ভালোবাসা কারে কয়,২৯,৩০

0
130

ভালোবাসা কারে কয়,২৯,৩০
শবনম মারিয়া
পর্ব ২৯

তূর্ণ প্রণয়ের ফোন রাখার পর কিছুক্ষণ ভাবলো। প্রণয় হঠাৎ এরকম কথা কেন বলল? না না, সেরকম কিছু হতে পারে না। পরশি এমনি বন্ধুর মতো। পরশিকে নিয়ে আর কিছু ভাবে না তূর্ণ। কিন্তু আবার নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন করে বসে, সত্যিই কি তাই? কিন্তু তবে কেন মাঝে মাঝে মনে পরশিকে নিয়ে ভাবনা আসে?
তূর্ণ বুঝতে পারে না। তবুও নিজের মনকে শান্ত করার জন্য নিজেকে বুঝ দেয় ওসব কিছু না। পরশির সাথে কথা বলতে ভালো লাগে কারণ পরশির চিন্তাধারা সুন্দর। পরশির কথাগুলো সুন্দর। ও অনেক একা৷ তূর্ণও নিজেকে একা মনে হয়। সেই হিসেবেই দুজনে গল্প করে। সময় কাটায়। আর কিছুই না।
তূর্ণ ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়বে ভাবে। সে আলমারি খুলে কাপড় বের করতে যাওয়ার সময় পরশির সেই ওড়নাটা সামনে পড়ে। তূর্ণর হাতে যেটা বেঁধে দিয়েছিল পরশি। তূর্ণ কেন এই ওড়নাটা এখনও তার আলমারিতে রেখে দিয়েছে! ফেলে দেওয়া উচিত?
নিজেই নিজেকে ধমকে বলে, এগুলো কি করছিস তূর্ণ? একটা ওড়নাই তো! আছে থাক। এটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করে লাভ কি। তূর্ণ আবার ওড়নাটা আলমারির মধ্যেই রেখে দিল। ফেলতে গিয়েও ফেলতে ইচ্ছে করল না।
তূর্ণ শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ করতে পারছে না। পরশির ভাবনা মাথায় চলে আসছে। পরশির হাসি মুখটা চলে আসছে কল্পনায়। তূর্ণ এসবের জন্য এখন প্রণয়কে দোষারোপ করছে। প্রণয়ই উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে তূর্ণর মাথা খেয়েছে।
অনেক কষ্ট করে চিন্তাগুলোকে দূরে ঠেলে দিলো তূর্ণ৷ তারপর ঘুমিয়ে পড়লো।

.
কয়েকটা দিন কেটে গেল। তূর্ণ ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে সে কোনোভাবে পরশির প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। যেটা কি হওয়া উচিত নয়। এসব জিনিস তূর্ণর ভালো লাগে না। ওর কখনো এমনটা হয় নি। কিন্তু এখন কেন যেন কিছু মিছে অনুভূতি তৈরি হচ্ছে। হ্যাঁ, এই ক্ষুদ্র অনুভূতিগুলো তূর্ণর কাছে মিছেই। কারণ তার এই অভিজ্ঞ চোখ দেখেছে এই মিছে অনুভূতিগুলো কতগুলো মানুষকে শেষ করেছে। শেষ করেছে কত মানুষের জীবন৷ শেষ করেছে ছোট ছোট বাচ্চাদের শৈশব। এই মিছে অনুভূতি তো তূর্ণর পছন্দ না। একদম না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই এগুলোতে জড়িয়ে যাবে? না৷ তূর্ণ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেই রাখবে।
পরশি কয়েকবার চেষ্টা করেছে তূর্ণর সাথে কথা বলার। কিন্তু তূর্ণ কাজের কিংবা ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে দূরে সরে থেকেছে। পরশিকে সে বুঝতে দেয় নি সে বিরক্ত। পরশিও বুঝেনি তূর্ণ বিরক্ত হচ্ছে দিন দিন৷ বুঝলে হয় তো সে কখনোই তূর্ণর সাথে কথা বলবে না। সে চায় না কারো বিরক্তির কারণ হতে। সে ভাবে ডাক্তার মানুষ। শত রকমের ব্যস্ততা থাকতেই পারে তূর্ণর৷ তূর্ণ তাকে এভয়েড করছে এইটা সে টের পায় নি।
