ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি #পর্বঃ১৩,১৪

0
962

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১৩,১৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
১৩

আঘাত এর এক পর্যায়ে অয়ন সবাইকে অবাক করে দিলো। অয়ন বসে থাকা অবস্থায় নিজের সেন্স হারিয়ে ফেললো। অয়নকে সেন্স লেস অবস্থায় দেখে অফিসার একটু বিচলিত হয়ে পরলো। অফিসার কনস্টেবলকে উদ্দেশ্য করে বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো

— এই দেখতো বেঁচে আছে কি না!

— স্যার, এতো বিচলিত হচ্ছেন কেনো? এর মতো জানোয়ার মরে গেলেই বা কি?

কনস্টেবলের কথা শুনতেই অফিসার চিৎকার করে বলে উঠলো

— এ মরে গেলে আমাদের ফাঁসিয়ে যাবে। সাধারন জিজ্ঞাসা বাদের সময় অপরাধীর মৃত্যু! না,না। এখনি ডক্টরকে ডাকতে হবে। তোমরা ডক্টরকে ডেকে আনো। আমি অর্পা ম্যামকে বিষয়টা জানিয়ে আসি।

অফিসারের কথাটা শেষ হতেই কনস্টেবল বেশ অবাক হয়ে যায়। আপন মনে চিন্তা করতে লাগলো কনস্টেবল “এই অয়ন চৌধুরীর বিষয় মিস অর্পাকে কেনো জানাতে হবে? তবে কি এই অয়ন চৌধুরী নির্দোষ! স্যার কি মিথ্যে মামলা দিয়ে অয়ন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে”? কনস্টেবলের ভাবনার অবকাশ ঘটে অন্য এক কনস্টেবলের ডাকে।

— এই দেখ এই রেপিস্টটা মরে নাই। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে শুধু। স্যারকে ইনফ্রম করে আয়।

— আচ্ছা যাচ্ছি।

কনস্টেবল দৌড়ে চলে যায় অফিসারকে ইনফ্রম করতে।

— এই যে শুনছেন! আমি অয়ন চৌধুরীর সাথে দেখা করতে এসেছি।

অধরার মৃদু কন্ঠে কনস্টেবলের কানে ভেসে আসতেই কনস্টেবল অধরাকে উদ্দেশ্য করে ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বলল

— রাত কি রাস্তায় পার করে এসেছেন? কি চাকরি মাইরি একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দেয় না! এখন দেখা করা যাবে না। আসতে পারেন।

— স্যার, প্লিজ! আমি আমার স্বামীকে একটু দেখতে চাই। প্লিজ!

অধরার কথা শেষ হতেই কনস্টেবল নিজের মাথার টুপিটা ঠিক করে অবাক দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে বলল

— আপনি তার স্ত্রী! আপনার অভিযোগেই তো আপনার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে?

— জ্বি। প্লিজ আমাকে অয়নের সাথে দেখা করতে দিন।

— জ্বি আসুন।

*কনস্টেবল অধরাকে নিয়ে অয়নের কাস্টরির সামনে চলে আসে। অয়নের কপালে, নাকচ, ঠোঁটের উপর রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে। অয়ন ফ্লোরে পরে আছে নিশ্চুপ হয়ে‌। অধরা অয়নকে এমন অবস্থায় দেখবে তা আশা করতে পারেনি। অধরা এক দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের জলে ভারি হয়ে আসছে অধরার চোখের পাতা। “অয়নের আঘাত গুলো দেখে আমার মনের মধ্যে ভিশন যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে। কেনো এমন হচ্ছে? ঐ পরে থাকা লোকটা তার পাপের সাজা পেয়েছে। ঐ পরে থাকা লোকটা আমায় ঠকানোর সাজা পেয়ে মুখ থুবড়ে পরে আছে ফ্লোরে। আমার বলা সত্যি কথার জন্য আজ ঐ লোকটার এই অবস্থা। আমি কেনো কষ্ট পাচ্ছি? কি জন্য আমার বুকটা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে? আমি তাকে ভালোবাসি তা ঠিক তবে আমি তো চাই সে তার কর্মের সাজা পাক। তবে কেনো আমার কষ্ট হচ্ছে? ইচ্ছে করছে কেনো ঐ নর্দমার কীটটাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলি সহ্য হচ্ছে না তোর কষ্টটা। আমায় ক্ষমা করে দিস। কেনো এমন হচ্ছে আমার কেনো”? আপন মনে কথা গুলো বলছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে অধরা। অধরার চোখের সামনে যেনো কালঝ মেঘ জমে আসছে। অয়নকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। কনস্টেবল অয়নের পা দিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো

