#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:২৪( প্রথমাংশ),২৪(শেষাংশ)
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি
পর্ব:২৪( প্রথমাংশ)
মৌমিতা বেগমের পাশেই বসেছেন হাসান আলী। আর অন্য কাউচে বসে আছেন নমিতা বেগম আর তৌফিক সাহেব। সবার মুখে নীরস ভাব। থমথমে পরিবেশ। অরুনিকার বাবা-মা তাকে নিতে এসেছে।
এ কয়েক সপ্তাহে একদম ভেঙে চুরে বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে অরুনিকা। নিটোল চোখদুটোতে হাজার বছরের নৈরাশ্য। উজ্জ্বল গায়ের রঙে মরিচা ধরে গেছে। নরম ওষ্ঠাধরে শুষ্কতা নেমে এসেছে নৈঃশব্দ্যে। যেন বিদীর্ণ করবে গভীর আশ্লেষের মায়া। ক্লান্তি ছড়িয়ে থাকে দেহের কোণায় কোণায়। প্রাণ যেন থেকেও নেই।
গম্ভীর চোখে তাকাল শৈবাল। অবোধ্য তার মনোভাব। বলল—
“আপনারা বসুন। আমি অরুকে ডেকে দিচ্ছি।”
বিছানায় গুটিসুটি হয়ে বসে আছে অরুনিকা। তার অসহায় চাহনি। শৈবালকে দেখে যেন আত্মায় প্রাণ পেল সে। অন্তঃকরণ আচানক হাহাকার করে উঠল। শৈবাল হেঁটে গেল আলমিরার কাছে। চাবি দিয়ে আলমিরার দরজা খুলে অরুনিকার শাড়ি বের করে বিছানায় এনে রাখল। স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল—
“শাড়ি চেঞ্জ করে নাও। আম্মু-আব্বু অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।”
অরুনিকা সিক্ত আঁখিজোড়া উন্নত করে তাকাল। সদর্পে বলল—
“যাব না আমি।”
“ঘুরে আসো। ভালো লাগবে তোমার।”
“আমার ভালো থাকার চিন্তা করেন আপনি?”
শৈবাল কটাক্ষপূর্ণ হাসল। তার চোখ দুটো সহজ, স্বাভাবিক। বলল—
“আমার থেকে যত দূরে থাকবে, ভালো থাকবে তুমি।”
অরুনিকা তূরন্ত বেগে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। খরখরে গলায় বলল—
“কী চান আপনি? আমি চলে যাই? আমি চলে গেলে আপনার পথ পরিষ্কার? সব প্রেম শেষ আপনার? আমাকে আর ভালো লাগছে না তাই তো? আমার সব তো শেষ করেই ফেলেছেন, এখন আমার প্রাণটাও নিয়ে নিন।”
শৈবাল অত্যন্ত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে অরুনিকার কাছে এসে দাঁড়াল। যেন হাওয়ার দোল লাগতেই ছুঁয়ে ফেলবে প্রেয়সীকে। অরুনিকার মন কেমন করে উঠল। ঠোঁট ফুলে কান্নার স্রোতোস্বিনী ছুটে আসতে চাইল। শৈবাল নরম গলায় বলল—
“তুমি তো তাই চেয়েছিলে। এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি।আমার ভালোবাসা থেকে মুক্তি। আমার শ্বাস থেকে মুক্তি। আমি তাই দিচ্ছি তোমাকে।”
“কীসের মুক্তির কথা বলছেন আপনি? মিথ্যুক!”
শৈবাল চমৎকার করে হাসল। তার চোখের পল্লব নেচে উঠল। অরুনিকা ফুঁসে যাচ্ছে। তার গলায় ঢোক গেলার আওয়াজ যেন এখান থেকে শুনতে পাচ্ছে শৈবাল।
“আমি তোমাকে কখনো মিথ্যে বলিনি।”
“আমি কোথাও যাব না। আমাকে আর ভালো লাগছে না আপনার। লাগবে কী করে, আমার তো আর কিছু নেই। সব তো শুষে নিয়েছেন। তাই এখন আমাকে বিদেয় করে অন্য কাউকে নিয়ে জীবন সাজাতে চাচ্ছেন।”
শৈবাল কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া করল না। সে অতি শীতল গলায় অরুনিকার কানের কাছে বলল—
” আই রে*পড ইউ। তাই না অরু?”
