ভালোবাসা কারে কয়,১৯,২০

0
199

ভালোবাসা কারে কয়,১৯,২০
শবনম মারিয়া
পর্ব ১৯

চন্দ্রা আলমারি খুলে খুঁজে পাচ্ছে না কি পড়বে। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ মায়ের খয়েরী রঙের একটা জামদানীতে চোখ আটকে গেল। চন্দ্রার কাছে তূর্ণ আর ওর দাদা দাদি ওর মায়ের তেমন কিছুই রাখতে দেয় নি। চন্দ্রা শাড়ীটা লুকিয়ে দাদীর আলামরি থেকে এনে নিজের আলমারিতে রেখেছিল। একটু কোণার দিকেই রেখে দিয়েছিল। শাড়ীটা দেখলে মন খারাপ হয়ে যায় দেখে। আবার শাড়ীটা সামনে চলে আসলো। শাড়ীটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ কান্না করলো। দম আটকে আসছে চন্দ্রার। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বলল,
“কেন মা, কেন? কেন ছেড়ে গেলে মা?”
চন্দ্রার অস্বাভাবিকভাবে কষ্ট হতে লাগলো। চন্দ্রা আলমারির ড্রয়ারটা খুলে ধারালো ব্লেড বের করলো। তারপর সেটা দিয়ে হাত কাটলো। গায়ের আরও দু এক জায়গায় আঁচড় কাটলো।
ব্যথায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কাঁটা জায়গায় জ্বলছে। তাও কিছুটা শান্তি পাচ্ছে চন্দ্রা। অন্তত মনের ভিতরে থাকা কষ্টগুলোকে ভুলা যাবে।
চন্দ্রা একটু সময় নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। অন্যদিকে প্রণয় চলে এসেছে। প্রণয় এসে জিজ্ঞেস করছে দাদীকে চন্দ্রার কথা। তিনি জানালেন চন্দ্রা তৈরি হওয়ার জন্য নিজের রুমে গিয়েছে প্রণয়িনীকে তাঁর কাছে দিয়ে। প্রণয়িনীকে কোলে নিয়ে প্রণয় বলল,
“আচ্ছা দাদী আপনি প্রণয়িনীকে আমার কাছে দেন। চন্দ্রা আসলে বের হবো।”
“ঠিকাছে।”
প্রণয় বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো চন্দ্রার জন্য। প্রণয় মেয়েকে বলল,
“মা আজ সারাদিন কি কি করলে আন্টির সাথে?”
“অন্নেক মজা করেচি বাবা।”
“তাই? আন্টিকে বেশি বিরক্ত করো নি তো?”
“না বাবা। আন্তিকে আমি একটুও বিতর্ক করিনি।”
প্রণয় হেসে ফেলল। বলল,
“বিতর্ক না মা। বলে বিরক্ত।”
প্রণয়িনী বাবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। কথাটা বলতে যেন তার খুব কষ্ট হবে। সে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বাবার গালে চুমু দিয়ে বলল,
“প্লিজ বাবা বলব না।”
প্রণয় মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলল,
“কেন? শিখতে হবে তো। তুমি না স্কুলে যাবে কিছুদিন পর? স্কুলে তোমার ফ্রেন্ডস হবে অনেক। তারা তো সুন্দর করে কথা শিখবে। তুমি যদি না শিখো তাহলে তো হবে না।”
প্রণয়িনী মন খারাপ করে বলল,
“আচ্চা। বিরোক্ক।”
“উহু।”
প্রণয় এবার শব্দটা ভেঙে ভেঙে দুইবার বলল। এবার প্রণয়িনী বাবার সাথে বলে সঠিকটা বলতে পারলো। প্রণয় বলল,
“এইতো আমার গুড গার্ল। কঠিন শব্দ সহজেই শিখে ফেলেছো।”
প্রণয়িনী হাসলো। তারপর বলল,
“জানো বাবা, চন্দা আন্তি না অনেক ভালো।”
“হ্যাঁ বাবা জানি তো।”
চন্দ্রা রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দুই বাবা মেয়ের কথপোকথন শুনে দাঁড়িয়ে গেল। এতক্ষণ বসে সে বাবা মেয়ের কথা শুনছিল আর মুচকি হাসছিল। দুই বাবা মেয়ের মধ্যকার সম্পর্কটা কি সুন্দর! একজন যেন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারবে না। চাইলেও কেউ এই বাবা মেয়েকে আলাদা করতে পারবে না। এখনও মনে আছে প্রথম যখন প্রণয়িনী জন্মগ্রহণ করে তখন প্রণয় আসতে চায় নি হসপিটালে। ওকে জোর করে তূর্ণ নিয়ে গিয়েছিল। প্রণয় প্রণয়িনীকে ধরতেও চায় নি।
