#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_২১
#জান্নাতুল_নাঈমা
কেঁদে যেনো বন্যা বানিয়ে ফেলবে এভাবে কাঁদছে হৈমী। মাথার স্কার্ফ অর্ধেক খুলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে চোখ,মুখ লাল হয়ে গেছে। রুদ্র ড্রাইভিং সিটে গা এলিয়ে চোখ বুজে আরাম করে আধশোয়া হয়ে বসে আছে। তাঁর পাশে যে একজন বসে কাঁদছে যার মাঝে যার ঠোঁট জোরায় এতোটা সময় মত্ত হয়ে ছিলো সে ব্যাক্তিটা যে কেঁদে পরিহিত স্কার্ফ টা ভিজিয়ে চুপচুপে করে ফেলেছে সেদিকে কোন হুশ নেই তাঁর।
একবার চোখ মুছছে তো আরেকবার ঠোঁট মুছছে হৈমী। নাকের পানি হাতের ওলটো পিঠ দিয়ে বার বার ঘষা দিয়ে মুছছে। একটু পর পর আড় চোখে রুদ্র কে দেখছে আর বিরবির করছে,
— কি হার্টলেস এভাবে কাঁদছি তবুও দয়া মায়া হচ্ছে না রোবটের মতো বসে আছে। খিদের জ্বালায় পেটটা মুচড়ে ওঠছে। কিন্তু বলতেও তো পারবোনা খেতে নিয়ে চলুন। কারন আমিতো কাঁদছি আমার ঠোঁট টা যেভাবে শুষে নিচ্ছিল মনে হলো খেয়েই ফেলবে। নিজে না হয় ঠোঁট খেয়ে পেট ভরিয়েছে আমি খাবো কি?
— কান্না শেষ হবে কখন? চোখ বুজেই গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো রুদ্র।
প্রশ্নটা শুনে এত্তো মেজাজ খারাপ লাগলো যে দাঁত কটমট করতে করতে রুদ্রর দিকে এগিয়ে রুদ্রর বড় বড় চুলগুলো দুহাতে পিছন থেকে টেনে ধরলো।
— কেমন লাগছে এবার ? দাঁত কিড়মিড় করে বললো হৈমী।
— বেশ আরাম লাগছে সবগুলোই টেনে দাও। নাকি ছোট হাতে সবগুলো আঁটছে না?
চমকে ওঠলো হৈমী চুলগুলো ছেড়ে আগের ন্যায় সিটে বসে রাগে গটগট করতে করতে বললো,
— আপনি আসলেই একটা খারাপ লোক, অসভ্য লোক,আপনি একটা লুইচ্চা খাশ বাংলায় বললাম।
রুদ্র চোখ খুলে তাকালো হৈমীর দিকে মোহময় সে দৃষ্টি তে নিজের দৃষ্টি স্থির রাখতে পারলো না হৈমী। এদিক সেদিক তাকাতে ব্যাস্ত তার চোখ।
— বউয়ের সাথে লুইচ্চাগিরি না করলে বউ তো পরপুরুষে আসক্ত হয়ে যাবে। তাই বউয়ের সাথে লুইচ্চাগিরি করা প্রত্যেকটা স্বামীর দায়িত্ব এবং অধিকার।কিন্তু তোমার মতো ষ্টুপিডের কাছে এসব লুইচ্চাগিরি ভালো লাগবে না। একটা কথা জানোতো খালি কলস বাজে বেশী তুমি হচ্ছো খোলা কলস। ভিতরে সব খালি কিচ্ছু নাই।
— কিহ!
— আই মিন মাথায় কিচ্ছু নেই পুরো মাথাই ফাঁকা। বলে বাঁকা হাসলো রুদ্র।
.
