ভালোবাসায়_বন্দিনী #পর্ব_২৪

0
2465

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_২৪
#জান্নাতুল_নাঈমা

রেষ্টুরেন্টের ভিতরে কর্নারের টেবিলে গিয়ে বসলো রুদ্র। চেয়ারে হেলান দিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বসে হৈমীকে ইশারা করলো বসতে।

— বসবো না আমি। কি ভেবেছেন কালকের কথা আমি ভুলে গেছি। এতো দাম কিসের আপনার। এতো যখন দামই দেখাবেন বিয়ে করতে কে বলেছে। চেঁচিয়ে বললো হৈমী।

রুদ্র আশেপাশে চেয়ে চোখ রাঙিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— গলাটা নামিয়ে। মানুষের সামনে সিনক্রিয়েট করলে থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিবো।

হৈমী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি চোখ পাশের টেবিলে গেলো। দেখলো এক জোরা কাপল তাঁদের দিকে অবাক চোখে চেয়ে আছে। তা দেখে নিজের মুখোভঙ্গি স্বাভাবিক করে নিয়ে কাপলদের দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হেসে হাত দিয়ে ইশারায় হাই দিয়ে বসে পড়লো। ওরাও হাই দিলো। হৈমী রুদ্রর দিকে আড় চোখে চেয়ে চেয়ারটা কাপলদের দিকে ঘুরিয়ে বসে বললো,

— আমি হৈমী৷ এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিবো। আর তোমরা?

— আমি জেরিন আর ও আমার বয়ফ্রেন্ড সুমন৷ জেরিনও বেশ উৎসুক হয়ে বললো।

রুদ্র বিরক্তি চাহনীতে তাকালো হৈমীর দিকে। জেরিন মেয়েটা হৈমীর দিকে একবার রুদ্রর দিকে একবার তাকাচ্ছে। কিছুতেই দুটো মানুষ কে মেলাতে পারছে না। বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড নাকি কি তাই বোঝার চেষ্টা করছে। হৈমী তো তাঁর পরিচয় সহ বাড়ির ঠিকানা, কলেজ ঠিকানা কোথায় প্রাইভেট পড়ে, বেষ্টফ্রেন্ড কে সব বলছে এক নাগাড়ে। মেয়েটা কথা শুনেই অস্থির হয়ে পড়েছে। আর ভাবছে ‘এতো ডিটেইলস বলছে পাশের জন কে হয় এটা বলছে না কেনো’?হৈমী থেমে গিয়ে জেরিন কে জিগ্যেস করলো সে কোথায় পড়ে কিসে পড়ে।

জেরিন তাঁর ঠিকানা ধীরস্থির ভাবে দিচ্ছে জেরিনের বয়ফ্রেন্ড ঘেমে অস্থির হয়ে পড়লো৷ দুজন মেয়ের বকবকানি তে তাঁর নাজেহাল অবস্থা। হৈমীর কথা বলার স্পীড দেখে ছেলেটার মাথা ভনভন করছে। জেরিনের দিকে চেয়ে ধীর আওয়াজে ডাকলো,

— জেরিন আমরা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি একটু এদিকে ফিরো।

জেরিন ফিসফিসিয়ে বললো,

— আরে চুপ থাকোনা আগে এদের দুজনের সম্পর্ক কি জেনে নেই তারপর।
.
রুদ্রর মেজাজ চরম পর্যায়ে বিগরে গেলো। সার্ভেন্টকে খাবার অর্ডার করে হৈমীর দিকে ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— এদিকে ফিরো আর মুখটা বন্ধ রাখো নয়তো খুন করে ফেলবো।

হৈমী চমকে গিয়ে চেয়ারটা বেশ শব্দ করেই রুদ্রর দিকে ফিরলো বড় বড় চোখ করে বললো,

— আপনি একটা খুনি।

জেরিন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো,

— কি হলো হৈমী?

