ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত #পর্ব:২৯(শেষাংশ),৩০(প্রথমাংশ)

0
955

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:২৯(শেষাংশ),৩০(প্রথমাংশ)
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি
পর্ব:২৯(শেষাংশ)

সুডোল দুটি আঁখি উন্মুক্ত করে চেয়ে আছে অরুনিকা। শৈবাল মৃদু হাসল। বলল—

” আমার ওপর তোমার রাগ হচ্ছে অরুনিকা? হোক, তবে ঘৃণা কোরো না। ভালোবাসার মানুষের ঘৃণা নিয়ে বাঁচা যায় না। একটুও না।”

অরুনিকার নেত্রযুগল থেকে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ল নীরবে, নিঃশব্দে, অবাধে। শৈবাল তার চাহনি সহজ করে হেসে উঠল। নির্মল গলায় বলল—

“তোমার অনেক প্রশ্ন আমার কাছে তাই না? বলো, কোথা থেকে শুরু করব? আজ তোমার সব প্রশ্নের জবাব দেবো আমি। আর তুমি ঠিক করবে, আমার জীবনের এই জঘন্য অধ্যায়ের সমাপ্তির পর, তুমি আমার সাথে থাকবে কি না।”

অরুনিকা আলতো গলায় বলল—

“কীসের সম্পর্ক আপনার অমিত ভাইয়ার সাথে? কীসের প্রতিশোধ নিয়েছে সে? কেন শিমুল ভাই আপনার এত কাছের মানুষ হয়েও আপনাকে ধোঁকা দিলো, যেখানে সে আর আপনার পরিবারের সবাই জানে আপনি অরুমিতাকে ভালোবাসেন? আমার শেষ প্রশ্ন, যাকে আপনি এত ভালোবাসতেন, তার একটা ভুলেই আপনি তার প্রাণ কেড়ে নিলেন? সত্যিই কী আপনি অরুমিতাকে ভালোবাসতেন? কষ্ট হলো না আপনার? কেন করলেন শৈবাল?”

শৈবাল হালকা ঝুঁকে বেখেয়ালি ভঙ্গিতে গাঢ়স্বরে হেসে উঠল। সে হাসিতে শব্দ হলো না। শুধু পরিবর্তন হলো শৈবালের মুখভঙ্গির। শৈবাল নির্মোহ গলায় বলল–

“আমি ওকে ভালোবাসতাম। খুব বেশি ভালোবাসতাম। বললাম না, ভালোবাসার মানুষের ঘৃণা নিয়ে বাঁচা যায় না। তাই। ওকে আমি মা*রতে চাইনি। একসাথে ম*রতে চেয়েছি। যেন পরপারে আবার আমাদের দেখা হয়। কিন্তু….।”

শৈবাল থামল। অরুনিকার আগ্রহদীপ্ত চাহনি। তার দৃষ্টি অনড়, অবিচল। শৈবাল বলল—

“অমিতের সাথে আমার পরিচয় কলেজে। একই গ্রুপ একই সেকশনে ছিলাম আমরা। খুব বেশি সখ্যতা ছিল না আমাদের। কলেজ আর কোচিং এ দেখা আর কলেজ মাঠে দলের হয়ে ক্রিকেট খেলায় আমাদের যোগাযোগ হতো। খুব স্বল্প ছিল তা। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বোর্ড পরীক্ষায় আমাদের সিট ছিল আগে পিছে। অমিত আমার সামনের বেঞ্চে ছিল। ঠিক শেষ পরীক্ষার দিন। ঘটল এক ঘটনা। ডিউটিরত স্যার, অমিতকে সন্দেহ করে দাঁড় করালেন। অমিত ঘাবড়ে গিয়ে কায়দা করে তার হাতে থাকা নকলের কাগজ পেছনে ফেলল। তাকে সার্চ করে কিছু না পেয়ে স্যার বেঞ্চের নিচের দিকে তাকিয়ে আমাকে দাঁড় করালেন। এবং ওই কাগজের হেতু স্যার আমার খাতা নিয়ে গেলেন। স্যারকে অনেক বলেছিলাম, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না। পরে বাধ্য হয়ে আমি স্যারকে বলেছিলাম যে, ওই নোটের পেপার অমিতের। কারণ, ওই কাগজের একপাশে বড়ো করে ‘এ’ লেখা, যা অমিতের প্রায় বইয়ের পেজের মধ্যে দেখা যেত। স্যার তবুও আমার কথা বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না। তখন আমি স্যারকে বলেছিলাম, যেন আমি যা খাতায় লিখেছে তা আমাকে মুখে জিজ্ঞেস করে, আর অমিত যা লিখেছে তা অমিতকে। যদি সত্যিই আমি নকল করি তাহলে তো আমার কিছু পারার কথা না। আর যদি এই কথা সত্যি হয়, তাহলে আমি চলে যাব। তখন স্যার বাধ্য হয়ে তাই করলেন।”