নিরবদের বাড়ি বেশ অন্যরকম লাগলো হৈমীর কাছে। যেমনটা তাঁর দাদার বাড়ি ছিলো। গ্রামের দিকে একতলা বাড়িটা বেশ বড়সড়ই। বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষই হৈমীর সাথে খুব সহজভাবেই মিশেছে। কতো আদরও করছে সবাই। নিরবের মা তো প্রথম দেখেই হৈমীর থুতনিতে ধরে বলেছেন,
— বাহ কি মিষ্টি মুখ আমার রুদ্র বাবার বউয়ের। সুখি হও মা। মায়েদের বোধ হয় এমনি হওয়াই মানায়। প্রত্যেকটা সন্তান কেই নিজের সন্তান সুলভ আচরন করা।
রুদ্র, হৈমী দুজনই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়েছে। অতিরিক্ত খিদে পাওয়াতে হৈমী মিইয়ে গেছিলো। এখন বেশ ভালো লাগছে তাঁর মিতু সব গোছাচ্ছে আর হৈমী গল্প করছে। নিরবের বোন নিলুও হৈমীর সাথে বেশ মিশে গেছে। সব গুছিয়ে মিতু বললো,
— হৈমী চলো আমার রুমে আজ কিন্তু যেতে দিচ্ছি না। সন্ধ্যা হয়েই এলো দুজন মিলে রেডি হয়ে নেই। আমার কর্তার হুকুম আজকে শাড়ি পড়তেই হবে।
— রেডি কিসের জন্য রেডি হবো আপু? আর আমাকে তো যেতে হবে দাদু কে বলে আসিনি তো। বললো হৈমী।
— এমা হৈমী ভাবি তুমি জানোনা আজ মিতু ভাবি আর নিরব ভাইয়ার ম্যারেজ ডে। ভাইয়ার বন্ধু দের মধ্যে সর্বপ্রথম কাপল নিরব ভাইয়া মিতু ভাবি আর সেকেন্ড রুদ্র ভাইয়া আর তুমি। তাই তো আজ কাপলেদর ইনভাইট করা হলো সাদমান ভাইয়া আবির ভাইয়া ওরাও আসবে একটু পর। তোমরা রেডি হয়ে নাও। বললো নিলু।
— কিন্তু আমিতো এসব জানিনা। তাছাড়া আমিতো পোশাকও নিয়ে আসিনি। চিন্তিত কন্ঠে বললো হৈমী।
মিতু হৈমীর হাত টেনে নিতে নিতে বললো,
— তোমার জামাই সব ব্যবস্থা করে রাখছে চলতো।
— মানে?
— ভিতরে চলো তাহলেই বুঝবে।
.
মিতুর রুমে আসতেই দেখতে পেলো বিছানায় বেশকিছু শপিং ব্যাগ৷ মিতু ভ্রু উচিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,
— এখানে রুদ্র ভাইয়া আমার আর তোমার জন্য গিফ্ট রেখেছে এই দুটো তোমার। এই দুটো আমার তুমি তোমারটা পড়ে নাও আর আমি আমার টা রেখে দেই। জামাইয়ের দেওয়া শাড়িই পড়বো আজ।
হৈমী মুখ বাঁকা করতে চেয়েও পারলোনা। মনে মনে ভাবলো, ‘উমহ,,,গিফ্ট দিয়েছে আদিক্ষেতা’
শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে ভিতরে কি আছে দেখার জন্য উঁকি দিলো। মিতু জিগ্যেস করলো কি আছে?
হৈমী ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
— কি আর থাকবে ভালো জিনিস অবশ্যই নেই। আমার বারোটা বাজানোর জিনিসই আছে। ওনার থেকে ভালো কিছু আশা করাও পাপ।
— আহাগো ওভাবে বলছো কেনো দেখি কি আছে?
