#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:২,৩
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি
পর্ব:২
শান্ত, শীতল মেজাজের শৈবাল। তার টাইয়ের নব বেঁধে দিচ্ছে অরুনিকা। শৈবালের চোখে টলটলে খুশি। অরুনিকা মৃদু গলায় বলল—
“কখন ফিরবেন?”
শৈবাল প্রাণোচ্ছল কণ্ঠে বলল—
“তুমি বলো।”
“কাজ শেষ হলেই ফিরে আসবেন।”
শৈবাল অধর কোণে হেসে বলল—
“যদি রাত হয়ে যায়?”
অরুনিকা জবাব দিলো না। নীরবে হাতটা নামিয়ে নিল শৈবালের গলা থেকে। ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে সরে আসতেই তার কটিদেশ দখল করে নিল শৈবাল। দুই হাতের বেড়ে নিজের বুকে চেপে ধরল। চকিত হলো অরুনিকা। তার বুক গিয়ে পিষে গেল শৈবালের বক্ষ পাটাতনে। চোখ দুটো ভয়ভীত। শৈবাল মৃদু হাসল। ঝলমলে রোদের মতো চিকচিক করছে তার চোখের কোটর। শৈবাল নিজের পুরুষালী হাতের আদুরে বিচরণ করছে অরুনিকা পিষ্ঠদেশের বাঁকে। দেহের থিতিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো অকস্মাৎ জেগে উঠল অরুনিকার। গহন কম্পনে হতপ্রায় সে। অধরের অনুরণন চোখে পড়ল শৈবালের। চোখের পক্ষ্মচ্ছেদের উচ্ছল নড়াচড়া। খোঁপা করেছে অরুনিকা। তার ললাটের কাছে লেপ্টে আছে ছোটো ছোটো চুল। শৈবাল তার হাতের সংসর্গে অস্থির করে তুলল অরুনিকাকে। অবাধ্য ছোঁয়া অরুনিকার পেলব চামড়াতে ফোসকার মতো যন্ত্রণা দিচ্ছে। শৈবাল তৃপ্তিকর হাসল। ঘোরের মাত্রা প্রগাঢ় হতেই অরুনিকার আস্ত দেহে নিজের সাথে পিষে ধরে তার কণ্ঠদেশে চুমু খেল। নাসিকার আলতো ঘষায় ঝিরিঝিরি প্রণয় বর্ষণে উন্মাদ করে তুলল অরুনিকার সমস্ত স্থবির অনুরাগের বহর। শৈবাল তার শুষ্ক অধরে চুমু আঁকল অরুনিকার কানে। অরুনিকা আন্দোলিত হলো। সে মাথা নিচু করে ক্ষীণ শ্বাস ফেলছে। শৈবাল এক হাতের বলিষ্ঠ চাপে অরুনিকাকে নিজের সাথে বেঁধে রাখল। অন্য হাত অরুনিকার চিবুক ধরে মুখটা উঁচু করল। রাজ্যের লজ্জারা হৈ চে করছে অরুনিকার স্নিগ্ধ আননে। নিভু নিভু, সলজ্জ চোখে শৈবালকে দেখছে অরুনিকা। শৈবালের কব্জিতে বাঁধা গজ কাপড় দেখেই দুঃখী হলো অরুনিকার অন্তরিন্দ্রিয়।অরুনিকার চুলে এক হাত গলিয়ে দিয়ে অচিরেই তার অধরের ভাঁজে নিজেকে ভাসিয়ে দিলো শৈবাল। অরুনিকার হৃৎপিণ্ড ধকধক করছে। দীর্ঘ চুম্বনে প্রেয়সীর অধরসুধায় সিক্ত করল নিজের শুষ্ক গলা শৈবাল।
আচানক অরুনিকার আর্দ্র স্পর্শ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনলো সে। দুটো ছোটো বাচ্চা হৈ হৈ করে রুমের ভেতর ঢুকে পড়ে। তারা চূড়ান্ত উল্লাস নিয়ে অরুনিকা আর শৈবালকে ঘিরে ঘুরতে লাগল। শৈবাল ভাবাবেশ ছাড়া আলগা হলো অরুনিকার শুশ্রূষার মতো স্পর্শ থেকে।
বাচ্চা দুটোর মধ্যে একজনকে ক্রোড়ে তুলে নিল শৈবাল। তার গালে শক্ত চুমু খেয়ে বলল—
“রিম, কী হয়েছে? এত খুশি কেন আম্মু?”