যেদিন তূর্ণ ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টটা নিয়ে আসলো। প্রণয় জানতে পারলো প্রণয়িনী তার নিজের মেয়ে। তার নিজের রক্ত। তখন সে খুশিতে কান্না করে দিয়েছিল। চন্দ্রা তখন প্রণয়িনীকে প্রণয়য়ের কোলে তুলে দিয়েছিল। প্রণয় তখন মেয়েকে কোলে নিয়ে কাঁদছিল আর বলছিল,
“দেখ তূর্ণ আমার মেয়ে। ও আমার মেয়ে! দেখো চন্দ্রা ও আমার মেয়ে। তুমি ঠিকই বলেছিলে।”
ঐ বারের মতো খুশি মনে হয় প্রণয় আর কোনোদিনও হয় নি। ভেবেই চন্দ্রার চোখ আবছা হয়ে আসলো। সকল সন্তান প্রণয়িনীর মতো ভাগ্য নিয়ে জন্মাক। বাবার এতো আদর স্নেহ পাক সকল সন্তান। চন্দ্রার মতো ভাগ্য যেন কারো না হয়। সকল সন্তান যেন তার বাবাকে প্রণয়িনীর মতো ভালোবাসুক। চন্দ্রার মতো তার বাবাকে কেউ ঘৃণা না করুক।
পরক্ষণেই আবার চন্দ্রার মাথায় প্রশ্ন আসলো,
“আচ্ছা প্রণয়িনীও তো তার বাবাকে ঘৃণা করতে পারে সত্যিটা জানলে! না না, এটা হতে পারে না। প্রণয় নির্দোষ। প্রণয়িনীকে কখনো সত্যটা জানতে দেওয়া যাবে না।”

প্রণয় আর প্রণয়িনী কথা বলতে বলতে প্রণয় দরজার দিক তাকিয়ে দেখলো চন্দ্রা দাঁড়িয়ে আছে। প্রণয় বলল,
“আরে তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
চন্দ্রা মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,
“দাঁড়িয়ে দুই বাবা মেয়ের গল্প শুনছিলাম। ভালো লাগছিল। তাই ভাবলাম বাবা মেয়ের কথার মাঝে হস্তক্ষেপ না করি।”
“আরে তেমন কিছু না৷”
“বাবা মেয়ের বন্ডিং দেখে হিংসে হয় আমার। কি মিষ্টি দুজন।”
প্রণয় বলল,
“আচ্ছা ম্যাম। এবার চলুন৷ এমনি অনেক লেট করেছেম রেডি হতে গিয়ে। সন্ধ্যার মধ্যে আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমাদেরও বাসায় যেতে হবে।”
“আচ্ছা চলুন।”

প্রণয় গাড়িতে বসিয়ে দিল প্রণয়িনীকে। তারপর সামনের দরজাটা খুলে চন্দ্রাকে বসতে বলল৷ চন্দ্রা বসলো। প্রণয় আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছে। প্রণয়িনীকে নিয়ে কখনোই স্পিডে গাড়ী চালায় না। প্রণয় মাঝে মাঝে একটু মিররের দিকে তাকাচ্ছে। ইচ্ছে করেই মিররটা একটু চন্দ্রার দিক ঘুরিয়ে রেখেছিল। চন্দ্রাকে দেখতে আজ অন্য রকম লাগছে। চন্দ্রা বেশির ভাগ সময় তার লম্বা চুলগুলো খোপা করে বেঁধে রাখে। প্রণয় চন্দ্রার চুলগুলো খুব কমই খোলা দেখেছে। আজ চন্দ্রা চুলগুলো খুলে রেখেছে। কালো রঙয়ের একটা থ্রি-পিছ পরেছে। কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ। কপালের কোণে ঘাম জমেছে।
প্রণয় খেয়াল করে এসিটা বাড়িয়ে দিল। চন্দ্রা এবার তাকালো প্রণয়ের দিক। প্রণয়ও তাকালো। চন্দ্রা জিজ্ঞেস করলো,
“কিছু বলবেন?”
“হ্যাঁ।”
“বলুন?”
“কালো রঙের গোলাপ হয় শুনেছি৷ চন্দ্রমল্লিকা কি হয়? কালো গোলাপ আমি দেখিনি। তবে আজ কালো রঙে আবৃত উজ্জ্বল একটি চন্দ্রমল্লিকা দেখলাম।”
“মানে?”
“কালো চন্দ্রমল্লিকা আজ দেখলাম তো। অনেক বেশি সুন্দর।”
চন্দ্রা এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
“ভুল করেছি কালো জামা পরে।”
“হয় তো।”
চন্দ্রা এবার আড় চোখে তাকিয়ে বলল,
“কিহ্?”
