ভালোবাসা কারে কয়,পর্ব-০১,০২

0
1309

ভালোবাসা কারে কয়,পর্ব-০১,০২
শবনম মারিয়া
পর্ব ১

‘পার হয়ে যাক আশি
তবুও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।’

এই কথা বলে পাশে বসা স্ত্রীর কপালে উপস্থিত নাতি-নাতনির সামনে চুমু খেলেন মিরাজ সাহেব। এরপর স্ত্রী আর নাতি নাতনির হাত ধরে কেক কেটে আশিতম জন্মদিন পালন করলেন মিরাজ সাহেব৷

এই সুন্দর মুহুর্ত খানা হঠাৎ করে আসে নি। এই সুন্দর মুহুর্ত এসেছে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের সাংসার করার পর। পঞ্চাশ বছর আগে যে এতো সুন্দর মুহুর্ত ছিল না তা নয়। তাদের সম্পর্কের শুরুটাই ছিল মধুমাখা। এতো বছরেও তা এখনও একই রকম আছে৷ পঞ্চাশ বছর আগের কথা। তখন রোকেয়া বেগমের বয়স ছিল মাত্র ১৫। জমিদার বংশের মেয়ে বলেই হয়তো এতোটা দেরি করে বিয়ে করিয়েছেন৷ তখন মেয়েদের লেখাপড়ার এতো চলন ছিল না। রোকেয়া বেগম পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার পরে আর বিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন নি৷ তার পড়ার খুব শখ ছিল। পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র বোন, বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে অনেক আদরেই লালিত পালিত হয়েছেন। তার আবদার, তার ইচ্ছা বাবা আর ভাইয়েরা পালন করতে বাধ্য ছিলেন৷ তার বাবা তাকে কিছু বলেননি। তার কথা ছিল মেয়ে পড়বে পড়ুক। অসুবিধা কি। আসলে ততদিনে বেগম রোকেয়ার নারী শিক্ষার প্রচলন হলেও রোকেয়া বেগমের ভাগ্যে সেই শিক্ষা দীর্ঘস্থায়ীভাবে জুটেনি।
গ্রামের জমিদারের মেয়ে ছেলেদের সাথে গিয়ে দূরের স্কুলে পড়ালেখা করবেন এই জিনিস নিয়ে গ্রামের লোক যা-তা না বলে থাকতে পারতেন না। বাবা আর ভাইয়েরা গ্রামের লোকেদের কটু কথাকে উপেক্ষা করে রোকেয়া বেগমকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করেন। কিন্তু সমস্যা একটাই গ্রামের মহিলারা যখন রোকেয়ার মায়ের কাজে, কিংবা তার সাথে গল্প করতে আসতো তখন খোঁচা মেরে সুন্দরী রোকেয়ার পড়াশোনা নিয়ে কিছু কথা বলতো। কত মহিলারা কত প্রস্তাব নিয়ে আসতো। আবার কত প্রকারের ফিসফিসও করতো। মায়ের মন এগুলো আর মেনে উঠনে পারেনি। তাই রোকেয়ার মা স্পষ্ট কন্ঠে স্বামীকে বলে দিয়েছিলেন,
“রোকেয়া যদি আর একদিনও ইশকুলে যায় তাইলে আমি খাবার মুখে তুলমু না৷ পানি ছোঁবো না।”
কথামতো তাই করলেন। বাধ্য হয়ে রোকেয়াই বাবাকে বললেন,
“আব্বা আমি আর যাবো না স্কুলে। আপনে মাস্টার মশাইরে বলে দিয়েন৷ আমি আম্মার জন্য খাবার আর পানি নিয়ে যাচ্ছি।”
তাই হলো। রোকেয়ার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হলো। ভাইয়েদের এতো সময় ছিল না বোনকে পড়াবে। শুধু ছোট ভাই রহিম মাঝে মাঝে একটু আদরো পড়াতো। কিন্তু এই অসম্পূর্ণতায় রোকেয়ার মনখানা পূর্ণ হতো না।
কিছুদিন পর পর রোকেয়ার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতো। মেয়ের লেখাপড়া যেহেতু বন্ধ হলোই তার বিয়ের বিষয় ভাবতে লাগলেন তার বাবা। তাই তিনিও মেয়ের জন্য যোগ্য জামাই খুঁজতেন৷ কিন্তু মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্র পেতেন না। এভাবে দুই তিন বছর কেটে যায়। কয়দিন পর ভীষণ অসুস্থ হয় রোকয়ার মা। মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি না দেখে ছেলেরা সিদ্ধান্ত নেয় মাকে নিয়ে শহরে যাবেন। কিন্তু রোকেয়া বেগমের মায়ের শহরে যাওয়ার অবস্থাও থাকে না। রোকেয়ার ভাই রহিম অনেক চিন্তার পর একটা সমাধান বের করেন৷ তা হলো পাশের গ্রামের জমিদার বাড়ির ছেলে মিরাজের কথা মনে আসে। বছর কয়েক আগে যখন ঐ গ্রামে গিয়েছিল রহিম তখন মিরাজের সাথে ভালো সক্ষতা হয়েছিল তার। তখন মিরাজ ডাক্তারি পড়ে শহরে তাই শুনেছিল। এতোদিনে নিশ্চয়ই সে ডাক্তার। তবে কথা হলো এই ছেলে আদৌও গ্রামে আছে নাকি সেটা। ডাক্তার হলে তো শহরের হাসপাতালে চলে যায়৷ খোঁজ করলেন রহিম।
সৌভাগ্যবশত মিরাজ আর তার অন্যান্য কিছু ডাক্তার বন্ধুরা সেবার গ্রামে এসেছিল একটা লক্ষ্য নিয়ে। তারা চেয়েছিল গ্রামের মানুষদের কিছুদিন বিনায়মূল্যে চিকিৎসা আর ঔষধ দিবে। পরে কিছু কিছু মানুষ তারা এমন পেলেন যে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী। তাই তারা গ্রামের স্কুলে যেয়ে শিক্ষাও দিতে লাগলেন।
.
প্রচুর বৃষ্টি। এর মধ্যে রহিম আর তার বড় ভাই এসেছে এই গ্রামে। মিরাজের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করলে জানতে পারে সে গ্রামেই আছে। এখানে সে যেখানে বসে চিকিৎসা দেয় সেখানে যায় রহিম। সেখানে গিয়ে মিরাজকে বলে তার মার কথা। মিরাজও বৃষ্টির মধ্যেই রওনা করে তার এক সহযোগীকে নিয়ে রহিমদের সাথে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
এই ঝুম বর্ষণের বড় বাড়ির বারান্দায় এক রমণী বসে পড়ছে। রমণীর কাজটাও যেমন নজরকাড়া, সেই সাথে তার রূপখানাও। রমণীর দিক তাকিয়ে মিরাজ সাহেব চোখটা সরাতে পারলেন না। রোকেয়া বাহিরের লোকের আগমন দেখে দ্রুত শাড়ীর আঁচল টেনে মাথায় দিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে গেল সেখান থেকে। রহিম ডাক দিয়ে বলল,
“রোকেয়া আম্মার ঘরে যেয়ে আম্মারে জানা ডাক্তার আসছেন।”
রোকেয়া চুপচাপ মাথানিচু করে চলে গেল মায়ের ঘরে। তবে যাওয়ার সময় তার চোখটা সেই সুদর্শন পুরুষের দিকে গিয়েছিল। মিরাজও মেয়েটার চাহনির মধ্যে খুঁজে পেলেন আরও মনোমুগ্ধকর কিছু৷

