ভালোবাসার_হাতছানি পর্ব-০২

0
2404

ভালোবাসার_হাতছানি পর্ব-০২
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
আরহামের পয়েন্ট অফ ভিউ…
Hi guys I’m Arham Chowdhury,চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আশরাফ চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র।বছর দুয়েক আগে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে বি বি এ কমপ্লিট করেছি,বর্তমানে একটা মার্কেটিং এজেন্সিতে মার্কেটিং হেড হিসেবে কর্মরত আছি।
বাবা অবশ্য আমার এই ডিসিশনে বেশ অসন্তুষ্ট,উনি চান আমি হায়ার স্টাডিজের জন্যে দেশের বাইরে যাই তারপর উনার বিজনেসের দেখাশোনা করি।কিন্তু ফ্যামিলি বিজনেস নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই,আমি চাই ইন্ডিভিজুয়ালি কিছু একটা শুরু করি।ইনফ্যাক্ট বিজনেস নিয়েই আমার তেমন কোন মাথাব্যথা নেই,আমি যে এক্স্যাক্টলি কি চাই সেটাই এখনও ঠিক করে উঠতে পারিনি।অবশ্য বাবাকে নিয়ে আমার তেমন কোন মাথাব্যথা নেই কারণ এ বাড়িতে আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্টার হচ্ছে আমার লাভিং বড় ভাবী।মা মারা গেছেন যখন আমার বয়স মাত্র বারো বছর,উনি বেঁচে থাকলে হয়তো আমার আরও একজন সাপোর্টার বাড়তো।
আমার বড় ভাইয়া আহনাফ চৌধুরী বাবা-মার একান্ত বাধ্য সন্তান।পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে এখন আমাদের ফ্যামিলি বিজনেসের দেখাশোনা করছে।আমি আর ভাইয়া দুজনে দুই মেরুর বাসিন্দা,আমি যেখানে কারোর ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন তোয়াক্কা করিনা,যখন যা ইচ্ছে হয় তাই করি,ভাইয়া সেখানে বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এক কদমও এগোতে পারেনা।
আমার এসব উড়নচণ্ডী,ভবঘুরে লাইফের সবচেয়ে বড় সাপোর্টার ছিলেন আমার মা মিসেস তহুরা চৌধুরী।তিনি আর নেই তবে রেখে গেছেন তারই ছায়া সায়নী ভাবী মানে বড় ভাইয়ার ওয়াইফকে,সম্পর্কে আমার ভাবী হলে হবে কি আমাকে তিনি একদম নিজের ছোট ভাইয়ের মতই ট্রিট করেন।মা মারা যাওয়ার বছর দুয়েক পরেই ভাবী এ বাড়িতে বউ হয়ে আসেন,তারপর থেকেই আমার বেস্টফ্রেণ্ড,বড়বোন,শিক্ষক সবকিছুই হয়ে উঠেছেন তিনি।শুধু আমারই না,এই পরিবারের প্রতিটি মানুষের ভালো মন্দ সবকিছুর খেয়াল রাখার দ্বায়িত্ব তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছেন,মার অবর্তমানে সংসারটাকে তিনি একা হাতে ধরে রেখেছেন।একজন আদর্শ গৃহবধূ বলতে যা বোঝায় তার সব গুণই তারমাঝে আছে
আমাদের ফ্যামিলিতে সবচেয়ে পিচ্চি আর ইম্পর্টেন্ট সদস্যের নাম আয়মান চৌধুরী ওরফে মাহিন,বড় ভাইয়া আর ভাবীর একমাত্র সন্তান।পাঁচ বছর পেরিয়ে এবার ছয় বছরে পা দিয়েছে।বয়সে পিচ্চি হলে কি হবে,কথায় একেবারে পাকনা বুড়ি,সারাদিন শুধু ছুটোছুটি করে আর পাকা পাকা কথা বলে বাড়িটাকে একেবারে মাথায় তুলে রাখে।
আমার সম্পর্কে আপাতত এটুকু জানলেই হবে,যেটুকু বাকি আছে আস্তে আস্তে সবই জানতে পারবেন…

যাই হোক এবার আসল ঘটনায় আসা যাক কি বলেন সবাই?আমি এখন যেই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি তার নাম মহুয়া রিসোর্ট।শেরপুর শহরের অদূরে চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা রিসোর্টটা যেন সত্যিই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি!আমরা এখানে এসেছি গতকাল রাতে,উদ্দেশ্য আকাশের বিয়ে…
আকাশ হচ্ছে আমার সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেণ্ড।আকাশের বাবা আর আমার বাবা বাল্যকালের বন্ধু আর এক সময়ের বিজনেস পার্টনার,সেই সুবাদেই ওর সাথে আমার পরিচয়,তারপর ধীরে ধীরে কখন যে আমরা বেস্টফ্রেণ্ড হয়ে গেছি বুঝতেও পারিনি।আকাশ আর শ্রুতি দুজনে একই সাথে পড়াশোনা করেছে তবে ওদের বিয়েটা লাভ ম্যারেজ নাকি এ্যারেঞ্জ কিছুতেই আমার মাথায় আসছে না।সবাই জানে ওরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয় ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে কারণ ওদের দুই ফ্যামিলি চায় এই সম্বন্ধটা হোক!জানি না আমার ধারণা সত্যি নাকি মিথ্যা,কিন্তু আমি মন থেকে চাই যেন আমার ধারণাটা পুরোপুরি ভুল প্রমাণ হোক কারণ আমি কখনই চাই না আমার বেস্টফ্রেণ্ড নিজের জীবনের সাথে এত বড় একটা কম্প্রোমাইজ করুক…
.
