ভালোবাসা কারে কয়,৩১,৩২
শবনম মারিয়া
পর্ব ৩১
আজ প্রণয়িনীর জন্মদিন। চন্দ্রা ভার্সিটি থেকে সোজা ভাবলো প্রণয়ের বাসায় যাবে। প্রণয়িনীকে সারপ্রাইজ দিবে। চন্দ্রা ভার্সিটি থেকে প্রণয়ের বাসার দিকে যাচ্ছিল। শীতের দুপুরের রোদ চন্দ্রার মুখে এসে লাগছে। চন্দ্রা বেশ খুশি মনেই আছে আজ। প্রণয়িনীর জন্মদিন বলে। সে প্রণয়িনীর জন্য একটা কেক নিয়েছে। আবার কিছু গিফটও নিয়েছে৷ হাঁটতে হাঁটতে একটা নার্সারি সামনে পড়লো চন্দ্রার। সেখানে নানা রকমের গাছ। বেশ কিছু গাছে ফুল ফুটেছে। দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে সবগুলো। চন্দ্রা গাছ দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখতে পেল কিছু চন্দ্রমল্লিকা গাছ। ফুল গুলো ফুটে আছে। বেশ সুন্দর লাগছে। চন্দ্রমল্লিকা গাছ দেখেই চন্দ্রার মুখে একটা মিষ্টি হাসির রেখা ফুটলো। আপন মনেই হেসে দিল। প্রণয়ের সেদিনের কথাগুলো মনে পড়ে গেল। সেদিনের বলা কথাগুলো চন্দ্রার কেন যেম খুব মনে ধরেছিল।
ছোট্ট একটা হলুদ রঙের চন্দ্রামল্লিকা গাছ চন্দ্রা কিনে নিল। হাতে এতো কিছু নিয়ে চন্দ্রার পক্ষে আর হেঁটে প্রণয়ের বাসা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না। তাই চন্দ্রা একটা রিকশা করে চলে গেল প্রণয়ের বাসার উদ্দেশ্যে।
প্রণয় আজ প্রণয়িনীর জন্মদিন বলে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। সকালে প্রণয়িনী তার বাবাকে অফিসে যেতেই দিতে চায় নি। কান্না করেছে বাচ্চাটা। প্রণয়ের অনেক খারাপ লাগছিল৷ মেয়েটা আজকের দিনটায় বাবাকে চায়। অথচ প্রণয় সময় দিতে পারছে না। প্রণয়ের পক্ষে আজকের মিটিংটা বাদ দেওয়া সম্ভব না। তাই সে প্রণয়িনীকে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছে,
“মা, বাবা দুপুরেই চলে আসবো। এরপর তুমি যা বলবে বাবা তাই শুনবে। বাবা যদি এখন অফিসে না যায় বাবাকে সবাই রাগ করবে, পঁচা বলবে। তারপর বাবার চাকরি থাকবে না। তখন বাবা তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে পারব না। কিছু কিনে দিতে পারব না।”
প্রণয়িনী মন খারাপ করে বলে,
“আমার কিছু লাগবে না বাবা। কিন্তু না গেলে তোমায় বকা দিবে?”
“হ্যাঁ। খুব বকা দিবে।”
“টিকাচে যাও। চলে আসবে তাতাড়ি। দাদু রান্না করবে। তুমি আমাকে খাওয়াবা কিন্তু। আজ দাদুর হাতে খাবো না।”
“ওকে, বাবা। আমিও দুপুরের মধ্যেই চলে আসবো। আর আমার প্রাণের জন্য বেস্ট কেক নিয়ে আসবো।”
এই বলে প্রণয় অফিসে গিয়েছিল। তাই সে কোনোমতে মিটিংটা শেষ করেই বাসায় চলে এসেছে। প্রণয়ের গাড়ি ওর বাসার সামনে এসে থামিয়ে সামনে তাকিয়েই অবাক হয়ে যায়। দেখতে পেলো রিকশা থেকে চন্দ্রা নামছে। চন্দ্রা এখানে এলো কি করে? প্রণয় তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেল চন্দ্রার দিকে। চন্দ্রাকে ডাক দিয়ে বলল,
“চন্দ্রা তুমি এখানে?”
চন্দ্রা রিকশাওয়ালাকে টাকা দিচ্ছিলো। প্রণয়কে দেখে হেসে বলল,
“আসলাম। প্রণয়িনীর তো জন্মদিন। তাই ভাবলাম একটু সারপ্রাইজ দেই। ওর স্টাইলে। আসলে ওর স্টাইল না। স্টাইল তো ওর বাবার ছিল।”
এই বলে হেসে দেয় চন্দ্রা। প্রণয়ও হাসে। তারপর বলল,
“বাহ্, আমার তো সৌভাগ্য আমার বাসায় চন্দ্রমল্লিকা এসেছে!”