রোকেয়ার মাকে দেখার পর ওষুধ দিয়ে বের হবে মিরাজ ও তার সহযোগী, ঠিক তখনই রোকেয়ার চোখে চোখ পড়ে গেল মিরাজের। এমনই সময় রোকেয়ার বাবা ডাক দিলেন মিরাজকে। মিরাজও ডাকের সারা দিয়ে এগিয়ে গেলেন। রোকেয়ার বাবা আর ভাইয়েরা মিরাজকে ধন্যবাদ জানালেন। খুব আবদার করলেন বেড়ানোর জন্য। কিন্তু মিরাজ জানালো তার গ্রামে অনেক কাজ আছে। তাড়াতাড়িই তার শহরে যেতে হবে। তাই এই গ্রামে বেড়ানোর সময় তার নেই। এই শুনে রোকেয়ার বাবা আর ভাইয়েদের মন খারাপ হলো। রোকেয়ার বাবা বললেন,
“তবে বাবা দুপুরের আহার সেরে যাবেন।”
এতই অনুরোধ করলেন যে মিরাজ মানা করতে পারলেন না।
কিন্তু দুপুরের খাবারের পর যখন তার বের হলো তখন বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুটা পথ হাটার পরই শুরু হলো তীব্র ঝড়। রহিম সাথে গিয়েছিল খানিকটা পথ এগিয়ে দিতে। এমন ঝড়ের মাঝে পরে মিরাজের তার গ্রামে ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়লো। রহিম তাকে বলল তার সাথে বাড়ি ফিরে যেতে। আজ না হয় সেখানেই থাকলো। মিরাজও কেনো উপায় না পেয়ে রহিমের সাথে উল্টো পথ ধরলো।
বাড়িতে আসার পর জমিদার সাহেব তার মেয়ে রোকেয়াকেই বললেন তাদের আপ্যায়নের দিকটা দেখতে।
রোকেয়াও থাকার জন্য ঘর দুটো পরিষ্কার করে দিলো। তাদের খাবার দিকটা দেখে নিল। রাতের বেলা ঝড় আরও বেড়ে গেল। শুরু হলো বন্যা। রোকেয়া এই বন্যা থেমে যাওয়ার জন্য দোয়া করতে লাগলো। বড় বারান্দার এক কোণে বসে ছিল সে। মেমবাতি জ্বালানো। এই মোমবাতির মৃদু আলোতে রোকেয়ার চেহারাখানা দেখতে ভালো লাগছিল মিরাজের।
এই বাড়িতে কাজ করে ঝুনুর মা। অল্প বয়সে স্বামী হারানোর পর এতিম ঝুনু আর তার অসহায় মাকে এই বাড়িতেই আশ্রয় দিয়েছিলন রোকেয়ার মা। তাড়া এখানেই থাকে কাজ করে। এ বাড়িতে এমন অনেক কাজের লোকই রয়েছে। রোকেয়ার সাথে ঝুনুর ভাবটা বেশি। রোকেয়ার মাত্র দু বছরের ছোট ঝুনু।
ঝুনু এসে রোকেয়াকে বলল,
“বুবু, দ্যাখছো? বন্যা হইতাসে। কি হবেনে!”
“তাই তো দেখছি রে ঝুনু। দোয়া কর যেন এই বন্যা দ্রুত থেমে যায়। না হলে গ্রামের মানুষের ভীষণ ক্ষতি হবে রে। সব ফসল নষ্ট হবে। কত রোগ ব্যাধি হবে! আবার সকলে অনাহারে ভুগবে।”
“হু। তুমি এর মধ্যে গেরামের সবাইর চিন্তা শুরু কইরা দিলা বুবু?”
“কেন করব না? তারা আমাদের আপনজন।”

