ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত #পর্ব:৬,৭

0
1042

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:৬,৭
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি
পর্ব:৬

“কেমন আছ শৈবাল?”

জয়নাল আবেদীনের প্রশ্নে ভাবাবেগ ছাড়া প্রত্যুক্তি করে শৈবাল।

“জি, ভালো। আপনার কী অবস্থা?”

জয়নাল আবেদীন খেয়াল করলেন শৈবাল তার দিকে তাকাচ্ছে না। তার মনোযোগ অরুনিকার দিকে। শ্বশুর আর শাশুড়িকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে অরুনিকা। শৈবালের বিমোহিত বদ্ধদৃষ্টি সেখানে আবদ্ধ। জয়নাল আবেদীন নরম হেসে নিজের খাওয়াতে অভিনিবেশ করলেন। জবাব দিলেন না তিনি। তাতে একটুও বিচলিত নয় শৈবাল। রুমকি রান্নাঘরে ব্যস্ত। জয়নাল আবেদীন, তৌফিক সাহেব, নমিতা বেগম যখন নিজের কাজে ব্যস্ত হলেন, তখন শৈবালের পাশে এসে দাঁড়াল অরুনিকা। শৈবাল নিজের হাতে খেতে পারবে না। অরুনিকা দ্বিধাগ্রস্ত। মাথা নিচু করে শৈবালের কানের কাছে চাপা স্বরে বলল—

“চামচ এনে দেবো?”

শৈবাল কর্ণের মনোযোগ সরিয়ে চোখের মনোযোগ দিলো অরুনিকার দিকে। অরুনিকা সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার দিকে তাকিয়ে চিবুক উঁচু করে নির্মল গলায় বলল শৈবাল—

“খাইয়ে দাও।”

অরুনিকা লজ্জার পুকুর নিয়ে তাকাল উপস্থিত মানুষের দিকে। পরমুহূর্তে কটমট করে তাকাল শৈবালের দিকে। কপাল কুঁচকে চোখের কোটর ছোটো করে বলল–

“পাগল হয়েছেন? আমি চামচ এনে দিচ্ছি।”

অরুনিকা পদযুগল সচল করতেই তার হাত ধরে ফেলে শৈবাল। বিনীত গলায় বলল—

“খাইয়ে দাও।”

শুনতে পেল বাকিরা। তাদের মধ্যে ভাবান্তর হলো না। ঝুমঝুম করে উঠল শান্ত পরিবেশ। রিম আনন্দোচ্ছল হয়ে বলল —-

“মামা, আমি খাইয়ে দেব। তুমি বসো।”

ঝিমও সাথে বলল—

“আমিও মামাকে খাইয়ে দেবো।”

রুমকি রান্নাঘর থেকে তরকারির বাটি নিয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে রাখল। ঈষৎ চোখ বড়ো করে রিম, ঝিমকে ধমকে বলল—

“পাকামো করতে কে বলেছে তোমাদের? নিজেদের রুমে যাও।”

শৈবাল অরুনিকার হাত ছেড়ে দিলো। অরুনিকা অপ্রস্তুত চোখে তাকাল সবার দিকে। রিম, ঝিম পূর্বের চেয়ে দ্বিগুন উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল—

“মামাকে খাইয়ে দেবো। দেখোনা মামার হাতে ব্যথা।”

“মামিমা আছে তোমাদের। মামাকে খাইয়ে দেবো।”

চুপসে গেল দুই বোনের মুখ। অরুনিকা অকস্মাৎ বর্ষণে ভিজে শিউরে উঠল। জাফর রুম থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে এসে বলল—

“তোমার ফোন বাজছে অরুনিকা। যাও।”

অরুনিকাসময় নষ্ট করল না। যেন এই মুহূর্তে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে এরচেয়ে বড়ো আর কোনো সুযোগ হয় না। অরুনিকা যেতেই শৈবালের কাছ ঘেঁষে দাঁড়ায় জাফর। ফিচেল হেসে শৈবালের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল—

“বউয়ের হাতে না হয় আদর খাবে, মায়েদের হাতে ভাত খাও। আমার দুই মেয়ে তাদের প্রিয় ছেলেকে খাওয়াতে উঠে পড়ে লেগেছে।”

শৈবাল মৃদু হেসে রিম,ঝিমের দিকে তাকাল। দুই বোন একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়েছে। দুটো চেয়ার একসাথে করে তার ওপর উঠে দাঁড়ায়। মামাকে খাইয়ে দেওয়ার অবাধ্য উল্লাস তাদের।

,
,
,
” কেমন আছ তুমি?”

