#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_২৭
#জান্নাতুল_নাঈমা
চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়াই বাকি। মুখ দিয়েও লালা বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে। সামনের মেয়েটাকে জাষ্ট চিবিয়ে খেতে মন চাচ্ছে। পাগল পাগল লাগছে খুব। এতো স্ট্রং হয়ে লাভ কি হলো মরিচের ঝালেই তো কপোকাত করে ফেলেছে মেয়েটা।
হৈমী সমানে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। শরীর খারাপ হতে শুরু করায় ধমক দিয়ে চুপ করাতেও পারছে না রুদ্র।
সিরিয়াস শরীর খারাপ হয়ে গেলো। হা করে শ্বাস নিতে শুরু করলো। শরীরটাও বুঝি নেতিয়ে পড়বে।
রুদ্রর অস্বাভাবিকতা চরম পর্যায়ে দেখে চুপ করলো হৈমী। খাবারের প্লেটগুলো একপাশে রেখে চিৎকার করে ওঠলো,
— একি আপনার কি হলো? এমন করছেন কোনো? শরীর খারাপ করছে?কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলুন? কি হলো হঠাৎ করে?
রুদ্র জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে চাপা গলায় বললো,
— পানি দাও।
হৈমী আর দেরী না করে, কোন প্রশ্ন না করে ছুটে পানি সহ জগ নিয়ে এলো। রুদ্র তারাহুরো করে গ্লাসের পানি শেষ করে জগ থেকে পানি ভরে খেতে লাগলো। তিন গ্লাস পানি খেয়ে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বললো,
— বসার রুমে যে ব্যাগ গুলো রেখেছি সেগুলো নিয়ে এসো। ফার্স্ট।
হৈমী কান্না এবং ভয় মাখা মুখে দৌড়ে গিয়ে ব্যাগগুলো নিয়ে এলো। রুদ্র বললো,
— ফ্যানের পাওয়ার টা বাড়িয়ে দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করো।
হৈমী তাই করলো। রুদ্র একটা চকলেট মুখে দিয়ে হৈমীর দিকে তাকালো। হৈমী ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। সে বুঝে গেছে ঘটনাটা কি ঘটেছে।তাই বললো,
— আমি সরি। আপনার ঝালে অভ্যেস নেই তাইনা? এমন খাবারেও? আপনি আগেই বলতে পারতেন। আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি খুব সরি।
রুদ্র ইশারায় আরেক গ্লাস পানি দিতে বলতেই হৈমী দিলো। পানিটা খেয়ে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে বললো,
— সবকিছু গুছিয়ে চকলেট খেতে ইচ্ছে হলে খাও। নয়তো রেখে দাও পরে খাবে আর এই ব্যাগ থেকে বাচ্চা দের দেবে সকালে।
হৈমী কেমন ভাবে যেনো চেয়ে রইলো। চোখ,মুখ অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে। রুদ্র ধীর গলায় ধমকে বললো,
— ইডিয়টের মতো চেয়ে আছো কেনো? কথা শুনতে পাওনি? নাকি আরো মরিচ খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে?
হৈমী ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কাঁদতে শুরু করলো। রুদ্রর গলা জ্বলছে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। রাগ লাগছে খুব কিন্তু খাটাতে চাচ্ছে না। এমন কান্না দেখে বিরক্তি ভঙ্গিতে চেয়ে দাঁত কটমট করে বললো,
— এসব কি পাগলামি কাঁদছো কেনো?
— আমি কারো কষ্ট দেখতে পারিনা। আপনি কতো কষ্ট পাচ্ছিলেন। আপনি কেমন হয়ে গেছিলেন কয়েক সেকেন্ডেই। জানেন আমার এখানে (বুকে ইশারা করে) কেমন ধক করে ওঠেছিলো। এখনো কেমন লাগছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে খুব কান্না পাচ্ছে। আপনি অমনটা কেনো করলেন। বলেই কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলো।
কপাল কুঁচকে এলো রুদ্রর। এখনো জিগ্যেস করছে অমনটা কেনো করলো ভাবতেই ঠাডিয়ে দিতে ইচ্ছে করলো দুইটা।
.