আজ হঠাৎ চন্দ্রা আসলো পরশির বাসায়। পরশি একটু অসুস্থ। কাল যখন সন্ধ্যায় পরশি অফিস থেকে বাসায় ফিরেছিল তখন তূর্ণ দেখেছে পরশিকে তার এক কলিগ এগিয়ে দিয়েছে গেটের কাছে। আর সে বলছিল, বেশি খারাপ লাগলে জানাতে। হসপিটালে যেতে। পরশি তখন বলেছিল সামান্য জ্বর। তেমন সমস্যা নেই। তারপর পরশি চলে গিয়েছে উপরে। তূর্ণ পরশিকে দেখেই সরে আড়ালে চলে গিয়েছিল। কারণ সে চায় নি পরশির সাথে দেখা হোক। বাড়তি কিছু কথা হোক। তূর্ণ কেন যেন আজকাল আর পরশির চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না৷ কথা বলতে গেলে কেমন একটা অস্বস্তিবোধ হয়। তূর্ণর মনে হয় সে বেশি কথা বলে ফেলছে। যেগুলো তার না বলাই ভালো। পরশি যদি কিছু মনে করে বসে। ভয় হয় তূর্ণর। তাই সে যথা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।
কিন্তু কাল সে বাসায় যাওয়ার পর অনেক চেষ্টা করেও সারা রাতে ঘুমাতে পারেনি। বারবার মনে একটা অস্বস্তি। ‘পরশি কেমন আছে?’ এই একটা প্রশ্ন তূর্ণকে চিন্তায় পাগল করে দিচ্ছিলো।
তূর্ণর মন চাইছিলো গিয়ে পরশির খোঁজ নিতে। কিন্তু তূর্ণ করল না। রাতটা ওভাবেই কাটিয়ে দিল। ভোরবেলা নিশ্চয়ই চন্দ্রার সাথে ছাদে দেখা হবে। ওদের তো প্রায়ই ছাদে দেখা হয়। রাতটা তূর্ণ কোনোভাবে কাটালো। রাতে না ঘুমালেও সকালে রুম থেকে ইচ্ছে করেই একটু দেরি করে বের হলো। চন্দ্রা তখন বাসায়। তূর্ণ চন্দ্রার সাথে কথা বলা শুরু করল। প্রথমে অন্য বিষয় কতক্ষণ কথোপকথন চালিয়ে গেল। তারপর হঠাৎ বলে বসলো,
“পরশির সাথে দেখা হয়?”
“হ্যাঁ, হয় তো। তবে আজ হয় নাই।”
“কেন?”
“আজ আপু ছাদে আসেনি।”
“কেন?”
“আরে ভাইয়া আশ্চর্য! আমি কিভাবে বলব কেন আসেনি? তোমার তো আমার থেকে তার সাথে বেশি কথা হয়।”
“ইদানিং হয় না। কথা বলার সময় নেই। তাই খবর জিজ্ঞেস করলাম।”
“ওহ্।”
“আচ্ছা একটা কাজ কর। গিয়ে একটু খোঁজ নে।”
“কেন?”
“ছাদে তো রেগুলার যায়। আজ যায় নি। একটু অবাক হওয়ার বিষয় না?”
“মোটেও না ভাইয়া। এটা সাধারণ একটা ব্যাপার। সে ব্যস্ত মানুষ। এমনও হতে পারে বাসায় নেই। অফিসের কাজে কোথাও গিয়েছে।”
“আসলে আমার মনে হলো সে অসুস্থ।”
“মানে? তুমি জানো তাহলে আমাকে বলছো কেন?”
“কাল ওকে দেখেছিলাম অসুস্থ মনে হয়েছিল। কিন্তু আমি কথা বলার সময় পাই নি। তুই গিয়ে একটু খোঁজ নে কেমন আছে।”
“আচ্ছা।”
“এই শোন।”
“বলো।”
“বলিস না আমি পাঠিয়েছি।”
“এটা বলা না বলার কি আছে? আর আমি কি থেকে জানবো সে অসুস্থ? যদি জিজ্ঞেস করে তবে আমি কি বলব?”
“তুই গিয়ে নরমালি খোঁজ করিস। ও নিজে থেকেই বলতে পারে। তখন জিজ্ঞেস করবি কি হয়েছে, কেমন আছে।”
“বুঝতে পারছি না ভাইয়া। এগুলো কি করছো? সত্যি করে বলো তো কি হয়েছে? আপু কথা বলে না তোমার সাথে?”
“আমি বলি না।”
“ওমা! কেন?”
“নারীদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা ভালো।”
এই বলে তূর্ণ কফির কাপ নিয়ে নিজের রুমের দিক হাঁটা দিল। চন্দ্রা আগ্রহের সাথে তূর্ণ পিছে পিছে গিয়ে বলল,
“ঘটনা কি বলো তো ভাইয়া? আমার যতো দূর মনে পড়ে তুমি ইভা আপুকে ইগনোর করা শুরু করেছিলে আপু যখন তোমাকে প্রপোজ করেছিল। এইখানেও কি কাহিনি এরকম কিছু? মানে মানা লাগবেই আমার ভাই অনেক বেশি হ্যান্ডসাম। এইজন্য সব মেয়ে প্রপোজ করে বসে! কিন্তু কথা হলো, পরশি আপুকে দেখে আমার একদমই এমন মনে হয় নি। আমার তাকে সুন্দর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন মহিলা মনে হয়েছে৷ এমন কিছু হয়েছ বলে মনে হয় না। অবশ্য ইভাপুও ওরকম করবে কে জানতো। তোমার কি কপাল! ঘুরে ফিরে যাকেই বান্ধবী বানাও সেই গন্ডগোল করে বসে।”
তূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছিলো আর চুপচাপ চন্দ্রার কথা শুনছিল ওর দিক তাঁকিয়ে। চন্দ্রার কথা শেষ হতেই তূর্ণ গিয়ে চন্দ্রার মাথার উপর মেরে বলল,
“হয়েছে আপনার? আর কিছু বাকি আছ বলা? থাকলে সেটাও বলে ফেল? তোর স্বভাব দিন দিন বয়স্ক মহিলাদের মতো হচ্ছে কেন?”
চন্দ্রা নিজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
“আরে আমার কি দোষ? তুমিই তো কাহিনি করলে। বলো কি হয়েছে?”
“দেখ পরশি ওরকম ক্যারেক্টারের মেয়ে না। এমনিই আমি নারীদের থেকে দূরে থাকি। ভয় লাগে যদি এ্যাট্রাক্ট হয়ে যাই ক্ষণিকের জন্য যেটা কি না মানুষের ভাষ্যমতে ভালোবাসা।”
চন্দ্রা বলল,
“ভালোবেসে ফেলেছো?”
“মাথা খারাপ? এমনিই ওর সাথে বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছি। বেশি কথা বলে ফেলেছি। একটু দূরত্ব বজায় রাখা ভালো বলে মনে হলো। তা-ই করছি। তোকে যা বলেছি সেটা কর। তুই গিয়ে একটু খোঁজ নিয়ে আয়।”
“আচ্ছা গিয়ে বলি আমার ভাইয়া আপনার জন্য চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। একটু খোঁজ দিয়ে আমার ভাইয়ের প্রাণ বাঁচান।”
তূর্ণ আবার চন্দ্রার মাথায় মেরে বলল,
“বেশি কথা বলিস তুই।”
“সরি। যাচ্ছি।”

চন্দ্রাকে পরশি দেখে বলল,
“আরে চন্দ্রা, তুমি! আসো ভেতরে আসো।”
চন্দ্রা ভেতরে প্রবেশ করল। পরশি চন্দ্রাকে বসতে বলল। চন্দ্রা বসলও। চন্দ্রা খেয়াল করল পরশির চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে সে অসুস্থ। তার কন্ঠেও টের পাওয়া যাচ্ছে। চন্দ্রা বলল,
“আপু আপনি কি অসুস্থ নাকি?”
“ঐ সামান্য একটু জ্বর। শীতকালে এটুকু ব্যাপার না। আমার আবার এ্যালার্জি আর শ্বাসকষ্ট আছে। এইজন্য শীতকালে একটু এমন হয়।”
“সে কি আপু! আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি অনেক বেশিই অসুস্থ। ডাক্তার দেখিয়েছেন? ওষুধ খাচ্ছেন ঠিকমতো?”
“হ্যাঁ। আমি ঠিক আছি চিন্তা করো না।”
“রেস্ট নিন। আর কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই বলবেন।”
“আচ্ছা।”
দুজনেই কতক্ষণ চুপ রইল। পরশির হঠাৎ ইচ্ছে করলো তূর্ণর কথা জিজ্ঞেস করতে। পরশি চন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করলো,
“চন্দ্রা তোমার ভাইয়ার কি খবর? মানে আজকাল একটু বেশিই ব্যস্ত থাকে?”
