#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১১,১২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
১১
*অয়ন প্রচন্ড রেগে গিয়ে পিছন থেকে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— বাহ! বাহ! এটাকি কোনো শুটিং প্লেসে চলে এসেছি আমি! নাকি আমার রুমেই আছি? বুঝতে পারছি না।
অয়নের ক্রোধ মিশ্রিত কন্ঠস্বর অর্ণব ও অধরার কান এড়িয়ে গেলো না। অর্ণব মাটি থেকে উঠতে উঠতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল মৃদু কন্ঠে বলল
— আসলে অয়ন আমি একটা ক্ষমার অযোগ্য ভূল করে ফেলেছি। তার জন্য ভাবীর থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। কিন্তু ভাবী আমায় ক্ষমা করছে না।
— ওপস তাই নাকি! তা কি ভূল? আমি কি জানতে পারি?
— না। সেটা বলা যাবে না। এটা আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।
অর্ণবের কথা শেষ হতেই অয়নের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে। অর্ণবের কথার মানে সন্দেহ জনক। অর্ণব অয়নের মুখ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। অয়নের চোখ জোড়ার দিকে অধরা দৃষ্টিপাত করে বেশ বুঝতে পারছে অয়ন রেগে আগুন হয়ে আছে। অয়নের রাগকে কন্ট্রোল করার জন্য অধরা অর্ণবের পিছন থেকে বলে উঠলো
— আচ্ছা অর্ণব আমি বললাম তো তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি। তুমি এখন যেতে পারো।
অধরার কথার বিপরীতে অয়ন অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে একটু তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিয়ে বলল
— হ্যাঁ, এখন অর্ণব তুই নিজের রুমে যা। সারা দিন তোর ভাবীর থেকে অনেক ক্ষমা চেয়েছিস। অবশেষে তোর ভাবী রাতের দিকে মান অভিমান ভুলে তোকে ক্ষমা করে দিয়েছে। চলে যা।
অয়নের বাঁকা কথার মধ্যে যথেষ্ট নিম্ন ধরনের চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। অধরা অয়নের দিকে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণব অয়নের হাত নিজের হাত জোড়া দিয়ে আলতো করে ধরে বলতে লাগলো
— অয়ন তুমি যা মনে করছিস আসলে কিন্তু তা নয়। আমি….!
কথাটা শেষ করার পূর্বেই অয়ন অর্ণবের শার্টের কলার চেপে ধরলো। অর্ণব অয়নের দিকে একটু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। অয়ন অর্ণবের শার্টের কলার চেপে ধরে প্রচন্ড রেগে ফিসফিসিয়ে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— সকালে আমার বিপক্ষে কথা বলে তুই আমার চোখে নিজের জায়গাটা কতটা নিচে নামিয়েছিস তা বলে বোঝানো মতো নয়। আমি ইদানিং দেখছি তুই আমার রুমে বেশি যাতায়াত করছিস। তুই তো ভালো ছেলে। গুড বয়ের ওয়ারেন্টি কার্ড। তবে আমায় বল কোন ভালো ছেলে এতো রাত উবদি তার ভাইয়ের বউ এর রুমে বসে থাকে? আমার চরিত্র নিচু মানের। হুম মেনে নিলাম কিন্তু তোর চরিত্রটা এমন কেনো? অন্য পুরুষের নিন্দা তার স্ত্রীর সামনে করে। তাকে উপদেশ দিয়ে বলা ছেড়ে দেও তোমার স্বামীকে। তোমার স্বামী একটা রাস্তার ছেলে। ও হাজার নারীতে আসক্ত পুরুষ। ওকে ছাড়ার সময় চলে এসেছে। এই সব বলে নিজের জায়গা তৈরি করার চেষ্টা কোন চরিত্রে পরে? তোর ভাবীকে তো বুঝিয়েছিস। এই বার আমায় ও বোঝা। ওপস সরি তোদের একান্তে বলা ব্যক্তিগত ব্যাপার আমি জেনে ফেলেছি।
অয়ন কথা গুলো বেশ চিৎকার করে বলছে। রাগে অয়নের হাত পা কাঁপছে। অর্ণব থ মেরে ভয়ে চুপসে গেছে। মুখ দিয়ে কোনো প্রকার শব্দ করতে পারছে না সে। অয়ন অর্ণবকে নিরব দেখে আবারও চিৎকার করে বলতে লাগলো
