ভালোবাসা কারে কয়,১৭,১৮

0
222

ভালোবাসা কারে কয়,১৭,১৮
শবনম মারিয়া
পর্ব ১৭

ভোর হয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। শুক্রবার বলে তূর্ণ এলার্ম দেয় নি৷ চন্দ্রাও ডাকেনি৷ অনেকটা বেলাই গড়িয়ে গিয়েছে।
তোহরাব সাহেব সকালে নাস্তা করেন নি। রুম থেকেই বের হন নি। এই নিয়ে রোকেয়া বেগম ছটফট শুরু করেছে। চন্দ্রা চুপচাপ ভাবেই বসে আছে। চিন্তার কোনো বিষয় নেই।
তূর্ণর উপর রাগ করেই তোহরাব সাহেব এমনটা করছেন। ভোরে উঠে নামাজ পড়েছেন৷ এরপর চন্দ্রা রুমে গিয়ে চা দিয়ে এসেছে। যদিও তিনি বলেছেন খাবেন না৷ তবুও চন্দ্রা কোনো কথা না শুনে রেখে এসেছে। চন্দ্রা চলে আসলে নিশ্চয়ই খাবেন।
মূলত তূর্ণ আবার একটু রাগারাগি করবে তারপর সবাই ঠিকঠাক হবে। না হলে এমন করতে থাকবে।
কিন্তু সমস্যা তূর্ণই আজ দেরি করছে৷ এখনও উঠেনি ঘুম থেকে। চন্দ্রারও ডাকতে ইচ্ছে করছে না। সারা সপ্তাহে একটা দিন মাত্র শান্তিতে ঘুমায়৷ এই শান্তির ঘুম ভাঙতে ইচ্ছে করে না। আর আজ চন্দ্রা ব্যস্ত প্রণয়িনী আসবে তাই নিয়ে। প্রতি সপ্তাহেই এমনটা করে চন্দ্রা। প্রণয়িনীর জন্য সবকিছু রেডি করে রাখে।

রুমের চারদিকে আটকানো। তাই সকালের রোদেরা তূর্ণকে কোনো রকমের বিরক্ত করতে পারছে না। ঘুম থেকে উঠে দেখলো তূর্ণ হাত নাড়াতে পারছে না৷ অনেক ব্যথা। তারপর মনে পড়লো রাতের কাহিনী। তূর্ণ এরপর খেয়াল করল ওর হাতে ব্যান্ডেজ থাকলেও হাতের মুঠোয় একটা ওড়না৷ ওড়নাটা পরশির৷ ওড়নাটার দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে মুচকি হাসলো তূর্ণ। তারপর ওড়নাটা ওভাবেই আলমারির একটা কোণায় রেখে দিল। এমনিও এই ওড়নাটা পরশিকে ফেরত দিয়ে লাভ নেই৷ সাদা ওড়না। রক্তের দাগ লেগে গিয়েছে৷ এই দাগ উঠানো যাবে না। তূর্ণ ভাবলো পরশির ওড়না যেহেতু নষ্ট হয়েই গিয়েছে ওকে একটা ওড়না গিফট করে দিবে। যদিও একটা সুতি কাপড়ের সাধারণ ওড়না নষ্ট হয়েছে। এতে কিছুই যায় আসে না৷ তবুও তূর্ণর মনে হলো একটা ওড়না কিনে দেওয়া উচিত।
তূর্ণ রুম থেকে বাইরে আসলো। খুব খিদে পেয়েছে। তাই ডাইনিং রুমে গেল। সেখানে চন্দ্রাকে দেখে তূর্ণ জিজ্ঞেস করলো,
“কি করিস?”
“তেমন কিছু না।”
“খাবার কিছু নেই?”
“বসো আমি দিচ্ছি।”
চন্দ্রা রান্নাঘরে যাওয়ার আগে পিছন ফিরে বলল,
“ভাইয়া!”
“কি?”
“মামা কিছু খায় নি সকাল থেকে?”
তূর্ণ রাগান্বিত স্বরে বলল,
“তো আমি কি করতে পারি? আমি তো গিয়ে তোর মামাকে খাইয়ে দিয়ে আসবো না তাই না?”
“তুমি একটু বুঝাও। রাগ তো তোমার সাথে।”
“আমি কি বুঝাবো? আমি কে? উনার ইচ্ছা হলে নিজে থেকে খেয়ে নিবে। কোনো বাচ্চা মানুষ তো না।”
“অনেকটা সময় হয়েছে কিছু খায় নি৷ ডায়বেটিসের রোগী। না খেয়ে থাকলে সুগার ফল করবে তো।”
“তো আমি কি করব? বুঝা তুই। আমার কথা শুনবে না।”
তূর্ণর গলার স্বর বেড়ে গিয়েছে। চন্দ্রা আর কিছু না বলে চুপচাপ রান্না ঘরে চলে গেল। তূর্ণ উঠে তোহরাব সাহেবের রুমে বাইরে গিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে শুরু করলো,
“চন্দ্রা তোর মামা খায় নি সেটা আমাকে বলে কি লাভ? আমি কি করব? তোর মামাকে বল খেয়ে নিতে। উনি কোনো অল্পবয়সী যুবক নয় যে না খেয়ে থাকতে পারবে। বয়স হয়েছে। এখনও এসব নিয়ে হেলাফেলা করলে হবে না। খেয়ে নিতে বল তোর মামাকে।”
এই বলে তূর্ণ তাড়াতাড়ি করে আবার ডাইনিং রুমে চলে গেল। তোহরাব সাহেব দরজা খুলে বের হয়ে আসলেন। ডাইনিং রুমে গিয়ে বললেন,
“চন্দ্রা মা খাবার দাও। আমার যখন ইচ্ছে করবে তখন খাব৷ কাউকে চিন্তা করতে হবে না।”