চন্দ্রা বুঝতে পারছে না কি বলবে। তবুও সে স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
“জি। ও তো সবসময়ই ব্যস্ত থাকে। বাসায়ই থাকে না।”
“হ্যাঁ, আমার সাথে বেশ কিছু দিন কথা হয় নি। তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
“ওহ্।”
“আচ্ছা আপু আপনি রেস্ট নিন। আমি আজ আসি।”
“ঠিকাছে। আবার এসো।”

চন্দ্রা চলে এলো বাসায়। ব্যাপারটা ওর কাছে একটু অস্বাভাবিক লাগছে। তূর্ণর কথাগুলো খুবই অস্বাভাবিক। তূর্ণর হয় তো পরশিকে ভালো লাগা শুরু হয়েছে। তাই তূর্ণ এমনটা করছে। কিন্তু চন্দ্রা চিনে তূর্ণকে। এতো বছরে কোনোদিনও তূর্ণর কোনো মেয়েকে ভালো লাগে নি। তূর্ণর কাউকে ভালো লাগবে এটা কেউ ভাবতেও পারে নি। অথচ তূর্ণর কথার ভাবে বোঝা যাচ্ছে। তবে কি তূর্ণর দাদির কথাই ঠিক? জীবনে যখন সঠিক মানুষটা আসে, তখন তাকে ভালো না বেসে পারা যায় না। আসলেই কি তাই? তূর্ণর ক্ষেত্রেও কি তাই হলো?
না। যত যাই হোক তূর্ণ তার জায়গাতেই আছে। তূর্ণ ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না। ও মনে করছে পরশির প্রতি ক্ষণিকের এ্যাট্রাকশন। তূর্ণ কখনো কাউকে ভালোবাসবে না। সে এইজন্যই আজকাল পরশিকে এ্যাভয়েড করছে।
এসব ভাবনায় মগ্ন আছে চন্দ্রা। ঠিক এমন সময় তূর্ণ এসে চন্দ্রাকে ডাক দিয়ে তার ভাবনায় ছেদ ঘটালো।
“চন্দ্রা।”
“হু, বলো। তুমি এখনও হসপিটালে যাওনি?”
“না, যাব। পরশির সাথে দেখা হয়েছে?”
“হ্যাঁ। আপু অনেক অসুস্থ।”
“সে কি! কি হয়েছে?”
“জ্বর। আপু বলল তার এ্যালার্জির সমস্যাও আছে। তাই শীতকালে এরকম জ্বর, ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে।”
“ঠিকমতো ওষুধ নিচ্ছে?”
“হ্যাঁ।”
“আচ্ছা। বলিস নি কোনো সমস্যা হলে জানাতে?”
“বলেছি।”
“ঠিকাছে।”
“ভাইয়া কি এইজন্যই অফিসে যাও নি?”
“কিসের জন্য?”
“পরশি আপুর খবর নেওয়ার জন্য। বলো, এইজন্যই ওয়েট করছিলে তাই না।”
“না চন্দ্রা।”
“হ্যাঁ ভাইয়া। ইউ হ্যাভ ফিলিংস ফর হার।”
তূর্ণ কতক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর গম্ভীর স্বরে বলল,
“জানি না। বুঝিও না এগুলো কি। তবে চাই কোনো প্রকারের ফিলিংস না তৈরি হোক।”
এই বলে তূর্ণ চলে গেল।

চলবে….

ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৩০

তূর্ণ কাজের ভিড়েও পরশির চিন্তায় হারিয়ে আছে। কোনো মতেই মাথা থেকে পরশিকে সরাতে পারছে না৷ আচ্ছা ওর কি এবার গিয়ে পরশির খোঁজ করা উচিত না? উচিত তো অবশ্যই। একটু খোঁজ নিলে, কথা বললে এমন কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে না। বরং খোঁজ নেওয়াটাই উচিত।
তূর্ণ কোনো মতে বিকেলটা কাটিয়ে দিল। সন্ধ্যা হওয়ার মুহুর্তে বাসায় চলে গেল। পরশির বাসায় গিয়ে বেল বাজালো তূর্ণ।
পরশি শুয়ে ছিল। ভালো লাগছে না। অসুস্থতা আছেই সাথে বিষন্নতা। ডিসেম্বর মাসটা কাটে পরশির বিষন্নতায়। মাসের শেষে কিছু খারাপ জিনিস ঘটেছিল তার সাথে। তবে মাসের শুরুটা থেকেই সে বিষন্ন হয়ে থাকে। অনেক চেষ্টা করে সব কিছু ভুলে থাকতে কিন্তু পারে না৷ জিনিসগুলোই সবসময় কষ্ট দেয়।
না শুয়ে থেকেও ভালো লাগছে না। পরশি উঠে গিয়ে আলমারিটা খুলল। পুরোনো কিছু জিনিস যেগুলো কেবলই স্মৃতি হয়ে রয়ে গিয়েছে সেগুলো বের করে ছুঁয়ে দেখছিল। একটা ছবি! ছবিটা পরশির খুব প্রিয়৷ ছবিটা পরশি দেখে আবার অশ্রুসিক্ত করে ফেলল চোখ দুটো। গিয়ে ডেস্কে বসল। কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো সেই ছবিটার দিক। তারপর একটা কলম আর একটা নোট প্যাড নিয়ে লিখলো,

❝পুরোনো কষ্টগুলো ফিরে আসে বারংবার,
শুধু ফিরে না হারিয়ে যাওয়া মানুষটা আরেকবার।❞

লিখে কলমটা রাখলো। ঠিক এমন সময়ই কলিং বেল বেজে উঠলো। এমন সময় বেল বাজায় একটু বিরক্ত হলো পরশি। এই সময় কে আসতে পারে? পরশির গিয়ে দরজা খুলতে ভালো লাগছে না৷ ইচ্ছে করছে না। শরীরে অলসতা কিংবা দুর্বলতা এসে ভর করেছে। পরশি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও উঠে গিয়ে দরজা খুলল। কিন্তু দরজা খুলে মানুষটাকে দেখে বিরক্তি চলে গেল। বরং ভালো লাগছে। কতদিন পর দেখা দিয়েছে!
