ভালোবাসায়_বন্দিনী #পর্ব_১২

0
2421

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_১২
#জান্নাতুল_নাঈমা

প্রায় দশমিনিট নিরবতা পালন করার পর চোখ খুললো রুদ্র। হৈমীর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অবিরত। রুদ্র আড়চোখে হৈমীর কান্নামিশ্রিত মুখটা দেখে সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে ভারী আওয়াজে বললো,

— ব্যাগে খাবার আছে পছন্দ অনুযায়ী একটা খাও। তারপর বাড়ি দিয়ে আসছি।

হৈমী কিছুই বললো না রুদ্রর দিকে তাকালো না অবদি।আজ অবদি তাঁর গায়ে কেউ হাত তুলেনি। এই একজন ছাড়া। তাঁর জীবনে কষ্টের শেষ নেই তবুও গায়ে হাত তোলার সাহস করেনি কেউ। অথচ পাশের লোকটা দিনের পর দিন তাঁর গায়ে হাত তুলছে। আজ যদি বাবা,মা বেঁচে থাকতো অবশ্যই এর জন্য রুদ্রর সাথে প্রতিবাদ করতো।এতিম বলে সবাই কষ্ট দেয়। ভেবেই আরো দ্বিগুণ কান্না চলে এলো হৈমীর।

রুদ্র কান্নার শব্দ পেয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। সে যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা৷ আর না পারে বুঝিয়ে কিছু বলতে। রাগের মাথায় মেয়েটাকে মেরে পরে নিজেরই ভীষণ কষ্ট হয় যেমন এখন হচ্ছে। কিন্তু বোঝাবে কি করে? তাঁর কষ্ট গুলো যে কাউকে কোনদিন বোঝাতে পারে নি তাই তো তাঁর কষ্টের ভাগ কেউ নিতে পারেনি। আবারো বললো,

— যা বললাম তাই করো। এভাবে কাঁদছো কেনো?
— কেনো কাঁদছি বুঝছেন না। আসুন বুঝিয়ে দেই গালটা এগিয়ে দিন। রেগে চোখ,দাঁত কটমট করে কথাটা বললো হৈমী।

রুদ্র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। এই মেয়ে বলে কি? মাথা ঠান্ডা রেখে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
— পড়াশোনা করছো বড় হচ্ছো মুখের ভাষা,স্বভাব, আচরন ঠিক করতে হবে। নয়তো কপালে দুঃখ আছে।
— হ্যাঁ আপনি যতোদিন আমার আশে পাশে আছেন দুঃখ তো থাকবেই। কেনো আমার পিছু লাগছেন৷ কেনো আমার ব্যাপারে নাক গলাচ্ছেন দুনিয়ায় আর মেয়ে নাই?

রুদ্র সোজা হয়ে বসে হৈমীর দিকে ঘুরলো। হৈমী চোখ,মুখ ভয়ার্ত করে ফেললো এই বুঝি আবার দেয় আরেকটা। রুদ্র হৈমীর মুখোভঙ্গি দেখে আরেকটু এগিয়ে গেলো। হৈমী ভয়ে এক ঢোক গিলে নিয়ে সরে একদম ডোরের সাথে ঠেকে গেলো৷ রুদ্র গভীর চোখে চেয়ে ভারী গলায় বললো,

— নিজের বউ এর পিছু লাগবো না তো কার পিছু লাগবো। বউ যদি বেপাশ কথাবার্তা বলে বেপাশ চলাফেরা করে শাসন তো করতেই হবে। বউ থাকতে দুনিয়ায় অন্য মেয়ে খুঁজবোই বা কেনো?

রাগি,গম্ভীর স্বর বদলে এমন নেশাময় শব্দ উচ্চারণ করায় রুদ্র কে ভয়ংকর লাগছিলো। এই ভয়ংকর লাগাটা একদম আলাদা, অন্যরকম যা হৃদস্পন্দন কাঁপিয়ে তুলেছে হৈমীর।

— বউ মানে কে কার বউ আমি কারো বউ না। আমতা আমতা করে বললো হৈমী।

রুদ্র তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো সে চাহনী দেখে হৈমী ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
— মমানে আমি তো সময় নিয়েছি। বিয়ে তো হয়নি তাহলে বউ হলাম কি করে তাই বলেছি।
রুদ্র বাঁকা হাসলো যার অর্থ হৈমী বুঝলো না। নিজের সিটে গা এলিয়ে বসে বললো,
— ব্যাগ থেকে জলদি খাবাড় খেয়ে নাও। কথা বাড়াবে না আর, যা বলছি ঠিক তাই করবে ফাস্ট।

