ভালোবাসা কারে কয়,০৯,১০
শবনম মারিয়া
পর্ব ৯
আজ শুক্রবার। চন্দ্রা ভোরবেলা উঠে নামাজ পড়ে একটু হাটতে বেড়িয়েছে। বাসার কিছুটা দূরত্বেই ধানমন্ডি লেক। লেকের একদম পাশেই আবার প্রণয়ের বাসা। প্রণয় প্রতিদিন সকালেই জগিং করতে যায়। চন্দ্রা মাঝে মাঝে ছুটির দিনগুলোতে ভোরবেলা হাটতে বের হয়। আজ চন্দ্রার সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল প্রণয়ের। প্রণয় দূর থেকেই পিছন দিক দিয়ে চন্দ্রাকে দেখে চিনতে পারে। তার হাটার ধরণ, কথার ধরণ, চালচলন সবই প্রণয়ের মুখস্থ। দূর থেকে ভোরবেলায় চন্দ্রাকে দেখে প্রণয়ের যেন মন ভালো হয়ে গেল। সে থেমে গিয়ে চন্দ্রার চলার দিক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে লেপ্টে আছে হাসির আভা। এ হাসি ভালোলাগার। ভালোবাসার। প্রিয় মানুষটিকে দেখলে এমনই অনুভূতি জাগে। ভালো লাগার অনুভূতি। প্রণয় চন্দ্রাকে জোরে ডাক দিলো,
“চন্দ্রমল্লিকা!”
চন্দ্রার পা থেমে গেল। চেনা কন্ঠ। সেই ডাক। চন্দ্রমল্লিকা নামে একজনই ডাকে ওকে। এই ডাকে কি যেন একটা আছে। তা চন্দ্রার জানা নেই। তবে সে একটু বিরক্তই হয়ে যায়। চন্দ্রা পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়। প্রণয় এগিয়ে আসে। প্রণয় জিজ্ঞেস করে,
“এতো সকালে এখানে?”
“চিন্তা করবেন না। এমনিই সকালের আলো বাতাস শুষে নিতে এসেছি। মানুষ….”
“হুঁশ। কতবার বুঝাতে হবে? বুদ্ধি কবে হবে?”
“কিছুই বলিনি।”
“ভালো মেয়ে।”
“শুনেন।”
“বলো।”
“আমার নাম চন্দ্রা। আমাকে আপনি কেন চন্দ্রমল্লিকা বলে ডাকেন? আমার অসহ্য লাগে। আমাকে আমার নামেই ডাকবেন।”
প্রণয় হেসে দেয়। এরপর তাকায় চন্দ্রার দিক। বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে চন্দ্রা। কি সুন্দর লাগছে। ভোরের ওঠা সূর্যের আলোটা এসে চন্দ্রার মুখের উপর এসে পড়েছে। কি সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে। এই মুখের দিক তাকিয়েই যেন প্রণয় অনেকটা সময় পার করে দিতে পারে।
“কি হলো? এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? খুব অদ্ভুত আপনি। আমার একটাই কথা, আমাকে আর চন্দ্রমল্লিকা বলে ডাকবেন না।”
প্রণয় এবার বলল,
“চন্দ্রমল্লিকা ফুলকে তো চন্দ্রমল্লিকা বলেই ডাকবো। আমার চন্দ্রমল্লিকা ডাকতে ভালো লাগে।”
“আশ্চর্য! আপনার ভালো লাগার জন্য কি একটা মানুষের নাম পাল্টে ফেলবেন?”
“হ্যাঁ।”
“উফ! আপনার সাথে কথা বলাটাই বৃথা। সবসময় এমন করেন। এই পর্যন্ত কতবার আমার নামটা নিয়ে তর্ক করলাম। আপনি তবুও আমার চন্দ্রমল্লিকাই ডেকে গেলেন।”
“হ্যাঁ, চন্দ্রমল্লিকা বলেই ডাকবো।”
“যা খুশি করেন। আপনি তো আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলেন।”
“চলো একসাথে ভোরের দৃশ্যটা উপভোগ করি।”
চন্দ্রা আর কিছুই বলল না। প্রণয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে শুরু করল।
হাঁটতে হাঁটতে চন্দ্রা নিজে থেকেই প্রণয়কে বলল,
“মনে আছে আজকে কি বার?”
“শুক্রবার।”
“হ্যাঁ।”
“তো কি হয়েছে?”
“ভুলে গিয়েছেন?”
“কি?”
“আজকে প্রণয়িণীর সাথে সময় কাটানোর কথা আমার।”
“ওহ্! তাই তো। ভুলেই গিয়েছিলাম একদম।”
চন্দ্রা অভিমানী দৃষ্টিতে তাকালো প্রণয়ের দিক। কি জানি এই দৃষ্টিতে কি আছে! এতোটা মায়াময়!