“আসলেই ভুল করেছো। যেকোনো পুরুষ শেষ হয়ে যাবে এই চন্দ্রমল্লিকাকে দেখলে।”
“উফ আপনাকে কতবার বারণ করেছি আমাকে চন্দ্রমল্লিকা ডাকবেন না?”
“গুনে দেখিনি।”
বলেই প্রণয় হেসে দিল। চন্দ্রা রাগে ফস করে উঠলো। অন্যদিকে, প্রণয়িনী তার বাবা আর আন্টির কাহিনি হা করে দেখছে। প্রণয় মিরের দিক তাকিয়ে প্রণয়িনীকে দেখে বলল,
“তুই ওভাবে হা করে বসে আছিস কেন বাবা?”
প্রণয়িনী এবার বলল,
“বাবা চন্দামলিকা কি?”
প্রণয় বলল,
“ওটা চন্দ্রমল্লিকা হবে। চন্দ্রমল্লিকা একটা ফুলের নাম।”
“তাহলে আন্তিকে কেন চন্দামল্লিকা বললে?”
“তোর আন্টি সুন্দর না?”
“অনেক।”
“তোর আন্টি ফুলের মতো সুন্দর। তাই তোর আন্টিকে ফুলের নামে ডাকলাম।”
“ওয়াও। আমার আন্তি সত্যিই ফুলের মতো সুন্দর। ফুল আন্তি।”
এবার যেন চন্দ্রার রাগ সব চলে গেল। মুখে হাসির রেখা ফুটলো। প্রণয় বলল,
“আমি ফুল বললে রেগে যাও আর আমারই মেয়ে ফুল বললে মুখে হাসি!”
“কারণ মেয়ের বাবা লোকটা ভালো না। মেয়েকেও যা তা শিখিয়ে দেয়।”
এই বলে চন্দ্রা হেসে দিলো। প্রণয় হাসলো। এরপর ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো।

কিছুক্ষণ পর ওরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। চন্দ্রা প্রণয় আর প্রণয়িনী বসে আছে। হঠাৎ চন্দ্রার নজরে আসলো একটা জিনিস। দেখেই রাগে মাথা গরম হয়ে গেল। পাশের টেবিলে একটা মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি আর একটা অল্প বয়স্ক মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা ভীষণ ঘাবড়ে আছে। অন্যদিকে লোকটা কেমন কেমন করছে। চন্দ্রা খেয়াল করে দেখলো লোকটা তার পা দিয়ে মেয়েটার পা ঘষছে।মেয়েটার হাত ধরছে৷ গায়েও হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে মেয়েটা ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। কিছু বলতে পারছে না।
প্রণয় হঠাৎ চন্দ্রার দিক তাকিয়ে দেখলো ও কি যেন দেখছে। ওর চেহারা রাগ স্পষ্ট। স্পষ্ট খু`নের নেশা। প্রণয় খেয়াল করলো সামনের টেবিলের দিকে। দেখেই ভয় পেয়ে গেল। এবার যদি চন্দ্রা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করে কিছু করে বসে?
যে ভয়টা পাচ্ছিলো ঠিক তাই। চন্দ্রা টেবিলে রাখা কাঁটাচামচটা হাতে নিল। প্রণয়ের বুঝতে বাকি রইলো না চন্দ্রা এটা লোকটাকে আ`ঘাত করার জন্যই নিয়েছে। যদিও একটা কাঁটা চামচ দিয়ে তেমন বেশি কিছুই হবে না। কিন্তু চন্দ্রা একবার হিং`স্র হয়ে উঠলে কি কি করতে পারে তা প্রণয়ের ভালো করেই জানা আছে।
চন্দ্রা উঠতে যাবে ঠিক এমন সময় প্রণয় খপ করে চন্দ্রার হাতটা ধরে বসলো। চন্দ্রা রাগী অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো প্রণয়ের দিকে। প্রণয় ইশারায় না করলো। তারপর প্রণয়িনীর দিক তাকালো। চন্দ্রা প্রনয়িনীর দিক তাকিয়ে থমকে গেল।
প্রণয় জানতো প্রণয়িনীকে দেখলেই চন্দ্রা থেমে যাবে। কারণ সে প্রণয়িনীকে ভীষণ ভালোবাসে। প্রণয়িনীর সামনে সে কিছু করবে না।”
প্রণয় বলল,
“রিল্যাক্স। আই উইল ম্যানেজ।”

চন্দ্রা থেমে যায়। সে প্রণয়িনীর মাথায় হাত রাখে। প্রণয়িনী চন্দ্রার দিক তাকিয়ে হাসে। চন্দ্রা হেসে বলে,
“বাবা তুমি তো খাচ্ছো কম মাখাচ্ছো বেশি৷ আসো আমি খাইয়ে দেই।”
“ঠিকাচে আন্তি।”
চন্দ্রা প্রণয়িনীর মুখ মুছে দিয়ে খাইয়ে দেয়। প্রণয় দুজনের দিক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কি সুন্দর। কি সুন্দর মুহুর্ত। চন্দ্রা প্রণয়িনীকে এতোটা ভালোবাসে কেন? একদম মায়ের মতোই যত্ন করে। কিন্তু কখনো তো প্রণয়িনীর মা হয়ে যত্ন করতে পারবে না। কতো ভালো হতো যদি সে প্রনয়িনীর মায়ের জায়গাটা নিয়ে তাকে এভাবে ভালোবাসতো!

