ভালোবাসায়_বন্দিনী #পর্ব_২৯

0
2565

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_২৯
#জান্নাতুল_নাঈমা

দাদির বকা শুনে সকলেই মুখটা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷ দাদি গলা ছেড়ে আরো বকতে যাবে তাঁর আগেই সুরভী বেগম বললেন,

— বউ মা নয়ন আর হৈমীকে নিয়ে উপরে যাও। আর মা আপনি একটু চুপ করেন। বাড়িতে সবাই বোবা হয়ে থাকবে এটা যদি মনে করে থাকেন তাহলে ভুল। সবাই বোবা হয়ে থাকার জন্য এ বাড়িতে আসবে না।

— কি তুমি আমার মুখের ওপর কথা বলছো? এই মেয়ে বাড়িতে আসতে না আসতেই ঝামেলা শুরু করে দিলো।

নয়না নয়ন আর হৈমীকে নিয়ে উপরে ওঠে গেছে। হৈমী কিছু বলতে চেয়েছিলো দাদিকে কিন্তু নয়না জোর করে উপরে নিয়ে গেলো। এদিকে সুরভী বেগম বললেন,

— দেখুন মা আপনি সামান্য বিষয় গুলো নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি করবেন না। রুদ্র জানতে পারলে এক সেকেন্ডও দাঁড়াবে না এ বাড়ি। তাছাড়া রুদ্র সারাজীবন এখানে থাকতেও চায় না। তাই যে কয়টা দিন আছে আপনি অশান্তি বাড়াবেন না। সংসারে শান্তি ফিরতে দিন। অনেকগুলো দিন পর বাড়িতে একটু শান্তির দেখা মিলেছে।

— আমি অশান্তি করি? নাকি তোমার ছেলে অশান্তি করার যন্ত্র তুলে এনেছে? ছেলের প্রতি দরদ দেখি উতলে উঠছে৷ কই ছেলে তো মায়ের প্রতি দরদ দেখিয়ে মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করলো না৷

— আপনি দয়া করে চুপ করুন। সবাই শুনতে পাবে। সূচনা শুনলে আবারো কষ্ট পাবে। মেয়েটা খুব কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছে। রুদ্রর সাথেও সব কিছু স্বাভাবিক হয়েছে আগের মতো। রুদ্র কে কথা দিয়েছে সূচনা, অনার্স টা শেষ করেই এ বাড়ির পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবে। আপনি আর পুরনো কথা তুলে অশান্তি বাড়াবেন না।

— উচিত কথা বললেই অশান্তি তাইনা। এই মুখে কুলু পেতে রইলাম৷ যখন এই মেয়ের জন্য বাড়িসুদ্ধ সবার মুখ ছোট হবে তখন আমি মজা দেখবো৷

— দেখুন মা আপনি ভুল বুঝছেন। কারো মুখ ছোট হবেনা৷ আজকাল কার ছেলে মেয়েরা এমনই হয়৷ হৈমী বেশীই মিশুক প্রকৃতির তাছাড়া বয়সটা নিতান্তই কম ওর আচরনে তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা না কারো।

— আমাকে তুমি শেখাতে আসো? আমি আজকালকার মানুষ না? বয়স হইছে বলে আমার কোন দাম নাই? ভুলে যেওনা বউ মা আমি সেই আদ্যিকালের মেট্রিক পাশ।

— আপনাকে শেখানো আমার কম্য না। আপনি আপনার শিক্ষা নিয়ে ঘরে চুপ করে বসে থাকুন। আর দয়া করে রুদ্র আসার আগেই মুখটা বন্ধ করুন৷

রুদ্রর দাদি আরো কিছু বলতে প্রস্তুতি নিতেই সুরভী বেগম ব্যাস্ত পায়ে রান্না ঘরে ঢুকে গেলেন।
.
রুদ্র বাড়ি ফিরলো আটটার দিকে। হৈমী নয়নার রুমে বসে নয়নের সাথে গল্প করছে। রুদ্র রুমে গিয়ে হৈমীকে দেখতে না পেয়ে নিচে চলে এলো। আশেপাশে তাকিয়েও পেলো না কাউকে। রান্নাঘরে আসবাবপত্র নড়াচড়ার শব্দ পেয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। হৈমীর ফোনটা রুদ্রর রুমেই তাই ফোন করতে পারছে না৷ সোফায় কয়েক মিনিট বসে থেকে ওঠে দাঁড়ালো। রান্নাঘরের দিকে যেতে ভীষণ ইতস্তত বোধ হচ্ছে তবুও বাঁধ্য হয়ে এগিয়ে গেলো। কাজের ফাঁকে নয়না রুদ্র কে দেখে হকচকিয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,

— রুদ্র ভাই কিছু লাগবে? পানি দেবো?

