থেকে একটু আলগা হতে চেষ্টা করতেই অয়ন আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অধরা কিছুই বুঝতে পারছে না। অয়ন অধরার কাঁধে নিজের গাল ঘষতে থাকে। অধরার কাছে এই সব কিছু অসহ্য লাগছে। কিন্তু অয়ন নিজের থেকে অধরাকে আলাদা হতে দিচ্ছে না। অধরা অয়নের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে অহেতুক চেষ্টা করতেই অয়ন অধরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলছে

— অযথা ভয় পেয়ো না। আমি তোমার স্বামী। ভয় নেই।

কথাটা শেষ করে অয়ন অধরাকে চুমু খেতে লাগল। অধরা দাঁতে দাঁত চেপে অয়নকে উদ্দেশ্য করে ভারী কন্ঠে বলছে

— অয়ন প্লিজ! আমার এসব ভালো লাগছে না। ছেড়ে দাও আমায়।

— ছাড়ার জন্য ধরি নাই তোমায়। তুমি আমার বিয়ে করা বউ। আমার অধিকার আছে তোমার উপর জোর খাটানোর।

— তাই না। আমার ভিশন ঘৃণ্য লাগছে অয়ন। প্লিজ! আমাকে ছাড়ো।

অয়নের হাত জোড়া শক্ত করে ধরে এক ধাক্কায় নিজেকে কোনো মতে ছাড়িয়ে নিলো অধরা। অধরা অয়নের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অয়নের চোখ জোড়া ফের রক্ত বর্ণ ধারণ করলো। অয়ন রাগি দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে একপা একপা করে এগিয়ে আসছে। অধরা কিছুটা হাঁপাচ্ছে। অয়ন অধরার কাছে আসতেই ভিশন কর্কশ শব্দে অধরার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো সে

— এসব কি? আমার ইচ্ছের কোনো মূল্য কেনো তোমার কাছে নেই? সব সময় আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ে কি প্রমান করতে চাও আমায় ঘৃণা করো? নাকি ভাববো অন্য কাউকে দিয়ে নিজের ইচ্ছে……….

অধরা অয়নকে সম্পূর্ণ কথা বলার সুযোগ দিলো না। সর্ব শক্তি দিয়ে অয়নের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো সে। থাপ্পড়টা বেশ জোরে হওয়াতে থাপ্পড়ের শব্দে পুরো রুমটা কেঁপে উঠলো। অধরার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো অধরা

— তোর মতো নিচু মানসিকতার মানুষ আমি নই। যার তার সাথে বেড শেয়ার করা তোকে মানায়। কারন তুই একটা সস্তা দ্রব। তোকে কাছে পাওয়া কোনো বড় বিষয় না হতে পারে কিন্তু আমি দামী। যার তার সাথে আমাকে পাওয়া যায় না। তোর মতো একটা নিচু চরিত্রের ছেলেকে ভালোবাসায় জড়িয়ে নেয়া যায় না। কারো সম্পর্কে বাজে কথা বলার আগে হাজার বার নিজেকে প্রশ্ন করবি সবাই তোর মতো ব্লাডি সাইকো মাইন্ডেট না।

অধরার কথা শেষ হতেই অয়ন একটা রাক্ষুসে হাসি ঠোঁটের কোণে এঁকে অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অধরাকে দেখে মনে হচ্ছে রাগে ফেটে যাবে সে। অয়নের চোখ থেকে মনে হচ্ছে রক্ত বেরিয়ে যাবে। অয়ন অধরার দিকে ভালো করে তাকিয়ে নিলো। ঘৃণ্য এক হাসি দিয়ে অধরাকে………………….

#চলবে..……….