এমনিতে নাচনেওয়ালী তারওপর ঢোলের বাড়ি। রুদ্র নিচের ঠোঁট কামড়ে জেরিন আর সুমনের দিকে চেয়ে বললো,

— এক্সকিউজ মি. সব ডিটেইলস শুনে নিয়েছেন এবং বলেছেন আশা করি আর কোন কথা নেই। আর থাকলেও আমি বলতে দিতে আগ্রহী নই।

সুমনের দিকে চেয়ে আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে বললো,

— হেই ইউ সাতদিন টাইম দিলাম। গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করে বউয়ের স্বীকৃতি দিবেন। নয়তো হাত, পা ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দেবো। নেক্সট উইক আমার সাথে দেখা করবেন দুজনই। এটা আমার কার্ড বলেই এগিয়ে গিয়ে কার্ডটা সুমনের হাতে দিলো।

হৈমী, জেরিন,সুমন তিনজনই আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে। সুমন কার্ডটা দেখে বসা থেকে লাফিয়ে ওঠলো। তাঁর হাত,পা কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে।এক ঢোক গিলে নিয়ে কাঁপা স্বরে বললো,

— স্যাস্যাস্যার।

রুদ্র বাঁকা হেসে নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো। সুমনের মুখের অবস্থা দেখে জেরিন, হৈমী ভয়ে এক ঢোক গিললো। ঠিক কি ঘটলো কেউ বুঝতে পারছেনা৷ হৈমী একবার রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে আবার সুমনের দিকে তাকাচ্ছে। সুমনের কপাল ঘেমে ঘাম চুইয়ে পড়ছে। তা দেখে জেরিন আহত গলায় বললো,

— কি হলো তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? কার্ডে কি ছিলো?

সুমন আর এক সেকেন্ডও দেরি করলো না জেরিনের হাত চেপে ধরে বললো,

— আমরা কালই বিয়ে করবো আজি বাবা মা-কে তোমার বাসায় পাঠাবো।

বলেই ঝড়ের বেগে জেরিনকে নিয়ে সোজা রেষ্টুরেন্টের বাইরে বেরিয়ে গেলো।টেবিল ভর্তি খাবার সবেই এসেছিলো হয়তো। হৈমী কয়েকবার ডাকলো কিন্তু ওরা কেউ দাঁড়ালো না। অবাক চোখে রুদ্রর দিকে ফিরে সন্দেহী চোখ,মুখে বললো,

— কি ছিলো কার্ডে? এমন কি দেখালেন যে এতো ভয় পেলো। বিয়েও করে নিতে চাইছে কাহিনী কি?

সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে আসতেই হৈমী চুপ করলো। রুদ্র নিজের মতো চুপচাপ বসে আছে। সার্ভেন্ট চলে যেতেই হৈমী আবার জেরা শুরু করলো,

— সত্যি করে বলুন কি ছিলো কার্ডে? আপনি কি মানুষ নাকি অন্য কিছু সত্যি করে বলুন তো?

— বাজে বকা বন্ধ করে খেতে শুরু করো।

— না আমি খাবো না। যতোক্ষণ না সত্যিটা বলছেন খাবো না আমি। দেখি আরো কার্ড আছে কিনা দেখান আমাকে? বলেই চেয়ার ছেড়ে ওঠে একটু ঝুকে গেলো রুদ্রর দিকে।

রুদ্র বিরক্তি চোখে চেয়ে বললো,

— পাঁচ দিন ধরে ঠিকভাবে খাওয়া, দাওয়া করছো না। সামনে পরীক্ষা সে খেয়াল আছে চুপ করে বসে খেয়ে নাও।

হৈমীও বিরক্তি প্রকাশ করে বসলো। দাঁত কটমট করে বললো,

— আমি পেটুক হতে পারি। তাই বলে আপনার এসব ঘুষ আমার লাগবে না। আপনি পাঁচ দিন ধরে কোন মেয়ের সাথে ছিলেন? তার সাথেই থাকতেন আমার কাছে এসেছেন কেনো? খাবো না আমি। আর আপনার কার্ডে কি ছিলো সেটা না বললে এখান থেকে যাবোও না।