শৈবাল দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নিস্তব্ধ, নীরব পরিবেশে কারো গোঙানির সুর ভেদ করে পূনরায় তার কণ্ঠ ঝড় তুলল। সে বলল—

” অমিত কিছুই পারল না। কারণ, সেদিন ও পড়েইনি কিছু। ওর এক বন্ধু ওকে তার জন্মদিনে দাওয়াত করেছিল। ওরা সবাই নেশা করত। আর সেই নেশাই অমিতের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওকে দেখলে যে কেউ তা আঁচ করতে পারত। দুই লালাভ চোখে একবার আমার দিকে তাকিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। এ হলো অমিতের সাথে আমার ঘটনা। যার বদলা ও অরুমিতাকে অ্যাডিক্টেক করে নিয়েছে। আর এ সবকিছুর পেছনে কাঠি নাড়িয়েছে শিমুল। ওর সব সময় মনে হতো, জাফর ভাই কোথাও না কোথাও ওর চেয়ে আমাকে বেশি সাপোর্ট করত। হয়তো অরুমিতার প্রতিও ওর অব্যক্ত ভালোলাগা ছিল। যা অরুমিতা কখনো পজিটিভলি নেয়নি। আমি গ্র্যাজুয়েশন করতে বিদেশের বুকে পা রাখতেই অরুমিতার সাথে আমার যোগাযোগ কমতে লাগল। তবুও আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।
অরুমিতা একা একা বড়ো হয়েছে। স্বাধীনচেতা মেয়ে। জয়নাল আঙ্কেল বেশিরভাগ সময় তার হোমিওপ্যাথির দোকান নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। অরুমিতা কোথায়, কার সাথে কী করে তার খেয়াল তিনি তেমন রাখতেন না। আমিও ছিলাম না। ওর আসা-যাওয়াও কমে গেল আমাদের বাসায়। শিমুল ওকে পরিচয় করিয়ে দেয় অমিতের সাথে। ক্যাজুয়াল ফ্রেন্ডশিপ থেকে সম্পর্ক গাঢ় হয় ওদের। দিন রাত নেশায় মেতে থাকত অরুমিতা। ও তখনো বুঝতে পারেনি, কী হতে চলেছে ওর সাথে! অরুমিতার এসব নিয়ে কথা বলার কেউ ছিল না। আমি ফোন করলেই এড়িয়ে যেত। বলত মাথাব্যথা করছে, ঘুম পাচ্ছে, ক্লাস আছে। আমি কখনো সন্দেহ করিনি।
অমিত অনেক খরচ করেছে ওর পেছনে। যখন তখন নেশা করার সবকিছু স্টক থাকত ওর কাছে। অমিত নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যেত অরুমিতাকে। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ও নিজেই বুঝত না কী করছে ও। অবশ্য ওর ব্রেইন তো তখন কাজ করাই বন্ধ করে দিয়েছে। একদিন সেই সুযোগ কাজে লাগায় শিমুল। অরুমিতার ড্রিংস, ড্রাংস করে বেসামাল অবস্থা। অমিতের জায়গায় সেদিন ছিল শিমুল। অসতর্কতায় অরুমিতা কনসিভ করে ফেলে। কিন্তু….ও ভেবেছিল ওই সন্তান অমিতের। অরুমিতা কিছুই জানত না। অমিত ওকে এবোর্শন করাতে বলে। আর শিমুলকে ব্ল্যাকমেল করে ওকেই সাথে পাঠায় অমিত। ডক্টর ভেবেছিল ওরা বিবাহিত। অমিতের কথামতো শিমুল আমার নামে ফ্রম ফিলাপ করে। এতে অরুমিতা কোনো মাথাব্যথা ছিল না।
আমি ফিরে আসলাম দীর্ঘদিন পর। বদলে গেল আমার অরু। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তখন শিমুল আমাকে ওর ড্রাগস নেওয়ার কথা বলল। চেপে গেল অমিতের কথা। অরুমিতার মানসিক স্থিতি তখন একদম ভালো ছিল না। আমি ওকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে বিয়ের জন্য রাজি করাই। অমিত ওকে কখনো ভালোবাসেনি। শুধু ব্যবহার করেছে। আর অরুমিতারও কোনো ফিলিংস ছিল না। যা ছিল সবই….। তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছ আমি কী বলতে চাচ্ছি। নেশাগ্রস্ত মানুষ তো পশুর সমতুল্য তখন।”

