ভালোবাসা কারে কয়,২৫,২৬

0
127

ভালোবাসা কারে কয়,২৫,২৬
শবনম মারিয়া
পর্ব ২৫

আজ চন্দ্রার জন্মদিন। এই দিনটা সাধারণত চন্দ্রা কখনো পালন করে না। বাসার কেউও জোর করে না৷ কারণ ভালো করেই জানে ব্যাপারটা চন্দ্রার পছন্দ না একদমই৷ তাই চন্দ্রাকে চন্দ্রার মতো থাকতে দেওয়া হয়৷ কেউ বিরক্ত করে না। এইদিনে বেশিরভাগ সময় রুমের মধ্যেই নিজেকে আটকে রাখে। মা মা`রা যাওয়ার পর থেকে চন্দ্রা এমনই করে। চন্দ্রা এই দিনে নিজেকে আ`ঘাত করে। নিজের গায়ে ছু`রি দিয়ে আ`চড় কাটে। নিজের উপর রাগ উঠে। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে কান্না করতে থাকে। তূর্ণ আটকানোর চেষ্টা করেও পারে না। তাই করে না। জানে আটকিয়ে লাভ হবে না৷ শুনবে না চন্দ্রা। ও ওর মতো পাগলামি করে যাবে৷ প্রণয়ের খারাপ লাগলেও কিছু করতে পারে না। চন্দ্রা যেখানে ওর ভাইয়ের কথা শুনে না সেখানে প্রণয়ের কথা শুনবে কেন? প্রণয় ওর কি হয় যে ওর কথা শুনবে? তাই প্রণয়ও বৃথা চেষ্টা করে না।

রাত বারোটা বেজে দশ মিনিট। চন্দ্রা পড়ছিল টেবিলে বসে। পরীক্ষা চলছে। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত তাই খেয়াল নেই। না হলে এতোক্ষণে যা করার করা শুরু করে দিতো। হঠাৎ করে চন্দ্রা মোবাইলটা নিয়ে আজকের তারিখ দেখল। আজকের তারিখ দেখতেই চন্দ্রার মনে পড়ে গেল। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কান্না পাচ্ছে। বুঁকে চাপা কষ্টটা মেনে নিতে পারছে না। আজ শুধু চন্দ্রার জন্মদিন নয়। আজ চন্দ্রার জীবনের সব থেকে ভয়াবহ, জঘন্যতম দিনও। এই দিনেই চন্দ্রার মা ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। চিরদিনের মতো একা হয়ে গিয়েছিল চন্দ্রা। মায়ের উপর রাগ হয় ভীষণ।ওর মা একটাবারের জন্যও চন্দ্রার কথা ভাবতে পারতো না? ওকে তো অনেক ভালোবাসতো। নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসতো। তাহলে কি ওর মা অনেক কষ্টে ছিল? একজন মানুষ ঠিক কতোটা কষ্টে থাকলে নিজের সন্তানের কথাও ভুলে যায়?
এগুলো ভাবতে ভাবতে চন্দ্রা অঝোরে কান্না শুরু করল। এই কষ্ট যেন কান্নায়ও কমবে না৷ কমার কথাও না৷ চন্দ্রা কান্না করতে করতে আলমারিটা খুলে সেখান থেকে মায়ের শাড়ীটা বের করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল,
“মা, আমার মা৷ তুমি কতোটা কষ্টে ছিলে মা? আমার কথাই ভুলে গিয়েছিলে কষ্টে। আমি তোমার চন্দ্রা মা! আমাকে তো ভীষণ ভালেবাসতে। তারপরও কেন আমার কথা ভাবলে না? তোমার কষ্টের কথা আমাকে বলতে মা। আমি তোমার কষ্ট কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। তুমি কেন আমাকে ছেড়ে গেলে? কেনো? কেনো?”
এই বলে চিৎকার করে কান্না করতে লাগল।
কতক্ষণ কান্না করে তারপর শাড়ীটার দিক তাকিয়ে বলল,
“মা তোমার চন্দ্রা অনেক আগেই মরে যেত। তোমার কাছে চলে যেত। কিন্তু করেনি। কারণ তোমাকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের আমি খুন করব৷ বহুগুণ বেশি কষ্ট দিব। তারপর আমি তোমার কাছে যাব। তোমাকে ছাড়া আমি একা। একদম একা। কিন্তু এখনই তোমার কাছে যেতে পারছি না মা। তোমাকে যে আমার থেকে দূর করেছে তাকে আমি না মেরে শান্তি পাব না।”

হঠাৎ চন্দ্রার ফোন বেজে উঠলো। প্রণয়ের নাম্বারটা স্ক্রিনে। চন্দ্রা কেমন যেন ফোনের দিক তাকিয়ে থাকলো কতক্ষণ। অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে। ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেল। আবার কল আসলো। চন্দ্রা ফোনটা কেন যেন রিসিভ করল। সে নিজেও জানে না। অন্য কখনো তো এই দিনে কারো সাথে কথা বলে না। তবে আজ কেন মনে হচ্ছে এই ফোনটা রিসিভ করতে হবে তাকে। কেন?
