ভালোবাসার_হাতছানি পর্ব-০৬

0
1981

ভালোবাসার_হাতছানি পর্ব-০৬
#লেখিকা-সানজিদা সেতু

– এই নে ধর,তোর ফেভারিট এক্সপ্রেসো কফি
– (চুপ)
– কি রে ধর…কি আশ্চর্য!আরহাম..এই আরহাম…
– (চমকে উঠে)হ্যাঁ!কিছু বলছিস?
– কফি
– থ্যাংকস
– তা জনাব,এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছিলেন জানতে পারি?
– (চুপ)
– কি রে,আবার কোথায় হারিয়ে গেলি?প্রবলেমটা কি?
– প্রবলেম!
– Yes problem,Now will you kindly disclose the secret sir?
– Secret?ও হ্যাঁ আচ্ছা ওটা শ্রেয়া না?
– কোনটা?ও হ্যাঁ শ্রেয়া,কেন বলতো?
– কিন্তু ও এখানে কি করছে?
– কেন তুই জানিস না,এই শিপইয়ার্ডটার মালিক কে?
– আশেপাশে তাকাতেই শিপিং এজেন্সিটার নাম দেখতে পেলাম,”খান শিপিং এজেন্সি”
– তুই কি এতক্ষণ ওকেই দেখছিলি?
– আচ্ছা ওকে এমন লাগছে কেন?ওই শালা আকাশটা কি ঠিকমত ওর খেয়াল রাখে না নাকি?
– (অবাক হয়ে)কেন তুই কিছু জানিস না!
– কি জানব?কেন কোনকিছু হয়েছে নাকি?
– I can’t believe this,কোন জগতে ছিলি তুই!
– মানে?
– He is dead
– What!!
– আকাশ আর আমাদের মাঝে নেই
– আমার মাথায় আর কিছুই ঢুকছে না,একমনে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে আছি,এতক্ষণ খুঁজে না পাওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর হঠাৎ করেই সব ক্লিয়ার হয়ে গেল
– মেয়েটার দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না।তুইতো জানিস আগে থেকেই ও একটু চুপচাপই ছিল,আকাশের চলে যাওয়ার পর থেকে যেন একেবারেই বোবা হয়ে গেছে
– এসব কি করে হলো?
– বিয়ের ঠিক এক মাসের মাথায় ওদের রিসিপশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়,রিসিপশন বলতে ফরমালি আবারও বিয়েটা অ্যারেঞ্জ করতে চাইছিল দুই ফ্যামিলি।আকাশ তখন দেশের বাইরে,একটা ডিল সাইন করতে নিউইয়র্ক গেছে।কথা ছিল বিয়ের আগের রাতেই দেশে ফেরত আসবে কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি,হঠাৎ করেই খবর আসলো বিমান দূর্ঘটনায় ও…
পুরো ঘটনা শুনে আমি নির্বাক হয়ে গেছি,এতকিছু হয়ে গেছে অথচ আমি কিছুই জানিনা!আসলে দোষটাতো আমারই,শ্রেয়াকে ভুলতেই সবার থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম।সেদিনের পর থেকে এই পাঁচ মাসে আকাশ বা আমার অন্য কোন ফ্রেণ্ডের সাথেও কোন রকম যোগাযোগ রাখিনি,বাড়িতেও কারো সাথে তেমন কথা বলতাম না তাই কোন ভাবেই খবরটা আমার কানে আসে নি।নিজেকে খুব অপরাধী অপরাধী লাগছে,কেন যে ওর কোন খোঁজ খবর রাখলাম না…

সেদিন চিটাগাং থেকে ফিরেই ভাবীকে সব খুলে বললাম,কয়েকদিনের মধ্যেই ভাবী বাবাকে রাজি করিয়ে ফেললো কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধলো ও বাড়িতে,শ্রেয়া বা ওর বাবা ইকবাল আঙ্কেল কেউই এই বিয়েতে রাজি না।কি করব বুঝতে পারছিলাম না,তখনই আশার আলো হয়ে দেখা দিল শ্রাবণ।সেদিন অফিসে নিজের চেম্বারে বসে সাত-পাঁচ ভাবছিলাম তখনই রিসিপশন থেকে ইন্টারকমে বললো আমার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে,নামটা শুনে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম,ইশতিহার ইকবাল শ্রাবণ!