পরশির মুখের হাসির রেখাটার দেখা মিলল। তূর্ণ পরশিকে দেখে বলল,
“কেমন আছেন?”
“ভালো।”
পরশি দরজার সামনে থেকে সরে তূর্ণকে ভিতরে আসতে বলল। তূর্ণ বলল,
“না থাক। শুনলাম অসুস্থ। তাই খোঁজ নিতে এসেছিলাম।”
“আরে আসেন। বসেন।”
তূর্ণ ভিতরে যায়। তারপর দুজনে সোফায় বসে মুখোমুখি। পরশি তূর্ণকে জিজ্ঞেস করল,
“চা খাবেন?”
“না, একদম না। কিছু করতে হবে না। আপনি কেমন আছেন তাই বলেন। অনেক অসুস্থ শুনলাম।”
“কোথায় এতো অসুস্থ? অল্প একটু জ্বর, ঠান্ডা আর এ্যালার্জি। চন্দ্রা বলেছে তাই না? ও সকালে এসেছিল। এখন আমি একদম ঠিক আছি।”
“আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে না আপনার অল্প একটু জ্বর আর আপনি ঠিক আছেন। ওষুধ খাচ্ছেন ঠিক মতো?”
“হ্যাঁ। চিন্তা করবেন না ঠিক আছি।”
“আচ্ছা। খেয়াল রাখবেন নিজের।”
এই বলে তূর্ণ উঠে যেতে চাইলো। পরশি ডেকে বলল,
“তূর্ণ?”
“জি বলুন।”
“আপনি কি অনেক ব্যস্ত।”
তূর্ণ কি বলবে সে জানে না। তবুও স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই উত্তর দিল,
“না। কেন?”
“আপনাকে আজকাল বেশি ব্যস্ত মনে হয়। আগের মতো ছাদে আসেন না। দেখা হয় না। কথা হয় না। আর আমাদের সুখ দুঃখের গল্পগুলোও হয় না।”
“আসলে একটু ব্যস্ত থাকি। বাসায় এসে অনেক টায়ার্ড লাগে। তাই ছাদে যাওয়া হয় না।”
“ওহ্।”
“এখনও ব্যস্ত?”
