#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_১৯
#জান্নাতুল_নাঈমা
— আর কখনো এই সাহস দেখাবে? আমার কাজে বাঁধা দেওয়ার শাস্তি কি হতে পারে বুঝেছো? রাগি চোখে চেয়ে গম্ভীর গলায় বললো রুদ্র।
নিজের দুহাতে রুদ্রর এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে হৈমী।একটু এদিক সেদিক হলেই সোজা নিচে পড়বে। শুধু যে হাত,পা ভাঙবে তা না তাঁর প্রানটাও উড়ে যাবে ভেবেই ভয়ে চোখ, মুখ খিচে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— আর এমন হবেনা প্লিজ আমাকে ওঠান। আমার খুব ভয় লাগছে প্লিজ ওঠান আপনার দুটো পায়ে পড়ি।
বাঁকা হাসলো রুদ্র সোজা হয়ে হৈমীকে টেনে উপরে তুলে হাত ছাড়লো। ফোন বাজছে তাই পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে কানে দিলো অন্যদিক ঘুরে।
হৈমী নিচে বসে পড়লো। দুহাতে নিজের চোখ, মুখ ঢেকে হুহু করে কেঁদে ওঠলো। প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সে। রুদ্রর মতো খারাপ লোক,পাষাণ লোক, মায়া,মমতাহীন,হৃদয়হীন মানুষ আর দুটো দেখেনি সে। কে বলেছে এই লোকটা তাঁকে ভালোবাসে একটুও ভালোবাসে না৷ ভালোবাসলে এমন মারাত্মক ভাবে ভয় কি দেখাতে পারতো। সামান্য একটা সিগারেট ফেলে দিয়েছে বলে এভাবে ভয় দেখাবে? সে যে খুব ভয় পেয়েছে তাঁর ভয়ের পরিমান এতোটাই বেশী যে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে।
এদিকে রেদওয়ান শেখ ফোনে এমন এক খবর দিলো যা শুনে রুদ্রর মুখটা টা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। ফোন কেটে দ্রুত পকেটে রেখে দ্রুত পা ফেললো সে। কিন্তু ছাদের দরজা অবদি গিয়ে থেমে গেলো। হৈমীর কথা কয়েক সেকেন্ডে মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। ফিরে তাকাতেই হৈমীকে হাঁটু গেড়ে বসে দু হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে দেখে বুকের ভিতর টা কেমন করে ওঠলো। “মেয়েটা কি সিরিয়াস ভয় পেয়েছে? নাকি এটাও ফাইজলামি করছে”? ভাবনার মাঝেই হৈমীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
— এভাবে বসেছো কেনো তারাতারি ওঠো আর নিচে চলো। আমার যেতে হবে এখুনি আর বাবা আজকে আসবে না। বলেই আবারো পা বাড়ালো। কিন্তু হৈমী সেভাবেই বসে আছে। তারাহুরোর মধ্যে রুদ্র কি করবে বুঝতে পারলো না তাই আবারো হৈমীর দিকে ফিরে গিয়ে একটানে তুলে ফেললো।
হৈমী ডুকরে কেঁদে ওঠলো ভয়ে কথা বলতে পারছে না প্রচন্ড ভয়ে তাঁর চোখ, মুখ অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। রুদ্র একটু এগিয়ে গিয়ে হৈমীর হাতটা চেপে ধরে সামনে আগানোর জন্য পা বাড়ালো। কিন্তু এক পা এগিয়েও পিছিয়ে গেলো কারন হৈমী শরীর ছেড়ে দিয়েছে রুদ্র পিছন ফিরে হৈমীকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে তৎক্ষনাৎ ধরে ফেলেছে।
— হৈমী,হৈমী কি হলো? কথা বলো? ওহ গড বিপদ যখন আসে সবদিক দিয়ে একবারে আসে বলতে বলতেই পাজাকোল করে নিয়ে দ্রুত নিচে চলে গেলো রুদ্র।
.