সবকিছু গুছিয়ে রেখে রুমে এলো হৈমী। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় তাকাতেই চোখ যেনো কপালে ওঠে গেলো তাঁর। পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,
— ছিঃ লজ্জা করেনা এভাবে শুয়ে আছেন। এভাবে থাকলে আমি কোথায় শুবো। আমারই তো ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। কি বিশ্রি অবস্থা যার শরীর দেখা যাচ্ছে তাঁর লজ্জার ল ও নেই অথচ যে দেখছে সে লজ্জায় মরেই যাচ্ছে। একেই বোধ হয় বলে সভ্যজাতির মেয়ে।
রুদ্র শুনেও না শোনার ভান করে পাশ ফিয়ে চোখ বুজে রইলো। কিছু সময় চুপ থেকে যখন কোন সাড়া পেলো না হৈমী তখন ঘুরে দেখলো ফর্সা পিঠ টা তাঁর দিকে মেলে দিয়ে মহাশয় আপন জগতে আছেন৷ তাই মুখ টা ভেঙচি দিয়ে বললো,
— সারাক্ষণ কাইলা পোশাক পড়ে থাকতে অসুবিধা না হলে এখন কোথায় অসুবিধা হচ্ছে? অসুরের মতো শরীর দেখিয়ে কোন লাভ নেই। ভালো তো লাগেই না ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। বলেই দু পায়ের গোড়ালি উঁচিয়ে রুদ্রর মুখ দেখার চেষ্টা করলো।
রুদ্রর থেকে এবারেও কোন জবাব পেলো না। নিরাশ হয়ে বিছানায় বসলো। ওকি দিয়ে জিগ্যেস করলো,
— আপনার শরীর কি ঠিক লাগছে এখন?
— বকবকানি থামিয়ে নিজে ঘুমাও আমাকেও ঘুমাতে দাও।
— এমন বিহেভ করছেন কেনো? আমি তো ভালো কথাই বলছি। দেখুন আপনি অযথা রাগ দেখাবেন না। আপনি ইচ্ছে করে আমার গায়ে দোষ ভরালেন। ঝাল খেতে পারেন না বললেই হতো তা না করে দোষের ভাগিদার করলেন। আপনার এমন হাতির মতো শরীর দেখে বোঝার উপায় আছে নাকি যে আপনি সামান্য ঝালই খেতে পারেন না। আমি তো ভেবেছিলাম কলা পাতা থেকে শুরু করে গাছ, গাছালি,ডালপালা সব খেতে পারেন আপনি।
শোয়া থেকে ওঠে বসলো রুদ্র। বেশ বোঝা আছে এই মেয়ে এমনিতে চুপ করার পাএী না৷ একে চুপ করাতে হবে। তাই কাঁধে শক্ত করে চেপে ধমকে বললো,
— ফাইজলামি পেয়েছো? এতো ফালতু কথা আসে কেনো মুখ দিয়ে? আর একটা কথা বললে হাত, পা, মুখ বেঁধে রেখে দিবো।
খানিকটা ছুঁড়ে ফেলে আবারো ওপাশ হয়ে শুয়ে পড়লো৷ হৈমী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বিরবির করে বললো,
— আমার রুমে আমার বিছানায় শুয়ে আমার ওপর মাতব্বরি? ব্যাটা খাটাশ কোথাকার ঝাল খাওয়িয়ে বেশ করেছি সকালে গোবর জল যদি না খাওয়িয়েছি হুহ। বলেই সেও ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
চড়া মেজাজে ঘুম তো আসবেই না তবুও জোর করে চোখ বুজে রাগে ফুঁস ফুঁস করতে লাগলো। এমন ফুঁসফুঁসানি শুনে মৃদু হাসলো রুদ্র। তাঁরও ঘুম আসছে না। বুকের ভিতরটা বড্ড উতলা হয়ে আছে। মনে তাঁর চরম অস্থিরতা যেই অস্থিরতাটা সে এখনি বোঝাতে চায় না হৈমীকে।
.
