ভালোবাসার_হাতছানি পর্ব-০৯
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
আজ আকাশের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী,সেই হিসেবে আমার আজকে ওর বাবা-মায়ের সাথে ও বাড়িতে থাকার কথা,আর সবার মত আমারও উচিত ছিল বাবা-মার পাশে থেকে উনাদের সান্ত্বনা দেওয়া আর ওর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া-দরুদ পড়া কিন্তু আমি!আমি এই কক্সবাজারে কি করছি?তাও আবার আরহামের সাথে!নিজের সেকেণ্ড হানিমুনে এসে ওর কাছে কনফেস করার প্ল্যানিং করছি!এতটা সেলফিশ আমি কিভাবে হতে পারলাম?আমার বিশ্বাস হচ্ছে না মাত্র এক বছরের ব্যবধানে আমি আকাশকে ভুলে আরহামের সাথে…ছি!Shame on me.
নাহ কিছুতেই না,আমার জীবনে শুধু একজনেরই জায়গা ছিল আর সে হচ্ছে আকাশ আর কারো জায়গা নেই এখানে।কিন্তু আমি যে আরহামকে…
প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে,দম বন্ধ হয়ে আসছে কি করব বুঝতে পারছি না।ভাবীর দেওয়া প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বসে আছি,এগুলোর সবই ভাবী আর আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে কিনেছিলাম।ভেবেছিলাম আজ রাতেই আরহামকে নিজের মনের কথা খুলে বলব,বলে দিব কতটা ভালোবেসে ফেলেছি উনাকে কিন্তু…
প্যাকেটটা লাগেজের একেবারে তলায় লুকিয়ে রাখলাম,এগুলোর আর কোন দরকার নেই কারণ আরহামকে আমার জীবনে জায়গা দিলে যে আকাশের সাথে অন্যায় করা হবে।
বাইরে কারো পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছি,হয়তো আরহাম ফিরে আসছে।নাহ আর দেরি করা যাবে না,ঝটপট উঠে বিছানায় ঘাপটি মেরে শুয়ে পড়লাম।চোখ বন্ধ করে রাখলেও বুঝতে পারছি কেউ আমার দিকে এগিয়ে আসছে সে কে আমি জানি কিন্তু আজকে অন্তত আমি তার মুখোমুখি হতে চাই না কারণ তাহলে যে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারব না…
– শ্রেয়া…
– (চুপ)
– ঘুমিয়ে পড়েছো?আমিতো ভেবেছিলাম…আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমাও,তোমাকে আর ডিস্টার্ব করছি না…
– কপালে ঠোঁটটা আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েই উনি বেরিয়ে গেলেন,আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম
– হোটেল থেকে বেরিয়ে সোজা সি বীচে চলে আসলাম,মোমবাতি জ্বেলে “I Love You Shreya” লিখে রেখেছিলাম,ভেবেছিলাম আজকে ওকে সারপ্রাইজ দিব কিন্তু বোধহয় আমার ইচ্ছেটা অপূর্ণই থেকে যাবে।গত কয়েক মাসে ওর বিহেভিয়ারে অনেকটাই চেঞ্জ ঘটেছে তাই ভেবেছিলাম হয়তো ও আমার ভালোবাসায় সাড়া দিচ্ছে কিন্তু আজ আমার সেই ধারণা আবারও মিথ্যে প্রমাণ হলো।আমি জানি ও ঘুমোয়নি,শুধুমাত্র আমাকে এভয়েড করতে ঘুমের ভান করে আছে হয়তো আমার ডাকে সাড়া দিতে চায় না তাই…
সবগুলো মোমবাতি একে একে নিভিয়ে দিলাম তারপর আবারও রুমে চলে গেলাম।শ্রেয়া জড়োসড়ো হয়ে ঘুমোচ্ছে,ওর মাথার নিচে একটা হাত দিয়ে আরেক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম
– সেই কখন থেকে শুয়ে শুধু এপাশ ওপাশ করছিলাম,কিছুতেই ঘুম আসছিল না।উনার হাতের স্পর্শ পেতেই কারণটা বুঝতে পারলাম,আসলে এই বদ অভ্যাসটাতো উনিই তৈরি করেছেন।উনার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোটা যে কবে আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে বুঝতেও পারিনি।বরাবরের মত আজকেও উনার বুকে মাথা রাখলাম,উনি আমাকে আরও শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলেন।ঘুমে দুচোখ জড়িয়ে আসছে কিন্তু মাথা থেকে দুশ্চিন্তাগুলো কিছুতেই ঝেড়ে ফেলতে পারছি না।আচ্ছা আমি এমন কেন করছি?একজনের বুকে মাথা রেখে আরেকজনের কথা চিন্তা করছি!কেন করছি এসব?কেন সবকিছু ভুলে সামনে এগোতে পারছি না…
।
(পরদিন)
সকালে ঘুম থেকে উঠে আর আরহামকে দেখতে পেলাম না তার বদলে পেলাম টেবিলের উপরে রেখে যাওয়া একটা চিরকুট,
“আমার মিটিংয়ের সময় হয়ে যাচ্ছে তাই চলে যাচ্ছি।রিসিপশনে বলে গেলাম,তুমি বললেই ব্রেকফাস্ট দিয়ে যাবে।আমার ফিরতে দেরি হবে,তুমি চাইলে সি-বীচটা একবার ঘুরে আসতে পারো।See you at night…”
চিরকুটটা ভাঁজ করে আগের জায়গায় রেখে দিলাম তারপর বেরিয়ে পড়লাম রুম থেকে।অনেকদিন হলো একা একা নিরিবিলিতে হাঁটা হয় না তাই ভাবলাম একটু ঘুরেই আসি না এই আশেপাশেই কোথাও।আমি চিটাগাংয়ের মেয়ে,আমার পুরো ছোটবেলাটাই কেটেছে সমুদ্রের ধারে কিন্তু তবুও সমুদ্র আমাকে ততটা কাছে টানে না যতটা পাহাড় আমাকে টানে।কিন্তু আজকে কেন জানি সি-বীচটাকে খুব ভালো লাগছে।আসলে আজ এখানে ভীড়টা একটু কম তাই হয়তো…
লাবনী পয়েন্ট থেকে হাঁটতে হাঁটতে বেশ দূরেই চলে এসেছি,আশেপাশে এখন শুধু ঝাউগাছের সারি দেখা যাচ্ছে আর এই ঝাউবনের মাঝে মাঝে কিছু কাপলকে দেখা যাচ্ছে যারা নিজেদের রোমান্স নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে কে আসলো গেল সেদিকে খেয়াল করারও কোন সময় ওদের হাতে নেই।যাই হোক আমি আর ওসব নিয়ে মাথা ঘামালাম না,আর একটু এগিয়ে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে বসে পড়লাম।এখান থেকে সমুদ্রের গর্জনটা বোধহয় একটু বেশিই পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে।চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বাতাসের ঘ্রাণ আর সমুদ্রের গর্জন উপভোগ করতে লাগলাম।হঠাৎ মনে আমার পেছনে কেউ এসে দাঁড়িয়ে আছে,চোখ মেলে তাকালাম কিন্তু কই কাউকেইতো দেখতে পাচ্ছি না তাহলে…হয়তো আমারই মনের ভুল তাই…
।
কেটে গেছে আরও দুটো দিন,অদ্ভূতভাবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি যেখানেই যাচ্ছি কেউ আমাকে ফলো করছে।খুব অদ্ভূত একটা ফিলিংস হচ্ছে,এই অচেনা জায়গায় কেই বা আমাকে ফলো করবে আর কেনই বা করবে?হাজারো প্রশ্ন আসছে মাথায় কিন্তু এসবের একটারও উত্তর আমার জানা নেই।