– নক নক,আসতে পারি?
– ও শ্রাবণ,এসো এসো ভেতরে এসো
– অনেকটা দ্বিধা আর সঙ্কোচ নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম,এখানে আসার জন্যও আমাকে আকাশ পাতাল চিন্তা করতে হয়েছে আর এখন মনে হচ্ছে কেন আসলাম?কি বলব কিছুই বুঝছি না
– তারপর,কি অবস্থা?কেমন আছো?
– জ্বি ভালো আপনি?
– এবার কিন্তু তুমিই ফরমালিটি দেখাচ্ছো,Just cool down and take your time.আমার কোন তাড়া নেই তুমি সময় নাও তারপর ঠাণ্ডা মাথায় বল কি বলবে
– শ্রেয়ার ব্যাপারে কি তুমি সত্যিই সিরিয়াস নাকি ওর এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে ওকে উপহাস করছো?
– (অবাক হয়ে)উপহাস!দেখো শ্রাবণ,তুমিতো আমাকে চিনো।খব ভালোভাবে না জানলেই ওই কয়দিনে অন্তত এটাতো বুঝেছো যে এমন একটা সিরিয়াস ইস্যুতে আমি কোন রকম ফাযলামি করব না
– হুম
– I really love Shreya.প্রথম দেখাতেই ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু সেটা ওকে বলার আগেই আকাশ আর ওর…ওদের বিয়েটা নিজ চোখে দেখার সাহস আমার হয়নি তাই সবার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম।আমার দুর্ভাগ্য আমি এতদিন ওকে ভুলতে নিজের থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম নাহলে হয়তো ওকে এতদিন এত কষ্ট পেতে হত না
– তুমি সত্যি বলছো?
– বিশ্বাস কর,আমি ওকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি।আমি জানি তুমি ওকে অনেক ভালোবাসো,কথা দিচ্ছি তুমি ওকে যতটা ভালোবাসো তার থেকে কোন অংশে কমতি হবে না আমার ভালোবাসার।আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি ওর সব দুঃখ,সব কষ্টের স্মৃতি ভুলিয়ে দিব
– সেটা তুমি চাইলেও পারবে না
– মানে?
– আমার যতদূর মনে পড়ে,তুমিই বোধহয় ওকে অহংকারী,দেমাগী মেয়ে বলেছিলে শুধুমাত্র ও তোমার সাথে কথা বলছিল না,এড়িয়ে চলছিল তাই
– হ্যাঁ কিন্তু…
– ও কিন্তু আগে এমন ছিল না,ছোটবেলায় এত ডানপিটে আর চঞ্চল ছিল যে সবাই ওর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে যেত।কিন্তু ছোটবেলার ওই আঘাতটা ও নিতে পারে নি,তাই হয়তো ও নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে ফেলেছে আর তারপর আকাশের মৃত্যু আমার বোনটাকে যেন একেবারেই বোবা করে দিয়েছে
– আঘাত!কিসের আঘাত?কি হয়েছিল ওর সাথে?আমাকে খুলে বলবে প্লিজ
– শ্রেয়া আসলে আমার নিজের বোন না
– (চমকে উঠে)হোয়াট!কি যা-তা বলছো!