— হুম বুঝেছি। তোমার মতো ত্যাড়ির সাথে মুখ চালানোটাই আসলে ভুল হাত চালাতে হবে। বলেই ওঠে দাঁড়ালো।

হৈমী ভয়ে ধড়ফড়িয়ে ওঠে চেয়ার ছেরে পালাবে তাঁর আগেই রুদ্র হৈমীর পাশে নিজের চেয়ার নিয়ে বসে পড়লো। হৈমী মুখটা কাঁদো কাঁদো করে আঙুল ওঠিয়ে বললো,

— দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন৷ এই পাঁচ দিন কোথায় ছিলেন? হঠাৎ করে উদয় হয়ে হিরোগিরির সাথে ভিলেনগিরি মিশিয়ে জগাখিচুরি করে ফেলবেন আর আমি মেনে নেবো?

রুদ্র পিছন দিক চেয়ে দেখলো দু তিনজন বসে তাঁদের মতো কথা বলছে আর খাচ্ছে এদিকে খেয়াল নেই তাঁদের। তাই সে হৈমীর মাথা চেপে ঠেসে বসালো। এক হাতে হৈমীর চেয়ার একদম তাঁর চেয়ারের সাথে চেপে নিয়ে এক হাতেই হৈমীর কোমড় শক্ত করে জরিয়ে ধরে বসে রইলো।

হৈমী চেঁচিয়ে ওঠলো,

— কি করছেন কি করছেন?

পিছন থেকে দুজন ওদের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে আবার নিজেদের কাজে মন দিলো। রুদ্র হৈমীর পেটে আলতো করে চাপ দিতে লাগলো আর বললো,

— চুপচাপ খাবার গুলো শেষ করো।

হৈমীর হার্টবিট দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। পুরো শরীর শিরশির করছে তাঁর। রুদ্রর দিকে অসহায় চোখে চেয়ে তাঁর হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।

— ছাড়ুন মানুষ দেখবে। ছিঃ আপনার মতো বেহায়া পুরুষ আমি দুটো দেখিনি ছাড়ুন বলছি। এসব অসভ্যতামি সব জায়গায় করবেন না। এটা কিন্তু পাবলিক প্লেস।

— ওও আচ্ছা তাহলে এটা বেডরুমের জন্যই তুলে রাখলাম। বলেই ছেড়ে দিলো টেবিলে দুহাতের কনুই ভর করে হাতের ওপর থুতনি ঠেকালো।

হৈমী হকচকিয়ে গিয়ে বড় বড় করে চেয়ে রইলো বিরবির করে বললো,

— কেমন লুইচ্চা।

রুদ্র বাঁকা হাসলো মৃদু স্বরে বললো,

— খেয়ে নাও।

হৈমী রাগে গটগট করতে করতে খেতে শুরু করলো৷
রুদ্র টেবিল থেকে হাত সরিয়ে চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে হৈমীর দিকে ঘুরে বসলো। হৈমী খাচ্ছে আর সে অপলকভাবে চেয়ে সেই খাওয়া দেখছে। হৈমী খেতে খেতে আড় চোখে রুদ্র কে তাকিয়ে থাকতে দেখে খাওয়া বন্ধ করে চামচ টা রুদ্রর দিকে ইশারা করে বললো, খাবেন?