প্রণয় বলল,
“চিন্তা করো না। মনে পড়েছে। অবশ্যই নিয়ে যাব।”
“আচ্ছা।”
দুজনে হাঁটতে থাকে। এরপর লেক থেকে বের হয়ে যায়। চন্দ্রা প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমি তাহলে আসি।”
“চলো আমিও এগিয়ে দিয়ে আসি।”
চন্দ্রা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কেন? আমি একা যেতে পারব। আপনার যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”
“না। এমনি বলেছি। আসলে ঐদিকটায় একটু যাওয়া দরকার। প্রণয়িণীর খাবার নিতে হবে। তোমাদের বাসার ঐদিকের সুপারশপ থেকেই নিই।”
“ওহ্ আচ্ছা। প্রণয়িনীর খাবার সম্পর্কে আপনার ধারণা আছে আদৌ?”
“কেন? থাকবে না কেন?”
“আপনি কি ওর দেখাশুনা করেন নাকি? সব তো আন্টির করা লাগে।”
“না, আমি আমার মেয়ের প্রতি এতোটাও দায়িত্বহীন নই যতোটা আমাকে সবাই ভাবে। মেয়ের সম্পর্কে সবই মুখস্থ।”
চন্দ্রা প্রণয়ের দিক তাকিয়ে হেসে দিল।
“হাসছো কেন?” বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে প্রণয়।
“আপনাকে দেখে। দায়িত্বহীন বাবা বললেই ক্ষেপে যান এমন ভাবে! অথচ মেয়েকে সময় দেন না। কেন দেন না?”
প্রণয় থমকে যায়। চন্দ্রা ঠোঁটে লেপ্টে থাকা হাসির রেখাটাও মুছে যায়। চন্দ্রা বলে,
“আচ্ছা চলুন সামনে আগাই।”
.
ঘড়িতে দুপুর ১২ টা বাজে। চন্দ্রা অপেক্ষায় বসে আছে। প্রণয়িনী আসার অপেক্ষায়। বাসায় সবাইকে বলেছে আজ স্পেশাল কেউ আসবে। কে আসবে কেউ জানে না। শুধু তূর্ণ জানে। চন্দ্রাকে মিরাজ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
“নানু ভাই কার জন্য অপেক্ষা করছো? কে আসবে? বলো আমাদের।”
চন্দ্রা মিষ্টি করে হেসে বলে,
“আসলেই দেখতে পাবে নানু। একটু ওয়েট করো। তবে এখনও যে আসলো না কেন?”
তূর্ণ বলল,
“আরে বাবা আসবে তো। ওয়েট কর। এতোটা অধৈর্য হলে হয় নাকি?”
চন্দ্রা তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে। সত্যি ওর ধৈর্য খুব কম। চন্দ্রা আবার গেল তূর্ণর রুমে। তূর্ণ রুমে এসে একটু বসেছে। চন্দ্রা গিয়েই শুরু করলো বিরক্ত করা।
“ভাইয়া।”
“হ্যাঁ, বল।”
“প্রণয় ভাইয়াকে ফোন কর।”
তূর্ণ চন্দ্রার দিক তাকিয়ে বলল,
“আসছে তো বলেছে। আবার কেন?”
“তুমি ফোন দাও ।”
“উফ চন্দ্রা!”
চন্দ্রা মন খারাপ করে। এর মাঝেই কলিং বেল বাজে। দৌড়ে গিয়ে চন্দ্রা দরজা খুলে। প্রণয়িণীকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রণয়। ছোট্ট ফুটফুটে প্রণয়িনী বাবার গলার ধরে আছে। প্রথমে তার সবকিছু একটু অচেনা লাগলেও চন্দ্রাকে দেখে সে খুশি হয়ে গেল। সে চিনতে পেরেছে তার প্রিয় চন্দ্রা আন্টিকে। প্রণয় তূর্ণর স্কুল জীবনের বন্ধু। পরিবারিকভাবেও ভালো সম্পর্ক আছে। প্রায়ই প্রণয়ের মা আসতেন তূর্ণর দাদা দাদিকে দেখতে। তখন প্রণয়িনীও আসতো। বেশ কিছুদিন ধরে প্রণয়ের মা এই বাসায় আসার সময় পায় নি। অসুস্থতার কারণে আসতে পারেন না। তারপর আবার প্রণয়িনীকে সামলানো, সবকিছু মিলে অনেকদিন আসা হয় না। তাই চন্দ্রার প্রণয়িনীর সাথে দেখা হয়নি অনেকদিন৷ এই জন্যই চন্দ্রা এতোটা পাগল হয়ে গিয়েছিল।
প্রণয়িনী এতদিন পর চন্দ্রাকে দেখে চিৎকার করে বলে উঠলো,
“চন্দা আন্তিইইইই!”