দূর থেকে দাড়িয়ে মিরাজ শুনছিল রোকেয়ার কন্ঠ। এতক্ষণে এই প্রথম শুনেছে তার কন্ঠ। কন্ঠটাও কি সুন্দর! কি সুন্দর করে কথা বলে মেয়েটা। মনে তো হচ্ছে শিক্ষিত। তবে গ্রামের কয়টা মেয়েই বা লেখা পড়া করলে এমন সুন্দর করে কথা বলে? তার নিজের বোনটাও তো লেখা পড়া করতো! তবুও মা বাবার সাথে আঞ্চলিক ভাষায়ই কথা বলে। মিরাজের ভালো লাগছিল। মেয়েটার কথা শুনেই বুঝা যায় মেয়েটা অনেক বুদ্ধিমতি। এই মেয়ের শহরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করলে নিশ্চয়ই এই সমাজের উপকার করতে পারবে।
এসব ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটায় ঝুনু। তাকে অবশ্য রোকেয়াই পাঠালো কিছু লাগবে কি না শুনতে। লোকটাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রোকেয়া তাই ভেবেছে যে, লোকটার কিছু একটা প্রয়োজন। বাবার কড়া নির্দেশ অতিথির আপ্যায়নে যেন ত্রুটি না থাকে। সেই অনুযায়ী রোকেয়া সব দিকটা খেয়াল রাখছে।
মিরাজ ঝুনুকে জানালো তার কিছু লাগবে না। আবহাওয়ার অবস্থা দেখতেই সে এখানে এসেছে।
ঝুনু চলে গেল। রোকেয়াও এখানে যেতে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই একটা ডাক কানে এসে লাগলো রোকেয়ার।
“শুনুন।”
রোকেয়া হাতে মোমবাতি নিয়ে ঘুরে তাকিয়ে বলল,
“জি বলুন। কিভাবে সাহায্য করতে পারি।”
“আপনিই রহিমের ছোট বোন না?”
“জি।”
“লেখা পড়া করেন?”
রোকেয়া একটু বিভ্রান্তবোধ করছিল অচেনা করো সাথে কথা বলতে। তারপর আবার এতো রাতে এখানে একটা পুরুষের সাথে। রোকেয়ার মা তাকে এসব বিষয় খুব সাবধানে থাকতে বলে। রোকেয়া বলল,
“না।”
“তাহলে সকালে দেখলাম পড়ছিলেন যে।”
“বাড়িতে পড়ি। প্রাথমিকের পর আর বিদ্যালয়ে যাই নি।”
“কেন?”
“এতো বড় হয়ে যাওয়ার পর জমিদারের মেয়ে ছেলেদের মাঝে গিয়ে পড়বে? সেই ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু। আর এইসময় অপরিচিত কারো সাথে কথা বলাটাও দৃষ্টিকটু। আপনার কিছু প্রয়োজন হলে গাফফার চাচাকে ডাকবেন। তিনি আমাদের জানিয়ে দিবেন।”
“ক্ষমা করবেন। ব্যাপারটা বুঝিনি।”
রোকেয়া চুপচাপ চলে গেল সেখান থেকে। ভয়ে তার হাত পা কাঁপছিল। এ কেমন অনুভূতি ছিল! সে জানে না।