শৈবাল থামল। তার চোখ দুটো নোনতা জলে অবগাহন করেছে। সে তাচ্ছিল্য ভরা হেসে বলল—-

“এত কিছু কী করে জানলাম ভাবছ তো? শিমুলের কাছ থেকে। ও এখন আপাতত হাসপাতালে। সহজে দাঁড়াতে পারবে না। অমিত যতটা দোষী ও নিজেও ততটা দোষী। তোমাকে না পেয়ে আমি জাফর ভাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম। শিমুলকে আমার সেদিন থেকেই সন্দেহ হয়েছে, যেদিন খাবার টেবিলে ফোন আসতেই ও হকচকিয়ে যায়। তোমার সাথে সাথে আমি ওকেও অবজার্ভ করার জন্য লোক রেখেছি।”

শৈবাল তার পকেট থেকে মোবাইল বের করে পরপর দুটো ছবি দেখালো অরুনিকাকে। একটাতে অমিত শিমুলের সাথে কিছু বলছে, অপরটাতে অমিতকে অরুনিকার সাথে দেখা যাচ্ছে। অরুনিকা উদ্ভাসিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। শৈবাল ফিক করে হেসে বলল—

” ওই সিগনেচার যে শিমুলের ও নিজেই স্বীকার করেছে। বিয়ের দিন গাড়ি গতি বাড়তেই যখন আমার কারের সামনে একটা বাস এলো ঠিক তখন অরুমিতা স্টেয়ারিং নিজের দিকে ঘুরাতেই বামপাশের মাইক্রোবাসের বাসে আমাদের প্রাইভেট কারের ধাক্কা লেগে যায়। সেদিন আমাকেও ওই ফ্রমের ছবিটা পাঠিয়েছিল অমিত। সিগনেচারেরটা পাঠায়নি। রাগের বশে তখন আর কিছুই ভাবতে পারিনি আমি। কিচ্ছু না।”

শৈবাল থামল। নতমুখ তার। চোখের কার্ণিশের জল গড়িয়ে নাসিকার ডগায় নামলো। টুপ করে নিচে পড়ল তা। অরুনিকা মন্থর গতিতে শ্বাস ফেলছে। হাসান আলী জানতে পেরেছিলেন অমিতের নেশার বিষয়ে। একারণেই তিনি কখনো চাননি অমিত তাদের বাসায় আসা-যাওয়া করুক। হাসান আলী কোনো একসময় ভেবে নিয়েছিলেন, রাসেলের মৃ*ত্যুর জন্য অমিত দায়ী নয়। কিন্তু তবুও তিনি অমিতকে পছন্দ করতেন না। ফেল করার পর অমিত বাড়ি গিয়েছিল। সেখানে তার বাবাও তার সাথে খুবই কঠোর আচরণ করে। ঢাকায় ফিরে এসে সে মৌমিতা বেগমের সাহায্য চেয়েছিল, কিন্তু স্বামীর বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি কিছু করতে পারেননি। মায়ের পাঠানো টাকাতে আবার পড়ালেখা শুরু করে অমিত। সাথে ছোটোখাটো চাকুরী। মাঝে মাঝে অরুনিকার সাথে বাইরে দেখা হতো অমিতের। অমিত কখনো তার সাথে খারাপ আচরণ করেনি। তাই আজ তার সত্যিই কষ্ট হচ্ছে এ সত্য মেনে নিতে। অরুনিকার ভাবনাতে কড়া নেড়ে বলে উঠে শৈবাল—-