বলেই ব্যাগ থেকে কালো রঙের সাথে গোল্ডন রঙ মিশ্রিত শাড়িটা বের করলো। অসম্ভব সুন্দর শাড়িটা দেখে হৈমীর দিকে চেয়ে বললো,
— এই বোকা মেয়ে কত্তো সুন্দর শাড়ি ভাইয়ের চয়েজ আছে বলতে হবে দেখো শাড়িটা, রাজটেক্স কাঞ্জিবরন কাতান শাড়ি। এগুলা তিনটে কিনেছি আমি অনলাইন থেকে বেশ দামও অবশ্য রুদ্র ভাইয়ের কাছে হাতের ময়লা এগুলো। তোমায় খুব সুন্দর মানাবে।
— না আমি শাড়ি পড়তে পারিনা। আজ অবদি কখনো শাড়ি পড়িইনি আমি। বললো হৈমী।
— আরে বোকা আমি আছি কি করতে হুম আমি পড়িয়ে দিবো তোমাকে দেখি ব্লাউজ, পেটিকোট কি কালার বলেই শপিং ব্যাগ থেকে গোল্ড কালারের সূতি কাপড়ের ব্লাউজ পেটিকোট বের করলো।
হৈমী চোখ বড় বড় করে তাকালো মিতুর হাতের দিকে। অমন চাহনী দেখে মিতু অট্রস্বরে হেসে ওঠলো। ভ্রু নাচিয়ে বললো,
— ছেলের বুদ্ধি আছে বলতে হবে। দেখি ব্লাউজ মাপে ঠিক হয় কিনা বলেই ব্লাউজ হাতে নিয়ে হৈমীর দিকে এগুতেই হৈমী মৃদু চেঁচিয়ে বললো,
— না আমি পড়বো না শাড়ি। ওনার শাড়ি ওনাকেই পড়াও আপু আমি যা পারিনা তা পড়বো না আমি। আর এগুলাও আমার লাগবে না।
— তা বললে তো হবেনা বনু পড়তে তো হবেই।
— পড়বো না আমি বাড়ি যাবো ভালো লাগছে না আমার।
— আশ্চর্য এমন করছো কেনো? তুমি তো এমন করার মেয়ে না ভয় পাচ্ছো? আরে তেমন কিছু না জাষ্ট সেজে গুজে আমরা কেক কাটবো। সকলে মিলে আড্ডা দিবো এটুকুই সারারাত গল্প করবো সকলে মিলে। তুমি কি চাও তোমার জন্য আমার আজকের দিনটা মাটি হোক?
অনেক ভেবেচিন্তে হৈমী শাড়ি পড়তে রাজি হলো।
মিতু হৈমীকে শাড়ি পড়িয়ে নিজেও পড়ে নিলো। কালো রঙ টা এত্তো মানিয়েছে হৈমীকে বলার বাইরে। কালো পড়াতে তাঁর গায়ের গোলাপি ফর্সা রঙটা যেনো আরো চওড়া হয়ে গেছে। মিতুই চোখ সরাতে পারছে না। হৈমী স্ট্যাচু হয়ে বসে আছে শাড়ি পড়ে সে একদমই হাঁটতে পারে না। মনে হয় এই বুঝি শাড়ি খুলে গেলো।মিতু সাজছে আর হৈমীর সাথে টুকটাক কথা বলছে কথার ফাঁকে হৈমী জিগ্যেস করেই ফেললো,
— আপু শাড়িতে আমাকে ভালো লাগছে তো? বুড়ি বুড়ি লাগছে না তো?
— এটা না হয় রুদ্র ভাইয়াকেই জিগ্যেস করো আমার থেকে ওনি ভালো বলতে পারবেন এটা।
— মোটেই না ভালো কথা ওনি বলতেই পারেনা। রাগি,গম্ভীর, বাজে একটা মানুষ ওনি হুমহ।
— তাই কিন্তু আমিতো জানি ওনি তোমার জন্য কবি হয়ে গেছে কি কি জানি লিখে পাঠিয়েছিলো শুনেছিলাম।
হৈমী চুপ হয়ে গেলো এমনিতেই তাঁর লজ্জা লাগছে আবার এসব কথা। ইশ কেমন যেনো এক লজ্জা লাগছে তাঁর ভীষণ রকম লজ্জা। শাড়ি পড়লে কি সব মেয়ের মাঝেই এত্তো লজ্জা এসে ভর করে নাকি শুধু তাঁরই এত্তো লজ্জা লাগছে। ফোন বেজে ওঠতেই কেঁপে ওঠলো হৈমী দাদু ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে দাদু বললো,
— দিদিভাই পরীর সাথে কথা বলতো পরী তোমার সাথে কথা বলার জন্য কান্না করছে।
— দাদু আমাকে ঐ,,, কথা কেটে দাদু বললো,
— রুদ্র দাদুভাইয়ের সাথে আছো তাই তো চিন্তা করোনা আমাকে জানিয়ে দিয়েছে রুদ্র দাদুভাই। নাও পরীর সাথে কথা বলো।
পরীর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো হৈমী। খানিক পরেই নিরব এলো রুমে জানালো সব বন্ধু রা এসেছে ড্রয়িং রুমে চলো। মিতু কে দেখে চোখ সরানো দায় হয়ে পড়েছে ইশারায় চুমু দেখালো হাতের আঙুল দেখিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— আর কয়েকঘন্টা জান তারপর এমন পাগল করা সাজ পাগলামি দিয়ে নষ্ট করবো।
মিতু লজ্জা পেলো ভীষণ। লজ্জায় গাল দুটো ভারি হয়ে এলো তাঁর। হৈমী বিছানায় বসে ছিলো আড় চোখে হৈমীকে দেখে মিতুকে ইশারা করলো বাইরে নিয়ে এসো।
.