— আমি এসব খাইনা৷

হৈমী মুখ ভেঙচি দিয়ে বললো,

— ভালো জিনিস আপনি খাবেন কেনো চাউমিন আমার ফেভারিট পরীও এটা খেতে ভালোবাসে। কিন্তু পিৎজা কম খাই আপনি বরং এটা খান৷

— বাইরের খাবার আমি কম খাই। গম্ভীর গলায় বললো রুদ্র।

হৈমী রেগে বললো,

— তাহলে এই ছুড়িটা দিয়ে আমার গলা কেটে রক্ত চুষে খান। আপনাকে দেখে বোঝা যায় এটা আপনি খুব পারবেন।

রুদ্র তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো হৈমী পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো খেতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।
.
রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সুখনীড়ের উদ্দেশ্য গাড়ি ঘোরালো রুদ্র। হৈমী সমানে প্রশ্ন করে যাচ্ছে এই পাঁচ দিন কোথায় ছিলেন? কিন্তু রুদ্র কিছুই বলছে না৷ বিরক্ত হয়ে হৈমী বললো,

— আপনি বলবেন নাকি আমি গাড়ি থেকে নেমে যাবো?

— কাজে ছিলাম। এবার নিশ্চয়ই বলবে কি কাজ? আমি তোমার মতো এতো আজাইরা সময় নিয়ে থাকিনা আর আজাইরা বকবকও করিনা৷ কাজ মানে কাজই সো চুপ করে বসে থাকো।

খানিকটা অপমানবোধ হয়ে হৈমী বললো,

— বয়েই গেছে আমার আপনার বিষয়ে খোঁজ নিতে। বলেই মুখ ভেঙচি দিয়ে জানালার দিকে মুখ ঘোরালো।

রুদ্র আড় চোখে হৈমীর ভাব দেখে বাঁকা হাসি দিলো।

মিনিট কয়েক পরেই ঠান্ডা বাতাস শুরু হলো তাঁর কয়েক মিনিট পরেই শুরু হলো বৃষ্টি। সকাল থেকেই আবহাওয়া বেশ খারাপ ছিলো তাই বৃষ্টি তে কেউই অবাক হলো না । বৃষ্টি হয়েছে আর হৈমী ভিজতে বের হয়নি এমন রেকর্ড কমই আছে। কিন্তু চলন্ত গাড়ি থেকে কিভাবে ভিজতে যাবে? আড় চোখে একবার রুদ্র কে দেখলো। রুদ্র কে গাড়ি থামাতে বললে থামাবে না তাই বলে মুখ নষ্ট করতে চাইলো না। জানালার বাইরে হাত দিয়ে নিজের হাত ভেজাতে লাগলো। এটুকুতেই সীমাহীন ভালোলাগার অনুভূতি হচ্ছে তাঁর কিন্তু সেটা খুব বেশী স্থায়ী হলো না।

— হাত ভেতরে নিয়ে এসো ওপাশ দিয়ে গাড়ি গেলে এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে। বললো রুদ্র।

— কিচ্ছু হবে না। অশুভ কথা বলবেন না তো। বিরক্ত হয়ে বললো হৈমী।

রুদ্র হুট করে মাঝরাস্তায় ব্রেক কষলো। হৈমীর হাতটা ভিতরে এনে প্রচন্ড জোরে এক ধমক দিলো। হৈমী কেঁপে ওঠলো। ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে রুদ্রর দিকে তাকালো। রুদ্র রাগি চোখে চেয়ে বললো,

— সবসময় ফাইজালামি করবে না হৈমী। একটা কথা বললে শুনোনা কেনো?

— আপনি আসলেই একটা রসকষহীন মানুষ। বৃষ্টিতে মনের ভিতর কতো সুন্দর একটা অনুভূতি হয়েছিলো। স্নিগ্ধ বাতাস শীতল স্পর্শ আহা কতো রোমান্টিক মোমেন্ট আর আপনি কি করলেন সবগুলাতে গরম জল ঢেলে দিলেন অসহ্য,বিরক্ত।

রুদ্র আবারো গাড়ি স্টার্ট দিলো বিরবির করে বললো,
— মাথা সিরিয়াসলি খারাপ আছে এর।

— কিছু বললেন?