অরুনিকার শক্ত মন ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ল। কাতর গলায় বলল–
“আমি কখনো আপনাকে এ কথা বলিনি শৈবাল।”
“বলোনি। কোনো নারীর বিনা সম্মতিতে তার কাছে যাওয়া তো রেপি*স্টদের কাজ। তুমি আমাকে ভালো বাসোনি অরু। বাধ্য ছিলে তুমি তাই না?
আমি তোমার সব বাধ্যবাধকতা তুলে নিলাম। ”
“কেন এসব বলছেন আপনি?”
“তুমি আমাকে কখনো বিশ্বাস করোনি অরু। তোমার শরীরের সর্বত্র আমার গন্ধ লেগে থাকে, আর সেখানে তুমি বিশ্বাস করলে এক অপরিচিত কে? এতকিছু হয়ে গেল, তুমি আমাকে একবারো জানালে না? আমি তো সব করেছি তোমার কথা মত। আমার সুস্থতা তোমায় চোখেই পড়ল না? কারণ, তুমি আমাকে ভালোবাসার চোখে দেখইনি কখনো। দায়িত্বের চোখে দেখেছ। এই যে টিপিক্যাল বাঙালিপনা। স্বামী যেমনই হোক তার পা ধরে থাকতে হবে। তুমি তেমন নও অরু। ইউ আর স্ট্রং। আমি তোমাকে ভালোবেসেছি, তুমি নও। তাই আমি চাই, তুমি তোমার মতো করে বাঁচো।”
অরুনিকা ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। শীর্ণ শরীরের ঝাকুনি চোখে পড়ার মতো। শৈবাল কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল—
“আমার ভালোবাসা তোমার বিশ্বাসে প্রলেপ লাগাতে পারেনি। সবকিছু নিঃশেষ করে ফেললে। কীসের জন্য তুমি থাকবে আমার সাথে? একজন দুশ্চরিত্র, উন্মাদগ্রস্ত, রেপি*স্ট তোমার যোগ্য নয়। তুমি ভালো কাউকে ডিজার্ভ কোরো।”
অরুনিকা ফুঁসলে উঠে বলল—
” কেন বলছেন এসব?”
“দুর্ভাগ্য কার বলোতো? তোমার না আমার। না কী অরুমিতার, যে না থেকেও আমার মাঝে দেওয়াল তুলে দিলো?”
অরুনিকা রাগ আটকে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল—
“আমি কোথাও যাব না, কোথাও না। এই বাড়ির বাইরে এক পাও রাখব না আমি।”
অরুনিকা গজরাতে গজরাতে বসার ঘরে এলো। চেঁচিয়ে উঠে বলল—
“তোমরা চলে যাও। আমি যাব না তোমাদের সাথে।”
উপস্থিত সকলে উঠে দাঁড়াল। তাদের চোখে রাজ্যের বিস্ময়। নমিতা বেগম নম্র গলায় বললেন—
“এভাবে কথা বলছ কেন বউমা? তারা তোমার মা-বাবা।”
“আপনি চুপ করুন। কী ভেবেছেন আপনারা? আমি চলে যাব। এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাব না আমি। অসুস্থ ছেলেকে বিয়ে করিয়ে আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছেন। আর ছেলে সুস্থ হতেই গিরগিটির মতো রঙ পালটে ফেললেন। কী ভেবেছেন? আমি চলে গেলে ছেলেকে আবার বিয়ে করাবেন! সুন্দরী, শিক্ষিতা আর বড়োলোকের মেয়ে ঘরে তুলবেন। আমি শৈবালকে ছেড়ে কোথাও যাব না। অরুমিতা নই আমি। অরুনিকা আমি। এই বাড়িতে থেকে এক পাও নড়ব না আমি।”
অরুনিকার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে শৈবাল। সে নিরুত্তেজ। অরুনিকার বাবা-মা অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছেন। সহসা জিনিস ভাঙতে লাগল অরুনিকা। সেন্টার টেবিল, ছোটো টুল, ডাইনিং এ থাকা গ্লাস, জগ, প্লেট ছুড়তে লাগল মেঝেতে। কর্কশ স্বরে বলল—
“চলে যাও তোমরা, চলে যাও। আমি যাব না তোমাদের সাথে।”
হাসান আলী আর তৌফিক সাহেব অরুনিকার কাছে এগিয়ে আসতে চাইল শৈবাল বলল—
“ওকে ভাঙতে দিন। আপনারা ওখানেই দাঁড়ান।”
অরুনিকা মোটামুটি ছোটোখাটো সব জিনিস ছুড়ে ফেলল। পা রাখার জায়গা রাখল না সে। তারপর ছুটে গেল নিজের রুমের ভেতর।