হৈমীর জ্ঞান ফেরার পরই রুদ্র সুখনীড় থেকে বেরিয়ে সোজা হসপিটাল চলে গেছে। হসপিটাল পৌঁছাতেই জানতে পারে সূচনার জ্ঞান ফিরেছে শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই তা নল দিয়ে বের করা হয়েছে যার ফলে কোন ক্ষতি হয়নি। সুরভী বেগম ঠিক সময় না দেখলে হয়তো মেয়েটা আজ মরেই যেতো। সব কথা শুনে রুদ্রর মেজাজ এতো খারাপ হলো যে সবাইকে কেবিনের বাইরে রেখেই সূচনা যে কেবিনে সেই কেবিনে ঢুকে পড়লো। ডক্টর চেক আপ করছিলো এমন সময় রুদ্র সোজা ডক্টরের পাশ দিয়ে গিয়ে সূচনার গলা চিপে ধরলো।
— তোর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই মরেই যা তুই। আমি থাকলে কখনোই হসপিটাল অবদি পৌঁছাতে দিতাম না৷ তোর মতো মেয়ের বেঁচে থাকার কোন অধিকারই নেই। বিষ যখন খেলি দরজা লাগিয়ে খেতে পারলিনা। গলা চিপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললো রুদ্র।
সূচনার চোখ মুখ লাল হয়ে এলো। ডক্টর, নার্স এমন কান্ড দেখে চিল্লিয়ে ওঠলো। নার্স দৌড়ে বাইরে গিয়ে সবাইকে বলতে লাগলো রুদ্রর কান্ডের কথা।
ডক্টর ভীষণ ভয় পেয়ে আতঙ্কিত গলায় বললো,
— একি কি করছেন কি পেশেন্ট ভীষণ উইক মরে যাবে, মরে যাবে মি.রুদ্র প্লিজ থামুন।
রাদিফ সুরভী বেগম, নয়না তিনজনই রুদ্রকে ছাড়ালো। সুরভী বেগম সকলের সামনেই ঠাশ করে রুদ্রর গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো। সূচনা ফুপিয়ে কাঁদছে। রাদিফ সুরভী বেগম কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলেন। রুদ্র রাগে ফুঁসছে। সুরভী বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
— তুই আমার পেটের শত্রু তোর মতো সন্তান কে জন্ম দিয়ে আমি ভুল করেছি। সারাটাজীবন তুই আমাকে জ্বালিয়েছিস।কখনো এক দন্ড শান্তি দিসনি। আর আজ তোর জন্য আমি আমার মেয়ে, আমার বোনের শেষ স্মৃতি কেও হারাতে বসেছিলাম।শোন রুদ্র তোর জন্য যদি সূচনার কিছু হয় তাহলে তুই আমার মরা মুখ দেখবি।
ডক্টর সূচনাকে দ্রুত একটা ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দিলো। রুদ্র রাগে, ক্ষোভে সকলের সামনে থেকে বেরিয়ে যেতে নিতেই রাদিফ নয়নাকে ইশারা করলো সুরভী বেগম কে ধরতে।
রুদ্রর পিছন রাদিফও বেরিয়ে এলো রুদ্র কে থামিয়ে দিয়ে রুদ্রর মুখোমুখি হয়ে বললো,
— বড় ভাই হিসেবে আমি কখনো তোকে কোন আদেশ করিনি। আজো করবো না শুধু অনুরোধ করবো তুই মায়ের ওপর কোন রাগ বা ক্ষোভ রাখিস না। সূচনার জন্য আমরা সকলেই ভীষণ ভয়ে আছি। আর মা তো মা ই বল মা হয়ে সন্তানের মৃত্যু কে সহ্য করতে পারে? কে চায় তাঁর সন্তান কে হারাতে? এ মূহুর্তে আমার থেকেও মায়ের পাশে তোকে বেশী প্রয়োজন। মা যা করেছে অভিমান থেকে সূচনা কে হারানোর ভয় থেকে করেছে তুই মা কে ক্ষমা করে দে।
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো রুদ্র রাদিফের কাঁধে হাত রেখে বললো,
— ডোন্ট ওয়ারি! আমার জন্য তোমার মায়ের কোন ক্ষতি হবে না।
— রুদ্র!
— আই মিন আমাদের আমাদের মায়ের কোন ক্ষতি হবে না। বলেই রাদিফকে পাশ কাটিয়ে বেঞ্চে গিয়ে বসলো রুদ্র।
রাদিফ এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুদ্রর পাশে গিয়ে বসলো। রুদ্রর গালে হাত রেখে বললো,
— খুব লেগেছে?