চন্দ্রা আর কিছু বলল না। দুই বাবা ছেলের কাহিনী দেখে একলা মনে হাসতে থাকলো। তূর্ণ আর তোহরাব সাহেব মুখোমুখি বসে চুপচাপ নাস্তা সেরে নিল। কেউ কারো দিক তাকালো না।

.
পরশি সকালে উঠে রান্না করে নিল। কাল রাতে যেখানে রান্না করতে অস্বস্তি লাগছিল। আজ সকালে কেন যেন খুব রান্না করতে মন চাইলো। মন যখন যা চায় তা করা উচিত। সেই জন্যই পরশি সকাল বেলা বাজার করে এনে রান্না করেছে। কালা ভুনা করেছে। পরশি কালা ভুনাটা অনেক সুন্দর করে রান্না করে। এটা ওর বাবা বলে। পরশির বাবার ওর হাতের রান্না খুব পছন্দ। বিশেষ করে কালা ভুনা। পরশির হঠাৎ রান্নার মাঝে বাবার কথা মনে পড়ে মন খারাপ হলো। পরশি ওর বাবাকে ফোন করল।
ফোনটা পরশির মা রিসিভ করেছে। পরশি সালাম দিল। সালামের উত্তর দিয়ে পরশির মা বলল,
“কেমন আছিস? সেই যে গেলি আর তো খোঁজ খবর নিলি না?”
পরশির রাগ হলো। এভাবে বলছে যে পরশি খোঁজ নেয় নি। অথচ তাঁরা কি খোঁজ নিয়েছে? পরশি তো অসুস্থও ছিল। কেউ তো ফোন করে খোঁজ নেয় নি। সেটা দোষের না হলে তবে পরশির খোঁজ না নেওয়াটা দোষের কেন হবে? আর আজও পরশি নিজে থেকেই ফোনটা দিয়েছে। পরশি তাও রাগ চেপে গেল। শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে মনটা খারাপ করার দরকার নেই। পরশি বলল,
“হ্যাঁ, খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল। পারিনি। ব্যস্ত ছিলাম অফিসের কাজে। নতুন বাসার সবকিছু গোছগাছের ঝামেলাও তো আছে। তা কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
“বাবা কোথায়?”
“ঘুমাচ্ছে।”
“এখন?”
“শরীরটা একটু খারাপ।”
চিন্তিত হয়ে পরশি বলল,
“আবার কি হয়েছে?”
“সেরকম কিছু না। জ্বর, ঠান্ডা।”
“আচ্ছা।”
“পরশি?”
“হ্যাঁ বলো।”
“তোর বাবা তোকে দেখতে চায়। শুধু তোর কথা ভাবে।”
“জানি মা। শুধু বাবা-ই আমার কথা ভাবে। আমি আসবো। বাবার সাথে দেখা করে যাব। তোমার ছেলে আর তার বউকে বলো যেন ঝামেলা না করে।”
“তবে আজ আয় সময় থাকলে। তোর ভাবীর বাবার বাসায় গিয়েছে তোর ভাই ভাবী।”
“যাক আলহামদুলিল্লাহ। তবে আজ আসবো।”