ঝিম অরুনিকার শাড়ি খামচে ধরে রেখেছে। আঁখুটে গলায় বলল—
“আমিও কোলে উঠব মামিমা। আমাকেও কোলে নাও।”
ছোট্ট হেসে ঝিমকেও ক্রোড়ে তুলে নিল অরুনিকা। ঝিমের দুই গাল চেপে আদর দিল সে। খুশ গলায় বলল—
“এত খুশি কেন রিম,ঝিম?”
রিম হাসতে হাসতে হাত নাড়িয়ে বলল–
“ইইই, দেখো, নানুর পান খেয়েছি। দেখো, ঠোঁট….লাল….ইইইই।”
রিমের দাঁতের রং দেখে হেসে ফেলল অরুনিকা। তার শাশুড়ি প্রায়ই চিবানো পানের খানিক অংশ নাতিনদের মুখে দেন। আর তা চিবুতে থাকে দুই বোন। তাতেই তাদের খুশির ঝলক সকালের বিষণ্ণতাকে কাটিয়ে দেয়।
,
,
,
নমিতা বেগম চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। সকালের চা পান করার পরও ঘড়ির কাঁটা এগারোর ঘর পার করতেই, তার ভেতকার বুভুক্ষু মন চায়ের জন্য উতলা হয়ে উঠে। তিনি চকিতে তাকালেন।
“আম্মা, আমি কিছু বলতে চাই।”
অরুনিকার কথায় তিনি ভ্রূ যুগল টানটান করে মসৃণ গলায় বললেন—-
“বলো।”
“আব্বুর শরীর ভালো নেই। আমি একটু ও বাড়িতে যাব।”
নমিতা বেগম সন্ধানী গলায় বললেন—
“শৈবাল জানে?”
“উনি অফিস থেকে ফিরে আসার আগেই আমি চলে আসবো।”
নমিতা বেগম দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বললেন—
“কিন্তু….।”
“আমার আব্বু অসুস্থ আম্মা। আমি ছাড়া তাদের আর কেউ নেই।”
অরুনিকার কথা শেষ হতেই একটা ঝড়ো গলার শব্দ ঝাঁকিয়ে তুলল সব।
“গত সপ্তাহেই তো বাবার বাড়ি থেকে এসেছ। এখন আবার কীসের জন্য যাবে?”
শৈবালের বোন রুমকির কথায় বদ্ধ শ্বাস ফেলল অরুনিকা। রান্নাঘর থেকে অধৈর্য পায়ে হেঁটে আসা রুমকি অরুনিকার সন্নিকটে এসে থামে। অরুনিকা মোলায়েম স্বরে তীক্ষ্ম কথা বলল।
“এসেছি। শৈবাল আমাকে রেখে আসতে চায়নি। দুই ঘণ্টার জন্য নিয়ে গেছিল। সাথে করে নিয়েও এসেছে। আম্মু গতরাতে ফোন করে বলল, আব্বুর শরীর আবার খারাপ করেছে। ওই বাড়িতে তাদের দেখার মতো কেউ নেই।”
রুমকি তেরছা গলায় বলল—-
“তো? তুমি কী ছেলে মানুষ? বিয়ে হয়েছে তোমার। এই ঘর, সংসার, স্বামী এসবই তোমার সব। ও বাড়ির চিন্তা এখন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।”
অরুনিকা কুন্ঠিত নজরে তাকাল। অবিশ্বাস্য গলায় বলল—
“কী বলতে চাইছেন আপনি? বিয়ে হয়েছে বলে আমার কোনো দায়িত্ব নেই তাদের প্রতি?”
রুমকি কাষ্ঠ গলায় বলল—
“দেখো, অরুনিকা, এসব দায়িত্ব ফায়িত্ব বাদ দাও। শৈবাল অফিস থেকে এসে তোমাকে ঘরে না পেলে সব ভেঙ্গেচুরে একাকার করে ফেলবে। তোমার বাবা তো সেই বিয়ের আগে থেকেই অসুস্থ। দিব্যি বেঁচে আছেন এখনো। কিছু হয়নি তো!”