চন্দ্রা প্রণয় আর প্রণয়িনী রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলো। গাড়িতে উঠার সময় চন্দ্রার হাতের উপর থেকে ওড়নাটা একটু সরে গেল। জামার হাতাটা ঢিলা হওয়াতে সেটাও সরে গেল। ঠিক তখনই প্রণয় দেখতে পেল চন্দ্রার হাতে ব্যান্ডেজ। চন্দ্রা দ্রুত হাত ঢেকে ফেলল। প্রণয় রাগী দৃষ্টিতে চন্দ্রার দিকে তাকালো। চন্দ্রা কিছু বলল না। প্রণয়ও কিছু বলল না। প্রণয়িনী আছে দেখে। গাড়িতে সারা রাস্তা নীরবতার মধ্যে দিয়ে গেল। যদিও প্রণয়িনী অনেক কথা বলছে চন্দ্রার সাথে। চন্দ্রাও বলছে প্রণয়িনীর সাথে। তবে প্রণয় চুপচাপ ড্রাইভ করছে। প্রণয়িনী তার বাবাকে একটা কথা দুইবার জিজ্ঞেস করেছে। প্রণয় উত্তর দেয়নি। প্রণয়িনী তৃতীয় বার জিজ্ঞেস করাতে প্রণয় একটু ধমকেই বলল,
“প্রণয়িনী থামো। এতো কথা বলতে হয় না।”
বাবার রাগ দেখে প্রণয়িনী চুপ হয়ে গেল। তার পাঁচ মিনিট পর স্ব জোরে কান্না শুরু করলো। চন্দ্রা প্রণয়িনীকে নিজের কাছে নিয়ে কোলে বসালো। কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“মা কান্না করে না।”
চন্দ্রা বহু কষ্টে প্রণয়িনীর কান্না থামালো। চন্দ্রার কোলে মুখ লুকিয়ে বসে আছে। বাবার সাথে অভিমান করেছে সে। চন্দ্রা এবার একটু রেগে বলল,
“একজনের রাগ আরেক জনের উপর না ঝাড়লে কি হতো না? ছোট্ট মেয়েটার উপর রাগ ঝাড়ার কি দরকার ছিল?”
প্রণয় বলল,
“বাচ্চাকে আহ্লাদ করার সাথে শাসন করাটাও জরুরি।”
“এটা শাসনের কোনো উপযুক্ত সময় ও কারণ না। মেয়েটা ভয় পেয়েছে। ওর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ আপনি৷ আপনি ওকে কারণ ছাড়া এভাবে বকলে অপ্রিয় হয়ে উঠবেন।”
আর কিছু বলল না প্রণয়। চন্দ্রার বাসায় পৌঁছানোর পর চন্দ্রা যখন গাড়ি থেকে নামবে তখন প্রণয়িনী ছাড়বে না চন্দ্রাকে। তাকে চক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। প্রণয় চেষ্টা করেছে মেয়েকে কোলে নেওয়ার৷ কিন্তু তার মেয়ে অভিমান করে বাবার কোলে যাবেই না।
চন্দ্রা অনেক বুঝিয়ে প্রণয়িনীকে মানিয়েছে। প্রণয়িনীকে গাড়িতে রেখে গাড়ির বাহিরে এসে চন্দ্রার হাতের কাটা স্থানে ধরলো প্রণয়। ব্যথায় চন্দ্রা “আহ্!” শব্দ করে উঠলো।
প্রণয় বলল,
“এটা কখন করলে?৷ সমস্যা কি তোমার?”