ফোনটা কেটে পরশি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কি অদ্ভুত না? নিজের বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে যাবে তাও মানুষের সমস্যা। তাদের ভয়ে তাদের অনুপস্থিতিটাকে খুঁজে তারপর যেতে হচ্ছে। চাইলেই পরশি এভাবে না লুকিয়ে যেতে পারে। সে ভয় পায় না তার ভাই ভাবীকে। তবুও বাবা মায়ের জন্য করে না৷ মা বলে সে অশান্তি সহ্য করতে পারে না। অশান্তি নাকি পরশিই বাঁধায়। তাই পরশি অশান্তি করতে চায় না।
পরশি রান্না শেষে গোসল করে নিল। আজ তার খুব শাড়ী পরতে ইচ্ছে করছে। প্রায়ই ইচ্ছে করে। শাড়ী পরতে ভালো লাগে।পরশির বেশিরভাগ সময় কাটে অফিসের ইউনিফর্ম পরে। ইউনিফর্ম পরতে পরতে এমন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে যে বেশিরভাগ সময় এখন টপস আর প্যান্ট পরা হয়। বাসায় কামিজ পরার অভ্যাস তাই পরে। শাড়ি পরার আর সুযোগ হয় না। অনেকদিন পর আজ শাড়ি পরার ইচ্ছে আর সুযোগ দুটোই হয়েছে। তাই পরশি আলমারি থেকে একটা আকাশী রংয়ের সুতি শাড়ী বের করে পরে নিল৷ না কোনো রকমের সাজগোজ নেই। চুলটা ভেজা দেখে ছেড়েই রেখেছে। শ্যামবর্ণের পরশিকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
পরশি রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো সে পরিমাণে একটু বেশিই রান্না করে ফেলেছে। বাবার জন্য নিলেও অনেকটাই থেকে যাবে। আর পরশি তো একা এতো খেতে পারবে না। পরশি ভাবলো তূর্ণদের বাসায় একটু দিয়ে আসবে। সেদিন রোকেয়া বেগমের সাথে রান্না নিয়ে গল্প হয়েছিল অনেক৷ আজ একটু টেস্ট করিয়ে দেখাক দাদিকে। দাদা, দাদি, চন্দ্রা সকলেই খেয়ে জানাক কেমন হয়েছে। পরশির হঠাৎ মনে পড়লো আজ তো তূর্ণও বাসায় আছে। তূর্ণও টেস্ট করবে।
পরশি সুন্দর করে একটা বাটিতে পরিবেশন করে নিল। তার মনে পড়লো কাল তূর্ণর হাত কেটে গিয়েছিল। ওদের বাসায় গিয়ে একেবারে তূর্ণর খোঁজও নিয়ে আসবে।
পরশি যাওয়ার আগে চুলটা খোপা করে নিল। কপালের সামনে চুলগুলো বিরক্ত করছিল। শাড়ীর সাথে এভাবে খোপায় পরশিকে অপূর্ব লাগছে। পরশি গিয়ে তূ্র্ণদের দরজায় নক করলো।

.
তূর্ণ তৈরি হয়ে নিয়েছিল জুম্মার নামাজের জন্য। সাদা একটা পাঞ্জাবী পরেছে সে। প্রণয়ের অপেক্ষায় আছে। প্রণয় প্রণয়িনীকে নিয়ে আসবে। তারপর তারা একসাথে নামাজে যাবে। বাহিরে কলিংবেল বাজতেই তূর্ণ দরজার খোলার জন্য এগিয়ে আসলো। সে ভেবেছে প্রণয় আর প্রণয়িনী এসেছে। তবে দরজা খুলে অবাক হয়ে গেল। পরশি এসেছে। পরশিকে দেখে তূর্ণ কতক্ষণ চেয়ে রইলো। অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। এর আগে কখনো পরশিকে শাড়ীতে দেখেনি তূর্ণ। তবে না দেখেই যেন ভালো ছিল৷ দেখেই যেন সর্বনাশ ঘটে গেল। এতোটা স্নিগ্ধ লাগছে। চুলের খোপাটা সুন্দর লাগছে। খোপার আশপাশ দিয়ে বের হয়ে যাওয়া চুলগুলোতে এতো সুন্দর লাগছে। তূর্ণ আর চোখ ফেরাতে পারছে না।
পরশি তূর্ণকে এভাবে অবাক হতে দেখে হেসে বলল,
“ডিস্টার্ব করলাম বুঝি?”
তূর্ণ এবার স্বাভাবিক ভাবে হাসি মুখে বলল,
“না। সেরকম কিছু না।”
“তবে এভাবে তাকিয়ে আছেন যে?”
তূর্ণ এবার একটু লজ্জিতভাবে বলল,
“আমি আসলে অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করেছিলাম তো। আমার বন্ধুর আসার কথা। আমি ওকে ভেবে কিছু বলতে যাচ্ছিলাম দরজা খুলে। আর দেখি আপনি।”
“ওহ্ আচ্ছা।”
তূর্ণ এবার দরজার সামনে থেকে সরে বলল,
“ভেতরে আসুন প্লিজ।”
পরশি ভেতরে এসে বলল,
“চন্দ্রা, দাদি, আমেনা খালা কেউ নেই?”
“সবাই আছেন।”
“এই যে দাদিকে সেদিন রান্নার গল্প শুনিয়েছিলাম। তাই আজ দাদির জন্য রান্না করে এনেছি। সকলে টেস্ট করে জানাবেন কেমন হয়েছে।”
এই বলে পরশি হাতের বাটিটা এগিয়ে দিল। তূর্ণ বাটিটা নিয়ে বলল,
“শুধু শুধু কষ্ট করলেন কেন? এসবের কি দরকার। দাদি তো এমনিই গল্প করে রান্না নিয়ে।”
“ভালো লেগেছে দাদিকে, দাদুকে৷ তাই ভাবলাম রান্না টেস্ট করানো উচিত। আর আপনারাও টেস্ট করে জানাবেন কেমন হয়েছে৷”
“আপনি রান্না করেছেন ডেফিনিটলি ভালো হয়েছে।”
“এতোটা নিশ্চিত হওয়া ভালো না কিন্তু।”
এই বলে পরশি হেসে দিল। তূর্ণও হাসলো। তূর্ণ বলল,
“এটা তো বেশ গরম৷ হাত জ্বলে উঠছে। আপনি এতোক্ষণ কিভাবে এটা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন?”
“এতটুকু তাপে অসুবিধা নেই৷ আপনি এটা রাখুন৷ না হলে আপনার হাত পুড়ে যাবে।”
হাতের কথা বলতেই পরশির মনে পড়লো তূর্ণর হাতের কথা। সে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনার হাতের কি অবস্থা এখন?”
“বেটার।”
“অনেক ব্যথা হয়েছে তাই না?”
“না, অতো না।”
“দুঃখিত। আমার জন্য এমন হলো।”
“কি বলছেন? এসব কথা একদম বলবেন না পরশি। আমার অসাবধানতার কারণে হয়েছে। তাও এটা কিছুই না৷ সামান্য একটু কে’টে গিয়েছে। ওষুধ লাগিয়ে নিয়েছি। ব্যথা নেই।”
“ব্যথা না থাকলেই ভালো।”