চন্দ্রা ফোন রিসিভ করে চুপচাপ বসে আছে। প্রণয় উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,
“হ্যালো, চন্দ্রা? চন্দ্রা শুনতে পারছো?”
চন্দ্রা মৃদুস্বরে বলল,
“হুম।”
“চন্দ্রা সরি ফোন করার জন্য। আমি জানি তুমি বিরক্ত হয়েছো। দেখো আমি ফোন করতে চাইনি। কিন্তু পারছিলাম না সরি। অনেক বেশি চিন্তা হচ্ছিল তোমায় নিয়ে।”
চন্দ্রা বলল,
“কেন?”
এই কেন প্রশ্নের উত্তর তো প্রণয়ের কাছে নেই। সে স্তব্ধ হয়ে যায়। কি উত্তর দিবে চন্দ্রাকে? তীব্র ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বলতে তো পারবে না, “কারণ তোমার কিছু হলে আমি বাঁচতে পারব না। তুমি কষ্ট পেলে আমি কষ্টে শেষ হয়ে যাই চন্দ্রমল্লিকা।”
প্রণয় আর চন্দ্রা দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর প্রণয় বলল,
“জানা আছে তুমি কি করবে। প্লিজ চন্দ্রা করো না। জানি তোমার মাথা ঠিক থাকে না। এজন্যই ফোনটা করেছি। ভাগ্যিস রিসিভ করেছিলে। দেখো কাল তোমার পরীক্ষা। তুমি এখন এরকম পাগলামী করলে কাল পরীক্ষা দিতে যেতে পারবে না। তখন? ফাইনাল চলছে। প্লিজ এমন করো না৷ পড়া শেষ করেছো না? লক্ষী মেয়ের মতো এবার শুয়ে পড়ো।”
চন্দ্রা এবার কান্না করে দিল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আপনি কেন এতো চিন্তা করেন আমায় নিয়ে? প্লিজ এসব করবেন না। আমার বিরক্ত লাগে। আমাকে নিয়ে ভাবলে চিন্তা করলে আমার ভালো লাগে না৷ যেখানে আমার নিজের মা-ই আমার কথা ভাবেনি সেখানে আপনি কে? আমার মা, যে আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো, সে-ই আমার কথা একটা বারের জন্যও ভাবে নি। একটা বারের জন্যও ভাবেনি তার কিছু হলে তার চন্দ্রার কি হবে! কি ভাবে বাঁচবে। প্লিজ আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। আপনি নিজের মতো থাকুন।”
“চন্দ্রা যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। প্লিজ মেনে নাও এগুলো৷ আর কতদিন? আর কতদিন এভাবে চলবে? আর তোমাকে নিয়ে ভাববো না মানে কি? একশো বার ভাববো।”
চন্দ্রা কান্না করতে থাকে। প্রণয় শক্ত হয়ে বলল,
“চন্দ্রা পাগলামী করো না। নিজের জন্য কিছু করো। কাল পরীক্ষা। পরীক্ষাটা মিস যাবে পাগলামীতে। কি দরকার? জীবনে যা হয়ে গিয়েছে তা হয়েছে। এবার একটু নতুন ভাবে নিজেকে পাল্টে বাঁচতে শিখো। যাও এখনই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।”
চন্দ্রা আবার কান্না করে বলে,
“কিভাবে? কিভাবে ঘুমাবো আমি? আজকে তো মা আমার স্বপ্নে আসবে। ঐ ভয়ানক দিনটা আমার স্বপ্নে আসবে। মাকে কোলে নিয়ে বসে আছি ছোট্ট আমি। মা কথা বলছে না। বলবেও না।”
“এসব ভেবো না। আচ্ছা তুমি শুধু শুয়ে পড়ো। দরকার হয় আজ সারা রাত আমি লাইনে থাকব। ফোন কাটবো না। তুমি ঘুমাও। কথা বলতে থাকো আমার সাথে। একটু পর ঘুম আসবে। যাও।”
চন্দ্রা প্রণয়ের কথা ফেলতে পারে না। সত্যি বলতে ও নিজেও এগুলো ভুলে থাকতে চায়। কিন্তু পারে না ভুলতে। চন্দ্রা শুয়ে পড়ে।
প্রণয় কথা চালিয়ে যায়। প্রণয় বলল,
“পড়া শেষ করেছো?”
“হ্যাঁ।”
“আচ্ছা। কালকের পরীক্ষা ভালো হবে টেনশন করো না।”
“হুম।”
“আসো তোমাকে প্রণয়িনীর গল্প শুনাই। ম্যাডাম আজ কি দুষ্টুমি করেছে।”
“কি?”