“আমাদের সন্তান হারিয়ে গেছে, সেটাও তুমি গোপন করে গেলে অরুনিকা? দোষটা না হয় আমারই ছিল বেশি, তাই বলে কী বাবা হয়ে অনাগত সন্তানের মৃ*ত্যুর কথাও জানার অধিকার রাখি না আমি?”

অরুনিকা বিস্ফোরিত চোখে তাকাল। তার কানের পাশ দিয়ে আচানক যেন লাভা বেয়ে নামতে লাগল।

চলবে,,,

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:৩০(প্রথমাংশ)
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি

বর্তমানে মাদকাসক্তি আমাদের সমাজে এক সর্বনাশা ব্যধিরূপে বিস্তার লাভ করেছে । কচুরীপানার মতই সারা দেশ আজ মাদকদ্রব্যের উপর ভাসছে । মাদকদ্রব্যের বিস্তারে বিশ্ববাসী আজ শঙ্কিত। দূরারোগ্য ব্যধির মতই তা তরুন সমাজকে গ্রাস করছে । মাদকের ভয়াবহ ছোবলে অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে বহু তরুনের তাজা প্রাণ । আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অসংখ্য তরুনের অমিত সম্ভাবনাময় জীবন । এর কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ঊন্নয়ন । এর তীব্র দংশনে ছটফট করছে কত তরুন ও যুব সমাজ । মাদকের ভয়াবহ পরিনতি দেখে আজ প্রশাসন বিচলিত , অভিবাবকরা আতঙ্কিত, চিকিৎসরা দিশেহারা । তরুণ যুব শক্তিই দেশের প্রাণ ও মেরুদন্ড । নেশার ছোবলে সেই মেরুদন্ড আজ ভেঙে পড়ছে । নেশার ছোবলে ধুকে ধুকে মরছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ । কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের রক্ত মাংস । ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে । দাবানলের মতই ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন শহরে, শহর তলিতে , গ্রামে-গ্রামান্তরে ।
• মাদকদ্রব্যকে অন্য কথায় নেশা বলা হয় । ইংরেজিতে একে “Drug’’ বলা হয় । ক্বুরআন ও হাদীসে মদ বা মাদক জাতীয় দ্রব্যকে “ خمر ” ও “ شراب বলা হয়েছে ।
• ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় মাদকের সংজ্ঞা :
ما خمر العقل ــ
অর্থাৎ- যে বস্তু সেবনের ফলে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি লোপ করে, তাই হলো, মাদকদ্রব্য ।

“ যে সকল বস্তু মাদকাসক্তি সৃষ্টি করে, এবং যা সেবনে বোধশক্তি হ্রাস পায় , এদের সকল শ্রেণীই মাদকদ্রব্য । ”

অন্য কথায়- “ মাদকদ্রব্য হলো ভেষজদ্রব্য , যা সেবনে মস্তিষ্ক ও শরীরের সংবেদন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় । সুস্থ্য বিবেক লয় হয় । অতি মাত্রায় গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ স্তিমিত হয়ে যায় । ”

কারও মতে : “ মাদক দ্রব্য হচ্ছে সে সব বস্তু, যা গ্রহণের ফলে স্নায়ুবিক বৈকল্যসহ নেশার সুষ্টি হয় । সুনির্দিষ্ট সময় পর তা সেবনের দূর্বিনিত আসক্তি অনুভূত হয় এবং কেবল সেবন দ্বারাই সে তীব্র আসক্তি ( সাময়িক ) দূরীভূত হয় ।”

