ভালোবাসার_হাতছানি পর্ব-০৫
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
আজ সকালে ঘুম ভাঙতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেল,ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই লাফ দিয়ে উঠে বসলাম,সকাল আটটা!হায় হায় এত বেলা হয়ে গেছে!ইশ,সবাই কি ভাববে?
দৌঁড় দিলাম ওয়াশরুমের দিকে,বেসিনের সামনে দাঁড়াতেই থমকে গেলাম,ওয়ালের সাথে ছোট্ট একটা চিরকুট সাঁটানো আছে,
“টেনশন নিও না,ভাবিকে অগে থেকেই সব বলে দিয়েছি So just chill.রাতে ফিরতে দেরি হবে সো ওয়েট করার দরকার নেই”
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে আসতেই আরেকটা চিরকুট চোখে পড়লো,
“আলমারি আর ওয়্যারড্রোবে তোমার জন্য জায়গা করে রাখলাম,তোমার মত করে সাজিয়ে নিও।আর রুমের বেডশিট,পর্দা বা ইন্টার্নাল ডিজাইন চেঞ্জ করতে চাইলে ভাবিকে বলবে,সব ব্যবস্থা করে দেবে”
– নক নক..নক নক…ভেতরে আসবো?
– আরে ভাবি আপনি?বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন,ভেতরে আসুন না…
– উঠে গেছো দেখছি,ভালোই হলো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো,ব্রেকফাস্ট ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে
– ব্রেকফাস্ট!সরি ভাবি
– সরি কেন?
– আসলে কাল রাতে…
– রাতে কি?ছোট সাহেব বুঝি সারারাত ঘুমাতো দেয় নি…
– ভাবির কথা শুনে বিষম লেগে গেল
– আরে আরে রিল্যাক্স,আরে বাবা আমিতো এমনিই ফাযলামি করছিলাম।এই নাও ধরো পানি খাও
– এক নিঃশ্বাসে গ্লাসের পানিটুকু শেষ করে দিলাম
– নিচে এসো সবাই ওয়েট করছে
– কিন্তু…
– ছোট সাহেব বার বার বলে গেছে তোমার খেয়াল রাখতে।এখন যদি তুমি টাইমলি খাওয়া দাওয়া না করো তাহলেতো জনাব আবার আমার বারোটা বাজাবে
– উফ!অসহ্য,উনার কি মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?ভাবি যে কি মনে করলো…
।
এর মাঝে কেটে গেছে দু দুটো মাস,এ বাড়িতে এসেছি মাত্র দুমাসের মত হলো,এর মধ্যেই সবাই কতটা আপন করে নিয়েছে!সবাই বলতে বাড়িতে মানুষতো মাত্র কয়েকজনই,বাবাতো আমাকে একদম নিজের মেয়েই মনে করেন,চাওয়ার আগেই আমার চোখের সামনে সবকিছু হাজির করে ফেলেন।
সায়নী ভাবী,এ বাড়িতে আমার সুখ দুঃখের একমাত্র সাথী,তার সাথে আমার সম্পর্কটা অনেকটা বড় বোনের মতোই যেটা কখনোই শ্রুতি আপুর থেকে আমি এক্সপেক্টও করতে পারিনি।আমার ভালোলাগা,মন্দলাগা,সুখ দুঃখের সব গল্প আমি মন খুলে একমাত্র উনাকেই বলতে পারি।
মাহিন,এ বাড়ির সবচেয়ে পিচ্চি আর সবার আদরের সদস্য,সেতো আমার এই রংবিহীন সাদা-কালো জীবনে ছোট্ট একটা রংধনু হয়ে ধরা দিয়েছে,যার সাথে থাকলে আমি ভুলেই যাই যে আমার জীবনেও কোন দুঃখ কষ্ট আছে।আর মাহিন?সেতো তার ছোট আম্মু বলতে পাগল,আমার সারাটা দিনতো শুধু ওর সাথে খেলতে খেলতে আর ওর অদ্ভূত অদ্ভূত সব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই কেটে যায়।মাঝে মাঝেই মনে হয় ও যদি এ বাড়িতে না থাকতো তাহলে হয়তো আমি দম বন্ধ হয়েই মরে যেতাম…
সবার সাথে একেবারে মিলেমিশে গেলেও দূরত্ব রয়ে গেছে আমার আর উনার মানে আমার স্বামী আরহামের মধ্যে।অবশ্য এক্ষেত্রে উনার কোন দোষ নেই,উনি সেই প্রথমদিন থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু আমি…সব সমস্যা আমার,আসলে আমিই উনাকে মেনে নিতে পারছি না।কি করে পারবো?আকাশের স্মৃতি যে এখনও আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে,কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছি না তাই…