মৌমিতা জবাব দিলেন না। উলটো প্রশ্ন জুড়ে দিলেন—

“জামাই কেমন আছে? কিছু করে বসে নিতো ছেলেটা?”

অরুনিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার মায়ের তারচেয়ে জামাইয়ের চিন্তা বেশি। সে স্বাভাবিক গলায় বলল—

“ভালো আছে। কিছু হয়নি।”

মৌমিতা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। দ্রুততার সাথে বললেন—

“আলহামদুলিল্লাহ!”

“আব্বু খেয়েছে আম্মু?”

“খেয়েছে। এখন ঘুমাচ্ছে।”

“তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে আব্বুর সাথে দেখা করতে পারিনি!”

কাতর শোনালো অরুনিকার কণ্ঠ। মৌমিতা মুক্ত গলায় বললেন—

“আর আসবি না এভাবে। তোর আব্বুকে আমি সামলে নেব। ছেলেটা কখন কী করে বসে কেউ জানে না!”

অরুনিকা কথা বলল না। চকিতে তার উদরে দুর্বোধ্য ছোঁয়ারা বেপরোয়া হলো। পিষ্ঠদেশে দৃঢ় পাটাতনের সংসর্গ। গ্রীবাদেশে উষ্ণ ছোঁয়া। অরুনিকা কান থেকে মোবাইল ফোন সরাতে গেলে শৈবাল অন্য কানে ছোটো করে বলল—

“কথা বলো।”

অরুনিকা প্রতিক্রিয়া করল। শৈবাল সেভাবেই নিজের বুকের উমে জড়িয়ে রাখল অরুনিকাকে। মৌমিতা বেগম অরুনিকাকে বারবার সাবধান করে দিচ্ছেন, যেন সে আর কখনো হুটহাট করে শৈবালকে না বলে বাবার বাড়ি চলে না আসে।
কথা শেষ হতে মোবাইলটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে অরুমিতা। শৈবালের দিকে ফিরে প্রশ্ন ছুড়ল—

“চলে এলেন কেন? চলুন, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

শৈবাল হাস্যোজ্জ্বল গলায় বলল—

“খেয়ে এসেছি আমি।”

রিনিঝিনি শব্দে হেসে উঠে অরুনিকা। তার চোখের পাতায় আটকে গেল শৈবাল। হেসে হেসে বলল অরুমিতা—

“ওই পুঁচকো দুটোর হাতে খেয়ে পেট ভরে গেছে আপনার?”

আলগোছে অরুনিকাকে নিজের বুকে টেনে নিল শৈবাল। দুই বাহুর বন্ধনে আবদ্ধ করে নিল। অরুনিকা মাথা রাখল স্বামীর বুকে। শৈবাল গাঢ় গলায় বলল—

“দেখো তো পেট ভরেছে কি না!”

অরুনিকা মিহি হেসে বলল—-

“চলুন, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

“আম্মু কী বললেন?”

“আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছে।”

“কী জিজ্ঞেস করেছে, “ওই পাগলটা আবার কিছু করে বসল কি না?”

অরুনিকা নিজের দুই হাতের বেড় শক্ত করল। শৈবালের দেহের উষ্ণতা তার কোমল দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবিষ্ট হচ্ছে। সে মাথাটা শক্ত করে চেপে রাখল শৈবালের বুকে। মোলায়েম কণ্ঠে বলল—

“উঁহু। বলেছে আপনাকে না বলে কোথাও যেতে না।”

“রাগ করেছ আমার ওপর?”

“কেন এমন করেন আপনি?”

শৈবাল দম নিল। কিছুটা সময় নিয়ে বলল—

“তুমি আমাকে অরুর মতো ছেড়ে যেয়ো না।”

“কোথাও যাব না আমি।”

শৈবাল মৃদু হাসল। বলল—

“কাল তোমাদের বাসায় যাব।”

অরুনিকা চমকে উঠে মাথা তুলে বলল—-

“কেন?”

শৈবাল একগাল হেসে বলল—

“জামাই আদর খেতে।”

“এক ঘণ্টা না কী দুই ঘণ্টা?”