কয়েকদিন পার হয়ে গেল। বন্যায় ভয়াবহ অবস্থা গ্রামের। মিরাজ আটকা পরে গেল এই গ্রামে। তবে এটা যেন গ্রামের লোকেদের জন্য আশীর্বাদ। এই সময় গ্রামের মানুষের ঘর ডুবে গিয়েছে। খাবার সংকট, থাকার সংকট। জমিদার বাড়ির এক অংশে অনেকে পেল আশ্রয়। অসুস্থরা পেতে লাগলো চিকিৎসা। মিরাজ সবার চিকিৎসা করছে। তার এই কাজে রোকেয়া অনেক সাহায্য করছে। এতদিনে ভালোই কথা হয় তাদের মাঝে। মিরাজ চিকিৎসা করে। রোকেয়া জিনিসপত্র এগিয়ে দেয়।
এমনকি রোকেয়ার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে মিরাজ রোজ সন্ধ্যার পর হারিকেনের আলোতে রোকেয়াকে পড়ায়ও। রোকেয়ার ভারী ভালো লাগে। পড়া শেষেও রোকেয়া হাজারো প্রশ্ন করে। সেগুলোর উত্তর দিতে ভালো লাগে মিরাজের। রোকেয়া যখন মিরাজকে ‘ডাক্তার সাহেব’ সম্বোধন করে ডাকে তখন মিরাজের অনেক ভালো লাগে। গল্পও হয় অনেক তাদের মাঝে।
আজ পড়া শেষে রোকেয়া বলল,
“ডাক্তার সাহেব, আমি কি শহরে গেলে লেখা পড়া করতে পারব? এখানের গ্রামের মানুষের কথায় আম্মা দেয় না।”
“অবশ্যই পারবে।”
“কিন্তু আম্মা যে আমাকে বিয়ে দিতে চায়।”
“বিয়ে!”
“মেয়ে মানুষকে বিয়ে দিবে না তো কি।”
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে রোকেয়া। মিরাজ তাকিয়ে দেখে রোকেয়াকে। মনের ভেতর যেন ছ্যাঁৎ করে উঠে। এতোটা দিন রোকেয়ার সাথে কাটিয়ে মিরাজের ভালো লাগতে শুরু করেছে রোকেয়াকে। কিন্তু বলতে পারে না। তবে রোকেয়া যতক্ষণ তার আশপাশে থাকে তার ভালো লাগে।
রোকেয়া বলল,
“কি হয়েছে? আমি কি ভুল কিছু বলেছি?”
“একটা বুদ্ধি আছে।”
“কি?”
“এমন কাউকে বিয়ে করবে যে শহরে থাকবে। শিক্ষিত। তোমাকে পড়াবে।”
“এটাও হয় নাকি।”
“কেন হবে না?”
“আমাকে আব্বা অতো দূরে বিয়ে দিবেন না। কাছাকছি কোথাও।”
মিরাজ চুপ করে থাকে৷
রোকেয়া বলে,
“আচ্ছা বাদ দেন।”
দুজনেই চুপ থাকে। হঠাৎ মিরাজ বলে,
“তুমি কি জানো, তুমি অনেক সুন্দর করে কথা বলো। গ্রামের মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করলেও এতো সুন্দর করে কথা বলে না।”
“আমি দুভাবেই কথা বলি। মানে বেশিরভাগ শুদ্ধ ভাষাতেই কথা বলি৷ কিন্তু আঞ্চলিকটাও জানি৷ আব্বা আম্মা আঞ্চলিক ভাষায়ই কথা বলেন। কিছু বড় ভাই আমাদের সবাইকে শিখিয়েছে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা।”
“তুমি অনেক গোছানো।”
“কেন?”
“তোমার ব্যক্তিত্বের জন্য।”
“আপনার কথা মাঝে মাঝে বুঝি না ডাক্তার সাহেব।”
“খুব কঠিন করে কথা বলি কি?”
“হু। তবে তা ঠিক আছে। আপনার মতো ডাক্তার মানুষ এরকমই হবে।”
“হা হা হা।”
মিরাজ হাসে। রোকেয়ার এমন অনেক কথাতেই হাসে। তার ভালো লাগে খুব৷

চলবে…..