চন্দ্রা কিছু বলে না। প্রণয়ের হাতে কেকের বক্সটা দিয়ে বলল,
“একটু ধরবেন?”
প্রণয় বিস্মিত হয়ে বলল,
“এসব কেন এনেছো?”
“বাহ্ রে! প্রণয়িনীর জন্মদিন আর আমি ওর জন্য কেক আনবো না?”
“কেক তো আমিই এনেছি। মেয়ে আমার কেক নিয়ে খুব এক্সাইটেড।”
“ভালো। দুটো কেক কাটবে।”
প্রণয় বলল,
“এতোকিছু তোমার কষ্ট করে নিতে হবে না। দাড়োয়ানকে বলে দিচ্ছি এগুলো উপরে নিয়ে যেতে। তুমি চলো।”
দুজনে উপরে যাওয়ার জন্য লিফটে উঠে। লিফটের মিররের দিক তাকিয়ে প্রণয় খেয়াল করল তার চন্দ্রমল্লিকাকে সবসময়ের মতো অনেক সুন্দর লাগছে। পরনে একটা থ্রি-পিস। লম্বা চুলগুলো বেণী করা। বেণী থেকে সামান্য কিছু চুল বের হয়ে আছে। চেহারায় একটা ক্লান্তির ছাপ। তবুও কি সুন্দর লাগে।
লিফট উপরে আসা মাত্রই ওরা নেমে গেল। প্রণয় কলিং বেল বাজিয়ে দরজা খোলার অপেক্ষায় আছে। অন্যদিকে চন্দ্রা খেয়াল করল, প্রণয়কে অফিসের ফরমাল গেটআপে বেশ সুদর্শন লাগে। ব্লেজারটা খুলে হাতের উপর রেখেছে। গলার টাইটা হাত দিয়ে একটু ঢিলা করলো। চন্দ্রা প্রণয়ের এসব বিষয় এভাবে কখনো খেয়াল করেনি। আজ কেন যেন প্রণয়ের কার্যকলাপ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। ভালে লাগছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় প্রণয়ের হাত দিয়ে মাথায় চুল ঠিক করাটা! প্রণয়িনী এমন করে প্রায়ই। এতোদিন চন্দ্রা বুঝেনি প্রণয়িনী এরকম কেন করতো। কিন্তু আজ বুঝেছে। সে তার বাবার অনেক কিছুই ফলো করে। আর সেরকম করে। চন্দ্রার খুব হাসি পেল। সে হেসেও দিল। প্রণয় অবাক হয়ে তাকালো। কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তখনই প্রণয়ের মা এসে দরজা খুলে দিল। তার পিছনে বাবা এসেছে, বাবা এসেছে করতে করতে ছুটে এলো প্রণয়িনী। প্রণয়ের মা চন্দ্রাকে দেখে ভীষণ অবাক হলেন আর খুশিও হলেন। অন্যদিকে প্রণয়িনী তো ভাবতেই পারেনি তার প্রিয় চন্দ্রা আন্টি আসবে। চন্দ্রাকে দেখেই সে চিৎকার করে উঠলো খুশিতে।
প্রণয়িনী বাবার কোলে না গিয়ে আগে তার চন্দ্রা আন্টির কোলে গেল। জড়িয়ে ধরলো চন্দ্রাকে। প্রণয় আর প্রণয়ের মা জাহানারা দুজনেই প্রণয়িনীর খুশি দেখছে। জাহানারা জানেন তার নাতনি একমাত্র চন্দ্রার নাম শুনলে যেমনটা খুশি হয় ওরকম খুশি আর হয় না। আজ চন্দ্রাকে পেয়ে এতো খুশি হয়েছে প্রণয়িনী! এতোটা খুশি প্রণয়িনীকে আগে দেখেছেন কি না জাহানারা তা জানেন না। প্রণয়ও দেখছে মেয়ের খুশি। মুখে তার হাসির রেখা। চন্দ্রা প্রণয়িনীকে বলল,
“হ্যাপি বার্থডে প্রণয়িনী।”
“থ্যাংকি আন্তি।”
প্রণয় বলল,
“বাবা না আজ বড় হয়ে গিয়েছো? তাহলে আবার ভুল ওয়ার্ড বললে কেন? ওটা থ্যাংকি না। থ্যাংক ইউ।”
চন্দ্রা বিরক্ত হয়ে বলল,
“এই যে শুরু হয়ে গেল তো আপনার? আসতে না আসতেই মেয়ের কথা ধরতে ব্যস্ত।”
জাহানারা হেসে ফেললেন। চন্দ্রার খেয়াল হলো। সে তাড়াতাড়ি প্রণয়ের মাকে সালাম দিল। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
“আন্টি কেমন আছেন?”