.
চন্দ্রা ওর রুম থেকে এসে পরশিকে দেখে অবাক হয়ে বলল,
“আরে আপু আপনি!”
“হ্যাঁ। একটু অসময়ে আসলাম তোমাদের ডিস্টার্ব করতে।”
“এই না না, এমন কিছু না। আপনি আসলে আমাদের ভালো লাগে। বিশেষ করে নানা নানু অনেক খুশি হন৷”
“এইজন্যই আসি। আজ তোমাদের জন্য একটা জিনিস এনেছিলাম রান্না করে। টেস্ট করে জানিও।”
“অবশ্যই। আপনিও আমাদের সাথে লাঞ্চ করুন না।”
“না, আজ না। আরেকদিন।”
“আজ কোথায়ও যাচ্ছেন আপু? মানে শাড়ী পড়েছেন। আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
“ধন্যবাদ। যাবো একটু বাবা অসুস্থ দেখা করতে। তবে শাড়ী এমনই পরলাম। মন চাইলো তাই।”
“বাহ্। আমারও শাড়ী ভালো লাগে। তবে সামলাতে পারি না।”
“যখন মন চাইবে পরবে। দেখবে পরতে পরতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।”
“আচ্ছা।”
চন্দ্রা আর পরশি কথা বলছিল। এমন সময় তোহরাব সাহেব আসলেন। তিনি পরশিকে দেখে চিনতে পারলেন না। চিনতে পারেনি পরশিও। চন্দ্রা পরিচয় করিয়ে দিল,
“ইনি আমার মামা পরশি আপু। আর মামা এটা পরশি আপু। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন।”
পরশি সালাম দিল। তোহরাব সাহেব সালামের উত্তর দিলেন। দুজনের মধ্যে আলাপ হলো। পরশি হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করল,
“ডাঃ তূর্ণ আপনি আগে আপনার বাবার কথা বললেনি যে।”
তূর্ণ কিছু বলতে পারছে না। চন্দ্রা বলল,
“আসলে মামা আসলোই তো কাল আপু। তাই ভাইয়া বলার সময় পায় নাই।”
“ওহ্।”
পরশি আর কথা না বাড়িয়ে বলল,
“আজ তাহলে আসি। আংকেলকে, দাদু, দাদিকে নিয়ে যেও বাসায়৷ তূর্ণ সাহেব যাবেন কিন্তু।”
তূর্ণ সৌজন্যতার হাসি হেসে বলল,
“জি। তবে আপনি আমাদের সাথে লাঞ্চ করলেন না, খারাপ লাগলো। নেক্সট টাইম আসবেন কিন্তু। আজ ব্যস্ত দেখে জোর করলাম না।”
“আচ্ছা।”

পরশি চলে গেল। তূর্ণ কতক্ষণ চেয়ে রইলো দরজার দিকে। এতো সুন্দর লাগছে কেন পরশিকে আজ? আর একটা মানুষ সুন্দর হতেই পারে। তাই বলে তূর্ণর এরকম লাগবে কেন? এর আগে এর থেকেও সুন্দর কাউকে দেখেও তো এমন লাগে নি। এগুলো কি ধরনের অনুভূতি?

চলবে….

