ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি #পর্বঃ০৮,০৯

0
1136

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০৮,০৯
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

* অধরা দরজা খুলতেই দেখতে পায় দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব। অর্ণব হলো অয়নের কাজিন। অর্ণব সেই যে বিয়ের সময় এখানে এসেছে ছিলো। আর কখনও এমুখো হয়নি। আসলে অর্ণব আমেরিকা থাকে। সেখানেই বিজনেস করে বলে দেশে ফেরা হয় না। অর্ণবকে অধরা ঠিক চিনতে পারলেও একটু না চেনার ভান করলো সে।

— আপনি কে মিস্টার? এখানে কাকে চাই?

অধরার কন্ঠ শুনে অর্ণব চোখের উপর থেকে সানগ্লাসটা নামিয়ে একটু আমতো আমতো করে বলতে লাগলো

— এটা কি অয়ন চৌধুরীর বাড়ি? আসলে আমি অয়নের কাছে এসেছিলাম। ভূল করে বোধহয় এখানে চলে এসেছি।

— এই দাঁড়ান দাঁড়ান। এটা অয়ন চৌধুরীর বাড়ি কিন্তু ভাই আপনি কে? আর অয়নকে কেনো খুঁজছেন?

অধরার কথা শেষ হতেই অর্ণব হাত থেকে লাগেজটা মাটিতে ফেলে দিয়ে একটু রাগি লুক নিয়ে নিজের কোমরে হাত দিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— উফফফ! ভাবী। তুমি আর মানুষ হলে না। এতো দূর থেকে তোমার আদরের দেওর আসছে কোথায় না হাল চাল জ্বিজ্ঞাস করবে। তা না করে আপনি কে?

— হাহাহাহা! হুম আসো ভিতরে সবাই তোমাকে দেখলে একদম সারপ্রাইজড হয়ে যাবে। তবে একটা কথা আসার‌ আগে আমাদের জানালে না কেনো?

— ওমা জানালে আর সারপ্রাইজ থাকতো কি করে?

— হুম।

* অধরা অর্ণবকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে আসে। সবাই সকাল সকাল অর্ণবকে দেখে ভিশন অবাক হয়ে যায়। সবাই একদম সারপ্রাইজড। অর্ণব অয়নের বাবা মা কে জড়িয়ে ধরলো। আসলে অর্ণবের কাছে পৃথিবী বলতে এরাই আছে।

— স্যার, সকাল হয়ে গেছে?

ওয়েটারের বিরক্তিকর কন্ঠ কানে আসতেই অয়নের ঘোর কাটে। টেবিলের দিক থেকে মাথাটা উঁচু করে ওয়েটারের দিকে দৃষ্টিপাত করলো অয়ন। মৃদু হাসি দিয়ে অয়ন ওয়েটারের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো

— সকাল হয়ে গেছে?

— জ্বি স্যার। প্লিজ উঠুন।

— হ্যাঁ, উঠছি।

অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে একটু বেগ পেতে হলো। সারা রাত বসে থেকে এখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে কোমড়ে হালকা টান অনুভব করলো সে। অয়ন টেবিল থেকে উঠে পেমেন্ট দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। চোখ ব্যথা করছে ভিশন। এর‌ আগেও রাত জেগেছি বহুবার কিন্তু কখনও এমনটা হয়নি। আজ হঠাৎ করেই এমন হচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে অয়ন নিজের‌‌ গাড়িতে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো। অফিসে যেতে হবে। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করছে আর অধরার কথা ভাবছে। কতটা বাজে ভাবে কাল রাতে ব্যবহার করেছে সে। অধরার কথা মনে পরতেই অয়নের মনে পরে যায় অধরার দেয়া থাপ্পড়ের কথা। অয়ন একটা হাত‌ নিজের‌ গালে রাখলো। এর জবাব হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ি দিতে হবে।

* অফিসে এসে অয়ন নিজের চেম্বারে গিয়ে বসলো। নিজের কেবিনে বসে অয়ন ল্যাপটপ টা অপেন করলো। কিছু ফাইল ডাউনলোড করে নিলো অয়ন। ফাইল গুলো ডাউনলোড হতেই অয়নের চোখ পরলো অর্পার দিকে। অর্পা মনটা বেশ উদাস করে অফিসে প্রবেশ করলো। আসলে উদাস হবে নাই বা কেনো? অয়ন যে এখন আর তার কাছে আসে না। জড়িয়ে ধরে গল্প করে না। দূরে ঠেলে দিয়েছে তাকে। অর্পার নিজের‌ ডেক্সে এসে কাজ করতে শুরু করলো। অয়ন অর্পার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। এভাবে কতজনের মন নিয়ে অয়ন খেলেছে তার হিসেব করা দায়।