ছেলেকে রান্নাঘরের সামনে দেখে বিস্মিত চোখে তাকালো সুরভী বেগম। সালাদ কাটা বন্ধ করে কপালে তিন ভাজ ফেলে জিগ্যেস করলো,

— বাবা কিছু লাগবে?

— হৈমী কোথায়? আমিতো রুমে বসে থাকতে বলেছিলাম। গম্ভীর গলায় বললো রুদ্র।

নয়না বেশ তারাহুরো করে বললো,

— ওওও হৈমী ও তো নয়নের সাথে আমাদের ঘরে আড্ডা দিচ্ছে। আমি ডাকছি।

রুদ্র কিছু বললো না উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।পেছন থেকে ডেকে ওঠলো সুরভী বেগম। তাই থেমে গম্ভীর মুখেই পিছন ঘুরলো। রুদ্রর কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে তা দেখে সুরভী বেগম নিজের শাড়ির আঁচল এগিয়ে রুদ্রর কপাল মুছে দিতে যেতেই রুদ্র সুরভী বেগমের হাত সরিয়ে বললো,

— এসব কি করছো লাগবে না। আমি বাচ্চা ছেলে না৷

— বাবা, মায়ের কাছে সন্তানরা কখনো বড় হয় না বাবা৷ তাঁরা সারাজীবন বাচ্চাই থাকে।

— কিন্তু আমি তো সেই কোন ছোট বেলায়ই বড় হয়ে গেছি মা। বলেই এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না রুদ্র ব্যাস্ত পায়ে উপরে ওঠে গেলো৷ কারন সে জানে এখন তাঁর মা চোখের জল ফেলবে। যা তাঁর খুবই অপছন্দ। চোখের সামনে বাবা মায়ের কান্না দেখা প্রত্যেকটা সন্তানের জন্যই খুব বেদনাদায়ক।

দীর্ঘ সময়ের চাপা অভিমানগুলো বুকের ভিতর জমতে জমতে বুকের ভিতরটা যখন পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে যায় শত চেষ্টা করলেও সে পাথর আর ভাঙা যায় না।

এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখের পানি মুছে সকলের জন্য খাবার বেড়ে ডায়নিং টেবিলে রাখতে লাগলো সুরভী বেগম।
.
হৈমী রুমে আসতেই রুদ্র বললো,

— মা আর ভাবি রান্নাঘরে ছিলো রুম থেকে যেহেতু বের হয়েছিলে সেহেতু তোমার নিচে যাওয়া উচিত ছিলো। কাজ না করলেও ওদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত ছিলো।

হৈমী মুখটা গোমড়া করে বললো,

— নিচে তো গিয়েছিলামই দাদিইতো বকাবকি করলো তাই নয়না আপু উপরে বসে থাকতে বলেছিলো।

কাবলী খুলে গলায় তয়ালে ঝুলিয়ে বিছানায় বসে হৈমীর দিকে তাকালো। বললো,

— বকাবকি করেছে?

রুদ্রর মুখটা দেখে এক ঢোক গিললো হৈমী। চট করে রুদ্রর পাশে বসে বললো,

— দেখুন ওভাবে একদম তাকাবেন না। আমি কি জানতাম নাকি একটু খুশি হলেই দাদি রেগে যাবে। নয়ন এসেছে শুনেই আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাঁর জন্য অনেক কথা শুনিয়েছে দাদি। তাই নয়না আপু আমাকে আর নিচে যেতে দিলো না। শুনেছি শশুড় বাড়িতে শাশুড়ীরা দজ্জাল হয় এখন দেখছি এখানে উল্টো নিয়ম৷ দাদি শাশুড়ী সেই লেভেলের দজ্জাল বাবারে বাবা কি সাংঘাতিক মহিলা।

রুদ্র আড় চোখে চেয়ে বাঁকা হাসি দিলো। হৈমী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে জিগ্যেস করলো,

— আপনি হাসছেন কেনো? আমি বকা খেয়েছি আর আপনি হাসছেন। আপনার সাথে কথাই বলবো না ধ্যাত!