অরুনিকা দাপিয়ে উঠে বলল—
“আপা, এসব কী বলছেন? ”
“ঠিকই বলছি। কোনো দরকার নেই ওই বাড়িতে যাওয়ার। শরীর খারাপ করেছে, আবার ঠিকও হয়ে যাবে।”
“আমার যাওয়াতে আপনার এত সমস্যা কেন? আপনার কী! সারাবছর তো বাবার বাড়িতে পড়ে থাকেন।”
ক্রোধে বিহ্বল হয়ে অরুনিকাকে আস্ত ঠাসা চড় বসাতে উদ্যত হয় রুমকি।
চলবে,,,
#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:৩
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি
রুমকির শক্ত হাতটা ধরে ফেলল অরুনিকা। দৃঢ়, অবিচলিত গলায় বলল—
” গায়ে হাত তুলবেন না আপা।”
রুমকির হাত ছেড়ে দিলো অরুনিকা। ফোঁস করে বলে উঠে রুমকি—-
“তোর সাহস কী করে হয় এসব বলার?”
অরুনিকা নির্ভয় গলায় বলল—
“ভুল বলিনি তো। বিয়ের এত বছর হলো, তবুও তো আপনি বছরের বেশিরভাগ সময় বাবার বাড়িতে কাটিয়ে দেন। আপনার মা-বাবার একটা ছেলে আছে, জাফর ভাইয়ের মতো জামাই আছে। আমার আম্মু-আব্বুর কে আছে?
আর কোন অধিকারে আপনি আমার গায়ে হাত তুলতে চান? আমার পুরো জীবনটা তো এমনিতেই জাহান্নাম বানিয়ে রেখেছেন! নিজের অবসেসড ভাইকে চিকিৎসা না করিয়ে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কিনে নিয়েছেন আমাকে। অবশ্য এটাই আমার ভাগ্য! সেদিন যদি আপনার বাবা শৈবালের জেদের কারণে, আমার আব্বুকে না বাঁচাতো, তার চিকিৎসার টাকা না দিতো, তাহলে হয়তো আমি আজ আর আমার আব্বুর মুখ দেখতে পারতাম না। ”
শেষের বাক্যতে একরাশ শ্লেষমিশ্রিত ছিল অরুনিকার। নিজের ওপর করুণা হয় তার। রুমকি ঝাঝালো স্বরে বলল—-
“এতই যখন বুঝিস, তাহলে এসব শুরু করেছিস কেন? আমার ভাই যেমনই হোক, তোকে পাগলের মতো ভালো তো বাসে।”
“দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। ”
অরুনিকার ছোট্ট লাইনে ছিল আঁকুতি যা বিনা দ্বিধায় বুঝে নিল নমিতা বেগম। রুমকি ঝটিকার মতো মায়ের কাছে এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলল—
“দেখলে মা, দেখলে, কী বলল ও? আমার ভাই না কী ওর জীবন জাহান্নাম বানিয়ে রেখেছে? আমাদের খেয়ে পড়ে আমাকে খোঁটা দিচ্ছে।”
অরুনিকা কণ্ঠ খাদে নামিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি রেখে বলল—
“আমি আপনাকে কোনো খোঁটা দিইনি আপা। ভুলে যাইনি আপনারা আমার আব্বুর জন্য কী কী করেছেন। একটা চাকরির জন্য যখন এখানে ওখানে ঘুরছিলাম, পুরুষের লোভনীয় দৃষ্টির স্বীকার হচ্ছিলাম, তখন সেখান থেকে আমাকে উদ্ধার করেছে শৈবাল। তার ঋণ আমি কোনোদিনও শোধ করতে পারব না। আমি তো যেচে আপনাদের বাড়িতে আসিনি। সাহায্য করার নামে শৈবালকে বিয়ে করত বাধ্য করেছেন আপনারা। হ্যাঁ, সব দিয়েছেন আপনারা আমাকে। এই যে ভালো খেতে পারছি, ভালো শাড়ি পরছি, এত এত গয়না গায়ে ঝুলিয়ে রেখেছি! কোনো কমতি রাখেননি। শুধু আমার বাঁচার স্পৃহাটুকু কেড়ে নিয়েছেন। নিজেকে স্বর্ণপিঞ্জিরায় আবদ্ধ এক পাখি মনে হয় আমার। বিয়ের পর থেকে শৈবাল কী করেনি বলতে পারেন? আপনারা চাইলেই তাকে একটা সুন্দর জীবন দিতে পারতেন। তা না করে শৈবালের জেদের কাছে হার মেনে আমার জীবনটা বিষাক্ত করে দিয়েছেন।”
নমিতা বেগম নির্বাক চেয়ে রইলেন। রুমকির চোখের বান ছুটল। সে ভেজা গলায় বলল—