হৈমী এক ঢোক গিলে বললো,
— বাড়ি গিয়ে খাবো এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। তারাতারি দিয়ে আসুন আমায়।
— যা বলছি তাই করো হৈমী। আমার পাশে আমার সামনে খাবে তুমি ব্যাস!
ধমক খেয়ে সুরসুর করে ব্যাগ থেকে বার্গার বের করলো হৈমী। আরো অনেক খাবারই ছিলো। বেশ অবাক হলো তাঁর জন্য এতো কিছু এনেছে লোকটা। লোকটা এতো রহস্যময় কেনো ভালোবাসে নাকি বোঝা মষ্কিল। চোখের পানি মুছে এক কামড় দিয়ে রুদ্রর দিকে আড় চোখে তাকালো। রুদ্র তাঁর দিকেই চেয়ে আছে। হৈমী জোর পূর্বক হেসে বললো,
— খাবেন ? তাহলে নিন, তবুও চেয়ে থাকবেন না চোখ লাগবে।
— ফালতু কথা বন্ধ করে খাও এতো কথা বলো বলেই না আছে মাথায় কিছু আর না আছে শরীরে কিছু।
— কিহ! আমার মাথায় কিছু নেই আপনার চোখ নেই আমার মাথায় স্কার্ফ আছে, স্কার্ফের নিচে চুল আছে আমি ন্যাড়া না ওকে। আর শরীরে কিছু নেই মানে কি নেই ? দেখছেন না সবই আছে বলেই নিজের মতো খেতে লাগলো।
রুদ্র পা থেকে মাথা অবদি চোখ বুলিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে চোখ সরিয়ে ফেললো। চাপা এক শ্বাস বেরিয়ে এলো তাঁর। হৈমী নিজের মনে খেয়েই যাচ্ছে বেশ খিদে পেয়েছে তা খাওয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
.
হৈমীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে রুদ্র সাদমানের সাথে দেখা করে। রুদ্র চলে যাওয়ার পরই সাদমান বাইক নিয়ে চলে যায় সুখনীড়ে। বাচ্চা রা বাইরে খেলাধূলা করছে। দাদু চেয়ারে বসে বই পড়ছে। সাদমান গিয়ে দাদুকে সালাম দিলো আর জানালো সে রুদ্রর বন্ধু। হৈমীর সাথে দেখা করতে চায় জরুরি কথা আছে।

দাদু সালাম ফিরিয়ে হাসিমুখে কথা বললো,ভিতরে নিয়ে গিয়ে হৈমীকে ডাকলো। হৈমী রুম গোছাচ্ছিলো। দাদুর ডাকে বাইরে এসে সাদমান কে দেখে অবাক হলো মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,

— আরেব্বাস ভালো ভাইয়া তুমি এখানে। কখন এলে সাথে আবার ঐ কর্কশ লোকটা আসেনি তো৷ দেখলে আজো আমায় মেরেছে দেখো গালটা কেমন হয়ে আছে বলেই ঠোঁট ফুলালো।

দাদু হৈমীর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বললো,
— মেরেছে মানে কি বলছো দিদিভাই।
সাদমান কথাটা চেপে যাওয়ার জন্য বললো,
— ইয়ে মানে রুদ্র একটু শাসন করেছে দাদু তেমন কিছু না। তাইনা হৈমী বলেই হৈমীকে চোখ টিপ দিয়ে ইশারা করলো দাদুকে চলে যেতে। হৈমী আমতা আমতা করে বললো,
— কিছু না দাদু যাও তুমি বই পড়ছিলে শেষ হয়নি নিশ্চয়ই যাও পড়ে শেষ করো ৷ আমি ভালো ভাইয়ার জন্য চা বানাই কেমন বলেই চঞ্চল পায়ে ছুটে গেলো রান্নাঘরে।