গভীর রাত চারিদকে নিস্তব্ধতা। ফ্যানের তীব্র বাতাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। একজোরা হাত পিছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরলো রুদ্র কে। সবেই চোখ লেগে এসেছিলো সেই ঘুমে দশ বালতি পানিতে মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে ঢেলে দিলো হৈমী। মনে পড়ে গেলো নিরবদের বাড়িতে থাকা সেই রাতের কথা। সেদিনই বুঝেছিলো হৈমীর ঘুমের ঘোরে হাত,পা ছোড়ার অভ্যেস আছে। মাথা বালিশে দিয়ে ঘুমালেও সকালে ওঠে বালিশে পেয়েছিলো হৈমীর এক পা আরেক পা ছিলো তাঁর গলায়।
ভারী নিঃশ্বাসের শব্দে কানে ঝিঁঝি ধরে গেলো। গরম শ্বাস এসে সমানে ঠেকছে পিঠে। পাশ ঘোরার মতো অবস্থাও নেই। কোনরকমে হাত ছাড়িয়ে হৈমীর দিকে ফিরলো ঘুমন্ত চেহেরাটা দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠলো। হৈমীর ফোলা ঠোঁট দুটো আরো ফোলা লাগছে। নিচের ঠোঁটের মাঝে কাঁটা দাগ টা মারাত্মক আকর্ষণীয় লাগছে। বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতো স্পর্শ করলো সেই দাগটায়। হৈমী কিছু খাচ্ছে এমন ভাবে মুখ নাড়িয়ে আবারো ভারী শ্বাস ফেলতে শুরু করলো। গভীর ঘুমে আছে বুঝলো রুদ্র। তাঁর যেমন খুব হালকা ঘুম হৈমীর তেমনি বেশ গভীর ঘুম। সবদিক দিয়েই যেনো দুজন মানুষ দুজনের উল্টো তবুও যেনো কোন এক যোগসূএে বাঁধা দুজন।
ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আলতো হাতে ধরে বুকে জরিয়ে নিতে যাবে তখনি হৈমী উল্টা,পল্টা নড়াচড়া করে কি কি যেনো বিরবির করতে করতে রুদ্র বুকের ওপর ওঠে কাঁধে মাথা রেখে দুহাতে জরিয়ে হা করে শ্বাস নিতে নিতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। এবার সম্পূর্ণ শ্বাস গিয়ে ঠেকছে রুদ্রর গলায়। দুজনের বুকের সাথে দুজন যেনো মিশে রইলো। দুজনেরই হৃদ স্পন্দন একি সাথে চলছে। কিন্তু রুদ্রর স্পন্দন হৈমীর থেকেও দ্রুত চলছে। মস্তিষ্ক হঠাৎই কেমন উল্টাপাল্টা হয়ে গেলো তাঁর। গলা শুকিয়ে এলো খুব। আফসোস করতে শুরু করলো কেনো এসেছিলো এই রাতে? কাল সকালে এলেই তো এমন ভয়ংকর যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো না। চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না নিতে এক শ্বাসে দুবার বাঁধা পেলো। শ্বাসটাও কি অদ্ভুত সময় বুঝে ঠিক কষ্ট দিচ্ছে।
একহাত হৈমীর পিঠে রেখে আরেকহাত মাথায় রাখলো। ঘুম না এলেও চোখ দুটো বন্ধ করে রাখলো। কিছু অনুভূতি সত্যি আলাদা হয়। আর যে অনুভূতি তে মিষ্টি যন্ত্রণা লুকিয়ে থাকে সেই অনুভূতির তুলনা হয় না। বুকের ভিতর ভালোলাগার অন্যরকম এক শিহরন খেলে যাচ্ছে। চোখ বুজা অবস্থায়ই মুখ এগিয়ে হৈমীর মাথায় একটা চুমু খেলো।
.