“দেখলে মা, শৈবালকে কীসব বলছে? ও কেমন মেয়ে মা! ও আমার ভাইকে একটুও ভালোবাসে না। আমার ভাইটা চোখের পলক ফেলে না এই মেয়েটার জন্য। আর ও কী না…।”
“শৈবাল ভালো করেই জানে আমি তার অরু নই। আপনারাও জানেন।”
রুমকির রাগ মাথায় চড়ে বসল। সে উত্তেজিত হয়ে বলল—
“তাহলে আছিস কেন এখানে? চলে যা। ”
অরুনিকা সরল চোখে তাকাল। তাচ্ছিল্যের সাথে বলল—
“সে উপায় রেখেছে আপনার ভাই? ”
“এই, এই, এই তুই বারবার ভাই, ভাই বলছিস কেন? আমার ভাই তোর কিছু হয় না? এতটা দিন সংসার করেও একটুও মায়া হয় না ওর জন্য তোর?”
অরুনিকা নরম হেসে বলল—
“মায়া দিয়ে কী জীবন চলে আপা?”
“তুইইইই…।”
“থাম রুমকি।”
শৈবালের বাবা তৌফিক সাহেব ঝড়ো গলায় বললেন। চুপ হয়ে গেল রুমকি। অরুনিকা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে চাইল। নমিতা বেগম এখনো নিরুত্তাপ। তৌফিক সাহেব অমায়িক গলায় বললেন—
“তুমি যাও বউমা। শুধু শৈবাল বাড়ি ফেরার আগে ফিরে এসো।”
অরুনিকা কৃতজ্ঞতার সুরে বলল—
“জি বাবা। আমি দুলাভাইকে বলেছি। শৈবাল অফিস থেকে বের হতেই যেন আমাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। আমি তার আগেই ফিরে আসবো।”
“হুম।”
নিজেকে গুছগাছ করতে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় অরুনিকা। রুমকি অভিযোগের থালা নিয়ে বলল—
“এই মেয়েটা আমার ভাইকে আজও ভালোবাসতে পারেনি। একটুও মায়া হয় না ওর? কত ভালোবাসে শৈবাল ওকে। ”
“স্বামীর প্রথম স্ত্রীর নাম তার মুখে শুনলে কেমন লাগে, বলতে পারিস রুমকি? নিজের চোখের সামনে স্বামীকে রক্তাক্ত হতে দেখলে কার ভালো লাগে, বলতে পারিস? মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার বদলে সোনায় খাঁচায় বন্দি জীবনে কে হাসতে পারে, বলতে পারিস? আমরা তো শৈবালের রক্তের আত্মীয় হয়েও ওর পাগলামি নিতে পারিনা, তাইতো এই মেয়েটার ওপর সব ভার ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি। ওর কেমন লাগে সেই বিভীষিকাময় মুহুর্তগুলো একবারও ভেবে দেখেছিস? একবার ওর জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখ রুমকি, জীবন এত সহজ নয় রে মা। আমরা শুধু আমাদের কথাই ভাবলাম, মেয়েটার কথা একবারও ভাবলাম না।”
ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে ফেলল রুমকি। বাবার বুকের কাছে সমাহিত হয়ে বলল—
“সব দোষ আমার। শৈবাল যখন অরুমিতার মৃত্যুর পর অগোছালো, অস্থির হয়ে উঠল, তখন এই অরুনিকাকে দেখেই আমার ভাই হেসেছে, কথা বলেছে। অরুনিকাকে অরু ভেবে আমার ভাইটা আবার বাঁচতে চেয়েছে। কী করে ওকে ফিরিয়ে দিতাম আমি? তাই তো ওই মেয়েটাকে জোর করে এই বাড়ির বউ করে এনেছি। আমার শৈবালের জন্য। আমার ভাইটা ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে। ওকে এক মিনিট না দেখলে, নিজেকে আঘাত করতে দ্বিতীয়বার ভাবে না বাবা। অরুনিকা ওকে ছেড়ে চলে গেল, ও মরে যাবে বাবা, ও মরে যাবে।
যেমন করে জীবন্ত লাশ হয়ে গেছিল অরুমিতার মৃত্যুতে।”
,
,
,
মাংসের সুন্দর ঘ্রাণ ভেসে চলছে উষ্ণ বাতাসে। মৌমিতা জাহান কাষ্ঠ গলায় বললেন—
“জামাইকে বলে এসেছিস?”