হৈমী সটাং সটাং পা ফেলে বেলকনিতে চলে গেলো।রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকাতেই চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো।

— ওয়াও দারুণ তো উপর থেকে বেয়ে বেয়ে খুব সহজেই নিচে চলে যাওয়া যাবে। বাহ সেই হবে কিন্তু আশে পাশে দোকান আছে তো মাঝরাতে বেলকনি দিয়ে পালিয়ে আইসক্রিম খেতে যাওয়ার মজাই আলাদা। উপস হৈমী পুরো ছয়মাস এখানে থাকতে হবে ছয়মাসে মন চাইলেই লুকিয়ে যেথা খুশি সেথা যাবি৷ কোন প্যাড়া নাই তোর।

খুশিতে গদগদ হয়ে পিছন ঘুরতেই রুদ্র কে দেখলো কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে। মুখটা ভাড় হয়ে গেলো বিরবির করে বললো,

— আরে ইয়ার তোর জীবনের আসল প্যাড়াই তো তোর সামনে। দেখা যাবে তুই আইসক্রিম খেতে যাওয়ার জন্য এসব কান্ড ঘটানোর আগেই বরফ রাজ্যে ঠেশে মেরে দিবে।
.
সকলে মিলে একসাথে ডিনার করলো। সে সময়ই আলোচনা করে ফেললো সকলে মিলে, মেয়েরা সবাই শপিংয়ের লিষ্ট করবে। ইতোমধ্যে সকল আত্মীয় স্বজনকে ইনভাইট করা হয়ে গেছে। কাল থেকেই অনেকে আসা শুরু করে দেবে৷ প্যান্ডেলের লোকজন কাল এসে সবকিছু দেখে যাবে। পরেরদিনই পুরো বাড়ি আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। দুদিন পরই বিয়র অনুষ্ঠান। রেদওয়ান শেখ সেসময়ই কথার ফাঁকে রুদ্র কে জিগ্যেস করলেন, রুদ্রর ফ্রেন্ড সার্কেল ছাড়া আরো কেউ আসবে কিনা। রুদ্র সকলের মাঝে প্রশ্নটা এড়িয়ে যায়। যার ফলে রেদওয়ান শেখ বুঝতে পারে রুদ্র বাড়ির সকলের সামনে তাঁর কাজের বিষয়টা তুলতে চায় না৷
.
হৈমী নয়নার রুমে বসে গল্পস্বল্প করছে। নয়না নয়নকে বললো সূচনার সাথে ঘুমাতে। হৈমী তখন চেঁচিয়ে ওঠলো।

— না না নয়ন আমার সাথে ঘুমাবে।

— না হৈমী রুদ্র ভাই রাগারাগি করবে। শুধু শুধু ঝামেলা বাড়ানো উচিত নয় তাছাড়া রুদ্র ভাই তাঁর রুমে তুই ছাড়া আর কাউকে এলাউ করবে না। তোদের দুজনকে রুম ছেড়েও দেবে না। এই গরমে এক বিছানায় তিনজন ঘুমানোও যাবে না। তাই তুই তোর হাজব্যান্ডের সাথেই ঘুমাবি।

নয়ন খিলখিল করে হেসে ওঠলো। হৈমী নয়নের পেটে গুতো দিয়ে বললো,

— শাঁকচুন্নি হাসছিস কেনো? বেশী বুঝলে তোরে পাঠাই দিবো রুমে।

— ওহো! সত্যি নাকি তোর পাঠাতে হবে না আমি একাই যাই। হাজার হলেও বিয়াই+দুলাভাই বলে কথা। বলেই নয়ন চোখ মারলো।

হৈমী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বিরবির করে বকতে থাকলো। রাদিফ রুমে এসে বললো,

— কি শালি সাহেবারা কি করছেন আপনারা?

হৈমী নয়নের নামে নালিশ জানালো রাদিফ হোহো করে হাসতে লাগলো। নয়না গ্লাসে পানি ভরে রাদিফ কে দিতেই রাদিফ চেয়ার টেনে বসে পানি খেয়ে নিয়ে গ্লাস দিলো নয়নাকে।

চারজন মিলে বেশকিছু সময় আড্ডা দেওয়ার পর নয়ন হৈমীকে ফিসফিস করে বললো,

— দোস্ত এবার আপু আর ভাইয়াকে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত।
.
নয়নার রুম থেকে বেরিয়ে নয়ন সূচনার রুমে গিয়ে দেখলো সূচনা পড়ার টেবিলে বসে কি যেনো লিখছে। নয়ন জিগ্যেস করলো,

— আপু আসবো?