চন্দ্রা হেসে তার দু হাত বাড়িয়ে দিল প্রণয়িনীর দিকে। প্রণয়িনীও ঝাপিয়ে বাবার কোন থেকে চন্দ্রা আন্টির কোলে আসলো। চন্দ্রা প্রণয়িনীর গালে অনেকগুলো চুমু দিয়ে বলল,
“আমার প্রণয়িনী! চলে এসেছে।”
প্রণয় দরজার বাহিরে দাঁড়িয়েই তাকিয়ে আছে। প্রণয়িনী আর চন্দ্রাকে দেখছে। দুটো চেহারাই ভীষণ নিঃশপাপ। মনে হচ্ছে দুটো বাচ্চা খেলছে। চন্দ্রা বাচ্চাটার সাথে একদম বাচ্চা হয়ে গিয়েছে। কিভাবে আদর করছে চন্দ্রা প্রণয়ের মেয়েকে! প্রণয় যেন তার মেয়ে আর চন্দ্রার হাসি দেখেই সারাটাদিন পার করে দিতে পারবে। দুজনের হাসিই এতো সুন্দর!
তূর্ণ রুম থেকে বের হয়ে আসলো। তূর্ণ প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আরে প্রণয় বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভিতরে আয়?”
তখন চন্দ্রার খেয়াল হলো প্রণয়ের কথা। চন্দ্রা প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ভিতরে আসুন না।”
প্রণয় বলল,
“না, না। এখন আসবো না৷ নামাজে যাব। প্রণয়িনীকে দিতে এসেছিলাম৷”
তূর্ণ বলল,
“এই দাঁড়া। আমিও তো যাব। তুই একটু ভিতরে এসে বস। আমি রেডি হয়ে আসছি। একসাথে যাই।”
প্রণয়িনী তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“বাবা তুমি আসো। তোমাকে আসতে হবেই।”
খুব মিষ্টি করে কথা বলে প্রণয়িনী। সবাই ওর কথা শুনে হেসে দিল। তূর্ণ এগিয়ে গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে বলল,
“মিষ্টি মা আমার৷ কেমন আছো?”
“ভালো আচি আনকেল। তুমি কেমন আচো?”
প্রণয় বলল,
“মামনি কথাটা আংকেল হবে। আর আংকেলকে আপনি করে বলো৷”
প্রণয়িনী একবার বাবার দিক তাকিয়ে আরেকবার তার তূর্ণ আংকেলের দিক তাকিয়ে বলল,
“আনকেল আপনি কেমন আচো?”
সবাই স্ব জোরে হেসে উঠলো। প্রণয় বলল,
“আরে বাবা! এভাবে না।”
তূর্ণ প্রণয়কে ধম`কের সুরে বলল,
“প্রণয় থাম তো। আমার মা আমাকে আনকেলই ডাকবে। আর তুমি করেই ডাকবে। তূর্ণ আংকেলকে আপনি বলতে হবে না মা। তুমিই বলবে।”
না জানি প্রণয়িনী কি বুঝলো। সে হঠাৎ করে তূর্ণর গালে চুমু দিয়ে বলে,
“ভালো আনকেল।”
চন্দ্রা এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আমি ভালো না?”
“ইয়েএএস।”
প্রণয়িনী ইয়েস কথাটা একটু টান দিয়ে খুব সুন্দর করে বলে।
প্রণয় এবার বলল,
“কি বাবা? এখানে আসার আগে তো বাবা বাবা করে পাগল হয়ে গিয়েছিলি। এখন আন্টি, আংকেলকে পেয়ে তারাই ভালো?”
চন্দ্রা প্রণয়িনীকে তূর্ণর কোল থেকে নিজের কোলে নিয়ে বলল,
“অবশ্যই। বাবা তো সময় দেয় না প্রণয়িনীকে। তাহলে এই বাবার মেয়ে কি বলবে?”
“সময়টা তো তুমি নিয়ে গেলে। শুক্রবার তো সময় কাটাতাম বাবা মেয়ে।”
চন্দ্রা একটু অভিমান করে বলল,
“কিহ্!”
“না মানে…”
“দেখেন আপনি এমনিই মেয়েকে সময় দেন না। এখন খামোখা কথা বলবেন না। শুক্রবারের সয়টাই নিয়েছি। অন্যান্য দিনগুলোর কি খবর? সন্ধ্যায় অফিস শেষেও রাত দশটা পর্যন্ত হয় অফিসে পড়ে থাকেন আর না হলে বাহির দিয়ে ঘুরঘুর করেন৷ এখন দোষ দিচ্ছেন আমার?”
“আচ্ছা বাবা সরি। মেয়ের সামনে এই অসহায় বাবাকে আর বকা দিও না।”
প্রণয়িনী এবার চন্দ্রাকে বলল,
“আন্তি তুমি বাবাকে বকা দিচ্চো কেন? আমর বাবা ভালো।”
প্রণয় এবার আহ্লাদী স্বরে বলল,
“হ্যাঁ, দেখো মা বাবাকে বকা দিলো আন্টি।”
চন্দ্রা এবার প্রণয়ের উপর রেগে গিয়ে বলল,
“মা আসলে তোমার বাবাকে বকা দেইনি। তোমার বাবা তোমার সাথে খেলা করে না তাই বলেছি।”
“বাবা সকালে খেলেচে আমার সাথে। হাইদ এন্দ সিক।”
“তাই?”