রুদ্র বসে ফোন ঘাটছিলো। সাদমান,আবির আরো কয়েকজন বন্ধু এসেছে। নিরবের মা সকলকে নাস্তা পানি দিয়ে সবকিছু গোছাচ্ছে আবার। নিলুও রেডি হয়ে সবে ড্রয়িং রুমে এসেছে তখনি বেরিয়ে এলো মিতু আর হৈমী। হৈমী একদমই হাঁটতে পারছে না মিতুর হাত ধরে টিপটিপিয়ে হাঁটছে যেনো বৃষ্টি তে কাঁদার ছড়াছড়ি এভাবে না হাঁটলে পড়ে যাওয়ার চান্স আছে। ভাবটি ঠিক এমনই।
চোখ ধাঁধানো দুজন সুন্দরী যেনো এগিয়ে আসছে। মিতু সুন্দরী এভাবে মিতু কে সকলেই অনেকবার দেখেছে। বয়স ২৩, ২৪ কিন্তু হৈমী সতেরো বছরের এক কিশোরী। তাঁকে শাড়িতে ভীষণ আলাদা লাগছে। চেহেরায় বাচ্চা একটা ভাব রয়েই গেছে। গাল দুটোতে কেমন লালচে আভা মেকআপ করেছে নাকি লজ্জা পাচ্ছে বোঝা মষ্কিল। সাদমান রুদ্র কে খোঁচাতে লাগলো ভাই সামনে তাকা। রুদ্র একপলক চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে। নিলু চেঁচিয়ে বলে ওঠলো,
— ওয়াও দুই ভাবিকেই অস্থির লাগছে। নতুন ভাবিকে দেখে মনে হচ্ছে কোন হুরপরী। ইশ এত্তো কিউট এত্তো সুন্দর কেনো রুদ্র ভাইয়ার বউ।
সাদমান বললো,
— বউটা কার দেখতে হবে না।
হৈমী কে নিয়ে রুদ্রর পাশে বসালো মিতু। হৈমী না চাইলেও বসতে হলো। তার পাশে এসে বসলো নিলু।যার ফলে সরে যাওয়ার উপায় নেই। বুকটা ধকধক করছে রুদ্রর সাথে যদি ছোঁয়া লেগে যায়?
নিলুতো সমানে হৈমীর সাজের প্রশংসা করতে লাগলো। একসময় হৈমী বলে ওঠলো,
— এর আগে যতোবার আমার সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনেছি ততোবার আমি খুশি হয়েছি কিন্তু আজকে আমার কেমন জানি লজ্জা লাগছে। তোমরা কি প্রশংসার সাথে লজ্জা মিশিয়ে দিচ্ছো নাকি?
রুদ্র বাদে সকলেই হোহো করে হেসে ওঠলো।
মিতু নিরবের মাকে সাহায্য করছে। ওনি বার বার বলছে বউ মা সাজগোজ করে কাজ করতে এসেছো সাজ তো নষ্ট হয়ে যাবে। মিতু তবুও শুনছে না এতোগুলো মানুষের দায়িত্ব একা শাশুড়ী কে দেওয়ার মানুষ সে না। লোকে বলে প্রেমের বিয়ে নাকি টিকে না সংসারে অশান্তি হয়। শশুড়, শাশুড়ী, ননদ জা এদের সাথে পড়েনা বনিবনা হয় না। কিন্তু কয়েকবছরে সেসবের কিছুই হয়নি তাঁদের পরিবারে। এতোবছর নিরব বেকার ছিলো তবুও কোনদিন একটা অভিযোগ করেনি মিতু। নিরবের মতো করেই সবটা মানিয়ে নিয়েছে। নিরব জব পাওয়ার পর তাঁর সব শখ পূরন করার চেষ্টা করছে। জামাই মনের মতো,শশুড়,শাশুড়ী, ননদ সব মনের মতো এক জীবনে সুখী হতে আর কি লাগে?