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ১৮

প্রণয় এসেছে প্রণয়িণীকে নিয়ে। প্রণয়িনী আর চন্দ্রা খেলা করছে। তূর্ণ আর প্রণয় গিয়েছে মসজিদে। প্রণয়িনীকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে চন্দ্রা। বসে বসে টিভি দেখছে আর খাচ্ছে প্রণয়িনী । হঠাৎ বায়না করলো সে আর খাবে না। চন্দ্রা বলল,
“মা একটু খাবার আছে আর। এটুকু খাও। খাবার নষ্ট করতে হয় না।”
প্রণয়িনী বলল,
“না আন্তি আমি খাব না।”
“তুমি না লক্ষী?”
“হ্যাঁ, আমি তো লখিই। বাবা বলে আমি বাবার লখি মা। দাদুও বাবার মা৷ আমিও বাবার মা৷ তবে দাদুকে লখি মা বলে না। আমাকে বলে।”
চন্দ্রা হেসে দেয়। বলে,
“বাবার লক্ষী মাকে তাহলে খাবার শেষ করতেই হবে।”
“না আন্তি। আর খাব না।”
“প্লিজ মা। ঘুরতে নিয়ে যাব।”
প্রণয়িনী এবার লাফিয়ে উঠে। তারপর বলে,
“সত্তি আন্তি? ঘুরতে যাবো আমরা?”
“তুমি খেলে যাব।”
“আচ্চা দাও খাবো। এরপর আমি তুমি আর বাবা ঘুরতে যাবো। ঠিকাচে?”
“ঠিক আছে।”
প্রণয়িনী মুখে খাবার নিয়ে সেটা শেষ করে বলল,
“আন্তি জানো আগে বাবার অফিস ছুটিতে আমি আর বাবা পার্কে যেতাম। এখন তোমার বাসায় আসি তাই বাবা পার্কে নেয় না। দাদু নিয়ে যায় শুধু।”
“আচ্ছা আজ তুমি যেখানে বলবে সেখানে যাবো আমরা।”
“আন্তি বাবা আর আংকেল কেথায় গিয়েচে? আসে নাই কেন?”
“আসবে তো।”

.
তূর্ণ আর প্রণয় নামাজ শেষে বেড়িয়ে কথা বলা শুরু করল। তূর্ণ বলল,
“এসব কি হচ্ছে?”
“কি?”
“চন্দ্রা তো যা করে কখনো আমাকে জানায় না। তবে তুইও কেন ইদানিং বলিস না আমায়? চিন্তায় মরি আমি।”
“তোকে ডিস্টার্ব করতে চায় না। আর আমি তো হ্যান্ডেল করিই। অসুবিধা নেই। আমরা উপর ভরসা রাখ।”
“তোর উপর ভরসা আমার আজীবনের। জানি তুই নিজে ম’রবি তবে আমার আর চন্দ্রার কিছু হতে দিবি না। তবে ভাই প্লিজ আরেকটু সাবধান হতে হবে। এভাবে বাসার আশেপাশে ঠিক না।”
“এই কথা আমিও বুঝিয়েছি। তোর বোন শুনে না। কি সাহস নিয়ে বিল্ডিংয়ের পিছনেই!”
“আর বলিস না। দুই মাস হয়েছে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে যে পুলিশ অফিসার উঠেছেন, ভদ্র মহিলার চোখ কান সব খোলা। কাল সন্দেহ করে নিচেও নেমেছিল।”
“তার আগেই তো সরিয়ে ফেলেছি।”
“হ্যাঁ৷ তবুও ভয়। সাবধান করতে হবে চন্দ্রাকে।”
“হুম।”
“কি করেছিলি লা’শটা?”
“যা করি তাই।”
“আচ্ছা।”
“এতো চিন্তা কিসের রে ভাই? দুই একদিনের কাজ তো না এটা।”
“পরশিকে আটকে ছিলাম৷ না হলে ধরা খাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তারপর পরশির কথা বাদ দিলাম। অন্যান্য মানুষ দেখলে?”
“কেউ ছিল না৷ আর ভাবিস না আমি চন্দ্রাকে সমর্থন করছি। ওকে আমি কখনোই সমর্থন করিনি। তবে ওকে থামানোও তো যায় না।”
“জানি, কিছুই করার নেই। তবে এভাবে আর কত দিন?”
“জানি না। চন্দ্রা বলেছিল ও ততদিন থামবে না যতদিন না ওর ঐ লক্ষ্য পূরণ হয়।”
“ঐ লক্ষ্য যে পূরণ হবে না তা তুইও জানিস আমিও জানি। আর ওটা ছাড়াও চন্দ্রা থামবে না।”
“হুম।”
প্রণয় বলল,
“আচ্ছা তুই বাসায় যা। আমিও বাসায় যাই৷ সন্ধ্যার দিক প্রণয়িনীকে নিতে আসবো।”
“কিসের কি? বাসায় চল।”
“না রে। আজ না।”
“চল চল। চন্দ্রা আমাকে বকবে। রান্না করেছে কষ্ট করে।”
“ও এতো কষ্ট কেন করে? রান্না করতে গিয়েছে কেন? শুধুমাত্র আমার মেয়ে আর চন্দ্রা দুজনেই দুজনকে পেলে খুশি হয় তাই প্রণয়িনীকে দিয়ে আসি। না হলে দিতাম না৷ চন্দ্রার কষ্ট হয়।”
“আরে না। আজকে এমনেই রান্না করেছে। ওর মামা এসেছে। ওর মামার জন্য।”
“ওহ্ আংকেল এসেছেন? দেখা হলো না যে।”
“আগেই বের হয়েছিল নামাজের জন্য। এতক্ষণে নিশ্চয়ই নামাজ শেষ। বাসায় ফিরেছে।”
“আচ্ছা ঠিকাছে চল।”