আকাশের কথা মনে পড়তেই আবারও হারিয়ে গেলাম অতীত স্মৃতিতে…
আকাশ আর আমার বিয়ের ঠিক যেদিন এক মাস,সেদিনই আমাদের বিয়ের অফিসিয়াল রিসিপশনের ব্যবস্থা করা হলো।দুই ফ্যামিলির সম্মতিতে ডিসিশন নেওয়া হলো ঐদিনই আমাকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে ও বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।ব্যাপারটাতে অবশ্য আমাদের দুজনের কারোরই কোন আপত্তি ছিল না,আমার বরং বেশ মজাই লাগছিল।আসলে বিয়েটাতো হঠাৎ করেই হয়ে গিয়েছিল তাই বিয়ের এক্সাইটমেন্ট জিনিসটা যে কি তখন বুঝতেই পারিনি,তাই এইবারে তা পুরোপুরি উপভোগ করব।আর তাছাড়া বেশিরভাগ মেয়েরই ভয় থাকে বর আর তার নতুন ফ্যামিলি কেমন হবে সেটা নিয়ে,আমার ক্ষেত্রে সেই টেনশনও নেই কারণ এই একমাসে আমি অলমোস্ট সবকিছুই জেনে গেছি।
এই একমাসে আকাশ একবারও আমার সাথে দেখা করেনি,ওর ওই এক কথা যেদিন ফরমালি আমাকে ওর বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে সেদিনই দেখবে তার আগে না।এ ব্যাপারে আম্মু আব্বু একটু অসন্তুষ্ট হলেও আমি কিন্তু অনেক খুশি হয়েছি কারণ আমারওতো উনাকে মেনে নেওয়ার জন্য কিছুটা টাইম দরকার তাইনা?
যাই হোক দেখা না করলেও আমাদের মধ্যে কথা কিন্তু ঠিকই হতো,রোজ রাতে ঘুমানোর আগে অন্তত এক ঘণ্টা করে কথা বলতে হবে তারপর ঘুম,এটাই ছিল জনাবের প্রথম আদেশ।প্রথম প্রথম একটু আনইজি ফিল করলেও আস্তে আস্তে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসছিল,উনার প্রতি ধীরে ধীরে এক ধরণের টান অনুভব করছিলাম।মোটকথা মানুষ লাভ ম্যারেজ করে বাট আমরা করছিলাম লাভ আফটার ম্যারেজ!
এখন সন্ধ্যারাত,আমি ছাদে বসে আকাশের তারাগুলো গোনার ব্যর্থ চেষ্টা করছি।সেই ছোটবেলা থেকেই আমার এই একটা অভ্যাস,রাতের তারাভরা আকাশ দেখলেই তারা গুনতে বসে যাই।আজকের চাঁদের আলোটাও মনে হচ্ছে একটু বেশিই উজ্জ্বল।মেহেদী পরা হাতদুটো চাঁদের আবছা আলোতে মেলে ধরলাম,অদ্ভূত রকমের সুন্দর লাগছে।আকাশের ইচ্ছে ছিল আমাকে ভাত ভর্তি মেহেদী পরে দেখবে তাই পরতে হয়েছে,তাছাড়া আমার আবার এসব একদমই পছন্দ না।ফোনটা হাতে তুলে নিলাম,কোন রকমে হাতের কয়েকটা ছবি তুলেই আকাশকে পাঠিয়ে দিলাম যদিও জানি ও এখন কিছুই দেখতে পারবে না কারণ ওতো এখন প্লেনে,একটা বিজনেস ডিল করতে নিউইয়র্ক গিয়েছিল কয়েকদিন আগে।রাত পেরিয়ে সকাল হলেই রিসিপশন তাই ডিলটা কোনরকমে শেষ করেই ফিরে আসছে।
আজকে ঘড়ির কাঁটাটা যেন চলতেই চাইছে না,কখন যে সকাল হবে আর…অপেক্ষার প্রহরটা যেন আরও লম্বা হচ্ছে,কখন যে শেষ হবে এখন তারই অপেক্ষা….
।
– শ্রেয়া…শ্রেয়া…হ্যালো…শুনতে পাচ্ছো?
– হঠাৎ কারো কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলাম,পেছন ফিরে দেখি আরহাম।আ..আপনি!ক..কখন আসলেন?আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলেন যে…
– Thank god,you are finally back
– মানে?
– মানে আমি এসেছি অনেক্ষণ আগে,অফিসে তেমন কাজ ছিল না তাই চলে আসলাম,তোমাকে অনেক্ষণ ধরেই ডাকছি বাট তুমিতো অন্যজগতে ছিলে তাই…
– সরি আসলে আমি…
– ইটস ওকে,কফি?