“ভালো ছিলাম মা। এখন তোমায় দেখে আরও ভালো হয়ে গিয়েছি। তুমি তো আসোই না। এই দেখো বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভিতরে আসো।”
সকলে ভিতরে আসার পরে জাহানারা আবার বলেন,
“প্রণয়িনী তো তোমার নামে পাগল একদম। তুমি এসেছো দেখে আমার নাতনির খুশি দেখেছো একবার?”
“জি আন্টি।”
প্রণয়িনী বলল,
“আন্তি তুমি আসাতে আমি অনেক খুশি হয়েচি। তুমি আসবে আমি অনেকদিনই ভাবিনি।”
“আজ সব থেকে মিষ্টি মেয়ের জন্মদিন। আমার প্রণয়িনীর জন্মদিন৷ তার আন্টি তাকে সারপ্রাইজ না দিয়ে পারে?”
প্রণয়িনী চন্দ্রার গালে চুমু দিয়ে বলল,
“তুমি বেস্ট আন্তি।”
প্রণয় বলল,
“বাবারে! সকালে বাবাকে অফিস যেতে দিচ্ছিলি না। এখন আন্টিকে পেয়ে বাবার কথা মনেই নেই?”
“না না, মনে আচে। তোমার মনে আচে আমার কেক আনতে?”
“তা আবার ভুলতে পারি? এনেছি।”
“ইয়েএএএএ।”
চন্দ্রা বলল,
“আজ অফিসে না গেলেও পারতেন।”
“অনেক জরুরি মিটিং ছিল।”
“ওহ্। তাও ভালো তাড়াতাড়ি এসেছন।”
প্রণয়িনী বলল,
“আমি বলেচি বাবাকে তাতড়ি আসচে।”
দারওয়ান সব জিনিসগুলো উপরে উঠিয়ে দিল। প্রণয়িনী দুটো কেক দেখে ভীষণ খুশি হলো। প্রণয় চন্দ্রামল্লিকা গাছ দেখে বলল,
“বাহ! চন্দ্রমল্লিকা গাছ!”
“হ্যাঁ। তবে এটা কিন্তু প্রণয়িনীর জন্য না। প্রণয়িনীর বাবার জন্য। প্রণয়িনীর বাবার আবার চন্দ্রমল্লিকা ফুল পছন্দ। তাই পেলাম আর নিয়ে আসলাম৷”
“থ্যাংকিউ সো মাচ। চন্দ্রমল্লিকার দেওয়া চন্দ্রমল্লিকা গাছটা সবচেয়ে বেশি যত্ন থাকবে।”
“যেই মানুষটা মানুষের এতো যত্ন করতে জানে, সে যে গাছেরও যত্ন করতে জানবে তা আমার জানা আছে।”
প্রণয় হাসলো। এরপর খুব যত্ন সহকারে গাছটা হাতে নিয়ে নিজের বেডরুমের বারান্দায় রাখলো।
প্রণয়ের বাবা, এহসানুল সাহেব চন্দ্রাকে দেখে ভীষণ খুশি হলেন। চন্দ্রা তাকে দেখে সালাম দিলেন৷ সালামের উত্তর দিয়ে তিনি কথা বললেন চন্দ্রার সাথে। বাসার সকলের খোঁজ খবর নিলেন। তারপর প্রণয়িনীকে উদ্দেশ্য করে মজা করে বললেন,
“দাদু ভাই, তোমার আন্টি এসেছে আন্টিকে কিছু দিয়েছো? তোমার তো আন্টিকে চা, নাস্তা করে খায়ানোর কথা।”
এই বলে হেসে দিলেম এহসানুল সাহেব। চন্দ্রাও হাসলো। প্রণয়িনী বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। সে গালে হাত দিয়ে বলল,
“টিক বলেচো দাদু। আমি ভুলেই গেচিলাম। দাঁড়াও এখন।”
এই বলে প্রণয়িনী ছুটে গিয়ে পানির ভর্তি গ্লাস নিয়ে আসলো। এসে বলল,
“আন্তি জুস এনেচি। খাও।”
চন্দ্রা আর এহসানুল সাহেব ওর কাহিনও দেখে হাসছে। চন্দ্রা ধন্যবাদ জানিয়ে গ্লাসটা ধরতে যায়। তখনই গ্লাসটা কাত হয়ে সমস্ত পানি চন্দ্রার গায়ে পড়ে। একদম ভিজে যায় চন্দ্রা। অনেক খানি ভিজে গিয়েছে চন্দ্রার জামা। প্রণয়িনী ভয় পেয়ে বলল,
“সরি আন্তি। সরি। প্লিজ বাবাকে বলো না। বাবা রাগ করবে।”
চন্দ্রা প্রণয়িনীকে বলল,
“অসুবিধা নেই বাবা। আমি তোমার বাবাকে কিছু বলবো না।”
এহসানুল সাহেব বললেন,
“দাদু ভাই এটা একদমই ঠিক করোনি। দেখেছ আন্টিকে পুরো ভিজিয়ে দিয়েছো। আন্টির তো ঠান্ডা লাগবে।”
