ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত #পর্ব:২৫,২৬(প্রথমাংশ )

0
903

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:২৫,২৬(প্রথমাংশ )
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি
পর্ব:২৫

দুই বার তটস্থ ভঙ্গিতে ডোরবেল বাজাল শৈবাল। দরজা খুলেই চমৎকার ভঙ্গিতে হেসে উঠল জাফর। কণ্ঠ সংকীর্ণ করে প্রশ্ন করল–

“এত দেরি হলো কেন?”

শৈবাল ঝরা গলায় বলল—

“ঢাকা শহরের রাস্তা….বুঝোই তো। জ্যাম।”

জাফর প্রশ্রয়ের হাসি হেসে তাদের ভেতরে আসতে বলল। শৈবাল একা নয়, তার সাথে অরুনিকাও এসেছে। তাকে দেখে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল জাফর—

“কী খবর? আমি তো ভেবেছিলাম আপনার আর আসাই হবে না।”

অরুনিকা লাজে রাঙা অধর ছড়িয়ে মাথা নিচু করল। রিম আর ঝিম দৌড়ে এসে ঝুকে পড়ল অরুনিকার গায়ে। অরুনিকা হাস্যোজ্জ্বল গলায় বলল—

“কেমন আছে আমার পাখিরা?”

দুইবোন একসাথে বলল—

“ভালো। মামিমা এসো, এসো।”

“তোমরা যাও মামিমা আসছি।”

রিম, ঝিম তাদের রুমে ছুটে গেল। এখন তারা সমস্ত খেলনা নামিয়ে বিছিয়ে ফেলব। আর অরুনিকাকে একটা একটা করে দেখাবে।

জাফর ভীষণ খুশি হয়ে বলল—

“তোমরা এসেছ আমি খুব খুশি হয়েছি। ”

শৈবাল এগিয়ে গিয়ে জাফরকে জড়িয়ে ধরল। খানিক সময় পর ছেড়ে দিয়ে বলল—

” আমার কোনো আফসোস নেই, যে কেন ওপরওয়ালা আমাকে বড়ো ভাই দেয়নি।”

জাফর মোলায়েম হেসে ফিচেল গলায় বলল—

“জনসংখ্যা বাড়লে দেশের ই সমস্যা।”

সকলে একযোগে হেসে ফেলল। দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে আছে রুমকি। ঝটকে উঠে বলল জাফর—

“আরে…চুলায় রান্না আমার…শেষ হলো সব!”

শৈবার চমকে উঠে বলল—

“তুমি রান্না করছ নাকি?”

“হ্যাঁ, ও…তোমার আপার শরীরটা তেমন ভালো নেই। নো সমস্যা। আজ আমার হাতের রান্না খেয়ে দেখো। তোমার আপার থেকে কত ভালো রান্না করি!”

জাফর হা হা করে হেসে উঠল। রুমকি ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সেখানে। জাফর চটজলদি রান্নাঘরে ছুটল। শৈবাল বোনের কাছে এগিয়ে গিয়ে আদুরে গলায় বলল—

“কেমন আছ আপা?”

আবেগে চোখ দুটো ভিজে উঠল রুমকির। ঝাপসা চোখে কান্নামিশ্রিত হেসে বলল—

“ভালো, তুই কেমন আছিস? এমন শুকিয়ে গেছিস কেন? ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিস না?”

“করব না কেন! কী হয়েছে তোমার? জাফর ভাই বলল, তোমার শরীর ভালো নেই!”

“আরে তেমন কিছু না। মাথাটা ধরেছে আমার। আর ওর আরকি… অরুনিকাকে নিজের হাতে খাওয়াবে তাই এত জোগাড় যন্ত্র।”

শৈবাল চতুর হেসে বলল—

“তবে যাই বলো, তোমার চেয়ে জাফর ভাইয়ের রান্নার হাত ভালো।”

রুমকি কান মলে ধরল শৈবালের। শৈবাল কিঞ্চিৎ বিস্মিত আর লাজুক গলায় বলল—

“আরে, আরে ছাড়ো। অরুর সামনে আমার মান-ইজ্জতের ফালুদা করে দিচ্ছ!”