যাই হোক আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি মহুয়া রিসোর্টের দক্ষিণ দিকের বারান্দায়। এখান থেকে পুরো মধুটিলা ইকোপার্কটার খুব সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়,হাতে ডিএসএলআর নিয়ে এই ভিউটাকেই এতক্ষণ ধরে ক্যামেরাবন্দী করার চেষ্টা করছি।সবাই রিসোর্টের সামনের লবিতে দাঁড়িয়ে আছে,কনেপক্ষের জন্যে ওয়েট করছে।আমার আবার এসব ফর্মালিটিজ একদমই ভালোলাগে না তাই নিচে যাই নি।
রিসোর্টের পার্কিং লটে বেশ কয়েকটা গাড়ি এসে থামল,মনে হচ্ছে ওই বাড়ির লোকজন চলে এসেছে,সবাই যেভাবে হন্তদন্ত হয়ে ছোটাছুটি করছে তাতে অন্তত এমনটাই মনে হচ্ছে।
– তুই আর শুধরাবি না
– কি দরকার?
– ওই শালা,কোথায় বন্ধুর বিয়েতে সব ভার নিজের হাতে তুলে নিবি তা না আছিস তোর ক্যামেরা নিয়ে
– তুই ওসব বুঝবি না
– বোঝার দরকারও নেই,এখন তাড়াতাড়ি নিচে আয়তো
– কেন?কি দরকার?
– আরে ও বাড়ির সবাই চলে এসেছেতো
– তো আমি কি করব?তোর শশুরবাড়ির লোকজন তুই সামলা আমি ওখানে…
– শালা ফাযলামি না করে আয়তো
– পারতাম না
– তোকে পারতে বলেছেটা কে?চুপচাপ নিচে নাম নাহলে কিন্তু…
– কেন রে,তুই কি ভয় পাচ্ছিস না কি?
– তা আবার বলতে?সিরিয়াসলি প্রচণ্ড ভয় লাগছে
– হা হা হা দাঁড়া এইডারে এক্ষুণি ব্রেকিং নিউজ বানাই দিতাছি
– শালা হারামী,তোরেতো আমি…
– রাগ করিস না দোস্ত,খাড়া আইতাছি
– That will be better for you…
– I know…
– ৫ মিনিট সময় দিচ্ছি so quick…
– That’s not fair,তুই সবসময় এমন করিস
– Shut up and quick…
– Ok boss
– Shut up
উফ এই আকাশটাও না…যাই বাবা তাড়াতাড়ি নিচে যাই নাহলে আবার ওই হিটলারটা আমাকে খুন করে ফেলবে…
– Yes mr. Akash I’m…
কথাটা শেষ করতে পারলাম না,তার আগেই পার্কিং লটের সামনের দিকের একটা গাড়ির দিকে চোখ আটকে গেল।অফ হোয়াইট কালারের টপস,ব্লু জিন্স আর স্কার্ফ পরা যেই মেয়েটা গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো কিছুতেই তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না।মনে হল যেন স্বর্গের কোন অপ্সরী পৃথিবীতে নেমে এসেছে।ওর কোলে থাকা ছোট্ট বেড়াল ছানাটাকে দেখেও যেন হিংসে হচ্ছে,মন চাইছে ওটাকে দূরে ছুড়ে ফেলি
– আরহাম…আরহাম…
– (চমকে উঠে)হ্যাঁ..হ্যাঁ বল
– বল মানে?তোকে সেই কখন থেকে ডাকছি অথচ তুই…কোন রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিলি বলতো…
– না মানে আমি…আসলে…
– আচ্ছা বাদ দে,এখন আর ওদিকে দাঁড়িয়ে না থেকে এদিকে আয়
– হুম আসছি…
দুই পক্ষের সবাই একে অপরের সাথে পরিচিত হচ্ছে,আমার কিন্তু ওদিকে কোন মনোযোগ নেই কারণ আমার মনতো পড়ে আছে অন্যদিকে,পরীটা রিসোর্টের শেষ মাথায় একেবারে পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে দূরের আকাশের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে
– Excuse me…আমি একটু আসছি..
