#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_২৬
#জান্নাতুল_নাঈমা
হৈমীর কথাগুলো তে কি ছিলো জানা নেই রুদ্রর। কিন্তু বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হলো। সেই সাথে বুঝেও গেলো নিশ্চয়ই কেউ এসেছিলো। আর সেই হৈমীর গায়ে হাত তুলেছে কিন্তু কে? আজ ফ্রাইডে মাহের ছাড়া তো কারো আসার কথা না। মাহেরের চোখ দেখে ঠিক ধরে ফেলেছিলো রুদ্র মাহের হৈমীর প্রতি দূর্বল। কিন্তু ছেলে হিসেবে মাহের যথেষ্ট ভদ্র,সভ্য,জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমান তাই গায়ে হাত তুলার প্রশ্নই ওঠে না৷ রুদ্র যে প্রফেশনে আছে সে প্রফেশনে থেকে আর যাই হোক মানুষ চিনতে সে কখনো ভুল করতে পারে না। যদি করে তাহলে নিজের প্রফেশনকে অপমান করা হবে। তাহলে কি অন্য কেউ? মনের ভিতর অজস্র প্রশ্নের অজস্র উত্তর মিলিয়ে দুহাত মুঠ করে লম্বা এক শ্বাস ছাড়লো। রাগ গুলো নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা যাকে বলে।
.
হৈমীর রুমে গিয়ে দেখলো বিছানায় হাঁটু তে মুখ গুঁজে বসে কাঁদছে। আবারো মেজাজ গরম হয়ে গেলো। দরজার সিটকেরী লাগিয়ে দিয়ে নিজেকে শান্ত করার জন্য বাথরুমে গিয়ে চোখে, মুখে পানি দিলো। মাথাটা বেশ গরম হয়ে আছে মাথায় পানি দিয়ে চুল গুলো পিছন দিক বিছিয়ে দিয়ে বের হলো।
পড়ার টেবিলের সামনে চেয়ারে তয়ালে ছিলো তা নিয়ে চোখ,মুখ মুছে নিলো। এবার খানিকটা রিল্যাক্স লাগছে।
হৈমী বসে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। রুদ্রর এক থাপ্পড়ে যে এমন কাঁদছে না খুব বুঝলো রুদ্র। নিশ্চয়ই অন্য কোন ব্যাপার ঘটেছে এই কান্না গভীর কোন ব্যাথার কান্না। কিন্তু কি সেই ব্যাথা?
হৈমীর পাশে গিয়ে বসলো রুদ্র। শান্ত গলায় জিগ্যেস করলো,
— কি হয়েছে? কে এসেছিলো এখানে?
হৈমী নিরবে কেঁদেই যাচ্ছে কিচ্ছু বলছে না। অতো ধৈর্য্য রুদ্রর নেই অতো প্রশ্ন করে মুখ ব্যাথাও সে করতে পারবে না৷ জাষ্ট কি ঘটেছে সেটা জানাই তাঁর মূল লক্ষ্য এখন৷ তাই হৈমীর কান্নার দিকে মনোযোগ না দিয়ে কাছে গিয়ে সোজা গলা চিপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— সত্যি করে বল কে এসেছিলো নয়তো পুঁতে ফেলবো এখানে।
হৈমী চোখ, মুখ খিঁচতে শুরু করলো তা দেখে রুদ্র ছেড়ে দিলো। কেশে ওঠলো হৈমী। জোরে শ্বাস নিতে নিতে বেশ শব্দ করেই কেঁদে ওঠলো। রুদ্র রাগে বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। হৈমী ভয় চোখে তাকালো রুদ্রর দিকে পুরো শরীর কাঁপছে তাঁর।
— ওকে বলতে হবে না তোকে আমি নিজেই জেনে নিচ্ছি। তারপর তোকে আর যার হাত বেশী লম্বা হয়েছে তাঁকে ঠিক কি করবো সেটা দেখতে পারবি। বলেই দরজা খুলতে যাবে তখনি হৈমী ভাঙা আওয়াজে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
— সূচনা আপু,,,
থেমে গেলো রুদ্র। চোখ দুটো ভয়াবহ রূপ ধারন করলো তাঁর তেড়ে তসে হৈমীর দুকাধ চেপে ধরে বললো,
— কি হয়েছে কখন এসেছিলো? ও তোমার গায়ে হাত তুলেছে? এখানে কেউ ছিলোনা? তুমি কিছু বলোনি? আরে চুপ করে আছো কেনো? সারাক্ষণ এতো কথা বলো এখন কেনো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। প্রবলেম টা কি। সবটা বলো আমায় হৈমী।
হৈমী খুব শান্ত চোখে তাকালো সে চাহনীতে রুদ্রর বুকের ভিতর বড়সড় এক ধাক্কা খেলো। রাগটা নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করতে লাগলো। রাগলে চলবে না সবটা শুনতে হবে, জানতে হবে।