রুমকি কান ছাড়ল। ঝপ করে বোনকে জড়িয়ে ধরল শৈবাল। ফিসফিস করে বলল—

“অরুর ওপর রাগ করে থেকো না।”

আলগা হলো শৈবাল। অরুনিকার দিকে তাকিয়ে বলল—

“তুমি আপার সাথে কথা বলো, আমি জাফর ভাইয়ের কাছে যাচ্ছি।”

গায়ের ব্লেজার খুলে বোনের হাতে দিলো শৈবাল। হাতার বোতাম খুলে তা গুটিয়ে নিতে নিতে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো।
অরুনিকার দিকে ক্ষোভভরা দৃষ্টি রুমকির। অরুনিকা ছোটো ছোটো পায়ে রুমকির সামনে এসে দাঁড়াল। অতঃপর শ্লেষাত্মক গলায় বলল—

” এতটা পর করে দিলেন? ভাইয়ের জন্য আমার হাত ধরলেন, আবার তার একটু রাগে আমাকে বাড়ি থেকে বের করার জন্য উঠে পড়ে লেগে গেলেন? আমি না হয় একটা ভুল করে ফেলেছি আপা… তাই বলে আপনি এমন করবেন?”

অরুনিকার নেত্রযুগল সিক্ত। রুমকি পর্বতের ন্যায় অনড়। সে আবার বলল—

“একবার আমার জায়গায় নিজেকে ভাবুন তো। যদি আপনার সাথে এমন হতো তাহলে কী করতেন? জাফর ভাই তো শুধু আপনাকেই ভালোবাসে। কিন্তু অরুমিতা! সে তো অতীত ছিল শৈবালের। তারা একে অপরকে ভালোবাসত, বিয়েও করেছে। আমি কী করতাম তখন?”

রুমকা ঢোক গিলল। তার মুখে কোনো ভাবাবেশ হলো না। সে স্থির, নিষ্কম্প চোখে চেয়ে রইল।

“আমি ভুল করেছি। তার জন্য যা হওয়ার হয়েছে। আপনার পায়ে পড়ি আমাকে আর শৈবালের কাছ থেকে আলাদা করবেন না।”

অরুনিকা নিচু হতে গেলেই তাকে দুই হাতে ধরে বুকে নিয়ে নিল রুমকি। বলল—

“পাগল হয়েছিস! কী করছিস?”

“আমি শৈবালকে ভালোবাসি আপা। তাকে ছাড়া আমার কোনো পথ নেই।”

রুমকির বুক কাঁপছে। ভাইয়ের আগে পড়ে সে কাউকে তোয়াক্কা করে না।
,
,
,
রান্নাঘরের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে শৈবাল। জাফর মাংসের পাতিল নামিয়ে নিয়ে তোয়ালে তে হাত মুছে বলল—

“তুমি তো দারুন খেলোয়াড় ! মেয়েটাকে পুরো ঘোল খাইয়ে ছাড়লে!
আর অরুনিকাটাও এত শক্ত! মানে, বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা না বললে তো এই মেয়ে চুপ করে ঘাপটি মেরেই থাকত।”

শৈবাল অধর কোণে হেসে তেরছা স্বরে বলল—

“এক বছর সংসার করেছি। ওর নিঃশ্বাসের খবর রাখি আমি।”

“তা আর বলতে! কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।”

“কী কথা?”

“ওর মাথায় এটা কেন এলো, যে আমরা তোমাকে আবার বিয়ে করাব!”