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ২

বন্যা থেমেছে। কিন্তু রোকেয়ার মনে বিষন্নতা ঘিরে আছে। এতোদিন যেই লোকটার সাথে অনেকটা সময় কেটেছে তার সেই লোকটা চলে যাবে। রোকেয়ার মাও সুস্থ হয়ে উঠেছে। তাহলে তো লোকটা আর আসবে না। তাহলে কি আর কখনো রোকেয়া দেখা পাবে ডাক্তার সাহেবের? এই তো সন্ধ্যাবেলা পড়াতো লোকটা রোকেয়াকে। কি সুন্দর করে সবটা বুঝায়। এমন জ্ঞানী লোকের সাথে রোকেয়ার আগে সাক্ষাৎ হয় নি৷ হ্যাঁ, এই গ্রামে শিক্ষিত অনেকেই আছে। তার ভাইয়েরাও শিক্ষিত। কিন্তু ডাক্তার সাহেবের মধ্যে আলাদা কিছু একটা আছে। আজ পর্যন্ত রোকেয়ার কথা বলার ধরণ নিয়ে প্রসংশা করে নি। রোকেয়ার তার সাথে গল্প করতে ভালো লাগে। ভালো লাগে তার ডাক্তার সাহেবকে। তাই তো তার ফিরে যাওয়ার সময়ও বিষন্নতা রোকেয়াকে ছাড়ে না।
বিকালবেলা রোকেয়া পুকুরপারে গিয়ে বসে ছিল। পিছন থেকে মিরাজ এসে ডাক দিলেন।
“রোকেয়া।”
রোকেয়া ফিরে তাকায়। মিরাজ গিয়ে রোকেয়ার পাশে বসে। রোকেয়া বলে,
“কাল কখন যাবেন?”
“ভোরে।”
“আর কি কখনো আসবেন না এখানে?”
আচমকাই প্রশ্ন করে বসে রোকেয়া। মিরাজ তার করুণ দৃষ্টি দেখে। রোকেয়া আবার নিজে থেকেই পুকুরের জলের পানে চেয়ে বলে,
“কেমন প্রশ্ন করছি দেখেন! আপনি আর এখানে কেন আসবেন? এখানে কি আছে?”
“কেন আসবো না?”
“এসে কি করবেন? এখানে আপনার কি আছে? মানুষ সেখানে যায় না, যেখানে তার কিছু নেই, কেউ নেই।”
“যদি বলি কেউ আছে? আর তার টানে আমি আবার আসবো। তাকে নিতে আসবো।”
রোকেয়া মিরাজে চোখ বরাবর করুণ দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে বলে,
“সত্যি?”
“হ্যাঁ। কথা দিলাম।”