– ও আমার ছোট খালামণির একমাত্র সন্তান।ওর তখন মাত্র ছয় বছরের একটা বাচ্চা,বাবা-মার ম্যারেজ এ্যানিভার্সারিতে এ্যাটেণ্ড করতে খালামণিরা পুরো ফ্যামিলি আমাদের বাড়ি আসছিল কিন্তু পৌঁছানোর আগেই কার অ্যাক্সিডেন্টে…ওর বাবা-মা দুজনেই ঘটনাস্থলে মারা যান আর শ্রেয়াকে মারাত্মক আহত অবস্থায় হসপিটালে এ্যাডমিট করে কয়েকজন পথচারী
– আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি,কি বলব বুঝতে পারছি না
– মাত্র ছয় বছরের একটা বাচ্চা,নিজের চোখের সামনে বাবা-মায়ের এই করুণ পরিণতি হতে দেখেছে।এই আঘাতটা যে কত বড় সেটা হয়তো আমরা কল্পনাও করতে পারব না
– এর জন্যই কি ও…
– পুরোপুরি না তবে অনেকটা রিলেটেড বলা যায়
– মানে?
– সেদিন আমরা হসপিটালে গিয়ে জানতে পারি শ্রেয়ার এই অ্যাক্সিডেন্টের ব্যাপারে কিছুই মনে নেই,ও সবকিছু ভুলে গেছে এমনকি নিজের বাবা মাকেও।ওকে আর এই দুঃসহ স্মৃতিটা বহন করতে হবে না ভেবে শুরুতে আমরা সবাই একটু খুশি হলেও কিছুদিন পরেই বুঝতে পারলাম ও বদলে যাচ্ছে।ও স্মৃতিগুলোর পিছু ছেড়ে দিলেও স্মৃতিরা কিন্তু ওর পিছু ছাড়েনি,সবসময় ওকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।পরে জানতে পারলাম ও নাকি মাঝে মাঝেই স্বপ্নে ওই অ্যাক্সিডেন্টটা ভাসা ভাসাভাবে দেখতে পায় কিন্তু মানুষগুলোকে ঠিক চিনতে পারে না।এটাই ওর সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো,যখনই একা থাকে ওর স্বপ্নের মানে আর মানুষগুলো কারা এসব হাজারো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করে আর এভাবেই আমার হাসি খুশি বোনটা…
– আমার মাথায় কিছুই আসছে না,এখন কি আমার কিছু বলা উচিত?
– শ্রেয়াকে আমরা কেউ কখনও জানতে দেইনি যে ও আমাদের বোন না,কখনো কাউকে জানতে দিতামও না কিন্তু আমার মনে হলো তোমার সত্যিটা জানা দরকার
-(চুপ)
– আমার একটা কথা রাখবে?
– হুম
– ওকে কখনও সত্যিটা জানতে দিও না আর বোনটা আমার সহজে কাঁদে না কিন্তু একবার কান্না শুরু করলে সহজে আটকাতে পারে না,তখন খুব কষ্ট পায়।তাই যখনই ও কোন কারনে কান্না করবে,তখন ওকে একা ছাড়বে না প্লিজ।ওকে স্বান্তনা দেওয়ার দরকার নেই কিন্তু যতক্ষণ ও কাঁদবে ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে ওকে বুকে জড়িয়ে রাখবে প্লিজ…
– শ্রাবণ আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে গেল।ও কি বলতে চাইলো বুঝতে পারছি না,মাথাটা কাজ করছে না কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে…

শেষ পর্যন্ত শ্রেয়ার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই বিয়েটা হয়ে গেল,সেদিন শ্রাবণ গিয়েই ইকবাল আঙ্কেলকে রাজি করিয়ে ফেলেছিল আর ঠিক সপ্তাহ খানেক পরেই আমাদের বিয়েটা হয়ে গেল।শ্রেয়া আমাকে এখনও মেনে নেয় নি,এতসহজে নেবেও না জানি কারণ আমি নাহয় ওকেই ভালোবাসতাম কিন্তু ও তো আর আমাকে ভালোবাসেনি,বেসেছে আকাশকে যাকে ও পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলেছে।আঘাতটা যেহেতু বড় ঠিক হতেও তাই অনেক সময় লাগবে আর আমি সেই সময়টারই অপেক্ষায় আছি…
– শুনছেন?