“না, ফ্রি আছি।”
“চলুন তবে ছাদে যাই।”
“বলেন কি! আপমার এই অবস্থায় এই শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে ছাদে যেতে চাইছেন? আপনার শ্বাসকষ্ট আছে, অনেক ঝামেলা হবে।”
পরশি মন খারাপ করে বলে,
“হুম।”
তূর্ণ বলল,
“আচ্ছা তবে আমরা এখানে বসেই কথা বলি।”
“আচ্ছা।”
তূর্ণ নিজে থেকেই কথা বলা শুরু করল। বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো দুজনের মধ্যে। তূর্ণ যেন মুহুর্তের মধ্যে সকল চিন্তা ভাবনা দূরে করে দিয়ে পরশির সাথে গল্পে ডুবে গিয়েছে। হাসছে, গল্প করছে। নেই তূর্ণর মধ্যকার সেই জড়তা। তূর্ণ ভুলে গিয়েছে পরশিকে এড়িয়ে চলার কথাগুলো।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ পরশির অনেক কাশি উঠলো। কাশি হতে হতে উঠে গেল শ্বাসকষ্ট। তূর্ণ বেশ বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো। সে তাড়াতাড়ি পরশিকে সাহায্যের চেষ্টা করছে। পরশি বলার চেষ্টা করল তাকে তার রুমে নিয়ে যেতে। সেখানে তার মেডিসিন আছে।
তূর্ণ পরশিকে বেড রুমে নিয়ে তার মেডিসিন দিল। ইনহেলার নিয়ে পরশি কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। তূর্ণ পরশিকে বলল,
“পরশি আমার মনে হচ্ছে আপমার এখানে একা থাকা ঠিক না। আপনার পরিবারের কাউকে জানানো উচিত।”
“পরিবারকে জানিয়ে কিছু হবে না। লাভ নেই। আমি ঠিক আছি।”
“পরশি ব্যাপারটা সিরিয়াস। আপনার পরিবারের লোকজন এতোটাও কেয়ারলেস হবে বলে মনে হচ্ছে না। আপনার বাবাকে বলে দেখুন৷ তিনি তো আপনার জন্য ভাবেন।”
“বাবাকে বলে লাভ নেই। বাবা কিছুই করতে পারবে না। শুধু শুধু নিজে চিন্তা করে অসুস্থ হবে।”
“ঠিকাছে। আপনি তাহলে এখনি আমার সাথে হসপিটালে চলুন৷ সেখানে আপনাকে অ্যাডমিট করে দিব। নার্স আছে। দেখাশোনা করবে। সুস্থ হয়ে ফিরবেন।”
“এতোটুকুর জন্য এগুলোর প্রয়োজন নেই তূর্ণ।”
“আছে। যা বলছি শুনুন। চলুন আমার সাথে।”
পরশিও ভাবলো সত্যিই তার খুব কষ্ট হচ্ছে। হসপিটালে যাওয়াটা ভালো হবে। তাই সে তূর্ণর কথায় রাজি না হয়ে পারলো না৷ সে রাজি হলো। তূর্ণ তাকে নিয়ে হসপিটালে গেল। রুম থেকে বের হওয়ার আগে ধাক্কা লেগে টেবিলের কোণায় থাকা একটা ফটোফ্রেম পড়ে ভেঙে গেল। ফটোফ্রেমটা নিশ্চয়ই এখানে রাখা ছিল না। এখানে রাখা হলে সঠিকভাবে রাখা হতো। তা না হলে পড়ার কথা না। একটা অল্পবয়সী ছেলের ছবি! কে এই ছেলে? পরশির রুমে এর ছবি কি করে? এখানে এভাবে কেন ছিল? সে যাই হোক। পড়ে গিয়ে তো ভেঙে গেল। এখন তূর্ণ কি করবে?
তূর্ণ বুঝতে পারলো না। কোনোরকম ভাবে ভাঙা ছবিটাই টেবিলে উঠিয়ে রাখতে গেলে একটা নোটপ্যাডে লেখাটা দেখলো যেটা পরশি কিছুক্ষণ আগে লিখেছিল। কিন্তু এসব এখন তূর্ণ কিছুই বুঝতে পারলো না। তার মাথায় এগুলো ঢুকছে না। তূর্ণ ব্যাপারগুলো বেপরোয়াভাবেই নিল। এসব নিয়ে ভেবে তার কি? হবে পরশির পারসোনাল ম্যাটার। আর লেখাটায় কি আসে যায়? এমনও হতে পারে পরশি কবিতা লিখে! হতেই তো পারে। লেখার সাথে ছবির কাহিনী মিলানের দরকার নেই। আর এসব তূর্ণ ভাববেই কেন? নিজেকে এরকম কথা বুঝিয়ে সেখান থেকে তারপর চলে গেল।
তূর্ণ চন্দ্রাকে ডেকে আগেই পরশিকে তার সাথে রিকশায় করে হসপিটাল পাঠিয়ে দিয়েছে। তাই পরশি রুমে ছিল না। পরশি তূর্ণকে বলেছিল ওর রুমে ডেস্কের উপর ওর ফোন আর ওয়ালেট আছে। সেটা যেন একটু নিয়ে যায়। তূর্ণ সেই জন্যই পরশির রুমে গিয়েছিল।