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
ঘৃণ্য এক হাসি দিয়ে অধরাকে নিজের খুব কাছে টেনে নিলো অয়ন। অয়নের‌ চোখে ক্রোধের আগুন জ্বলছে। আজ পর্যন্ত কেউ অয়নের অপমান করে থাপ্পড় দেয়ার মতো দুঃসাহস করেনি। অয়ন অধরাকে নিজের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো

— আমি অন্যের সাথে বিছানা শেয়ার করি তাই না। কার সাথে বেড শেয়ার করেছি? বল আমায়। আর কি বললি আমি নিচু মানসিকতার লোক। তোদের মতো‌ না আমি‌! হ্যাঁ,‌ আমি মেনে নিলাম আমি নিচু‌ মানুসিকতার মানুষ। আমি তোদের মতে হতে পারিনি। কিন্তু চেষ্টা করছি তোদের মতো হয়ে ওঠার। ঠিক তোদের মতো প্রতারক।

অধরা অয়নের কথার কোনো মানে বুঝতে পারছে না। “তোদের মতো প্রতারক মানে? তবে কি অয়ন কোনো ভাবে প্রতারিত হয়েছে? যদি অয়ন প্রতারিত হয়ে থাকে তবে কেনো সে এমন করছে? সে কি বুঝতে পারে না কাউকে ঠকালে অতটা কষ্ট হয়? সে কি বোঝে না প্রিয়জন যখন অন্যের হয়ে যায় তখন কতটা কষ্ট হয়? অয়নের কথার মানেতে‌ এতো টুকু পরিস্কার যে অয়ন প্রতারনা করছে সবার সাথে। কিন্তু কেনো? এই কারন টাই আমার মাথায় ঢুকছে না”। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে অধরা অয়নের কথা গুলো গভীর ভাবে ভাবছে। অধরার নিরবতা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। অয়ন কর্কশ গলায় অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— তুই আমার স্ত্রী। তোর প্রতি আমার অধিকার আছে। সেই শুরু থেকে এখন উবদি তুই আমাকে সব সময় এড়িয়ে চলেছিস। তোর কাছে আমার কোনো ইচ্ছের মূল্য নেই। কিন্তু আর না। আমি এখন থেকে নিজের অধিকার নিজে আদায় করে ছাড়বো।

অয়ন কথাটা শেষ করতেই অধরাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে দুই হাত। অধরা অয়নের চোখ বরাবর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কোনো প্রকার চেষ্টা করছে না নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার। অয়ন অধরার ঠোঁটের দিকে কোনো বাঁধা না পেয়ে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ করে অয়নের চোখে পরলো অধরার চোখ জোড়া বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। অয়ন এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। আপন মনে অয়ন নিজেকে নিজে বলতে লাগলো “ছিঃ! আমি একটা মেয়েকে জোর করছি? যেখানে আমি চাইলে হাজারটা মেয়ে আমার ইচ্ছে পূরণ করতে চলে আসবে। সেখানে অধরাকে বার বার জোর করে কাছে পাবার বৃথা চেষ্টা কেনো করছি আমি? অধরা চায় না আমার স্পর্শ। তবে আমি কেনো ওকে স্পর্শ করার জন্য এতোটা উদগ্রীব হয়ে উঠেছি? না। এটা করা যাবে না। আমি যতটা নিচু চরিত্রের ছেলে হিসেবে নিজেকে তৈরি করি না কেনো আমি কখনও কারো উপর জোর খাটাতে চাই না”। অয়ন অধরার চোখের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে। অধরার চোখে তার জন্য বিন্দুমাত্র ভালোবাসার ছাপ নেই। অয়ন অধরার দিকে মৃদু একটা হাসি দিয়ে অধরাকে ছেড়ে দেয়। অধরার হাত জোড়া ছেড়ে দিয়ে অয়ন অধরার দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। অধরা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। অধরার সামনে থেকে চলে যেতে নিতেই অধরার পিছন থেকে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— কি হলো মিস্টার অয়ন চৌধুরী? ইচ্ছে শেষ হয়ে গেলো? জোর করে ধর্ষণ করবেন না? উফফফ! সরি। ধর্ষন না তো। আপনার অধিকার আছে আমার উপর। আমি আপনার স্ত্রী। নিজের স্ত্রী কে জোর করে কিছু করাকে ধর্ষণ বলে না। ভাত, কাপড় দিয়ে নিজের শারীরিক ক্ষুধা মিটানোর জন্য আমাকে আপনার প্রয়োজন। আপনার শারীরিক ক্ষুধা এতোটাই তীব্র যে আমি তা মেটাতে অক্ষম। তাই তো আপনার অন্য নারী প্রয়োজন। প্লিজ আমি প্রস্তুত আছি। মিটিয়ে নিন নিজের ইচ্ছে। চেষ্টা করবো আপনার ইচ্ছে পূরণ করতে।