.
ঠিকই মিরাজ সাহেব কথা রাখলেন। মাস দুয়েক পরেই তার বাবা প্রস্তাব নিয়ে রোকেয়াদের গ্রামে আসলেন। রোকেয়ার বাবাও যেন এমনই এক সুপাত্রের অপেক্ষায় ছিলেন। তাদের বিয়ে হলো। মিরাজ আর রোকেয়ার স্বপ্ন যেন পূরণ হলো। আজও তারা একসাথেই আছেন৷ পঞ্চাশ বছরের সংসারে ভালোবাসার কমতি ঘটেনি।
এসব গল্প প্রায়ই শুনতে হয় তূর্ণ আর চন্দ্রার। দাদা দাদির প্রেমের গল্প শুনতে তাদের খারাপ লাগে না। দাদা দাদির প্রেমের গল্প তারা বেশ মনোযোগ সহকারে শুনে। যদিও তাদের দাদা দাদি এই দুই ভাই বোনকে এই প্রেমের গল্প শোনায় একটা বিশেষ কারণে। কারণ তূর্ণ আর চন্দ্রা দুই ভাই বোনই মনে করে, এই পৃথিবীতে প্রেম ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। কিন্তু তাদের দাদা দাদি তাদের বিশ্বাস করাতে চায়, কিছু কিছু ভালোবাসা সত্যিকারের হয়। কিছু কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। এজন্যই তারা এদের এতো গল্প শোনায়। যেন দুই ভাই বোনের মনের মধ্যকার বরফটা যেন গলে পানি হয়ে যায়। কিন্তু এই দুই ভাই বোনের সাথে কেউ পারবে না। তাদের মন বরফ নয় বরং পাথর হয়ে গিয়েছে। ছোটবেলার নানা ঘটে যাওয়ার ঘটনার জন্যই এমনটা হয়েছে তাদের।
বিশেষ করে মিরাজ সাহেব আর রোকেয়া বেগম তূর্ণকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে উঠে পড়ে লেগেছে। বয়স অনেক হয়েছে ছেলেটার। কিন্তু বিয়ে করে না। সে বিয়ে করবেও না। বিয়ে মানেই তার কাছে হাস্যকর ব্যাপার। তূর্ণও বংশের ধারা রেখেছে। মানে মিরাজ সাহেব তার বংশের প্রথম ডাক্তার ছিল। এরপর মিরাজ সাহেবের ছোট মেয়ে, তূর্ণর ফুফিও ডাক্তার ছিলেন। তূর্ণও ডাক্তার। ছোটবেলা থেকেই তূর্ণ দাদা দাদির কাছে বড় হয়েছে। তার বাবা মায়ের প্রতি তার ঘৃণা কাজ করে।
অন্যদিকে তুর্ণর ফুফি অর্থ্যাৎ চন্দ্রার মা মারা যাওয়ার পর চন্দ্রাকেও তার নানা নানি নিয়ে আসেন নিজেদের কাছে। তূর্ণের থেকে দশ বছরের ছোট চন্দ্রা। চন্দ্রাকে তূর্ণ আপন বোনের মতো আগলে রাখে। চন্দ্রা মায়ের মৃত্যুর পর আর তার বাবার সাথে দেখা করেনি।

.
দাদা দাদির গল্প মনোযোগ দিয়ে শোনার পর তূর্ণ চন্দ্রার দিক তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হাসে। হাসে চন্দ্রাও। তারা জানে এই পুরোনো গল্প শোনানোর মানে কি। মানে একটাই ঘুরে ফিরে দাদা দাদি তূর্ণকে বলবে বিয়ে করতে। এমন কাউকে ভালোবাসতে, যে তাকে আজীবন ভালোবাসবে। এসব শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছে তূর্ণর। চন্দ্রা আগে বিয়ে নিয়ে কিছু বলা হতো না। কিন্তু মেয়েটার বয়স বাইশ পেরুলো আর শুরু হলো ওর পিছেও। চন্দ্রা মেয়েটা ভীষণ শান্ত। সে বিয়ের কথা বললে কিছু বলে না৷ শুধু বলে,
“আমি বিয়ে করব৷ কিন্তু আগে ভাইয়াকে বিয়ে দাও।”
চন্দ্রা জানে তার ভাইয়াও বিয়ে করবে না। এইজন্যই ভাইয়ার কথা বলে। চন্দ্রার মতো মেয়ে খুব কমই আছে। লেখাপড়ায় ভালো। ম্যাচিউরিটির কোনো অভাব নেই তার মধ্যে। থাকবে না-ই বা কেন? পরিস্থিতি মানুষকে ম্যাচিউর করে তুলে। চন্দ্রার ক্ষেত্রেও তাই। মা মরা মেয়ে কি আর ম্যাচিউর না হয়ে পারে? তবে তাকে তার নানা নানি এমন ভাবেই লালন পালন করেছে যে চন্দ্রার ম্যাচিউর না হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না৷ সে নিঃসন্দেহে এই বাড়ির আহ্লাদী মেয়ে। কিন্তু তার ভাবসাব আহ্লাদীদের মতো না। চুপচাপ থাকে অনেক। ভীষণ ভদ্র।