.
কেক কাটা শেষে সব বন্ধু রা মিলে ছাদে বেশকিছুক্ষন আড্ডা দিলো। নিরবকে সবাই এতো জোর করিয়েও আজ ড্রিংক বা একটা সিগারেট খাওয়াতে পারেনি৷ শেষে জোরাজোরি তে নিরব বলে,
— দেখ সারাদিন একটা সিগারেট ছুঁয়েও দেখিনি শেষে এসে ছুঁয়ে আজকের দিনটা মাটি করতে চাই না। মিতু কড়া করে নিষেধ করেছে আজকের দিনটা এসব না ছুঁতে।
— একটা দোস্ত খা না একটা কিচ্ছু হবে না। মিতু ভাবি তো খুব ভালো মাইয়া। এক কাজ কর একটান দে চুমু খাওয়ার আগে ব্রাশ করে নিবি ব্যাস হয়ে গেলো।বললো আবির।
নিরব চোখ কটমট করে তাকাতেই সাদমান আবিরের মুখ চেপে ধরে বললো,
— শালা বেশীই গিলে ফেলেছিস চল বাড়ি যাই এদের এখন একা ছাড়া উচিত।
রুদ্র সিগারেটে টান দিতে দিতে দোলনায় গিয়ে বাম পায়ের ওপর ডান পা তুলে বসলো। সাদমান আবিরকে টেনে টুনে নিয়ে গেলো নিচে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়লো। নিরব স্বস্তির এক শ্বাস ছেড়ে মিতুকে ফোন করে হৈমীকে নিয়ে উপরে আসতে বললো।
নিলু বললো,
— ইশ এতো তারাতারিই ডাক পড়লো তোমাদের? আরেকটু গল্প করা যেতো। বলেই মুখটা ভাড় করলো।
— মন খারাপ করছো কেনো ছাদে চলো গল্প হবে চন্দ্রবিলাস হবে আহা!অনেক মাজ হবে আমিতো মাঝে মাঝেই চিকু মামার দোকানের বারমিস আচাড় কয়টা কিনে নিয়ে ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখি আর খাই। গল্প করার মানুষ পাইনা তাই চাদের সাথেই গল্প করি। আহা শান্তি!
মিতু বললো– চলো উপরে চলো নিলু তুইও চল বেশকিছু সময় আড্ডা দেওয়া যাবে।
— না থাক আমি ভাই কাপলদের মাঝে যেতে চাইনা। ভাইদের ছটফটানি আমার আবার সহ্য হয় না। বলেই হিহি করে হাসতে হাসতে সোফা থেকে ওঠে দৌড় লাগালো।
— পাজি মেয়ে বলেই মিতু হৈমীর হাত ধরে বললো চলোতো।
— নিলু আপুকেও আসতে বলো আমরা মজা করবো তো অনেক নিলু আপু,,, ও নিলু আপু।
— হৈমী নিলু আসবে না। এখন বয়ফ্রেন্ডের সাথে চ্যাটিংয়ে বিজি থাকবে মহারানী।
— সেকি নিলু আপুর বয়ফ্রেন্ড আছে?
— এসব কথা পরে হবে আগে চলোতো যাই।
.