এই দুদিনে আরহাম নানাভাবে আমার কাছে আসার চেষ্টা করেছে,বিভিন্ন ভাবে আমার কাছে কনফেস করার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি এভয়েড করায় ওর সব চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গেছে।এমনকি গতকাল রাতে ও লাবনী পয়েন্টে মোমবাতি জ্বেলে “I Love You Shreya” লিখেও ছিল আর আমি সেটা দেখেও না দেখার ভান করে শরীর খারাপের অযুহাতে রুমে চলে এসেছিলাম।জানি উনার সাথে আমি অনেক অন্যায় করছি কিন্তু আমিই বা কি করব,সেদিন শপিংমলে আকাশের কাজিনরা আমার আড়ালে যেই কথাগুলো বলছিল তার সবই যে আমি শুনে ফেলেছিলাম।বছর না গড়াতেই আকাশকে ভুলে আরহামকে আপন করে নেওয়ার জন্য ওরা আমার চরিত্র তুলে কথা বলছিল।ওরাই যদি আমার ব্যপারে এত বাঝে চিন্তা করে তাহলে আর সবাই না জানি আমাকে কত খারাপ ভাবে!আচ্ছা আমি কি সত্যিই খুব খারাপ?হয়তো তাই নাহলে…
আজ সকাল থেকেই আরহাম প্রচণ্ড রেগে আছে আমার উপর,অবশ্য তাতে উনার বিন্দুমাত্রও দোষ নেই সব দোষ আমার।আজকেই এখানে আমাদের শেষ রাত,কাল রাতেই আমরা ব্যাক করব তাই আরহাম হয়তো চাইছিল যাওয়ার আগে একটু বেশিই অন্তরঙ্গ হতে,প্রতিটা ছেলেই নিজের বৌয়ের থেকে এটুকুতো চাইবেই কিন্তু আমি…
উনি যখন কাল রাতে আমার কোমড় পেঁচিয়ে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিলেন আমি তখন কিছুই বলিনি।কিন্তু যখন সামনে ঘুরিয়ে আমার ঠোঁটের দখল নিয়ে নিলেন আর কোমড় ছেড়ে শাড়ির বুক বরাবর উঠতে লাগলেন তখন আর স্থির থাকতে পারিনি,নিজের সর্বশক্তি দিয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি।উনি এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে কি রিয়্যাক্ট করা উচিত বুঝতে পারছিলেন না।কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার পর রেগেমেগে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।রাতে ঠিক কখন রুমে ফিরেছেন আমি জানি না,উনার জন্য ওয়েট করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেও পারিনি।
সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখলাম উনি রেডি হয়ে সোফায় বসে আছেন,আমাকে উঠতে দেখেই মানিব্যাগটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন!হয়তো আমার ঘুম ভাঙার জন্যই ওয়েট করছিলেন কিন্তু তাই বলে যাওয়ার আগে কিছুই বললেন না!আরে বাবা এটলিস্ট ব্রেকফাস্ট করার কথাটাতো বলতে পারতেন নাকি…
হঠাৎ রুমের দরজায় কেউ নক করলো আর তার সাথে ভেসে এলো তীক্ষ্ণ একটা কণ্ঠস্বর…
– রুম সার্ভিস ম্যাডাম,আরহাম স্যার পাঠিয়েছেন
দরজাটা খুলে দিলাম,খাবারের ট্রলি নিয়ে একটা অল্প বয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটাকে আমি আগেও কয়েকবার দেখেছি,সম্ভাবত হোটেলের বয় টাইপসের কিছু একটা হবে
– ম্যাডাম আপনার নাস্তা
– ও হ্যাঁ দাও
– আর এই যে এইটা
– কি এটা?