অরুনিকা মাংসের ঝোলে লবনের মাত্রা দেখে শুষ্ক গলায় জবাব দিলো—
“উনি ফিরে আসার আগেই আমি চলে যাব।”
মৌমিতা জাহান বিস্মিত কণ্ঠে বললেন—
“এসব কী বলছিস? তুই জানিস না, জামাই তোকে বাসায় না দেখতে পেলে কী করবে!”
অরুনিকা নিঃসংশয়ে বলল—
“যা ইচ্ছে করুক।”
মৌমিতা বেগম রাগান্বিত স্বরে বললেন—
“কী বলছিস এসব! ছেলেটা কিছু উলটা-পালটা করে ফেলবে। ওর কিছু হলে…।”
“যা ইচ্ছে হোক। আমার কি…..ছু যায় আ…সে না।”
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেন মৌমিতা জাহান। তিনি কথা গুছাতে পারছেন না। মাংসের পাতিল থেকে খানিকটা মাংস বাটিতে তুলে নিল অরুনিকা। গরম চালের রুটি একটা প্লেটে নিয়ে মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল—
“আব্বুকে দিয়ে এসো। গতবার খেতে চেয়েছিল। শৈবাল সময়ই দিলো না। যাও।”
মৌমিতার বিস্ময় আকাশ ছুঁল। তিনি দ্বিধাগ্রস্ত। মোবাইল ফোন বেজে উঠল অরুনিকার। সেদিকে তাকাতেই হোঁচট খেল সে। শৈবালের নামটা ঝকঝক করছে। সে দ্রুত হাতের জিনিসগুলো রান্নাঘরের তাকের ওপর রেখে কল রিসিভ করল। নরম আওয়াজে বলল—
“হ্যালো!”
ওপাশের হাসি মাখা কণ্ঠ।
“খেয়েছ?”
“জি। আপনি খেয়েছেন?”
“তুমি এখন কোথায় অরু?”
এই প্রশ্নে ধড়ফড় করে উঠল অরুনিকার কলিজা। সে মিহি স্বরে বলল—
“আমি তো..।”
অরুনিকা তার মিথ্যার বাক্স খোলার পূর্বেই শৈবাল তার ফোনটা দিয়ে দেয় রিমের কানে। রিম তার গদগদ খুশির বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে বলল—
“মামিমা, তাত্তারি এসো। মামা অনেক আইসক্রিম এনেছে আমাদের জন্য। তাত্তারি এসো।”
অরুনিকার চোখে জল ছেপে এলো। তার বুকটা ভার হলো অচিরেই। বিবশ কায়া, স্থির চোখ, উদ্বেলিত মস্তিষ্কের স্নায়ু।
সে কোনো কথা বলল না। রিমের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিল শৈবাল। বলল—
“আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি অরু। জলদি এসো। দেরি না হয়ে যায়!”
অরুনিকা স্থবির। মৌমিতা জাহান তাকে ধাক্কা দিয়ে বললেন—
“কীরে, কী বলেছে জামাই?”
অরুনিকা কলের পুতুলের মতো বলল—
“শৈবাল বাসায় ফিরেছে আম্মু।”
অরুনিকার নিমেষহীন চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল।
চলবে,,,