দুপুরের দিকে অয়ন লাঞ্চ করার জন্য নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে ক্যান্টিনে চলে আসে। ক্যান্টিনে আসার সময় অর্পাকে কোথাও দেখা গেলো না। অয়ন ক্যান্টিনে আসতেই দেখতে পেলো সবাই খাবার‌ খাচ্ছে। আশে পাশে ফাঁকা সিট বলে কোথাও কোনো জায়গা নেই। অয়ন ভালো করে তাকাতেই দেখতে পেলো অর্পাকে। একা বসে আছে চুপ চাপ। অয়ন একটু থমকে থেকে কিছু একটা ভেবে অর্পার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। অয়ন অর্পার টেবিলের সামনে আসতেই অর্পা অয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অয়নের দিকে তাকাতেই অর্পার চোখ জোড়া ছলছল হয়ে আসে। অয়নের সেই দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। অয়ন অর্পার সামনে বসে লাঞ্চ করতে‌ লাগলো। অয়ন খাবার খাচ্ছে। অর্পা কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। কিছু সময় নিরব থেকে অর্পা আর নিরব থাকতে পারলো না। মুখ ফুটে বলে ফেললো

— কেমন আছেন? সব ঠিক তো?

অয়ন অর্পার কথা শুনে মুখ তুলে অর্পার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জবাব দিলো

— আমি ভালো আছি। তুমি থেকে আপনি করে বলার কারন কি?

— উহু অধিকারের পাতা সিমাবদ্ধ। মানুষের মিছক প্রতারনাকে সত্যি ভালোবাসা ভেবে ঠকে গেছি আমি।

— এই ওয়েট ওয়েট ঠকেছো মানে? আমি তোমার সাথে এমন কিছু করি নাই যাকে ঠকানো বলে।

— ভালোবাসার‌ অনুভূতি মনের মধ্যে জাগিয়ে দূরে ঠেলে দেয়াকে কি বলে তা আমার জানি নাই।

— হুম।‌ খাবার‌ খাও।

— গলা দিয়ে নামছে না।

— ওহহহ, তাই। কোনো এক সময়ে আমারও সেম এমনি অবস্থা হয়ে ছিলো। কিন্তু নাউ আমাকে দেখো। একদম ঠিক ঠাক।

— হুম।

অর্পা অয়নের সামনে থেকে উঠে চলে যায়। বেশ কষ্ট হচ্ছে অয়নের কথা গুলো শুনে। অয়নের কোনো পাত্তা নেই। অয়ন খাবার শেষ করে নিজের কেবিনে ফিরে এসে আবার‌ কাজ করতে লাগলো। কিছু সময় কাজ করতেই অয়নের ফোনটা বেজে উঠলো। অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো রাজ কল করেছে। অয়ন কলটা পিক করলো না। কারন কাল রাজ অয়নের মনে আঘাত করেছে। অয়ন আবার কাজে মন দিলো।

* রাতে কাজ শেষ করে অয়ন নিজের গাড়ির দিকে চলে আসে‌। বাড়ি যেতে হবে। অয়ন গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে এসে অয়ন গাড়িটা পার্ক করে বাড়ির ভিতরে চলে আসে। বাড়িতে এসে অয়ন নিজের রুমের দিকে চলে আসে। রুমের দরজার সামনে আসতেই অয়ন থমকে যায়। রুমের ভিতর থেকে অধরার হাসির শব্দ ভেসে আসছে। অয়ন দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কি কারনে অধরা এতো হাসছে? কাল রাত থেকে আমি বাড়ি ফিরি নাই। বেঁচে আছি কিনা তা জানার জন্য হলেও একটা কল করা আবশ্যক ছিলো। কিন্তু অধরা একটা কল ও করেনি। হুম, প্রয়োজন পরেনি। প্রয়োজন পরলে অবশ্যই করতো‌। তাছাড়া আমি বেঁচে থাকলেও অধরার কিছু রায় আসে না। আর মরে গেলেও না।

* অয়ন দরজার বাহির থেকে নিজের রুয়ে ঢুকতেই একটু অবাক হয়ে যায়। অধরা আর অর্ণব পাশাপাশি বসে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে। অয়ন কে দেখতে পেয়ে অর্ণব বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অয়নের দিকে ছুটে চলে আসে। অয়নকে জড়িয়ে ধরে অর্ণব হাস্যজ্বল মুখে বলতে লাগলো

— কিরে অয়ন কেমন আছিস? অবাক হয়ে গেছিস আমায় দেখে? আরে তোকে সারপ্রাইজ দিতেই তো না বলে আসা।

— হুম। কখন এসেছিস?