— এই ওঠ দেখ তোর সাথে কেউ একজন দেখা করতে এসেছে।

অয়ন শরীরের সব শক্তি দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করতেই অয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে‌‌ যায় মাটিতে। অয়ন পরে যেতেই অধরা‌ ছলছল দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে অয়নের নাম ধরে ডেকে উঠলো। অয়ন মুখ ঘুরিয়ে তার প্রিয়জনের চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিলো। অতঃপর আবারও চেষ্টা করতেই অয়ন সম্পূর্ণ ঠিক ভাবে না উঠে দাঁড়াতে পারলেও কোনো মতে অধরার সামনে দাঁড়ালো অয়ন। এক পা এর হাড় ভেঙ্গে গেছে অয়নের। অয়ন অধরার চোখ বরাবর এক দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করে আছে। অধরার ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ বদলে বেশ শব্দ করে কান্নায় রূপ নিলো। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে মৃদু হেসে বলল

— আরে কাঁদছো কেনো? দেখো দেখো কাউকে ঠকালে বা কারো উপর অন্যায় করলে কেমন সাজা পেতে হয়।

— অয়ন আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমার জন্য তোমাকে আজ…!

— চুপ করো অধরা। আমি একটি বার ও তোমায় দোষারোপ করেছি? আমি নিজের এর জন্য দায়ী। বাদ দাও আমার কথা। এতো সকালে এখানে এসেছো! বাবা মা ঠিক আছে তো?

— হুম। বাবা মা ঠিক আছে। খুব অসহায় লাগছিলো আমার। তাই তোমাকে দেখতে এসেছি।

— আরে ধূর পাগলি আমাকে দেখার কি হলো? আর এসো না। আরে বেশি দিন লাগবে না। আমি খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবো। দেখে নিও।

* অয়ন অধরার সাথে কিছু সময় কথা বলার পর অধরাকে চলে যেতে বলল। অধরা চলে যেতেই অয়ন নিজের জায়গায় গিয়ে আবার বসে পরলো। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে শরীরে। প্রত্যেকটা আঘাত শরীরের মধ্যে এক অদ্ভুত জ্বালা তৈরি করেছে। এখানকার লোকেরা বড্ড নির্দয়। একটু ঔষধ ও লাগাতে দিলো না আমায়। এদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিয়তি আজ এখানে এনেছে। এগুলো আমার জন্য স্বাভাবিক।

অয়ন বসে আছে ফ্লোরে। হঠাৎ করে অয়ন লক্ষ্য করলো অফিসার আবার কাস্টরিতে প্রবেশ করছে। অয়ন অফিসারের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অফিসার কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— উঠে পর মিস অর্পা তোর সাথে দেখা করতে এসেছে।

— কেনো? আমার সাথে কি দরকার? আমি দায় স্বীকার করে নিয়েছি তো। আর কী?