“টিভিতে কার্টুন দেখছিল। বাবা এসে একটু রিমোট চেয়েছিল অল্প সময়ের জন্য। এই তার মেজাজ গিয়েছে খারাপ হয়ে। বাবার সাথে জেদ শুরু করলো। বাবা বলেছে খবরের শিরোনামটা দেখেই দিয়ে দিবে। কে শুনে কার কথা। গিয়ে বারান্দা দিয়ে রিমোটটা ফেলে দিয়েছে। এতো রাগ তার।”
চন্দ্রা এবার হেসে দিল। বলল,
“সে কি? মেয়ের রাগ দেখি বাবাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সত্যি করে বলুন তো, আপনিও ওর বয়স থেকেই এমন রাগী ছিলেন?”
“আমি রাগী? আমার রাগের কি দেখেছো?”
“কেন আপনি রাগ করেন না? প্রণয়িনীকেও জিজ্ঞেস করে দেখেন। ও ও বলবে আপনি কতোটা রাগী।”
“তুমি না! আমার মেয়ের কাছে আমার বদনাম করো।”
“বেশি করি। আমার খুব ভাল্লাগে।”
এই বলে চন্দ্রা হাসতে থাকে। হাসে প্রণয়ও। মনে একটা আলাদা শান্তি। প্রণয় কখনোই ভাবেনি এই আজকের দিনেও চন্দ্রা হাসবে! এভাবে ওর সাথে গল্প করবে। একসময় কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যায় চন্দ্রা। বুঝতে পারে প্রণয়। ফোনটা কেটে দেয়। তারপর তাকায় প্রণয়িনীর দিকে। ঘুমিয়ে আছে। কপালের কাছে চুল এসে পড়েছে। প্রণয় মেয়ে কপালের চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে মেয়ের কপালে চুমু খেল। তারপর তাকিয়ে হেসে বলল,
“কি? দেখেছিস, বাবা কিন্তু আজ ব্যর্থ হয় নি রে। তোর চন্দ্রা আন্টি আজ নিজেকে আঘত করেনি। আজ হেসেছে তোর চন্দ্রা আন্টি। কথা বলেছ। ভাবা যায়? খুশি হয়েছিস তুই? আচ্ছা, যা কাল চন্দ্রা আন্টির কাছে নিয়ে যাব। দুজনে মিলে সারপ্রাইজ দিব। ভয় করছে রিঅ্যাক্ট করবে। কিন্তু এটুকু ভরসা আছে তোর সামনে, তোর সাথে ওরকম করবে না।”
প্রণয় কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে প্রণয়িনীর দিক। তারপর শুয়ে পড়ে। ফোনে চন্দ্রার ছবিটা দেখতে থাকে। চন্দ্রার শাড়ী পরা একটা ছবি। প্রণয় মনে মনে বলে, “চন্দ্রমল্লিকা তোমার সৌন্দর্য বারবার আমাকে যেন মেরে ফেলে। তোমার সৌন্দর্য আমায় পাগল করে। তোমার চোখ আর চুল দেখলে শেষহয়ে যাই। এগুলোই আমার দুর্বলতা।”
ছবিটা দেখতে দেখতে এক সময় বুঁকের উপর ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে প্রণয়৷

.
ভোরে উঠে চন্দ্রা নামাজ পড়ে আবার রুমে বসে রইল। ভালো লাগছে না। আজ ছাদেও যাবে না। খুব কান্না পেল। বসে বসে কান্না করল। অনেক কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট কমাতে নিজেকে আ`ঘাত করার জন্য ড্রয়ার থেকে ব্লে`ডটা বের করতে গেল। তখনই দেখে ফোন বাজছে। আর প্রণয় ফোন করছে। চন্দ্রা ব্লে`ডটা আর বের করল না৷ ফোনট রিসিভ করল। চন্দ্রার কন্ঠ শুনেই প্রণয় বলল,
“চন্দ্রমল্লিকা কাদঁলে ভালো লাগে না।”
“কোথায়? কান্না করিনি তো।”
“কন্ঠ শুনে বোঝা যায়। এসব করো না৷ কাল রাতে আঁটকিয়েছি। পরীক্ষাটা শেষ করো। আর মানা করব না।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ।”
“আচ্ছা।”
“বেস্ট অফ লাক ফর দ্য এক্সাম।”
“থ্যাংকস।”
.
একদম দুপুর। চন্দ্রা পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হয়েছে। রিকশা খুঁজছে। এমন সময় দেখল প্রণয়িনী দৌড়ে আসলো। চন্দ্রা প্রণয়িনীকে দেখে ভারী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“প্রণয়িনী! তুমি এখানে কি করছো মা?”
“হ্যাপি বাড্ডে আন্তি।”
চন্দ্রা অবাক। সামনে তাকিয়ে দেখল প্রণয় এগিয়ে আসছে। চন্দ্রা অবাক। চন্দ্রা প্রণয়িনীকে বলল,
“থ্যাংকিউ সো মাচ বাবা। কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে?”
“বাবা বলেচে।”
“ওহ্।”
প্রণয় এগিয়ে এসে বলল,
“শুভ জন্মদিন চন্দ্রমল্লিকা।”
চন্দ্রা রীতিমতো অবাক হচ্ছে। প্রণয় এগুলো কি করছে? প্রণয় কি জানেনা এগুলো চন্দ্রার একদম পছন্দ না? লোকটা আসলে করতে চায় কি? চন্দ্রা বলল,
“আপনারা এখানে?”