“হুম।”
চন্দ্রা প্রণয়কে বসতে বলে প্রণয়িনীর সাথে খেলায় মেতে উঠলো। তূর্ণ আর প্রণয় জুম্মার উদ্দেশ্য বাহিরে যাচ্ছিল। যাওয়ার আগে প্রণয় মেয়ের কাছে গিয়ে বলল,
“মা বাবা আসছি। সাবধানে থেকো।আর আন্টিকে একদম ডিস্টার্ব করবে না কিন্তু৷”
“আচ্চা বাবা।”
চন্দ্রা বলল,
“নামাজ পড়ে সোজা এখানে চলে আসবেন৷ দুপুরে রান্না হয়েছে। আমাদের সাথেই খাবেন৷ নানা নানুর ভালো লাগবে।”
“আসলে কাজ আছে একটু।”
“শুক্রবার কিসের কাজ?”
চন্দ্রা এবার তূর্ণকে বলল,
“ভাইয়া নামাজ শেষে দুজনে একসাথে আসবে। প্রণয় ভাইয়াকে নিয়ে এসো।”
তূর্ণ সম্মতি জানিয়ে প্রণয়ের সাথে বেড়িয়ে গেল।
.
দুপুরে সবাই খাবার টেবিলে বসেছে। অনেকদিন পর বাসা আবার জমজমাট। মিরাজ সাহেব নাতিদের সাথে গল্পে মেতে উঠেছেন। এর মাঝে চন্দ্রা টেবিলে খাবার সাজিয়েছে। সকলকে খাবার পরিবেশন করে প্রণয়িনীকে খাওয়াতে বসতে যাচ্ছিল ঠিক তখন প্রণয় বলল,
“চন্দ্রা প্রণয়িনীকে আমি আমার সাথে খাইয়ে দিচ্ছি।”
চন্দ্রা বলল,
“না একদম না। আমি খাইয়ে দিচ্ছি ওকে।”
“তুমি শুধু শুধু কষ্ট করছো কেন?”
উপস্থিত আমেনা খালা বলল,
“বাবা, চন্দ্রা মা-ই খাওয়ায় দিক। নিজে বাবুর জন্য আলাদা করে কম ঝাল-মসলা দিয়ে মাছ ভাজছে, মুরগী রান্না করছে।”
প্রণয় ভীষণ অবাক দৃষ্টিতে চন্দ্রার দিক তাকিয়ে বলল,
“সে কি চন্দ্রা! এতো কিছু করতে গিয়েছো কেন? প্রণয়িনীকে মা ঝোল ছাড়া ভাত দেয়। ওর সমস্যা হয় না। ওটাই খেয়ে ফেলে। তুমি কষ্ট করতে গেলে কেনো?”
চন্দ্রা নরম শান্ত গলায় বলল,
“যদি ও খেতে না পারে, ঝাল লাগে। বাচ্চা মানুষ তো। তাই একটু আলাদা করেছি। কোনো সমস্যা নেই।”
“নাহ্! প্রণয়িনীকে আর আনা যাবে না। শুধু শুধু তোমার কষ্ট হয়।”
রোকয়া বেগম প্রণয়কে বললেন,
” অসুবিধা নাই। চন্দ্রা বাচ্চা মানুষ ভালেবাসে। প্রণয়িনী আসলে আমাদের সবার ভালো লাগে। তুমি ওকে নিয়ে আইসো মাঝে মাঝে।”
“কিন্তু দুষ্টমি করে তো অনেক দাদীমা৷ তাই নিয়ে আসতে চাই না।”
প্রণয়িনী বড়দের এতো কথার মধ্যে এই কথাটা ভালো বুঝেছে। সে ডানে বায়ে মাথা ঘুরিয়ে বলল,
“না বাবা, আমি একদম দুত্তুমি করি না৷”
চন্দ্রা আর তূর্ণ হেসে দিলো প্রনয়িনীর দিক তাকিয়ে। প্রণয়িনীও চন্দ্রা আর তূর্ণর হাসি দেখে নিজেও ছোট ছোট দাঁতগুলো বের করে দিয়ে একটা হাসি দিল। প্রণয় অসহায়ের মতো মুখ করে তাকালো প্রণয়িনীর দিকে। ওর দিক তাকিয়ে প্রণয়ও হেসে দিল। বলল,
“হ্যাঁ, আমার বাবাটা একদম দুষ্টুমি করে না। ভালো মেয়ে আমার।”
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে তূর্ণ আর প্রণয় একটু বাহিরে গেল। ওদের আসতে আসতে রাত হলো। এই পুরোটা সময় চন্দ্রা প্রণয়িনীর সাথে কাটিয়েছে। এতো ভালো সময় কেটেছে ওর। প্রণয়িনীর সাথে মায়ায় জড়িয়ে যায় চন্দ্রা। এই বাচ্চাটাকে পারলে ও নিজের কাছেই দেখে দিতো। কি মিষ্টি করে কথা বলে। চন্দ্রার খুব ভালো লাগে। চন্দ্রা প্রণয়িনীর মনোযোগ সহকারে কথা শুনে।
চন্দ্রা প্রণয়িনীর চুলটা খুলে আবার বেঁধে দিতে যাচ্ছিল। তখন চন্দ্রা দেখলো ঝুটি দুটো কেমন যেন৷ একটা উপরে আরেকটা নিচে। চন্দ্রা ধারণা করল এভাবে চুল প্রণয় বেঁধে দিয়েছে। চন্দ্রা হেসে বলল,
“মাম্মা তোমার চুল কে বেঁধে দিয়েছে?”