দাদু আর কথা না বাড়িয়ে সাদমানের সাথে টুকটাক কথা বললো তারপর বেরিয়ে গিয়ে পরীকে ভিতরে পাঠিয়ে দিলো। সাদমান পরীর সাথে ওটা সেটা গল্প করতে শুরু করলো। হৈমী চা বিসকেট সামনে দিয়ে সোফায় বসলো। ওটা সেটা নানা গল্প জুরে দিলো হৈমী তাঁর মধ্যে রুদ্রর বদনাম ছিলো ৯৫% বাকি ৫% হাবিজাবি গল্প করলো। এদের গল্পে পরী বোরিং হয়ে বাইরে খেলতে চলে গেলো।

চায়ে চুমুক দিতেই হৈমী উৎসুক হয়ে জিগ্যেস করলো,

— অনেক মজা না? আমি খুব মজা করে চা বানাতে পারি। আমার চা খেয়ে দাদুভাই কি বলেন জানেন? “আহা গিন্নি তোমার হাতের এক কাপ চা খেলে পরান টা আমার জুরিয়ে যায়” হিহিহি আপনারও পরাণ জুরিয়েছে নিশ্চয়ই?

সাদমান হোহো করে হেসে ওঠলো। সত্যি মেয়েটা ভীষণ আলাদা নিজের প্রশংসা নিজেই করে বেড়ায়। অন্য কাউকে করার সুযোগই দেয় না। দুনিয়াতে এমন মানুষ বোধহয় খুব প্রয়োজন যারা বাইরের মানুষের প্রশংসার পরোয়া করেনা। চায়ের কাপ সামনের টেবিলে রেখে বললো,

— সত্যিই পিচ্চি ভীষণ টেস্টি লেগেছে চা টা।
হৈমী হিহি করে হাসতে লাগলো। সাদমান বললো,
— পিচ্চি তোমার সাথে কিন্তু আমি অত্যন্ত জরুরি কথা বলতে এসেছি।
— কি কথা ভালো ভাইয়া।
— তোমায় যাতে আর রুদ্রর হাতে থাপ্পড় না খেতে হয় সেই জন্য টিপস দিতে এসেছি।
— সত্যিইইই ? খুশিতে লাফিয়ে ওঠলো হৈমী।
সাদমান মিটিমিটি হাসছে। যদিও রুদ্র তাঁকে শুধু একটা কথা বলতে পাঠিয়েছিলো। যা রুদ্র নিজে বুঝিয়ে বলতে পারতো না। কিন্তু সাদমান রুদ্র আর হৈমীকে কাছাকাছি আনার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটার পরিবর্তে যদি দুটো কথা বলে নিম পাতাতে চিনি মিশিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তো মন্দ হয় না? নিম পাতা তেঁতো হলেও এটা বেশ উপকারী তবুও নিমপাতা হজম করা দুষ্কর তাই চিনির ছোঁয়া অবশ্যই অবশ্যই প্রয়োজনীয়।

“তৃতীয় পক্ষের আগমনে শুধু সম্পর্কে ভাঙনই সৃষ্টি করে না। কখনো কখনো সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যও তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন পড়ে” আর সাদমান তেমনই একজন তৃতীয় পক্ষ হিসেবে এসেছে হৈমীর কাছে।
.
সাদমান হৈমীকে খুব সুন্দর করে রুদ্রর রাগের কারন বোঝালো। একটু নিখুঁত ভাবে ভাবতে সহায়তা করলো। যার ফলাফল এই হলো যে রুদ্র আসলে ভুল করেনি তাঁকে মেরে বরং তাঁর একটু শাসনের প্রয়োজন আছে। তারপর আবার মন খারাপ করে বললো,

— মানলাম আমি ভুল করি তাই বলে ওনি আমায় মারবে। আপনার মতো করে বোঝালেই তো পারে। সবসময় ভিলেনের মতো আচরন কেনো করে?
— পিচ্চি পৃথিবীতে সব মানুষ একরকম হয়না। একেক মানুষ একেক স্বভাবের হয়। আর এই চিরন্তন সত্য টা আমাদের সবাইকে মানতে হবে। ভালো মন্দ মিশিয়েই তো মানুষ বলো৷ ওর যেমন খারাপ দিক রয়েছে তেমন ভালো দিকও রয়েছে। ও তোমাকে ভালোবাসে তোমার ভালো চায়। এটা ওর ভালো দিক কিন্তু তোমার ভালো চাইতে গিয়ে তোমাকে হার্ড করে ফেলে এটা ওর খারাপ দিক।
— কঁচুর ভালোবাসা লাগবে না আমার। বলেই মুখ ভেঙচি কাটলো।