পরশিকে সেখানে এ্যাডমিট করে তূর্ণ হসপিটালের থেকে আর বাসায় যায় নি। চন্দ্রাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। পরশির এখানে কোনো অসুবিধা হবে না জানা সত্ত্বেও তূর্ণ বাসায় ফিরলো না। রাতটা হসপিটালে তার চেম্বারে বসেই পার করে দিল। গেল না পরশির কাছেও। তবে নার্সদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত পরশির খবর নিয়েছে। পরশির জন্য খুব মায়া হচ্ছে তূর্ণর। একটা মানুষ এরকম অসহায় কিভাবে হয়? কে জানে! এই পৃথিবীতে হয় তো এরকম কত শত মানুষ রয়েছে যারা অসহায়। এক এক জনের অসহায়ত্বের ধরণ আলাদা। তাদের গল্প আলাদা। প্রত্যেকে তাদের জীবনের ভিন্ন ভিন্ন গল্পের মাধ্যমে অসহায়। তূর্ণ খুব বিরক্ত হয়ে বসে রইল।

যখন তূর্ণ পরশিকে নিয়ে হসপিটালে এসেছিল তখন ইভা বাসায় যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলো। কিন্তু তূর্ণকে পরশিকে নিয়ে এতো চিন্তিত দেখে তার ভালো লাগলো না। সেও থেকে গেল। তূর্ণকে ইভা বলেছিল,
“তূর্ণ এটা নরমাল ব্যাপার। উনি সামলে নিবে। সেরকম অসুস্থ হয় নি। তুমি চিন্তা করো না।”
“তখন তূর্ণ ওকে ঝারি মেরে বলেছিল তার সব ব্যাপারে নাক না গলাতে। তার যা খুশি সে তাই করবে। এসব ইভার বলে দেওয়া লাগবে না। এরকম আরও কথা শুনতে হলো তূর্ণর কাছ থেকে। তূর্ণর এমন ব্যবহারেই ইভা বুঝে গিয়েছে তূর্ণর মধ্যে কি চলছে। ইভাকে ব্যাপারটা মানসিকভাবে খুবই আঘাত করে ফেলে৷ ইভার মন চাইছিল চিৎকার করে কান্না করতে। কেন? কেন তূর্ণ ওর সাথে এরকম করল শুধু এই মেয়ের জন্য? কি আছে এই মেয়ের মধ্যে? এতো বছরেও তূর্ণর এতো কাছে থেকেও তূর্ণ এরকম যত্ন পায় নি ইভা কখনো। অথচ এই মেয়ের জন্য সব করছে। এই মেয়ের জন্য ওর সাথে খারাপ ব্যবহার পর্যন্ত করছে! এই মেয়ের থেকে তো রূপে, গুণে কোনে অংশে কম না ইভা? ও তো তূর্ণকে বুঝে। তূর্ণর ভালো, মন্দ সব জানে। তাহলে এতো বছরেও কেন ইভাকে ভালো লাগলো না তূর্ণর? আর অল্প সময়েই এই মেয়ের জন্য এতো পাগল হয়ে গেল?
ইভার কষ্ট হচ্ছে ব্যাপারগুলো মেনে নিতে। সে কি কম চেষ্টা করেছে তূর্ণকে পাওয়ার জন্য? কিন্তু তূর্ণর ওর জন্য কখনো একটু মন গলেনি। তূর্ণ না কোনোদিনও কাউকে ভালোবাসতে পারবে না বলেছিল ইভাকে? তাহলে এগুলো কি? এগুলো ভালোবাসা না হলে আর কি? যেই মানুষটা ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না সে কি করে এভাবে একজনকে ভালোবেসে ফেলতে পারে! ইভাও হসপিটালে বসে এগুলোই ভেবেছে।

.
পরশির খুব পরিচিত এক কলিগ অফিসার রিফান আর সুস্মিতা। রিফান আর সুস্মিতার ডিভোর্স হয়েছে গত দুইমাস আগে। তবুও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আর সম্মানটুকু আছে। দুজনেই পরশির ভালো বন্ধু। পরশির সাথে কথা হলে যখন জানতে পারে সে হসপিটালে। তখন দুজনেই ছুটে আসে পরশির কাছে। পরশির সাথে দেখা করে রিফান বাড়ি ফিরতে যায়। রিফান যাওয়ার পথে তূর্ণর রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে ইভা তূর্ণর ব্যবহারগুলো হজম করতে না পেরে তার কাছে ছুটে যাচ্ছিলো। রিফান হেঁটে যাচ্ছিল ঠিক এমন সময় হঠাৎ করে ধাক্কা খায় ইভার সাথে।
অন্যদিকে ইভা রিফানকে না দেকেই রিফানকে তূর্ণ ভেবে জড়িয়ে ধরে। আর কেঁদে ফেলে। কান্না করতে করতে বলে,
“কেন তূর্ণ কেন? তুমি কেন আমার সাথে এরকম করলে?”