রুদ্রর হাত নরম হয়ে আসতেই হৈমী হাত সরিয়ে দিয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠতে ওঠতে বললো,
— কি বলবে সে? তাঁর অধিকার চাইতে এসেছিলো। তাঁর ভালোবাসার মানুষের বুকে সে কতোটা শান্তি তে ঘুমায় সেই প্রমান দেখাতেই এসেছিলো। তাঁর ভালোবাসার মানুষের মোহ আর ভালোবাসার পার্থক্য বোঝাতে এসেছিলো।
হৈমীর হাত টেনে ধরলো রুদ্র। হৈমী রুদ্রর দিকে তাকালো না। বললো,
— আমি আর কিছু বলতে পারবো না। এতে আপনি আমাকে যা করার করুন মেরে কেটে ফেলুন। সবার হাতে মার খাওয়ার জন্যই তো আমার জন্ম হয়েছে।
রুদ্র রেগে হৈমীকে জোর করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কড়া গলায় বললো,
— হৈমী,,,সবটা বলো আমাকে তুমি না বললেও আমি সব জানতে পারবো। কিন্তু আমি তোমার থেকে শুনতে চাই। সো কোন প্রকার ভনিতা করবে না।
হৈমীর প্রচন্ড রাগ হলো। আসলে রাগ বললে ভুল হবে মনে তাঁর খুব অভিমান সেই সাথে হিংসে হয়েছিলো। যা চাপা পড়ে ছিলো রুদ্রর হাতে মার খেয়ে সেটা বেরিয়ে আসতে চাইছে বার বার হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না কাঁদতে কাঁদতে বলেই দিলো,
— শুনে কি করবেন আপনি? কেনো এসেছেন এখানে? কেনো বিয়ে করেছেন আমায় আপনার এই মোহ কবে কাটবে বলবেন? কবে আমাকে দূরে ঠেলে দেবেন আপনি? দূরে ঠেলে দিন এখুনি দিন। আপনার বুকে সূচনা আপুকে জরিয়েই শান্তির ঘুম ঘুমান। বলেই হাত মোচড়াতে শুরু করলো।
রুদ্র শক্তভাবে ধরে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে। হৈমীর পুরো চোখ, মুখ লালচে আভায় ভরে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে বিধ্বস্ত অবস্থা চোখ,মুখের। মেয়েটা বোকার মতো কেনো কাঁদছে একটা বার নালিশ করলেই তো হয়। যার জন্য এই অবস্থা তাঁর পুরো জীবন হারাম করে দিতেও প্রস্তুত আমি ভেবেই আরেকটু কাছে টেনে জোর করে কোলের উপর বসিয়ে একহাতে শক্ত করে কোমড় জরিয়ে ধরলো। আরেকহাতে চোখের পানি মুছে দিতেই হৈমী উহ করে ওঠলো। বুঝলো গালে ব্যাথায় টনটন করছে। আলতোভাবে পানি মুছে দিয়ে বললো,
— আর কি বলেছে?
হৈমী অবাক হয়ে তাকালো রুদ্র মৃদু হেসে বললো,
— শান্ত হয়ে বসে শান্ত ভাবে সবটা বলো আমাকে। সবটা শুনতে চাই আমি। আমার মাথা গরম করিও না তাহলেই আর মারবো না। কথা শুনো, সবটা বলো আদর করবো তাহলে।
রুদ্রর এমন কথা শুনে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দিলো। আচমকাই রুদ্রর গলা জরিয়ে ধরে ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো। সত্যি তাঁর একটু আদর একটু ভালোবাসার প্রয়োজন। রুদ্র ছাড়া এটা কেউ দিতে পারবে না।
রুদ্রও জরিয়ে নিলো। বেশ অনেকটা সময় পর হৈমী আস্তে, ধীরে সবটা বললো রুদ্র কে। সব শুনে রুদ্র জাষ্ট অবাক হয়ে গেলো। সূচনার আচরণের জন্য নয় হৈমীর আচরণের জন্য। রুদ্র কল্পনাতেও কখনো ভাবেনি হৈমী তাঁর ভালোবাসার এতোটা মূল্যায়ন করবে। এতো টা সম্মান, এতো টা ভরসা এতোটা বিশ্বাস এইটুকু মেয়ের মাঝে জন্মেছে তাঁর প্রতি ভাবতেই ভয়ংকর ভালোলাগা সৃষ্টি হলো বুকের ভিতর। মারাত্মক সুখী মনে হতে লাগলো নিজেকে। হ্যা সে জিতে গেছে জীবনের সব থেকে বড় প্রাপ্তি টা সে পেয়ে গেছে। একজন পুরুষের কাছে এর থেকে বড় কোন সুখ, এর থেকে বড় কোন পাওয়া থাকতে পারে না। এমন একটা বউ কজনের ভাগ্যে জোটে?