প্রথম সিড়িতে পা ফেলতেই ভয় হলো হৈমীর শাড়ি যদি খুলে যায়? অসহায় চোখে তাকালো মিতুর দিকে। মিতু বুঝতে পেরে বললো আচ্ছা দাঁড়াও এখানে আসছি আমি। বলেই উপরে ওঠে গেলো।
হৈমী কিচ্ছু বুঝলো না গাল ফুলিয়ে দুহাতে শাড়ির কুচি ধরে উঁচু করে এক পা, দু পা করে এগুতে থাকলো।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রুদ্র সিঁড়ি পেরিয়ে একদম হৈমীর সামনে এসে দাঁড়ালো। হৈমী চমকে গিয়ে হতবুদ্ধি হারিয়ে পিছন দিকে পা নিতেই পড়ে যেতে নিলো সাথে সাথে রুদ্র কোমড় পেঁচিয়ে ধরে রাগি চোখে চেয়ে ধমকে ওঠলো।
— হোয়াট দ্যা! এখুনি পড়ে যেতে।
ধড়ফড়িয়ে রুদ্র দুকাধ দুহাতে চেপে ধরলো হৈমী। এক ঢোক গিলে রুদ্রর দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো। পেটে উষ্ণ হাতের শক্ত স্পর্শ অনুভব হতেই শরীর শরিশির করে ওঠলো। চোখ দুটো বন্ধ করে মিনমিন করে বললো,
— আমার সুড়সুড়ি লাগছে আপনি হাত টা সড়ান।
— পড়ে গিয়ে কোমড় ভাঙার ইচ্ছে হয়েছে নাকি। শীতল চাহনীতে চেয়ে বললো রুদ্র।
— পড়বোনা আমি ধরে আছিতো।
রুদ্র বিস্ময় চোখে তাকালো হৈমীর মুখের দিকে। খেয়াল হলো তাঁর হাত হৈমীর শাড়ির ভিতরের উন্মুক্ত পেটে চেপে আছে। এতো সফট কারো পেট হয়? এক ঢোক গিলে নিয়ে বিস্ময় ভরা চোখ স্বাভাবিক করে নিয়ে দুহাতে তুলে পাজাকোল করে নিলো। হৈমী বড় বড় চোখ করে রুদ্রর দিকে তাকালো। রুদ্র নিজের মতো আগাতে থাকলো।
‘সিনেমা হচ্ছে নাকি সিনেমার মতো গাড়িতে লিপকিস ,আবার কোলে তুলে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠা সে কি কোন হিরোইন আর রুদ্র কি হিরো হয়ে গেলো? নাকি রুদ্রর মতো গম্ভীর স্বভাবের জামাইরা এমনই হিরোদের মতো হয়’?
নিরব মিতুর সামনে নিয়ে নামালো রুদ্র হৈমীকে। হৈমী লজ্জায় যেনো মরে যাচ্ছে ‘ছিঃ ছিঃ এদের সমানে এনে কেনো নামাতে হবে। দরজার ওখানে নামালেই তো হতো। এভাবে কেউ লজ্জায় ফেলে নিজের না হয় লজ্জা নেই কিন্তু আমি তো তাঁর মতো লজ্জাহীন না, কি বেহায়া লোক ধ্যাত’ ভাবছে হৈমী।
.
বেশকিছুক্ষন আড্ডা দিলো সকলে মিলে। হৈমী প্রথমে লজ্জা পেলেও মিতু কথার ছলে গল্পে ডুবিয়ে রাখলো তাঁকে। নিরব ও বেশ কথাবার্তা বলছে। তাঁরা তিনজন বসেছে চেয়ারে রুদ্র বসে আছে দোলনাতে। সে ফোনে ব্যাস্ত। হৈমী মাঝে মাঝে আড় চোখে রুদ্র কে দেখছে আর ভাবছে ‘এতো বরিং জামাই ক্যান দিলো আল্লাহ না তাকায় না কথা বলে ‘ পরোক্ষনেই ভাবলো ‘ধূর এমন হৃদয়হীন মানুষের থেকে এসব আশা করাও ভুল’
.