“জানি না।”

জাফর ফিক করে হেসে বলল—

“আরে বউ মেটেরিয়াল এরা। এদের মনে সবসময় এই খুঁতখুঁতুনি থাকে। এই তোমার বোনকেই দেখো, সেদিন তন্দ্রা ফোন করেছে, আর ও রিসিভ করেছে। এক ঘণ্টা আমার কানটা জ্বালিয়ে ফেলল! বলে কি না মেয়ে মানুষ কেন এত রাতে ফোন করবে। ভাই তুমিই বলো, কোন মেয়ের মাথা খারাপ হয়েছে, আমার মতো দুই বাচ্চার বাপকে ফোন করে প্রেমালাপ করবে। একটা জরুরি কথা বলতে ফোন করেছিল তন্দ্রা। আহ! জীবন আমার!”

গা দুলিয়ে হেসে উঠল শৈবাল। চট করে জাফরকে বিভ্রান্ত করে দিয়ে প্রশ্ন করল—

“শিমুল কোথায়? আজকাল ওর দেখা পাচ্ছি না। করেটা কী সারাদিন?”

জাফর যারপরনাই বিরক্তি নিয়ে বলল—

“আর বলো না। ও যে সারাদিন কী করে ও নিজেই জানে না। বলছে, আগামী সপ্তাহেই চলে যাবে।”

শৈবাল আশ্চর্যের ভঙ্গিতে বলল–

” ওর ছুটিতো এখনো শেষ হয়নি!”

“হ্যাঁ, তবুও বলছে চলে যাবে।”

তদ্দণ্ডে ডোরবেল বাজল। শৈবাল রান্নাঘরের দরজার চৌকাঠে এসে দাঁড়াল। দেখল, রুমকি দরজা খুলতেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে নিজের রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছে শিমুল। ভ্রূ কুঞ্চি করে তাকাল শৈবাল।
,
,
,
দম করে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসল শিমুল। তার শরীর দিয়ে দরদর করে ঘাম ছুটছে। মোবাইল বাজছে। একরাশ বিতৃষ্ণা নিয়ে ফোন রিসিভ করে বলল—

“তুই বারবার কেন ফোন করছিস আমাকে? দেখ, আর কোনো ঝামেলা করবি না তুই। একবার যদি ভাইয়া বুঝতে পারে না, ওই সিগনেচার আমার, তাহলে জানে মে*রে ফেলবে আমাকে। আর ওই শৈবাল… জীবন্ত পুঁতে দেবে।”

ওপাশের ব্যক্তি একগাল হেসে বলল–

“তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন বলতো? রিল্যাক্স ব্রো।”

শিমুল রোষানলে জ্বলে বলল—

” একদম বাজে কথা বলবি না। তুই ইচ্ছে করে আমাকে ফাঁসাচ্ছিস। তোকে আমি শুধু হেল্প করেছি আমার একটা ভুলের জন্য। আর তুই… আমাকেই কালপ্রিট বানিয়ে দিচ্ছিস। ”

ওপাশের ব্যক্তি হো হো করে হেসে উঠল। বলল—

“আরে তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন? ওই শৈবাল কিছুই জানতে পারবে না।”

“জানুক বা না জানুক। তুই এসবের মধ্যে আমাকে আর টানবি না। আমি আর এসবের মধ্যে নেই। আর তুইও থাম। আর কত বদলা নিবি? একবার যদি শৈবাল তোকে ধরতে পারে না, জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বে।”

“তার আগে অরুনিকাকে আমার চাই।”

হিম হয়ে এলো শিমুলের রক্ত। তার পা দুটো কাঁপতে লাগল। দরজায় করাঘাত পড়তেই তড়িঘড়ি করে ফোন ঢুকিয়ে ফেলল পকেটে। ধুকপুক করছে বুক। দরজা খুলল শিমুল। দাঁড়িয়ে আছে শৈবাল।

চলবে,,,

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:২৬(প্রথমাংশ )
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি

বিকেলের হলুদাভ ম্লান রোদ দেয়ালের গা চুইয়ে গড়িয়ে পড়ছে। থমথমে, নিরাক পরিবেশ। গাছের ছায়ারা মাটিতে চেয়ে আছে। একটু পরেই নীলাভ আকাশে বিছিয়ে যাবে ধূসর নীল।

অরুনিকার কোলে মাথা রেখে মোবাইলে গেমস খেলছে শৈবাল। তার ভ্রূযুগল বিচিত্র ভঙ্গিতে বাঁকানো। অরুনিকা স্বামীর চুলে হাত গলিয়ে রেখেছে। হালকা হাতে মুঠো করে আবার ছেড়ে দিচ্ছে। শৈবালের দৃষ্টি বিভ্রান্ত। অরুনিকা কৌতূহলী গলায় বলল—

“কী ভাবছেন?”

শৈবাল মোবাইলে নজর রেখেই বলল—

“তুমি কী করে বুঝলে?”

“আপনার ভ্রূ দেখে।”

“ভ্রূ দেখে কিছু বোঝা যায়?”

“প্রিয় মানুষদের যেকোনো ভঙ্গি দেখলে তাদের অস্বস্তি বোঝা যায়।”

শৈবাল ভ্রু বিলাস করে চাইল অরুনিকার দিকে। অরুনিকার চুল ছড়িয়ে আছে তার মাথার দুই পাশে। একটু ঝুঁকতেই নিজের মুখের সাথে সাথে শৈবালের মুখও আচ্ছাদিত হলো অরুনিকার রেশম কালো চিকুরে। শৈবাল সন্ধানী গলায় বলল—

” আমি তোমার প্রিয় মানুষ?”

অরুনিকা মুচকি হেসে কপট গলায় বলল–

“উহু।”

“তাহলে?”

“কেউ না।

“কেউ না?”

শৈবাল হাসল। তার কপালে চুমু আঁকল অরুনিকা। আকস্মিক ঘটনায় শৈবাল চমকাল। অরুনিকা অধৈর্য গলায় বলল—

“বলুন না কী ভাবছেন?”

“আগে চুমু খাও।”

“খেয়েছি তো।”

“ওখানে না।”

অরুনিকার ঠোট ভরতি রক্তিম লাজ। সে সলজ্জ গলায় বলল–

“ঢং!”

“তাহলে বলব না।”

“বলুন না..।”

“যা বলেছি তাই করো।”

অরুনিকা শৈবালের বেহায়াপনা দেখে অবাক হলো। আজকাল অদ্ভুত আবদার করে শৈবাল। শৈবালকে আশ্চর্যের তীর বিঁধিয়ে তার ওষ্ঠাধরে গভীর চুমু খেল অরুনিকা। ঠাস করে শৈবালের হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেল। অরুনিকা ঝুমঝুম করে হেসে ওঠে। শৈবাল তুষ্ট গলায় বলল—

“ভুমিকম্প শুরু করে দিলে তুমি। একটু বলে নেবে না, প্রিপারেশন নিতাম।”

“বেহায়া!”

শৈবাল ফিচেল হেসে। অরুনিকাকে টেনে নিয়ে তার অধরোষ্ঠে ডুবে যায়। দীর্ঘ সময় পর ছেড়ে দিয়ে বলল—

“চুমু এভাবে খেতে হয় বুঝলে।”

“আপনি আসলে একটা বেহায়া! ট্যাক্স নেওয়া শেষ, এখন বলুন কী ভাবছেন?”

শৈবাল বিছানা থেকে মোবাইল নিয়ে আবারও তাতে মনোযোগী হলো। বলল—

“শিমুলের কিছু একটা হয়েছে। ”

“কেন?”