– আরে আরহাম কোথায় যাচ্ছিস?তোর ভাবীর সাথেতো এখনও দেখাই করলি না…
– আরে বেটা,এক মিনিট দাঁড়া আসছি…
– আরহাম শোন বলছি…যাহ বাবা,চলেই গেল।এই ছেলেটা কখন যে কি করে কিছুই বুঝি না…
.
আকাশকে কোন মতে ম্যানেজ করেই মেয়েটাকে যেদিকে দেখেছিলাম সেদিকে ছুটলাম।ও এখনও ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে,এখন আর বেড়াল কোলে নেই,চোখে বাইনোকুলার লাগিয়ে দূরে তাকিয়ে আছে।আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম,একেবারে পেছনে এসে দাঁড়ালাম….
– Excuse me…
– (চুপ)
– হ্যালো…শুনতে পাচ্ছেন?
– (চুপ)
– হ্যালো মিস…
(মেয়েটা এবার ঘুরে দাঁড়ালো)
– Hi I’m Arham Chowdhury(হাত বাড়িয়ে)
মেয়েটা আমার পুরো কথাটা না শুনেই আবার ঘুরে দাঁড়ালো,আবারো বাইনোকুলার নিয়ে বিজি হয়ে গেল।ওর বিহেভ দেখে মনে হচ্ছে যেন আমি এতক্ষণ যা বলেছি কিছুই শুনতে পায়নি।
– ও হ্যালো,আপনাকেই বলছি।শুনতে পাচ্ছেন?
(হঠাৎ পেছন থেকে)
– শ্রেয়া…একা একা এখানে কি করছিস?আব্বু-আম্মু সেই কখন থেকে তোকে খুঁজছে,চল ভেতরে চল…
ছেলেটা হঠাৎই কোথা থেকে উদয় হল আর মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেল!ইচ্ছে করছে বেটার মাথায় আচ্ছামত দুইটা…
যাই হোক মেজাজটা প্রথমে একটু খারাপ হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখে একটা সূক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠল!আপন মনেই বলে উঠলাম…
-Shreya!!nice name…
……
(শ্রেয়ার পয়েন্ট অফ ভিউ)
ছোট থেকেই নিরিবিলি জায়গা আমার অনেক পছন্দ,বেশি লোকজনের ভিড়ে খুব আনইজি লাগে।তাইতো রিসোর্টে পৌঁছে সবাই যখন আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত,আমি তখন সবার থেকে অনেকটাই দূরে সরে এসেছি।বাইনোকুলারটা হাতে নিয়ে একটু দূরের গারো পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে আছি।কি অপরূপ সুন্দর জায়গাটা!এক পলকের দেখাতেই যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে,আমিও তার ব্যতিক্রম নই।মন চাইছে সব অপ্রাপ্তি ভুলে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাই…
হঠাৎই মনে হল কেউ পেছনে দাঁড়িয়ে আছে,আচমকা পেছনে ঘুরতেই চমকে উঠলাম।নেভি ব্লু জিন্স,চোখে সানগ্লাস আর ফোল্ড করা সাদা শার্ট পরা ছেলেটাকে একবার যে দেখবে সেই প্রেমে পড়ে যাবে।আমি অবশ্য প্রেমে টেমে পড়িনি তবে একটু আধটু ক্রাশ খেয়েছি বলা যায়।ছেলেটা যে কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারিনি,অবশ্য আমার বোঝার কথাও না কারণ আমিতো তখন দূরের গারো পাহাড়ের মাঝে হারিয়ে গেছি…
সে যাই হোক উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই আমি আবার উল্টো দিকে ঘুরে গেলাম।আসলে এই রকম পরিস্থিতিতে কি করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না।নিজেকে সামলে নিয়ে যেই কিছু বলতে যাব তখনই শ্রাবণ ভাইয়া চলে আসলো,আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই হাত ধরে রিসোর্টের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।ছেলেটাকে দেখলাম তখনও ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে,দূরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে…

