ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত #পর্ব:৪,৫

0
1152

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:৪,৫
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি
পর্ব:৪

অরুনিকার শীতল দৃষ্টি। নিরুত্তেজ ভঙ্গিতে বসে আছে শৈবাল। আজ একটা জরুরি মিটিং ছিল। মিটিং এর মাঝেই শৈবাল জাফরকে জানায় সে মিটিং শেষ হলেই বাড়ি চলে যাবে। জাফর ব্যতিব্যস্ত হয়ে কল করার পরিবর্তে ম্যাসেজ করে অরুনিকাকে। শৈবালের সামনে কল করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। কিন্তু অরুনিকা রান্নায় এতটা নিমগ্ন ছিল যে, সে খেয়ালই করেনি জাফরের সেন্ট করা ম্যাসেজ তার মোফাইল ফোনে অনেক আগেই এসে ঘাপটি মেরেছে।

শৈবালের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে অরুনিকা। মুখভঙ্গিতে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সহজ, স্বাভাবিক।
শৈবাল এক পা ভাঁজ করে অন্য পা ছড়িয়ে বসে আছে। হাতে তার হুইস্কির বোতল। তাতেও বিন্দুমাত্র ভাবাবেশ নেই অরুনিকার। মানুষটাকে জানে সে!
শৈবাল বোতলের মুখ নিজের মুখে পুরে দিয়ে কয়েক ঢোক তরল গিলে নিয়ে বোতলটা সামনে রাখল। এলোমেলো দৃষ্টি দিয়ে অরুনিকাকে উদ্দেশ্যে করে বলল—

“আমি তোমার জীবনটা জাহান্নাম বানিয়ে দিয়েছি, তাই না অরু?”

অরুনিকা কোনো উত্তর দিলো না। ভাবলেশহীন চাহনিতে চেয়ে রইল। শৈবাল অধর কোণ প্রসারিত করল। মোলায়েম হেসে পূনরায় তরল ঢেলে নিল তার গলায়।

ফ্যান বন্ধ থাকায় ভ্যাপসা গরমে ঘেমে যাচ্ছে অরুনিকা। শৈবালের কপাল, গাল, কণ্ঠ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে উষ্ণ, নোনা জলের প্রস্রবণ।
শৈবাল পূনরায় অনুরক্তির দ্বার ভেঙে বলল—

“বলতে পারো অরু, আজ পর্যন্ত কখনো তোমার গায়ে হাত তুলেছি আমি? তোমার বাবা-মা’কে অসম্মান করেছি আমি? স্বামী হিসেবে তোমার কোনো চাহিদা অপূর্ণ রেখেছি?”

অরুনিকার দৃষ্টিতে চঞ্চলতা এলো। সে অটল গলায় বলল—

“যে দেহের উষ্ণতায় আপনি আমাকে জড়িয়েছেন, সে দেহের হৃদয়ে অন্য কারো বসবাস! সে চোখ দিয়ে আপনি আমার অনাবৃত দেহের আস্বাদন করেছেন, সে চোখে অন্য কারো প্রতিচ্ছবি! আপনি শুধু অরুকেই ভালোবেসেছেন, আর অরুনিকার দেহকে।”

শৈবালের পাশে একটা ছোট্ট মোমবাতি জ্বালানো। জ্বলজ্বল করে তার শিখা জ্বলছে। শৈবাল ঘাড় ঘুরিয়ে সেই জ্বলন্ত মোমবাতির ওপর নিজের হাত রাখে। পলেই লাফিয়ে উঠে অরুনিকার কলিজা। সে আঁতকে উঠা গলায় বলল—

“কী করছেন আপনি?”

শৈবাল আড়ম্বরহীন দৃষ্টিতে তাকাল অরুনিকার দিকে। অরুনিকার ভয়ে মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা! তার উৎকণ্ঠিত দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলে উঠে শৈবাল—

“তুমি আমাকে ভালোবাসো না অরু। আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও? মুক্তি দিয়ে দেবো তোমাকে আমি। অরুও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সহ্য করতে পারিনি আমি। কিন্তু তুমি চলে গেলে আমি সত্যিই মরে যাব।”

হেসে উঠল শৈবাল। এক আকাশ ঘন মেঘে আবৃত স্নিগ্ধ হাসি। সেই হাসিতে থমকে গেল অরুনিকার হৃৎকম্পন। তার হাত-পা ঝিমঝিম করছে। শৈবাল তার হাতের হুইস্কির বোতলের বাকি তরলটুকু নিজের মাথায় ঢালতে থাকে। অরুনিকা বিভ্রব নিয়ে বলল—

“কী করছেন আপনি?”