প্রণয় বলল,
“প্রণয়িনী তার আন্টিকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে। তাই তো আজ আমাকে অফিসেও যেতে দেয় নি।”
“কিন্তু প্রণয়িনীকে আপনি কেন বলেছেন?”
“সব কথা রাস্তায় দাঁড়িয়েই বলবে? চলো গাড়িতে উঠো। তোমার ভার্সিটি এটা। তোমার ক্লাসমেটরা দেখলে কি ভাববে বলো তো? ”
এই বলে প্রণয় প্রণয়িনীকে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। পিছনে চন্দ্রাও। ওরা গাড়ির কাছে গেলো।৷ তারপর গাড়িতে উঠলো।
চন্দ্রা কিছু বলবে তার আগেই প্রণয়িনী বায়না শুরু করল,
“চন্দা আন্তির কেক কাত্তে হবে। বাবা প্লিজ একটা কেক নাও।”
চন্দ্রা বলল,
“মা আমি তো বড় হয়ে গিয়েছি৷ বড় মানুষ কেক কাটে না।”
“না কাতে। সেদিন বাবার মোবাইলে দেখেছি আনকেলের বাড্ডেতে আনকেল কেক কেটেছে।”
প্রণয় বলল,
“অবশ্যই কেক কাটবে তোমার আন্টি। তার আগে একটু তোমার তূর্ণ আংকেলকে জানিয়ে দেই আন্টি আমাদের সাথে না হলে তো টেনশন করবে।”
“আচ্চা বাবা।”
“আমি বাসায় যাবো।” চন্দ্রা বলে উঠলো।
প্রণয়িনী চিৎকার করে উঠলো “না।”
“দেখো মা আন্টি কেক কাটি না।”
“আন্তি তুমি যদি কেক না কাতো। আর বাসায় চলে যাও আমি তোমার সাথে আর কথা বলব না। আর যাব না তোমার কাছে।”
এই বলে রাগ করে থাকে প্রণয়িনী। এরপর কান্না কান্না ভাবে নিয়ে বলে,
“প্লিজ আন্তি। আই লাভ ইউ।”
চন্দ্রা আর না করতে পারল না।

চলবে….

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ২৬

প্রণয় তূর্ণকে ফোন দিল। তূর্ণ ফোন রিসিভ করল। প্রণয় বলল,
“তূর্ণ চন্দ্রা আমাদের সাথে আছে। আসতে দেরি হবে। চিন্তা করিস না।”
চন্দ্রা পাশে থেকে বলল,
“কিহ্! দেরি হবে মানে? কত দেরি?”
প্রণয় চন্দ্রাকে ইশারায় থামিয়ে দিল। তূর্ণ উৎকন্ঠিত হয়ে বলল,
“মানে? তোদের সাথে বলতে মানে কি? কোথায় কি করছে? উফ, এই মেয়েকে নিয়ে কই যাব৷ আমাকে দ্রুত লোকেশন সেন্ড কর।”
প্রণয় হেসে বলল,
“বন্ধু রিল্যাক্স। এতো চিন্তিত হইস না।”
“চিন্তিত হবো না মানে কি প্রণয়? তোরা করিসই এমন কাজ!”
“আগে শোন তো কি হয়েছে।”
“কি?”
“প্রণয়িনী যখন জানতে পেরেছে আজ তার চন্দ্রা আন্টির জন্মদিন, তখন থেকে বায়না শুরু করেছে সারপ্রাইজ দিবে। আমাকে অফিসেও যেতে দেয় নি। আমি আর প্রণয়িনী চন্দ্রাকে ওর ভার্সিটি থেকে উঠিয়ে নিয়েছি ওর পরীক্ষা শেষে। প্রণয়িনী তার আন্টির জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে তাহলে তো একটু সময় লাগবেই৷ চিন্তা করিস না তুই।”
“মাথা খারাপ তোর? প্রণয়িনী জানলো কিভাবে? তুই জানিয়েছিস! আর বার্থডে প্ল্যান যে প্রণয়িনী করতে পারে না এটা তুই, আমি, চন্দ্রা সকলেই বুঝি। চন্দ্রা এগুলো একদম পছন্দ করে না৷ ক্ষেপে গেলে কি করবি তুই?”