বিছানায় দুই পা উঠিয়ে তাতে মাথা চেপে ধরে আছে অরুনিকা। কাঁদছে সে। তার শরীর কান্নার দমকে দুলছে। বিড়বিড় করে বলছে—-
“কোথাও যাব না আমি। আমার স্বামীর ঘর ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। শৈবাল শুধু আমার। আমি চলে গেলেই তাকে আবার বিয়ে করানোর ফন্দি। সব বুঝি আমি।”
কারো হাতের ছোঁয়ায় মাথা তুলে তাকাল সে। তারপর সামনে ব্যক্তিটিকে দেখে এক জীবনের সমস্ত কান্না যেন উপচে এলো তার গলায়।
“আমি যাব না। যাব না।”
চলবে,,,
#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:২৪(শেষাংশ)
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি
বিছানা থেকে উন্মাদগ্রস্তে ন্যায় নেমে এসে শৈবালের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অরুনিকা। দুই হাতে খামচে ধরে তার শার্ট। শৈবাল বরাবরের মতো শান্ত। অরুনিকা লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে বলল—
“আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না শৈবাল। কেন এমন করছেন আপনি?”
শৈবাল উত্তর দিলো না। অরুনিকা বিপর্যস্ত, বিধ্বস্তের ন্যায় হাতের মুষ্টি শক্ত করে, যেন ছিঁড়ে ফেলবে শৈবালের শার্ট। অরুনিকার এহেন ক্ষিপ্ত টানে শৈবালের শার্টের কলার তার কাঁধে এসে ঠেকেছে। শৈবালের মনে হচ্ছে শার্টের কলার তার গলদেশ চিরে নেমে আসবে। হুশ নেই অরুনিকার। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে খামচে ধরে রেখেছে শৈবালকে। তার অজান্তেই নখের পাতলা ডগা গেঁথে যাচ্ছে শৈবালের বুকে। কান্নার তোড়ে মুখে লালা জমে যাচ্ছে। শৈবালের বক্ষঃস্থলে নিজেকে চেপে রেখে বলছে—
“আপনি এমন করে কেন বদলে গেলেন শৈবাল? কেন আমাকে নিজের জীবন থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছেন?”
এক লহমায় শৈবালের ইচ্ছে হলো এই ক্রন্দনরত নারীকে বুকের মাঝে পিষে ধরতে। তার সারা অঙ্গে নিজের গন্ধ বিলিয়ে দিতে। কিন্তু শৈবাল তা করল না। নিষ্ঠুর পর্বতের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। অবিচল কণ্ঠে বলল—
“সময় মানুষকে বদলে দেয় অরু। তুমি চেয়েছিলে আমি সুস্থ হয়ে যাই। দেখো, আমি সুস্থ। সময়ের সাথে সাথে আমি নিজেকে বদলে নিয়েছি।”
অরুনিকা বিরোধ করে বলল—
“আমি চাই না আপনি বদলে যান। আমি আপনার সব পাগলামি সহ্য করেছি, কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমার এই সুস্থ শৈবাল চাই না। আপনি আমার পুরোনো শৈবাল হয়ে যান। আমি আমার অসুস্থ শৈবালকে ফেরত চাই। ফিরিয়ে দিন আমাকে।”
“তা আর সম্ভব নয়। সময়কে মেনে নাও। সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না শৈবাল। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনাকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নিতেও যে কষ্ট হবে। কেন বুঝতে পারছেন না আপনি? আপনার জীবনে আমি কাউকে মেনে নিতে পারব না। এতগুলো দিনে একবারও আপনার মনে হলো না, আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি! আমি আপনার সবকিছু মেনে নিয়েছি, আর আপনি আমার একটা ভুলের জন্য এত বড়ো শাস্তি দিতে চাইছেন?”