নেশার ফলে মগজে আপরাধ প্রবনতা সৃষ্টি হয় । নেক আমল তথা ভাল কাজ করার প্রবনতা, আগ্রহ ও আকর্ষণ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে । পাপ কর্মের প্রতি ম্যাগনেট কানেক্সন ( চুন্বকের মতো আকর্ষণ ) সৃষ্টি হয় । এই জন্য মাদকসেবীরা নানা ধরণের পাপ কর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে । চুরি-ডাকাতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারামারি ,ছিনতাই, রাহজানী, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নারী ধর্ষণ, অপহরণ, ইফটিজিং, এসিড নিক্ষেপ, জালাও-পোড়াও , অগ্নি সংযোগ ও লুটতারাজসহ যাবতীয় সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মাদক দ্রব্যকে প্রধানত: দুই ভাগে ভাগ করেছেন :
( ক ) প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য ।
( খ ) রাসায়নিক মাদক দ্রব্য ।
ক. প্রাকৃতিক মাদক দ্রব্য :
প্রকৃতি তথা ভেষজ থেকে যে মাদক দ্রব্য উৎপন্ন হয় , তাই প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য । প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য অধিকাংশই গাছ- গাছড়া ও ফলমূল হতে উৎপন্ন হয় । যেমন- তাল বা খেজুর গাছ থেকে তাড়ি, আঙ্গুর বা খেজুর গাছ থেকে নাবিজ । এ ছাড়াও আফিম, গাঁজা, ভাঙ, হাশিস, মারিজুয়ানা ইত্যাদি প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য।

খ. রাসায়নিক মাদকদ্রব্য :
পরীক্ষাগারে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় যে মাদকদ্রব্য উৎপন্ন করা হয়, তাই রাসায়নিক মাদকদ্রব্য । রাসায়নিক মাদকদ্রব্যের আজ ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে । অসাধু ঔষধ কোম্পানীগুলো ঔষধ তৈরীর নামে মাদকদ্রব্য উৎপাদন করে চলেছে । রাসায়নিক মাদকদ্রব্য বেশি নেশা সৃষ্টি করে থাকে । যা প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য থেকে মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক ।
যেমন- হিরোইন, মরফিন, কোকেন, প্যাথেড্রিন, সঞ্জিবনী সুরা , ফেনসিডিলসহ
বিভিন্ন প্রকার এলকোহল ।(সংগৃহীত )

সন্তানদের কিশোর বয়সে সবচেয়ে আপন হয় মা-বাবা। এ সময় তাদের মধ্যে যে পরিবর্তন তাকে নরম মাটির সাথে তুলনা করা যায়। যাকে ইচ্ছে মতো রূপ দেওয়া যায়। এসময় শারীরিক পরিবর্তন, মানসিক পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা নিজেদের আশেপাশের মানুষগুলোকেও নতুন করে আবিষ্কার করতে শেখে। এসময়টা হয় এক দলা স্বচ্ছ মেঘের মতো। উড়ন্ত, নিঃসংকোচে ভেসে চলার মতো। তাতে শক্ত বাঁধা পড়লেই বিপত্তি। তখন তা আষাঢ়ে মেঘে রূপ নেয়। তাই কিশোর-কিশোরীদের তখন প্রয়োজন একজন আপনজনের সান্নিধ্য , যার নৈকট্য তাকে শরতের মেঘের শুভ্রতা এনে দেবে।

বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। বাবা-মা সন্তানদের বাস্তবমুখী শিক্ষার পরিবর্তে পুঁথিগত শিক্ষায় পারদর্শী করে তুলতে চায়। পরীক্ষায় সর্বাধিক মার্ক প্রাপ্ত ছেলেটাকেই বেস্ট ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু তার পাশেই যে ছবি আঁকায় পটু, যার গানের গলা সুন্দর, যে ভালো আবৃত্তি করতে পারে; তার মূল্য শূন্য। খাতার একপাশে বড়ো করে লাল কালিতে যখন সংখ্যা লেখা থাকে তাকেই তার যোগ্যতা ধরে নেওয়া হয়। শুধু পরীক্ষায় পূর্ণ নাম্বার পাওয়ায় একজন ছাত্রের যোগ্যতা হতে পারে না। তার সঠিক জীবনাদর্শই তার যোগ্যতা।