(পরদিন)
সারারাত জেগে থেকে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিল আরহাম,সবেমাত্র ঘুমটা একটু জেকে বসেছিল তখনই আবার ভেঙ্গে গেল।কারণ বাইরে খুব চিল্লাচিল্লি হচ্ছে,প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে আসলো আরহাম
– What the…হচ্ছেটা কি?এরা কি একটু শান্তিতে ঘুমোতেও দেবে না!এই আকাশের বাচ্চাটা আবার কই গেল কে জানে,আকাশ..এই আ..ক…
আর কিছুই বলতে পারল না আরহাম,হলরুমের শেষ মাথায় চোখ পড়তেই চুপ হয়ে গেল।কনে পক্ষের ডান্স প্র‍্যাক্টিস হচ্ছে ওখানে আর তাদের যে লিড দিচ্ছে সে আর অন্য কেউ না,শ্রেয়া।মিষ্টি কালারের লং লেহেঙ্গা পরা শ্রেয়াকে দেখে আর কিছুই বলতে পারল না,নিজের অজান্তেই ওর মাঝে হারিয়ে গেল…
Chori chori chupke se
Ayega woh
Ake tujhe le jayega
Yehi jeevan hai apna
Yehi to woh sapna
Maine dekha tune drkha
Hum sabne dekha
Yea sapna na tute
Na ruthe tera raanjhna
Chori chori chupke se
Ayega woh
Ake tujhe le jayega
Kitne janmon ka yea mel hai
Shaadi kismaat ka ek khel hai
Asi kismaat na fute
Na ruthe tera raanjhna
Chori chori chupke se
Ayega woh
Ake tujhe le jayega…
মিউজিক সিস্টেমে গানটা বেজে যাচ্ছে আর তার সাথে তাল মিলিয়ে মেয়েরা ডান্স প্র‍্যাক্টিস করে যাচ্ছে।কিন্তু আরহামের চোখ একজনের উপরেই আটকে আছে,সে হচ্ছে শ্রেয়া।ওর প্রতিটা স্টেপে মনে হচ্ছে যেন হাওয়ার সাথে মিশে যাচ্ছে আর আরহাম হারিয়ে যাচ্ছে ওর মাঝে…
– কি রে,কি দেখছিস?
(আকাশের কথা শুনে চমকে উঠল আরহাম)
– না মানে আমি আসলে…
– কোনটাকে পছন্দ হয়েছে বলে ফেল কুইক
– মা..ম..মানে!কি..ক..কি যা-তা…
– আর নাটক করতে হবে না,একবার বলেতো দেখ,সব সেট করে দিব প্রমিস…
– আরে ইয়ার,তেমন কিছু না,এই এমনি…
– এই লাস্ট চান্স দিচ্ছি,এমন সুযোগ আর কিন্তু পাবি না…
– আরে ভাই ছাড়তো
– ধরলামটা কখন যে ছাড়ব?
– উফ!ওই শালা,যা তো
– যাব!কিন্তু কেন?আমারতো এখানে থাকতেই বেশি ভালো লাগছে
– ঠিক আছে তুই তাহলে এখানেই থাক,আমিই চলে যাচ্ছি
– আরে আরে দোস্ত…শোন না…
– কি?
– আর একবার আমার কথাটা ভাল করে ভেবে দেখ,এই সুযোগ কিন্তু আর পাবি না…
– আক্কাশ…
– কি?
– তুই থাক তোর চিন্তা নিয়ে,আমি গেলাম বাই…
– আরে আরহাম…যাহ চলেই গেল?তুই স্বীকার কর বা না কর,প্রেমতো তোর জীবনে এসে গেছে।এখন শুধু তোর সেই ফাঁদে আটকা পড়ার অপেক্ষা…

(রাতে)
ডিনারের পর যে যার মত আড্ডা দিচ্ছে আর আমি কটেজের ছাদের এক কোণে বসে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি,তখনই শ্রুতি আপু ছুটতে ছুটতে ওখানে চলে আসলো
– শ্রেয়া…শ্রেয়া…শ্রেয়া…
– কি রে আপু?
– তুই জানিস না আমি আজকে কত্ত খুশি।তুই জানিস না আজকে তুই আমাকে কি দিয়েছিস..
– আ..আমি আবার কি করলাম?