– জানি না,স্যার আপনাকে দিতে বলছে
– ওহ…
খাবারের ট্রেটা নিয়ে এসে টেবিলের উপর রেখে দিলাম তারপর ভাঁজ করা কাগজটা খুলে ফেললাম
“জানি আমাকে তোমার সহ্য হচ্ছে না তাই তোমার চোখের সামনে থেকে চলে যাচ্ছি।ভয় পেও না,তোমাকে ছেড়ে একেবারে চলে যাচ্ছি না।বিয়ে যখন করেছি তখন তোমার সব দ্বায়িত্বই এখন আমার সেটা তুমি চাও বা না চাও আমার কিছু যায় আসে না আর দ্বায়িত্ব এড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার মত ছেলে আমি নই সো ডোন্ট ওয়ারি।
ব্রেকফাস্ট পাঠিয়ে দিলাম,খেয়ে নিও।একসাথেই খেতে বলতাম কিন্তু তুমি চাও না তাই…খাবারটা খেতে ভুলো না কিন্তু নাহলে আবার সুগার লেভেল লো হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
যাই হোক আর একটা দিন একটু আমাকে কষ্ট করে সহ্য করো,এখান থেকে ফিরে গিয়ে আর তোমাকে বিরক্ত করব না প্রমিজ।
আর কাল রাতের জন্য সরি,আসলে গত কিছুদিনে আমাদের সম্পর্কটা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল তাই ভেবেছিলাম আমার মত তুমিও হয়তো আমাকে…
যাই হোক আমার ধারণাটা যে পুরোটাই ভুল ছিল তা আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি।So sorry once again.Enjoy your day and don’t worry about me,I’ll be okay…”
(বিকেলে)
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে কিন্তু উনার কোন খবর নেই।আমি যেন অস্থির হয়ে গেছি অপেক্ষা করতে করতে।শেষমেস বেরিয়েই পড়লাম,বীচ পেরিয়ে আবারও ঝাউবনে চলে এসেছি।এই জায়গাটা আমার কাছে একটু বেশিই ভালো লাগে,কারণটাও পরিষ্কার এখানে মানুষজনের ভীড় একটু কম তাই চাইলেই নিজেকে একটু আলাদা করে সময় দেওয়া যায়।আজকে যেন নিজেকে একটু বেশিই একা লাগছে,লাগবে নাই বা কেন সবসময় যেই মানুষটা আমার পাশে ছায়ার মত লেগে থাকে সেই যে আজকে আমার ত্রিসীমানার মধ্যে নেই।আসলে উনাকে খুঁজতেই এদিকটাতে আসা,আমার মত উনিও এই জায়গাটা অনেক পছন্দ করেন তাই ভেবেছিলাম হয়তো এদিকে আসলে উনার দেখা পাবো কিন্তু এতদূর এসেও উনার দেখা পেলাম না।
হাঁটতে হাঁটতে বোধহয় একটু বেশিই দূরে চলে এসেছি,এদিকটাতে মানুষজন নেই বললেই চলে,এক কথায় একেবারে নির্জন বলতে যা বোঝায় জায়গাটা ঠিক তেমনই।হঠাৎ কিছু নড়াচড়ার শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকালাম,মনে হলো আমার ঠিক পেছনের ঝোঁপটায় কিছু একটা নড়াচড়া করছে।
– কে..ক..কে ওখানে?
– (চুপ)
– বে..বেরিয়ে আসুন বলছি,নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করব…
– (চুপ)
– আ..আরহাম…কো..কোথায় আপনি?হে..হে..ল্প…
ওদিক থেকে কোন উত্তরতো আসলোই না বরং ঝোঁপটা আরও একটু জোরে নড়ে উঠলো।আশেপাশে একবার তাকাতেই আমি চমকে উঠলাম,এতটা দূরে চলে এসেছি যে এখান থেকে বীচের কোন নাম নিশানা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না আর মানুষতো দূরে থাক একটা পশুপাখিও নেই আশেপাশে।ভয় আমাকে গ্রাস করার আগেই আমি বীচের দিকে ছুটতে শুরু করলাম কিন্তু একটু এগোতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেলাম।তখনই ভেসে এলো খুব পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর,তাকিয়ে দেখলাম আরহাম হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।উনার হাতে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম,তারপরই উনার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
– কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না,শ্রেয়া হঠাৎ আমাকে এভাবে…তবে এটা বুঝতে পারছি মেয়েটা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে,আরও শক্ত করে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম
– আ..আপনি কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?জানেন আমি কত টেনশনে ছিলাম,এত দেরি করলেন কেন আসতে?আরেকটু দেরি হলেতো আমি…
– কি আশ্চর্য!এভাবে কান্না করছো কেন?কি হয়েছে বলবেতো….