– হুম খাওয়া যায়
– জাস্ট এক মিনিট
– উনি ভেতরে চলে গেলেন,আমি আবারও প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেলাম
– একটুও চেঞ্জ হওনি দেখছি,এখনও আগের মতই আছো
– জ্বি?
– না মানে আগেরবার যখন দেখেছিলাম, একা একা কোন নিরিবিলি জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে,এখনও তাই
– ওহ
– তোমার কফি
– থ্যাংকস
– পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম।ধরো…
– কি এটা?
– খুলে দেখো বাট প্রমিজ মি রাগ করতে পারবে না
– এ..এটাতো…
– আমাদের হানিমুন প্যাকেজ,এভাবে তাকাচ্ছো কেন?বাবা দিয়েছে,আমার কোন দোষ নেই
– Sorry but I think I am not prepared yet so…
– একটা রিকুয়েষ্ট করব?
– দেখুন আপনি…
– দেখো শ্রেয়া,আমিতো বলেছি তোমার পারমিশন ছাড়া তোমাকে স্পর্শও করব না তাইনা?
– হ্যাঁ কিন্তু…
– Trust me,I can control myself.তোমার যত সময় লাগে তুমি নাও আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু এখানে আমার ফ্যামিলির প্রশ্ন।আমি চাইনা যে আমাদের মধ্যে যা কিছুই চলছে তা আর কেউ জানুক সো প্লিজ…
– কি বলব বুঝতে পারছি না,উনিতো ঠিকই বলেছেন আমিই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছি
– এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে তাই বাবা চান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব…উনি অনেক কষ্ট পাবেন যদি আমরা না যাই So please…
– হুম
– Don’t worry I will keep my promise as usual
।
(কয়েকদিন পর)
শেষমেশ আমরা হানিমুনে এসেছি,বাবা চাইছিলেন আমরা দেশের বাইরে কোথাও যাই কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল না তাই আরহাম আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে উনি আমাকে এখানেই কেন নিয়ে আসলেন!
– শ্রেয়া…
– জ্বি?
– আমি একটু বাইরে যাচ্ছি,তুমি কি যাবে নাকি?
– না অনেক টায়ার্ড লাগছে সো…
– It’s okey take care of yourself
(আরহামের পয়েন্ট অফ ভিউ)
আমি এখন যেই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি,তার সাথে আমার অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।শ্রেয়াকে প্রথম যখন দেখেছিলান,তখন ও ঠিক এই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে ছিল।হ্যাঁ আমরা আমাদের হানিমুনের জন্য এসেছি শেরপুরের মহুয়া রিসোর্টে,কারণটাও বেশ পরিষ্কার ওকে আমি এখানেই প্রথম দেখেছিলাম।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এখানে আসার ডিসিশনটা পুরোপুরি ঠিক হয়নি,কারণ আসার পর থেকেই শ্রেয়া কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে।ও বরাবরই চুপচাপ কিন্তু এখন আরও বেশি শান্ত শিষ্ট বিহেভ করছে,হয়তো আকাশকে মিস করছে।আসলে আকাশ আর ওর বিয়েটাতো এই রিসোর্টেই হয়েছিল!
আমার মনটাও সেদিন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গিয়েছিল,ওকে বধূবেশে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি।বুকের বাঁ পাশে খুব সূক্ষ্ম একটা ব্যথা অনুভব করছিলাম,বুঝতে পারছিলাম আমি ওকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি!বিয়েটা আর নিজ চোখে দেখার সাহস হয়নি আমার,তাই কাউকে কিছু না বলেক চুপি চুপি পালিয়ে এসেছিলাম ওখান থেকে।তারপর হুট করেই চলে গেলাম সিঙ্গাপুরে,নিজে যেটা কখনোই চাইতাম না সেই কাজটাই স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিলাম।বাবা অনেকদিন থেকেই বিজনেসটা দেশের বাইরে এক্সটেণ্ড করার প্ল্যানিং করছিলেন,আমি নিজ থেকে সেটার সব দ্বায়িত্ব বুঝে নিলাম।ফটোগ্রাফি ছিল আমার প্যাশন কিন্তু সেদিনের পর থেকে ভুলেও ক্যামেরায় হাত দেইনি,প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত করে ফেললাম নিজেকে যেন নিজেকে ব্যস্ত রেখে সবকিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা।অনেকটা সফলও হয়ে গিয়েছিলাম বলা যায়,শ্রেয়ার সাথে সাথে নিজেকেও প্রায় ভুলতে বসেছিলাম কিন্তু এই কয়মাসের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিল চিটাগাংয়ের সেদিনের বিজনেস ট্যুর…