(শ্রেয়ার কণ্ঠ শুনে সম্বিত ফিরল,অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসলাম)
– কিছু বলবে?
-বলছিলাম আপনার কি কিছু লাগবে?
– ও না,সন্ধ্যা নেমে আসছে তুমি বরং ভেতরে যাও
– জ্বি আচ্ছা,আপনিও ভেতরে আসুন নাহলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে
– হুম
(রাতে)
প্রায় মাঝরাত,পুরো রিসোর্টটাই মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে পড়েছে,জেগে আছি বলতে আমরা দুজন।আমি এখন কটেজের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আছি।এই অন্ধকারে পাহাড় কেন,আকাশের চাঁদ আর তারা ছাড়া অন্য আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না তবুও আমি আকাশের দিকে তাকাচ্ছি না,কেন জানি অন্ধকারটাকে উপভোগ করতেই ভালো লাগছে।একটু শীত শীত লাগছে কিন্তু তবুও ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছে না কারণ ভেতরে গেলেই উনি ঘুমানোর কথা বলবেন আর উনার সাথে এভাবে এক বিছানায়…
– কি ব্যাপার,ঘুমাবে না?রাততো অনেক হল
– (চমকে উঠে)জ্বি?ও হ্যাঁ আসছি
– তাড়াতাড়ি আসো,রাত যত বাড়বে ঠাণ্ডাও কিন্তু বাড়তে থাকবে
– না মানে আসলে আমার ঘুম আসছে না,আপনি বরং ঘুমিয়ে পড়ুন,আমার যখন ঘুমোতে ইচ্ছে করবে তখন নাহয়…
– Okay as your wish.চলে আসলাম,ওর প্রবলেমটা আমি বুঝতে পারছি।আসলে এখানেতো রুমে কোন সোফা নেই,একটামাত্র বেড তাছাড়া আর তেমন কিছুই নেই তাই…
উনি চলে গেলেন আমি আবারও অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে গেলাম।উনি ঠিকই বলেছেন,পাহাড়ের শীতটা একটু অন্যরকম।দিনের বেলা ইভেন সন্ধ্যার দিকেও বেশ গরম গরম ভাব ছিল অথচ রাত বড় বাড়ছে শীতটা যেন বেড়েই চলেছে!প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগছে,একটা চাদর গায়ে জড়াতে পারলে ভাল হতো কিন্তু এখনতো ভেতরে চাদর আনতে যাওয়াও সম্ভব না তাই গায়ের ওড়নাটাই আরও ভালো করে পেঁচিয়ে নিলাম।
হঠাৎ একজোড়া উষ্ণ হাতের ছোঁয়া অনুভব করলাম,হাতদুটো আর কারো না আরহামের।উনি একটা চাদর হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন,আমি ঘুরতেই ভালো করে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন
– আর বেশিক্ষণ বাইরে থেকো না,শীত কিন্তু আরও বাড়বে তখন কিন্তু এই চাদরও কিছু করতে পারবে না।আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে,so good night.আর হ্যাঁ আমি আমার বিছানা করে নিয়েছি,তোমারটা একটু কষ্ট করে তুমিই নাহয় ঠিক করে নিও
– বিছানা ঠিক করে নিয়েছি মানে!বিছানাতো ঠিকই আছে তাহলে…
– হ্যাঁ বিছানাতো আছেই কিন্তু আমিতো আর এত ভাগ্যবান নই যে ঐ বিছানায় আমার…সো…
– মানে!কোথায় ঘুমাবেন আপনি?
– গুড নাইট…
– এই শুনুন,কি আশ্চর্য কথা শেষ না করে চলে যাচ্ছেন কেন?আরে বাবা আমিতো কিছু জানতে চাইছি নাকি…
(উনার পিছু পিছু রুমে গিয়ে ঢুকলাম,ঢুকতেইতো আমার চোখ ছানাবড়া,উনি ফ্লোরে বিছানা করে রেখেছেন!এই শীতের রাতে ফ্লোরে!জাস্ট ইম্পসিবল)
– এসব কি!আপনি কি ফ্লোরে ঘুমাবেন নাকি!