জাহানারা দেখে বললেন,
“কি যে করলো না মেয়েটা! মা তুমি আমার সাথে আসো। কাপড় পাল্টে ফেলো নাহলে এই ভেজা জামা পরে থাকবে কিভাবে? অনেকখানি ভিজে গিয়েছে।”
“না, আন্টি ঠিকাছে।”
“কি ঠিক আছে? ঠান্ডা লাগবে। আসো আমার সাথে।”
জাহানারা চন্দ্রাকে নিজের ঘরে জামা পাল্টানোর জন্য নিয়ে গেলেও পড়লেন মহাবিপদে। তিনি তো শাড়ি পরেন সবসময়। এখন কি করবেন? তিনি চন্দ্রাকে বললেন,
“মা সরি। আমি তো থ্রি-পিস পরি না। আমার কাছে সব শাড়ি। আমি তোমাকে একটা শাড়ি দেই? জামাটা শুকাতে দাও শুকিয়ে যাবে অল্প সময়ে।”
“আন্টি৷ অসুবিধা নেই। এভাবেই থাকি। আমি আসলে শাড়ি পরতে পারি না ভালো করে।”
“এটা কোনো কথা? আসো আমি সাহায্য করি। তুমি ভেজা গায়ে থেকো না।”
জাহানারা একটা নতুন দেখে শাড়ী বের করে চন্দ্রাকে পরিয়ে দিলেন। চন্দ্রাকে অনেক সুন্দর দেখা যাচ্ছে। তিনি বললেন,
“মাশাআল্লাহ, অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে।”
“ধন্যবাদ আন্টি।”
“চলো দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। খেয়ে নিবে সকলে।”
“চলুন।”
চন্দ্রা ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে এভাবে শাড়ি পরে প্রণয়ের সামনে যেতে। কেমন যেন লাগছে। এদিকে প্রণয় ফ্রেশ হয়ে এসে বসেছে তার বাবার সাথে। সে জিজ্ঞেস করলো,
“মা আর চন্দ্রা কোথায় বাবা?”
প্রণয়িনী তাড়াতাড়ি দাদুর পিছে লুকিয়ে পড়লো। এটা দেখেই প্রণয় জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে? প্রণয়িনী লুকায় কেন?”
এহসানুল সাহেন প্রণয়িনীর মাথায় হাত রেখে বলেন,
“কারণ আমার দাদু ভাই বাবাকে ভয় পায়।”
“ভয়ের কি হয়েছে? প্রণয়িনী কোনো দুষ্টুমি করো নি তো?”
প্রণয়িনী এবার বলল,
“বাবা সরি। প্লিজ আমালে বকা দিও না। আমি আন্তিকে জুস দিতে গিয়ে আন্তির জামায় পানি ফেলেচি।”
“জুস দিতে গিয়ে পানি ফেলেছো মানে?”
এহসানুল সাহেব বললেন,
“খেলতে গিয়ে পানি ফেলে দিয়েছে। থাক বকো না।”
“সে কি কথা প্রণয়িনী? তুমি আন্টিকে এভাবে ডিস্টার্ব করো কেন?”
এর মধ্যেই চন্দ্রা আর জাহানারা বেগম আসলেন। চন্দ্রা বলল,
“আহা! আপনি প্রণয়িনীকে রাগ করছেন কেন? ওর কোনো দোষ নেই।”
প্রণয় চন্দ্রার দিক তাকিয়ে থমকে গেল। এভাবে শাড়িতে সামনাসামনি দেখেছে প্রণয় ওকে। ছবিতে দেখেছে শুধু। তা-ই তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ। আজ সামনাসামনি শাড়িতে দেখে প্রণয় এক প্রকার ঘোরের ভিতর চলে গেল। শাড়ীতে চন্দ্রাকে বাস্তবেও এতোই বেশি সুন্দর লাগে?
প্রণয় মনে মনে বলল, নাহ্, মেয়ে আমার ভুল করেনি। একদম ঠিক করেছে। এই ভুলটা না করলে তার বাবার এরকম সৌভাগ্য হতো না। ধন্যবাদ তোকে বাবা। আর মা তোমাকেও ধন্যবাদ চন্দ্রাকে শাড়ি পরানোর জন্য।
প্রণয় মুগ্ধ দৃষ্টিতে কতক্ষণ চন্দ্রার দিক তাকিয়ে রইলো। না চোখ ফেরাতে পারছে না একদমই। চন্দ্রা লজ্জা পাচ্ছিল ভীষণ। সে তাড়াতাড়ি জাহানারার পিছপিছ রান্না ঘরে ছুটলো।
চলবে…..