হৈমী আনম্যাচিওর ভেবে যতোটা টেনশনে ছিলো সবটা যেনো নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো।
এই মেয়েটা কে কিভাবে ভালোবাসবে? কি ভাবে আদর দেবে যেভাবেই দিক না কেনো তবুও যে কম পড়ে যাবে। শুধুমাত্র হৈমীর জন্য নিজের ভয়ংকর, হিংস্র রাগটা চেপে রাখলো রুদ্র।
হৈমী সরে যেতে নিতেই রুদ্র শক্ত করে চেপে রইলো।
মৃদু স্বরে বললো,
— ও তোমাকে কি দেখিয়েছে জানিনা। জ্ঞান অবস্থায় আমাকে স্পর্শ করার সাহস ও কখনো দেখায়নি। কিন্তু ওর এই কাজের জন্য তুমি আমাকে যে উপহারটা দিয়েছো হৈমী,,, হাজার বছর তোমাকে এই বুকে আগলে রাখলেও সেই ঋণ শোধ হবে না। তুমি আমাকে জাষ্ট অবাক করে দিয়েছো।
হৈমী অভিমানী হয়ে ওঠে তাকালো রুদ্রর দিকে গাল পেতে দিয়ে চোখ বুজে বললো,
— আরো কয়েকটা মেরে দিন। এতো ভালো কাজ করেছি তাঁর বদলে এসেই মারতে শুরু করেছেন। আরো মারুন মেরে রক্তাক্ত করে ফেলুন আমাকে।
চোখ দিয়ে আবারো কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। রুদ্রর হাসি পেলো আবার খারাপও লাগলো। একটা চুমু খেতেও ভয় করছে এখন যদি ব্যাথা পায়? তবুও একটা চুমু খেলো। হৈমী চোখ খুলতেই রুদ্র হৈমীর গাল দুটো আলতো ছুঁয়ে ঠোঁটে গভীর একটা চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো। ওঠে দাঁড়িয়ে হৈমীকে বিছানায় বসিয়ে বললো,
— কাল আবার আসবো এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।
হৈমী চমকে গেলো অনুভূতি গুলোকে থামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো রুদ্রর দিকে অসহায় চোখে চেয়ে বললো,
— বাদ দিন না। আমিতো আপনাকে ভুল বুঝিনি আপুকে কিছু বলবেন না। যা হয়েছে হয়েছেই ভুলে যান। তাছাড়া রুমের দরজা ওপেন রেখে ঘুমাতে কে বলে আপনাকে সুযোগ না দিলে সযোগ নিতে পারতো নাকি? আমার মনে হয় আপনি ইচ্ছে করেই দরজা ওপেন রাখেন। তীক্ষ্ণ গলায় বললো হৈমী।
রুদ্র গাঢ় চোখে চেয়ে শান্ত গলায় বললো,
— আজে বাজে বকা বন্ধ করো। খাবারটা খাওনি কেনো? ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমি আসছি বলেই পাশ কাটাতে নিতেই হৈমী হাত টেনে ধরলো।
— প্লিজ যাবেন না আজ আমার সাথে থাকুন না প্লিজ আমি তো আপনার বউ৷
আড় চোখে তাকালো রুদ্র। হৈমী আবারো বললো,
— আপনি কোথাও যাবেন না। আজকে আমার সঙ্গে থাকবেন যদি চলে যান তাহলে সূচনার আপুর সব কথা আমি এখুনি এই মূহুর্তে বিশ্বাস করে নেবো।
রুদ্রর খুব হাসি পেলো। কে বলবে এই মেয়ে সূচনাকে অমন বড় বড় কথা বলে দিয়েছে। কেমন বাচ্চামি করছে এখন।
— বলুন যাবেন না। বলুন। কি হলো বলুন। হাত নাড়িয়ে সমানে জিগ্যেস করছে হৈমী।
রুদ্র এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ওকে যাবো না বাট খাবো কি আপাতত খুব ক্ষিদে পেয়েছে।
খুশি তে হৈমী লাফিয়ে ওঠলো রুদ্র যদি তাঁর থেকে অতো লম্বা না হতো টোপ করে গালে চুমু দিয়ে দিতো কিন্তু পারলো না তাই খুশিতে হাতের ওলটো পিঠে চুমু দিলো। রুদ্র হা হয়ে চেয়ে রইলো হৈমী বললো,
— আপনি বসুন আমি আপনার জন্য খাবার আনছি।
.