“তূর্ণ এই নিয়ে পরে কথা বলব৷ প্রণয়িনী আছে এখন সামনে। তুই চিন্তা করিস না। আই উইল ম্যানেজ ভাই।”
“সাবধান।”
“আচ্ছা। আর ভালো কথা, ইফ ইউ ওয়ান্ট ইউ ক্যান জয়েন আস।”
“না আমি ব্যস্ত আছি। কিন্তু ভয় পাচ্ছি। চন্দ্রা রেগে গেলে কিন্তু শেষ। আমার ভয় করে প্রণয়িনীর উপর না রেগে যায়।”
“উহু। এইটুকু ভরসা আমার আছে চন্দ্রার উপর।”
“ঠিকাছে দেখ কি হয়। কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে জানাবি।”
“ওকে।”
ফোনটা কাটার পরে চন্দ্রা বলল,
“আমি কিন্তু বেশিক্ষণ থাকব না।”
প্রণয় বলল,
“আচ্ছা। কথা দিচ্ছি তোমার ভালো না লাগলে তোমায় বেশিক্ষণ আঁটকে রাখব না। আগে চলো। দেখো কেমন লাগে।”৷
প্রণয় জানে চন্দ্রাকে এই পথটুকু কথায় কথায় ব্যস্ত রাখতে হবে। কোনো ভাবে ওর মাথায় ওর মায়ের কথা আসতে দেওয়া যাবে না। তাহলেই চন্দ্রা পাগলামি শুরু করবে। তাই প্রণয় প্রণয়িনীকে এটা সেটা বলে প্রণয়িনীর কথা চালু রাখছে। যেন চন্দ্রার মনোযোগ প্রণয়িনী আর ওর কথার দিকেই থাকে। হলোও অবশ্য তাই। প্রণয় গাড়িতে গান চালিয়ে দিল। আর প্রণয়িনী তো আছেই। চন্দ্রার কাছে থাকলে সেও এক মুহুর্ত চুপ থাকে না৷ চন্দ্রার সাথে কথা বলতেই থাকল। আর চন্দ্রা প্রণয়িনীর সব কথা শুনে। প্রণয়িনীর দুষ্টুমিতে হাসে। প্রণয়িনী অনেক শব্দই ভুল উচ্চারণ করে বসে। আর প্রণয় সেগুলো সংশোধন করতে থাকে। প্রণয়িনী যতক্ষণ সঠিক না বলে ততক্ষণ প্রণয় সঠিকটা বলানোর চেষ্টা করতেই থাকে। বাবার মেয়ের এই বিষয়টা চন্দ্রা খুব মজার সাথে উপভোগ করে।
প্রণয় বলল,
“মা তুমি কবে চন্দা আন্তিকে চন্দ্রা আন্টি বলা শিখবে?”
“চন্দা আন্তিই তো বাবা। আমি তো ঠিকই বলি। তুমি ঠিক না বুঝো।”
প্রণয় এবার বলল,
“বাহ্! শব্দ ঠিক করাচ্ছি তোকে দিয়ে। আর তুই এখন বাক্যও উল্টে ফেলছিস?”
প্রণয়িনী কিছু বুঝলো না বাবার কথা। সে পিছন থেকে এগিয়ে এসে তার চন্দ্রা আন্টির কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“আন্তি আন্তি, বাবা না ঠিকমতো কথাই বলতে পারে না। কি বলেচে তুমি কিচু বুঝো?”
চন্দ্রা প্রণয়িনীর কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। প্রণয়িনীও চন্দ্রা হাসি দেখে একইভাবে হাসছে। প্রণয় আড় চোখে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে নিয়ে কি কথা হচ্ছে?”
চন্দ্রা হাসতে হাসতে প্রণয়িনীকে বলল,
“না মা আমিও তোমার বাবার কথা বুঝি না। তোমার বাবা আসলেই কথা বলতে পারে না।”
এই বলে আবার হাসছে চন্দ্রা। প্রণয়ও সামান্য হেসে দিল। তারপর বলল,
“প্রণয়িনী রাতে কিন্তু বাবা ঘুম পাড়িয়ে দিব না বাবাকে নিয়ে এসব বললে।”
প্রণয়িনী বলল,
“আচ্চা। আমি দাদুর কাচে চলে যাব।”
প্রনয় আর চন্দ্রা দুজনেই হেসে দিল। প্রণয় বলল,
“কি মেয়ে আমার! বাবাকেও ব্ল্যাকমেইল করে।”

এভাবে কথায় কথায় ওরা পৌঁছে গেল। প্রণয় একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে গাড়ি থামালো। প্রণয় গাড়ি থেকে নেমে অপর পাশের দরজা খুলে দিলো চন্দ্রার বের হওয়ার জন্য তারপর প্রণয়িনীকে কোলে তুলে নিল। এরপর ওরা গেল রেস্টুরেন্টের ভিতরে। রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকতেই চন্দ্রা অবাক হয়ে গেল। এতো বড় একটা রেস্টুরেন্টের ভিতরে কোনো লোক নেই ওখানের কর্মচারী ছাড়া। আর সম্পূর্ণ রেস্টুরেন্ট সাজানো। একজন লোক এগিয়ে এসে একটা ফুলের তোড়া দিল। ফুলের তোড়া দিয়ে বার্থডে উইশ করল। চন্দ্রা খেয়াল করল ফুলের তোড়ায় অন্যান্য ফুলের সাথে হরেক রংয়ের চন্দ্রমল্লিকা ফুলও আছে। চন্দ্রা কেন যেন ফুলগুলো দেখে মুচকি হেসে দিল।

তারপর প্রণয় চন্দ্রা আর প্রণয়িনীকে নিয়ে গিয়ে বসল। চন্দ্রা আরও অবাক হলো। টেবিলের একদম মাঝে ফুলদানিতেও হলুদ রংয়ের চন্দ্রমল্লিকা রাখা। মাঝে একটা লাল চন্দ্রমল্লিকা! অনেক বেশি সুন্দর লাগছে ফুলগুলো দেখতে।
চন্দ্রা বলল,
“যতদূর জানি প্রণয়িনী চন্দ্রমল্লিকা চিনে না।”
প্রণয় বলল,
“প্রণয়িনীর বাবা তো চিনে। আর প্রণয়িনীর বাবার অন্যতম পছন্দের ফুল এটা।”
প্রণয়িনী বলল,
“এটা তোমার পছন্দ বাবা?”