ভালোবাসা কারে কয়
শবনম মারিয়া
পর্ব ৩২
জাহানারা রান্নাঘরে গিয়ে চুলায় রাখা পাত্রের ঢাকনা উঁচু করলো। ঢাকনা উঁচু করতেই ইলিশে পোলাওয়ের ঘ্রাণ সারা রান্না ঘরে ছেয়ে গেল। চন্দ্রার ইলিশ মাছ একদমই পছন্দ না৷ তার এই ঘ্রাণটা গন্ধের মতো লাগে। সহ্য হয় না। চন্দ্রা জাহানারাকে জিজ্ঞেস করল,
“আন্টি এটা ইলিশ পোলাও?”
“হ্যাঁ। প্রণয়ের ইলিশ পোলাও ভীষণ পছন্দ। তাই আজ ভাবলাম ইলিশ পোলাও করি। কেমন হয়েছে মা?”
চন্দ্রা তেমন কোনোরকমের সৌজন্যতার হাসি মুখে ছাঁপিয়ে বলল,
“সুন্দর ঘ্রাণ আসছে। প্রণয় ভাইয়ার ভালো লাগবে।”
“প্রণয় ইলিশ পোলাও হলে ভালো খারাপ খুঁজেনা, মা। ওর ইলিশ পোলাও হলেই চলে। এটা ওর কাছে অমৃতের মতো। বাবার দেখাদেখি তার মেয়েও তাই শিখেছে। দুজনেরই ইলিশ পোলাও পছন্দ।”
চন্দ্রা আর কিছু বলল না। জাহানারার কাজে সাহায্য করতে চাইলো৷ কিন্তু তিনি তা দিলেন না৷ সব নিজে থেকেই করলেন। চন্দ্রা শুধু তার সাথে ছিল।
প্রণয়িনীর প্লেটে খাবার দেওয়া হলো। প্রণয় মেয়েকে কথা দিয়েছিল নিজ হাতে খাইয়ে দিবে। সে সেরকমই করতে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন তার মেয়ে নিজে থেকেই বাধা দিল।
“বাবা আমি তোমার হাতে খাবো না।”
“কেন বাবা?”
“আমি আন্তির হাতে খাব।”
“লক্ষী মা, আন্টি না আজ আমাদের বাসায় গেস্ট। আন্টিকে আজ বিরক্ত করা যাবে না একদমই।”
“না বির্তক করব না আন্তি খাওয়াবে।”
“উহু।”
চন্দ্রা বলল,
“অসুবিধা কি? আমি ওকে খাইয়ে দেই। আসো প্রণয়িনী আন্টি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি না।”
জাহানারা বললেন,
“সে কি চন্দ্রা! তুমি আরাম করে খাও। আমি খাইয়ে দিব আমার দিদিভাইকে। তোমার একদম কষ্ট করতে হবে না।”
“আন্টি এতে কোনো কষ্ট নেই।”
প্রণয়িনী এবার কান্না করে দিবে দিবে ভাব। সে তার দাদুর কাছে নালিশ করলো,
“দাদু প্লিজ কিচু করো। আন্তিকে আমি ডিস্তার্ব করব না।”
এসহানুল সাহেব নাতনির আবদার রেখে ছেলে আর স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আচ্ছা থাকুক না৷ চন্দ্রা যেহেতু চাইছে আর প্রণয়িনীও জোর করছে তাহলে অসুবিধা কি? ”
প্রণয় আর তার মা কিছুই বলল না। প্রণয় প্রণয়িনীকে বলল,
“আচ্ছা বাবা খা আন্টির কাছেই।”
প্রণয়িণী এবার অনেক খুশি হয়ে গেল। চন্দ্রা তাকে খাইয়ে দিল। প্রণয়িনী সাধারণত চন্দ্রার বাসায় গেলে চুপচাপ বসে খেলেও নিজের বাসায় দৌড়াদৌড়ি করে খেতে পছন্দ করে। এ রুম থেকে ঐ রুম এভাবে ছোটাছুটি চলে কেবল। সে চন্দ্রাকে ডেকে বলল,
“আন্তি চলো বারান্দায় যাই।”
এই বলে সে প্রণয়ের রুমের বারান্দায় চলে গেল। চন্দ্রাও তার পিছনে গেল। চন্দ্রা এর আগেও এই বাসায় এসেছে। তবে প্রণয়ের রুমে আসে নি। প্রণয়ের রুমে ঢুকে খেয়াল করল রুমটা বেশ গোছালো। রুমের দেয়ালের চতুর্দিকে প্রণয়িনীর ছবি। কিছু ছবিতে প্রণয় প্রণয়িনী একসাথে। কিন্তু কোথাও প্রণয়িনীর মার ছবি রাখেনি প্রণয়। প্রণয়ের অবশ্য তার রুমে এগুলো রাখার কথা না৷ কিন্তু প্রণয়িনীর জন্য তো রাখতে পারতো! শত হলেও প্রণয়িনীর মা তো! চন্দ্রার মনে প্রশ্ন জাগলো,
“প্রণয় কি আদৌও কখনো প্রণয়িনীকে তার মার কথা বলেছে? প্রণয়িনী কি জানে ওর মায়ের সম্পর্কে? কখনো জিজ্ঞেস করেছে মায়ের কথা?”