নিরবের ফোন এসেছে বলে ওঠে গেলো। চারদিকে নিস্তব্ধতা। জোৎস্নার আলোতে দুজন শাড়ি পরিহিত নারীকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রুদ্র। খোলা চুল সামনের চুলগুলো বেবি কাট দেওয়া কপাল ঢেকে আছে। আনমনে ভাবতে লাগলো মাঝখানে সিঁথি কেটে পিছন দিক খোঁপা বাঁধলে কেমন লাগতো?বাচ্চা মুখটা কি বড় বড় লাগতো? কিশোরী কন্যা কে কি তখন যুবতী লাগতো? পরিহিত শাড়িটা যদি বাঙালি ভাবে পড়া হতো অন্যরকম এক সৌন্দর্য এসে কি ভর করতো না? সেই কোন ছোটবেলায় মা কে একবার সেভাবে দেখেছিলো হৈমীকে কি দেখার ভাগ্য হবে? হবে না কেনো অবশ্যই হবে।
মিতু আর হৈমীর হাসির শব্দ কানে আসতেই ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটলো৷ চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো।গম্ভীর হয়ে বসে থাকতে একদমই ভালো লাগছেনা৷ আজ খুব বলতে ইচ্ছে করছে। মনের সব কথা উজার করে দিতে ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে। এমন দিনের অপেক্ষায়ই তো ছিলো সে। ছোট থেকে তো কম কথা জমায়নি মনে। জমানো কথা গুলো যে এবার বলার সময় এবং মানুষ দুটোই এসেছে। সে কি বুঝবে আমাকে? বুঝবে না কেনো? বুঝতে হবে? সে যদি না বুঝে তাহলে কে বুঝবে আর? এক ঢোক গিললো রুদ্র। আকাশপান থেকে চোখ নামিয়ে আবারো তাকালো হৈমীর দিকে। কথা বলছে মেয়েটা। মাঝে মাঝে হাত নারাচ্ছে যখন ঢোক গিলছো গলার গর্তে নরন হচ্ছে তা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রুদ্র। গোল্ড চেইন টা ফর্সা গলায় কি সুন্দর মিশে আছে। লকেট টাতে চোখ পড়তেই আনমনে হেসে ফেললো । তাঁর বুকে সে আছে তা কি জানে? নাহ জানে না জানবে কি করে তাঁকে তো বলা হয়নি। হুট করে কোন একদিন দেখে নিশ্চয়ই অবাক হবে।
আবারো হেসে ওঠলো হৈমী। রুদ্র তীক্ষ্ণ চাহনীতে চেয়ে দেখলো সে হাসি। দাঁত বের করে হাসলে এতো সুন্দর লাগে মেয়েটাকে। কাঁদলেও সুন্দর লাগে কিন্তু সেই সৌন্দর্যে বুকে ব্যাথা হয় আর হাসলে বুকের ভিতর আনন্দের শিহরণ খেলে যায়। যে মেয়ের হাসি সুন্দর সে মেয়ে নির্দিধায় সুন্দরী,এবং তাঁর মন পবিএ। পবিএ মনের পবিএ মুখের স্নিগ্ধ হাসি সত্যি মোহনীয়।
পৃথিবীর সব ইচ্ছেরা এসে দোলা দিচ্ছে মনে। ইচ্ছে করছে মেয়েটার গালে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে। ইচ্ছে করছে কপালে আলতো ভালোবাসার পরশ একে দিতে, ইচ্ছে করছে হৈমী নামক হুরপরীর কোলে মাথা রেখে মনে জমানো সমস্ত কষ্ট গুলোকে ভাগাভাগি করে নিতে। বাচ্চা মেয়েটার থেকে ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করছে। কেনো এতো ইচ্ছে করছে আজ? সব ইচ্ছে রা মনের ভিতর চেপে কেনো বসেছে? উথাল-পাতাল ঢেউ কেনো খেলে যাচ্ছে বুকে?
এসবের উত্তর জানা নেই রুদ্রর বা আছে তবুও সে উত্তর দিতে চায় না। সে উত্তর চায় সামনের ঐ মেয়েটার থেকে উত্তর চায় সে। দোলনা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো রুদ্র।
দোলনার কড়কড় শব্দে চমকে তাকায় মিতু আর হৈমী। রুদ্র এক ঢোক গিলে চুল গুলো আঙুলের ফাঁকে নিয়ে পিছন দিক নিয়ে স্থির দৃষ্টি তে তাকায় মিতু আর হৈমীর দিকে। মিতু বুঝে কিছু বলবে তাই ফোনের স্ক্রিনে চেয়ে দেখে কটা বাজে। ১০টা বেজে গেছে নিরব দশটায়ই নিচে যেতে বলেছে তাকে। কিন্তু রুদ্র ভাই কি বলে শুনে নেই আগে ভেবেই রুদ্রর দিকে তাকায়। হৈমীও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। রুদ্র সোজাসাপটা বলে,
— মিতু তোমাদের গল্প শেষ? গল্প শেষ হলে আমি হৈমীর সাথে একাকী সময় কাটাতে চাই।
চলবে।