রাগি চোখে তাকাতেই হৈমী অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। মনে মনে বকে দিলো হাজারটা।
.
সুখনীড়ের সামনে গাড়ি থামাতেই হৈমী ডোর খুলে বেরিয়ে পড়লো। রুদ্র গলা উঁচিয়ে বলতে থাকলো,

— ভিজে যাবে, ছাতা টা নিয়ে যাও। হৈমী স্টপ! স্টপ হৈমী।

তবুও হৈমী দাঁড়ালো না সে সুখনীড়ের ডানপাশে বাগানের দিক দৌড়ে গেলো ব্যাগটা গাড়িতেই রেখে এসেছে যার ফলে ভিজতে অসুবিধা হলো না। রুদ্র ছাতা নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। ভিতরে গিয়ে ডানপাশে চোখ যেতেই দেখলো হৈমী লাফাচ্ছে আর বৃষ্টি তে ভিজছে। লাফানোর ফলে কোমড় অবদি কাঁদা ছিটে যাচ্ছে। পুরো শরীর ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। স্কার্ফের বাইরে চুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রুদ্রর দিকে চেয়ে চিল্লিয়ে বললো,

— এই যে মি.রসকষহীন জামাই ছাতাটা রেখে এদিকে আসুন। আজকে আমি আর আপনি অনেকক্ষন ভিজবো। আসুন। হাত নাড়িয়ে তাঁর দিকে যেতে বলছে।

রুদ্র নিচু হয়ে প্যান্ট হাঁটু অবদি ভাজ করলো। যাতে কাঁদা না ছিটে আসে। জুতো জোরা খুলে গাড়ির ভিতর রেখে গাড়ির দরজা লাগিয়ে হৈমীর দিকে ফিরে তাকালো। হৈমী স্কার্ফ খুলে পেটে বেঁধে ফেলেছে। ওড়নাটা গায়ে জরিয়ে দুহাত দুদিকে মেলে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। ভেজা শরীরে ভেজা কাপড় লেপ্টে আছে চুলগুলো চুইয়ে পানি পড়ছে। কপালের উপরের চুলগুলোর পানি টপাটপ পড়ে নাক, মুখ,ঠোঁটে স্পর্শ করে দিচ্ছে । রুদ্র ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে একদম হৈমীর সামনে দাঁড়ালো।

চারদিকের শীতল আবহাওয়া হুট করে কমে গেলো। শীতল স্পর্শ গুলো আর গায়ে লাগছে না। কেমন উষ্ণ বাতাস লাগছে মুখের ওপর। হুট করে বৃষ্টি থেমে গেলো নাকি অদ্ভুত তো কপালে তিন ভাজ ফেলে চোখ খুলতেই চমকে গেলো হৈমী৷
রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে তাঁর সম্মুখে। তাঁর অদ্ভুত চাহনীর দিকে চেয়ে হৈমী চোখ ফিরিয়ে নিলো। কিছু না বলে পিছন ঘুরে এক পা আগাতেই রুদ্র তাঁর হাত আঁটকে ধরলো।

— হাত ধরেছেন কেনো? ছাড়ুন আমি ভিজবো। আপনার ইচ্ছে হলে ভিজুন নয়তো চলে যান।

ভেজা শরীরে হৈমীকে এতো স্নিগ্ধ লাগে ভাবতে পারেনি রুদ্র। আশেপাশে চেয়ে আবারো হৈমীর দিকে দৃষ্টি স্থির রাখলো মোহময় চোখে চেয়ে রইলো কতোক্ষন৷ হৈমী চিল্লিয়ে বললো,

— উফফ ছাড়ুন না বৃষ্টি কমে গেলো তো। আমি আরো ভিজবো।

— না তুমি ভিজবে না চলো ভিতরে চলে ঠান্ডা লেগে যাবে।

— না লাগবে না। আমার অভ্যেস আছে দু একটা হাঁচি দিলেই সেড়ে যাবে কিচ্ছু হবে না। আমি কি বাচ্চা নাকি আপনার এতো চিন্তা করতে হবে না। আজাইরা কথার ঝুড়ি একেবারে ছাড়ুন তো। বলেই হাত মোচরাতে লাগলো।