— নো আই এম ওকে। তুমি বরং ভেতরে যাও ডক্টরের সাথে কথা বলো আমি আছি এখানে।
.
শরীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে হৈমীর৷ সূচনার খবর নয়না জানাতেই মাহের সহ মাহেরের বাবা,মা হসপিটাল এসে দেখে গেছে। নয়ন মাহেরকে ফোন করে হৈমীর জ্বরের কথা জানাতেই মাহের তাঁর মা, বাবাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে রওনা দিয়েছে সুখনীড়ের উদ্দেশ্য।
হৈমীর জ্বরের খবর রুদ্র কে জানাতেই সে ডক্টর পাঠিয়ে দিয়েছিলো। ডক্টর চেক আপ করে ওষুধ লিখে দিয়েছে। সাদমান ওষুধ গুলো কিনে দিয়েই চলে গেছে। তার পরপরই মাহের এসেছে।
হৈমী বিরবির করে কিসব বলছে কিছুই বুঝছে না নয়ন, মাহের,দাদু।
— হঠাৎ এমন জ্বর চলে আসার কারন কি? বললো মাহের।
— জানিনা রুদ্র ভাইয়া ওকে ছাদ থেকে সেন্সলেস অবস্থায় নিচে নিয়ে এসেছে বললো ভয় পেয়েছে৷ কিন্তু কি নিয়ে কিভাবে কিচ্ছু জানিনা। কেমন গোমরা মুখো কিছু জিগ্যেস করতেও ভয় লাগে। বললো নয়ন৷।
মাহের চিন্তিত চোখে নয়নের দিকে চেয়ে বললো,
— এক কাজ কর তুই জলপট্টি দিয়ে দে কিছুক্ষন। হাত,পা মুছে দে তারপর খাবার খাওয়িয়ে ওষুধ গুলো খাওয়িয়ে দে।
— আচ্ছা।
— দাদু আপনি বরং ঘুমিয়ে পড়ুন ওষুধ খাওয়ানো শেষে আমি বাড়ি ফিরে যাবো। নয়ন থাকবে ওর সাথে চিন্তা নেই। বললো মাহের।
দাদু বেশকিছু সময় বসে থেকে চলে গেলো।
নয়ন তয়ালে ভিজিয়ে নিয়ে এসে কিছুক্ষণ জলপট্টি দিলো। তারপর গিয়ে তয়ালে আরেকবার ভিজিয়ে নিয়ে এসে হৈমীর পুরো মুখ মুছে দিলো। ওড়না সড়িয়ে গলা মুছতে যেতেই নয়নের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো৷ আবছা দাগ দেখে একবার ভাইয়ের দিকে তাকালো আবার গলার দিকে। মাহের ভ্রু কুঁচকে চোখ উঁচিয়ে ইশারা করলো “কি হলো”
নয়ন এক ঢোক গিলে আলতো করে গলায় তয়ালে দিয়ে মুছতে লাগলো। হৈমী কপাল তিনভাজ করে নড়ে চড়ে ওঠলো। মাহের নিজের অজান্তেই একটু এগিয়ে ডাকলো,” হৈমী ঠিক লাগছে এখন? নাকি ভীষণ খারাপ লাগছে “বলেই গলার দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেলো সে। হাত,পা যেনো অবশ হয়ে এলো। বোনের সামনে লজ্জা+অস্বস্তি তে পড়ে গেলো। তারাতারি সরে গিয়ে ওঠে পড়লো মাহের। বললো,
— আমি একটু আসছি।
মাহেরের এভাবে পালানোটা খুব বুঝলো নয়ন৷ কিন্তু বুঝেও কিছু করার নেই এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাত, পা মুছে দিতে লাগলো।
মাহেরের মাথায় ঢুকছে না ঠিক কি হয়েছে? সব কিছু উলোটপালোট লাগছে তাঁর। বুকের ভিতর কি অসহনীয় যন্ত্রণা, কি অস্থিরতা পাগল পাগল লাগছে তাঁর। দুহাত কামড়ে ধরে বসে ছাদে বসে রইলো কিছুক্ষণ। সূচনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলো কিন্তু সে তো সেটাও পারবেনা। কারন সে পুরুষ মানুষ তাঁর যে মরে গেলে চলবে না। তাঁকে বেঁচে থাকতে হবে তাঁর পরিবারের জন্য।
রাতে তিনবার নয়নকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছে রুদ্র। সূচনার বিষয়টা সবাই জেনে গেছে নয়নও সবটা জানে তাই রুদ্র কে বলেছে টেনশন না করতে হৈমী ঠিক আছে।
.