শৈবাল নিঃশব্দে হাসল। অরুনিকার গা কাঁটা দিয়ে উঠে শৈবালের হাসিতে। শৈবাল মুগ্ধ গলায় বলল—

“আমি তোমাকে এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে যাব।”

দৌড়ে আসে অরুনিকা। বিচলিত, উদ্বেলিত গলায় বেপরোয়া হয়ে বলল—

“পাগল হয়েছেন আপনি? কী করছেন এসব? হাত সরান, হাত সরান বলছি। কী অবস্থা করেছেন হাতের?”

শৈবালের হাতটা টেনে নেয় অরুনিকা। হাতের তালুর মাঝে দগদগে পোড়া দাগ। তা দেখেই পাথরের খোলসে আবৃত অরুনিকার নেত্রযুগল টইটুম্বর হলো নোনতা জলে। সে দৃষ্টি উঠিয়ে তাকাল শৈবালের দিকে। শৈবালের অধরে লেগে আছে মায়াময় হাসি। অরুনিকা অসহায় গলায় বলল—

“কেন এমন করেন আপনি? কেন নিজেকে এত কষ্টে দেন? ”

শৈবালের শরীর থেকে ছিটকে আসা মদের ভোটকা গন্ধে গা গুলিয়ে উঠছে অরুনিকার। কিন্তু তার দৃঢ়চিত্ত কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না। শৈবাল মোহনীয় কণ্ঠে বলল—

“তুমি আমার কাছ থেকে মুক্তি চাও অরু? অরুর মতো তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও? তার আগে আমিই তোমাকে ছেড়ে চলে যাব।”

অরুনিকা অধৈর্য, উন্মাদ হয়ে ওঠে। শৈবালের কলার টেনে ধরে টগবগে গলায় বলল–

” কোথায় যাবেন আপনি? কেন করেন এসব? আপনার কিছু হলে আমার কী হবে? এই, কেন এসব করেন? আপনার কিছু হলে আমি কোথায় যাব শৈবাল?
আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না, কোথাও না। কেন এমন করেন আপনি? কেন, কেন, কেন?”

শৈবাল অনুদ্বেগ গলায় বলল—

“তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো অরু?”

অরুনিকা শৈবালের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল—

“আমি কোথাও যাব না, কোথাও যাব না আপনাকে ছেড়ে।”

“তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো অরু। আমি বাঁচব না তোমাকে ছাড়া।”

অরুনিকার অঝোর কান্নার বিপরীতে শৈবালের বুক চিরে বেরিয়ে আসে তীব্র দীর্ঘশ্বাস।
,
,
,
তন্দ্রাচ্ছন্ন শৈবালের নির্মেঘ, সতেজ মুখের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল অরুনিকা। শৈবালকে পরিস্কার করিয়ে, খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। বুদ্ধিদীপ্ত, চৌকস, দীর্ঘ দেহের পুরুষটিও মাঝে মাঝে কেমন আদুরে বিড়াল বনে যায় অরুনিকার কাছে। ধরা দেয় সদ্যজাত এক নবজাতক রূপে। শৈবালের ওই নিষ্পাপ আঁকুতি, তার অতলান্তিক প্রেম, হৃদয়ের উষ্ণতা, অকপট হৃদগ্রাহী আর্তনাদ সমসময় বিবশ করে দেয় অরুনিকাকে। অরুনিকা পেরোতে পারে না এই পুরুষের সেই শুদ্ধ রক্তাক্ত ভালোবাসার লাল বৃত্ত!

নিজের রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় অরুনিকা। এইটুকু পথেই তাকে থামতে হয়। জাফর এসে দাঁড়িয়েছে। অনুতপ্তের ডালি ধরে বলল—

“আই এম সরি। আমার আসলে তোমাকে ফোন করা উচিত ছিল।”

অরুনিকা সচল গলায় বলল—

” এতে আপনার দোষ নেই জাফর ভাই। আমারই খেয়াল রাখা উচিত ছিল। তাহলে আর এসব ঘটত না।”

জাফর উদ্বিগ্ন গলায় বলল—

“এখন কেমন আছে শৈবাল?”