আধাঘন্টা পরই হৈমী আবারো উল্টা, পাল্টা শুরু করলো। গলায় কিছুক্ষন চুলকে রুদ্রর মুখের ওপর হাত দিয়ে দাঁড়ি তে স্পর্শ করলো। তারপর গলায় ঘুমের ঘোরে কিসব বিরবির করে রুদ্রর থেকে সরে গিয়ে রুদ্রর হাটুর ওপর মাথা রেখে হাত,পা ছড়িয়ে আবারো ঘুমে তলিয়ে গেলো৷ এসব কান্ড দেখে রুদ্রর মেজাজ গরম হতে শুরু করলো। ইচ্ছে করলো তুলে এক আছাড় দিতে। ইচ্ছে টাকে বহুকষ্টে দমন করে চোখ টা বুজলো ভাবলো ‘আর দু’ঘন্টা তারপরই সকাল এটুকু সহ্য করি’।
.
পনেরো মিনিট বাদে নড়তে নড়তে এসে মাথা ঠেকালো পেটে৷ কাত হয়ে শুয়ে হা করে শ্বাস নিচ্ছে যার ফলে রুদ্রর পেটের লোমগুলো হালকা নড়ছে। আবার মাঝে মাঝে সুড়সুড়িও লাগছে। সত্যি তার এবার মনে হচ্ছে খালি গায়ে শোয়া উচিত হয়নি। অভ্যেস নেই তাতে কি এমন ননসেন্সের সাথে আজীবন কাটাতে গেলে কিছু অভ্যেস ত্যাগ করতেই হবে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও এতো বেশী জ্ঞানহীন কোন মানুষ হতে পারে জানা নেই তাঁর। পরোক্ষনের ভাবলো ঘুমালেতো মস্তিষ্কও ঘুমিয়ে থাকে। জাগ্রত অবস্থায় যার জ্ঞান শূন্য ঘুমন্ত অবস্থায় সে অবশ্যই একটা আহাম্মক।
.
হৈমীর মাথাটা কোন রকমে উঁচু করে শোয়া থেকে ওঠে বসলো। এক প্রকার তারাহুরো করেই বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো৷ মেঝেতে চোখ যেতেই দেখলো কোল বালিশ আর ওড়না নিচে পড়ে আছে। তা দেখে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চেয়ারে গিয়ে বসলো।
.
সকাল হয়ে গেছে। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ কানে ভেসে আসছে। ঘুম ভেঙে গেলো হৈমীর।
ঘুম থেকে ওঠে রুমে কাউকে পেলো না। বাচ্চা দেরও আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আড়মোড়া ভেঙে ওঠে আশে পাশে চেয়ে ওড়না খুঁজতে লাগলো। কপালে তিনভাজ ফেলে নামতে যেতেই মেঝেতে দেখলো কোল বালিশ আর ওড়না পড়ে আছে। রুদ্র ওঠে পড়েছে এগুলো নিশ্চয়ই দেখেছে তবুও ওঠায়নি। ভাবতেই সকালের শুরুতে একটা বকা দিলো। ওড়না গায়ে জরিয়ে বালিশটা তুলে বাথরুম যাবে তখনি মনে পড়লো ‘ঘুমের ঘোরে উল্টাপাল্টা করিনিতো৷ ওনাকে আঘাত করিনিতো? না না তেমন কিছুই হয়নি হলে নিশ্চয়ই ওনি আমার ঘুমের তেরোটা বাজিয়ে দিতো কোনায় ঘুমানোর ফলেই এগুলো পড়ে গেছিলো হয়তো’
বাথরুমে সামনে যেতেই বেরিয়ে এলো রুদ্র। হৈমীকে দেখে মুখে বিরক্তির ছাপ এনে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। তা দেখে হৈমী ভীষণ অপমান বোধ করে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রুদ্রর পিছন দাঁড়িয়ে বললো,
— আপনি কিন্তু বেশী করছেন সকাল সকাল আমি আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি যে আমাকে দেখে বিরক্ত হবেন? এতোই যখন বিরক্তি বিয়ে করলেন কেনো? এতো সাধুগিরি দেখান সাধুতো আপনি মোটেই না।
রুদ্র ফোন ওয়ালেট পকেটে ঢুকিয়ে ঘড়ি পড়তে পড়তে গম্ভীর গলায় বললো,
— ঘুম থেকে ওঠে ব্রাশ করার সুযোগ টাও দিলে না। বাঁশি মুখ চালাতে শুরু করে দিলে? অটোওয়ালাও তো সকালে অটোটা মুছে পরিষ্কার করে অটো চালায়। আর তুমি কি করছো?