“দেখলে না, খেতে বসে একটা কল আসতেই ওর গলায় খাবার আটকে গেল। একবার তো রুমে গিয়েও দেখি সেম অবস্থা। জিজ্ঞেস করলাম, বলল ভিসা নিয়ে কী যেন ঝামেলা হয়েছে।”

“তাই হয়তো টেনশন করছে।”

“হয়তো। কিন্তু তাই বলে এমন অবস্থা! ও কীভাবে কাঁপছিল দেখেছ? আমার তো মনে হচ্ছে ওর নির্ঘাত মৃগীরোগ হয়েছে।”

অরুনিকা শৈবালের চুল আলতো হাতে খামচে ধরে বলল—

“যতসব আজগুবি কথা! বাদ দিন। আপনাকে একটা সিক্রেট বলি?”

শৈবাল চিবুক উঁচু করে তাকাল। তারপর চোখ নামিয়ে মোবাইলে তাকাল। দুই হাতের বুড়ো আঙুল সমানতালে মোবাইলের স্ক্রিনে চলছে। বলল—

“বলো।”

অরুনিকা এক চিলতে হেসে শৈবালের কান ছুঁইয়ে বলল–

” আপা আবার কনসিভ করেছে?”

শৈবার ধীরস্থির গলায় বলল–

“তোমাকে কে বলেছে? আপা বলেছে?”

“না। সেদিন আপা আম্মাকে ফোন করে বলছিল। আমি তখন আড়াল থেকে শুনেছি।”

শৈবাল অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় বলল—

“ভালোই হয়েছে। রিম, ঝিমও বড়ো হয়েছে। নিজের হাতে মোটামুটি অনেক কিছুই করতে পারে। সমস্যা হবে না তেমন।
আপার ওপর রাগ কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। রাগ পড়ে যাবে আপার।”

“জানি। কয়েকদিন পর এমনিতেই সব রাগ ধুয়ে যাবে।”

শৈবাল অবাক গলায় বলল—-

“কী করে?”

“আপনার জানতে হবে। সময় হলে জানবেন।”

“সময় হয়নি এখনো।”

“না।”

“এমন কী যে সময়ের আগে আমি বুঝব না?”

অরুনিকা আলতো হেসে বলল—

“কারণ, আপনার বুদ্ধি নেই।”

শৈবাল অরুনিকার কথায় তাল মিলিয়ে বলল–

“ও, আমার বুদ্ধি মনে হয় হাঁটুর নিচে।”

অরুনিকা জোর দিয়ে বলল—

“হাঁটুর নিচেই। নাহলে কী আর বউয়ের কোলে মাথা রেখে গেমস খেলতেন?”

শৈবাল চকিতে তাকাল। মৃদু হেসে বলল—

“একটু আগে তো তুমিই নিষেধ করলে। এখন আবার আমার বুদ্ধির মুড়িঘণ্ট করছ! এই তোমাদের মেয়ে জাতির এক দোষ! তোমাদের মন বোঝার মতো কোনো মেশিন আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারেনি। আমরা তো সাধারণ পুরুষ! এই জন্যই লোকে বলে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো রহস্যের ভাণ্ডার হলো মেয়েদের মন!”

অরুনিকা চোখ -মুখের রং পালটে বলল—

” এত আজেবাজে কথা কোথা থেকে শিখেছেন? আজকাল বেশি কথা বলেন আপনি।”

“কথা পড়ে হবে। আগে বুদ্ধির পরীক্ষা দেওয়া যাক।”

শৈবাল আচমকা অরুনিকাকে নিজের কাছে টেনে নিল। অরুনিকা আকস্মিক বিস্ময়ে বলে উঠল—

” এই ছাড়ুন, কী শুরু করলেন? ”

দরজার পাটাতনে মৃদু শব্দ হলো। ছোটো ছোটো হাতে দরজাতে চাপড় বসাচ্ছে রিম আর ঝিম।

“মামিমা.. দরজা খোলো। মামিমা…খোলো।”