হৈমী রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো বড় ডেস্কিতে ভাত নেই। ফ্রিজে একটা বাটিতে অল্প আলু ভাজি রয়েছে। তাঁর খাবারটাই রুদ্র কে দিয়ে দেবে ভাবলো। কিন্তু যদি জিগ্যেস করে তাঁর টা কোথায়৷ এতোদিনে এটুকু চিনেছে সে রুদ্র কে। আর যাইহোক একা একা খাবে না। খুব টেনশনে পড়ে গেলো। কি করা যায় কি করা যায় ভাবতে ভাবতে বুদ্ধি এলো ঝটপট কয়েকটা রুটি বানিয়ে ফেলি। তাই করলো আধাঘন্টা সময়ের মধ্যে আটটা রুটি বানিয়ে ফেললো। কিন্তু খাবে কি দিয়ে ভাবতেই তারাহুরো করে ফ্রিজ খুলে দেখলো ডিম আছে কিনা। নাহ ডিম নেই কাল মাংস রান্না হবে তাই ডিমের কথা কারো মনে ছিলো না হয়তো তাই আনেনি। মনটা খারাপ হয়ে গেলো হৈমীর৷ কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো পরোক্ষনেই চোখে মুখে হাসির ঝলকানি নিয়ে বললো,’আইডিয়া কাঁচা মরিচ পেয়াজ আর সরিষার তেল তো আছে বাহ হৈমী তোর মাথায় তো খুব বুদ্ধি ‘ভেবেই খুশিতে গদগদ হয়ে দশটা কাঁচা মরিচ টুকরো টুকরো করে কাটলো। পাঁচটা পেয়াজ কাটলো অতঃপর সেগুলো সরিষার তেল লবণ দিয়ে বেশ ভালো ভাবে মাখিয়ে বড় বাটিতে করে নিয়ে গেলো রুমে।
রুদ্র ফোন ঘাটাঘাটি করছে মুখটা তাঁর গম্ভীর। হৈমী গিয়ি বিছানায় দুটো প্লেট সহ মরিচ ভর্তা আর রুটি গুলো রাখলো। বললো,
— এই নিন খাবার। আধাঘন্টায় যা পারি তাই তৈরী করেছি। ডিম ছিলোনা তাই মরিচ দিয়েই খেতে হবে। এটাও হেব্বি টেস্ট পেঁয়াজ গুলো দেখুন চেয়ে আছে আহা! ঝাল ঝাল ফিলিং নিন নিন ঝটপট খেয়ে নিন।
রুদ্র ফোন থেকে চোখ সরিয়ে খাবারের দিকে তাকালো। রুটি গুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ শক্ত তাঁর ওপর এতোগুলো মরিচ দেখেই মাথা হ্যাং হয়ে গেলো। গম্ভীর গলায় বললো,
— এটা তুমি খেতে পারবে এতো মরিচ খেলে জীবন থাকবে তো?
— আরে কি বলছেন এটা আমার অভ্যেস আছে। মাঝে মাঝেই খাই। টক,ঝাল,মিষ্টি সবটাই আমার হেব্বি লাগে পরীও অনেক ঝাল খেতে পারে আর আমি পারবো না৷ মেয়ে বলে কি ননির পুতুল ভেবেছেন নাকি আমাকে। খুশিতে গদগদ হয়ে বললো হৈমী।
রুদ্র ছোটখাটো এক ঢোক গিলে বললো,
— আচ্ছা তুমি খাও।
— কেনো আপনি খাবেন না আপনার তো অনেক খিদে পেয়েছে। আচ্ছা ফোন টিপতে অসুবিধা হচ্ছে তাইতো আচ্ছা আপনি ফোনে কি করছিলেন করুন আমি আপনাকে খাওয়িয়ে দিচ্ছি।
— হোয়াট মাথা খারাপ নাকি! প্লেটে রুটি দাও আমিই খাচ্ছি।
হৈমী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,
— আপনি কি কোনভাবে আমাকে অপমান করছেন বা আমার হাতে খেতে ঘৃনা বোধ করছেন?