রুদ্র দাঁত চেপে বললো,

— ওলটো ঝাড়ি না দিয়ে চুপচাপ চলো।

— না আমি যবো না সবসময় এমন জোর করবেন না বলে দিলাম। চোখ রাঙিয়ে বললো হৈমী।

রুদ্রর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো একটানে হৈমীকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো।ছাতা টা পড়ে গেলো নিচে।

ধমকা হাওয়ায় দুজনেরই চুল ওড়তে লাগলো। বাতাসের বেগে বৃষ্টির শীতল স্পর্শে শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। হৈমী ড্যাবড্যাব চোখে রুদ্রর দিকে চেয়ে আছে। রুদ্র যতোটা রাগ নিয়ে হৈমীকে টেনে নিলো ততোটা রাগ খাটাতে পারলো না। স্নিগ্ধ সে মুখোশ্রী দেখে রাগ দীর্ঘ করতে পারলো না। নিচু হয়ে মুখের ওপর মুখ রেখে বললো,

— ভিতরে চলো।

হৈমীতো যাবেই না রুদ্রর হাত ছোটাতে ছোটাতে বললো,

— আপনি আমাকে সবসময় সব বিষয়ে জোর করতে পারেন না ভিজবো আমি। আপনার ইচ্ছে না হলে ভিতরে গিয়ে নাক ডেকে ঘুমান নিষেধ কোথায়। আপনার মতো জীবন আমি কাটতে পারবো না।আমি জীবনটা খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে চাই। প্রাকৃতিক এই স্নিগ্ধ অনুভূতি অনুভব করাতে যে মানুষ বাঁধা দিতে পারে তাঁর মতো হৃদয়হীন,অনুভূতিহীন সত্যি দুনিয়াতে কেউ নেই।

রুদ্রর হাত নরম হয়ে এলো৷ হৈমী বুঝলো তাঁর কথাটা বেশ কাজে লেগেছে। মনে মনে বেশ খুশি হয়ে রুদ্রর হাত ছাড়িয়ে পিছন ঘুরলো দূরে যাওয়ার জন্য।কিন্তু রুদ্র তা হতে দিলো না। পিছন থেকে এক হাতে হৈমীর কাঁধ চেপে ধরলো আরেকহাতে হৈমীর পিঠে ছড়ানো চুল গুলো একপাশে দিয়ে ঘাড়ে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দিলো। ভেজা ঠোঁটে ভেজা স্পর্শে শিউরে ওঠলো হৈমী। মেঘ গর্জন তুলতেই তাঁর বুকের ভিতর চারগুন তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। দুহাত মুঠ করে চোখ বন্ধ রেখে নিচের ঠোঁট কামড়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে।

রুদ্র পিছন থেকেই হৈমীকে কোলে তুলে নিলো। বৃষ্টি তে কারো গায়ের একটা সুতোয় শুখনো নেই। ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো বাড়ির ভিতরের দিক।
হৈমী কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকলেও এবার হুশ ফিরলো। কারন দাদু ভিতরে আছে এভাবে দাদুর সামনে গেলে লজ্জায় মরেই যাবে সে। তাই কিছু বলতে নিবে কিন্তু গলা দিয়ে অল্প আওয়াজও বের হচ্ছে না। একটু নড়বে সেই শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। পুরো শরীর যেনো অবশ হয়ে গেছে তাঁর। ভেজা শরীরে রুদ্র কি শক্ত করেই না ধরে আছে। রুদ্রর এই শক্তির কাছে নিজেকে খুবই নগন্য মনে হচ্ছে। একদিকে অস্বস্তি অন্যদিকে পুরো শরীরের ভাড় রুদ্রর ওপর ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে। ঘন শ্বাসের ভিড়ে তাঁর গলার স্বরও খুবই নগন্য তবুও বললো,

— প্লিজ নামিয়ে দিন আমি নিজেই যাবো ভিতরে। প্লিজ এভাবে দাদুর সামনে নিয়ে গেলে আমি আর দাদু দুজনই লজ্জায় মরে যাবো। ছাড়ুন না!

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here