পরেরদিন বাড়ি নিয়ে আসে সূচনাকে। সূচনাকে সম্পূর্ণ ডিপ্রেশন মুক্ত রাখতে হবে। খাওয়া,দাওয়া করাতে হবে নিয়ম মাফিক। মানসিক ভাবে কোন প্রকার চাপ দেওয়া যাবে না৷ তাই রুদ্রও আর রাগ দেখায়নি সে যথেষ্ট স্বাভাবিক রয়েছে৷ হসপিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসে রুদ্র বাড়িতেই রয়েছে। যা দেখে সূচনা বেশ শান্তি পাচ্ছে। তাঁর অসুস্থতার জন্য রুদ্র যে সব বাদ দিয়ে তাঁকে সময় দিচ্ছে বাড়ি রয়েছে এই তো অনেক আর কি চাই। সে এটুকুতেই অনেক খুশি।
রুমে বসে রাগে ফুঁসছে রুদ্র। এক ধ্যানে মেঝেতে চেয়ে আছে সে। তাঁর মা আজ তাঁর পায়ে ধরেছে ভাবতেই বুকের ভিতর প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে তাঁর। কারন তাঁর মা হসপিটাল থেকে ফিরেই তাকে আলাদা রুমে নিয়ে গিয়ে ডিরেক্ট পায়ে ধরেছে। ভিক্ষে চেয়েছে সূচনার জীবনকে। জোর করে বিয়ে দিতে পারবেনা তাই বিয়ে করতে হবেনা শুধু সূচনার সাথে বাজে আচরন বা যে পর্যন্ত সূচনা সুস্থ না হচ্ছে সে পর্যন্ত বাড়িতেই থাকতে। সূচনা তাঁকে দেখে তাঁকে পাশে পেয়ে শান্তি পাবে। বলেছে তাঁর মা সুরভী বেগম।
.
— জ্বর তো কমে গেছে কাল কি এমন হয়েছিলো? কি দেখে ভয় পেয়েছিলি বল তো?
নয়ন জিগ্যেস করতেই হৈমী দূর্বল গলায় সবটা জানালো নয়ন কে। নয়ন সব শুনে বিরক্ত হয়ে বললো,
— এবার শিক্ষা হয়েছে তো? আর জীবনে এমন করবি বল?আর জীবনে ওনার সামনে বকবক করবি? আর জীবনে ওনার ব্যাপারে নাক গলাতে যাবি?
— তুই আমাকে ধমকাচ্ছিস? দেখ বুকটা এখনো ধুকধুক করছে আমার। ঐ লোকটা কে আমি তালাক দিবো তিন কবুল বলছি তিন তালাক ও বলে দিবো৷ দরকার নেই এমন মানুষের আমার। ফালতু লোক একটা ভূতও মনে হয় এভাবে ভয় দেখায় না। ভয়ংকর ভূত,রাক্ষস কেমন হয় আগে শুধু ভাবতাম কল্পনা করতাম। এখন বাস্তবেও দেখাচ্ছে আল্লাহ।
নয়ন হৈমীর মুখ চেপে ধরলো। ভয়াতুর গলায় বললো,
— চুপপ!আর এসব কথা মুখেও আনবি না হৈমী। বিয়ে জীবনে একটাই যা হয়েছে তাই মেনে নিতে শিখ। আর শোন সবার সাথেই একভাবে মিশবি না। জীবনে একটু কৌশল খাটিয়ে চলতে হয়।
নয়নের হাত ছাড়িয়ে হৈমী বললো,
— সেটা আবার কেমন রে?