— এই তো সকাল বেলা।‌ এসে শুনলাম তুই নাকি অফিসের জন্য চলে গেছিস। তাই আর বিরক্ত করি নাই

— ওহহ। আচ্ছা রাত অনেক হয়েছে যা রেস্ট করে নে।

— এতো বছর তো ঘুমিয়েছি ভাই। আজ নো ঘুম যাস্ট আড্ডা হবে।

— সরি। আমার ইচ্ছে নেই। ঘুম পাচ্ছে আমার।‌

অয়ন কথাটা শেষ করে অর্ণবকে একটু সাইড করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। অয়নের ব্যবহারে অর্ণব বেশ অবাক হলো। “অয়ন তো কখনও এমন করেনি। বেশ হাসি খুশি একটা ছেলে। আড্ডা মারার কথা শুনতেই যার মনে লাড্ডু ফুটে যায়। সেই অয়ন আমাকে এড়িয়ে গেলো”? আপনমনে কথাটা ভাবছে অর্ণব। অধরা চুপ‌ করে‌ দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণবের উপস্থিতি অয়নের পছন্দ হয়নি তা অধরা বেশ বুঝতে পারছে। অর্ণব অধরার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা একে বলে উঠলো

— আচ্ছা ভাবী অয়ন মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত। আমি এখন আসি। আড্ডা কাল দিবো ওকে।‌

— জ্বি,‌‌ ঠিক আছে।

অর্ণব চলে গেলো। অয়ন ফ্রেশ হয়ে এসে এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করতে লাগলো। অধরা সোফায় বসে ছিলো। পিছন থেকে অয়নকে উদ্দেশ্য করে অধরা বললো

— অর্ণবের উপর রাগ থাকতে পারে। কিন্তু ছেলে টাকে ভালো করে দু চারটা কথা বললে হয়তো ওর ভালো‌ লাগতো।

অধরার কথার কোনো জবাব অয়ন দিলো না। নিশ্চুপ হয়ে নিজের কাজ করছে সে। অধরা আবারও কথাটা রিপিট করতেই অয়ন ফোঁস করে পিছন ফিরে তাকিয়ে বলতে‌ লাগলো

— আমি কেনো সবার‌ ভালো লাগা খারাপ লাগা দেখবো? অদ্ভুত। রাত জেগে আড্ডা দিতে ইচ্ছে করলে তুমি দিতে পারতে তো? আমি বারন করি নাই। আর আমার বারন যে কতটা কার্যকর হবে তা আমার জানা আছে। বাই দ্যা ওয়ে আমি এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।

* অধরাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না অয়ন। নিজের কথা শেষ করে ব্যল্কনির দিকে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে খেতে লাগলো সে। অধরা কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। অয়ন অনেকটা সময় ব্যল্কনিতে‌ থাকার পরে অধরা চুপটি করে ব্যল্কনির দিকে চলে আসে। অয়ন আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবনায় মগ্ন। অধরা অয়নের পাশে দাঁড়িয়ে নম্ন গলায় অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— খাবার দিবো কি?

কথাটা শেষ করার সাথে সাথে অয়ন বসা থেকে দুম করে উঠে দাঁড়িয়ে অধরাকে……….