প্রণয়িনী বলল,
“আমার বাবা।”
চন্দ্রা হেসে ফেলল। বলল,
“তোমার বাবা ঝুটি করতে পারে না৷ বাঁকা করেছে।”
এই বলে চন্দ্রা আবার হাসলো। প্রণয়িনীও হাসা শুরু করল।
.
রাতের বেলা যখন প্রণয় প্রণয়িনীকে নিয়ে যায় তখন প্রণয়িনী বলল,
“আমি যাব না। আমি চন্দা আন্তির কাচেই থাকব।”
অনেক বুঝিয়ে প্রণয় বাসায় যাওয়ার রাজি করালো প্রণয়িনীকে। যাওয়ার সময় প্রণয় চন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ধন্যবাদ। আমার মেয়েকে এতোটা আদর দেওয়ার জন্য। এতোটা যত্ন করার জন্য। সরি তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।”
“দেখুন এভাবে বলবেন না৷ প্রণয়িনীর সাথে থাকতে আমার ভালো লাগে। তাই এসব ফর্মালিটির কথাবার্তা একদম বলবেন না।”
“আচ্ছা বলব না। কিন্তু তুমি আমার মেয়েকে এতো আদর করলে কেন? এখন তো মেয়ে যেতে চায় না।”
“রেখে যান।”
“ইশ! বাবার থেকে মেয়েকে দূর করার ফন্দি তাই না?”
“হা হা হা।”
“আসি।”
চলবে….
ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ১০
পরশি অনেকটাই সুস্থ হয়েছে। আজ বাসায় ফিরবে। তূর্ণ শেষবারের মতো সব রিপোর্ট চেক করে, পরশির চেকাপ করে জানালো সব ঠিকাছে। তবে রেস্ট নিতে হবে বেশ কিছু দিন। ঘা ঠিক হতে একটু সময় লাগবে।
পরশি তূর্ণকে ধন্যবাদ জানালো। জানিয়ে বলল,
“আসি।”
তূর্ণ সৌজন্যতার হাসি দিয়ে বলল,
“আসুন। দোয়া করি আর কখনো যেন এখানে রোগী হয়ে না আসতে হয়।”
পরশি সৌজন্যতা হাসি হেসে চলে যায়। তূর্ণ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে পরশির যাওয়ার দিকে। আর হয় তো কখনোই দেখা হবে না তার সাথে। আচ্ছা তূর্ণ কেন পরশির কথা এতোটা ভাবছে? আর দেখা হবে না তো কি হয়েছে? কোনো রোগীর সাথেই তো হয় না। আচ্ছা, আবার যদি পরশির মন খারাপ হয় তাহলে কি পরশি ওর মানসিক সুস্থতার জন্য তূর্ণর খোঁজ করবে?
তূর্ণ তাচ্ছিল্যের সাথে বলল,
কেন করবে? আমি কি সাইক্রেটিস্ট নাকি?
তূর্ণর ভাবনায় ছেদ ঘটালো ইভা এসে। ইভা এসে বলল,
“ডাঃ তূর্ণ আজকাল একটু বেশিই ব্যস্ত থাকেন নাকি?”
তূর্ণ বলল,
“বেশি কমের আর কি আছে। এ্যাজ ইউজুয়াল।”
“না আজকাল কথাবার্তা খুব কম হয়। ব্যস্ততার জন্য কম হয় নাকি আমাকে এ্যাভোড করো তাই?”
তূর্ণ বলল,
“তোমাকে এ্যাভোয়েড করে আমার লাভ কি? এসব কথা না বলে কি বলতে এসেছো তাই বলো।”
“এমনি আসলাম গল্প করতে। চা খাবে?”