— এতো বড় কথা আপনি আমাকে বলতে পারলেন?
বাঁকা হাসলো রুদ্র বললো,
— ফ্রেশ হয়ে নাও আমি বাড়ি যাচ্ছি।
হৈমী চমকে ওঠলো রুদ্রর হাত চেপে ধরে বললো,
— না আপনি কোথাও যাবেন না।
— কতোক্ষন আটকে রাখবে? আমার কাজ তো আমি করবোই এভাবে আটকে লাভ নেই।
— প্লিজ,,,
— চুপচাপ নিজের কাজ করো। আমার কাজে একদম মাথা ঘামাবে না। এসব আমি পছন্দ করিনা।
হৈমী বুঝলো আটকে লাভ নেই। কিন্তু ভালোভাবে, ঠান্ডা মাথায় বোঝানো তো যেতেই পারে। তাই বললো,
— আচ্ছা আটকাবো না শুধু ওয়েট করুন আমি ফ্রেশ হয়ে এসে আপনাকে হালকা কিছু খাওয়িয়ে দেই। সকাল সকাল খালি মুখে যাবেন না৷ ভয় নেই মরিচ খাওয়াবো না ভালো কিছুই খাওয়াবো।
রুদ্র কেমন চোখে যেনো তাকালো৷ চোখে,মুখে অন্যরকম এক ভাব তা দেখে হৈমীর কি যেনো হলো আমতা আমতা করে এক প্রকার ছুটেই চলে গেলো বাথরুম। তা দেখে রহস্যময় এক হাসি দিলো রুদ্র।
.
বাথরুম থেকে বেরিয়ে হৈমী রুদ্র কে দেখতে পেলো না। ‘চলে গেলো ওনি? একটু অপেক্ষা করতে পারলো না?এখন কি হবে? সাংঘাতিক কিছু ঘটবে না তো’? ভয়ে চোখ, মুখ শুকিয়ে গেলো। তয়ালে দিয়ে মুখ মুছে বাইরে যেতেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠলো। রুদ্র যায়নি বসার রুমে দাদুর সাথে বসে কথা বলছে। রুদ্রর পাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে পরী। হৈমীকে দেখেই পরী দৌড়ে এসে কোমড় জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো,
— হৈমী আপু হৈমী আপু দয়াল ভাই এসেচে, দয়াল ভাই এসেচে।
হৈমী হাটুগেড়ে বসে ফিসফিস করে বললো,
— চুপপ শুধু ভাই বল দয়াল ভাই কিন্তু ভীষণ রাগি। খুব বকবে।
.