অধরার কথা বলার মাঝে অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অধরার মুখে এই কথা গুলো প্রথমবারের মতো শুনছে অয়ন। তাই একটু অবাক সে। অয়নের চোখ রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। অধরার কথা শেষ হতেই অয়ন বাঁকা হাসি দিলো। অধরাকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— সরি। তোমাকে জোর করা আমার উদ্দেশ্য ছিলো না। সরি। আমি নিজের অজান্তেই এমনটা করে ফেলেছি।

— কি হলো? লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন কোথায়? এতো সুন্দর শরীর আপনার পছন্দ হলো না? একটু আমার দিকে তাকিয়ে তো দেখো। আশা করি খুব পছন্দ হবে।

অয়ন অধরার সামনে থেকে চলে যেতে নিতেই অধরা বেশ শব্দ করে কথাটা বলল। অয়ন অধরার কথা গুলো কোনো ভাবেই মানতে পারছে না। অধরা এমন করে কথা এর আগে কখনও বলে‌ নি। অয়ন অধরার উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে নিবে তার আগেই অধরা নিজের বুকের উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা মাটিতে ফেলে দিলো। অয়ন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। অধরা অয়নের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল

— দেখ অয়ন এই শরীরটা। এর জন্যই তো অন্যের কাছে যাস তুই! নে ভোগ কর নিজের ইচ্ছে মতো‌‌। আজ আর তোকে বলবো না আমার অসস্থি বোধ হচ্ছে। আজ তোকে এই শরীরের বিনিময়ে আটকাতে চাই আমি। ভালোবাসি তোকে। তাই অন্য কারোর কাছে যখন যাস কষ্ট হয় আমার। নে শুরু কর। ড্রিংক করে মাতাল হয়ে বিছানায় আসবি? আমি তা হলে রেডি হয়ে শুয়ে পরি কেমন? পছন্দ হয়েছে তো তোর? বলছিস না কেনো? উত্তর দে আমায়।

* অয়ন মাথাটা নিচু করে আছে। মুখে কোনো জবাব নেই। দুনিয়াটা ২য়বারের জন্য মনে হচ্ছে থমকে গেছে তার। অয়ন আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেশ দ্রুত বেরিয়ে যায়। অয়ন রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই অধরা মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। ছোট বেলা যখন মাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পরেছিলো সে তখনও এতোটা অসহায় মনে হয়নি। যতটা অসহায় আজ লাগছে। ছোট বেলা থেকে সৎ মা এর অত্যাচার আর কটু কথা ছাড়া কপালে একটু স্নেহ জোটেনি। ভেবে ছিলাম আমার স্বামীর হাত ধরে তার কাছ থেকে সব পাবো। সে আমাকে আমার মতো করে বুঝবে। ভালোবাসা দিয়ে আমাকে আগলে রাখবে তার‌ বুকে। কিন্তু অভাগী আমি। আমার স্বামী আমার কখনও ছিলো না। আমি তাকে খুশি করতে পারি নাই এটা একটা অজুহাত মাত্র। বিয়ের পর থেকে তো অয়ন আর‌ আমার মধ্যে সব ভালো চলছিলো। হঠাৎ করেই অবহেলা শুরু করে দিলো। আর তারপর মা হলো তা তো দেখলেনই। ভালোবাসা। সেটা পাবার জন্য ভাগ্য লাগে। যা আমার নেই।

* অধরা কান্না করতে লাগলো। এতোটা ছোট হয়ে গেলো সে নিজের কাছে নিজে যে নিজের দিকে তাকাতেও তার ঘৃণা লাগছে।

— অয়ন এতো রাতে আমাকে কল করে এখানে ডেকেছিস কেনো? সব ঠিক আছে তো?