— কি হলো কথা বলছিস না কেনো? চুপ করে আছিস যে! ওহহহ আমি তো তোর ভাবী না তাই কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে।
অয়ন অর্ণবের মাঝে অধরা চলে আসে। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে শক্ত গলায় বলছে
— ওর কলার ধরে আছো কেনো? ও তো ভুল কিছু বলে নি। আজ তুমি ওকে চুপ করিয়ে দিতে পারবে কিন্তু তাদের কে কি করে চুপ করাবে তুমি? যাদের কে নিজের জীবনে
এনে ভালোবাসার নামে ভোগ করেছো? তাদেরকে চুপ করাতে পারলেও নিজেকে নিজের কাছে কি করে প্রকাশ করবে? লজ্জা করবে না তোমার? আজ এ বলছে বলে খুব লাগছে? কাল অন্যরা বলবে। তখন কি করে সহ্য করবে? ও যা বলেছে একদম ঠিক বলেছে। তুমি দিনের পর দিন আমাকে ঠকিয়েছো। আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছো তুমি। তুমি সত্যি একটা নিচু চরিত্রের মানুষ। তোমাকে ভালোবাসা যায় না। তোমার জন্য সকলের ঘৃণা কাম্য। তুমি ঘৃণা পাবার যোগ্য।
অধরার কথা শেষ হতে না হতে অয়ন অর্ণবের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। অর্ণব থাপ্পড় খেয়ে মাথা নিচু করে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়নের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অধরা। কি থেকে কি হয়ে গেলো পুরোটা মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে তার। অয়ন অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে একটু হাফ ছেড়ে বলল
— হয়েছে শান্তি! এটাই তো চেয়েছিস আমাদের মাঝে এমনিতেই দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে আরো দূরত্ব বাড়াতে। হয়েছে তো। এখন আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় নে। বিশ্বাস কর আমার হাতে খুন হবার ইচ্ছা না থাকলে এখান থেকে বেরিয়ে যা।
* অয়নের কথা শুনে অর্ণব মাথা নিচু করে তাদের সামনে থেকে বেরিয়ে যায়। অর্ণব চলে যেতেই অয়ন নিজের শার্টটা খুলে সোফার উপর ফেলে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। অধরা শুধু মাত্র একটা কাঠের বোবা পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। ফ্রেশ হয়ে এসে অয়ন কিছু না খেয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। অধরা অয়নের পাশে বসে আছে। অয়নের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তার। অধরা ভাবছে আপন মনে “অর্ণবের গায়ে হাত তোলার কি প্রয়োজন ছিলো? ছেলেটা তো নিজের ভূল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইতে এসেছে। কিন্তু অয়ন অর্ণবকে নিয়ে এতোটা নোংরা কথা বললো কি করে? উফফফ আমিও না। যার মস্তিষ্কে নোংরা বাসা বেঁধে আছে। তার থেকে এর বেশি কি আশা করা যায়? সে তো নোংরা কথা মাথায় রাখবেই। আর তার ভাবনা অনুযায়ী অন্যকে বিচার করবে এটা নতুন কিছু নয়”। অধরা আর কিছু না ভেবে অয়নের পাশ থেকে উঠে যায়। অয়ন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। অধরা ব্যল্কনিতে গিয়ে কিছু সময় একা কাটালো। অতঃপর রুমে ফিরে এলো। সোফার উপর দৃষ্টিপাত করতেই অধরা অয়নের শার্টটা দেখতে পেলো। অধরা সোফার উপর থেকে অয়নের শার্টটা হাতে নিতেই অবাক হয়ে যায়। রুমের মধ্যে মৃদু আলোতে স্পস্ট হয়ে আছে অয়নের সাদা শার্টে লেপ্টে থাকা কিছু লিপস্টিকের দাগ। দাগটা শুধু মাত্র শার্টের মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকলো না। শার্টের দাগটা অধরার বুকের মধ্যে এসে বিধলো। অধরা ছলছল চোখে সোফার উপরে বসে পরে আপন মনে বলে উঠলো “সেই তো অন্য নারীর কাছে গেলে তুমি। তবুও কেনো আমাকে আটকে রেখেছো? কেনো অন্য কেউ আমার সাথে কথা বললে তোমার এতো কেনো কষ্ট হয়? যদি সত্যি সত্যি এই কষ্টটা অনুভব করে থাকো তুমি তবে একটিবার উপলব্ধি করে দেখো অয়ন কতটা কষ্ট আমি পাচ্ছি”।