সূচনা দরজার দিকে নয়নের দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো,

— জিগ্যেস করার কি আছে চলে এসো।

নয়ন ভিতরে গিয়ে বিছানায় বসলো। সূচনাকে বেশ ভয়ই পায় সে যদিও এ বাড়ি আসার পর সূচনাকে শুধু মাএ খাবার টেবিলে একবার দেখেছিলো। সূচনা একা থাকতেই পছন্দ করে। আগে থেকেই সে ভীষণ চুপচাপ স্বভাবের সেদিনের পর থেকে আরো মিইয়ে গেছে। ব্যার্থতা আর অপরাধবোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাঁকে। তাই পড়াশোনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখে, ব্যাস্ততায় থাকে সারাক্ষণ যার ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়। নয়ন বেশী কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে ফেসবুকে গিয়ে নিউজফিড ঘুরাঘুরি করতে লাগলো।
.
হৈমী রুমে এসে রুদ্র কে পেলো না। ভ্রু কুঁচকে এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করে ফোন হাতে নিলো। রুদ্রর নাম্বার বের করে ডায়াল করলো। রুদ্র রিসিভ করতেই হৈমী চিল্লিয়ে ওঠলো,

— আপনি কোথায়? কাহিনী কি সত্যি করে বলুনতো। বাড়িতে দু সেকেন্ডও থাকতে পারেন না। কার কাছে গেছেন কোন মেয়ের সাথে লাইন মারতে গেছেন সত্যি করে বলুন নয়তো আমি এখুনি বেলকনি থেকে নিচে ঝাঁপ দিবো বলে দিলাম।

— থাপড়িয়ে সবকটা দাঁত ফালাই দিবো একদম। বেলকনি থেকে ঝাঁপ দিতে হবে না ছাদে আসো তারপর ঝাঁপ দেওয়ানোর দায়িত্ব টা আমি নিচ্ছি।

— কি,,,যাবো না আমি। থাকুন আপনি ছাদে আজ যেনো আর রুমে না দেখি।

— দুমিনিটে ছাদে আসো জরুরি কথা আছে। দ্বিতীয়বার যেনো আর না বলতে হয় তাহলে থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিবো। বলেই ফোন কেটে দিলো রুদ্র।

হৈমী কিছুক্ষণ রুমে পাইচারী করলো। ফোনের দিকে চেয়ে যখন দেখলো একমিনিট হয়ে গেছে তখনি ফোনটা বিছানায় এক ঢিল দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো ছাদে।
.
ছাদে যেতেই দেখলো রুদ্র দোলনায় বসে আছে। বর্ডারের উপর বসে আছে নিরব,আবির আর সাদমান বসে আছে চেয়ারে। হৈমী আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললো,

— বাহবা! আপনারা সবাই এখানে আড্ডা দিচ্ছেন। আমি নয়নকে ডেকে নিয়ে আসছি দাঁড়ান তারপর সবাই মিলে আড্ডা দেবো।

সাদমান বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো,

— বাহ জটিল আইডিয়া তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো তোমার বান্ধবী কে।

হৈমী ঢ্যাং ঢ্যাং করে কয়েক পা এগুতেই রুদ্র বললো,

— স্টপ! আর এক পা এগুলেই পা কেটে হাতে ধরিয়ে এখানে বসিয়ে রাখবো। তারপর সাদমানের দিকে চেয়ে বললো,

— তোরা এবার যেতে পারিস। সব কাজ শেষ বাকিটা তোরা সামলে নে। কাল দেখা হচ্ছে ওকে? নাও গো!

নিরব ঝটপট ওঠে দাঁড়ালো। মিতু সেই কখন থেকে ফোন করছে আজ বাড়ি ফিরলে নিশ্চিত একটু ছুঁতেও দেবেনা ভেবেই কয়েক ঢোক গিলে নিরব দৌড়ের ওপর চলে গেলো। আবির আর সাদমান একে অপরের দিকে চেয়ে দুজন দুজনের কাঁধে হাত রেখে রুদ্র কে বললো,

— এতিম বইলা তোরা দুইটা যা তা বিহেভ করিস দিন একদিন আমাগোরো আইবো সেইদিন দেইখা নিমু হুহ। বলেই হৈমীর পাশে গিয়ে বললো,

— একটু শিক্ষা দিতে পারো না ওঠতে বসতে ঝাটাপিটা করবা। তাই এমন আচরন করবে না।

হৈমী ঠোঁট ফুলিয়ে কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই রুদ্র বললো,