— এতো কথা কেনো বলেছিস? দেখা করে নে। চল ওঠ।

— সরি অফিসার। আমি কারো সাথে দেখা করতে বাধ্য না। তাছাড়া যাকে রাত ভোর ধর্ষণ করলাম। সে এখন এখানে এসে আমার সাথে কি জন্য দেখা করতে চায়? সরি ওর চরিত্র ধুয়ে পরিষ্কার করার মতো ক্ষমতা আমার নেই।

অয়ন কথাটা শেষ করতেই অফিসার অয়নের চুল গুলো শক্ত করে চেপে ধরলো। অয়নের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। অফিসার অয়নের কানে ফিসফিস করে বলতে লাগলো

— যদি না দেখা করিস তবে ১৬০° দেয়া হবে আবার। ভালোয় ভালোয় দেখা করে নে। আমার মাথা গরম করিস না।

অফিসার অয়নকে ছেড়ে দিয়ে কনস্টেবল কে বলল অয়নকে জোর করে পাশের রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কনস্টেবলরা জোর করে অয়নকে পাশের রুমে নিয়ে যায়। পাশের রুমে যেতেই অয়ন দেখতে পায় অর্পা দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন আসতেই অর্পা অয়নের দিকে তাকিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। এতোটা টর্চার অয়নকে দেয়া হবে তা হয়তো অর্পার ধারণার মধ্যে ছিলো না। অর্পা অফিসারকে চিৎকার দিয়ে ডাকলো। অফিসার দৌড়ে অর্পার সামনে আসতেই অর্পা অফিসারের গলে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।

— ঠাসসসসস! তোর সাহস তো কম না। আময় অয়নকে এতোটা কষ্ট দিতে কে বলেছে তোকে? তোকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি। সবাইকে যেতে বল। অয়নের সাথে আমার পার্সোনাল কথা আছে।

অর্পার কথা মতো অফিসার সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। অর্পা অয়নের দিকে এগিয়ে এসে অয়নের ঠোঁটের উপর আলতো করে স্পর্শ করে। অয়ন নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে অর্পার অভিনয়টা দেখছে। অর্পা মৃদু কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অনেক কষ্ট হচ্ছে তোমার! এই জন্যই বলেছি আমাকে আপন করে নাও। বিশ্বাস করো কোনো কষ্ট হবে না তোমার। এক সাথে বাকিটা পথ চলো আমরা।

অয়ন একটু বাঁকা হাসি দিয়ে অর্পাকে উদ্দেশ্য করে ব্যাঙ্গ কন্ঠে বলল

— আহহহ তাই সোনা। একটু আপন করে নিলেই হবে। তাই তো! আর কত আপন হতে চাও? এতো সুন্দর করে ধর্ষণ করলাম তাও বলো আপন করে নেই নি। সেড। ভেরি সেড।

— শার্ট আপ অয়ন। সত্যিটা তুমিও জানো আর আমিও জানি। এতোটা অহংকার কিসের তোমার? আরে ঐ মেয়েকে নিয়ে পরে আছো! যে তোমার সাথে সংসার করেও তোমায় চিনতে পারলো না। তোমার এগেইনস্টে গিয়ে মিথ্যেকে সত্যি বলে চালিয়ে দিলো। তার পক্ষে কথা বলা বিবেকবান মানুষের পরিচয় নয়।

— হুম। আমাকে গাধা মনে হয় তোমার? এতো সুন্দর অভিনয় করো তা আমায় মানতেই হবে। তবে একটা কথা আমি তোমার কথা মতো অধরাকে ভূলে তোমায় আপন করে নিবো এটা ভূল করেও ভেবো না। এতো দিন ভাবতাম তুমি হয়তো ভালোবাসো আমায়। তাই এসব পাগলামি করছো। কিন্তু আজ বিশ্বাস করি তোমার মতো একটা নোংরা মেয়ের ভালোবাসা কেমন? বাই দ্যা ওয়ে এখন আসতে পারো। তোমার অভিনয় দেখার মতো সময় আমার নেই।

— ঠিক আছে। চেয়েছিলাম তোকে আর কষ্ট দিবো না। কিন্তু না তুই নিজেই যখন কষ্টকে আপন করে নিয়েছিস তবে তাই হোক। আসছি।