“হ্যাঁ, বাবা।”
চন্দ্রা কিছু বলে না। তাকিয়ে থাকে প্রণয়ের চোখের দিকে। এই চোখের মধ্যে কি কোনো না বলা কথা লুকিয়ে আছে? কি জানি! চন্দ্রা ভাবতে থাকে প্রণয়ের দিক তাকিয়ে, লোকটা এমন কেন? এতো কিছু করছে। সব নিজে করছে অথচ ভয়ে বলছে প্রণয়িনী সারপ্রাইজ দিয়েছে। নিজে করেছে বললেও তো পারে। চন্দ্রা কি ওকে খু`ন করবে নাকি বললে?
প্রণয় এবার চন্দ্রার চোখের দিক তাকিয়ে হেসে দিল। তারপর বলল,
“কি হয়েছে চন্দ্রমল্লিকা?”
চন্দ্রা এবার অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
“কিছু না।”
সম্পূর্ণ রেস্টুরেন্ট বুকড করে রেখেছিল প্রণয়৷ তাই প্রণয়িনীকে বলল,
“আজ তুমি যা খুশি করো। তবে দেখো কিছু নষ্ট করো না।”
প্রণয়িনীও স্বাধীনতা পেয়ে ছুটোছুটি শুরু করেছে।
এই ফাঁকে প্রণয় চন্দ্রাকে বলল,
“একটা সুন্দর জিনিস খেয়াল করেছো?”
“কি?”
“তোমার জন্মমাস নভেম্বরে। আবার চন্দ্রমল্লিকা ফুলও নভেম্বরে ফুটে। তাহলে আমার চন্দ্রমল্লিকা বলাটা মোটেও ভুল কিছু না।”
চন্দ্রা সামান্য হাসে। তারপর বলল,
“এটাই কি চন্দ্রমল্লিকা ডাকার একমাত্র কারণ?”
“এটা একটা কারণ। আবার, চন্দ্রমল্লিকা সুন্দর। তুমিও সুন্দর।”
“জ্ঞানী মানুষের চিন্তা ভাবনাই আলাদা।”
প্রণয় হাসলো সামান্য। একজন কেক নিয়ে আসল। প্রণয়িনীও কেক দেখে ছুটে আসলো। সে এসে চন্দ্রার কোলে বসল। তারপর বলল,
“আন্তি, আন্তি।”
“হুম৷ বলো মা।”
“তোমার চুল অনেক সুন্দর। প্লিজ চুলগুলো খুলে দেই?”
চন্দ্রা হেসে বলল,
“চুল খুলে কি করবে?”
“তোমাকে ভালো লাগে।”
প্রণয় এটা শিখিয়ে দেয় নি প্রণয়িনীকে। সে অবাক হয়ে গেল উল্টো। প্রণয় বলল,
“এগুলো কোথায় শিখলি?”
প্রণয়িনী বলল,
“প্লিজ বাবা আন্তিকে বলো না।”
চন্দ্রা বলল,
“আচ্ছা। তোমার যা ভালো লাগে করো।”
প্রণয়িনী খুশি হয়ে গেল। সে চন্দ্রার কোল থেকে নেমে পিছনে গিয়ে চন্দ্রার চুলের বেণী গুলো খুলে দিল। প্রণয় কতক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। মনে মনে বলল,
“লাভ ইউ প্রণয়িনী। বাবার মন কখন কি চায় এতো ভালো করে বুঝে যাস কি করে?”
প্রণয় এবার বলল,
“আচ্ছা, এবার তাহলে কেকটা কাটা হোক?”
প্রণয়িনী বলল,
“না।”
প্রণয় আর চন্দ্রা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর প্রণয়িনী বলল,
“আগে চবি তুলবে।”
প্রণয় আর চন্দ্রা হেসে দিল। প্রণয় বলল,
“এই টিভি আর ইউটিউব দেখে দেখে মেয়ে আমার কত কিছু শিখেছে দেখেছো!”