নাইট ক্লাবে বসে নিশ্চুপ হয়ে ড্রিংক করছে অয়ন। পাশে বসে আছে তার সব থেকে কাছের বন্ধু রাজ। রাজের প্রশ্ন শুনে গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে সবটা মদ গিলে একটা হাফ ছেড়ে‌ শ্বাস ফেলে রাজকে উদ্দেশ্য করে বলল অয়ন

— কেনো রে আমার পাশে বসতে লজ্জা লাগছে তোর?

— এই অয়ন কি বলছিস ভাই? লজ্জা কেনো করবে? এমনি বললাম। ভাবীর সাথে ঝগড়া করে এসেছিস?

রাজের প্রশ্নের কোনো জবাব অয়ন দিলো না। আপনমনে রাজকে বললো সে

— আচ্ছা আমি এতোটাই নিচে নেমে গেছি যে আমার সাথে মানুষের ব্যবহার এতোটা নিচে নেমে গেছে। রাজ আমি সত্যি নিজেকে নষ্ট ছেলের উপাধি দিতে পেরেছি। আমার স্ত্রীর চোখে আমি সারা জীবনের মতো একটা নিচু চরিত্রের মানুষ হয়ে গেছি। আজ আমি খুব খুশি।

— অয়ন দেখ তোকে আমি আগেও বলেছি একজন তোর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে বলে সবাইকে এক দৃষ্টিতে বিচার করিস না। অধরা তোর জন্য বেস্ট চয়েস। তুই ওকে কেনো কষ্ট দিস?

— কেনো দেই জানিস? ওর চোখের দিকে তাকালে আমি সেই ভালোবাসা দেখতে পাই যেটা রোহানার চোখে ছিলো। আমি সবার মধ্যে রোহানাকে দেখতে পাই। সেই রোহানার মতো অভিনয়। ভালোবাসা নিয়ে ঠকানোর দৃশ্য। আমি মেনে নিতে পারি না। সত্যি মানতে পারি না। আমি যতটা কষ্ট সহ্য করেছি ঠিক ততটা কষ্ট সবাইকে দিতে চাই।

— অয়ন এটা তোর মানুষিক সমস্যা। সবাই এক নয়। তুই একটা বাধা নিয়মে আটকে আছিস। তাই তোর এমন মনে হয়। প্লিজ নিজেকে একটু বোঝা সবাই এক না। এমন করলে অধরাও তোকে ছেড়ে যাবে।

— অধরা আমাকে ছেড়ে যাবে এইটা আমি বেঁচে থাকতে সম্ভব না। আমি ওকে কোথাও যেতে দিবো না। আমি ওকে আরো কষ্ট দিবো। কষ্ট দিয়ে ওকে বুঝিয়ে দিবো আজকের কথা গুলো আমায় কতটা আঘাত করেছে।

— অয়ন ভাই তুই একটু নিজেকে কষ্ট দে। নিজেকে বোঝা তুই যা করছিস এটা কি আদু ঠিক? তুই ভাবছিল তোর মতামত শেষ কথা। কিন্তু না। অবহেলা একটা পবিত্র সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। অধরাও একদিন বিলিন হয়ে যাবে তোর জীবন থেকে। তখন হয়তো বুঝতেও পারবি তুই।

রাজ অয়নের সামনে থেকে উঠে চলে যায়। অয়নের‌ সাথে বসাটাও এখন বিবেচ্য বিষয় হিসেবে পরিনত হয়েছে। রাজের চলে যাওয়ায় অয়নের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। অয়ন ড্রিংক করে চলেছে অবিরত।

* ভোর হয়ে গেছে কিন্তু অয়ন এখনও বাড়ি ফেরে নি। অধরা নিজের বিছানায় বসে আছে। সারা রাত ঘুম আসেনি তার চোখে। অয়নের জন্য চিন্তা হচ্ছে। ঠিক আছে তো অয়ন? অয়নের কথা ভাবতেই হঠাৎ করে দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। অধরা বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার কাছে চলে যায় দেখতে যে অয়ন এসেছে কিনা? দরজা খুলতেই অধরা বেশ অবাক হয়ে যায়। অধরা দরজা খুলতেই দেখতে পায় দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে………….

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here