“ঘুমের ঔষধ খাইয়েছি। ঘুমাচ্ছে এখন।”

“খেয়েছে ও?”

“হুম।”

অধর ফাঁক করে সশব্দে শ্বাস ফেলল জাফর। তার বুকের ভার কিছুটা কম হলো। অরুনিকার দিকে নিশ্চল চোখে তাকিয়ে টিমটিমে গলায় বলল—

“যা হচ্ছে তা ঠিক নয় অরুনিকা। কিন্তু আমরাও নিরুপায়। শৈবালের কন্ডিশন তো তুমি জানোই। তোমাকে না দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। একটা পুরো কোম্পানি চালায় শৈবাল। সিইও সে। তবুও দেখো, তোমার কাছে সে আমাদের রিম আর ঝিম থেকেও ছোটো।”

অরুনিকা চোখ লুকালো। বিব্রত সে। জাফর পূনরায় বলল—

“অরুমিতার সাথে ওর সম্পর্ক প্রায় পনেরো বা তারও বেশি। ছোটোবেলা থেকেই একসাথে বড়ো হয়েছে দুজন। ইন্টার পাস করেই উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমায় দেশের বাইরে শৈবাল। এই লং ডিস্টেন্সেও ওদের সম্পর্ক ছিল আগের মতো। বাবার বন্ধুর মেয়ে বলো, আর ঘরের, অরুমিতাকে এ বাড়ির সবাই ভালোবাসত। শৈবাল দেশে ফিরতেই ওদের এংগেজমেন্ট, বিয়ে হুটহাট হয়ে গেল। কেউ আপত্তি করল না। কিন্তু, কী থেকে কী হয়ে গেল! বিয়ের দিন সেন্টার থেকে নিজের বউকে নিজে ড্রাইভ করে বাসায় নিয়ে আসতে চেয়েছিল শৈবাল। কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে গেল। চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় আর অরমিতাকে পেয়েছিল মাটির ঘরে ও । ছয়দিন কোমাতে থেকে নতুন জীবন পেয়েছে শৈবাল। সেই দূর্বিষহ দিনগুলো আমরা আজও কেউ ভুলিনি অরুনিকা। শৈবালের মুখে হয়তো অরু নামটা বেঁচে আছে, কিন্তু ওর অস্তিত্ব জুড়ে শুধু তুমি। তুমি ছাড়া ওকে ঠিক করতে কেউ পারবে না।”

অরুনিকার শ্বাস রোধ হয়ে আসছে। কান্নার দলারা গলায় গেঁথে আছে। সব জানে সে। তিনমাস হাসপাতাল থেকে যেদিন বাড়ি ফিরছিল শৈবাল, সিগন্যালে থমকে থাকা গাড়ির ভেতর থেকে একটা কণ্ঠে সে অরু নামটা শুনতে পায়। গাড়ি থেকে নেমে সেই মেয়েকে খুঁজে পেতেই রাস্তার মাঝেই তাকে জড়িয়ে ধরে অরু অরু বলে। সেদিন থেকেই অরুনিকার জীবন জড়িয়ে যায় শৈবাল নামের মানুষটির সাথে। দ্বৈত সত্তার শৈবালের একদিকে পুরো পৃথিবী তো আরেক দিকে শুধু তার অরু।

চলবে,,,

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:৫
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি

বিকেলের শান্ত পরিবেশে নির্মল মলয়ে আবেশিত ধরণী। নীলাভ আকাশের বুকে গুচ্ছ শুভ্র মেঘের ভাঁজ। কৃষ্ণকায় পত্রীদের অবাধ বিচরণ। ক্লান্ত প্রভাকর এখন শ্বাস নিচ্ছে।

জয়নাল আবেদিনের দিকে চা এগিয়ে দিলো অরুনিকা। তিনি সাদরে তা গ্রহণ করলেন। ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে প্রশ্ন করলেন—

“কেমন আছে শৈবাল?”

অরুনিকা সচল গলায় বলল—

“ভালো। ”

জয়নাল আবেদিন উদাস গলায় বলে উঠলেন—

“ছেলেটার কী থেকে কী হয়ে গেল! অরুমিতা মা/রা যাওয়ার পর থেকে একদম এলোমেলো হয়ে গেল শৈবালের জীবনটা। আমার মেয়ে তো ম/রে গিয়ে বেঁচে গেছে, কিন্তু জীবন্ত লা/শ বানিয়ে দিয়ে গেল ছেলেটাকে।”

জয়নাল আবেদিনের বুক চিরে বেরিয়ে এলো তীব্র দীর্ঘশ্বাস। তিনি শ্রান্ত গলায় শুধালেন—

“এখন কী অবস্থা ওর? মেডিসিন নিচ্ছে তো?”