চন্দ্রা কিছু বলল না। প্রণয় বলল,
“চন্দ্রা এভাবে নিজেকে আ`ঘাত করা বন্ধ করো।”
“করব৷ মনের আ`ঘাতটা কম করতে পারবেন? তাহলে পারব। মনে থাকা কষ্টগুলো চাপা দিতে এগুলো করি৷ নাহলে আমার দম আটকে আসে। নিঃশ্বাস নিতে পারি না আমি।”
এই বলে চলে গেল চন্দ্রা। প্রণয় কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে চন্দ্রার যাওয়ার পথে। তারপর গাড়িতে উঠে চলে যায়৷

চলবে….

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ২০

সন্ধ্যা হয়েছে। পরশি জ্যামে বসে ছিল। বাসায় পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। পরশি লিফটে উঠবে ঠিক এমন সময় তূর্ণও আসলো লিফটের কাছে। পরশির সাথে দেখা হতেই সৌজন্যতার হাসি দিল তূর্ণ। তূর্ণ বলল,
“ভালো হয়েছে আপনার সাথে দেখা হলো। আপনার সাথে দেখা করতাম এখনই। ভাবছিলাম বাসায় আছেন নাকি। শিওর হওয়ার ও ওয়ে ছিল না। কন্টাক্ট নাম্বার তো নেই।”
পরশি জিজ্ঞেস করলো,
“জরুরি কিছু?”
“তেমন জরুরি না। আবার জরুরিও বলা যায়।”
“কিছু বলবেন?”
“আসলে কিছু বলব না ঠিক। কিছু দেওয়ার ছিল।”
পরশি অবাক হয়ে বলল
“কি?”
লিফট চলে আসলো। তূর্ণ বলল,
“উঠতে উঠতে কথা বলি। ”
পরশি সম্মতি জানিয়ে লিফটে প্রবেশ করল। তূর্ণও প্রবেশ করল।
তূর্ণ বলল,
“আসলে গতকাল আপনার একটা সাদা ওড়না নষ্ট করে ফেলেছিলাম। হাত কে`টে যাওয়াতে আপনি যেটা দিয়েছিলেন ওটা র`ক্ত মেখে একদম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ব্যবহার করার মতো অবস্থায় নেই। আর আপনার জিনিস নষ্ট করে খুব অস্বস্তিবোধও করছিলাম।”
কথা বলতে বলতে লিফট চলে এলো। পরশি আর তূর্ণ উভয়েই নামলো। তূর্ণ হাতের শপিং ব্যাগটা পরশির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তাই এটা আপনার জন্য। আশা করছি আপনার খারাপ লাগবে না। আমি খুবই দুঃখিত ওড়নাটা নষ্ট করার জন্য।”
তূর্ণর কথা শুনে ভীষণ অবাক পরশি। পরশি বলল,
“এসব কি বলেন তো? একটা নরমাল সুতির পুরোনো ওড়না নষ্ট হয়েছে। ওটার কথা তো আমার মনেও ছিল না। আপনি এই নিয়ে এতো অস্বস্তিবোধ কেন করছেন? আর এটা কেন এনেছেন? এখন তো আমার লজ্জা লাগছে।”
“না না। আপনাকে মোটেও লজ্জা দিতে এমনটা করিনি৷ মনে হলো কারো জিনিস নষ্ট করে ফেলেছি তাই।”
“আবার একই কথা বলছেন! আমি কিন্তু রাগ হবো ডাঃ তূর্ণ।”
“প্লিজ এটা রাখুন।”
পরশি একটু বিব্রত হয়ে বলল,
“এটা কি কথা!”
তূর্ণ ব্যাগটা এগিয়ে দিল পরশির দিকে। এতো করে বলার পর না নিলেও ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায়। পরশি আর না করতে পারলো না। সে ব্যাগটা নিয়ে ধন্যবাদ জানালো। তূর্ণ বলল,
“আসলে আমার শপিং নিয়ে ধারণা নেই। আমার এক বান্ধবীর মণিপুরী শাড়ী আর ওড়নার বিজনেস আছে। ওড়নার কথা মাথায় আসতেই ওর শো-রুমে গিয়ে নিয়ে এসেছি। জানি না আপনার মন মতো হবে নাকি। কারণ আগের ওড়নাটা তো এমন ছিল না।”
পরশি অবাক হয়ে বলল,
“মণিপুরী ওড়না!”