এরপর প্রণয়িনী আর চন্দ্রা মিলে কিছু ছবি তুলল। প্রণয়িনী এবার জোর করল তার বাবাকেও ছবিতে আাসতে হবে। প্রণয় বলল,
“আমার কি দরকার? তোমরা তুলো? বাবা তুলে দিচ্ছি তো।”
প্রণয়িনী বলল,
“না চবিতে সবাইকে আসতে হয়। তুমিও আসতে হবে।”
চন্দ্রা বলল,
“আচ্ছা বলছে যখন একটা সেলফি নিন।”
প্রণয় এবার প্রণয়িনীর দিক তাকিয়ে বলল,
“ছবি তুলছি। কিন্তু তুমি আগে কথার লাইন ঠিক করো মা। তোমার কথা বুঝতে মানুষের জান বের হয়ে যাবে।”
চন্দ্রা হসেে দিল। তারপর বলল,
“আপনিও না! বলে একটু ভুল। ছোট মানুষ। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। এতো কড়াকড়ির দরকার কি?”
প্রণয় বলল,
“ঠিকাছে ম্যাডাম।”
চন্দ্রা হাসল। তারপর তিনজন মিলে একটা সেল্ফি নিল।
চন্দ্রা কেক কাটলো। তারপর প্রণয়িনীকে খাইয়ে দিল। তারপর প্রণয় প্রণয়িনীকে খাইয়ে দিল। প্রণয়িনী বায়না করল তার বাবার চন্দ্রা আন্টিকে কেক খাইয়ে দিতে হবে। বার্থডেতে খাইয়ে দিতে হয় কেক। এটা প্রণয়িনী জানে। তার জন্মদিনে তাকে সবাই কেক খাইয়ে দেয়। প্রণয়িনী এই আবদারও পূরণ হলো।
খাওয়া দাওয়া শেষে সেখানে আরও কিছু সময় কাটালো ওরা। তারপরও প্রণয় বিকালটা অন্য কোথাও কাটাতে চায়৷ কারণ প্রণয় চন্দ্রাকে সন্ধ্যার আগে বাসা ফিরতে দিতে চাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর তূর্ণ বাসায় থাকবে। আর সে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে চন্দ্রাকে উল্টাপাল্টা কিছু করা থেকে আটকানোর। প্রণয় ইচ্ছে করে বলল,
“প্রণয়িনীর জন্য জামা কিনতে যাব। প্লিজ তুমিও চলো আমাদের সাথে শপিং মলে।”
চন্দ্রা কিছু বলার আগেই প্রণয়িনী বলল,
“হ্যাঁ, আন্তি প্লিজ চলো। তুমি আমার জামা পচন্দ করবে। আমার ভালো লাগে তোমাকে পচন্দকে।”
প্রণয় বলল,
“পন্ডিত! এই তুই আন্টির পছন্দ জানলি কিভাবে?”
“পন্তিত যেন কি বাবা?”
“কিছু না। চুপ করে বসো।”
চন্দ্রা বলল,
“ঠিকাছে। প্রণয়িনী যেহেতু বলেছে আমি কি না করতে পারি?”
প্রণয়িনী ভীষণ খুশি হয়ে গেল। সে এগিয়ে এসে চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু খেল। শপিং মলে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বেশ কিছু পছন্দ করে কিনল চন্দ্রা প্রণয়িনীর জন্য।

তারপর একটা দোকানের বাহিরে দাঁড়িয়ে প্রণয় বলল,
“আরেহ্! এটাই সুধার শো-রুম না?”
চন্দ্রা বলল,
“হ্যাঁ, আপনাদের বান্ধবী। সুধা আপুর শো-রুম এটা।”
“চলো তো যাই। দেখি সুধা আছে না কি।”
“আপু তো মনে হয় থাকে না এখানে। তবুও যেতে চাচ্ছেন, চলুন।”
চন্দ্রা আর প্রণয় দোকানটা ঢুকে অবাক হয়ে গেল তূর্ণ আর পরশিকে দেখে। তূর্ণ আর পরশিও অবাক চন্দ্রা আর প্রণয়কে দেখে। তূর্ণ অবাক হয়ে চন্দ্রা আর প্রণয়কে বলল,
“তোরা এখানে কি করিস?”
প্রণয় বলল,
“আমরা ঘুরতে ঘুরতে ভাবলাম প্রণয়িনীর জন্য একটু শপিং করি। এখানে এসে ভাবলাম সুধার শো-রুম দেখে যাই। কিন্তু তুই এখানে?”
চন্দ্রা অবাক হয়ে বলে,
“পরশি আপু আপনি!”
তূর্ণ বলল,
“আসলে পরশি ওনার ম্যামকে শাড়ী গিফট করতে চায়৷ আর ও জায়গাটা চিনে না। তাই ভাবলাম আমিও আসি।”
“ওহ্, আচ্ছা। ভালো।”
প্রণয় আর তূর্ণ ওর বান্ধবীর সাথে কথা বলল। ততক্ষণে চন্দ্রা আর পরশি ঘুরে ঘুরে সব দেখছিল। পরশি ওর বসের জন্য শাড়ী নিল একটা। আরেকটা নিজে পছন্দ করল। চন্দ্রা শুধু দেখতে থাকলো। কিছু নিতে চাচ্ছিলো না।
প্রণয় বলল,
“নিতে তো তোমাকে হবেই। এ্যাজ ইওর বার্থডে গিফট।”
“না, না ভাইয়া। আমি নিব না। এমনিই তো এতো কিছু করলেন। এরপর আবার কিসের গিফট?”