ডুকরে উঠল অরুনিকা। তার চোখের জলে সয়লাব শৈবালের বক্ষ পাটাতন।
শৈবাল নিস্তরঙ্গ গলায় জিজ্ঞেস করল—
“তুমি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো? কখনো বলোনি তো।”
“আমি আপনাকে ভালোবাসি শৈবাল। অনেক বেশি ভালোবাসি।”
শৈবাল অধর ছড়িয়ে শ্বাস ফেলল। দুই হাতে চট করে জড়িয়ে ধরল কোমল, শীর্ণ দেহের নারীটিকে। নারীটি গুঁজে গেল তার বুক পাঁজরের সাথে। শৈবাল আলতো গলায় বলল—
“কোথাও যেতে হবে না তোমায়। আমি তোমাকে আমার কাছেই রাখব, আমার বুকের কাছে, এই হৃদয়ের মাঝে।”
অরুনিকা শ্রান্ত দেহটার সমস্ত ভর ঢেলে দিলো শৈবালের বুকে। অকস্মাৎ তাকে কোলে তুলে নিল শৈবাল। অরুনিকা রবিভ্রান্ত, টিমটিমে, কৌতূহলী চাহনি। সে শৈবালের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখল। অরুনিকার ভেজা মুখটাকে মনে হচ্ছে একরাশ বৃষ্টির গভীর ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ হয়ে আছে। শৈবাল ছোট্ট হেসে ফিচেল গলায় বলল—
” এত হালকা হয়ে গেলে কী করে? খাওনা কেন ঠিক মতো?”
“আপনি আমাকে এখন আর কোলে নেন না।”
“সুযোগ দাও নাতো।”
অরুনিকা বাচ্চা বাচ্চা কণ্ঠে বলল—-
“এখন থেকে রোজ নেবেন।”
মুচকি হাসল শৈবাল। অরুনিকাকে বিছানায় শুইয়ে দিতেই গলা ছেড়ে তার কলার ধরে ফেলল অরুনিকা। শৈবাল স্বাভাবিক গলায় বলল—
“ছাড়ো।”
” না। তাহলে আপনি চলে যাবেন।”
“কোথাও যাব না। ছাড়ো।”
অরুনিকা কলার ছাড়তেই সোজা হয়ে বসল শৈবাল। মৃদু গলায় বলল—-
“কান্না থামাও। কী অবস্থা করেছ নিজের!”
“তবুও তো আপনার একটু মায়া হলো না।”
“মায়া নেই আমার।”
শৈবাল ঝুঁকে অরুনিকার ললাটে ওষ্ঠাধরের ছোঁয়া আঁকল। বলল—
“শুয়ে থাকো। আমি আসছি।
“কোথায় যাবেন আপনি?”