– তাছাড়া আর কি করব?আমার বউতো আমাকে দেখতেই পারেনা তাই…
(এই প্রথম উনার মুখে বউ ডাকটা শুনে কেমন যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে)
– বাজে কথা রাখুন আর চুপচাপ বালিশ নিয়ে উপরে উঠে আসুন
– নো ওয়ে,আমি এখানেই বেশি কমফোর্টেবল
– আপনি কি আসবেন নাকি আমিই ওখানে যাবো?
– এই প্রথম ওকে দেখে আমার বউ বউ লাগছে,এর আগেতো কখনও এভাবে অধিকার খাটায়নি তাই একটু অবাকও লাগছে
– কি হল,আসছেন না কেন?ও হ্যালো,শুনতে পাচ্ছেন?ধ্যাত এইভাবে হবে না,ঠিক আছে আপনি থাকুন ওখানে আমিও নাহয় আজকে ওখানেই ঘুমাবো
– এই না না,তোমাকে আসতে হবে না আমিই আসছি।বিছানা বালিশ নিয়ে উপরে গিয়েই সটান হয়ে শুয়ে পড়লাম,অসাবধানতায় আমার হাত একটু ওর কোমড়ে টাচ হতেই দেখলাম ও লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো
– খুব আনইজি লাগছে,এভাবে উঠে দাঁড়ানো একদমই ঠিক হয়নি।কিন্তু এখন কি করি,আবারও বেলকনির দিকে হাঁটা ধরলাম
– ওদিকে কোথায় যাচ্ছো?
– না মানে ওই এমনি…
– চুপচাপ শুয়ে পড়ো,রাত অনেক হয়েছে
– বললামতো আমার ঘুম আসছে না,আপনি ঘুমান না,আমি একটু পরে ঘুমাবো
– প্রচণ্ড রাগ লাগছে,কনট্রোল করতে পারছি না।কি সমস্যা এই মেয়ের?এই দুই মাসেও কি ও আমাকে একটুও বিশ্বাস করতে পারেনি!আমাকে এতটাই অবিশ্বাস করে যে আমাকে এভয়েড করার জন্য এই শীতের রাতে বাইরে থাকতেও রাজি আছে!
– উনি কিছু বলছেন না দেখে আবারও হাঁটতে লাগলাম
– দাঁড়াও…
– উনার কণ্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালাম।জ্বি?
– উঠে গিয়ে সোজা ওর হাত ধরে ফেললাম,তারপর টেনে ভেতরের দিকে নিয়ে আসলাম
– একি,কি করছেন আপনি?কি আশ্চর্য!এটা কোন ধরনের ভদ্রতা?
– চুপ একদম চুপ
– একেবারে চুপ হয়ে গেলাম,উনাকে এতো রাগ করতে আগে কখনও দেখি নি তাই প্রচণ্ড ভয় লাগছে
– এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার?আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমালে কি আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো?দুইমাস হয়ে গেল আমাদের বিয়ে হয়েছে,এতদিনেও আমাকে বুঝতে পারলে না!আরে বাবা,আমি যদি চাইতাম তাহলে কি এতদিনে তোমার সাথে কিছুই করতে পারতাম না?আমাদের মাঝে কিছু হয়নি কারণ আমি চাইনি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু হোক,আজকেও তার ব্যতিক্রম হবে না।সেটা এক বিছানায় হোক আর আলাদা বিছানায় হোক,It doesn’t really matter to me.তারপরেও যদি তোমার আমার সাথে থাকতে প্রবলেম হয় Then it’s okay তুমি ঘুমাও আমিই নাহয় রাতটা বেলকনিতে কাটিয়ে দিব…
– উনি কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হনহন করে বেরিয়ে গেলেন!আমার এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছি না,উনিতো ভুল কিছু বলেন নি,আমিই মনে হয় একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি কিন্তু….
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here