পরীক্ষায় ফেল করা ছেলেটি/মেয়েটি যখন ভয়ে ভয়ে বাবার সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন তাকে বকাবকি করে তার আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে ঘুরিয়ে দেওয়াই আমাদের সমাজের কতিপয় বাবা-মায়েদের কাজ। সেই ছেলেটি /মেয়েটি কিন্তু পরবর্তীতে তার কোনো অসফলতাকে তার বাবা-মায়ের সামনে আসতে দেবে না। নিজেকে ছোটো করতে করতে সে একসময় ভুলেই যাবে সে মানুষ, যার মনুষ্যত্ব আছে। আর এসমস্ত ছেলে/মেয়েরাই বাবা-মায়ের ছায়াতল থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্ধকার জগতে রাখে। নিজেদের সাথে সাথে আরও কতগুলো সজীব প্রাণ নিমেষে বিবর্ণ করে দেয়।

আজকাল উচ্চবিত্তদের ধারণা, টাকা হলেই সন্তানদের মানুষ করা যায়। দামী স্কুল, মাস শেষে এক বস্তার টাকার বিনিময়ে রাখা টিউশন টিচার, সন্তানদের জন্য মোবাইল, গেমস ইত্যাদি কিনে দিলেই সব দায়িত্ব শেষ। কিন্তু তারা জানে না, এসবকিছুর উর্ধ্বে রয়েছে তাদের নিবিড় ভালোবাসার স্পর্শ, যা ওসব টাকায় কেনা বস্তুতে নেই। সন্তানদের প্রয়োজন বাবা- মায়ের সাথে কাটানো মিষ্টি একটা সময়। হেসে হেসে বাবার সাথে কথা বলা, দুষ্টমির ছলে মায়ের আঁচলে মুখ মোছা, বাবার হাত ধরে রাস্তা পার হওয়া। কিন্তু যখন সেই মা-বাবা তাদের ব্যস্ততা, অমনোযোগিতায় সন্তানদের কাছ থেকে দূরে সরে যায় তখন সেই সন্তানরা খুব সহজে বিপদগামী হয়ে পড়ে। ঠিক অন্যদিকে বাবা-মায়ের অতিরিক্ত শাষনেও সন্তানরা তাদের বাবা-মায়ের সান্নিধ্য থেকে দূর, বহুদূরে চলে যায়।

অমিত, অরুমিতা, শিমুলের মতো হাজারও যুবক-যুবতী সঠিক পথ নির্ধারণে একজন সঠিক মানুষ না পাওয়ার দরুন ঢলে পড়ে ওই নেশার অন্ধজগতে। যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে হয়তো জীবনই শেষ হয়ে যায়! অমিতের বাবার এতটা কঠোর হওয়া কী আদৌ ঠিক ছিল? এ বছর না হোক, সামনের বছর আবার না হয় পরীক্ষা দেবে। হাসান আলীর আরোপ কী সমীচীন? অমিত তো তার ছেলেরই বয়সী! জয়নাল আবেদীন কী তার বাবার দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন? মাতৃস্নেহহীন এক মেয়ের তো বাবার ভালোবাসায় দ্বিগুন সিক্ত হওয়ার কথা ছিল! জাফরকে তার ভাইয়ের শক্তি হওয়া উচিত ছিল। ভুল! কিছু ভুল, সারাজীবনের চোখের জলের কারণ!

অরুনিকার থমথমে মুখভঙ্গি। শৈবাল বিধুর চোখে তাকিয়ে অতি স্বাভাবিক গলায় বলল—

“আপাকে যেদিন হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল, তুমি তন্দ্রার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে। ফেরার সময় দোতালা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ডাঃ মেরিনের সাথে কথা বলছিলে। তিনিই তো স্বাধীনতার মা। তোমার মিসক্যারেজে যার অবজারবেশনে ছিলে তুমি। অবাক হয়ো না। তোমার শিরায় শিরায় আমিই আমি। আমি নিজে গিয়ে তার সাথে কথা বলেছিলাম। ভদ্রমহিলা বারবার কথা কা*টছিল। আমিও নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত বাধ্য করেছি। জাফর ভাইও ছিল তাই না? আমি তাকেও ডাঃ মেরিনের সাথে কথা বলতে দেখেছি। এবং শুনেছিও সে কথা।”