– তোর ডান্সটা সেই জোশ হইছে।আমার কতদিনের শখ ছিল নিজের বিয়েতে মন খুলে ডান্স করব!আজ তুই আমার সেই ইচ্ছে পূরণ করেছিস।You know what you are the best sister in the world…লাভ ইউ পিচ্চি…
– লাভ ইউ টু আপু…
– শ্রুতি..একটু এদিকে আসবে?
(আকাশের কণ্ঠ শুনে একবার ওদিকে তাকালো শ্রুতি)
– তুই কি এখানেই থাকবি নাকি আমার সাথে যাবি?
– কেন আপু?
– একবার ওদিকে তাকিয়ে দেখ
(পেছন ফিরতেই আকাশ ভাইয়াকে দেখতে পেলাম)
– আপু তুই যা,আমি এখানেই ঠিক আছি
– আচ্ছা বাই
– অল দ্য বেস্ট
মুচকি হাসি দিয়ে শ্রুতি আপু আকাশ ভাইয়ার সাথে চলে গেল,আমি আগের মতই আকাশ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।কখন যে আরহাম পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারিনি
– আপনি কি সবসময়ই এমন একা থাকতে পছন্দ করেন?
– (চুপ)
– ও হ্যালো…মিস শ্রেয়া…শুনতে পাচ্ছেন?
– (চুপ)
– (কি আশ্চর্য!এই মেয়ে নিজেকে ভাবেটা কি?)এই যে মিস,আপনি কি কানে শুনতে পান না নাকি?প্রবলেমটা কি আপনার?
– একবার উনারর দিকে তাকালাম তারপর আবারও আকাশ দেখায় মনোযোগ দিলাম
– মেজাজটা এবার খুব খারাপ হয়ে গেল,আজবতো এই মেয়ে দেখি আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না!সবকিছুর একটা লিমিটেশন আছে,আমাকে ভাব দেখানো!দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা…
(উনি এবার একেবারে আমারর সামনে এসে দাঁড়ালেন)
– এই যে মিস,আপনার প্রবলেমটা কি?আপনার সাথে যখনই কথা বলার চেষ্টা করি আপনি আমাকে এ্যাভয়েড করে যান।এত ভাব নেয়ার কি আছে?কি ভাবেন নিজেকে,বিশ্বসুন্দরী?নেহায়েত আপনি ভাবীর ছোটবোন তাই একটু আধটু আলাপ করার চেষ্টা করছিলাম,নাহলে আপনার মত অহংকারী,দেমাগি মেয়ের সাথে কথা বলতে আমার বয়েই গেছে…

আরহাম রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল।পুরো ঘটনাতে আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছি।আমি কখনই ইচ্ছে করে কাউকে কষ্ট দেউ না তবুও সবাই কেন জানি আমাকে শুধু শুধু ভুল বোঝে…
– শ্রেয়া…কি হয়েছে তোর?তোকে এমন লাগছে কেন?
(ভাইয়াকে দেখে নিজেকে সামলে নিলাম)
– মন খারাপ?
– কই নাতো
– তাহলে তোকে এমন লাগছে কেন?
– কেমন লাগছে?
– কি হয়েছে পিচ্চি?কেউ তোকে কিছু বলেছে?একবার শুধু তার নামটা বল আমি তাকে উচিত শিক্ষা দিব প্রমিস।কি রে কথা বলছিস না কেন?
– বললামতো আমি একদম ঠিক আছি,কেউ কিছু বলেনি
– কি রে,আমাকেও বলা যাবে না?
– (চুপ)
– আমাকে বলবি না?
– (চুপ)
– আচ্ছা ঠিক আছে,তোকে এখন কিছু বলতে হবে না।পরে যখন ইচ্ছে হবে তখন বলিস ঠিক আছে?
– হুম
ভাইয়া এবার আমাকে পাশে বসিয়ে হাত দুটো শক্ত করে ধরলো।আমি ওর কাঁধে মাথা রেখে দূরে তাকিয়ে আছি আর ভাইয়া আমারর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,সেই ছোটবেলা থেকেই আমার মন খারাপ দেখলে ভাইয়া এই কাজটাই করে সবসময়…
– (মনে মনে)জানিনা তোর আজকে কি হয়েছে,তোর এই মন খারাপের কারণটা কে,তবে যেই হোক না কেন সে অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছে।হে আল্লাহ,তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া খুব তাড়াতাড়ি আমার এই পিচ্চি বোনটার জন্য এমন একজনকে পাঠাও যে ওকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসবে,ওর মনের কথাটা বলার আগেই বুঝে নেবে,সবসময় বুকে আগলে রাখবে।আমার ভাগের সবটুকু সুখ তুমি শ্রেয়াকে দিয়ে দাও আমিন…
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here