* অয়নের শার্টা হাতে নিয়ে অধরা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলো। সকাল হতেই অয়নের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অয়ন শোয়া থেকে হকচকিয়ে উঠে হাঁপাতে লাগলো। পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে তার। অয়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে অধরাকে খুঁজতে লাগলো। অধরাকে সোফার উপর দেখে অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মুখের উপর থাকা ঘাম হাত দিয়ে পরিষ্কার করে নিলো। বিছানা থেকে উঠে অয়ন অধরার কাছে চলে এলো। হাঁটু গেড়ে অধরার পাশে বসলো সে। কি অপূর্ব সুন্দরী লাগছে অধরাকে। কিন্তু অধরার এই সুন্দর্যের মায়ায় আটকে গেলে চলবে না। অয়ন অধরাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে আলতো করে শুইয়ে দিলো। অধরার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেতেই অধরার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অধরা অয়নকে নিজের কাছে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে অয়নের থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে নিয়ে কাঁপা গলায় বলে উঠল
— তুমি! এখানে কি করছো?
— হ্যাঁ, আমি। অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি? সরি ফর দ্যাট। আমি বেঁচে থাকতে তা সম্ভব হবে না। আর না আমি হতে দিবো। এতো অবাক হয়ে যাবার কোনো ব্যাপার ঘটেনি। সোফায় পরে ছিলে বলে দয়া হলো তাই এখানে এনে রেখেছি। আমার পাশে শোয়ার ইচ্ছে নাই থাকতে পারে। তবে সেটা আমায় বললে আমি বিকল্প পথ দেখতাম। এভাবে সোফায় পরে থাকা ভালো দেখায় না।
অয়ন অধরার পাশ থেকে উঠে গিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে। অধরা অবাক হয়ে যায় অয়নের কান্ড দেখে। এই ছেলেকে বোঝা সত্যি অসম্ভব। অন্য মেয়ের সাথে শারীরিক চাওয়া পূরণ করে আমার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে চলে এসেছে। সত্যি কোন ধরনের জীব এই লোকটা বোঝা দায়।
* খাবার টেবিলে বসে অয়ন খাবার খাচ্ছে। অধরা অয়নের পাশেই বসে খাবার খাচ্ছে। হঠাৎ করে অয়নের বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো। অয়ন উঁকি দিয়ে গাড়িটাকে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। অয়ন দেখতে পায় গাড়ি থেকে………………………
#চলবে……………………….
#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অয়ন দেখতে পায় গাড়ি থেকে অর্পা নেমে আসছে। অয়ন অর্পাকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। এতো সকাল সকাল অর্পা হঠাৎ করে তার বাড়িতে! বিষয়টা একটু ঘটকা লাগছে তার। অয়ন নিজের মতো করে নাস্তা শেষ করতে লাগলো
— মিস্টার অয়ন চৌধুরী, অনেক তো খাবার খেলেন। এইবার চলুন আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।
পুলিশ ইন্সপেক্টর এর ব্যঙ্গ করা কথা গুলো অয়নের কানে পৌচ্ছোতেই অয়ন একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ইন্সপেক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এতো সকাল সকাল থানায় যাবো কেনো অফিসার? রাতে বুঝি ঘুম হয়নি? এতো সকাল সকাল কাউকে বিরক্ত না করলেই নয়।
অয়নের কথা শুনে ইন্সপেক্টরের ভিশন রাগ হলো। ইন্সপেক্টর রেগে আগুন হয়ে অয়নের শার্টের কলার ধরে বলতে লাগলো
— রাতে তোরা কুকীর্তি করতে পারিস আর আমরা সকাল সকাল আসলেই দোষ!