— ওখানে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে এদিকে আসো।

সাদমান আর আবির দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,

— থাক ঝাটাপিটা করতে হবে না। শুধু মাথা ঠান্ডা করার দায়িত্বটা নিও আসি পিচ্চি ভাবী। টাটা।

হৈমীও দাঁত বের করে হেসে হাত নাড়িয়ে বললো,

— টাটা বাই আবার যেনো দেখা পাই।

— অবশ্যই অবশ্যই ভাবি জি বলেই দুজন চলে গেলো।
.
হৈমী সটাং সটাং পা ফেলে রুদ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কোমড়ে দুহাত গুঁজে দিয়ে বললো,

— সবসময় এমন জমিদারের ভাব ধরে থাকেন কেনো? মনে হয় আপনি একাই জমিদার আর বাকি সবাই আপনার প্রজা। এমন আদিক্ষেতা মার্কা বিহেভ একদম দেখাবেন না বলে দিলাম।

রুদ্র বাঁকা হেসে হৈমীকে ইশারা করলো পাশে বসতে। হৈমীর সকল চঞ্চলতা নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,

— আজকে একটু বেশীই গরম তাইনা। বাতাসটাও কেমন গরম গরম।

রুদ্র কিছু বললোনা ইশারায় শুধু বসতে বললো।হৈমী চুপচাপ পাশে বসলো। একটু শান্ত গলায়ই জিগ্যেস করলো,

— কি জানি জরুরি কথা বলবেন বলছিলেন বলুন।
— তোমার বাড়ির কাউকে জানাতে চাইলে জানাতে পারো। শুনলাম তোমার কোন ফুপুর সাথে যোগাযোগ আছে তাঁদের ঠিকানা বলো আমি কাল ইনভাইটেশন কার্ড পাঠিয়ে দেবো।

হৈমীর মনটা ভাড় হয়ে গেলো। বাড়ির কথা বলতেই মনে পড়ে গেলো বাবা,মায়ের কথা। এক ঢোক গিলে নিয়ে বললো,

— ফুপু ছাড়া কাউকে জানানোর দরকার নেই। দাদু,পরী,এলা সহ সুখনীড়ের সকলে এলেই চলবে। ওরাই আমার বাড়ির লোক ওরাই আমার পরিবারের লোক।

রুদ্র হাতে থাকা ফোনটা প্যান্টের পকেটে রাখলো। একহাতে হৈমীকে নিজের দিকে চেপে নিয়ে হৈমীর মাথাটা নিজের বুকে চেপে বললো,

— যা বলবে, যা চাইবে তাই হবে। তোমার ফুপু থাকে কোথায়?

হৈমী চোখ বুজে কয়েকবার শান্তির শ্বাস নিলো। প্রায় একবছর হয়ে এলো এই বুকটাতে যখন তখন ঠাই পায় সে। এই বুকের স্পন্দনের সাথে খুব বেশীই পরিচিত হয়ে গেছে সে। শরীরে যেনো মাদক মেসানো রয়েছে। ঘার্মাক্ত শরীরের অদ্ভুত ঘ্রানে ঘোর লেগে যায় কেমন। ঘোর লাগা গলায়ই ঠিকানা দিলো হৈমী।

তাঁর এই অদ্ভুত কন্ঠস্বরে বুকের ভিতর উষ্ণ বাতাস বয়ে গেলো কেমন৷ দুহাতে জরিয়ে নিয়ে একদম কোলে বসিয়ে দুগালে আলতো ছুঁয়ে কপালে কপাল, নাকে নাক ঠেকিয়ে বললো,

— কেনো কষ্ট পাচ্ছো? আমি আছিতো। যারা চলে গেছে তাঁদের জন্য কষ্ট পেয়ে কি হবে? বরং উপরওয়ালার কাছে তাঁদের জন্য দূয়া করো। আর যে সামনে আছে তাঁকে ভালোবেসে আগলে রাখো।

চোখ তুলে তাকালো হৈমী এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো চোখ বেয়ে। কান্নার মাঝে মৃদু হেসে ওঠলো সে। রুদ্র চোখ বুজে তৃপ্তির শ্বাস নিচ্ছে। হৈমী একহাতে ওড়নার এক কোনা নিয়ে কপাল ওঠিয়ে রুদ্রর কপালের ঘামগুলো মুছে দিতে লাগলো। চোখ খুলে তাকালো রুদ্র।