#চলবে…………

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০৯
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

*কথাটা শেষ করার সাথে সাথে অয়ন বসা থেকে দুম করে উঠে দাঁড়িয়ে অধরাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রাগে গজগজ করতে করতে বলল

— একদম চুপ। নেকামি হচ্ছে এখানে? ভালোবাসা গড়াগড়ি খাচ্ছে তাই না। ব্লাডি স্টুপিট মেয়ে একটা।

কথাটা শেষ করতেই অয়ন অধরাকে এক ধাক্কা দিয়ে নিজের অধরার সামনে‌ থেকে‌ সরে যায়। অধরা থ মরে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার। অয়ন অধরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— এখানে এখনও দাড়িয়ে কি শুটিং দেখা হচ্ছে? যেতে বললাম না। কথা কানে যায় না? যাও অর্ণবের সাথে বসে ডিনার করো। ওকে‌ গিয়ে বলো খাবার দিবে কি না। নেকমি যত্তসব।

অয়নের ধমক খেয়ে অধরা নিজের রুমে চলে এলো। বিছানায় বসে অয়নের কথার মানে খুঁজতে লাগলো সে। আপন মনে ভাবছে অধরা “এই সাইকো মার্কা লোকটা এমন করছে কেনো? সবাইকে নিজের মতো ভাবে। তা না হলে অর্ণবকে নিয়ে এতোটা রেগে যেতো‌ না। ভালো কথা বলেছি দোষ হয়ে গেছে। আজব” অধরা বিছানা ঠিক করে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো। অয়ন ব্যল্কনিতে বসে রইল। অধরার সাথে অর্ণবকে দেখার পরে শরীরের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠে তার। যদিও অধরাকে সে ভালোবাসে না। তবে কেনো অধরার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না সে? অয়ন অনেক কিছু চিন্তা করতে করতে কখনও যে সোফার উপর বসে ঘুমিয়ে গেছে তা‌ মনে নেই।

*অয়নের ঘুম ভাঙ্গে অধরার মিষ্টি সুমধুর কন্ঠে। অধরা ঘুমন্ত অয়নের বুকের উপর হাত রেখে পরম আবেশে অয়নকে ডাকছে।

— অয়ন। ওঠো সকাল হয়ে গেছে। অফিসে যাবে না?

— উহু….!

— ওকে ঠিক আছে।

কথাটা বলা শেষ করতে করতে অধরা অয়নের পাশ থেকে উঠে চলে যেতে নিলো। অয়ন কোনো অধরাকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অধরা হাত দুম করে চেপে ধরলো। অধরা মুখ ঘুরিয়ে পিছন ফিরে অয়নের দিকে তাকানোর সাথে সাথে অয়ন অধরাকে হেঁচকা টান দিলো। অধরাকে হেঁচকা টান দিতেই অধরা তাল সামলাতে না পেরে অয়নের বুকের উপর এসে পরলো। অয়ন অধরার হাত ছেড়ে দিয়ে অধরার কপালের উপর এলোমেলো চুল গুলো সযত্নে ঠিক করে দিতে লাগলো। অধরা‌ নিজের চোখ জোড়া বড়বড় করে অয়নের চোখ বরাবর দৃষ্টি রাখলো। অয়নের ঠোঁটের কোণে মিষ্টি একটা হাসি উঁকি দিচ্ছে। অয়ন প্রতিটা স্পর্শে অধরার বেশ অবাক হচ্ছে। এক রাতের মধ্যে হঠাৎ করে কি এমন হলো যে অয়নের ব্যবহার এতোটা বদলে গেলো? কথাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অয়ন অধরার কানের পিছনে নিজের হাত গুজে দিয়ে অধরার ঠোঁট জোড়া নিজের দিকে টানছে। অয়নের নাকের গরম নিঃশ্বাস অধরার মুখের উপর পরছে। অধরা বুঝে উঠতে পারছে না এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত! অধরার চেহারায় বিরক্তি স্পষ্ট। অয়নের সেই দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। অয়ন অধরার ঠোঁট জোড়ার সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া এক করবে ঠিক এমন সময় অধরা অয়নের বুকের উপর ভর করে নিজেকে অয়নের থেকে আলাদা করে নিলো। অয়নের বুকের উপর থেকে অধরা সরে গিয়ে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন নিশ্চুপ হয়ে আছে। অধরা উঠে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে। হাত পা কাঁপছে অধরার। অয়ন শোয়া থেকে উঠে বসলো। অধরা‌ অয়নের দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করলো না। হনহন করে সে চলে যায় ব্যল্কনির দিক থেকে। অয়ন মাথাটা নিচু করে বসে আছে। আপন মনে অয়ন নিজের দিকে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিলো। “যত ভাবি নিজের দিকে অধরাকে টেনে নিবো। অনেক ভালোবাসা দিবো। কিন্তু ততই অধরা আমাকে প্রমান করে দেয় আমার জায়গাটা কোথায়। বেহায়া, নির্লজ্জের মতো বার বার নিজেকে ওর কাছে বিলিয়ে দিয়ে আমি এটাই প্রমান করি তাকে ছাড়া আমার চলে না। নিজের থেকে বেশি গুরুত্ব অন্য কাউকে দিলে এমনটাই হবে”। অয়ন সোফা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