অর্পা হনহন করে থানা থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন বেশ শব্দ করে হেসে উঠলো। হাস্যজ্বল কন্ঠে অয়ন বলে উঠলো “গতকাল সকালেই তোর মুখোশটা আমি খুলে দিতাম। কিন্তু আফসোস চাইনি অধরাকে ভূল প্রমানিত করতে। অধরাকে কষ্ট দিয়েছি তার সাজা আমায় পেতেই হবে। তাই মাথা পেতে দায় স্বীকার করে নিয়েছি। আমি আগেও তোর সাথে ছিলাম না। আর আজ ও নেই”।

*অর্পা চলে যেতেই অয়নের কাস্টরিতে অফিসার প্রবেশ করলো। অফিসার রুল তুলে অয়নের ভাঙ্গা পা এ আঘাত করতেই অফিসারের পিছন থেকে………………………..

#চলবে…………………….

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অফিসার রুল তুলে অয়নের ভাঙ্গা পা এ আঘাত করতেই অফিসারের পিছন থেকে রাজ চিৎকার করে বলে উঠলো

— স্টপ অফিসার। আর একটাও আঘাত অয়নকে করবেন না। অয়নের বেল হয়ে গেছে।

রাজের কথা শুনতেই অফিসার বেশ চমকে যায়। হাতে থাকা দুলটা ফেলে দিয়ে অফিসার বেল নোটিশটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো। অয়ন ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাজের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই রাজ দৌড়ে ছুটে আসতে লাগলো অয়নের দিকে। অয়ন রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— ওখানেই দাঁড়িয়ে যা। আজ হঠাৎ করে এখানে কেনো এলি?

— বন্ধুর বিপদের দিনে আমি আসবো না তো কে আসবে?

— তা ঠিক আছে। আবার সময় মতো বন্ধুকে ছেড়ে যেতেও তোদের সময় লাগে না।

— খারাপ কাজ থেকে তোকে দূরে রাখতে গিয়ে যদি তোর থেকে কিছু সময়ের জন্য আমাকে আড়াল হয়ে থাকতে হয়। তবে আমি রাজি।

— হুম।

অফিসার বেল নোটিশটা পড়ে বেল পেপারে সাইন করে অয়নকে কাস্টরি থেকে বের করে আনলো। অয়ন কালো রং এর সুটটা পড়তে পড়তে অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অফিসার আমি অয়ন চৌধুরী। ইচ্ছে করলে তোমার মতো হাজারটা আইনের লোককে আমি আমার পকেটে রাখতে পারি। তবে আমি তা করি নাই। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো অধরার মতো ভূল করেছো। কিন্তু না। তুমি তো বিক্রি হয়ে গেছো। এখন আমি বাহিরে বলে তোমাকে ঢপ দিচ্ছি না। কিছুক্ষণ পরেই তোমার চাকরিটা তোমায় হারাতে হবে। আমার শরীরের আঘাতের মাশুল শুধু তুমি না। তোমার স্ত্রী, বাচ্চা সবাইকে দিতে হবে। আসছি।

অয়ন কথাটা শেষ করতেই থানা থেকে বেরিয়ে আসতে‌ লাগলো। অফিসার দৌড়ে অয়নের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। হাত জোড় করে অনুরোধ করছে অয়নের সামনে

— প্লিজ স্যার। এমনটা করিয়েন না। আমি আমার ভূল বুঝতে পেরেছি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন।

— সরি অফিসার আমি ক্ষমা করতে পারলাম না।

রাজের কাঁধের উপর ভর করে অয়ন গাড়িতে গিয়ে বসলো। গাড়িতে বসতেই রাজ অয়নকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো

— অয়ন হসপিটালের যাবি?