.
পরশি বাসায় গেল। অনেকদিন পর বাসায় এসেছে। বাসায় আপাতত বাবা মা আর ছোট বোন পরী আছে। পরশি বাহির থেকে কলিং বেল বাজালো। পরী এসে দরজা খুলল। পরী পরশিকে দেখতে পারে না। পরশিকে দেখেই তার গায়ে জ্বালা ধরলো। চেহারায় খানিক বিরতি এনে বলল,
“তুই এখানে?”
পরশি বলল,
“হ্যাঁ। কেন তোর মতামত নিয়ে আসতে হবে নাকি?”
“আমার আবার মতামত! হুহ্! আমার নিজের জীবনেই তো আমার মতামত চালাতে দিস না। আবার তুই যাওয়া আসা করবি আমার মতামত অনু্যায়ী।”
“হ্যাঁ, সেটাই তো। তাহলে আবার এভাবে জিজ্ঞেস করিস কেন?”
“পরশি আপু! তোর লজ্জা করে না আমার সাথে এভাবে কথা বলতে?”
“না। কারণ আমি জানি আমি ঠিক কাজ করেছি। লজ্জা তোর পাওয়ার কথা।”
এই বলে পরশি চলে গেল বাবার রুমের দিকে। পরশি পরীকে এরকম একটা কথা বলতে চায় নি। ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে। এইজন্য ওকে এভাবে কথা শুনানোটা কখনোই ঠিক না৷ কিন্তু পরী ওর সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। পরশিকে যা নয় তাই বলে। পরশি অনেক সহ্য করেছে। ছোট মানুষ ভেবে গায়ে লাগায় নি। কিন্তু আর পারছে না। তাই এরকম একটা কথা বলেই ফেলল৷
পরশি রুমে ঢুকে বাবা মা কে সালাম দিল। পরশিকে দেখে ওর বাবা ভীষণ খুশি হলেন৷ বাবা মেয়ে মিলে অনেক কথা বললেন।
অন্যদিকে পরী পরশির বলা কথাগুলো হজম করতে না পেরে রাগে ফোন করলো ওর ভাবিকে। তার ভাবিকে জানালো পরশি এসেছে বাসায়। সে এটাও বলেছে যে পরশি এসে তার বাবা মায়ের কাছে ভাবিকে নিয়ে সমালোচনা করছে। এগুলো শোনার পর ভাবি রেগে গেল। তার বাবার বাসা দূরে হওয়ায় সে চাইলেই অল্প সময়ের মধ্যে চলে আসতে পারবে না। তাই শাশুড়িকে ফোন করলেন।
এই সময় হঠাৎ করে পূত্রবধূর ফোন পেয়ে একটু অবাকই হলেন পরশির মা। তিনি পরশির সামনে ফোনটা রিসিভ করবে না বলে রান্না ঘরে যাওয়ার বাহানা দিয়ে চলে গেলেন। তারপর কথা বলা শুরু করলেন।
সেলিনার সাথে এক রকমের চেঁচামেচি শুরু করেছে ওর ভাবি। পরশি বাবার জন্য পানি নিতে এসে শুনে ফেলল তার মা তার ভাবীকে বোঝাচ্ছেন।
“বউ মা আসলে তোমার শ্বশুর অসুস্থ তাই একটু দেখা করতে এসেছিল। অনেকদিন ধরে মেয়েকে দেখতে চাচ্ছিলেন উনি। পরশিও বাবার কথা শুনে এসেছে। দেখো মা রাগারাগি করে কি হবে বলো? আমি আর তোমার বাবা কয়দিন আর বাঁচবো। আমাদের কাছে তো তোমরা সকলেই সমান। জানি পরশি একটু…”
সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দিল না পরশি। তার আগেই পিছন থেকে বলে উঠলো,
“পরশি একটু কি মা?”
পরশির মা পিছনে ফিরে বললেন,
“তুই?”
“কেন? বলতে পারলে না? ছেলের বউর ভয়ে মেয়ের নামে যা তা বলো মা? একটুও খারাপ লাগে না?”
পরশির মা, সেলিনা পুত্রবধূর ফোনটা কেটে দিয়ে শক্ত কন্ঠে বললেন,
“ছেলের বউয়ের ভয়ে কি বলব? যা বলি ঠিকই তো বলি। একটু সময়ের জন্য এসে কি কি অশান্তি ঘটালি বল তো? পরীকে কাঁদালি। আবার তোর ভাবীকেও ক্ষেপিয়ে দিলি। ভাল্লাগে না আর এসব।”
এই বলে জাহানারা বেগম চলে গেলেন। পরশি নিজেকে সামলে নিলো। এরপর বাবার রুমে গিয়ে বাবার কাছে বিদায় নিয়ে এলো। করুণ কন্ঠে মেয়েকে বললেন,
“মা না গেলে হয় না? তোর বাবার বাড়ি থাকতে তুই কেন গিয়ে ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকবি? এই বাড়ি যতোটা পরশ আর পরীর ঠিক ততটাই তোর। ফিরে আয় মা। বাবার অনুরোধটুকু রাখ।”
পরশি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
“বাবা আমার খুব ইচ্ছে করে তোমার কাছে থাকতে। জানো বাবা প্রায়ই খুব একা লাগে। কান্না আসে। হঠাৎ করে পুরোনো কষ্টগুলো কিভাবে যেন আবার জেঁকে বসে মনে। কিন্তু বলার কেউ নেই। আগে তো মন খারাপ হলে তোমাকে বলতাম৷ তুমি মাথায় হাত রাখতে। আমার সব কষ্ট যেন দূর হয়ে যেত। কিন্তু এখন তো কাছে থাকো না৷”
“এখানেই থেকে যা মা। কেউ তোকে কিচ্ছু বলবে না। দরকার হয় পরশ ওর বউ বাচ্চাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাবে। তুই থাকবি এখানে। আমার ছেলে থাকবে, মেয়ে থাকবে না এটা মানতে পারব না।”
“না বাবা থাক। শুধু যে ভাইয়া ভাবি আমাকে দেখতে পারে না তা না৷ মা আর পরীও আমাকে সহ্য করতে পারে না। আমি তো অনেক খারাপ। থাকুক ওরা। ভালো থাকুক। আমি আসি বাবা। আমি পারলে আবার দেখা করতে আসবো তোমার সাথে। তোমার কিছু লাগলে আমাকে অবশ্যই জানাবে।”
এই বলে পরশি উঠে চলল। যাওয়ার সময় দেখলো পরশির ছোট চাচি এসেছে বাসায়। পাশাপাশি বাসায়ই থাকে পরশির চাচারা। পরশির দাদা বিশাল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিন ছেলেকে ভাগ করে দিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে পরশি বাবা চাচারা এই জায়গায় আলাদা করে বাড়ি করেছেন৷ পাশাপাশি বাসা হওয়ার কারণে চাচিরা যখন তখনই আসে। পরশির চাচি দেখেই পরশিকে কয়েকটা কটু কথা শুনানোর জন্য প্রস্তুত হলেন। এমনকি শুনালেনও। এরা সারাজীবনে কোনোদিনও উপকারে না আসলেও এই কথা শুনানোর জন্য সর্বদাই উপস্থিত থাকেন। পরশির চাচি ওকে দেখেই মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
“ওমা পরশি নাকি!”
পরশি মুখে নকল হাসি দিয়ে বলল,
“জি চাচি মা। ভালো আছেন?”
“হ্যাঁ, ভালো আছি। তুমি ভালো আছো? তা তো তোমাকে দেখেই মনে হচ্ছে ভালো আছো। তোমার সাজগোজ, চালচলন সবকিছুই তো প্রকাশ করে কেমন আছো।”
“মানে?”
“মানে আর কি? অবিবাহিত মেয়ে। বয়স তো থেমে নেই। তার উপর আবার বাড়ি ছেড়ে একা থাকো। তা একা থাকো নাকি তাও তো বলতে পারি না। দেখে তো মনে হয় রং ঢং ঠিকই বাড়ছে। এতো রং ঢং কেমনে বাড়ে তা তো লোকজন বুঝেই। সমাজে তো মুখ রাখলে না বাপ চাচাদের। বংশের মান সম্মান সব ডুবালে। লোকে কি বলবে একবারও ভাবনা নেই ছিহ্! জাহানারা তুমিও পারো এমন মেয়েকে আবার ঘরে আসতে দাও। আমার মেয়ে হলে এই মেয়েকে মুখে কালি মেখে ঘর থেকে বের করে দিতাম।”
কথাগুলো শুনে ঘৃণায় পরশির গা ঘিনঘিন করলো। মানুষ এতোটা খারাপ কথা কিভাবে বলতে পারে? পরশির ভীষণ রাগ হলো। রাগ সামলাতে না পেরে পরশি বলল,
“জি চাচি। সমাজে আমার পরিচয় দিতে যেহেতু লজ্জা করে তাহলে পরিচয় দিবেন না। আমার জন্যও ভালো হবে। আপনাদের মতো নিম্ন চিন্তাধারার মানুষকেও আমার পরিচয় দিতে ঘৃণা করে। তাই ভালো হয় আপনিও পরিচয় দিয়েন না৷ আমিও পরিচয় দিব না। দুজনের জন্যই ভালো। তাই বলছিলাম দরজার সামনে দাড়িয়ে আমার পথ আটকে এসব কথা বলে আমার সময় নষ্ট করবেন না। আপনারা তো রং ঢং করেন না তাই আপনাদের আনলিমিটেড সময়৷ কিন্তু আমাদের তো রং ঢং করতে হয়। হাতে সময় কম৷ আপনার এসব কথা শুনে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে নেই।”
পরশির চাচি রাগে গজগজ করতে করতে সরে দাঁড়ালো। পরশি চলে আসলো।
বিল্ডিংয়ের নিচে নেমে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। পরশির চাচির কথাগুলো মাথা দিয়ে ঘুরছে।ঘৃণা করছে। এসব মহিলারাই পারে। নিজেদের মেয়েদের কত রকমের ঘটনা আড়াল করে অন্য মানুষের ছেলে মেয়েদের কথা শুনাতে। ছিহ্ মহিলার মুখের ভাষা কি? মানুষ কতটা নিম্ন মস্তিষ্কের হলে একটা মেয়েকে শাড়ী পরা অবস্থায়, পরিপাটি অবস্থায় দেখলে বলতে পারে রং ঢং!
হায় রে সমাজ! বিবাহিত মেয়েরা সাজলে ভদ্র, লক্ষী বউ, স্বামীর জন্য সেজেছে। আর অবিবাহিত মেয়েরা শাড়ী পড়লেই রং ঢং, ভালো মেয়ে না, চরিত্র খারাপ কতকিছু শুনতে হয়!
বিকেল হয়েছে। পরশি রিকশায় করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো। মনটা ভীষণ খারাপ। হঠাৎ আকাশের দিক তাকালো। আকাশটা দেখে মন ভালো হয়ে গেল। কি সুন্দর আকাশ! পরশি অনেকক্ষণ বসে বসে আকাশ দেখলো। আকাশ কি সুন্দর! মানুষের মনটা যদি আকাশে মতো সুন্দর হতো তাহলে কতো ভালো হতো!