“কেনো আমি অয়নের স্পর্শ অনুভব করতে পারি না? যখন ওর খুব কাছে থাকি তখন কেনো আমার অসহ্যকর লাগে? আমিতো ওকে ভালোবাসি। তবে কেনো মন‌ থেকে ওকে মেনে নিতে পারি না? অয়নের অতিতের কথা গুলো মনে পরতেই অয়নের প্রতি তীব্র ঘৃণা কাজ করে। ওর চোখে আমি ভালোবাসা দেখতে পাই না। ওর চোখে আমি দেখতে পাই সেই এক অমানুষিক ব্যক্তিত্ব। যেই ব্যক্তিত্ব আমাকে ঠকিয়ে। যে ব্যক্তিত্ব আমার প্রতি আসক্ত নয়”। রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে রান্না করছে অধরা। রান্নার প্রতি তার কোনো মনোযোগ নেই। অয়নের কথা গুলো মনে পরতেই চোখের কোনে জল চলে আসে। সেই সাথে ঘৃণা।

— পেঁয়াজের ঝাঁজ কি চোখ থেকে নাকে এসে পরেছে?

অর্ণবের মৃদু কন্ঠে অধরার কানে ভেসে আসতেই অধরা নিজের চোখের জল আড়াল করে ফেললো। ঠোঁটের কোণে একটু হাসি এঁকে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল অধরা

— আরে কোথায় পেঁয়াজ আর কোথায় আমার চোখ! পেঁয়াজের সাথে আয়ার চোখের সম্পর্ক অনেক আগেই ছিন্ন হয়েছে। এখন আর পেঁয়াজের ঝাঁজ আমার চোখকে স্পর্শ করে না।

— যদি তাই হয় তবে চোখে জল কেনো ভাবী?

— আরে চোখে জল থাকবে এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নিয়ে তর্ক করার মানে হয় না।

— হুম। পেঁয়াজের মতো করে চোখে জল আসার সম্পর্ক গুলোর সাথেও চিরতরে বিচ্ছেদ করে দিতে পারতে হয়। তা না হলে চোখের জল সর্বদা তারা করে বেরাবে।

— মানে…!

* অর্ণবের কথার মানে অধরার বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয়। অধরা বেশ বুঝতে পারছে অর্ণব অয়নের সাথে অধরার সম্পর্কে কথা বলছে। অধরা অর্ণবের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অধরা বেশ অবাক হয়ে যায়। অর্ণবের পিছনে অয়ন দাড়িয়ে আছে। অধরা অর্ণবের কথাতে যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকেও কয়েক গুণ বেশি অবাক হয়েছে অয়নের উপস্থিতিতে। অয়নকে দেখে অধরা‌ খুব বুঝতে পারছে অয়নের কান‌ এই কথাটা এড়িয়ে যায় নি। অয়ন অর্ণবের পিছন থেকে অধরার দিকে কিছু সময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে যায়। অধরা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণব অধরাকে নিশ্চুপ দেখে আবারও বলতে লাগলো

— যেটা আমি বলেছি এটাই করা উত্তম। আমি জানি অয়নের সাথে আপনার ভালো সম্পর্ক নেই। সব দিক থেকে বিচার করলে এটা বোঝা যায় যে অয়নের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলাতেই মঙ্গল। অয়নের মতো নিচু চরিত্রের একটা……….

— ঠাসসসসসস, ঠাসসসসসস। তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি অর্ণব। অয়ন আর আমার মাঝে কি সম্পর্ক আছে! কেনো আছে? কি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে? কি করি আমাদের জন্য মঙ্গলময়? সেটা আমরা দুজন ডিসাইট করবো। নিজের ভাইয়ের বিষয়ে বাজে মন্তব্য করে তুমি ভদ্রতার চরম সিমা লংঘন করেছো। আশা করি এই থাপ্পড়টা লাইফে সেকেন্ড বার এই ভূল করা থেকে তোমাকে সাবধান করবে।