— উহু। আমি তোর বাড়ি যাবো।

— সেটা কেনো? অধরা, তোর মা বাবা সবাই চিহ্নিত অবস্থায় আছে আর তুই নিজের বাড়ি না গিয়ে এখন আমার বাড়ি যাবি।

— আগ্গে হ্যাঁ। আমি তোর বাড়ি যাবো। আর তোকে একটা কাজ করে দিতে হবে আমার। এখন আর প্রশ্ন করিস না। এই কয় দিন জামাই আদর পেয়ে ঘুমাতে পারিনি। আমি বাড়ি গিয়ে একটু রেস্ট নিতে চাই।

— হুম।

রাজ গাড়ি স্টার্ট করে গাড়ি নিয়ে থানার সামনে থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন গাড়ির আয়নায় নিজের মুখটা দেখে বাঁকা হাসি দিলো। সব কিছু জবাব দিতে হবে এদের। অয়ন রাজের বাড়ি এসে গেস্ট রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে লাগলো

— আজ থেকে অয়নের চেয়ারে আমি বসবো। উফফফফ! কি শান্তি এই চেয়ারে। নিজের ইচ্ছে মতো সব কিছু করতে পারবো। যত খুশি টাকা নিজের করে নিতে পারবো আমি।

অর্পাকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো আনন্দের সহিত বলছে অভ্র। অভ্রর উদ্দেশ্য মৃদু হেসে অর্পা বলল

— তুমি এতোটা লোভী ছেলে সত্যি আমার আগে জানা ছিলো না। অর্থ খরচ করতে হলে আগে আয় করতে জানতে হয়। এই কথাটা নিশ্চই জানো তুমি।

— বাহ! অয়ন জেলে যেতেই অয়নের মতো কথা বলতে শুরু করে দিয়েছো।

— সত্যি বলছি। আচ্ছা ছাড়ো এই সব। নিজের ইচ্ছে মতো সব কিছু বুঝে নাও। তবে আমার একটা শর্ত আছে।

অর্পার শর্তের কথা শুনে অভ্র ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকায় অর্পার দিকে

— কি শর্ত?

— অধরাকে সরিয়ে দাও। রাজ্য তোমার হয়ে যাবে। আমাকে রাজা দিয়ে দাও। সব কিছু তোমার। হ্যাঁ শুধু মাত্র তোমার।

— মানে? অধরাকে খুন করতে হবে!

— একদম ঠিক বুঝতে পেরেছো। আমি চাই না অধরা বেঁচে থাকুক। অয়ন কখন ও আমার হবে না‌। যতদিন ঐ অধরা নামক জীবটা বেঁচে থাকবে। খতম করে দাও ঐ অধরা নামক জীবটাকে। এই প্রপার্টি তোমার হয়ে যাবে।

— সত্যি!

— একদম সত্যি। পারবে তো?

— খুব পারবো।‌

* অর্পা আর অভ্র অধরাকে খুন করার পরিকল্পনা করতে লাগলো। অভ্র প্রপার্টির কথা শুনে লোভে চোখ জোড়া বড়বড় হয়ে গেলো। টাকার জন্য অভ্রর দ্বারা যে সব সম্ভব তা অর্পার অজানা নয়। অর্পা অভ্রর সাথে কথা বলতেই আচমকা অর্পার ফোনে কল চলে আসে। অর্পা ফোনটা পিক করতেই ওপার থেকে বেশ হাঁপানো কন্ঠে কেউ বলতে লাগলো

— ম্যাম অয়ন জেল থেকে বেরিয়ে গেছে।অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

— ওয়াট? অয়ন বেরিয়ে গেলো কি করে? ওহহহহ গড! অয়ন এখন কোথায় আছে?