.
তূর্ণ তার দাদাকে বলল,
“তা দাদা তুমি তো অল্প বয়সে দাদিকে পেয়েছিলে। তাই এতো সুন্দর বউ পেয়েছো। সুদর্শন যুবক ছিলে বলেই দাদী তোমার প্রতি দুর্বল হয়েছিল।”
মিরাজ সাহেব বললেন,
“হু, এটা কিন্তু খারাপ কিছু বলো নি দাদু ভাই৷”
“তাই বলছিলাম কি যে, আমার বয়স অনেক হলো। দাদীর মতো সুন্দরী পাবো না। কোনো মেয়ে আমাকে পছন্দও করবে না। তাই এসব বিয়ের আশা ছেড়ে দাও। আর প্লিজ চন্দ্রাকে বিয়ে নিয়ে জোরাজুরি করো না। সবে মাত্র অনার্সে পড়ে। চাকরি করার আগে ওর উপর চাপ দিও না।”
দাদী বলল,
“এইসব ভালো লাগে না তূ্র্ণ। তোকে মানুষ করতে পারলাম রে। বিয়ে নিয়ে একটু চিন্তাধারা পাল্টা। মানুষকে ভালোবাসতে শিখো ভাই। তুমি কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে সেও তোমাকে মন থেকে ভালোবাসবে। সেই সম্পর্ক স্থায়ী হবে।”
“দাদী ওসব তোমাদের যুগে হতো। এখন খোঁজ নিয়ে দেখো কয়জন বিয়ে করে সুখে আছে?”
“তূর্ণ আমাদের শান্তিতে মরতে দিবি না?”
“প্লিজ দাদী। কতবার বলব এসব ইমোশনাল ডায়লগ দিবে না। এগুলো শুনলে জাস্ট গা জ্বলে।”
রেগে গিয়েছ তূর্ণ৷ অনেক চেষ্টা করে এই বিষয় এমনি এমনি হ্যান্ডেল করে নিবে। কিন্তু পারে না। রাগ উঠেই যায়। তার দাদা দাদি তাকে না রাগিয়ে থামে না।
তূর্ণ দাদা বলল,
“তূর্ণ তুমি কি পাও আমাদের এভাবে কষ্ট দিয়ে? কি পাও নিজেকে কষ্ট দিয়ে?”
“নিজেকে কষ্ট কোথায় দেই? সুখে আছি আমি। তোমরা আমাকে কষ্ট দিতে চাও। বিয়ে বিয়ে করে কেন লেগে আছো আমার পিছে? চাও বিয়ে করে তোমার ছেলে আর আর তার প্রাক্তন স্ত্রীর মতো থাকি? বিয়ে করে সংসার শুরু করব। তারপর বাচ্চা হবে। আর সেই বাচ্চাটার জীবন নষ্ট করব? আমাকে তাও আমার দাদা দাদি সামলেছে। আমার বাচ্চা হলে তাকে কে সামলাবে? তার দাদি বলতেও কেউ নেই। আমার বাবা মা তো আমাকেই পালে নাই। আর তো….।”

মিরাজ সাহেব আর রোকেয়া বেগম চুপ করে আছেন৷ জানে বিয়ে কথা বললে তূর্ণ এমনই করে। তাও বিয়ের কথা না বলে থাকতে পারে না৷ অথচ জেনে শুনে বলার পরেও তূর্ণর এসব কথায় কষ্ট পায়।
চন্দ্রা শান্ত গলায় বলল,
“ভাইয়া প্লিজ শান্ত হও। নানা নানুর সাথে এমন করো না। ওনাদের তো বয়স হয়েছে।”
“সেটা তোর নানা নানুকে বোঝা। বিয়ে বিয়ে করে মাথা খেয়ে ফেলেছে। করব না আমি বিয়ে। বিয়েতে কি হয়েছে? নিজের ছেলে মেয়ের অবস্থা দেখে নি? এরপরেও শিক্ষা হয় না?”
এসব বলে তূর্ণ বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল৷ এখন সে হসপিটালে চলে যাবে। সব সময় এটাই করে।

অন্যদিকে চন্দ্রার মাথায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তার তূর্ণ ভাইয়া আজ একটা অন্যায় করে ফেলেছে। তূর্ণ এতোদিন শুধু তার বাবা মায়ের কথা বলেছে। এতে চন্দ্রার কিছু হয় নি। কিন্তু সে আজ চন্দ্রার মায়ের কথাটাও বলেছে। তার মায়ের সংসারের কথা কেন উঠানো হলো? কেন করলো তার তূর্ণ ভাইয়া এটা?