– ও..ওইদিকে কেউ আছে,কয়েকদিন ধরেই আমাকে ফলো করছে
– কি আবোল তাবোল বকছো!কে তোমাকে ফলো করবে আর কেনই বা করবে?সব তোমার মনের ভুল
– আপনি বুঝতে পারছেন না ওখানে কেউ আছে,আমি স্পষ্ট দেখেছি আমার কোন ভুল হচ্ছে না বিশ্বাস করুন…
– Okay okay cool down.আমি দেখছি ব্যাপারটা।ঝোপটার দিকে এগিয়ে গেলাম,কই কেউতো নেই,এদিকে তাকাও দেখো কেউ নেই
– কিন্তু…বিশ্বাস করেন কেউ ছিল ওখানে,আমি স্পষ্ট দেখেছি
– আচ্ছা ঠিক আছে বিশ্বাস করলাম,এখন চলো যাওয়া যাক
– উনি চলে যাচ্ছিলেন,উনার হাত চেপে ধরলাম
– হাতে টান পড়ায় পেছন ফিরে তাকালাম,শ্রেয়া আমার হাত ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে!অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম
– কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি?জানেন আমি আপনাকে কত ডেকেছি?সকাল থেকে আপনাকে কত খুঁজেছি আপনি জানেন?আপনাকে খুঁজতে খুঁজতেইতো আমি এত দূরে চলে এসেছি।আমার উপর রাগ হয়েছে তো আমাকে বকাবকি করেন,নিজের রাগটা প্রকাশ করেন কিন্তু এভাবে প্লিজ দূরে সরে যাবেন না আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।আপনি অনেক খারাপ অনেক অনেক খারাপ…
– কি বলব বুঝতে পারছি না,ওর চোখের পানি সহ্য করতে পারছি না নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।দুহাতে ওর মুখটা তুলে ধরলাম,I’m sorry.আমার ভুল হয়ে গেছে, প্লিজ এবারের মত ক্ষমা করে দাও আর কক্ষণো এমন হবে না I promise…
– সত্যিতো?
– হুম,দেখি এবার কান্নাটা থামাওতো।
– দুহাতে চোখের পানি মুছতে লাগলাম
– এইতো এখন আমার বউ বউ লাগছে,এতক্ষণতো…
– এতক্ষণ কি?
– আচ্ছা তুমি কি জানো কান্না করলে তোমাকে ঠিক কেমন লাগে?
– কেমন লাগে?
– ঠিক যেন বৃষ্টিতে ভেজে একটা হুতুমপেঁচা
– কিহ!আমি হুতুমপেঁচা!আপনাকেতো আমি…পালাচ্ছেন কোথায়?দাঁড়ান বলছি…
আমরা দুজনেই বীচে ছুটোছুটি করছি,সমুদ্রের হাটু পানিতে ছুটছি আর
একজন আরেকজনের দিকে পানি ছিটাচ্ছি,ভুলেই গেছি একটু আগে আমি ঠিক কোন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম।ছুটোছুটি করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে দুজনেই বালির উপর দু পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম।সমুদ্রের উত্তাল জলরাশি এসে আমাদের পায়ে একটু পর পরই ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে,পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়ছে,আর একটু পরেই সমুদ্রের বুকে অস্ত যাবে।অবাক চোখে আমি এই গোধুলী লগ্নের সেই অদ্ভূত সৌন্দর্য উপভোগ করছি তখনই…
– শ্রেয়া…
– হুম?
– আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না?উত্তরটা কি খুব বেশি কঠিন?
চলবে….