— সেটা জানি না। তবে অয়ন জেলে নেই। আমি দেখছি অয়ন কোথায় আছে।

— হ্যাঁ। খোঁজ নে। দেখ অয়ন কোথায় আছে।

কলটা কাট করতেই অর্পা মাথায় হাত রেখে সোফার উপর ধপাস পরৈ বসে পরলো। বিড়বিড় করে অর্পা বলতে লাগলো “এই অয়ন আমায় একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না। নিশ্চই বাড়ি ফিরে গেছে। অপহৃত লাগছে সব কিছু। এখন আমি অয়নকে কি করে নিজের করে পাবো? এই অফিসেও তো আর আশা হবে না। উফফফ! পুরো খেলাটা আমার হাতের বাহিরে চলে গেলো”।

অর্পার বিড়বিড় করে কথা বলার মাঝেই কেউ একজন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অর্পা আর অভ্রকে উদ্দেশ্য করে ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— কোনো খেলাই হাতের বাহিরে চলে যায় নি। অয়নের অবর্তমানে আমি অয়নের বিজনেস সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

কথাটা কানে ভেসে আসতেই অর্পার টনক নড়ে। অর্পা আর অভ্র অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকাতেই থ হয়ে যায়। অধরা অফিসে। অভ্র অধরাকে দেখে অয়নের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরা অয়নের চেয়ারে অভ্রকে দেখতে পেয়ে রেগে আগুন হয়ে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে অধরা অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এই মিস্টার তোমার সাহস হয় কি করে বসের চেয়ারে বসার?

অধরার রাগি কন্ঠস্বর শুনে অভ্র ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে? অভ্র আমতো আমতো করে বলতে লাগলো

— সরি ম্যাম। আমি ভেবেছি স্যার নেই তা হলে স্যারের কাজ গুলো তো কাউকে সামলাতে হবে। তাই এখানে বসেছি। আমায় ক্ষমা করে দিবেন।

— স্যার এর মিসেস আছে। সো এই নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না। এখন যাও মিটিং এরেঞ্জ করো। আমি সকলের সাথে পরিচিত হতে চাই।

— সিওর ম্যাম।

অভ্র অধরার কথা শেষ হতেই দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা অয়নের চেয়ারে বসে অর্পার দিকে দৃষ্টিপাত করে। অর্পাকে দেখে মনে হচ্ছে ভিশন সকের মধ্যে আছে সে। অধরা অর্পাকে উদ্দেশ্য করে একটু কড়া কন্ঠে বলে উঠলো

— মিস অর্পা আপনি এই অফিসে কি করছেন? এতো কিছু হয়ে যাবার পরেও আপনি এখানে আসলেন কি করে?

অর্পা একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে। মুখ কোনো ভাষা নেই। অবাক চোখ জোড়া এক দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্পার কোনো জবাব না পেয়ে অধরা আবার চিৎকার করে বলতে লাগলো

— মিস অর্পা আমি আপনাকে বলছি। এখানে এতো কিছু হয়ে যাবার পরেও কেনো এসেছেন?

অধরার চিৎকারে অর্পার ঘোর কাটলো। অর্পা আমতো আমতো করে বলতে লাগলো

— আসলে ম্যাম আমার এই জবটা না থাকলে না খেতৈ পেয়ে মরতে হবে। তাই মানসম্মানে্য কথা না ভেবে আমি এখানে কাজের জন্য চলে আসি।

— ওহহহ। কিন্তু আপনার এই সময়ে অফিসে না আসাই ভালো। আসার সময় শুনতে পেলাম কিছু লোক আপনাকে আর আপনার চরিত্র নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে। আপনি বাড়িতে থাকুন। সময় মতো আপনার বেতন পৌঁছে যাবে‌।

— না ম্যাম। একদম না। আমি অফিসে আসবো কাজ করবো তারপর বেতন নিবো। এমনি এমনি টাকা আমি নিবো না।

— তা হলে সরি। আপনাকে অফিসে রাখতে পারলাম না। আপনি আসতে পারেন।

* অধরার বিরক্তি কর কন্ঠস্বর অর্পাকে অবাক করে দিলো। অর্পা অধরার দিকে কয়েক পা এগিয়ে আসতেই অধরা অর্পাকে……………………

#চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here