শৈবাল চোখে হেসে অরুনিকা ললাটে চুমু এঁকে বলল—

“যতক্ষণ আমার অরু চায়।”

অরুনিকা বাঁধনছাড়া হাসে। সে হাসিতেই খু/ন হয় শৈবাল।

চলবে,,,

#ভালোবাসার_লাল_বৃত্ত
#পর্ব:৭
লেখনীতে:তাজরিয়ান খান তানভি

নিকষ কালো আঁধারের বুক ফেড়ে চেয়ে থাকা চাঁদের দুধ সাদা আলোতে তাকিয়ে আছে অরুনিকা। বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দুই হাতে গ্রিল ধরে অনিমেষ তাকিয়ে আছে সে। নীরব, নিস্তব্ধ, নিমগ্ন। স্নিগ্ধ, ঈষৎ শীতল সমীরণে ফুলের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। অরুনিকার অটল চিত্ত। দুইদিন আগে যখন শৈবাল তাকে নিয়ে তাদের বাড়ি গিয়েছিল, অরুনিকা যারপরনাই অবাক হয়েছিল। পুরো একটা দিন আর রাত কাটিয়ে সকাল ফিরেছে তারা।

অধর ফাঁক করে শ্বাস ফেলল অরুনিকা। শৈবাল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। অকস্মাৎ রেগে যাওয়া, র/ক্তহীম করা নীরবতা, ওই নিথর চোখের চাহনি; ভয় পায় অরুনিকা, ভীষণ ভয় পায়!

বিয়ের প্রথম রাতেও অরুনিকা এক ভয়ংকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল। তাদের বিয়েটা তো স্বাভাবিক ছিল না। মধ্যরাতে যখন শৈবাল বাসর ঘরে ঢোকে জ্বলে উঠে অরুনিকা। সে কিছুতেই শৈবালের সাথে একঘরে থাকবে না। নেহাত বাবার জন্য বিয়েটা করেছিল। অরুনিকা ঘর থেকে বের হতে গেলেও একটা কথাও বলেনি শৈবাল। শুধু নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়েছিল। অরুনিকা বের হতেই দরজা লক করে ভেতরে বসে থাকে। অরুনিকাকে বসার ঘরে দেখেচটে যায় রুমকি। প্রশ্ন করতেই জানতে পারে সম্পূর্ণ ঘটনা। রুমকি চিৎকার-চেঁচামেচি করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে। এদিকে ঘটে এলাহিকাণ্ড! ক্রমশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতে থাকে সবকিছু। রিম, ঝিম বেরিয়ে আসে তাদের রুম থেকে। তৌফিক সাহেব, নমিতা বেগম, জাফর সকলের মাঝে উত্তেজনা শুরু হয়। ধোঁয়ার উৎসস্থল খুঁজতে গিয়ে তারা আবিষ্কার করল, শৈবালের রুম থেকে তা ছড়াচ্ছে। জাফর সময় ব্যয় করল না। বাড়ির বাইরে এসে প্রতিবেশীর সাহায্যে কামনা করল। গুটিকতক তাগড়া ছেলে যোগ হলো জাফরের সাথে। তারা সকলে মিলে দরজা ভাঙল। বিধিবাম! বিছানায় দাউ/দাউ করে আ/গুন জ্ব/লছে। ফুলের বিছানা এখন আ/গুনে পোড়া ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। আলমিরার সাথে পিঠ হেলান দিয়ে বসে আছে শৈবাল। নিরুত্তেজ, অনুদ্বেগ, ভাবলেশহীন। বাড়ির সকলে মিলে পানির ঝড় বইয়ে দেয় আ/গু/নের ধ্বং/সলী/লায়। বিন্দমাত্র ভাবান্তর হলো না শৈবালের। সে ঠায় বসে রইল। বিয়ের সাজে দাঁড়িয়ে থাকা অরুনিকার সারা অঙ্গ কাঁপতে শুরু করল। রিম, ঝিম মামিকে ধরে সশব্দে কেঁদে উঠল। রুমকি দৌড়ে এসে ভাইয়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসল। উদ্বেলিত গলায় বলল—

“কী হয়েছে ভাই আমার? এসব কেন করলি শৈবাল? তুই যা বলেছিস তাই তো করেছি আমরা। দেখ, তোর অরু। অরুর সাথেই তোর বিয়ে হয়েছে।”

শৈবাল হিম গলায় বলল—

” অরু আমাকে ভালোবাসে না আপা। ও আমার সাথে থাকতে চায় না। ও আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চায়। ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না আপা। ওকে বলো আমাকে ছেড়ে না যেতে। ওকে ছাড়া আমি ম/রে যাব আপা।”

রুমকি আবেগে বিহ্বল হয়ে ভাইয়ের মুখটা নিজের অঞ্জলিতে পুরে নিয়ে অধৈর্য হয়ে বলল—

“তোর অরু কোথাও যাবে না। কোথাও যাবে না।”

“ও চলে যাবে আপা। ও আবার আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।”

তেঁতে উঠল রুমকি। হুড়মুড়িয়ে এসে অরুনিকার বাজু চেপে ধরে বলল—

“এই মেয়ে! এই! কোথায় যাচ্ছিলি তুই? দেখেছিস তোর জন্য আমার ভাই কী করেছে! দেখেছিস তুই!”