.
ইভা একটা সার্জারী শেষ করল। রাতের বেলা সার্জারীটা শুরু করেছিল। শেষ করতে করতে ভোর রাত হয়ে গিয়েছে। সার্জারী শেষ করে তার কেবিনের দিকে যাচ্ছিল। তার চোখ এড়াতে পারলো না ব্যাপারটা। চোখ আটকে গেল তূর্ণর কেবিনের দিকে। লাইট জ্বলছে। তার মানে তূর্ণ এখানে উপস্থিত। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। তূর্ণর আজ এখানে এই সময় থাকার কথা না। সে সন্ধ্যাবেলায় আগে আগে বেড়িয়েছিল। তার দাদার জন্মদিন ছিল৷ তাহলে নিশ্চয়ই তূর্ণ রাগ করে এসেছে। ইভা তূর্ণর কেবিনে গেল৷ গিয়ে তাকিয়ে থাকলো কতক্ষণ। চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে তূর্ণ। চেহারাটায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। ইভা মনে মনে ভাব,
“ছেলেটা এমন কেন? মনে কত ধরনের কষ্টকে চাপা দিয়ে থাকে। কত রাত ঘুম বিহীন কাটায়। মানুষকে বাঁচানোর জন্য উঠে পরে লেগে থাকে। অথচ নিজে বাঁচার জন্য একটু শান্তি পায় না। সবসময় কষ্টরা তাকে পাথর বানিয়ে রাখে।”

ইভা তূর্ণর কাছে গিয়ে তার চশমাটা খুলে রাখে। কাছ দেখে একটু দেখে নেয় তূর্ণকে। ইভা চলে আসার যাচ্ছিল। হঠাৎ তার ওড়নার তূর্ণর ঘড়িতে বেধে যায়। হঠাৎ টান লাগে। উঠে পরে তূর্ণ। ইভাকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি এখানে।”
“জি৷ রুমে লাইট জ্বলছিল তোমার। বুঝতে আর বাকি রইলো না।”
“কয়টা বাজে?”
“ভোর হয়েছে।”
“ওটি থেকে বের হলে মাত্র?”
“হুম।”
“এখানে?”
“বলেছিলে দাদুর জন্মদিন। তাড়াতাড়ি যাবে। তাও গিয়েছিলে। তবে আবার এতো রাতে হসপিটালে কেন? আবার ঝগড়া করেছো? আবার চিল্লাপাল্লা করেছো বুঝি? রুমের লাইট অন দেখেই আসলাম। তোমার সব সময়কার অভ্যাস।”
“বাসায় যাবে না? আর কতক্ষণ হসপিটালে থাকবে? যাও রেস্ট নাও। এতো চাপ নিয়ো না। লাইফ নিয়ে একটু ভাবো।”
“লাইফ নিয়ে ভেবেই তোমার অপেক্ষায় আছি।”
“আমার অপেক্ষায় থেকে লাভ নেই ইভা। ইউ ডিজার্ভ বেটার।”
“বেটার চাই না। বেস্ট চাই। তোমাকে চাই!”
“উফ! প্লিজ ইভা তুমি সবটা জানো। তুমি একা একটা মেয়ে। কেউ নেই তোমার। আর কতটা সময় এভাবে একা থাকবে?”
“শুধু কি আমিই একা? তুমি একা নও?”
“না৷ আমি একা নই। আমার পরিবার আছে। আমার দাদা দাদি আছেন৷ বোন আছে। বেঁচে থাকার জন্য এরাই অনেক। কিন্তু তুমি একদম একা। তোমার একটা পরিবার দরকার।”
“তূর্ণ তুমি আমার কথা ভাবছো না। কখনোই ভাবো না। আজ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এসব বলছো তাই না?”
চুপ হয়ে অন্যদিক তাকিয়ে থাকে তূর্ণ। ইভা আবার জিজ্ঞেস করে,
“এসব বাদ দিয়ে বলো কি হয়েছে? দাদুর সাথে আবার কথা কাটাকাটি হয়েছে?”
“জানোই তো এমন হয়। ঘুরে ফিরে আমাকে বিয়ের কথাই বলবে। এসব সহ্য হয় না আমার। জানে রাগ হয়ে যাই৷ তাও। থাক ওনাদের এতো শখ আমার ঝাড়ি খাওয়ার।”
“ওনাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে। দাদুর হেলথ্ কন্ডিশন ভালো নেই তূর্ণ। এখন ওনাদের সাথে এভাবে কথা বলাটা ঠিক না৷ কি আর চায়?”
“সব সময় এক কথা ভালো লাগে না৷ কালকে একদম ডাইরেক্ট বলে দিয়েছি নিজের ছেলে মেয়েকে দেখেও শিক্ষা হয় নি?”
“কিহ্! তুমি কথাটা চন্দ্রার সামনে বলেছো?”
“হু”, বলে থামে তূর্ণ। পরক্ষণেই তার চন্দ্রার কথা মনে পরতেই বলে,
“শীট ম্যান! চন্দ্রা!”
চন্দ্রার কথা ভেবেই অস্থির হয়ে পরে তূর্ণ। ইভা তাকে শান্ত হতে বলে। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। অস্থিরতা নিয়েই বাসায় উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পরে তূর্ণ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here