* অধরা রাগে ফেটে পরেছে অর্ণবের কথায়। যে ছেলে নিজের ভাই এর সম্পর্কে এমন‌ মন্তব্য করতে পারে। তার মন মাইন্ড কতটা সাফ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অধরার থাপ্পড় পরতেই অর্ণব মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা রাগে গজগজ করতে করতে চেঁচিয়ে বলে উঠলো

— এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চলে যাও আমার সামনে থেকে।

অধরার কথা শেষ হবার সাথে সাথে অর্ণব রান্না ঘরের সামনে থেকে চলে যায়। অর্ণব চলে যেতেই অধরা আপন মনে ভাবতে লাগলো অয়ন সবটা শুনে ফেলেছে। অয়ন কি আমায় ভূল বুঝবে? আমি তো অর্ণবকে ওর ভূলটা বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু অয়নের ভুলটা কি করে ভাঙ্গাবো?

— মিস্টার কাব্য অফিসটা আপনার বাবার সম্পত্তি না যে যেমন ইচ্ছে তেমন ভাবে চালাবেন। এই অফিসটা আমার বুকের রক্ত দিয়ে গড়া। যদি দু দিনের মধ্যে ৮ কোটি টাকার হিসেব দিতে আপনি ব্যর্থ হন। তবে আমি আপনার বিরুদ্ধে আকশন নিতে বাধ্য হব। নাউ ইউ গেইট লস্ট।

কাব্য অয়নের কেবিন থেকে মাথাটা নিচু করে বেরিয়ে যায়। অয়ন রাগে গজগজ করতে থাকলো। এতো গুলো টাকা বেপাত্তা। অয়নকে রেগে থাকতে দেখে অর্পা অয়নের কেবিনে প্রবেশ করে। অর্পার হাতে একটা ফাইল ছিলো। অয়ন ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে কাজ করছে। অর্পা অয়নের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল

— স্যার আপনি কি ব্যস্ত আছেন? কিছু কথা বলার ছিলো।

ল্যাপটপের স্ক্রিনের থেকে মুখ তুলে অর্পার দিকে তাকিয়ে বলল অয়ন

— জ্বি বলো।

— আজকের দিনটা আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই।

— আজ কি?

— আজ আমার বার্থ ডে।

— ওপস। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।

— ধন্যবাদ। আমার কথা মনে না পরাটাই স্বাভাবিক। আজ রাতে একটা ছোট পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। আপনি আসবেন প্লিজ।

— আজ! আচ্ছা ঠিক আছে চেষ্টা করবো।

— না। চেষ্টা না। আসতেই হবে আপনাকে।

— ওকে।

অর্পা ফাইলে সাইন নিয়ে চলে যায় অয়নের কেবিন থেকে। সারা দিন কাজ শেষ করে অয়ন সন্ধ্যায় চলে যায় অর্পার দেয়া‌ পার্টিতে। যদিও আসার ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু ভাধ্য হয়ে আসতে হলো। অয়ন পার্টি হলে এসে একটু অবাক হলো। একটা কেক আর কিছু ওয়েটার ছাড়া তেমন কাউকে চোখে পরছে না। অয়ন নিজের হ্যান্ড ওয়াচটার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো সময় ঠিক আছে তো! হ্যাঁ, সময় ঠিক আছে। তবে সবাই এখনও আসছে না কেনো? অয়ন সোফায় বসে ওয়েটারের থেকে একটা সফট ড্রিংক নিলো। ড্রিংকটা শেষ করতেই অয়ন দেখতে পেলো অর্পা আসছে। অয়ন অর্পাকে দেখে সোফা থেকে উঠে অর্পার কাছে চলে এলো। অর্পাকে উদ্দেশ্য করে অয়ন বলল

— আচ্ছা সময় তো পেরিয়ে যাচ্ছে। কেউ তো আমার আসছে না এখন ও। তবে কি আর কেউ আসবে না?

— হুম। সময় হয়ে এসেছে। চলুন কেক কাটি। আর কেউ আসবে না মনে হচ্ছে।

* অর্পার কন্ঠে অজানা এক ধরনের মানে প্রকাশ পাচ্ছে। অয়ন কিছু না ভেবে অর্পার সাথে কেক কাটতে চলে যায়। কেক কাটা শেষ হতেই অর্পা অয়নকে ভিশন অবাক করে দিলো। কেক কাটা শেষ হতেই অর্পা অয়নকে…………

#চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here