“ওটা প্রণয়িনী দিয়েছিল। প্রণয়িনী চেয়েছে তার চন্দ্রা আন্টিকে সারপ্রাইজ দিতে। তাহলে ওটা প্রণয়িনীর গিফট। এটা আমার পক্ষ থেকে।”
তূর্ণ দুজনকে দেখে রীতিমতো অবাক। হচ্ছে টা কি? সবার সামনে প্রণয় ওর জন্মদিনের কথা বলল! চন্দ্রাও বেশ স্বাভাবিক! তূর্ণ তাকিয়ে দেখছে শুধু।
চন্দ্রা রাজি না হলেও পরশি আর তূর্ণর বান্ধবী জোর করল নেওয়ার জন্য যেহেতু জন্মদিন। সাথে পরশিও চন্দ্রাকে একটা শাড়ী দিল জোর করে। চন্দ্রা নিতে চাইছিল না। তূর্ণ পরশিকে বারবার মানা করেছে। কিন্তু পরশি শুনেনি। বাধ্য হয়ে নিতে হলো চন্দ্রা কে। ওরা শাড়ী দেখছিল, ঠিক এমন সময়ই শপে ইভা আসে। ইভা সকলকে দেখে অবাক। সে বলল,
“আরেহ্ বাহ্! সবাই এখানে হঠাৎ? কাহিনি কি?”
তূর্ণ বলল,
“এই একটু শপিং। আর সুধার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে এসেছিলাম। তুমি এখানে?”
“ঐ একই কারণ।”
পরশিকে দেখে ইভা বুঝতে পারছিল না কে। সে আন্দাজ করল প্রণয়ের কেউ হবে। জিজ্ঞেস করল,
“প্রণয় এটা কি তোমার আত্মীয়?”
তূর্ণ তখন বলল,
“উনি পরশি। আমরা পাশাপাশি থাকি। আমার ফ্রেন্ড বলতে পারো।”
পরশি কথাটা শুনে তূর্ণ দিক তাকালো! এতোদিন পরশি খেয়ালি করেনি ওরা গল্প করতে করতে বন্ধু হয়ে গিয়েছে। বরং বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে ওদের।
কথাটা শুনেই পরশির দিক তাকালো ইভা। খুব ভালো করে দেখে নিল। মেয়েটা শাড়ী পরেছে। দেখতেও ভালোই। শপিং করতে আসতে শাড়ী পরার মানে কি? আবার এসেছে তূর্ণর সাথে! তাও ইভা জানে তূর্ণ কেমন৷ তাই তার সমস্যা নেই। সমস্যাটা হলো বিল দিতে গিয়ে। পরশি তিনটা শাড়ী নিয়েছিল। একটা তার বসের, একটা চন্দ্রার, আরেকটা তার। সে সবগুলোর বিল দিতে গেলে তূর্ণ দিতে দিল না। তূর্ণ জোর করলো পরশির শাড়ীর বিলটা সে দিবে। কারণ তার বান্ধবীর শপে সে নিয়ে এসেছে৷ পরশি এতো বলার পরেও তূর্ণ শুনেনি। সবাই ব্যাপারটা সাধারণভাবে নিলেও ইভা ব্যাপারটা সাধারণ ভাবে কিছুতেই নিতে পারল না। সে বলেই ফেলল,
“এতো জোর করছো অথচ তোমার বান্ধবী তো রাজিই হচ্ছে না। আমাকে জোর করলে অবশ্য না করতাম না।”
চন্দ্রা কথাটা ধরে বলল,
“ইভাপু, তুমি তো ভাইয়ার পুরানো বান্ধবী। তোমাকে না বললেও তুমি নিয়ে নিবে ভাইয়া সেটা জানে। আর পরশি আপুকে ভাইয়া এখানে নিয়ে এসেছে। তো এটা ভাইয়ার দায়িত্ব আপুকে কিছু দেওয়া। তুমি এটা নিয়ে এভাবে কেন কাহিনি করছো?”
পরশি বলল,
“আমি বিল দিয়ে দিচ্ছি। থাক না তূর্ণ।”
তূর্ণর ইভার উপর মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছে। তূর্ণ বলল,
“থাকবে না পরশি। আপনি শাড়ীটা নিবেন। না হলে আমি অনেক কষ্ট পাব। আর রাগও হবো।”
পরশি আর কিছু বলতে পারল না। চন্দ্রা তার আগে বলল,
“আপু আপনি যদি ভাইয়ার দেওয়া শাড়ীটা না নেন তাহলে আমিও আপনার দেওয়া গিফটটা নিচ্ছি না।”
পরশি পড়ে গেল বিপদে। বাধ্য হয়ে তাকে শাড়ী নিতেই হলো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here