“জ্বি।”
“থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমার মণিপুরী শাড়ী ওড়না এগুলোর প্রতি দুর্বলতা রয়েছে।”
“যাক তাহলে ভুল করিনি।”
“কিন্তু আমার ঐ সুতি ওড়নার তুলনায় এটা এক্সপেন্সিভ।”
“তো কি হয়েছে? আমি নষ্ট করে ফেলেছি তো।”
“আবার সেই কথা বলছেন! নষ্ট করেন নি আপনি।”
পরশি খেয়াল করল তূর্ণ অনেক ঘেমে যাচ্ছে। এভাবে দরজার বাহিরে গরমে ঘামাটা স্বাভাবিক। পরশি বলল,
“দেখেছেন আমিও কি! আপনাকে এখানে দাঁড় করিয়েই কথা বলছি। আমার বাসায় চলুন। বাসায় বসে কথা বলি।”
“না থাক, অসুবিধে নেই।”
“না না আপনি আমার পছন্দের জিনিস গিফট করেছন। আমার অন্তত আপনাকে এক কাপ চা খাওয়ানো উচিত। ধন্যবাদ জানানোর জন্য হলেও। কি চায়ের মাধ্যমে ধন্যবাদ দিলে হবে তো?”
তূর্ণ হেসে বলল,
“ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো দরকারই নেই৷ তবে চা কে কখনো না করতে নেই৷ আমি অন্তত চা আর কফি কে না করতে পারি না।”
“তাহলে চলুন। এক কাপ চা খাই আর কথা বলি।”
“ঠিকাছে।”
তূর্ণ আর পরশি পরশির বাসা ঢুকলো। তূর্ণ এই প্রথম পরশির বাসায় আসলো। ড্রয়িং রুমে বসতে দিয়ে পরশি বলল,
“পাঁচ মিনিট সময় দিন৷ চায়ের পানিটা বসিয়ে আসছি।”
“আচ্ছা। আমি শুধু শুধু কষ্ট দিলাম আপনাকে। আমার বাসায় গেলেও পারতাম আমরা। আপনার চা করা লাগতো না।”
“কোনো অসুবিধা নেই। আজকের চা আমার পক্ষ থেকে৷ আপনার বাসায় আবার অন্য একদিন চা খাওয়া যাবে।”
“আচ্ছা।”
পরশি রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের পানি বসালো। এরপর তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে একটু মুখে পানির ঝাপটা দিল। ধুলোবালি আর ঘামে মুখের বারোটা বেজে আছে৷ বিরক্ত লাগছে। মুখ মুছে গিয়ে চা বানানো শুরু করলো।
অন্যদিকে তূর্ণ ড্রয়িং রুমে বসে বসে দেখছে আর অবাক হচ্ছে। একা একটা মানুষ বাসায় থাকে৷ অথচ কি সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছ বাসাটা। এসেছে মাত্র দুইমাস৷ অথচ এতো পরিপাটি। তূর্ণ মনে মনে ভাবলো, ভদ্র মহিলার গুণ আছে। অফিসে এতো ঝামেলা সামলেও অল্প সময়ে বাসার সবকিছু কি সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়েছে।
তূর্ণর চোখে পড়লো সামনে রাখা বুকশেলফটার মাঝে রাখা ফটোফ্রেমটার দিকে। তূর্ণ উঠে গিয়ে ছবিটা দেখছিল। এমন সময় পরশি চা নিয়ে আসলো। পরশি তূর্ণকে ডেকে বলল,
“ডাক্তার সাহেব!”
তূর্ণ ফিরে তাকালো। পরশির এই ডাকটা ভালো লাগলো। তূর্ণ সামান্য হেসে বলল,
“বলুন অফিসার।”
“চা নিয়ে এসেছি।”
“ওহ্ ধন্যবাদ। আমি আসলে এখানে এই ছবিটা দেখছিলাম। আপনার বাবা মায়ের সাথে আপনি তাই না?”
“হ্যাঁ।”
“তবে ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরোনো।”
“হ্যাঁ বেশ পুরোনো। ভার্সিটিতে পড়তাম তখন।”
“হুম, চেহারায় ঐ রকম একটা ছাপ আছে।”
“সত্যি?”