অরুনিকা সহজ গলায় বলল—

“জি।”

“রুমকি বলল, আজও না কী…।”

জয়নাল আবেদিন থেমে গেলেন। আর বলতে ইচ্ছে হলো না তার। অরুনিকা অনুতপ্তের অনলে জ্বালাপোড়া চোখ দুটোর জল লুকাতে অন্য দিকে তাকাল। জয়নাল আবেদিন চায়ের কাপ রাখলেন সেন্টার টেবিলের ওপর। স্বাভাবিক স্বরে বললেন—

“অরু মা/রা যাওয়ার পর এই আমাদের চোখের সামনেই শৈবাল উন্মাদ হয়ে উঠেছিল। ও আমার মেয়েকে এতটা ভালোবাসত তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। নিজেকে কতবার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। ভাগ্যিস, তুমি এলে ওর জীবনে! নাহলে ওকে আমরা বাঁচাতেই পারতাম না।”

অরুনিকা নিশ্চুপ রইল। মন-মস্তিষ্কের দোলাচলে সে হতপ্রায়। স্বামী হিসেবে কোনো খামতি নেই শৈবালের মাঝে। তার কোনো চাহিদা ছেলেটি অপূর্ণ রাখেনি। অরুনিকার বাবা-মায়ের ছেলে হয়ে উঠেছে শৈবাল। তবুও কোথাও যেন শূন্যতার হাহাকার!
জয়নাল আবেদিন গাঢ় শ্বাস ফেলে বললেন—

“শৈবাল মানসিকভাবে এখনো স্ট্যাবল নয়। ওর এই শক্ত মনেও কোথাও একটা দুর্বলতা আছে, যা ওকে ওভার পজেসিভ করে তোমার ক্ষেত্রে। ওর অবচেতন মন এটাইভাবে যে, ওর কাছ থেকে দূরে গেলেই তোমার কিছু হয়ে যাবে। তাই ও তোমাকে সবসময় নিজের আশেপাশে আশা করে। নিজের চোখের সামনে দেখতে চায়। সময় দাও ওকে। ওকে বিশ্বাস করাও যে, তুমি ওকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছ না।”

চায়ের কাপের ধোঁয়া উঠা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অরুনিকা আবদার করে বলল—

“চা টা গরম করে দিই আংকেল?”

জয়নাল আবেদিন আপত্তি করে বললেন—-

“না, এখন আর চা খাবো না। তৌফিকের সাথে কিছু কথা আছে আমার।”

“আপনি বসুন। বাবা একটু বাইরে গেছেন।”

“অরু, অরু।”

অস্পষ্ট আওয়াজ কানে এলো অরুনিকার। শৈবাল ডাকছে। সে ব্যস্ত গলায় বলল—

“আমি আসি আংকেল। শৈবালের ঘুম ভেঙেছে বোধহয়।”

“যাও। খেয়াল রেখো ওর। এমনটা আর হতে দিয়ো না। গতবার কী করেছিল মনে আছে তো। ওকে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করাতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ওকে বাঁচানো যাবে না।”

অরুনিকা জবাব দিলো না। লাগাতার ডেকে যাচ্ছে শৈবাল। সে চঞ্চল পা দুটো তূরন্ত বেগে ছোটাল।
,
,
,
বিছানার হেডবোর্ডে মাথা হেলিয়ে বসে আছে শৈবাল। মাথার দুই পাশে অসহ্য ব্যথায় কাতর সে। অরুনিকা অধৈর্য গলায় প্রশ্ন ছুড়ল—

“কী হয়েছে?”