— দেখ তুই অনেক সহজসরল কিন্তু মনের দিক থেকে তুই কিন্তু খুব কঠিনও। রুদ্র ভাইয়া তোর টাইপ না তাই তুই ওনার সাথে তোর টাইপ আচরন করলে ওনার সেটা পছন্দ হবে না। প্রচন্ড মুডি আর ডেঞ্জারাস একটা লোক তাঁর সাথে তুই এমন আচরন করলে সে তো এমন করবেই। দুনিয়ায় বিচিএ রকমের মানুষ রয়েছে তাঁদের স্বভাব, চরিএও বিচিএ। তাই তাঁদের সাথে তাঁদের মতো করেই মিশতে হবে।
— এতো কঠিন কথা আমি বুঝিনা জান সহজ করে বলনা ক্ষুধা লাগছে। তারাতারি একটু জ্ঞান দে তারপর খেতে যাবো।
— ওকে ডিয়ার সহজ করে বুঝাচ্ছি। দেখ তুই কি উর্দু ভাষা বুঝিস?
— না। ঠোঁট ফুলিয়ে মাথা নাড়িয়ে না করলো হৈমী।
— তাহলে তোর সাথে যদি আমি উর্দু ভাষায় কথা বলি তুই কি বুঝবি।
— একদম না।
— রাইট তাহলে যে মানুষ যে ভাষা বুঝবে না সে মানুষ টার সামনে সে ভাষা অহেতুক বলার কোন মানে হয়না৷ বা ভাষা বুঝতে পারবে না কোন উত্তর দিতে পারবে না বিরক্ত হয়ে রেগে যাবে বার বার তার না জানা না বোঝা কিছু বললে। ঠিক তেমনটাই তোর বিহেভিয়ার টা হচ্ছে উর্দু ভাষার মতো যা রুদ্র ভাইয়া বুঝে না বুঝলি?
— তাহলে তোরা বুঝিস কি করে?
— ধূর বাল এতো বকবক করতে পারবো না তুই বোঝাড পাএী না চল খেতে যাই৷ মা বলেছে খাওয়ার পর লোহার ভাজা কাটা আগুনে তাপ দিয়ে পানিতে ছ্যাক দিতে তারপর সে পানিটা তোকে খাওয়াতে। এতে নাকি ভয় কেটে যায় যদিও কুসংস্কার আমি বিশ্বাস করিনা কিন্তু মায়ের বিশ্বাসে খেলে আমার ভয় কেটে যায় তোরও কাটবে।
.
প্রায় কয়েকদিন কেটে গেছে। রুদ্রর সাথে হৈমীর দেখা হয়নি। রুদ্র ফোন করলেও হৈমী রিসিভ করে না। যা খোঁজ নেওয়ার দাদুর থেকেই নেয় রুদ্র। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা তাই হৈমী সব চিন্তা ফেলে রেখে পড়াশোনায় মন দিয়েছে৷ রুদ্রর প্রতি তাঁর ফিলিংস শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে। এমন ভয়, বিরক্ত, অনীহা এসেছে যে ফোন অবদি রিসিভ করতে মন চায় না তাঁর। পড়াশোনা, শুক্রবার হলে গান শেখা এসব নিয়েই বেশ আছে সে।
.
সূচনা অনেকটাই সুস্থ সব যেনো আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে। বরং আজকাল সর্বক্ষণ রুদ্র কে চোখের সামনে দেখে তাঁর মন বেশ ফুরফুরা লাগে। রুদ্রর দাদি সূচনাকে বলেছে,
— পুরুষ মানুষ কে বাগে আনতে বেশী কিছু লাগেনা। এতো সুন্দরী হয়ে, রূপ যৌবন থাকা সত্তেও একটা পুরুষ মানুষ কে নিজের কাছে না আনতে পারলে সে নারীর জীবন, রূপ যৌবন তো ব্যার্থ।
দাদির কথা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বেশ বুঝেছে সূচনা যা তাঁর লাজুক হাসিতেই টের পেয়েছে দাদি।
.
রুদ্র সাতদিনের জন্য কোথাও গিয়েছিলো এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে। সাতদিন পর বাড়ি ফিরতেই সূচনার চোখে মুখে উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।
এক গ্লাস ঠান্ডা সরবত নিয়ে রুদ্রর সামনে ধরে৷ রুদ্র মৃদু হেসে সরবত টা খেয়ে নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে জিগ্যেস করে,
— কি অবস্থা তোর শরীর ঠিক আছে।
সূচনা লজ্জা পেয়ে ইতস্ততভাবে জবাব দেয়,
— হুম ঠিক আছি।
— এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো? পাএী দেখতে আসিনাই ব্যাকুব কোথাকার।
চলবে।