“খাওয়া যায়।”
“আচ্ছা আমি দিতে বলছি।”
এই বলে ইভা উঠে গেল।
ফিরে এসে তূর্ণ সাথে কথা বলতে শুরু করল। তূর্ণ আর ইভা আগে অনেক ভালো বন্ধু ছিল। বন্ধু হিসেবে তূর্ণর আগে ওর সাথে সময় কাটাতে ভালোই লাগতো। তূর্ণ সবকিছু বলতো ইভাকে। ইভা ওর কথাগুলো বুঝতো। ওর মন খারাপের সঙ্গী হতো। ওকে অনেকটাই বুঝতো। তূর্ণর বরাবরই ওর ছোটবেলা নিয়ে অভিযোগ। সে সব অভিযোগগুলো বন্ধু হিসেবে ইভার কাছে বলে শান্তি পেত। ইভাও তূর্ণর কাছে অনেকটা সাপোর্ট পেয়েছে। ইভার বিয়ে ঠিক করেছিল ওর বাবা মা। ইভারও বিয়েতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু একটা দূর্ঘট`নায় ইভর পরিবারের সবাই মা`রা যায়। বাবা-মা, বড় ভাই। সবাই মা`রা যাওয়ার পর ইভার বিয়েটাও আর হয় না। ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিল ইভা। তখন সবে মাত্র ডাক্তারি পাশ করে নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে। ঠিক তখনই ঘটলো মেয়েটার সাথে এমন দূর্ঘ`টনা। তখন বন্ধু হিসেবে তূর্ণ ইভাকে যথেষ্ট সাপোর্ট করেছে। ওর অনেক খেয়াল রেখেছে। এতোদিনে সবকিছুই ঠিক ছিল তূর্ণ আর ইভার মধ্যে। তূর্ণকে কিভাবে যেন ইভার খুব পছন্দ হয়ে যায়। গত বছর তূর্ণর জন্মদিনে ইভা ওর জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছিল। আর সেদিনই ইভা তূর্ণকে ওর মনের কথা বলেছিল। ইভা সুন্দর করে সেজেগুজে একটা ফুল নিয়ে তূর্ণর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলেছিল,
“তূর্ণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু কখনো সাহস করে বলতে পারবে না সেটাও জানি। আমি এতোদিন তোমার অপেক্ষায় ছিলাম৷ কিন্তু তুমি আমাকে কিছুই বলো নি। তাই ভাবলাম আমিই বলে দেই৷ তুমি আমার যেভাবে যত্ন করো, আমাকে বুঝো! এগুলো ভালোবাসা নয় তো কি? ভালোবাসা কাকে বলে? দাদুর কথা মনে পড়ে না? দাদু বলে, ভালোবাসা কারে কয়? একেই তো ভালোবাসা বলে তাই না?”
ইভা এসব একনাগাড়ে বলে যাচ্ছিল। আর তূর্ণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল। তূর্ণ বলল,
“দেখো ইভা তুমি ভুল বুঝেছো। আমি শুধু তোমাকে আমার ফ্রেন্ড মনে করি। একজন ভালো বন্ধু। কিন্তু তুমি যে এতো কিছু ভেবে ফেলবে আমি তা কখনো বুঝতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম বন্ধু হিসেবে তুমি আমাকে বুঝবে। কিন্তু তুমি আমাকে বুঝতে পারো নি একমদই। ব্যাপারটা দুঃখজনক। তুমি জানো, ভালোবাসা কি? ভালো বাসা কাকে বলে? এসব আমি জানি না। জানতে চাইও না। প্রেম ভালোবাসার প্রতি আমার কোনোদিন ইন্টারেস্ট ছিল না, থাকবেও না। আমি বন্ধু হিসেবে তোমার পাশে থেকেছি সবসময়। আর ভবিষ্যতেও আমি আমার বন্ধুর পাশে থাকব। কিন্তু তুমি এটাকে ভালোবাসা ভাবলে, তুমি ভুল। সরি।”
ঐ দিনের পর তূর্ণ আর কথা বলেনি ইভার সাথে। ইভাও একমাস তূর্ণর সাথে কথা বলেনি৷ একদিন হঠাৎ করে ইভা তূর্ণর কাছে এসে বলল,
“কি হয়েছে তোমার? কথা বলো না যে? ব্যস্ত আজকাল?”
ইভার এসব কথা শুনে তূর্ণ বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিল। তখন তূর্ণ ভনিতা না করে সোজাসাপ্টা বলেছিল,
“আমি ভেবেছিলাম তুমি আর আমার সাথে কথা বলবে না। আমাদের হয় তো কথা বলা ঠিক হবে না।”
“তুমি এখনও কেন ঐ কথা মনে করে বসে আছো তূর্ণ? ভুলে যাও। উই আর ফ্রেন্ডস। আমি তো ওসব কবেই ভুলে গিয়েছি।”
“তাহলে এতোদিন কথা বলোনি কেন?”