রুদ্র ফোন টা বিছানায় হালকা ছুঁড়ে রেখে গম্ভীর গলায় বললো,
— ননসেন্স মার্কা কথা বলা বন্ধ রেখে খেয়ে নাও রাত অনেক হয়েছে।
— আমি আপনাকে খাওয়িয়ে দেবো।
— হৈমী,,,বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু।
— ওকে খাবো না আমি আপনিই খান। বলেই ওঠে যেতে নিলো।
রুদ্র হাত আঁটকে দাঁত চিবিয়ে বললো,
— ওকে খাওয়িয়ে দাও।
.
রুটি ছিঁড়ে মরিচ ভর্তা বেশী করে নিয়ে রুদ্রর মুখে তুলে দিলো। আর বললো,
— এই নিন আপনি তো ছেলে মানুষ ছেলেরা মেয়েদের থেকে বেশী ঝাল খায় তাই আমি যতোটুকু নেই তাঁর থেকে ডাবল আপনাকে দিলাম। তবুও রেগে থাকবেন না।
রুদ্র গম্ভীর চোখ, মুখে চেয়ে চিবাচ্ছে। একমাএ সে আর উপরওয়ালাই জানে তাঁর এখন ঠিক কি অবস্থা। ছোট বেলা থেকে কখনো কারো হাতে খায়না সে। কেউ কখনো যত্ন নিয়ে খাওয়িয়ে দেয় নি। বহুবছর পর কেউ এতো যত্ন নিয়ে মুখে খাবার তুলে দিলো কিন্তু এমন অসহনীয় খাবার ভাবতেও পারছেনা৷ জিহ্বাটা যেনো ঝলসে যাবে ঝালে। বরাবরই সে ঝাল একদম কম খায়৷ তাঁদের পরিবারে সবাই ঝাল কম খায়। রুদ্র তাঁদের তুলনায়ও ব্যাপক ঝাল কম খায়।
হৈমী নিজে খাচ্ছে আর রুদ্রর মুখে দিচ্ছে। প্রত্যেকবারই মরিচের পরিমান বেশী দিচ্ছে। তাঁর ধারনা পুরুষ মানুষ একটু বেশীই ঝাল খায়। তাই কম দিলে রেগে যেতে পারে। রুদ্রও অসহায় হয়ে খেয়ে যাচ্ছে। শরীর ঘেমে অস্থির অবস্থা। চোখ, মুখ, ঠোঁট লাল টকটক হয়ে গেছে। কপালের নীল রগ ফুলে ওঠেছে। হৈমী আপন মনে বকবক করছে খাচ্ছে আর খাওয়াচ্ছে। রুদ্র আর সহ্য করতে পারছে না এই মারাত্মক ঝাল তাই বাধ্য হয়ে খুব কষ্টে বললো,
— পানি দাও।
হৈমী রুদ্রর দিকে চেয়ে হকচকিয়ে গেলো। বললো,
— একি আপনার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে কেনো? পানিতে চিকচিক করছে। মুখের অবস্থা এমন কেনো?
রুদ্র কঠিন স্বরে বললো,
— পানি দাও।
হৈমী ভ্রু কুঁচকে বললো,
— ও মা রাগ করছেন কেনো কতো আদর করে খাওয়িয়ে দিচ্ছি। ওও বুঝেছি ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে? সুরভী আন্টির কথা মনে পড়ছে? পুরনো স্মৃতি ভেবে কষ্ট হচ্ছে আপনার? জানেন আমারো খুব কষ্ট হয় যখন নয়নের আম্মু আমাকে আদর করে খাওয়িয়ে দেয় তখন আমারো মায়ের কথা খুব মনে পড়ে, খুব কষ্ট হয়।
আপনারে হচ্ছে তাইনা থাক কষ্ট পাবেন না। আমি রোজ আপনাকে খাওয়িয়ে দিব কিন্তু আপনি কি রোজ আমার সাথে থাকবেন??
চলবে।