জাফর সরিয়ে নিল রুমকিকে। ধমকের সুরে বলল—

“কী শুরু করলে তুমি? মেয়েটা এমনিতেও ভয় পেয়েছে। ”

নমিতা বেগম বসার ঘরে কাউচে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছেন। এই যে এত কিছু হচ্ছে, তিনি শুধু মহান আল্লাহ্ পাকের কাছে প্রার্থণা করছেন, যেন শৈবাল এই যাত্রায় বেঁচে যায়। মৃত্যুর মুখ থেকে একবার ছেলেকে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। বুকে পাথর বেঁধে আইসিইউর বাইরে বসেছিলেন।
তিনি দ্বিতীয়বার সেই পরিস্থিতিতে পড়তে চান না। তৌফিক সাহেবের ভেতরটা উথাল-পাথাল করলেও বাইরের দিকটা একদম শান্ত। তিনি নিজের রুমে বসে আছেন। ভাবছেন, ভুল করেননি তো?

ঘণ্টা দেড়েক সময় লেগেছে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আসতে। সেই পোড়া গন্ধযুক্ত রুমেই বিয়ের প্রথম রাত কাটাতে হয়েছে অরুনিকাকে। সে আজীবন সেই রাতের কথা ভুলবে না। শৈবাল সারারাত অরুনিকার কোলে মাথা রেখে বসেছিল। না নিজে ঘুমিয়েছে, না অরুনিকাকে চোখের দুই পাতা এক করতে দিয়েছে! উৎকট গন্ধ, গা ছমছম পরিবেশ, এক অচেনা পুরুষ, সাথে তার উদ্ভট কাণ্ড। সবকিছু মিলিয়ে জীবনের প্রথম ভয়ংকর রাত ছিল তা অরুনিকার কাছে।

অরুনিকার ধ্যাণ ছুটল। স্মৃতির পাতা থেকে ফিরে এলো সে। রিম, ঝিমের হৈ-হুল্লোড়ে বারান্দা থেকে রুমে ঢুকল সে। রিম আর ঝিম তাদের ছবি আঁকার খাতা নিয়ে এসেছে। উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল রিম—

“মামিমা, ড্রয়িং করিয়ে দাও।”

অরুনিকা আনন্দের সাথে বলল–

“এসো।”

দুই বোন বিছানার ওপর লাফিয়ে ওঠে। রিম আর ঝিমের মাঝে বয়সের পার্থক্য মাত্র সাত মিনিট। ঝিম ঝনঝন করে বলল—

“মামিমা, কাল চাচ্চু আসবে। আমরা কালকে বাড়ি চলে যাব। তুমি যাবে আমাদের সাথে?”

অরুনিকা ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল—

“চাচ্চু আসবে। কবে?”

রিম ঝুমঝুম করে বলল—

“কালকে আসবে। আম্মু বলেছে, চাচ্চু এলে আমরা বাড়ি চলে যাব। আমাদের বাড়ি। তুমিও যাবে?”

অরুনিকা মলিন হাসল। জাফরের ভাই ইন্ডিয়াতে থাকে গত দেড় বছর ধরে। সেখানেই একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে। অরুনিকা মজা করে বলল—

“আমি তোমাদের সাথে গেলে মামা রাগ করবে তো।”

রিম খুশি খুশি গলায় বলল–

“মামাকেও নিয়ে যাব। চাচ্চু, মামা, আমরা সবাই একসাথে ঘুরতে যাব। আগেও তো যেতাম। অরুমিতা আনটিও যেত। মামা অরুমিতা আনটিকে আইসক্রিম খাইয়ে দিতো। ফুলের মালা পরিয়ে দিত। জানো মামিমা, আনটিকে না চুমু দিয়েছিল, আমরা লুকিয়ে দেখে ফেলেছি। তুমি আম্মুকে বলবে না। তাহলে আম্মু খুব বকবে।”

রিম থেমে যেতেই ভীত গলায় বলে উঠে ঝিম—

“না, না মারবেও।”