“একটু ব্যস্ত ছিলাম। তুমিও তো খোঁজ নাও নি।”
“আচ্ছা সরি।”
ঐ দিন ওদের মাঝে সব ঠিক হয়েও যেন কিছুই ঠিক হয় নি। তূর্ণর কাছে ব্যাপারটা ভীষণ বিশ্রী ছিল। ও ভাবেওনি ওর নিজের বান্ধবী ওকে এভাবে ভালোবাসার কথা বলবে! এরপর থেকে তূর্ণ আজ পর্যন্ত ইভার থেকে একটু দূরত্ব মেনে চলতে পছন্দ করে। ব্যাপারটা ইভা ভালো করেই বোঝে। তবুও কেন যেন গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েটা। প্রায়ই পারলে তূর্ণ প্রতি একটা অধিকার খাটাতে চায়। কিংবা ইঙ্গিত করে সে তূর্ণর জন্য অপেক্ষায় আছে। আর তূর্ণ চায় ইভা ওর অপেক্ষা না করে যেন জীবনে এগিয়ে যায়। তূর্ণর মতো মানুষের কাছে কেউ কখনো আর যা-ই আসা করুক না কেন, কখনো ভালোবাসা পাবে না। শুধু শুধু ইভা তূর্ণর অপেক্ষায় পড়ে থাকবে এটা তূর্ণ চায় না। এজন্য তূর্ণর কাছে ইভা দিন দিন বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে।তূর্ণ বন্ধু হিসেবে ভালো চাইলেও মেয়েটা বলে, “ভালো তো বাসো না, তবে আমার জন্য চিন্তা কিসের?”
এই জন্য তূর্ণ ইভার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কিছু বলতে চায় না।
ইভা যে সব কথা জিজ্ঞেস করে তূর্ণ শুধু সেগুলোর উত্তর দেয়। যত পারে কাজ নিয়েই কথা বলে তূর্ণ।
কিছুক্ষণ কথা বলার পর, কাজ আছে বলে উঠে যায় তূর্ণ।
.
পরশি বাসায় ফিরেছে। তবে তার এই বাসায় ফিরার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। ওর ভাইকে বলে দিয়ছিল ও আর আসবে না এই বাসায়। কিন্তু এসেছে পরশির জিনিসপত্র নিতে। ইতোমধ্যে পরশি বাসা ঠিক করিয়ে নিয়েছে। সেখানে গিয়েই উঠবে। পরশি বাসার কলিংবেল দেওয়ার কিছুক্ষণ পর এসে তার ভাবী দরজা খুলল। এই সংসারে পরশির যত সব অশান্তি তার একমাত্র কারণ তার ভাবী। ভাবী এতো ঝামেলা না করলে ভাইয়ের সাথে ঝামেলা হতো না। আর ভাই বাবা মায়ের সাথেও ঝামেলা করতো না। ফলে পরশির উপর এসব চাপ আসতো না। তাই পরশির নিজের ভাবীকে বিরক্তিকর লাগে।
দরজা খুলেই পরশির ভাবী স্ব জোর চিৎকার করে বলল,
“ও বাবা! এতোদিনে আপনার আসার সময় হলো নাকি মহারাণী?”
ভাবীর কন্ঠ শুনে ঘরে উপস্থিত পরশির মা আর ছোট বোন এগিয়ে আসলেন।
ভাবীর কথায় পরশির মেজাজটা গরম হয়ে যায়। এমনিই অসুস্থ মানুষ জ্যাম ঠেলে ঠেলে বাসায় এসে পৌঁছেছে। তারপর আবার এসে এসব সহ্য করতে হবে! পরশি বলল,
“মুখের ভাষা ঠিক করতে পারেন না? নাকি মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই ভদ্রতাটুকু নেই?”
“তুই আমাকে ভদ্রতা শিখাবি? তোর কিসের ভদ্রতা আছে? মানুষের কাছে গিয়ে শোন লোকে তোকে ভদ্র বলে নাকি আমাকে।”
পরশির মা রেগে পরশিকে বললেন,
“এসব কি পরশি? তোর বড় ভাবী হয় না? বাসায় এসেই শুরু করে দিয়েছিস!”
পরশির বোন চিৎকার করে বলল,
“উফ এই ঘরে একটু শান্তিতে থাকতে দিবে কেউ?”
পরশির ভাবী বলল,
“তোমার বড় বোন কে বলো শান্তি দিতে। তোমাকে খুব শান্তিতে রেখেছেন তো।”
এদের কাহিনি দেখে পরশির ঘৃ`ণা করছে। বোন আর ভাবী না হয় এমন করলো। কিন্তু মা? মাও এমন করবে? একটাবারও জিজ্ঞেস করবে না মেয়ের কি অবস্থা?
পরশির ভাবী আবার বলল,
“মা, আপনার ছেলে তো বলেছিল এই মেয়ে না কি বলেছিল আর আসবে না আমাদের বাসায়? তা কথা বলে এক, আর কাজে আরেক?”