সাদমান মৃদু হেসে বললো,
— তাহলে তো আবার ওর খারাপ দিক বেরিয়ে আসবে পিচ্চি। তুমি জানো আমাকে এখানে রুদ্র পাঠিয়েছে আর বলেছে তোমাকে বোঝাতে বাচ্চামি সব জায়গায় না করতে। নয়ন তোমার বন্ধু তোমরা পার্সোনালি যাই করো যাই বলো সকলের সামনে কন্ট্রোলে থাকতে নয়তো বাইরের মানুষ জন বলবে মেয়েটা বেয়াদব। বাইরের লোকের কাছে তোমার ব্যাপারে এসব শুনতে ওর খারাপ লাগবে। এদিকে ও সেভাবে বোঝাতেও পারবে না তাই আমায় পাঠালো।

ও তোমাকে ভালোবাসে পিচ্চি আমি ওর বন্ধু ওর সাথে সর্বক্ষণ থাকি রাদিফ ভাইয়ার বিয়ের দিন থেকে ও কেমন হয়ে গেছে। তোমায় দেখার জন্য ওর ব্যাকুলতা আমি সর্বক্ষণ বুঝতে পারি। যে ছেলেটা ১১টার আগে ঘুম থেকেই ওঠতো না কখনো সেই ছেলেটা সকাল সকাল ওঠে পড়ে কখনো সারারাত নিদ্রাহীন কাটায় শুধু একপলক তোমাকে দেখার জন্য।তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা সর্বক্ষণ খোঁজ রাখে। বাইরের ফুসকা খেলে পেট খারাপ হবে শরীর অসুস্থ হবে সেই ভয়ে ফুসকাওয়ালাকে সাবধান করে দিয়েছে যাতে তোমায় ফুসকা না দেয় কখনো।
— হোয়াট! কি বলছেন তাঁর মানে ওনার ভালোবাসার জন্য আমার ফুসকা কে ইগনোর করতে হবে নো,,,আমি ফুসকা ছাড়া বাঁচবো না, ফুসকা ইজ মাই জান, প্রান,কলিজা সব। রাখেন তাঁর ভালোবাসা এমন ভালোবাসা চাইনা যে ভালোবাসায় ফুসকার থেকে দূরে সরে যেতে হয়। আরে ইয়ার ভালোবাসার আরেক নাম ফুসকা,চটপটি,ঝালমুড়ি,আচাড়,চকলেট, আইসক্রিম আরো কত্তো কি,,, হাত নেড়ে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলতে লাগলো হৈমী।

সাদমান তাঁর স্বভাব গুলো দেখে প্রচন্ড হাসছে। পেট চেপে ধরে বললো,
— ওকে ওকে বুঝেছি আমায় বলতে তো দেবে। টিপস দেওয়া তো বাকিই রয়ে গেলো। টিপস নেবে কিনা বলো? ভ্রু নাচিয়ে জিগ্যেস করলো সাদমান।
হৈমী থেমে গিয়ে দু পা তুলে আয়েশ করে বসে সাদমানের দিকে উৎসুক চোখে চেয়ে গালে হাত দিয়ে বললো,
— আই এম রেডি একদম মাথায় গেঁথে রাখবো টিপস।

সাদমান মৃদু হাসলো সিরিয়াস মুডে বললো,

— প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের কোন না কোন কষ্ট লুকিয়ে থাকে। এ পৃথিবীতে কোন মানুষই দুঃখ, কষ্টের বাইরে নয়। সকলের জীবনেই দুঃখ রয়েছে কষ্ট রয়েছে।”সুখের গল্পগুলো প্রকাশিত হলেও দুঃখের গল্পগুলো বেশীরভাগ অপ্রকাশিতই রয়ে যায়” এই যে তুমি এতো হাসিখুশি, প্রানোচ্ছ্বল তোমার মনেও তো বিরাট কোন দুঃখ লুকায়িত থাকতে পারে। এই যে রুদ্র বাইরে থেকে কঠোর,কর্কশ, রাগি,গম্ভীর, মুডি একজন মানুষ। অনেকে বলে মায়াদায়াহীন একটা মানুষ। আরো নানাপ্রকার কথা বলে তাঁর খারাপগুন গুলো মার্ক করে তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার করে।
কিন্তু কজন মানুষ তাঁর ভিতরের খবড় রাখতে যায় বলো। এ পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষই মুখোশ পড়ে থাকে কেউ সুখের মুখোশ কেউ দুঃখের মুখোশ। মুখোশের আড়ালে সঠিক মানুষ টাকে কজনই দেখতে পায় বলো।