— এই ইন্সপেক্টর শার্টের কলার থেকে হাত সরিয়ে কথা বল। তোর যা কথা আছে সব শুনবো কিন্তু শার্টের কলার একদম টাচ করবি না।
অয়নের রাগি কন্ঠস্বর শুনেই অফিসার করার ছেড়ে দিলো। অয়ন শার্টটা ঠিক করে অফিসারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। অধরা ও অয়নের বাবা মা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কারো মাথায় ঢুকছে না পুলিশ কেনো বাড়িতে এলো। অয়ন অর্পার দিকে তাকিয়ে অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এই বার বলুন সমস্যা কি? কোন অভিযোগ পেয়ে আপনারা একদম দল বেঁধে আমার বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন? আমার অফিসিয়াল কাগজ পত্র গুলো তো একদম ঠিক আছে। তবে কেনো এলেন?
— আপনার নামে ধর্ষণের অভিযোগে আছে। গতকাল রাতে আপনি প্রচন্ড মদ্য পান করে মিস অর্পার উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন। মিস অর্পা গতকাল রাতেই আপনার নামে এফ আই আর করে এসেছে। তার স্টেটমেন্টের উপর ভিত্তি করে আপনাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
অফিসারের কথা শুনে অয়ন বেশ শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে অয়নের প্রায় যায় এমন অবস্থা। অয়নের হাসি দেখে সবাই বেশ কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন হেসে হেসে অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— আহা এমন ভাবে যদি যার তার মিথ্যে অভিযোগের উপর ভিত্তি করে গ্রেফতার করতে চলে আসেন। তবে তো কাস্টরিতে লোক রাখার জায়গার কম পরে যাবে।
— হেঁয়ালি না করে আমাদের সাথে চলুন মিস্টার অয়ন চৌধুরী।
— উহু! আমি তো যাবো তবে থানায় না অফিসে। আগে আমায় বলুন মিস অর্পা যে অভিযোগ আমার উপর ধার্য করেছেন। তার কোনো সত্যতা যাচাই করেছেন কি?
— জ্বি মিস্টার অয়ন চৌধুরী। আপনার কুকীর্তির ভিডিও ফুটেজ আছে আমাদের কাছে। আর তার থেকেও বড় প্রমান হলো আপনার স্ত্রীর জবান বন্দী। আপনার স্ত্রী আমাদের ক্লিয়ার করেছে যে আপনার শুধু মাত্র অর্পার সাথে নয় আরো বহু নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে। আপনি ভালোবাসার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে থাকেন। এমনটা আপনার স্ত্রী নিজে আমাদের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন।
অফিসারের কথা গুলো অয়নের কানে পৌঁছাবার সাথে সাথে বুকটা দুমরে মুচড়ে উঠলো। অধরার দিকে অয়ন দৃষ্টিপাত করতেই অধরা অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল
— স্যার, অয়ন যাই করে থাকুক তা ভুল করেছে। প্লিজ অয়নকে কঠিন সাজা দিবেন না। অয়নকে ভালো হয়ে যাবার একটা সুযোগ দিন প্লিজ! কাল রাতে আমি অয়নের শার্টের উপর কিছু লিপস্টিকের দাগ দেখতে পাই। অয়ন অনেক নারীর প্রতি আসক্ত ছিলো। সেটা আমার অনেক আগে থেকেই জানা ছিলো। কাল রাতে অর্পা আমায় কল করে সবটা বলে। একজন নারীর হয়ে অন্য নারীর এতো বড় সর্বনাশ কি করে নজর আন্দাজ করি আমি? সে আমার স্বামীই হোক না কেনো। অপরাধের সাজা পাওয়া আবশ্যক। অয়ন আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার বিপক্ষে সব সত্যি অফিসারকে বলে দিয়েছি। অফিসার তোমাকে সুধরে নেয়ার একটা সুযোগ দিবে। প্লিজ! আমায় ক্ষমা করে দিও।