অরুনিকার বুকটা মোছড় দিয়ে ওঠে। নিজের স্বামীকে অন্য নারীর সাথে ভাবতেও তার গা গুলিয়ে উঠল। অরুনিকা চটজলদি ওয়াশরুমে ছুটে যায়। মুখে লাগাতার পানির ঝাপটা দিয়ে ঘনঘন শ্বাস ফেলে। অসহ্য লাগছে তার। বুকের ভেতর শূঁল বিঁধেছে বোধহয়। এত যন্ত্রণা ! শুধু কী যন্ত্রণা? ঘৃণা হচ্ছে না?
অরুনিকা ঘৃণা আর যন্ত্রণার তফাৎ করতে পারল না।ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখল শৈবাল বসে আছে রিম আর ঝিমের সাথে। পলেই মুখের রং পালটে যাওয়া অরুনিকাকে দেখে বিচলিত হয় শৈবাল। হেঁটে আসে অরুনিকার কাছে। উদ্বেগপূর্ণ গলায় বলল—

“কী হয়েছে অরু? তুমি ঠিক আছ?”

অরুনিকা বাচ্চাদের দিকে তাকাল। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাল শৈবাল। আদেশের সুরে বলল—

“রিম, ঝিম! আম্মু যাও তোমরা। মামিমার শরীর ভালো নেই। ড্রয়িং কাল করিয়ে দেবে।”

দুইজন উঠে দাঁড়ায়। একসাথে বলে উঠে—

“কাল তো আমরা চলে যাব। চাচ্চু আসবে।”

“শিমুল আসবে?”

কেমন অস্থিরতা প্রকাশ পেল শৈবালের কণ্ঠে। অরুনিকা স্বাভাবিক স্বরে বলল—

“বোধহয়। আমাকেও বলল ওরা।”

শৈবাল কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। সে চঞ্চল পায়ে এসে বিছানার ওপর থেকে ছবি আঁকার বই আর খাতা তাদের দুইজনের হাতে দিয়ে জোর গলায় বলল—-

“তোমরা যাও এখন।”

“আচ্ছা।”

হৈ হৈ করতে করতে দুই বোন বেরিয়ে যায়। অরুনিকা অদ্ভুতভাবে শৈবালকে দেখছে। যে পুরুষ্ট ওষ্ঠাধরের সংসর্গ নিচ্ছিদ্র অনুরক্তিতে তার সারা অঙ্গে বিচরণ করে, তা অন্য কারো ছোঁয়ায় পূর্বেই কলঙ্কিত, ভাবতেই ভেতরটা বিষিয়ে উঠছে অরুনিকার। অরুনিকা কখনো শৈবালকে অন্য কারো সাথে কল্পনা করতে পারে না। মৃ/ত অরুমিতার সাথেও নয়। সবকিছু জেনেও যেই সম্পর্কে সে ডুবেছে, আজ কেন একটুখানি ঘোলা হতেই তার শ্বাস রোধ করে দিচ্ছে! পনেরো বছরের প্রেমের সম্পর্ক একটা চুমু, বেশি কিছু তো নয়। তবুও অরুনিকার মন মানল না। শৈবাল ব্লেজার খুলে বিছানায় রাখল। হাতঘড়ি খুলতে গিয়ে বলল—

“শিমুলকে কখনো দেখেছ?”

অরুনিকা অনিচ্ছা সত্ত্বেও জবাব দিলো—

“হ্যাঁ। আপা একদিন অ্যালবাম দেখিয়েছিল। ওখানেই দেখেছি। সে তো আপনার সমবয়সী।”

শৈবালের কী যেন হলো। সে অরুনিকার কাছে এসে দাঁড়াল। নিমেষহীন চোখে চেয়ে রইল খানিক সময়। তারপর বলল—

“ওকে কেমন লাগে তোমার?”

অরুনিকা পলক ফেলল। শৈবালের প্রশ্নে মাত্রাতিরিক্ত অবাক হয়ে বলল—

“এটা কী ধরনের প্রশ্ন?”

শৈবাল অধৈর্য হয়ে ডুবে গেল অরুনিকার অধরে। গাঢ় স্বরে বলল—-

“আমি তোমাকে ভালোবাসি অরু। অনেক বেশি ভালোবাসি।”

তারপর ফিসফিসিয়ে বলল—
” জীবন জুড়িয়া বেঁচে থাকার টান
থাকুক ভালোবাসা চির অম্লান,
আমায় ঘিরে থাকা তোমার প্রণয়ের পরিবৃত্ত
আমি রাঙিয়ে করব তাকে ভালোবাসার লাল বৃত্ত।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here