হৈমী খুব যত্মসহকারে তাঁর কপাল মুছে নাক মুছে দিচ্ছে। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠলো তাঁরও।
.
লেখা শেষে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিলো সূচনা। কিন্তু ঘুম তাঁর একদমই পাচ্ছে না। এমনটা প্রায়ই হয় মাঝে মাঝে কাঁদতে ইচ্ছে করে খুব। দম বন্ধ লাগে কেমন। আজো লাগছে তাই প্রতিদিনের মতো আজো রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো। উদ্দেশ্য “খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া। রাতের আঁধারে বিদঘুটে অন্ধকারে চুপিসারে বেহায়া চোখেরজল গুলোকে বিসর্জন দেওয়া”।
.
হৈমীর আদর পেয়ে যখন রুদ্র অপলকভাবে তাঁর মুখপানে চেয়ে ছিলো তখনি লজ্জায় দুহাতে জাবটে ধরে রুদ্রর বুকে মুখ লুকিয়েছে হৈমী৷ রুদ্রর প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। অতিরিক্ত চঞ্চল মেয়েরা যদি হুট করে প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে মনের মানুষ থেকে লুকাতে চায়। তবুও সেই মানুষটার বুকেই সেই মূহুর্তটা ঠিক কতোটা অসাধারণ হয়, ঠিক কতোটা মোহময় হয়,কতোটা রোমাঞ্চকর হয় তা বোধ হয় শুধু রুদ্রই অনুভব করছে আজ এ মূহুর্তে।

দুজনই যেনো চলে গেছে অন্য এক ঘোরের জগতে। যে জগত থেকে ফিরে আসার বিন্দুমাএ ইচ্ছে কারো নেই। রুদ্র হৈমীকে আরো গভীরভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে একটু ঝুঁকে হৈমীর মাথায় কিস করলো। হৈমী সঙ্গে সঙ্গে বুক থেকে মাথা তুলে একটু উঁচু হয়ে রুদ্রর কপালে কিস করলো। রুদ্র হালকা হেসে ফেললো হৈমীর কান্ড দেখে। হৈমী লজ্জা পেয়ে আবারো বুকে মুখ লুকালো। যা রুদ্রর বুকের ভিতর সুখের শিহরণ বয়িয়ে দিলো। হৈমীর পিঠে বিছিয়ে থাকা চুলগুলো একহাতে সরিয়ে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলো কাঁধে। আচমকাই এমনটা হওয়াতে দুহাতে রুদ্রর পিঠ খামচে ধরলো হৈমী৷

ধীরে ধীরে রুদ্র হৈমীর কাঁধ থেকে ঘাড়ে, গালে, কপালে অতঃপর ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। রুদ্র সব সময় হৈমীকে কিস করলে হৈমী স্ট্যাচু হয়ে থাকে। দুহাত ছাড়া আর কোন সাড়াই পাওয়া যায় না। যা খুব বিরক্ত লাগে রুদ্রর কাছে। প্রথম প্রথম না হয় অন্য ব্যাপার ছিলো এখনো কেনো এমন করবে ভেবেই ইচ্ছে করে ঠোঁটে কামড়াতে শুরু করলো। হৈমী চোখ বড় বড় করে উম উম শব্দ করে দুহাতে রুদ্রর গালে ধরে সরাতে চেষ্টা করলো। রুদ্র হাসবে না জ্বালাবে তাই ভেবে পাচ্ছে না। তবুও জ্বালাতে লাগলো৷ হৈমীর দুহাত পিছনদিক নিয়ে শক্ত করে ধরে আরেক হাতে হৈমীর পিঠ চেপে ধরে রইলো।ঠিক সে সময়ই ছাদের দরজা থেকে কয়েক পা এগিয়েছে সূচনা৷

মানুষের উপস্থিতি বুঝে দোলনার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো দুজন মানুষ দুজনের সাথে একদম লেপ্টে আছে। হৈমীর করা ছটফট রুদ্রর করা মাতলামো ছাদের লাইটের আলোয় স্পষ্ট ভেসে ওঠলো সূচনার চোখে। দুহাতে নিজের মুখটা চেপে ধরে পিছন ঘুরলো সূচনা। চোখ দুটো বুজে চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দ্রুত পায়ে যায় সিঁড়ির দিকে । কিন্তু কয়েক সিঁড়ি যেতেই প্লাজুর সাথে উষ্ঠা খেয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায় নিচে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here