দুগ্লাস শরবত এনে ট্রি টেবিলে রাখলো হৈমী। দাদু তা দেখে বললো,
— বাহ গিন্নি সরবত এনেছো এটারই অপেক্ষা করছিলাম। রুদ্র দাদু ভাই নাও শরবত টা খেয়ে নাও।
রুদ্র মৃদু হেসে গ্লাস হাতে নিলো। শরবতের কালারটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো হৈমীর দিকে। হৈমী বললো,
— বেলের শরবত চিনেন না? কখনো খাননি? একবার খেয়ে দেখুন হেব্বি টেস্ট একবার খেলে রোজই খেতে চাইবেন৷ বাগানের সাইটে যে বেল গাছ ঐ গাছেরই বেল। খেয়েই দেখুন একবার।
দাদু হাসলো৷ রুদ্র মনে মনে ভাবলো ‘যার কাছে কাঁচা মরিচ ভর্তা হেব্বি টেস্ট তাঁর কাছে বেল তো অমৃতই। আর কি কি যে খেতে হবে উপরওয়ালাই জানে’ নাক, মুখ কুঁচকে অর্ধেক টা খেয়ে বললো,
— বাকিটা তুমি শেষ করো।
— না না আমি খেয়েছিতো আপনিই খান।
— বলছিতো শেষ করতে। চোখ রাঙিয়ে বললো রুদ্র।
দাদু বললো,
— আহ দিদিভাই খেয়ে নাও বলছে যখন। এক শরবত দুজন ভাগাভাগি করে খাচ্ছো এতে দুজনের মধ্যে মহব্বত বাড়বে। এক গ্লাস দুজন পানি খাওয়া এক প্লেটে স্বামী-স্ত্রী ভাত খেতে বসা এসব তো নবীর সুন্নাত।
দাদুর কথায় আর রুদ্রর ধমকে খেয়ে নিলো হৈমী।
খাওয়া শেষে রুদ্র যখন রুমে যায় হৈমী পিছন পিছন যেয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে খুব করে বোঝায়। যাতে বাড়ি ফিরে কোন প্রকার ঝামেলা না করে। হৈমীকে মাঝপথে থামিয়ে রুদ্র বললো,
— সামনে পরীক্ষা পড়তে বসো। একমাস পড় থেকে প্রাইভেটে আর যেতে হবেনা বাড়িতেই পড়বে। আর এক্সামের পুরোটা সময় তোমার ফোন আমার কাছে থাকবে। আর আমি তোমার এক্সামের সময় আমার সব কাজ থেকে ছুটি নিয়ে নেবো৷ ফোনের প্রয়োজন পড়ার আগেই সব প্রয়োজন মিটিয়ে দেবো। মাথাটা এসব ফালতু বিষয়ে না খাটিয়ে পড়ায় খাটাও কাজে দেবে।
কথাগুলো বলেই রুদ্র বেড়িয়ে গেলো। রাগে যেনো হৈমীর মাথা ফেটে পড়লো। সে কি বোঝালো আর রুদ্র কি বুঝিয়ে গেলো ভাবতেই কান গরম হয়ে লালচে বর্ন ধারন করলো।
— আমাকে পড়ার খোটা? এই হৈমী পারে না এমন কোন কিছুই নেই হুহ। সব পড়া আমার জানা আছে। শুধু মুখ না মাথাও বেশ খাটাতে জানি। তোর মতো মেজাজ কি নাকের ডগায় নিয়ে ঘুরি নাকি। ভিলেন কোথাকার! কেলেঙ্কারি ঘটানোর জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে। ধমকা,ধমকি,মারামারির সুযোগ পেলে যেনো হাত ছাড়া করতে চায় না। আল্লাহ জানে সূচনা আপুর সাথে কি করবে এখন। ‘আল্লাহ প্লিজ তুমি আপুকে এবারের মতো বাঁচিয়ে দিও আপু আর আমাকে বকবে না আর মারবে না ভালো হয়ে যাবে এখন থেকে দেখে নিও’ আমিন ধরে সমানে সূচনার জন্য দূয়া, করতে লাগলো হৈমী।
এদিকে বাড়ি ফেরার পর সূচনা রুদ্রর সামনে আসতেই পরপর তিনটা থাপ্পড় লাগালো গালে।
মাহের সবেই এসে সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়েছে।
চতুর্থ থাপ্পড় দিতেই সূচনা ডিরেক্ট গিয়ে পড়লো মাহেরের বুকে।
চলবে।