হৈমীর মুখটা বিষাদে ছেয়ে গেলো। বয়স যে কম অল্পতে বেশীই আবেগপ্রবণ হয়ে যায় সে। এ মূহুর্তে তাঁর খুব জানতে ইচ্ছে করছে রুদ্রর মুখোশের আড়ালে সঠিক মানুষ টাকে। চোখ দুটো চিকচিক করছে তাঁর ঘোরে থেকেই বলে ওঠলো,

— ওনার জীবনে কি অনেক কষ্ট আছে?

সাদমান মৃদু হেসে বললো,
— তা তো আমি তোমায় বলতে পারবো না পিচ্চি। সঠিক সময়ে তুমি ঠিক জেনে যাবে সব।

হৈমীর মুখটা ভাড় হয়ে এলো। সাদমান প্রসঙ্গ পাল্টে বললো,
— এতোসবের মাঝে এটা কিন্তু সত্যি রুদ্রর মতো ছেলে তুমি লাখে একটা পাবে না৷ ও আর পাঁচ জনের মতো তোমায় ভালোবাসি হয়তো বলেনি কিন্তু ও মন থেকে তোমাকে চায়। তুমি যদি বলো এখনি ওকে বিয়ে করবে ও এক মূহুর্ত সময় নিবে না কাজি এনে এখুনি সব কমপ্লিট করবে।
— হয়েছে হয়েছে ঢেড় বোঝা হয়েছে ওনার প্রশংসা করা বাদ দিয়ে টিপস বলুন নয়তো ভালো ভাইয়া আর ভালো থাকবেন না কালো হয়ে যাবেম হুমহ।

মুচকি হাসলো সাদমান তারপর বললো,
— নিউটনের তৃতীয় সূএ জানো তো প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
— এর মানে কি ওনি আমায় মেরেছে তারমানে আমিও মারবো। আমি কি ওনার গাল নাগাল পাবো?বলেই ঠোঁট ফুলালো।

সাদমান আবারো হোহো করে হেসে ওঠলো।
— আরে পাগলী তা বলিনি।
— তাহলে?
সাদমান হৈমীকে সবটা বুঝিয়ে বললো। হৈমী বসা থেকে এক লাফে ওঠে বললো,
— ইয়েসস!
.
রাত ১১ঃ৩০ বাজে হৈমী পড়াশোনা করে শুয়ে পড়বে। তখনি মনে পড়ে গেলো সাদমানের কথাটা। খিলখিল করে হেসে ওঠলো সে৷ ফোন বের করে নাম্বার খুঁজতে লাগলো। হ্যাঁ এটাই ভেবেই নাম্বার ডায়াল করে ফোন কানে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো।
রিসিভ হতেই হৈমী রসালো গলায় বললো,
— আসসালামু আলাইকুম জান কি করছো?

রুদ্র ছাদে বন্ধু দের সাথেই আড্ডা দিচ্ছিলো। হৈমীর ফোন পেয়ে খানিকটা অবাক হয়েই রিসিভ করেছিলো। কিন্তু রিসিভ হওয়ার পর যা শুনলো এতে তাঁর চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেলো, ভীষম খেয়ে কাশতে লাগলো সমানে। সাদমান বেশ বুঝলো দুষ্টু মেয়েটা দুষ্টুমি করার চান্স পেয়ে মিস করেনি। তাই মিটিমিটি হাসতে লাগলো।

আবির রুদ্রর কাছে এসে পিঠে হালকা থাপ্পড় দিলো।
এদিকে হৈমী ব্যাস্ত গলায় বলে যাচ্ছে,
— জান কি হলো গো তোমার? এমন করছো কেনো ভীষম খেয়েছো? ইশ কেনো যে এতো মিস করতে গেলাম। দেখেছো তোমায় এত্তো মিস করছি বলেই ভীষম খেলে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here