“আম্মু- আব্বুকে বলি, তাদের মেয়ে যাচ্ছে না।”
“বলুন।”
“আচ্ছা।”
“তাড়াতাড়ি আসবেন।”
“আসবো।”
শৈবাল যখন বসার ঘরে পৌঁছাল তখন চার জোড়া উৎকণ্ঠিত চোখ চেয়ে রইল তার দিকে। সে নির্মল গলায় বলল—
“অরু যাবে না। চলুন, আপনাদের পৌঁছে দিই আমি।”
অরুনিকার বাবা- মা দ্বিরুক্তি করল না। ঘরের মেঝের দিকে তাকিয়ে পূনরায় বলল শৈবাল —-
“আম্মা, টুম্পার মা’কে আসতে বলুন। আর বলবেন, সাথে যেন তার বাসার কাউকে নিয়ে আসে। এগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে বলুন। বাড়তি টাকা দিয়ে দেবেন। আমি আম্মু-আব্বুকে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
নমিতা বেগম মাথা ঝাঁকালেন।
প্রায় ঘণ্টা পর ফিরল শৈবাল। গ্যারেজে গাড়ি ঢুকিয়ে ঘরে ঢোকার পূর্বেই ফোন করল জাফরকে। জাফর ফোন রিসিভ করতেই বিগলিত হেসে বলল—
“প্ল্যান কাজ করেছে জাফর ভাই।”
জাফর উল্লাসিত গলায় বলল—
“তাই নাকি! সেটা তো ভালো খবর। এই, তুমি ওকে নিয়ে বাসায় এসো তো। কতদিন মেয়েটাকে হাসতে দেখি না!”
শৈবাল মৃদু হেসে বলল–
“নিয়ে যাব। আজ নয়। ও একটু সুস্থ হোক।”
“আচ্ছা, তা ঠিক আছে। অনেক কষ্ট দিয়েছ মেয়েটাকে। এবার যত্ন নাও।”
“নেব। রাখি এখন।”
“আচ্ছা।”
কল কে*টে ঘরে ঢুকতেই তার দিকে অস্থির চোখে তাকাল ফারিনা। ফারিনার গলা শুকিয়ে এসেছে ভয়ে। সমস্ত ভাঙা-চোরা জিনিস ফেলে দিয়ে এখন পানি দিয়ে মেঝে মুছে দিচ্ছে। তার ধারণা, এসব শৈবাল করেছে।
রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো শৈবাল। বিছানার কাছে এসে দাঁড়াতেই দেখল, তদ্রাচ্ছন্ন অরুনিকা। শৈবাল সন্তর্পণে অরুনিকার পাশে বসল। কেমন রঙহীন চেহারা! শরীরের রক্ত যেন শুষে নিয়েছে কেউ! গলার হাড় ঠিকরে আসছে বাইরে। অরুনিকার ওষ্ঠাধরের দিকে তাকাল শৈবাল। শুষ্ক, খসখসে, নির্জীব। সেই শুষ্কতাকে নিচ্ছিদ্র আশ্লেষে নিজের অধরোষ্ঠের ভাজে নিয়ে নিল শৈবাল। অরুনিকার চোখ ছুটল। গহন স্পর্শে তার শরীর কেঁপে উঠল।
মনমরা কণ্ঠে বলল—
“এখন তো আমাকে চুমু খেতেও আপনার ভালো লাগবে না।”
শৈবাল ফিকে হেসে অরুনিকার পাশে গা এলিয়ে দিলো। অরুনিকা কাত হয়ে শৈবালের বুকের একপাশে নিজেকে লেপ্টে দিলো। ক্ষুণ্ণ গলায় বলল—
” এতটা কঠিন হলেন কী করে আপনি?”
শৈবাল জবাব দিলো না। আলগোছে দেহভঙ্গিমা বদলে ঘনিষ্ঠ হলো আরো। অরুনিকার কণ্ঠদেশে অধর ডুবিয়ে তাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরল। অরুনিকা অভিমানী গলায় বলল—-
“এই শুকনো ফুলের গন্ধ এখন আর আপনার ভালো লাগবে না।”
শৈবাল ঘোরগ্রস্ত গলায় বলল—
“আমার সুগন্ধি ফুলের গন্ধ কখনো কমবে না। যার সারা অঙ্গে সূর্য কিরণ সে কী করে মুছড়ে যায়!”
শৈবাল তার বুকের মাঝে নিয়ে নিল অরুনিকাকে। ঘনিষ্ঠ আবেশে এক অদ্ভুত ভালোলাগা তরতর করে ছড়িয়ে পড়তে লাগল অরুনিকার লতানো দেহে।
চলবে,,,