পরশির মার এই কথাটা শুনে খারাপ লাগলেও তিনি কিছু বললেন না। বউয়ের কথায় সংসার চলে। আর নিজের মেয়ের উপর ভীষণ বিরক্ত তিনি।
পরশি বলল,
“হ্যাঁ, থাকবো না এখানে। আামর জিনিস পত্রগুলো নিতে এসেছি। নিয়েই চলে যাব। আর চিন্তা করবে না ভাবী, এই সংসারের যে সব জিনিস আমার টাকায় কেনা সেগুলো নিয়ে যাচ্ছি না। ওগুলো বাবা মায়ের জন্য রেখে গেলাম।”
পরশির ভাবী আরও ক্ষে`পে গিয়ে বলল,
“বাবাহ্! একটু চাকরি করে বলে টাকার কত গরম। কথায় কথায় টাকার গরম। এই তোর যা তা তুই নিয়ে যা। আমার স্বামীর টাকায় চলবে এই সংসার। তোর টাকা৷ লাগবে না।”
পরশি না শুনার ভান করে রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছাতে শুরু করে। আলমারি খুলে ব্যাগ গুছানোর সময় হঠাৎ করে লাল একটা বেনারসি শাড়ি আসলো সামনে। শাড়িটা পরশি হাতে নিয়ে কতক্ষণ দেখল। রেখে যাবে ভেবে আলমারিতে রাখল। কিন্তু পারল না৷ আবার শাড়িটা নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল। গত ষোলটা বছর ধরে এই শাড়িটা যত্নে রেখেছে। কেন রেখেছে বা এখনও কেন যত্ন করছে শাড়িটার পরশি জানে না। এই শাড়িটাই পরশিকে কাঁদায়। ভীষণ কাঁদায়। তবে গত দুই বছরে শাড়ীটা ধরে আর কাঁদেনি পরশি। আগের থেকে নিজেকে আরও শক্ত বানিয়েছে নিজেকে। কাঁদবে না আর পরশি। অতীত নিয়ে আর কাঁদবে না। আর ভাববে না। পরশি নিজেকে সামলে নিয়ে ব্যাগ গুছাতে শুরু করল।
পরশির ছোট বোন এসে বলল,
“সত্যিই চলে যাচ্ছো?”
পরশির বোনের দিক না তাকিয়েই জবাব দেয়,
“হুম।”
“ধন্যবাদ।”
“আমি যাওয়াতে খুব উপকার হলো তাই না? তোর বিয়েটা তো আমি হতে দেইনি। যা এখন বিয়ে কর৷ পছন্দের মানুষকে বিয়ে কর। আমি মানা করব না।”
“কা`টা ঘা`য়ে নুনের ছিটা দিচ্ছো?”
পরশি আর কিছু না বলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলো। যাওয়ার আগে একবার বাবার রুমে গেল। তার বাবা শুয়ে ছিল। আস্তে করে বাবাকে ডাক দিলো,
“বাবা!”
পরশির বাবা তাকালেন। তিনি বললেন,
“তুই? এসেছিস মা!”
“হুম বাবা।”
“মা তুই কেমন আছিস? কোথায় ছিলি এতোদিন মা? তোর ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম৷ কেউ আমাকে কিছু বলে না।”
শুনে পরশি চুপ হয়ে গেল। তার মানে ওর বাবাকে কিছুই জানানো হয় নি পরশির কি হয়েছিল। পরশি ঐ বিষয়ে আর কিছু না বলে বলল,
“অফিসের একটা কাজের জন্য শহরের বাহিরে যেতে হয়েছিল।”
“ওহ্।”
“বাবা, আমি চলে যাচ্ছি।”
“মানে?”
“আসলে বাবা আমার জন্য ভাইয়া ভাবীর সমস্যা হচ্ছে। মায়ের সমস্যা হচ্ছে। আামর জন্য মা নাকি সমাজে মুখ দেখাতে পারে না। তার ছোট মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না। তোমার ছোট মেয়ে তার পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে পারেনি আামর জন্য। তাই ভাবলাম আমাকে নিয়ে এতো সমস্যা সবার৷ আমি চলে যাই।”
“কিন্তু মা, কোথায় যাবি?”
“ব্যবস্থা করেছি বাবা। চিন্তা করো না। আমি গেলে সবাই সুখে থাকবে।”
“পরশি!”
বাবার হাতে টাকা দিয়ে বলল,
“বাবা এটা রেখে দাও। তোমার ওষুধ খরচটা আমিই দিবো প্রত্যেক মাসে। আর হ্যাঁ, তোমার সাথে দেখা করতে আসব।”
এই বলে পরশি বেড়িয়ে আসলো বাসা থেকে। একবার পিছনে৷ ঘুরে বাসার দিক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল পরশি।
তারপর নিজেকে বলল,
“অল দ্যা বেস্ট পরশি। তুই পারবি। নিজের জীবনটা সুন্দর করে কাটা। নতুনভাবে জীবনটাকে শুরু কর।”
চলবে…..