.
বিকেল হয়েছে পরেই প্রণয়িনী আবদার করলো বাহিরে যাবে ঘুরতে। চন্দ্রা তাকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ভুলে গেলেও প্রণয়িনী ভুলেনি। সে বায়না শুরু করলো ঘুরতে যাবে। তাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া লাগবেই। প্রণয় আর তূর্ণ বের হয়েছিল। তাই প্রণয় আর তূর্ণ বাসায় ছিল না।
প্রণয়িনীকে সামলানোও যাচ্ছে না। চন্দ্রা বলল,
“মা চলো আমি আর তুমি তাহলে ঘুরে আসি বাহিরে থেকে।”
প্রণয়িনী বলল,
“না, না। বাবাকেও যেতে হবে আমাদের সাতে। বাবাকে যেতে হবেই, হবেই, হবেই।”
চন্দ্রা পড়লো ঝামেলায়। এই মেয়েকে এবার কিভাবে বুঝাবে? আর চন্দ্রার একটু কেমন লাগছে প্রণয়ের সাথে যেতে। চন্দ্রা বলল,
“আচ্ছা বাবা শুনো। আমি তোমার বাবাকে ফোন দেই৷ বাবা এসে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাক। আন্টি এখন যেতে পারব না।”
“না না না। তুমি পমিস করেচো আন্তি। আমি তুমি বাবা যাবো। তুমি না গেলে আমি যাবো না৷ আমি আর তোমার কাচে আসবোও না।”
রাগ করে বসে থাকে প্রণয়িনী। চন্দ্রা প্রণয়িনীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“রাগ করলে? তোমার আন্টির সাথে রাগ করবে? আচ্ছা ঠিকাছে আন্টিও যাবো। আন্টি এখনই বাবাকে ফোন করছি।”
প্রণয়িনী খুশি হয়ে চন্দ্রার গালে চুমু খেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ইয়েএ! তুমি অনেক ভালো আন্তি। আই লাভ ইউ।”