*অধরার কথা গুলো অয়নের কানের মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকলো না। কথা গুলো সজোরে এসে অয়নের বুকে আঘাত করলো। অয়নের চোখের কোনে আচমকা নোনা জল চলে এলো। অধরার দিকে তাকিয়ে অয়ন মৃদু হাসি দিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো “নিজেকে এতোটা বাজে ভাবে তোমার সামনে প্রেজেন্ট করেছি যে আজ সত্যি মিথ্যে কোনটাই তোমার চোখে পরছে না। আজ মিথ্যে টাই তোমার কাছে সত্যি মনে হচ্ছে। কিন্তু অধরা একটাবার তো ভেবে দেখতে আসলে আমি কাউকে ধর্ষন করতে পারি কিনা? ভাবো নি হয় তো। আর ভেবেও কিছু করার নেই। নোংরা জীব দ্বারা সব কিছু সম্ভব। অয়ন চোখের উপর হাত রেখে মুখটা মুছে নিলো। আসলে চোখের জল আড়াল করার প্রচেষ্টা করলো সে। অধরাও চোখের জল ফেলছে। অর্পা অধরাকে শান্তনা দিচ্ছে। পুলিশ অফিসার অয়নকে আর সময় দিলো না। হ্যান্ডকাফটা হাতে পরিয়ে দিতেই অয়ন তার মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— বাবা আসছি আমি। তোমারা সত্যি ব্যর্থ হয়েছো নিজেদের সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে। আমি চলে যাচ্ছি তবে একটা অনুরোধ করছি তোমাদের কাছে অধরাকে তোমরা কিছু বলবে না। ওর জায়গায় অন্য যে কেউ থাকলে এমনটাই করতো। অধরা আমাকে ভালোবাসে। ও চায় আমি ভালো হয়ে ফিরে আসি। ওর সাথে বাজে ব্যবহার করো না তোমরা। অনুরোধ করছি তোমাদের কাছে। আর অধরা মা বাবা খেয়াল রেখো। যদি নিজের বাড়ি চলে যেতে চাও মেতে পারো। আর একটা কথা নিজের খেয়াল রেখো। ভালো থাকবে। আসছি।
অয়নের কথা শেষ হতেই পুলিশ অয়নকে টানতে টানতে গাড়ির দিকে নিয়ে যায়। অয়নের বাবা মা ভিশন কান্না করছে। সন্তান যদি অপরাধী ও হয় তবুও বাবা মা এর কাছে সন্তানের কোনো অপরাধ থাকে না। অয়ন কে থানায় নিয়ে আসার পরে কাস্টরিতে রাখার হলো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ আরো পরে করা হবে।
— উফফ! কি খেলা টাই না খেললে সোনা। উম্মা! তোমাকে তো অভিনয়ের জন্য অস্কার দেয়া উচিৎ। উফফফ! একটা শর্টে অয়নের খেলক্ষতম। আর অধরার মতো একটা নির্বোধ গাঁধী কিন্তু অয়নের পাশে এমনিতেই শুট করে না। অয়ন যতটাই চালাকা ওর বউ ততটাই গাঁধী। খুব সহজেই তোমার ফাঁদে পা দিয়ে দিলো।
অভ্রর কথা শুনে অর্পা মুচকি হেসে বলল
— অতটাও বোকা না। ওকে যেমন ভাবে বুঝিয়েছি ও ঠিক তেমনি বুঝেছে ঠিক। কিন্তু কতটা সুন্দর করে আমার হয়ে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। উফফফ! সত্যি বলছি মাইরি মেয়েটা এতোটা এক্টিভলি কাজটা করেছে যে পুলিশকে না অয়নকেও চমকে দিয়েছে। অধরাকে মন থেকে একটা থ্যাংক্স দেয়া উচিৎ। আজ ও পাশে না থাকলে আমি কখনও সফল হতে পারতাম না। একদম।
— হুম তা ঠিক বলেছো। এখন অয়নের সাধের বিজনেস আমার হাতের মুঠোর মধ্যে।
— একদম না। আমাদের হাতের মুঠোয়। অয়নের প্রপার্টি আমাদের দুজনের।
— জ্বি। তবে অয়নের কি হবে? ওকে না তুমি ভালোবাসো!