অরুনিকা ঢোক গিলল। হতাশ গলায় বলল—

“আই এম সরি।”

“তুমি কেন সরি বলছ? সরি আমার তোমাকে বলা উচিত।”

দম ফেলল শৈবাল। পেছনে তাকাল সে। অমিত মাত্র উঠে বসেছে। পায়ে গেঁথে থাকা লোহার টুকরোতে কেমন ভয়াতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! কণ্ঠনালীতে ব্যথার আর্তনাদ ! শৈবাল ঘাড় ঘুরিয়ে অরুনিকার দিকে তাকাল। অরুনিকা শৈবালের চোখের দিকে প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে চোখে জল আছে, কিন্তু কান্না নেই। তাহলে কীসের সেই জল! অরুনিকার অন্তঃকরণে প্রশ্নের উদয় হয়। শৈবাল কী খুব কষ্টে পেয়েছে? ভালোবাসা হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে। তার কী সত্যিই কান্না উচিত? অরুনিকা সে প্রশ্নের জবাব পেল না। হয়তো শৈবালের কষ্ট হচ্ছে না, হয়তো বা হচ্ছে। অরুনিকা জানে না। শৈবাল বলল—

“অরুমিতাকে ভুলতে যতটা কষ্ট হয়েছে, ঠিক ততটা সহজ হয়েছে তোমাকে ভালোবাসতে। নিজের অবচেতন মনেই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেললাম। পাগলামি করতে করতে কখন যে তোমার জন্য পাগল হয়ে গেলাম, বুঝতেই পারিনি।”

অরুনিকা নিশ্চুপ। সে কোনো কথা বলল না। শৈবাল আবার বলল—

“অরুমিতার মৃ*ত্যুর জন্য হয়তো আমিই দায়ী। ওকে আমি আমার কাছ থেকে দূরে না রাখলে এই জানো*য়ারগুলো ওর সাথে এমন করার সুযোগ পেত না। ওই তিনমাস আমি ঘুমাতে পারিনি। অরুমিতার সেই মুখ আমাকে এক সেকেণ্ডের জন্য শান্তিতে চোখ বন্ধ করতে দেয়নি। ধীরে ধীরে সময়ের আবর্তনে তুমি এলে আমার জীবনে। তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে আমি তাই না অরু?”

শৈবাল ফট করে হেসে ফেলল। লাজুক সুরে বলল—

“অরুমিতাকে নয়, তোমাকে ভালোবেসেই আমি তোমাকে অরু বলে ডেকেছি। তোমার তো আমার ওপর ঘৃণা হয় তাই না অরু? আমার ছোঁয়াতে তোমার কষ্ট হয়?”

অরুনিকা চোখের পলক ফেলল ধীরগতিতে। ঠিক যেমন বাতাসে উড়ে বেড়ায় পাখির পালক! শৈবার কণ্ঠ অনমনীয় করে বলল—

“তুমি যেতে পারো অরু। আমাকে ছেড়ে যেতে পারো। আমার সত্য হয়তো তোমাকে আর আমার হতে দেবে না। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আজ তোমার মুক্তি!”

“আপনি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবেন?”

অরুনিকার এহেন প্রশ্নে তার দিকে তিরের মতো তাকাল শৈবাল। আলতো হেসে বলল—

“পারব না। তোমাকে ছাড়া আমি নিঃশ্বাসও নিতে পারব না। এই পৃথিবীর মুক্ত বাতাসে আমার নিঃশ্বাস শুধু তোমার শরীরের গন্ধ খুঁজে বেড়াবে। সেই তুমি ছাড়া আমি কী করে থাকব?”

“তাহলে চলে যেতে কেন বলছেন?”

“শাস্তি। সবার শাস্তি হয়েছে। আমার শাস্তি বাকি। আর তুমি আমার কাছে থাকবে না এর চেয়ে বড়ো শাস্তি আমার জন্য আর নেই।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here