চন্দ্রা প্রণয়কে ফোন করলো। চন্দ্রার ফোন পেয়ে প্রণয় তাড়াতাড়ি রিসিভ করলো। প্রণয় বলল,
“হ্যালো চন্দ্রা, বলো কি হয়েছে? প্রণয়িনী ঠিক আছে?”
“হ্যাঁ, ঠিক আছে। তার জন্যই ফোন করলাম।”
“কি করেছে?”
“মেয়ে আপনার বায়না ধরেছে।”
“কিসের বায়না?”
“খাওয়ানোর সময় বলেছিলাম বিকেলে আমরা ঘুরতে যাবো। এখন সে ঘুরতে যেতে চায়।”
“আচ্ছা তাহলে যাও ওকে নিয়ে। অসুবিধা নেই। কোথায় যাবে আমাকে বলে দিও। আমি গিয়ে নিয়ে আসবো এরপর প্রণয়িনীকে।”
“আসলে আমিও তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু প্রণয়িনী বলছে আপনাকে লাগবে। মানে আমাদের দুজনের সাথেই ঘুরতে যেতে চাইছে। আপনার যদি সময় হয় আর আপত্তি না থাকে তাহলে কি এসে আমাদের একটু নিয়ে যেতে পারবেন?”
প্রণয়ের মুখের হাসির রেখাটা যেন প্রসস্থ হয়ে গেল। সে বলল,
“আচ্ছা। তুমি রেডি হও। আমি আসছি।”

প্রণয় ফোনটা রেখে মনে মনে বলল,
“আমার মেয়েটা বাবাকে এতো ভালোবাসে! বাবার কিসে কি ভালো লাগে সেটা খেয়াল করে তাই করে!”
এই ভেবে মুচকি হাসলো প্রণয়। তূর্ণ ওকে দেখে বলল,
“কি হয়েছে? একা একা মুচকি মুচকি হাসিস কেন?”
“কোথায়? না তো। শোন চন্দ্রা আর প্রণয়িনী একটু বের হবে। প্রণয়িনী ঘুরতে চায়। আমাকেও সাথে যেতে বলছে। আমার যেতে হবে এখন। তুই যাবি?”
তূর্ণ বলল,
“না তুই যা। আমার একটু কাজ আছে।”
“আচ্ছা।”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here