চন্দ্রা এগুলো ভাবছিল। ঠিক এমন সময় প্রণয়িনী ডাক দিলো।
“আন্তি এদিকে আচো।”
চন্দ্রা বারান্দায় যায় প্রণয়িনীর সাথে। তার মুখে খাবার দিয়ে চন্দ্রা বারান্দায় রাখা ছোট টবগুলোর দিক তাকায়। তার একটু আগে নিয়ে আসা চন্দ্রমল্লিকা গাছটাও প্রণয় সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। প্রণয়িনী একটা ফুল ছিড়ে নিয়ে চন্দ্রার কাছে গিয়ে বলল,
“আন্তি নিচু হও।”
চন্দ্রা হেসে বলল,
“কেন?”
“হও না প্লিজ।”
প্রণয়িনীর কথামতো চন্দ্রা ঝুঁকে। প্রণয়িনী ফুলটা চন্দ্রার কানের কাছে গুঁজে দেয়। চন্দ্রা অবাক হয়ে যায়। তারপর প্রণয়িনীর দিক তাকিয়ে হেসে দেয়। ছোট্ট দাঁতগুলো বের করে হাসে প্রণয়িনীও। চন্দ্রা মুগ্ধ হয়ে প্রণয়িনীর হাসি দেখে।
প্রণয়িনী চন্দ্রাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে যায়। গিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলে,
“দেখো সবাই। আমি আন্তিকে ফুল দিয়ে সাজিয়েছি।”
প্রণয় তাকিয়ে দেখলো। তারপর প্রণয়িনীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“তুমি সাজিয়েছো বলে আন্টিকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
চন্দ্রা লজ্জা পায়। সন্ধ্যাবেলা প্রণয়িনীর কেক কাটার সময়। তখন তূর্ণকেও ফোন করে প্রণয়। যদিও তূর্ণকে প্রণয় দুপুরেই ফোন করে আসতে বলেছিল কিন্তু তূর্ণ ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেনি। কিন্তু সন্ধ্যায় সে আসলো।
কেক কাটার সময় প্রণয়ের কোলে বসে ছিল প্রণয়িনী। সে বায়না ধরলো চন্দ্রাকেও তাদের পাশে বসতে হবে। চন্দ্রা বলল,
“প্রণয়িনী তুমি বাবার কোলে বসে কেক কাটো। আন্টি ছবি তুলে দেই।”
“না তুমি আসো। আংকেল তুলবে তো ছবি।”
তূর্ণ বলল,
“আচ্ছা গিয়ে বস তুই। এমনিও আমাদের প্রণয়িনী মামনীর আবদার কি কেউ ফেলতে পারে? তার উপর আজ আবার তার জন্মদিন। বিশেষ দিন৷ তাই মা?”
প্রণয়িনী খুশি হয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“ইয়েচ।”
প্রণয় হঠাৎ করে বলে উঠলো,
“আমার মেয়ের বয়স চার হয়ে গেল। কথা এখনো ঠিকঠাক শিখছে না৷ কি যে হবে।”
সকলে হেসে দিল। তূর্ণ বলল,
“তুই কয় বাচ্চার বাপ? এমন ভাব করিস যেন এর আগে আরো চার পাঁচটা বাচ্চা আছে তারা জন্মের পরেই একদম সব কথা শুদ্ধ ভাবে বলা শিখেছে। প্রণয়িনী তা করছে না। ইটস নরমাল। সময় দে।”
চন্দ্রা বলল,
“না, প্রণয় ভাইয়া ভেবেছে তার মেয়েও তার মতো সবকিছুতে এক্সট্রা অর্ডিনারী হবে।”
সবাই হেসে দিলো। প্রণয়িনী কেক কাটলো। তারপর সকলে খাওয়া দাওয়া করল।
তূর্ণ আর চন্দ্রা বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিল। চন্দ্রা রিকশায় বসে একা একা হাসছে। তূর্ণ হঠাৎ চন্দ্রার দিক তাকালো। তারপর জিজ্ঞেস করল,
“চন্দ্রা? কি হয়েছে?”
“কি?”
“একা একা হাসছিস কি নিয়ে?”