“হুম। তবে তখনও সুন্দর ছিলেন৷ এখনও সুন্দর আছেন।”
“ধন্যবাদ। এসে বসুন। চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
“ওহ্ হ্যাঁ।”
তূর্ণ গিয়ে বসলো। তূর্ণর পাশের দিকের কিছুটা দূরত্বের সোফায় পরশি বসেছে। দুজনে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গল্প শুরু করলো। পরশি হেসে হেসে কথা বলছে। গরমে রান্না ঘর থেকে এসেছে। হালকা ঘেমে আছে। তার উপর আবার শাড়ী পরা। চুলের খোপাটা থেকে কিছু চুল বের হয়ে গলায় লেপ্টে আছে। পরশিকে সুন্দর লাগছে ভীষণ। তূর্ণ বার বার চেষ্টা করছে পরশির দিক না তাকানোর। কিন্তু একটু পর পর তাকাচ্ছে।
পরশি বলল,
“একটা কথা জানার ছিল ডাক্তার সাহেব।”
“হুম বলুন।”
“আপনি বললেন আপনার কোনো ফ্রেন্ডের মণিপুরী শাড়ীর বিজনেস আছে। আমাকে একটু ঠিকানা দিতে পারবেন? আসলে আমার এক কলিগের জন্মদিন৷ বেশ ক্লোজ। ওকে শাড়ী দিব ভাবছিলাম।”
“আচ্ছা আমি আপনাকে পেইজ লিংকটা দিয়ে দিব। ওর মূলত অনলাইন বিজনেসই। কয়েক মাস হয়েছে শো-রুম করেছে।”
“যেহেতু শো-রুম আছে গিয়েই নিব৷”
“আচ্ছা তাহলে আপনি চন্দ্রাকে নিয়ে যেতে পারেন৷ ও চিনে। আর আপনি শুধু কলিগের জন্য কেন নিজের জন্য যতো ইচ্ছে নিয়েন৷ বলে দিয়েন আমি পাঠিয়েছি৷ ডিসকাউন্ট দিয়ে দিবে।”
“হা হা হা। তাহলে তো বেশ। আমার আবার শাড়ী কিনতে ভালো লাগে।”
“হুম শাড়ীতে আপনাকে সুন্দর লাগে।”
কথাটা বলে তূর্ণ একটু থমকে গেল। মনে মনে নিজেকে বলতে লাগলো,
“এতো কথা বলিস কেন? এমন কোনো মেয়েকে বলতে হয়? যদি কিছু মনে করে? যদি খারাপ ভাবে?”
পরশি তূর্ণর কথায় কিছু মনে না করে বলল,
“ধন্যবাদ।”
তূর্ণ বলল,
“চা টা অনেক ভালো হয়েছে। আপনার হাতের চা পারফেক্ট। আমি আবার একটু চায়ের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে। বাট আপনার বানানো চা অপূর্ব। আপনার রান্নাও ভালো ছিল অনেক।”
“অসংখ্য ধন্যবাদ। সময় পেলে অবশ্যই বলবেন চা খাওয়াবো।”
“বাহ্, এটা তো সৌভাগ্যের বিষয়। এতোদিনে ভালো একটা প্রতিবেশী জুটলো।”
“হা হা হা। চন্দ্রাকেও আসতে বলবেন। আমি তো একা থাকি৷ গল্প করার কেউ হলে ভালো লাগে।”
“চন্দ্রা ভার্সিটি ছাড়া বেশিরভাগ বাসায়ই থাকে। মানে নিজের রুমেই বসে থাকে।”
“ওহ্। ও একটু ইন্ট্রোভার্ট তাই না?”
“কাইন্ড অফ। কিন্তু বাচ্চাদের পেলে পাগল হয়ে যায়। আমার বন্ধু প্রণয়ের মেয়ে প্রত্যেক শুক্রবার আসে ওর সাথে খেলা করতে।”
“বাহ্। ভালো তো।”
“হুম।”
“আংকেল তে এখানে থাকেন না তাই না?”
“কে আংকেল?”
“আপনার বাবা।”
“ওহ্। না উনি জব করেন ঢাকার বাহিরে। কম আসেন।”
“আপনার মা ও ওখানেই থাকে? আসেন না?”
তূর্ণ প্রচুর বিরক্ত লাগছে এই কথাগুলো। তূর্ণ একটু অস্বস্তিবোধ করছে। তবুও পরশি প্রশ্নের উত্তর দিতে বলল,
“দে আর সেপারেইটেড।”
পরশি এবার বুঝতে পারলো ও একটু বেশিই প্রশ্ন করে ফেলছে। ও বলল,
“দুঃখিত। আমার এগুলো জিজ্ঞেস করা ঠিক হয় নি।”
তূর্ণ নিজেকে সামলে রেখে বলল,
“ইটস ওকে।”
কতক্ষণ নীরবে চা পান করল দুজনে। তূর্ণ কাপটা খালি হয়ে যেতেই পরশি টি-পট টা এগিয়ে বলল,
“আরেকটু চা দেই।”
“না।”
“আচ্ছা।”
পরশি বুঝতে পারলো তূর্ণর ব্যাপারটা ভালো লাগে নি। তূর্ণ এতোক্ষণ হাসি খুশি ছিল। হঠাৎ করে গম্ভীর হয়ে গেল। পরশির এখন অপরাধবোধ হচ্ছে। পরশি তূর্ণকে বলল,
“আমি দুঃখিত তূর্ণ। আমি মনে হয় আপনার মুড নষ্ট করে দিয়েছি। আমার এভাবে বলা উচিত হয় নি। আপনার ফ্যামিলি ম্যাটার৷ আই এ্যাম সো সরি।”
“এই না না। আপনি সরি বলছেন কেন? সরি বলার মতো কিছু তো হয় নি। আপনি তো আর জানতেন না। আমি কিছু মনে করিনি।”
“তারপরেও।”
“আরে কিছু হয় নি। আপনি এসব চিন্তা বাদ দিন।”
“সত্যি?”