এইরকম ঘটনায় রিফান একদম বোকা হয়ে যায়। রিফান নরম স্বরে বলে,
“মিস, মেইবি আপনার কোনো ভুল হচ্ছে। ”
কন্ঠ শুনে ইভার খেয়াল হয়। সে চোখ খুলে রিফানকে দেখে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়। সে বেশ কয়েকবার সরি বলে। রিফান ইভার কাহিনি দেখে হেসে ফেলে। এরপর বলে,
“ইটস ওকে। ব্রোকেন হলে এরকম একটু আধটু হয়। ব্যাপার না।”
ইভা কিছু বলে না। নিচের দিক তাঁকিয়ে থাকে। সে প্রচুর লজ্জিত। রিফান চলে যাওয়া ধরে। কিন্তু পিছনে ফিরে বলে,
“শুনুন। এভাবে কারো জন্য কান্না করবেন না। কষ্ট পাবেন না। অন্যের জন্য কষ্ট পেয়ে লাভ নেই৷ জীবন একটাই। এক জীবনে সুখী হওয়ার চেষ্টা করুন। যে সুখী রাখতে পারবে না তাকে চাইবেন না। যে সুখী রাখবে তাকেই চাইবেন।”
সামান্য হেসে বলল,
“সরি। জ্ঞান দিয়ে দিলাম। আসলে নিজের সম্পর্ক ভাঙার পর যাকেই দেখি কষ্ট পায় তাকেই জ্ঞান পরিবেশন করে ফেলি।!
রিফান চলে গেল।
ইভা রিফানের যাওয়ার দিক তাঁকিয়ে রইল।

.
সম্পূর্ণ রাত পরশির কাছে তার বান্ধবী সুস্মিতা রয়ে গিয়েছে। সকালে পরশি ঘুম দিয়ে উঠার পর দুইজন গল্প শুরু করেছে। পরশি হঠাৎ করে বলে ফেলল,
“তুই আর রিফান কি একসাথে এসেছিলি?”
সুম্মিতা একটু লজ্জিত হয়ে উত্তর দিল,
“হু। আমিই ফোন করেছিলাম।”
“ফোন করেছিলাম বলা লাগবে না। আমি জানি তুই এখনও রিফানের বাসায়ই থাকিস। রিফান অনেক ভালো তাই পারছিস।”
“সামনের মাসে নতুন বাসায় যাচ্ছি আমি।”
“ঐ যে ঐ ছেলের সাথে?”
“পরশি প্লিজ! তুই এরকম কথা বলিস না। আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। আর সেই শাস্তি আমি পেয়েছিও। রিফান ছেড়ে দিয়েছে আমাকে।”
“ওহ্ রিয়ালি? রিফান তোকে ছাড়বে না তো কি করবে? তুই অন্য পুরুষের সাথে যা তা করবি আর রিফান স্বামী হয়ে সব মেনে তোর সাথে সংসার করবে?”
“আর কতবার শুনাবি এক কথা? এতোবার তো রিফানও শুনায় নাই।”
“আচ্ছা সরি বাবা। তোরা দুইজন দুইজনের মতো সুখে থাক এটাই চাই। তোর ভুলের শাস্তি তুই পেয়েছিস, আর কিছু বলার নেই।”
পরশি সুস্মিতার সাথে কথা বলতে বলতে দরজার দিক তাকিয়ে দেখে চন্দ্রা দাঁড়িয়ে আছে। চন্দ্রাকে দেখে পরশি অবাক হয়ে বলল,
“আরে চন্দ্রা তুমি! আসো।”
চন্দ্রা ভিতরে ঢুকে বলল,
“আপনার খোঁজ নিতে এসেছিলাম আপু। কিন্তু মনে হলো আপনি ব্যস্ত। তাই ডিস্টার্ব করিনি।”
“আরে না আসো। আমার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম একটু।”
“ওহ্, আচ্ছা।”
চন্দ্রা আড়চোখে সুস্মিতার দিক তাকালো। তারপর চোখ ফিরিয়ে নিল। সুস্মিতা পরশিকে বলল তার কাজ আছে তাকে যেতে হবে। সুস্মিতা চলে গেল। তারপর পরশি আর চন্দ্রা কিছুক্ষণ গল্প করলো। চন্দ্রার খুব ইচ্ছে ছিল সুস্মিতা সম্পর্কে জানার। তার পিছেও যেতে ইচ্ছে করছিল খুব। কিন্তু যেতে পারলো না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here