“কিছু না৷ প্রণয়িনীর কথা মনে পড়লো।”
“ওহ্। ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে। ও আছে বলেই তো আংকেল, আন্টি আর প্রণয় ভালো আছে।”
তূর্ণের মুখের হাসিটা উবে গেলো। তারপর বলল,
“প্রণয় কিন্তু আনিকাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো। অনেক বেশি ভেঙে পড়েছিল ঐ ঘটনার পর।”
চন্দ্রা হাসলো। তারপর বলল,
“ভালোবাসা কি দেখেছো? বেচারা ভালোবেসেও কষ্ট পেল। এর থেকে ভালো না বাসাই ভালো।”
তূর্ণও বলল,
“সত্যিই।”
“তো বলো পরশি আপুর কি অবস্থা এখন?”
“সুস্থ আছে।”
“ভালো।”
“আমি না আবার পরশির সাথে আগের মতে কথা বলা শুরু করেছি। দেখলাম ওকে ইগনোর করতে পারছি না। আর ও সবসময়ই কেমন যেন একা থাকে মনে হয়৷ তাই একটু কথা বলে সঙ্গ দিলে খারাপ হয় না।”
“যেটা তোমার ভালো লাগে তাই করো ভাইয়া। তবে দেখো নিজে কষ্ট পেও না কিন্তু।”
“সেরকম কিছু না চন্দ্রা। আমি ওকে বন্ধুর মতো সাপোর্ট করি।”
“বললাম না? তোমার যা ভালো লাগে করো।”
“জানিস তো পরশিকে ইদানিং কেমন যে লাগে। মনে হয় কান্না করে। কেমন যেন শোকের ভাষা। কি যেন আছে ওর মনের গোপনে, যেই গোপন কাউকে জানাতে চায় না৷ আমিও বুঝলেও সেভাবে জিজ্ঞেস করতে যাই না। কারণ ও নিজে থেকে যা বলতে চায় না তা আমি কিভাবে জিজ্ঞেস করতে পারি।”
“অনেক কিছু খেয়াল করো তাই না?”
“একটা মানুষের সাথে কথা বললে বুঝা যায় চন্দ্রা।”
“প্রণয় ভাইয়াও কি এইজন্যই সব বুঝে যায়?”
মনের অজান্তেই প্রশ্ন করে ফেলে চন্দ্রা। তূর্ণ জিজ্ঞেস করে,
“মানে?”
চন্দ্রা কি যেন বলতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে ফেলল কথা। কি বলবে? সে নিজেই তো জানে না এই কথা কেন তার মাথায় আসলো? চন্দ্রা বলল,
“মানে হচ্ছে, আমার সব কাজ সহজ করে দেয়। কখন কি করতে মন চায় বুঝে যায়। আর..ভাইয়া বুঝেছো মনে হয়?”
তূর্ণ চোখ রাঙিয়ে চন্দ্রার দিক তাকায়। চন্দ্রা হেসে দিয়ে বলে,
“সরি। মজা করলাম।”
রিকশা বাসার কাছে পৌঁছায়। চন্দ্রা আর তূর্ণ নেমে ভাড়া মিটিয়ে দেয়। ঠিক এমন সময় তূর্ণ দেখে পরশিও অফিস থেকে ফিরলো। চন্দ্রা মনে মনে ভাবলো তূর্ণ হয় তো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে পরশিকে। তাই সে তাড়াতাড়ি ডাক দিল,
“পরশি আপু!”
পরশি চন্দ্রার দিক তাকিয়ে সৌজন্যতার হাসি দিল।
“আপু মাত্র অফিস থেকে এলেন বুঝি?”
“হ্যাঁ। তোমরা কোথায় গিয়েছিলে।”
“প্রণয় ভাইয়ার বাসায়৷ তার মেয়ের জন্মদিন ছিল।”
“ওহ্।”
“কেমন আছেন পরশি?”
জিজ্ঞেস করল তূর্ণ। পরশি বলল,
“ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন? ”
“হ্যাঁ।”
তূর্ণর মনে হয় পরশি ভালো নেই। অনেক সময়ই মানুষ ভালো থাকে না। কিন্তু তারা বলতে পারে না তারা ভালো নেই। কারণ ভালো না থাকার কারণটা একান্ত হয় মাঝে মাঝে। যেটা কাউকে জানাতে ইচ্ছে করে না। পরশিরও হয় তো তেমন কিছু।”
.
প্রণয় রুমে বসে আছে। ল্যাপটপে বসে অফিসের কাজ করছে। এমন সময় তার মা জাহানারা তার রুমে প্রবেশ করল। প্রণয় ল্যাপটপের দিক তাকিয়ে
বলল,
“কি হয়েছে মা? নাতনিকে দেখতে আসলে?”