রিম, ঝিমের কণ্ঠে অরুনিকাকে ছেড়ে দিলো শৈবাল। হাসতে হাসতে বলল—

“যাও তোমার বাচ্চা পার্টি এসেছে। সামনে আরও একটা সামলানোর প্রিপারেশন নিয়ে নাও।”

অরুনিকা বিছানা থেকে ব্যস্ত ভঙ্গিতে নামতে নামতে বলল—

“আপনাকে সেসব নিয়ে ভাবতে হবে না। সামনে আরও দুটো সামলানোর প্রিপারেশন নিয়ে রাখব আমি।”

শৈবাল মুচকি হাসে। দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে দুই বোন। রিম, ঝিমের কোল জুড়ে লাল শাড়ি আর চুড়ি। আদুরে মায়াভরা কণ্ঠে আবদার করল ঝিম—

“মামিমা শাড়ি পরিয়ে দাও। চুড়ি পরিয়ে দাও।”

অরুনিকা একগাল হেসে আহ্লাদী গলায় বলল—

“ওমা! আমার পাখিরা শাড়ি পরবে?”

“হুম, হুম।”

দুই বোন একসাথে মাথা ঝাঁকায়। অরুনিকা দুই বোনকে বিছানায় তোলে। ঝিম চট করে শৈবালের কোলে বসে পড়ে। শৈবাল আসন পেতে বসে যেন ঝিমের বসতে সুবিধা হয়। দুই পা গোল করে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে ঝিম রিমের দিকে। তার কোলে গুজ করে রাখা শাড়ি, চুড়ি। রিমকে বিছানার ওপর দাঁড় করিয়ে তাকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে অরুনিকা।
,
,
,
ঘন শ্বাসের সাথে ঘরময় পায়চারী করছে শিমুল। মোবাইল বেজেই যাচ্ছে। তীব্র বিরক্তি যখন মস্তিষ্কে চড়ে বসল, কল রিসিভ করেই বিশ্রি ভাষায় গালি দিলো শিমুল। ওপাশের ব্যক্তির সরল হাসি। বলল—

“ক্ষেপেছিস ক্যান? শৈবাল যদি জানতে পারে অরুমিতা তোর সন্তানের মা হতে চলেছিল, ভাবতে পারছিস কী হবে?”

শিমুল তিরিক্ষি গলায় বলল—

“তুই আসলেই একটা জা*নো*য়ার! আমি যদি বুঝতাম তুই আমাকে এভাবে ফাঁসাবি তাহলে কখনো তোর সাথে অরুমিতার পরিচয় করিয় দিতাম না।”

ওপাশের ব্যক্তি হো হো করে হেসে উঠল। চাপা স্বরে বলল—

“তোকে যা বলেছি তাই কর।”

“বললাম তো নেই আমার কাছে অরুনিকার নাম্বার। ও মোবাইল ইউজ করছে না সেদিনের ঘটনার পর। ভাবিকে আমি অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি।”

“আচ্ছা, মেনে নিলাম। কেমন আছে অরুনিকা?”

“তুই গিয়ে দেখ। শা*লা, কু*ত্তা, হারা*মি! ”

“ওকে আমার চাই।”

“চাইলে আগে কেন বিয়ে করিসনি? এখন কেন তোর এত রস উতলে উঠছে?”

“ওর বাবা যে হুট করে ওই পাগলা শৈবালের গলায় ওকে ঝুলিয়ে দেবে, তা কী আমি জানতাম?”

” এখন কী চাস তুই?”

ডাকাতের মতো হেসে উঠল মুঠোফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি। টুকটুক করে লাইন কে*টে গেল। ঘামে গোসল করে নিয়েছে শিমুল। তার একটা ভুল তার আজকের বিপর্যয়ের কারণ। রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ কখনো মানুষের জীবনে সুফল বয়ে আনে না। তা আজ সে চরম মূল্য দিয়ে বুঝতে পারছে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here