শৈবাল ব্যথামিশ্রিত স্বরে বলল—

“মাথাটা ব্যথা করছে অরু।”

অরুনিকা পালটা কিছু বলল না। ওয়্যারড্রব থেকে একটা কৌটা নিয়ে ফিরে এলো। শৈবালের শিয়রে কাছে বসে বলল—

“এখানে মাথা রাখুন। আমি মালিশ করে দিচ্ছি।”

অরুনিকা বিছানায় আসন পেতে বসল। তার উরুর ওপর মাথা রাখল শৈবাল। টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল। চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে। অরুনিকা হালকা হাতে শৈবালের কপালের দুই পাশে মালিশ করতে থাকে। তার নজর এখন শৈবালের নিমীলিত চোখে। অরুনিকা মৃদু হাসল। সহজ, স্বাভাবিক, চেনা মানুষটা হঠাৎ কেন অচেনা হয়ে যায়?

শৈবাল নরম গলায় বলল—

“সরি, অরু।”

অরুনিকা প্রশ্নাত্মক চোখে চেয়ে বলল–

“কেন?”

“তখনকার জন্য।”

“দোষ করেছেন?”

“বুঝি তো।”

“তাহলে কেন করেন?”

এই প্রশ্নের জবাব দিলো না শৈবাল। অরুনিকার হাতটা চেপে ধরল। থমকে গেল অরুনিকা। চোখ খুলল শৈবাল। উলটো হয়ে থাকা তার চোখদুটো তখন অরুনিকার পেলম মুখচ্ছবিতে। অরুনিকার হাতটা ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে শৈবাল। মাঝের দূরত্ব কমিয়ে এনে অরুনিকা সান্নিধ্যে এসে বসে। অরুনিকা অবশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার শ্বাসের আওয়াজও যেন গুনে নিচ্ছে শৈবাল। শৈবালের অভীপ্সাপূর্ণ দৃষ্টি অরুনিকার সরু ওষ্ঠাধরে। নিজেকে সংযত না করে উন্মুক্ত করল শৈবাল। অরুনিকার অধরপল্লবের সজ্জিত ভাঁজে নিজেকে বন্ধি করে নিল। স্বামীর প্রেমময় সংসর্গে অরুনিকার নারীমন অনুরণিত হচ্ছে। সে আড়ষ্টতায় ডুবে যায়। শৈবালের দুর্দমনীয় ছোঁয়া প্রগাঢ় হয়। প্রেমপাত্রীর সমস্ত অধরসুধা শুঁষে নিতে থাকে ক্ষণে ক্ষণে। নিজের পুরুষালী গহন স্পর্শ আঁকতে থাকে অরুনিকার স্পর্শকাতর অঙ্গে। হতপ্রায় অঙ্গনার শ্বাস ভারী হয়ে আসে। পেলব, মসৃণ, কোমল ওষ্ঠাধরের ভাঁজ থেকে নিজেকে আলগা করে শৈবাল। ঘ্রাণেন্দ্রিয় ডোবায় অরুনিকার কণ্ঠদেশে। অরুনিকা বুক ভরে শ্বাস নিল। আলতো গলায় বলল—

“হাত-মুখ ধুয়ে আসুন। জয়নাল আংকেল এসেছেন।”

শৈবাল কৌতূহলী গলায় বলল—

“কেন?”

শৈবালের কৌতূহলে আচ্ছন্ন আননে তাকাল অরুনিকা। কৌতুক করে বলল—-

“জামাইকে দেখতে এসেছেন।”

মুচকি হাসল শৈবাল। উলটো হয়ে নিজের মাথাটা রাখল অরুনিকা কাঁধের কোণে। সামনের দিকে পা ছড়িয়ে দিয়ে বলল—

“কী ভাগ্য বলো! বউ একটা হলেও শ্বশুর দুইটা।”

অরুনিকা আচানক প্রশ্ন করে বসল।

“অরুমিতাকে খুব ভালোবাসতেন তাই না?”

শৈবাল ভাবাবেগ ছাড়াই বলল—

“বাসতাম, হয়তো তোমার মতোই ভালোবাসতাম। তবে ও আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আর ধোঁকাবাজদের কখনো ক্ষমা করতে নেই।”

অরুনিকা চমকিত গলায় বলল—

“কী বললেন আপনি? কে ধোঁকাবাজ?”

শৈবাল গ্রীবাভঙ্গি বদলে তাকাল অরুনিকার দিকে। অরুনিকার নাকে নাক ঘষে আলগোছে চুমু বসাল অধরে। মোলায়েম স্বরে বলল—

“তুমি যাও আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসছি।”

বিছানা থেকে লাফিয়ে মেঝেতে নামে শৈবাল। তার দিকে বিস্মিত চোখ জোড়া আবদ্ধ করে রাখে অরুনিকা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here