— আগে সব কিছু নিজের হাতে আনি। তারপর অয়নকে জেল থেকে নিয়ে আসবো। অয়ন যখন ফিরে এসে দেখবে তার সব কিছু শেষ। তখন মরিয়া হয়ে আমার পিছন পিছন ঘুরবে। আমি তখন অয়নকেও পাবো আর ওর প্রপার্টিকেও।
— হুম।
অভ্র আর অর্পা নিজেদের প্লান সাকসেসফুল হওয়াতে মনের খুশিতে ড্রিংক করে ইনজয় করতে লাগলো।
— মা আমাকে ভুল বুঝবেন না। অয়ন একটা নির্দোষ মেয়ের সাথে যা করেছে তার সাজা অয়নকে পেতেই হতো। অয়ন আমার স্বামী। আপনার সন্তানের জন্য আপনার কষ্ট হচ্ছে। আমারো তো কষ্ট হচ্ছে নিজের স্বামীর জন্য। প্লিজ! মা আপনি মুখে কিছু তুলুন।
— নারে মা। তোমাকে ভুল বুঝি নাই আমি। আমার মন বলছে আমি আমার সন্তানকে এই শিক্ষা দেই নাই। ও নির্দোষ। দেখো একদিন সবটা সবার সামনে আসবে। সত্যি লুকানো থাকে না।
— জ্বি।
অধরা অয়নের মাকে খাবার খাইয়ে দিয়ে নিজের রুমে আসলো। আজকে এই রুমটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। অয়নের কথা ভিশন মনে পরছে আমার। মানুষটাকে একটু বদলানোর চেষ্টা করতে আমি আজ একা হয়ে গেলাম। অয়ন কেমন আছে? কি করছে? বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে ওকে দেখে আশার। কিন্তু কি করবো? একটা নারীর প্রতি অন্যায় আমি কি করে করতে পারি? অয়ন কেনো অর্পার সাথে ওমনটা করেছে? শুধু কি অর্পা! আরো কতজন নারী ওর জীবনে ছিলো তার হিসেব নেই। অয়নের এই সাজাটাই পাওয়া উচিত। কিন্তু এই বোবা মন যে তা মানছে না। বড্ড কষ্ট হচ্ছে অয়নের জন্য।
* রাতের দিকে অয়নের কাস্টরিতে পুলিশের প্রবেশ ঘটে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। পুলিশ কাস্টরিতে প্রবেশ করতেই অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন পুলিশকে দেখে কোনো প্রকার ঝামেলা করলো না। একদম শান্ত গলায় অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অফিসার যা প্রশ্ন করার তারাতাড়ি করো।
— একদম। আগে সত্যি বের করার ঔষধ টা তো দিয়ে দেই।
কথাটা শেষ করতেই অফিসার অয়নের হাত পা বেঁধে ফেলতে লাগলো। অয়ন বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো অফিসারকে
— এসব কি? আমি তো নিজের অপরাধ মেনে নিয়েছি। তবে এসব কেনো? আর প্রাথমিক…..!
অফিসার অয়নকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়া হলো না। একটা রুল দিয়ে ইচ্ছে মতো আঘাত করতে লাগলো অয়নের শরীরে। অয়ন আঘাত গুলো নিশ্চুপ হয়ে গ্রহন করছে। হাত পা বাঁধা। কোনো ভাবেই অয়ন নিজেকে সেভ করতে পারছে না। আঘাত এর এক পর্যায়ে অয়ন সবাইকে অবাক করে দিলো। অয়ন………………………
#চলবে…………………….