“জ্বি।”
“ঠিকাছে তাহলে।”
“আচ্ছা আজ তাহলে আসি।” এই বলে তূর্ণ উঠলো। পরশিও উঠে দাঁড়ালো। তূর্ণ বলল,
“থ্যাংকইউ সো মাচ ফর দ্যা টি।”
“মোস্ট ওয়েলকাম। এ্যান্ড থ্যাংকস ফর দ্যা গিফট।”
“ওয়েলকাম।”
“ওহ্ যা জিজ্ঞেস করব।”
“হুম বলুন।”
“আপনার হাত ব্যাথা কমেছে?”
“হ্যাঁ।”
“যাক আলহামদুলিল্লাহ।”
তূর্ণ চলে যাওয়া ধরছিল৷ পরশি আবার পিছন ডাকলো। তূর্ণ পিছে ফিরে বলল,
“কিছু বলবেন?”
পরশি ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,
“আপনার ফোন নাম্বারটা দিলে ভালো হতো। মানে পাশাপাশি থাকি হঠাৎ প্রয়োজনে লাগতে পারে। আমার নাম্বারটাও আপনি সেভ করে রাখুন৷ দরকার হতে পারে।”
“আচ্ছা।”
একে অপরের নাম্বার সেভ করে নিল।

তূর্ণ বাসায় এসে রুমের দরজা লাগিয়ে দিল। সময়টা সুন্দর কাটছিল। কি দরকার ছিল পরশি এসব কথা বলার? তূর্ণ এরপর নিজেকেই মনে মনে রাগ করা শুরু করলো। পরশি কি জানে নাকি তূর্ণর এসব ব্যাপার। জানলে কি আর এভাবে বলতো। তারপর মনে হচ্ছিল ব্যাপারটা নিয়ে পরে পরশি বিভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছিল। তূর্ণর কিছু ভালো লাগছে না। লাইট অফ করে মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকলো কিছুক্ষণ।
হঠাৎ ফোন বাজলো। ফোনটা না ধরার চেষ্টাই করবে এখন তূর্ণ। কিন্তু তা আর হলো না৷ পরপর তিন চারবার কল দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তূর্ণর মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। এখন কার কি এমন প্রয়োজন যে এতোবার কল করছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ইভার কল। তূর্ণর বিরক্তি বেড়ে গেল। তূর্ণ বিরক্ত হলেও ফোনটা রিসিভ করলো।
“হ্যালো ইভা বলো।”
“আমি আর কি বলব? তোমার কি খবর তাই বলো।”
“ইম্পর্ট্যান্ট কিছু বলবে?”
“কেন খুব ব্যস্ত? হিসাব অনুযায়ী এখন ব্যস্ত হওয়ার কথা না।”
“ব্যস্ত না তার মানে এই না একটা কথাকে বসে বসে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলব৷”
“এমনি ফোন করেছিলাম। বাসায় আছো?”
“হ্যাঁ। কেন?”
“আমি তোমার বাসার এদিকে একটু এসেছিলাম। ভাবছি দাদু দাদীর সাথে দেখা করে যাই একটু। আর তোমার সাথেও।”
তূর্ণ বলল,
“আসলে ইভা আমার প্রচুর মাথা ব্যথা। আমি রেস্ট নিচ্ছিলাম। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমাবো। তুমি অন্য একদিন আসো সময় করে?”
“আচ্ছা বুঝেছি৷ আমি সময় করলেও তুমি কখনো সময় করতে পারবে না। বাদ দাও৷ আগে অন্তত বন্ধু হিসেবে মেজাজ খারাপের কারণগুলো বলতে। এখন তাও বলতে সমস্যা৷ রাখছি আমি। কাল হসপিটালে দেখা হবে। বায়।”
“বায়।”
তূর্ণ ফোনটা কেটে দিল। এই যাত্রায় যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এমনই বাসায় তোহরাব সাহেব আছেন৷ তার উপর আবার ইভা আসলে ঝামেলা। তূর্ণ আর ইভার মধ্যকার বন্ধুত্ব দেখে তোহরাব সাহেব প্রস্তাব রেখেছিলেন তূর্ণর সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তূর্ণ তা মেনে নেয় নি। আর তোহরাব সাহেবের প্রস্তাবের পরেই ইভার সাহস বেড়েছিল৷ এরপর থেকেই মেয়েটা এমন গায়ে পড়া স্বভাবের হয়ে উঠেছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here