।
সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেছি কয়েকদিন হলো,সেদিন সন্ধ্যায় হঠাৎই বাবা বললেন সকালেই চিটাগাং রওনা দিতে হবে,একটা নাকি গুরুত্বপূর্ণ ডিল হ্যাণ্ডেল করতে হবে।কি আর করা,বাবার আদেশ বলে কথা মানতেতো হবেই।আর তাছাড়া আমিতো আর আগের আমি নেই,এই কয়মাসে একদম বদলে গেছি তাই অবাধ্য হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
যাই হোক বিকেলের মধ্যেই ডিলটা বেশ ভালোভাবেই শেষ হয়ে গেল,ফিরতি ফ্লাইট আবার সেই রাত বারোটায়।হাতে খুব বেশি সময় নেই তাই ভাবলাম আশপাশেই কোথাও থেকে একটু ঘুরে আসি।কিন্তু ঠিক কোথায় যাওয়া যায় বুঝে উঠতে পারছিলাম না,হঠাৎই হোটেলের লবিতে দেখা হয়ে গেল আবিরের সাথে।আবির আর আমি ভার্সিটিতে ব্যাচমেট ছিলাম,কথায় কথায় জানতে পারলাম ও এখানকার স্থানীয় এক শিপিয়ার্ডে কাজ করছে।মনে পড়ে গেল চিটাগাং সি-পোর্টের কথা,অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল ওখানে যাওয়ার কিন্তু কখনও সময় বা সুযোগ কোনটাই হয়ে ওঠেনি।আবিরকে বলতেই এক কথায় রাজি হয়ে গেল,ব্যাস দুই বন্ধু মিলে চললাম সি-পোর্টের দিকে।
আবির আমাকে পুরো জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখালো,এক্সপোর্ট ইমপোর্টের যত ফরমালিটিজ আছে যতটা সম্ভব ব্রিফ করলো তারপর আমরা চলে আসলাম ওর চেম্বারে।আবির আমাকে বসিয়ে রেখে একটু বাইরে গেল
খুব সিমসাম একটা চেম্বার,খুব বেশি জাকজমকের ছোঁয়া নেই কিন্তু তার বদলে যেটা আছে সেটা নামী দামী কোন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের পক্ষেও কোনভাবেই করা সম্ভব না।রুমটার উত্তর আর পূর্বপাশে ছোট্ট দুটো জানালা কিন্তু অদ্ভূত ব্যপার হচ্ছে দুটো জানালার ভিউ সম্পূর্ণ বিপরীত!উত্তরের জানালা দিয়ে পুরো সমুদ্র বন্দর আর সাগরের উত্তাল ঢেউ দেখা গেলেও পূর্বের জানালা দিয়ে তার ছিটেফোঁটাও টের পাওয়া যায় না,তার বদলে দেখা যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু নিচু পাহাড় আর টিলা।কি আশ্চর্য তাইনা?নিজের অজান্তেই কখন যে উত্তরের জানালার ধারে এসে দাঁড়িয়েছি খেয়ালই করিনি!হঠাৎ ডকইয়ার্ডের এক কোণে খুব পরিচিত একটা মুখ দেখে চমকে উঠলাম,এতদিন পরে হলেও ওকে চিনতে আমার বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি।সেই মায়াভরা মুখ,টানা টানা চোখ, তাতে ফুটে উঠা উদাস চাহনি,বাতাসে এলোমেলোভাবে উড়তে থাকা দীঘল কালো চুল সবকিছু ঠিক আগের মতই আছে,শুধু বদলে গেছে একটা জিনিস,গোলাপী ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মুচকি হাসির রেখা যেটা শুধুমাত্র ও একা থাকলেই ফুটে উঠতো,সেটা আর দেখা যাচ্ছে না।
একটু ভালো করে খেয়াল করতেই বুঝলাম শুধু হাসিটাই না আরও অনেককিছুই বদলে গেছে।চোখের চাহনিটা যেন একটু বেশিই উদাস হয়ে গেছে যেন কোন কিছু হারিয়ে ফেলার শোক প্রকাশ করছে,চুলগুলোও প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই এলোমেলো,পুরো চেহারায় স্পষ্ট মলিনতার ছাপ।এতদিন পর শ্রেয়াকে দেখব কখনও ভাবিনি কিন্তু বুঝতে পারছি না ওর এই অবস্থা কেন!পুরনো ক্ষতটা যেন আরও গভীর হয়ে গেল,বুকের বাঁপাশে তীব্র একটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছি না…
চলবে…
#নোটঃ সব কনফিউশান দূর হবে,শুধু একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।নাইস নেক্সট বাদে গঠনমূলক মন্তব্য করলে খুশি হব…