জাহানারা সামান্য হেসে প্রণয়ের দিক এগিয়ে গেলেন। ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন,
“না, নাতনি আমার ভালো আছে। দেখতে এলাম ছেলেকে।”
প্রণয়ে হেসে বলল,
“হঠাৎ! ছেলেও ভালোই আছে।”
“সত্যি?”
“মিথ্যা বলে কি লাভ?”
“নিজের মনটা শান্ত করিস।”
প্রণয় হেসে পেলল। বলল,
“হয়েছে কি? এতো ভারী ভারী কথা কেন?”
“অনেক ভালোবাসিস তাই না?”
“ভালোবাসলে কি মা? আনিকা তো নেই আমাদের মাঝে।”
“আমি যে আনিকার কথা বলছি না তা তুই ভালো করেই জানিস।”
“আশ্চর্য! আনিকার কথা না বললে আর কার কথা বলবে? আনিকাকেই তো ভালোবেসেছিলাম। মন প্রাণ উজাড় করে।”
বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো প্রণয়। জাহানারা বললেন,
“আনিকা তাওর প্রথম ভালেবাসা। আর আনিকা তোকে চার বছর আগেই ছেড়ে গিয়েছে।”
“ভালোবাসায় কি প্রথম দ্বিতীয় আছে? ভালো তো একজনকেই বাসা হয়।”
“তাহলে কি আনিকাকে ভালোবাসিস নি কখনো?”
“তা তো বলিনি।”
“দেখ প্রণয় একজনের জায়গা আরেকজন ঠিকই পূরণ করে ফেলে। আনিকাকে ভালোবাসলেও ও এখন নেই। ওর জায়গাটা শূন্য। আর তোর সেই শূন্য মনে যে অনেক আগেই চন্দ্রা এসে পরিপূর্ণ করেছে তা আমি জানি। চন্দ্রাকে ভালোবাসিস তুই। তবে কেন বলিস না চন্দ্রাকে মনের কথা?”
“মা তোমাকে অনেক আগেই বলেছিলাম এরকম কথা যেন না বলো। তুমি আজ আবার বলছো কেন এগুলো?”
“চন্দ্রা মেয়েটা অনেক ভালো। তোকে আর প্রণয়িনীকে অনেক ভালোবাসবে।”
“মা তোমাকে আগেই বুঝিয়েছি চন্দ্রা তূর্ণর বোন। আর চন্দ্রা অনেক ভালো একটা মেয়ে। ওর বেটার ফিউচার আছে। ওর জীবনে ও অনেক ভালো একজন মানুষ ডিজার্ভ করে।”
“তো কে বলেছে আমার ছেলে ভালো না?”
“মা আমার আর ওর বয়সের পার্থক্য দেখো। তার উপর আমি এক বাচ্চার বাবা। চন্দ্রার এমন কারো সাথে কিছু হতে পারে না।”
জাহানারা কিছু বললেন না। শুধু তাকিয়ে থাকলেন। তারপর প্রণয় নলল,
“মা এসব কথা তুমি আর বলবে না। তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”
“আচ্ছা তুই তাহলে বিয়ে কর। অন্যকারো সাথে। প্রণয়িনীর একটা মা দরকার। আর তুইও একদম একা। তুই অল্পবয়সী পুরুষ বউ মারা গিয়েছে বলে একা থাকবি? আরেকটা বিয়ে কর। বিয়ে করলেই ভালোবাসা হয়ে যাবে। ভুলে যাবি চন্দ্রাকে। যেভাবে আনিকাকে ভুলে গিয়েছিস চন্দ্রাকে পেয়ে।”
প্রণয় মায়ের দিক তাকিয়ে বলল,
“মা তোমার বয়স হয়েছে। এইজন্য এসব বলছো। যাও ঘুমাও। আর বাবার সাথে এসব একদমই আলোচনা করবে না প্লিজ।”
জাহানারা কিছু বললেন না। চুপচাপ রুম থেকে চলে গেল।
মা যাওয়ার পর প্রণয় আবার ল্যাপটপের দিক তাকালো। কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। মায়ের কথাগুলো কানে বাজছে। একা একা প্রণয় বিড়বিড় করে বলল,
“না মা, নতুন কাউকে পেলেও চন্দ্রাকে ভুলতে পারবো না। চন্দ্রা আমার মনে স্থায়ী হয়ে গিয়েছে। চন্দ্রাকে ভুলা যাবে না। আনিকাকে ভুলেছি কারণ সে তার প্রতি আমার ভালোবাসাকে স্থায়ী করে নিতে পারে নি। বরং ঘৃণায় পরিণত করেছে। কিন্তু চন্দ্রমল্লিকা! চন্দ্রমল্লিকা আমার মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। আর এই জায়গা কেউ নিতে পারবে না।”
চলবে…